Banner Advertiser

Thursday, July 25, 2013

[mukto-mona] লন্ডন থেকে আঙ্কারা (এক) ’৭১-এর গণহত্যাকারীদের বিচার ॥ বিভ্রান্তি ও বানচালের চক্রান্ত



লন্ডন থেকে আঙ্কারা (এক) '৭১-এর গণহত্যাকারীদের বিচার ॥ বিভ্রান্তি ও বানচালের চক্রান্ত
শাহরিয়ার কবির
শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতায় এসে নির্বাচনী অঙ্গীকার অনুযায়ী যখন '৭১-এর গণহত্যাকারী, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধী ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের উদ্যোগে গ্রহণ করেছে তখন থেকে এই বিচার সম্পর্কে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে এটি বানচালের জন্য জামায়াতে ইসলামী এবং তাদের সহযোগীরা দেশে ও বিদেশে বহুমাত্রিক চক্রান্ত করছে। বহুবার আমরা এসব চক্রান্ত সম্পর্কে সরকারকে অবহিত করেছি। দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো, মেয়াদ শেষ হতে চলেছে এখনও সরকারী পর্যায়ে এসব চক্রান্ত রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও কূটনৈতিকভাবে মোকাবেলা করার কোন উদ্যোগ দৃশ্যমান নয়।
গত চার বছরে '৭১-এর গণহত্যাকারী ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রয়োজন ও প্রাসঙ্গিকতা সম্পর্কে বলবার জন্য দুই ডজনেরও বেশি আন্তর্জাতিক সম্মেলন ও সেমিনারে আমাকে অংশগ্রহণ করতে হয়েছে। কয়েকটি সেমিনারে ও শুনানিতে 'একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি'র অন্য নেতৃবৃন্দও উপস্থিত ছিলেন। কদাচিৎ আমরা সরকার কিংবা সরকারী দলের কোন প্রতিনিধিকে এসব সম্মেলন বা শুনানিতে অংশ নিতে দেখেছি। গত ২-৮ জুলাই লন্ডনে এবং ৯-১৯ জুলাই ইস্তাম্বুল ও আঙ্কারায় প্রায় দুই ডজন সেমিনার, দ্বিপক্ষীয় মতবিনিময় ও আলোচনা সভায় অংশগ্রহণ করতে হয়েছে, যার মূল বিষয় ছিল যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পর্কে উত্থাপিত প্রশ্নের জবাব, বিভ্রান্তি নিরসন, বিচারের প্রয়োজনীয়তা এবং এর সঙ্গে বর্তমান বিশ্বে ইসলামের নামে জঙ্গী মৌলবাদের উত্থান।
৪ জুলাই লন্ডনে 'বাংলাদেশে গণতন্ত্র, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এবং শাহবাগ আন্দোলন' বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলনের উদ্যোক্তা ছিল ডাচ এনজিও 'ইন্টারন্যাশনাল কমিটি ফর ডেমোক্রেসি ইন বাংলাদেশ' এবং 'একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি'র যুক্তরাজ্য শাখা। সম্মেলনের মূল উদ্দেশ্য সম্পর্কে উদ্যোক্তারা বলেছেন, ১. যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিরুদ্ধে জামায়াতে ইসলামী এবং সহযোগীদের মিথ্যা প্রচারণার স্বরূপ উন্মোচন, ২. বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর সাম্প্রতিক হামলা প্রতিরোধে করণীয় নির্ধারণ এবং ৩. যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চকে সমর্থন। লন্ডন সম্মেলনের উদ্যোক্তাদের প্রথম দুটি উদ্দেশ্য সম্পর্কে ইউরোপীয় সম্প্রদায়ের মিশ্র সমর্থন থাকলেও শেষোক্তটি অধিকাংশের জন্যই ছিল বিব্রতকর, কারণ ইউরোপের ক্ষমতাধর দেশগুলো মৃত্যুদ- সমর্থন করে না।
লন্ডন সম্মেলনে অংশগ্রহণের জন্য বাংলাদেশ থেকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল এ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল, গণজাগরণ মঞ্চের একজন প্রতিনিধি ও আমাকে। দেরিতে আমন্ত্রণপত্র আসার জন্য ভিসা না পাওয়ায় গণজাগরণ মঞ্চের প্রতিনিধি সম্মেলনে অংশ নিতে পারেননি। সুলতানা কামাল ও আমি মানবাধিকার কর্মী ছাড়াও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের আসামি জামায়াত নেতা গোলাম আযম ও আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের বিরুদ্ধে মামলার অন্যতম সাক্ষী। নেদারল্যান্ডস থেকে এসেছিলেন উদ্যোক্তা সংগঠনের ড. পিটার কাস্টার্স ও বিকাশ চৌধুরী বড়–য়া। লন্ডন থেকে ছিলেন গণহত্যা বিশেষজ্ঞ ডেভিড রাসেল ও আনসার আহমদ উল্লা। নির্ধারিত বক্তৃতার বাইরে রাখা হয়েছিল শ্রোতা-দর্শকদের জন্য অত্যন্ত প্রাণবন্ত মুক্ত আলোচনা ও প্রশ্নোত্তর।
আমার বক্তব্যের বিষয় ছিল যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পর্কে পশ্চিমে উত্থাপিত বিভিন্ন প্রশ্ন ও বিভ্রান্তির জবাব এবং বিচারের প্রাসঙ্গিকতা ও যৌক্তিকতা। গত বছর ইউরোপীয় পার্লামেন্টের এক শুনানিতেও এসব বিষয়ে বলতে হয়েছে। গতবার লন্ডনে যুক্তরাজ্যের লর্ড সভার সদস্য এবং ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর অন্যতম উপদেষ্টা লর্ড কার্লাইলের সঙ্গে আলোচনার সময় তিনি প্রশ্ন করেছিলেন, ঢাকার আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে কেন আন্তর্জাতিক অঙ্গনের কোন বিচারক রাখা হয়নি, কেন ব্রিটিশ আইনজীবীকে ট্রাইব্যুনালে অভিযুক্ত তার মক্কেলের জন্য ওকালতি করতে দেয়া হয়নি। প্রশ্নেই বোঝা যায় লর্ড কার্লাইল কিভাবে জামায়াতের মিথ্যা প্রচারণার শিকার হয়েছেন। তাকে বলেছিলাম, ঢাকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কোন আন্তর্জাতিক আদালত নয়। আমাদের দেশীয় আইনের অধীনে গঠিত সম্পূর্ণভাবে একটি দেশীয় আদালত। লর্ড কার্লাইল জানতে চেয়েছিলেন, তাহলে আমরা আদালতের নামের সঙ্গে আন্তর্জাতিক শব্দটি কেন যুক্ত করেছি। তাকে বলেছি, গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ আন্তর্জাতিক আইনে দ-নীয় অপরাধ। বাংলাদেশের মাটিতে সংঘটিত এ ধরনের আন্তর্জাতিক অপরাধের বিচারের জন্য ১৯৭৩ সালে আমাদের সরকার 'আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন' প্রণয়ন করেছিল। আইনে এই অপরাধগুলো সংজ্ঞায়িত করে বলা হয়েছে বাংলাদেশ এর বিচার কীভাবে করবে। ঢাকার ট্রাইব্যুনাল হচ্ছে কতিপয় আন্তর্জাতিক অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিচারের জন্য গঠিত একটি দেশীয় আদালত। লর্ড কার্লাইলকে আরও বলেছিলাম, প্রত্যেক দেশের বিচার ব্যবস্থা সে দেশের মানুষের সভ্যতার ইতিহাস, সংস্কৃতি ও সামাজিক মূল্যবোধ থেকে উৎসারিত। আমি আমার সংস্কৃতি ও জীবনবোধ যেমন অন্য দেশ ও সমাজের ওপর চাপিয়ে দিতে পারি না, একইভাবে আমরা আশা করি অন্যরা আমাদের স্বাধীন সার্বভৌম সত্তার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হবেন।
এসব কথা এবারও বলতে হয়েছে লন্ডন সম্মেলনে এবং সম্মেলনের পর ইংল্যান্ড ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের আইন প্রণেতাদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠকে। লন্ডনের আয়োজকরা আগে থেকেই এসব বৈঠকের দিনক্ষণ নির্ধারণ করে রেখেছিলেন। ৫ জুলাই প্রথম বৈঠক ছিল প্রভাবশালী ব্রিটিশ এমপি সাইমন হিউজের সঙ্গে। আমাদের দলে ছিলেন এ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল, ড. পিটার কাস্টার্স, বিকাশ চৌধুরী বড়–য়া, আনসার আহমদ উল্লা ও মিহির সরকার। সাইমন আমাদের কথা অত্যন্ত ধৈর্যের সঙ্গে শুনেছেন। জামায়াতের জঙ্গী সম্পৃক্তি এবং উগ্র মৌলবাদী হেফাজতে ইসলামের উত্থান সম্পর্কে তিনি মন্তব্য করেননি। বিচারের যৌক্তিকতা সম্পর্কে তিনি সহমত পোষণ করলেও শাস্তি সম্পর্কে তার অবস্থান অন্য সবার মতোই অনড়- বৃটেন মৃত্যুদ- সমর্থন করে না।
লন্ডনে অবস্থানকারী অভিযুক্ত গণহত্যাকারী চৌধুরী মুঈনুদ্দিনের বিচারের প্রসঙ্গ উত্থাপন করে সুলতানা কামাল তাকে বলেছেন, মৃত্যুদ-ের বিধান থাকার জন্য আপনি বলছেন চৌধুরী মুঈনুদ্দিনকে আপনারা বাংলাদেশের হাতে প্রত্যর্পণ করবেন না। আমরা আপনাদের আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। বাংলাদেশের ট্রাইব্যুনালে যদি মুঈনুদ্দিনের অপরাধ প্রমাণিত হয় বৃটেনের আদালতে কি আপনারা তার বিচার করবেন?
সাইমন হিউজ বলেছেন, বৃটেনে এ ধরনের বিচারের কোন নজির নেই। আমি বললাম, '৭১-এ চৌধুরী মুঈনুদ্দিনের বুদ্ধিজীবী হত্যা সম্পর্কে চ্যানেল ফোরে যখন 'ওয়ার ক্রাইমস ফাইল' প্রদর্শিত হয় তখন এ নিয়ে বৃটিশ পার্লামেন্টেও আলোচনা হয়েছিল। লেবার পার্টির এমপি উনা কিং তখন বলেছিলেন, বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশে গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত কিছু ব্যক্তি বৃটেনে এসে আশ্রয় নিয়েছে, যাদের প্রচলিত আইনে বিচার করা যায় এবং করা উচিত। তার এই বক্তব্য পার্লামেন্টের ধারাবিবরণী থেকে আমার একাধিক লেখায় উল্লেখ করেছি। এ বিষয়ে সাইমন কোন মন্তব্য করেননি। 
প্রাক্তন লেবারমন্ত্রী এবং আরেক প্রভাবশালী এমপি জিম ফ্রিজপ্যাট্রিক যখন মন্ত্রী ছিলেন, ব্রিটিশ প্রশাসনে মুসলিম মৌলবাদীদের অবস্থান সম্পর্কে মন্তব্য করে হৈচৈ ফেলে দিয়েছিলেন। গত বছর আমরা তাকে হিজবুত তাহ্রীরের কর্মকা- এবং লন্ডনে বসে বাংলাদেশে সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র সম্পর্কে বলেছিলাম। বিষয়টি তিনি পার্লামেন্টে উত্থাপন করেছিলেন। এবার জিম বললেন, আপনাদের আন্দোলন ও সংগ্রামের প্রতি আমার পূর্ণ সমর্থন আছে। আপত্তি শুধু অভিযুক্তদের মৃত্যুদ- প্রদানের দাবি সম্পর্কে। শাহবাগে আপনারা যেভাবে মৃত্যুদ-ের দাবি করছেন এটা সমর্থনযোগ্য নয়। এতে ট্রাইব্যুনালের ওপর চাপ দেয়া হচ্ছে।
তাকে বললাম, শাহবাগের তরুণরা মুক্তিযোদ্ধাদের এবং '৭১-এর শহীদদের সন্তান। মৃত্যুদ-ের বিধান যেহেতু আমাদের বিচার ব্যবস্থায় আছে- ভিকটিমদের পক্ষ থেকে তারা গণহত্যাকারীদের চরম শাস্তি দাবি করতেই পারে। অপরদিকে জামায়াত বলছে, এই ট্রাইব্যুনাল ও আইন তারা মানে না, বিচারকরা পক্ষপাতদুষ্ট। সাক্ষীদের তারা ভয়ভীতি দেখাচ্ছে, বিদেশে অপপ্রচার চালাচ্ছে। বিচার বন্ধের জন্য শত শত কোটি টাকা ব্যয় করে তারা লবিস্ট নিয়োগ করেছে। বরং জামায়াতই ট্রাইব্যুনালকে প্রচ- চাপের ভেতর রেখেছে। কিন্তু ট্রাইব্যুনাল সকল চাপ উপেক্ষা করে বিচার কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। জিম বললেন, জামায়াত ও মৌলবাদের বিরুদ্ধে আমাদের সংগ্রামে তিনি সব সময় পাশে থাকবেন।
জামায়াতের জঙ্গী সম্পৃক্তি এবং বিশ্বব্যাপী জঙ্গী মৌলবাদের সাম্প্রতিক উত্থান সম্পর্কে আমাদের সঙ্গে সহমত পোষণ করেছেন ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্য ড. চার্লস ট্যানক। এ বিষয়ে তাকে আমাদের প্রকাশনা ও প্রামাণ্যচিত্রগুলো প্রদান করেছি। তাকে আরও বলেছি, ইউরোপীয় পার্লামেন্টে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হওয়া দরকার। তুরস্ক থেকে ইন্দোনেশিয়া পর্যন্ত মুসলমানপ্রধান দেশগুলার সর্বত্র মৌলবাদীরা কিংবা মৌলবাদের প্রতি সহানুভূতিশীলরা ক্ষমতায়। ওআইসির দেশগুলোর ভেতর বাংলাদেশ হচ্ছে একমাত্র ব্যতিক্রম যেখানে এখনও ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক শক্তি ক্ষমতায় রয়েছে। মৌলবাদের জঙ্গী সন্ত্রাস থেকে ইউরোপকে মুক্ত রাখতে হলে যেসব দেশে মৌলবাদীরা শক্তিশালী ইউরোপীয় ইউনিয়নের উচিত সেসব দেশের মৌলবাদবিরোধী ধর্মনিরপেক্ষ মানবতাবাদীদের সমর্থন করা।
চার্লস ট্যানক আনসার, বিকাশ ও পিটারকে বললেন, এ বিষয়ে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের কোন কোন সদস্যের সঙ্গে তাদের আলোচনা করতে হবে। ইউরোপীয় পার্লামেন্টে আমাদের আরও ব্যাপক ও কার্যকর লবিংয়ের কথা বললেন তিনি।
ব্রিটিশ আইনসভার প্রবীণ সদস্য লর্ড এরিক এভবরি বাংলাদেশের মানবাধিকার সম্পর্কে সর্বদা উচ্চকণ্ঠ। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে সংখ্যালঘু ধর্মীয় ও এথনিক সম্প্রদায়ের ওপর যে নজিরবিহীন নির্যাতন চালিয়েছিল তখন আমাদের অনুরোধে লন্ডনে তিনি তিনটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন আয়োজন করে এর প্রতিবাদ করেছিলেন। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু হওয়ার পর বিলেতে জামায়াতের ব্রিটিশ আইনজীবী ও ভাড়া করা মানবাধিকার কর্মীরা লর্ড এভবরিকে এমনই প্রভাবিত ও বিভ্রান্ত করেছে গতবার তাকে ক্ষুব্ধ হয়ে বলেছিলাম, আপনি সব সময় গণহত্যার প্রতিবাদ করেছেন। আমার 'ওয়ার ক্রাইমস সেভেন্টিওয়ান' ছবিতে বলিষ্ঠভাবে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পক্ষে বলেছেন। আমি জানি না কী কারণে এখন ভিকটিমদের চেয়ে গণহত্যাকারীদের মানবাধিকারের বিষয়টি আপনার কাছে এত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
আমার ওপর বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের নির্যাতনের প্রতিবাদ করেছেন লর্ড এভবরি। আমাকে তিনি অত্যন্ত স্নেহ করেন। তাকে কেউ জামায়াতের সমর্থক বললে আমারও গায়ে লাগে। তবে আইসিটি সম্পর্কে তার ভ্রান্ত ধারণা আমরা দূর করতে পারিনি। এবার তার সঙ্গে বৈঠকে এ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল থাকাতে আমাদের সুবিধে হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক একটি আন্তর্জাতিক কমিশনের চেয়ারম্যান ও কো-চেয়ার হচ্ছেন লর্ড এভবরি ও সুলতানা কামাল। আমরা তাকে হেফাজতের সাম্প্রতিক উত্থান এবং হেফাজতের জামায়াত সম্পৃক্তির যাবতীয় তথ্য সরবরাহ করে বললাম, জামায়াত কিভাবে বাংলাদেশে মধ্যযুগীয় বর্বরতা ফিরিয়ে আনতে চায়। হেফাজতের ১৩ দফার অন্যতম লক্ষ্য পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়িরা- এটি জেনে লর্ড এভবরি খুবই বিব্রত হলেন। সুলতানা কামাল হেফাজতের নারীবিদ্বেষী অবস্থানের কথাও বললেন।
এবারই প্রথম জামায়াত সম্পর্কে লর্ড এভবরিকে উদ্বিগ্ন মনে হলো। তিনি বলেছেন, ওদের হেইট ক্যাম্পেইনগুলো কি তোমরা সূত্রসহ আমাকে দিতে পারবে? সুলতানা কামাল বললেন, শাহরিয়ারদের কাছে সব তথ্য আছে। আমি বললাম, আমরা হেফাজতে ইসলাম সম্পর্কে শীঘ্রই একটি শ্বেতপত্র প্রকাশ করব। আপনি যা চাইছেন সবই ওতে পাবেন।
ব্রিটিশ আইনপ্রণেতা ও ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্যবৃন্দ ছাড়াও এবার লন্ডন সম্মেলনে বাংলাদেশী বিভিন্ন মানবাধিকার ও সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সঙ্গেও আমাদের মতবিনিময় হয়েছে। হেফাজতের সাম্প্রতিক উত্থান এবং এ ক্ষেত্রে সরকারের নমনীয় মনোভাবে সবাই উদ্বিগ্ন। আমি তাদের বলেছি, যদি কোনভাবে হেফাজত-জামায়াত-বিএনপি ক্ষমতায় আসতে পারেÑ ২০০১ সালে তারা যা করেছিল এবার তার শত গুণ করবে। আওয়ামী লীগ অনেক সমালোচনার কাজ করেছে। কিন্তু গত চার বছরে অর্থনীতি, শিক্ষা, সামাজিক উন্নয়ন, কৃষি, স্বাস্থ্য, বিদ্যুত প্রভৃতি ক্ষেত্রে এ সরকার যে সাফল্য প্রদর্শন করেছে এর আগে কোন সরকার তা করতে পারেনি। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও শাস্তি নিশ্চিত করতে হলেও মহাজোটকে আবার ক্ষমতায় আসতে হবে। হেফাজত ও জামায়াত সম্পর্কে ৬ মে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, এদের আর ছাড় দেয়া হবে না। সরকার এ ক্ষেত্রে অনমনীয় হলে মহাজোট অবশ্যই ক্ষমতায় আসবে। হেফাজত-জামায়াতের সঙ্গ না ছাড়লে বিএনপিকে মানুষ বিজয়ী করবে না। 
লন্ডন সম্মেলনের সফল উদ্যোক্তাদের সঙ্গে তাদের পরবর্তী কার্যক্রম সম্পর্কে আলোচনা হয়েছে। সম্মেলনে গণজাগরণ মঞ্চের কেউ অংশ নিতে পারেননি এটি তাদের কিছুটা হতাশ করেছে। তাদের বলেছি আপনারা এ বছরের শেষে বাংলাদেশের শাহবাগ চত্বর, মিসরের তাহরির এবং তুরস্কের তাকসিম স্কয়ারের তরুণ নেতাদের নিয়ে একটি সম্মেলন করতে পারেন। 
বিকাশ ও পিটার নীতিগতভাবে আমার প্রস্তাবে সম্মত হয়েছেন। তারা জানতে চেয়েছেন মিসর ও তুরস্ক থেকে কারা আসবেন। গত মাসে মিসর সফরকালে তাহরির স্কয়ারের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তুরস্কে তাকসিমের নেতাদের সঙ্গে কথা হবে।
তরুণরা সব দেশে সব সময়ে সমাজবিপ্লবে সবচেয়ে বেশি অংশগ্রহণ করেছে, নেতৃত্ব দিয়েছে। শাহবাগ, তাহরির ও তাকসিমের তরুণরা মৌলবাদীদের আক্রমণের প্রধান লক্ষ্যে পরিণত হয়েছে, অকাতরে জীবন দিচ্ছে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনের প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক শক্তির উচিত এদের প্রতি সমর্থন ও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়া। এই তরুণরাই আগামী দিনে মুসলিম বিশ্বের মৌলবাদীকরণের বিরুদ্ধে ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দেবে। এরাই আমাদের স্বপ্ন, আমাদের ভবিষ্যত।

(দ্বিতীয় পর্ব আগামীকাল)
২৪ জুলাই ২০১৩

Also Read:
লন্ডন থেকে আঙ্কারা (দুই) জামায়াতের আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক ॥ বিপন্ন ধর্মনিরপেক্ষ গণতন্ত্র




__._,_.___


****************************************************
Mukto Mona plans for a Grand Darwin Day Celebration: 
Call For Articles:

http://mukto-mona.com/wordpress/?p=68

http://mukto-mona.com/banga_blog/?p=585

****************************************************

VISIT MUKTO-MONA WEB-SITE : http://www.mukto-mona.com/

****************************************************

"I disapprove of what you say, but I will defend to the death your right to say it".
               -Beatrice Hall [pseudonym: S.G. Tallentyre], 190




Your email settings: Individual Email|Traditional
Change settings via the Web (Yahoo! ID required)
Change settings via email: Switch delivery to Daily Digest | Switch to Fully Featured
Visit Your Group | Yahoo! Groups Terms of Use | Unsubscribe

__,_._,___