বল এখন হাসিনার কোর্টে
31 Oct, 2013
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রস্তাবিত সর্বদলীয় সরকারে বিএনপি যোগ দিতে পারে বলে মনে করেন ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম। তিনি বলেন, মূল সমস্যাটা হচ্ছে, নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান কে হবেন? এখন শেখ হাসিনা যদি তার প্রজ্ঞা, দূরদর্শিতা ব্যবহার করেন, তিনি তো বলেছেনই তিনি সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত আছেন- সর্বোচ্চ ত্যাগ বলতে যদি তিনি প্রধানমন্ত্রিত্বকে বুঝিয়ে থাকেন- এখানে যদি তিনি সমঝোতায় পৌঁছাতে পারেন তাহলে সঙ্কটের সমাধান হয়ে যাবে। বল এখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কোর্টে। বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল বাংলাভিশনে গতকাল সরাসরি সমপ্রচারিত টকশো ফ্রন্টলাইন-এ তিনি এসব কথা বলেন। সাংবাদিক মতিউর রহমান চৌধুরীর সঞ্চালনায় এ অনুষ্ঠানে উভয় জোটকে সমঝোতায় পৌঁছার জন্যও তাগিদ দেন মাহফুজ আনাম। প্রাণবন্ত এ টকশোতে নানা বিষয়ে খোলামেলা কথা বলেন দুই সিনিয়র সাংবাদিক। দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে সাংবাদিকদের ভূমিকা কি হওয়া উচিত মাহফুজ আনামের কাছে তা জানতে চেয়েছিলেন মতিউর রহমান চৌধুরী। জবাবে মাহফুজ আনাম গণতন্ত্র রক্ষার পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নিতে সব সাংবাদিক ও সংবাদ মাধ্যমের প্রতি আহ্বান জানান। মাহফুজ আনাম বলেন, দল হিসেবে টু থার্ড মেজরিটি ও জোট হিসেবে ফোর থার্ড মেজরিটি সাপোর্ট নিয়ে ক্ষমতায় আসার পরও পৌঁনে পাঁচ বছরে আওয়ামী লীগকে সংবিধান পরিবর্তন করে কেন ক্ষমতায় আসতে হবে? কেন তারা ইনসিকিউরড? আমার মনে হয় আওয়ামী লীগের আত্মপর্যালোচনা করা দরকার। দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হয় না এটি আওয়ামী লীগই আমাদের মাথায় ঢুকিয়েছে। আওয়ামী লীগ যত শিগগির বাস্তবতা মেনে নেবে ততই মঙ্গল। শেখ হাসিনাকে করজোড়ে অনুরোধ করে বলবো, আপনি এখানে একটা সমঝোতায় আসুন। দেশের বেশির ভাগ মানুষ তত্ত্বাবধায়ক চায়। তারা কি সবাই বিএনপির লোক? দুই নেত্রীর টেলিফোন আলাপের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, টেলিফোনে আলাপের আগের পরিবেশ খুব যে ভাল ছিল তা কিন্তু না। গুরুত্বপূর্ণ ছিল প্রধানমন্ত্রীর ফোন করা। শেখ হাসিনা দাওয়াত দিলেন ২৮ তারিখ। খালেদা জিয়া বললেন ৩০ তারিখ। অপজিশনের উচিত ছিল এই দাওয়াত গ্রহণ করা। তবে এখনও সময় আছে। ৪ তারিখে অবরোধ। এর আগে ১, ২, ৩ তারিখে বিরোধীদলীয় নেত্রী বঙ্গভবনে যেতে পারেন। খালেদা জিয়া মির্জা ফখরুলকে দিয়ে ফোন করাতে পারেন। তেমনি শেখ হাসিনাও সৈয়দ আশরাফকে দিয়ে ফোন করাতে পারেন। আমাদের সমস্ত রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ একটি ইগোর জায়গায় থেমে যায়। সত্যিকার অর্থে মান- অপমান বোধের ঊর্ধ্বে উঠতে হবে। নইলে সমঝোতা হবে না। এখন তারা কে আবার আগে ফোন করবেন তা নিয়ে কথা হচ্ছে। উভয়কেই বলছি, এটি দেশের জনগণের প্রতি চরম অশ্রদ্ধার একটি ইঙ্গিত। তাদের এত আত্মম্ভরিতা কি কারণে সেটি বোধগম্য নয়। দুই দলই আলোচনায় যাচ্ছে আবার সংঘাতের প্রস্তুতি নিচ্ছে। তিনি বলেন, একজন বলছেন যে কোন মূল্যে নির্বাচন প্রতিহত করবেন। খালেদা জিয়া বলছেন নির্বাচন প্রতিরোধ কমিটি করা হবে। তারা কি নির্বাচনী কেন্দ্রে স্লোগান দেবে? তারা তো মারামারি করবে। একদল মারামারি করলে আরেক দলও মারামারি করবে। অনিবার্য সংঘাত চোখের সামনে দেখা যাচ্ছে। মাহফুজ আনাম বলেন, এটি (সংঘাত) ব্যাপক আকার ধারণ করার আশঙ্কা আছে। দুই নেত্রী প্রায় ২২ বছর করে দেশ পরিচালনা করেছেন। এত অভিজ্ঞতা থাকার পরও ওনারা বোঝেন না তাদের সমঝোতার অভাবে দেশ কোথায় যাচ্ছে? 'রাজনীতি কার জন্য'- উপস্থাপকের এমন প্রশ্নের উত্তরে হাস্যোজ্জ্বল মাহফুজ আনাম বলেন, যদি গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি তাহলে জনগণের জন্য আর যদি দলে বিশ্বাস করি তাহলে নিজের জন্য। একটি স্লোগান প্রায়ই শোনা যায় জ্বালো জ্বালো আগুন জ্বালো। কার গদিতে আগুন জ্বালাবো? এটি তোমার দেশ না? ওরা তোমার প্রতিবেশী না? যে গাড়িটি পোড়ানো হবে এই গাড়ির মালিক ট্যাক্স দেয় না? আমি অত্যন্ত দুঃখিত তারপরও তারা রিগ্রেট করে না। আমার দেশের সম্পদ পুড়ছে, রাস্তাঘাটে লোক মরছে, তারপরও ওনারা জনদরদি। এই যে হরতালে এত লোক মরলো কই ওনারা তো কোন দুঃখ প্রকাশ করেননি। 'দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ কি'- মতিউর রহমান চৌধুরীর এমন প্রশ্নের উত্তরে ডেইলি স্টারের সম্পাদক বলেন- যেভাবে আমরা গণতন্ত্রের চর্চা করে আসছি এটা টেকসই নয়। গণতন্ত্রের প্রধান প্রধান ইনস্টিটিউটগুলো বদলাতে হবে। মুখে গণতন্ত্র বলছি আবার রাজনৈতিক সংঘাতে জড়াচ্ছি এটি হতে পারে না। দুই দলকে সাংবিধানিকভাবে সচেতন করা জরুরি। সব শ্রেণী-পেশার মানুষের এই দায়িত্ব নিতে হবে।
__._,_.___