তালেবানদের 'বাবা'
খ্যাতি তাঁর তালেবানদের 'বাবা' হিসেবে। পাকিস্তানের কট্টরপন্থী এ মৌলভি তালেবান বাহিনীর নেতা মোল্লা ওমরকে মনে করেন 'ফেরেশতার মতো মানুষ'। তিনি এমন এক মাদ্রাসা চালান, যেটিকে তিনি 'জিহাদের বিশ্ববিদ্যালয়' বলে প্রচার করেন।
ইনি মাওলানা সামি উল-হক। চোখে চশমা পরেন, কথা বলেন নিচু স্বরে। পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের অনেক মানুষ তাঁকে শ্রদ্ধার চোখে দেখে। দুদেশের তালেবানদের ওপরেই তাঁর সমান মতাদর্শিক প্রভাব।
আফগান সীমান্তের কাছে এক সাদামাটা ও ধূলিময় পাকিস্তানি শহরে তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন দারুল উলুম হাক্কানি বিশ্ববিদ্যালয়। এটি মহাসড়ক থেকে বেশ খানিকটা ভেতরে। ১৯৯০-এর দশকে এ মাদ্রাসাটি থেকেই তালেবান আন্দোলনের উত্পত্তি। এটি এখনো উগ্র ইসলামপন্থী তৈরির এক বিশাল কেন্দ্র।
সম্প্রতি রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাত্কারে সামি উল-হক কোনো রাখঢাক ছাড়াই তালেবানদের প্রতি তাঁর সমর্থনের কথা জানান। পশতু ভাষায় 'তালেবান' শব্দের অর্থ 'শিক্ষার্থী'। তিনি তাঁর তালেবানদের প্রতি এতটাই সন্তুষ্ট যে, তাঁর দৃঢ়বিশ্বাস খুব শিগগিরই তালেবানেরা আফগানিস্তানের ক্ষমতায় ফিরবে। সামি উল-হক তাঁর নিজ শহর আকোরা খাত্তাকে বসে রয়টার্সের প্রতিনিধিকে সাক্ষাত্কার দেন।
সামি উল-হক বলেন, 'ওদের শুধু একটা বছর সময় দিন, পুরো আফগানিস্তানে ওরা সুখ-শান্তি এনে দেবে। পুরো আফগানিস্তান ওদের পক্ষে চলে যাবে। আমেরিকানরা চলে গেলে, মাত্র এক বছরেই এসব ঘটবে।'
তালেবানদের সঙ্গে সামি উল-হকের প্রত্যক্ষ সম্পর্ক থাকলেও, তাঁর মাদ্রাসা পাকিস্তান সরকারের অনুমোদিত। তালেবানদের নিয়ে পাকিস্তান সরকারের দ্বিধান্বিত মনোভাবের একটি পরিচয় এ ঘটনার মধ্যদিয়েই মেলে।
সামি উল-হক স্বীকার না করলেও ধারণা করা হয়, পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর সঙ্গে তাঁর গলায় গলায় পিরিত। কাবুলের সরকার দীর্ঘদিন ধরে ইসলামাবাদের দ্বিমুখীনতার বিরুদ্ধে অভিযোগ করে আসছে। কাবুল বলছে, ইসলামাবাদ একই সঙ্গে উগ্রবাদীদের আশ্রয় দিচ্ছে আবার প্রকাশ্যে ওইসব উগ্রবাদীদের দমনের জন্য হম্বিতম্বি করছে।
১৯৮০-র দশকে দারুল উলুম হাক্কানির শিক্ষার্থীরা বই ফেলে হাতে অস্ত্র তুলে নেয়। আফগানিস্তান থেকে সোভিয়েত কমিউনিস্টদের হটাতে তারা মার্কিন বাহিনী ও আফগান মুজাহিদিনদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করে। এদের অন্যতম মোল্লা মোহাম্মদ ওমর। ১৯৮৯ সালে সোভিয়েত বাহিনী লেজ গুটালে তিনি তালেবান আন্দোলন শুরু করেন। ধারণা করা হয়, এখন তিনি আফগান-পাকিস্তান সীমান্তের পশতু এলাকায় লুকিয়ে আছেন।
সামি উল-হক যখন মোল্লা ওমর প্রসঙ্গে কথা বলছিলেন, তখন তাঁর চেহারা উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। ওমর এখন কোথায়—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জোরে হেসে ওঠেন। বলেন, 'সে খুব ধার্মিক মুসলমান, খুবই ধর্মপ্রাণ। যথেষ্ট অতিথিপরায়ণ। কোনো রাজকীয় আকাঙ্ক্ষা নেই বলে সে খুব সাদামাটা।'
উর্দু ও পশতু ভাষায় সামি উল-হক আরও বলেন, 'সে খুবই বুদ্ধিমান। রাজনীতি বুঝে আর বহিরাগতদের চালাকি সহজেই ধরতে পারে।... সে তো কোনো আক্রমণকারী নয়, ফেরেশতার মতো মানুষ।'
সামি উল-হকের মাদ্রাসাটির প্রতিষ্ঠা ১৯৪৭ সালে। এটি দেওবন্দ ধারার শিক্ষাব্যবস্থায় পরিচালিত। উঁচু দেয়াল ও কাঁটাতারে ঘেরা এ মাদ্রাসাটিতে এখন প্রায় চার হাজার ছাত্র পড়াশোনা করে।
সামি উল-হক বলেন, তাঁর ছাত্রদের সঙ্গে সন্ত্রাসবাদের কোনো সম্পর্ক নেই। যুক্তরাষ্ট্র ও তালেবান যোদ্ধাদের মধ্যে মধ্যস্থতা করার বিষয়টিও জানান তিনি: 'গত জুলাই মাসে পাকিস্তানে নিয়োজিত মার্কিন রাষ্ট্রদূত আমার সঙ্গে সাক্ষাত্ করতে এসেছিলেন। তিনি এ অঞ্চলের পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেন।' তবে সামি উল-হক জানান, যত দিন আফগানিস্তানের মাটিতে বিদেশি সেনারা থাকবে, তত দিন শান্তির কোনো আশা নেই। তিনি বলেন, 'এটি মুক্তির জন্য যুদ্ধ। বিদেশিরা চলে না যাওয়া পর্যন্ত এটি থামবে না।'
ধারণা করা হচ্ছে, সামি উল-হকের তত্পরতায় তালেবানেরা আলোচনার টেবিলে ফিরবে। কিন্তু তালেবানেরা কি তাঁর কথা শুনবে?
সামি উল-হক বলেন, 'ওরা আমার ছাত্র। আমাদের রীতিতে, শিক্ষক হলেন বাবা, একজন আধ্যাত্মিক নেতার মতো। মুক্তির জন্য আফগানদের লড়তে দেওয়া উচিত। বিদেশিরা চলে যাক, তারপর ওরা যা করতে চায় করুক।'
পাঠকের মন্তব্য ( ৮ )
- রুবেল হাসান২০১৩-০৯-১৫ ২১:০১ via computer
পাকিস্তান রাষ্ট্রটা অল্পদিনে ধ্বংস হবে , অবশী আলামত ইতিমদ্ধে দেখা দেওয়া শুরু হয়েছে ।
- নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক২০১৩-০৯-১৫ ২১:১৮ via computer
আমাদের দেশের মাদ্রাসাগুলোর দিকে বিশেষ করে কওমি মাদ্রাসার দিকে সরকারের নজর দেয়া উচিত।আমার আশঙ্কা হয় এরা না জানি কখন ওইসব বর্বর তালেবানদেররূপ পরিগ্রহ করে! বিশেষভাবে ধর্মীয় শিক্ষায় সংস্কার আনা জরুরী বলে মনে করছি। যুগ যুগ ধরে হাদিস ও অন্যান্য নামে ইসলামের মধ্যে যে ইহুদীবাদী ইসরাইলী সংস্কৃতি ঢুকেছে সেগুলোর মূলোৎপাটন জরুরী মনে করছি। পুরনো মান্ধাতার আমলের ধর্মীয় শিক্ষাই এসব জঙ্গি উৎপাদনের মূল কারন।
- নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক২০১৩-০৯-১৫ ২২:২৯ via computer
আপনি লিখেছেন, "যুগ যুগ ধরে হাদিস ও অন্যান্য নামে ইসলামের মধ্যে যে ইহুদীবাদী ইসরাইলী সংস্কৃতি ঢুকেছে সেগুলোর মূলোৎপাটন জরুরী মনে করছি।" ইসলাম সম্পর্কে কতটা অজ্ঞতা ও বিদ্বেষ, থাকলে একজন লোক এরকম কথা বলতে পারে,এটা সুস্থজ্ঞানসম্পন্ন মানুষের বুঝার কথা। সাম্রাজ্যবাদী প্রভুদের উচ্ছিষ্টই যাদের রুটি-রুজিরএকমাত্র অবলম্বন, তাদের কাছে সত্য কোনদিনই ভাল লাগবেনা এটাই স্বাভাবিক।
- নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক২০১৩-০৯-১৫ ২১:৫৮ via computer
বাংলাদেশের সংবিধানের ২৫ অনুচ্ছেদের (গ) রাষ্ট্র "সাম্রাজ্যবাদ, ঔপনিবেশিকতাবাদ বা বর্ণবৈষম্যবাদের বিরুদ্ধে বিশ্বের সর্বত্র নিপীড়িত জনগণের ন্যায়সঙ্গত সংগ্রামকে সমর্থন করিবেন৷" তালেবানরা যেহেতু সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে, সুতরাং বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী তাদেরকে সমর্থন করাইতো রাষ্ট্র ও জনগণের দায়িত্ব। নাকি, আফগানিস্তান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পৈতৃক সম্পত্তি ?
- নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক২০১৩-০৯-১৫ ২২:৩১ via computer
তা, সবক্ষেত্রে সংবিধান মানেন তো? বিশেষ করে সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষতা,তক্তাব্ধায়ক সরকারের বিলুপ্তিসহ সকল বিষয়? আফগানিস্তান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পৈতৃক সম্পত্তি না,আবার কিছুদিন আগে তালেবানদের হাতে নিহত সুস্মিতা, বিন লাদেন-টুইন টাওয়ারে নিহতরা-ধর্মের নামে মিথ্যা বলে হত্যা করা মানুষেরা-শিক্ষার জন্য তৈরি স্কুল কলেজ-বৌদ্ধদের বামিয়ানে ধর্মীয় মূর্তি-ইসলাম ধর্মত্যাগী লোকেরা এরা কেউই তালেবানদের পৈতৃক সম্পত্তি না।
- Akhter Hossain২০১৩-০৯-১৫ ২২:১২ via computer
koomi Madrasha Taliban style . lets wait and see they will make Bangladesh Afghanistan .
- নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক২০১৩-০৯-১৫ ২৩:০৭ via computer
তার মানে, সংবিধানের যেটুকু আপনাদের মন মত সেটুকু মানবেন !
- নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক২০১৩-০৯-১৫ ২৩:২২ via computer
তার আফিম আর হিরোইন চাষাবাদের খামারের কথা কিছু বললেন না ??
__._,_.___