বোমাগ্নিদগ্ধ মুনীর মারা গেছে ॥ ইন্নালিল্লাহি ...
মুহম্মদ শফিকুর রহমান
বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটে গেল গত সপ্তাহে। খুব দ্রুত। একটার পর একটা। আমাদের জাতীয় রাজনীতিতে সমাজনীতিতে সে সব ঘটনা ইতিবাচক পথনির্দেশ দেবে সন্দেহ নেই।
প্রথমেই উল্লেখ করছি, আমাদের মাননীয় হাইকোর্ট একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকালে রাজাকার-আল বদর-আল শামস-দালাল, শান্তি কমিটির জন্মদাতা পাকি মিলিটারির দোসর জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করে দিয়েছে। দ্বিতীয়ত মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের প্রাক্কালে ১৩-১৪ ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবী হত্যাকারী আল বদর ঘাতক চৌধুরী মাঈনুদ্দিন এবং আশরাফুজ্জামান খানকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার রায় দিয়েছে। তৃতীয়ত ঢাকার পিলখানা হত্যাকাণ্ডের রায় হয়েছে। রায়ে বিডিআর-এর ডিজিসহ ৫৭ জন অফিসারসহ ৭৪ জনকে নৃশংসভাবে হত্যার দায়ে ১৫২ বিডিআর সদস্যের ফাঁসি এবং ১৬১ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। ১০ বছরের কারাদণ্ড সহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজা হয়েছে আরও ২৫৬ জনের। বিডিআর হত্যাকাণ্ড যে পাকি ষড়যন্ত্র ছিল তাই আজ উৎঘাটিত।
মূল বিষয়বস্তুতে যাবার আগে বলে রাখা ভাল যে, আজকের লেখাটি হবে পাঁচ মিশেলি। কোন একটি বিষয়ের ওপর সীমাবদ্ধ থাকবে না এবং একাধিক বিষয়ের অবতারণা করা হবে। দৈনিক জনকণ্ঠের কাছে আমি কৃতজ্ঞ, তারা সপ্তাহে আমার একটি লেখা প্রকাশ করেন তাদের চতুরঙ্গ পাতায়। কখনাও সখনও বিশেষ ইস্যুতে সপ্তাহের মাঝখানেও লেখার সুযোগ দিচ্ছেন। জনকণ্ঠে লেখার পেছনে আমার একটা বিশ্বাস কাজ করে। কেননা এই পত্রিকাটি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধে বিশ্বাস করে। এই জনকণ্ঠেই প্রয়াত কিংবদন্তি লেখক হুমায়ূন আহমেদের সেই বিখ্যাত ডায়লগ 'তুই রাজাকার' নিয়মিত ছাপা হয়েছিল। সেদিন যাদের 'তুই রাজাকার' বলা হয়েছিল তাদের নেতৃস্থানীয় অনেকেরই এরইমধ্যে আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার হয়েছে। বিচারে ফাঁসি এবং যাবজ্জীবন সাজা হয়েছে। বিচার চলছে। ৪২ বছর পর বাংলাদেশ শহীদদের রক্তঋণ পরিশোধের পথে এগিয়ে চলেছে আর এ যুদ্ধের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বাঙালী জাতি রাষ্ট্র পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের কন্যা এ সময়ের সাহসী প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা।
একটি বিষয় খুব গুরুত্বপূর্ণ। যে সব পত্রিকা বা টেলিভিশন সাংবাদিকতার বস্তুনিষ্ঠতা নিরপেক্ষকতার নামে মুক্তিযোদ্ধা ও রাজাকারকে এক পালায় মাপে বা যারা 'দুই নেত্রী' 'দুই নেত্রী' বলে 'আকবর বাদশার সঙ্গে হরিপদ কেরানীর তুলনা' করেন তাঁরা একটি হীন উদ্দেশ্যে তা করেন। এটাকে মতলববাজি ছাড়া অন্য কিছু বলা যাবে না। কিংবা একজন শান্ত সিগ্ধ, সুশীল, মেধাবী, দূরদর্শী রাষ্ট্রনেতার পাশে সশিক্ষিতা কলতলার মুখরা রমণীকে বসান, তাদের উদ্দেশ্য ভাল নয়। গণতন্ত্রের মানসকন্যার সঙ্গে সন্ত্রাসের রানীর তুলনা হয় না।
বর্তমান বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ইংরেজী দৈনিক 'The Daily Star' পত্রিকার গত মঙ্গলবারের ইস্যুতে সম্পাদক মাহফুজ আনাম An appeal to our higher judiciary–save us from hartal, pre-Hartal violence শিরোনামে একটি মন্তব্য প্রতিবেদন লিখেছেন। পত্রিকার প্রথম পৃষ্ঠার ডান পাশে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে ছাপা হয়েছে। প্রতিবেদনের পাশেই একটি ছবি ছাপা হয়েছে যাতে দেখা যাচ্ছে সারা শরীর অগ্নিদগ্ধ কিশোর মুনিরের (১৪ বছর) পাশে তার বাবা মাথায় হাত দিয়ে বসে আছেন। ছবির ক্যাপশন হল "In the name of politics this is what they do to people"-এর নিচে ৫ কলাম শিরোনাম দিয়ে শাহীন মোল্লা ও জায়েমা ইসলামের রিপোর্ট। রিপোর্টটির শিরোনাম হলো "Brutality beyond belief".
মাহফুজ আনাম তাঁর মন্তব্য প্রতিবেদনে (১৯৬৭-৭৩ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে জানাশোনা ছিল) হরতাল সমর্থনকারীদের বা তথাকথিত পিকেটারদের বোমায় তামাম শরীর ঝলসে যাওয়া কিশোর মুনির ও শিশু সুমীর অসহনীয় কষ্টের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে, এর বিচার চেয়ে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত হাইকোর্ট সুপ্রীমকোর্টের কাছে আবেদন করেছেন। With due respect for our high court and appellate division of the supreme court judges, we humbly draw their kind attention to our front page picture (সারা শরীর অগ্নিদগ্ধ কিশোর মুনিরের পাশে মাথায় হাত বাবার ছবি) of 14 year old Munir and urged them to kead his story and that of the 8 year old Shumi..........."
প্রিয় সম্পাদক মহোদয় তাঁর মন্তব্য প্রতিবেদনে মুনীর-সুমীদের যন্ত্রণার প্রতি উচ্চতর আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করে মূলত যে কথাটি বলেছেন তা হলো আপনারা কিছু একটা পদক্ষেপ নিন। যে হরতাল মানুষের জীবন কেড়ে নেয়, শরীর পুড়িয়ে ঝলসে দেয়, ধন-সম্পদ পুড়িয়ে ছাই করে, গাড়ি-বাড়ি-দোকানপাট পুড়িয়ে ছাই করে, ভেঙ্গে চুরমার করে দেয়, সে হরতাল ডাকার এবং তা বাস্তবায়নের অধিকার কোন প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর আছে কিনা? এটিই বলতে চেয়েছেন বলে আমি মনে করি। আমি সম্মানীয় সম্পাদকের সঙ্গে একমত পোষণ করে বলতে চাই, সময় এসেছে ভুক্তভোগী জনগণের পক্ষে আদালতের দাঁড়ানোর। এটি একেবারেই আমার অভিমত এ কারণে যে আমার মনে হয় আমাদের সংবিধান আদালতকে সেই অধিকার দিয়েছে। কেননা, হরতাল আহ্বান যদি খালেদা জিয়া বা জোটের পা-াদের মৌলিক অধিকার হয়, তবে মুনির-সুমীদের কি মানবাধিকার থাকতে নেই? মৌলিক অধিকার থাকতে নেই? ১৯৯৯ সালে মাননীয় হাইকোর্ট হরতালকে 'সাংবিধানিক অধিকার' হিসেবে ঘোষণা করার সঙ্গে এও বলেছিলেন যে, 'জবরদস্তিমূলকভাবে হরতাল চাপিয়ে দেয়া অপরাধ' হিসেবে গণ্য হবে। পরবর্তীকালে সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগ এই রায়ের প্রথম অংশ বহাল রেখে দ্বিতীয় অংশ অর্থাৎ 'জবরদস্তিমূলক হরতাল অবৈধ' এই অংশ বাতিল করে দেন। ফলে হরতাল আহ্বানকারীরা আরও বেশি বেশি নাশকতা করতে উৎসাহী হলো এই রায়ের মাধ্যমে। আমি জানি না মাননীয় সুপ্রীমকোর্ট আমার মতামতটি কিভাবে গ্রহণ করবেন, না কি আদালত অবমাননার দায়ে আমাকে হাতকড়া পরাবেন? আমি মনে করি যারা দায়িত্বহীন হরতাল ডাকবেন সে জন্য তাদের ওপর জরিমানার একটি আইন থাকা দরকার। এই যেমন আমরা শুনেছি হরতাল আহ্বানকারীরা ঘরে বসে থাকে আর জামায়াত-শিবির সন্ত্রাসীরা রাস্তায় মানুষ মারছে, পুলিশ হত্যা করছে, বোমা মেরে কারো শরীর ঝলসে দিচ্ছে, কারো অঙ্গ বিচ্ছিন্ন করছে। শোনা যায় হরতালে পিকেটিং করার জন্য সন্ত্রাসী, বোমাবাজ ভাড়া করা হচ্ছে। তাদের এডভান্স তো দিচ্ছেই, কাজ হবার পর আরও টাকা দিচ্ছে। অথচ হরতাল আহ্বানকারীরা বলে উঠবেন, না, স্বতঃস্ফূর্ত হরতাল হয়েছে। যেমন ডেইলি স্টার-এর মুনীরের পুড়ে যাওয়া শরীর ও তার বাবার মাথায় হাত দিয়ে বসে থাকা- এই ছবিটির পাশে দুই জোটের দুইজন নেতার ২টি মন্তব্য ছাপা হয়েছে। বিএনপির ভারাক্রান্ত মহাসচিব মিথ্যার ডিকশেনারি মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বললেন, 'ওঃং ঃযব মড়াবৎহসবহঃ ধমবহঃং যিড় পধৎৎু ড়ঁঃ ংঁপয ধপঃরারঃরবং ঃড় ফবভধসব ড়ঁৎ ঢ়বধপবভঁষ যধৎঃধষ' পক্ষান্তরে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ বলছেন 'ঈধফৎবং ড়ভ ইঘচ-ঔধসধঃ, যিরপয যধং পধষষবফ ঃযব রষষবমধষ যধৎঃধষ ধৎব ৎবংঢ়ড়হংরনষব ভড়ৎ ঃযব রহপরফবহঃ'
এই কমেন্ট দেখে একটি হিন্দী ছবির কথা মনে পড়ল। আদালতে বিচার প্রার্থী এক নারী (বাঙালি নায়িকা বিদ্যা বালান), তাঁর বোনকে কে বা কারা খুন করেছে। বোনের নাম জেসিকা। তাঁর পক্ষে মামলা লড়ছেন আরেক বাঙালী নায়িকা রানী মুখার্জি। এক পর্যায়ে মামলার রায় হলো, রায়ে আসামিরা সব খালাস পেয়ে গেল। রানী মুখার্জি চিৎকার করে বলছেন ঔঁংঃরপব যধং নববহ ফবহরবফ, লঁংঃরপব যধং নববহ ফবহরবফ কিন্তু কে শোনে কার কথা? অর্থাৎ জেসিকা নামে এক নারী ছিল এবং তাকে হত্যা করা হয়েছে, এ সবই মিথ্যা প্রমাণিত হলো। এইভাবে ছবিটির নাম দেয়া হয়েছে "ঘড় ড়হব শরষষবফ ঔবংরশধ" এ থেকে আমরা কি শিক্ষা পেলাম, কেউ মুনীর সুমীর গায়ে বোম মারেনি, মুনীর বা সুমীদের গা ঝলসে দেয়নি। তবে টিভিতে হরতালের যে চিত্র দেখা যায় তার সঙ্গে মাহবুব আলম হানিফের কথার মিল খুঁজে পাওয়া যাবে।
বাস্তবতা হচ্ছে তথাকথিত গণতান্ত্রিক অধিকার হরতাল পালনের নামে সমাজে এক ভয়ংকর অবস্থার সৃষ্টি করা হচ্ছে। অফিস-আদালত কল কারখানা ব্যবসা-বাণিজ্য তো ব্যাহত হচ্ছেই, অবলীলায় মানুষও মরছে, হাত-পা হারাচ্ছে, গাড়ি-বাড়ি জ্বলছে। দেশের উৎপাদন, অগ্রগতি, প্রবৃদ্ধির হারে ধাক্কা লাগছে।
বিষফোঁড়ার ট্রিটমেন্ট অপারেশন, পেইন কিলার নয়
জামায়াত-শিবির বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক বিষফোঁড়া এবং এই বিষফোঁড়াকে অপারেশন করে সমূলে উৎপাটন করতে হবে। একে পেইন কিলার, এন্টিবায়োটিক দিয়ে ট্রিটমেন্ট করা যাবে না। এখনও কি জামায়াতকে চেনা বাকি আছে? আমরা তো এই সন্ত্রাসীদের ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের মধ্যেই চিনে ফেলেছি। দুর্ভাগ্য আমাদের বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়া চিনেও চিনছেন না, কেবল তাদের অস্ত্র বোমার ঘাড়ে চড়ে ক্ষমতায় যাবার লোভে। জামায়াতীদের সঙ্গে হাত মেলাতে গিয়ে খালেদা জিয়াই এখন জামায়াতী হয়ে গেছেন, সঙ্গে জুটেছে তেঁতুল হুজুর হেফাজতীরা। এই খালেদা জিয়ার আঁচল ধরেই জামায়াতী সন্ত্রাসীরা রাস্তায় পুলিশ মারছে, সাধারণ মানুষের জীবন নিচ্ছে, ধন-সম্পদ ধ্বংস করছে, সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণ করছে। অতি সম্প্রতি পাবনার সাঁথিয়ায় হিন্দু এলাকার বেশ কিছু ঘরবাড়ি ধ্বংস করেছে, তাদের সম্পদ দখলে নেবার চক্রান্ত করছে। জামায়াতী-শিবির রাজনীতিই হলো অন্ধ, হিংসাত্মক এবং ধর্মের নামে ভা-ামি। তাদের কাছে ধর্ম হলো রাজনৈতিক ফায়দা লুটার বাহন। এরা এত নৃশংস এবং হিংস্র যে একজন মানুষকে জবাই করে, হাত পায়ের রগ কাটে ঠা-া মাথায়। এদের নেতা-কর্মীরা বেতনভোগী। হরতালের বেতনের বাইরেও কাজের ওপর বাড়তি টাকা। গাড়ি ভাঙলে... টাকা, পোড়ালে... টাকা, পুলিশ পেটালে... মারলে... টাকা। সাধারণ মানুষ পোড়ালে... টাকা, মারলে ...টাকা, পঙ্গু বানালে... টাকা, এভাবে তারা বাড়তি টাকা পায় এবং বাড়তি টাকার অংশ পুলিশের গাড়িতে ঢিল মারলে ৫০০/১০০০ থেকে বেড়ে ১৫০০/২০০০০ টাকা পর্যন্ত গড়ায়। পুলিশের অস্ত্র কেড়ে নিতে পারলে পুরস্কারের অর্থ আরও মোটা হয়ে যায়। ওদের কেউ মারা গেলে জামায়াত মৃত ব্যক্তির পরিবারবর্গের যাবতীয় ব্যয়ভার গ্রহণ করে। এইভাবে তারা গরিব মেধাবী ছাত্রদের নিজেদের দিকে ভেড়ায়। প্রথমে ধর্মীয় আচার-আচরণ (সবই লোক দেখানো) দিয়ে তাদের আকৃষ্ট করে, পরে তাদের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করা এবং ভর্তির প্রশ্নে জামায়াত-শিবিরের একটা গোপন দুর্নীতির নেটওয়ার্ক কাজ করে। এই নেটওয়ার্ক পরিচালনা করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ঘাপটি মেরে থাকা জামায়াতী শিক্ষক। তাদের অর্থেরও কোন অভাব নেই। ভর্তি করানোর ক্ষেত্রে তারা যেমন ঘুষ দেয় তেমনি একটি চাকরি কেনার জন্যে যে কোন অঙ্কের টাকা খরচ করে। তাদের টাকার কাছে স্বাধীনতার পক্ষের কেউ কেউ আত্মসমর্পণ করে। এরা রাজধানী ঢাকায় প্রধানত ফার্মগেটের চারপাশে জাহানারা গার্ডেন, মনিপুরি পাড়া, মতিঝিল, মগবাজার এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশে আস্তানা পেতে কাজ করে। আজ তো তাদের পোয়া বারো। একদিকে খালেদাপুত্র তারেক তাদের ভাই, এক মায়ের পেটের সন্তান। খালেদা তো আরও আগে জামায়াতী হয়ে বসে আছেন। শ্রদ্ধেয় সাংবাদিক কলামিস্ট আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী লিখেছেণ্ড ড্রাকুলা যেমন কাউকে কামড়ালে সেও ড্রাকুলা হয়ে যায়, খালেদাও জামায়াতের কামড়ে জামায়াতী হয়ে গেছেন।
এ অবস্থায় হাইকোর্ট যখন জামায়াতের নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করেছে তখন জামায়াত-শিবিরকে আমাদের জাতি রাষ্ট্রের শরীর থেকে উপড়ে ফেলে দিতে হবে। কেউ কেউ মনে করেন নিষিদ্ধ করলে জামায়াত বিএনপিতে জয়েন করবে এবং জামায়াতের সব ভোট বিএনপিকে দেবে। আমার প্রশ্ন এখন বিএনপির বাইরে আছে? এখনি তো তারা নির্বাচনে সিট ভাগাভাগি করছে, যেখানে তাদের প্রার্থী নেই, সেখানে সব ভোট বিএনপিকেই দিচ্ছে। বরং জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করলে তারা যে কোন আন্দোলনে রাজপথে নামার সাংবিধানিক অধিকার হারাবে। তখন ওদের আর রাস্তায় নামারও সাহস থাকবে না। ধর্মের দিক ভাবলেও দেখা যাবে মানুষও তাদের বিশ্বাস করবে না। জামায়াত যে দ্বীনি ইসলামী কোন দল নয় তার প্রমাণ তো জামায়াতের গঠনতন্ত্র ও ঘোষণাপত্রেই বিদ্যমান। যেমন গঠনতন্ত্রের ধারা-৭ এর সদস্য (রোকন) হওয়ার শর্তাবলী ৪ উপধারায় বলা হয়েছে :
৭(৪) 'শরীয়তের নির্ধারিত ফরজ ও ওয়াজিবসমূহ আদায় করে এবং কবীরা গুনাহ হইতে বিরত থাকে' সে ব্যক্তি জামায়াতের রোকন হতে পারবে।
এখানে দেখার বিষয় হলো যে ব্যক্তি কেবল ফরজ ও ওয়াজিব আদায় করে, সে জামায়াতের সদস্য বা রোকন হতে পারবে, তাহলে রাসুল (স)-এর সুন্নত কি হবে, আদায় না করলেও চলবে? (নাউজুবিল্লাহ)।
একইভাবে কবীরা গুনাহ থেকে বিরত থাকলেই চলবে। তাহলে কি সগীরা গুনাহ করা যাবে? (নাউজুবিল্লাহ)
এই হচ্ছে ধর্মের লেবাসধারী জামায়াত। তাছাড়া তারা যে আজ বিএনপি নামক ইসলামপন্থী নয় এমন একটি দলের সঙ্গে গাটছড়া বেঁধে চলছে তা কি ইসলামিক? তবে হ্যাঁ একটা জাগায় তাদের মিল আছে তা হলো বিএনপিও পাকিস্তানপন্থী সাম্প্রদায়িক দল, জামায়াতও পাকিস্তানপন্থী সম্প্রদায়িক দল।
আমাদের জাতি রাষ্ট্র পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাদের চিনতেন বলেই স্বাধীন বাংলাদেশের শুরুতেই তাদের নিষিদ্ধ করেছিলেন। এমন কি জামায়াত-মুসলিম লীগের প্রধান প্রধান দালাল রাজাকারদের নাগরিকত্বও বাতিল করে দিয়েছিলেন। তারপর থেকে তো এই হায়েনার দল গর্তে পালিয়েছিল। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর খুনী মোশতাকের সহযোগী সামরিক ক্যুদেতা জেনারেল জিয়া তাদের পুনরায় রাজনীতিতে আনেন। সেই বিষবৃক্ষই ডাল-পালা গজিয়ে আজ নৃশংস হয়ে উঠেছে।
আগে কি বোঝা উচিত ছিল না?
বেশ আগে ঞযব ফধরষু ংঃধৎ-এর এক সম্পাদকীয়েেত একটা লাইন ছিল- 'বি যধাব ড়ঁৎ ঃড়ি হধঃরড়হধষ ষবধফবৎং- ইধহমধনড়হফযঁ ঝযবরশয গঁলরনঁৎ জধযসধহ ধহফ ষধঃব চৎবংরফবহঃ তরধঁৎ জধযসধহৃ' তাঁর এক কি দু'দিন পর প্রেসক্লাবে সম্পাদক মাহফুজ আনামের সঙ্গে দেখা হলে কথায় কথায় জানতে চাইলাম 'ঞড়ি ঘধঃরড়হধষ খবধফবৎ" বলতে যেয়ে বাঙালী জাতি-রাষ্ট্র-পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পাশে মিলিটারি ক্যুদেতা জিয়ার নাম আনা কি ঠিক হলো? একটু বাড়াবাড়ি হয়ে গেল না? বঙ্গবন্ধুর পাশে কারও নাম এলে তা আসবে শেরে বাংলা, সোহরাওয়ার্দী ও মওলানা ভাসানীর নাম। কমরেড মণি সিং বা প্রফেসর মোজাফ্ফর আহমেদের নামও আসতে পারে। কিন্তু কোন মিলিটারির নাম আসতে পারে না। বাড়ির মনিবের পাশে দারোয়ানের নাম মানায় না বরং মনিবকে অপমান করা হয়। ডেইলি স্টার বাংলাদেশ বর্ণাঢ্য রাজনীতিকেই অপমান করল। এমন কি সম্পাদক মহোদয়ের পিতা আবুল মনসুর আহমদকেও অসম্মান করা হলো।
কে এই জিয়া? এই ভদ্রলোকই জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত প্রতিটি মুহূর্তে ষড়যন্ত্রের জাল বুনছেন। জাতির পিতার নাম মুছে দেয়ার জন্য নিজে ঘোষকের ভূমিকায় নেমেছেন বা নামানো হয়েছে। পাকি দালালি ও গণহত্যার দোসর হওয়ায় যে গোলাম আযমের নাগরিকত্ব বাতিল করা হয়েছিল, মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের পূর্বক্ষণে পাকিস্তানে পালিয়েছিল, যে জামাতকে গণহত্যার সহযোগী হিসেবে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল, জিয়া সেই পলাতক গোলাম আযমকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনেন, জামায়াতকে আবার রাজনীতি করতে দেন। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর। এতে অবাক হবার কিছু নেই। জিয়া খুনী মোশতাককে সহযোগী হিসেবে মুক্তিয্দ্ধু ভুলিয়ে বাংলাদেশকে আবার পাকি ধারায় নিয়ে যাবার জন্য শেষ দিনটি পর্যন্ত চেষ্টা করেছেন, ষড়যন্ত্র করেছেন। তার দ্ইু উদ্দেশ্যে হাসিলের জন্যে ফ্যাসিস্ট হিটলারের মত জাতীয়তাবাদী নাম দিয়ে বিএনপি বানান। গোলাম আযমের মত জিয়া খালেদা বাংলার বিশ্বাসঘাতক।
যদ্দুর জানি সম্পাদক মাহফুজ আনাম মুক্তিযোদ্ধা। তিনি কি করে গোলাম-জিয়ার খপ্পরে পড়লেন আবার জিয়ার মৃত্যুর পর গোলাম-খালেদার খপ্পরে পড়ে মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে অবস্থান নিলেন। বন্ধু সম্পাদক কলামিস্ট আবেদ খানের কাছ থেকে ধার করে বলছি, লোভী মানুষ খুব সহজেই 'সুন্দরী রাক্ষসী' মোহে পড়ে।
জামায়াত-শিবির যে হিটলারের গেস্টাপো বাহিনীর মতো ফ্যাসিস্ট রাজনৈতিক দল তা বাংলাদেশের মানুষ বুঝতে পারলেও মাহফুজ আনামের মতো সম্পাদক বুদ্ধিজীবীরা বুঝতে পারেন না, তা বিশ্বাস করা কঠিন। মাহফুজ সাহেব নিশ্চয়ই জানেন-
ক. জামায়াত-শিবির ফ্যাস্টিট রাজনৈতিক দল
খ. জামায়াত-শিবির ইসলামিক দল নয়
গ. জামাত-শিবির ইসলামের নামে রাজনীতি করে
ঘ. জামায়াত-শবির ইসলামের যত ক্ষতি করেছে, করছে তা আর কেউ করেনি, করছে না
ঙ. জামায়াত-শিবির ফিতনা এ মওদুদী
চ. জামায়াত-শিবির হিংস্র, বর্বর রগকাটা-কব্জিকটা সন্ত্রাসী ফ্যাসিস্ট রাজনৈতিক দল
ছ. জামায়াত-শিবির রাষ্ট্রদ্রোহী রাজনৈতিক দল
জ. জামায়াতের পেছনে নামাজ পড়বেন না- বলেছেন হযরত মওলানা শামসুল হক ফরিদপুরি (মওদুদী জামায়াত ফেৎনার স্বরূপ)
ঝ. 'যাহারা সাহাবায়ে কিরামের দোষ চর্চা লিপ্ত তাহারা যে কেউই হোন না কেন তাহাদিগকে ইমাম বানাইয়া পিছনে নামাজ পড়া কিছুতেই জায়েজ হইবে না-তাহারা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত হইতে খারিজ হইয়া গিয়াছে' (হযরত শামসুল হক ফরিদপুরি প্রথম দিকে জামায়াতে ছিলেন। এক পর্যায়ে জামায়াতের আসল চেহারা সামনে হাজির হলে তিনি জামায়াত ত্যাগ করেন ওপরের কথা বলে)
ঙ. জামায়াত-শিবির ঈমান ও ধর্ম বিশ্বাস ধ্বংসকারী ফেৎনা- বলেছেন হযরত হাফেজজী হুজুর। তিনি মুসলমানদের মুখোশধারী এই দল থেকে দূরে থাকতে বলেন। হাফেজজী হুজুরকে সমর্থন করে তাঁর জামায়াত সম্পর্কে 'সতর্ক বাণী' পুস্তকে স্বাক্ষর করেন মাওলানা আজিজুল হক, মাওলানা আমিনুল ইসলাম, মাওলানা শামসুদ্দিন কাশেমীসহ চার শতাধিক শীর্ষস্থানীয় আলেম।
বিশিষ্ট মুহাদ্দিস হযরত যাকারিয়া বলেছেন, 'মওদুদী জামায়াতে যোগদান করা হারাম। তাদের বই-পুস্তক পড়া ক্ষতিকর' (মওদুদী-জামায়াত ফেৎনার স্বরূপ)
এরপর কি করে একজন ধর্মপ্রাণ মুসলমান জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে হাঁটতে পারে? কেবল ধর্মপ্রাণ মুসলিমই নয়, কোন সভ্য-ভব্য মানুষ সমর্থন তো দূরের কথা জামায়াত-শিবিরের ছায়াও মাড়াতে পারে না। তবুও এক শ্রেণীর বুদ্ধিজীবী মাড়াচ্ছেন। ফরহাদ মজহার, পেয়াজ করিম, আসিফ নজরুল, উল্লাহ ভ্রাতৃদ্বয় কিংবা ইফতেখার মজুমদারগণ আওয়ামী লীগ পছন্দ করে না ভাল কথা, কিন্তু আওয়ামী লীগের বিরোধিতা করতে গিয়ে জামায়াত-শিবির এবং তাদের লালনকারী বিএনপি নেত্রী বাংলার বিষবৃক্ষ খালেদার খপ্পরে পড়বেন তা আশা করা যায় না। আমাদের মাহফুজ আনাম বা টুইন মতিরা তার আল দিয়ে হাঁটছেন। তাঁদের কারও কারও মাথায় (ফরহাদ মজহার, পিয়াজ করিম উল্লেখ) একটা বিচি আছে- পকিস্তানী বিচি, এই বিচি থেকে চারা গজিয়েছে তারা বুদ্ধিবিচি এবং বুদ্ধিবিচি থেকে বুদ্ধিজীবি।
আমাদের প্রিয় সম্পাদক মাহফুজ আনাম ১৪ বছরের কিশোর মুনির ও ৮ বছরের শিশু সুমীর জন্য কাঁদলেন। হরতাল আহ্বানকারী হে+জা+বিদের নিক্ষিপ্ত বোমা বিশেষ করে ফ্যাসিস্ট জামায়াত- শিবিরের আগুনে দগ্ধ হয়ে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছে। আমরাও মাহফুজ আনামের সঙ্গে একমত। সমব্যথী। সঙ্গে সঙ্গে এই প্রশ্নটিও করতে পারি। অর্থাৎ আপনাদের শক্তিশালী মিডিয়া প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে ঐ গেস্টাপো বাহিনীকে সমর্থন শক্তি জুগিয়ে জাগিয়ে দিনে দিনে যে মনস্টার বানিয়েছেন, সে মুনীর- সুমীদের খাবে এটাই তো স্বাভাবিক। আজ বাংলার মানুষ জানে জামায়াত-শিবির হলো ফ্যাসিস্ট হিটলারের গেস্টাপো বাহিনীর মতোই। খালেদা জিয়ার গেস্টাপো বাহিনী। খালেদা জিয়াকে সমর্থন করতে গিয়ে তাদের সমর্থন করা হয়েছে, হচ্ছে।
সর্বশেষ খবর হলো অগ্নিদগ্ধ কিশোর মুনীর বৃহস্পতিবার মারা গেছে, আসুন আমরা ইন্নালিল্লাহি ... রাজিউন পড়ি।
ঢাকা- ৮ নবেম্বর ২০১৩
লেখক : ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক
প্রথমেই উল্লেখ করছি, আমাদের মাননীয় হাইকোর্ট একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকালে রাজাকার-আল বদর-আল শামস-দালাল, শান্তি কমিটির জন্মদাতা পাকি মিলিটারির দোসর জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করে দিয়েছে। দ্বিতীয়ত মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের প্রাক্কালে ১৩-১৪ ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবী হত্যাকারী আল বদর ঘাতক চৌধুরী মাঈনুদ্দিন এবং আশরাফুজ্জামান খানকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার রায় দিয়েছে। তৃতীয়ত ঢাকার পিলখানা হত্যাকাণ্ডের রায় হয়েছে। রায়ে বিডিআর-এর ডিজিসহ ৫৭ জন অফিসারসহ ৭৪ জনকে নৃশংসভাবে হত্যার দায়ে ১৫২ বিডিআর সদস্যের ফাঁসি এবং ১৬১ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। ১০ বছরের কারাদণ্ড সহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজা হয়েছে আরও ২৫৬ জনের। বিডিআর হত্যাকাণ্ড যে পাকি ষড়যন্ত্র ছিল তাই আজ উৎঘাটিত।
মূল বিষয়বস্তুতে যাবার আগে বলে রাখা ভাল যে, আজকের লেখাটি হবে পাঁচ মিশেলি। কোন একটি বিষয়ের ওপর সীমাবদ্ধ থাকবে না এবং একাধিক বিষয়ের অবতারণা করা হবে। দৈনিক জনকণ্ঠের কাছে আমি কৃতজ্ঞ, তারা সপ্তাহে আমার একটি লেখা প্রকাশ করেন তাদের চতুরঙ্গ পাতায়। কখনাও সখনও বিশেষ ইস্যুতে সপ্তাহের মাঝখানেও লেখার সুযোগ দিচ্ছেন। জনকণ্ঠে লেখার পেছনে আমার একটা বিশ্বাস কাজ করে। কেননা এই পত্রিকাটি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধে বিশ্বাস করে। এই জনকণ্ঠেই প্রয়াত কিংবদন্তি লেখক হুমায়ূন আহমেদের সেই বিখ্যাত ডায়লগ 'তুই রাজাকার' নিয়মিত ছাপা হয়েছিল। সেদিন যাদের 'তুই রাজাকার' বলা হয়েছিল তাদের নেতৃস্থানীয় অনেকেরই এরইমধ্যে আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার হয়েছে। বিচারে ফাঁসি এবং যাবজ্জীবন সাজা হয়েছে। বিচার চলছে। ৪২ বছর পর বাংলাদেশ শহীদদের রক্তঋণ পরিশোধের পথে এগিয়ে চলেছে আর এ যুদ্ধের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বাঙালী জাতি রাষ্ট্র পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের কন্যা এ সময়ের সাহসী প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা।
একটি বিষয় খুব গুরুত্বপূর্ণ। যে সব পত্রিকা বা টেলিভিশন সাংবাদিকতার বস্তুনিষ্ঠতা নিরপেক্ষকতার নামে মুক্তিযোদ্ধা ও রাজাকারকে এক পালায় মাপে বা যারা 'দুই নেত্রী' 'দুই নেত্রী' বলে 'আকবর বাদশার সঙ্গে হরিপদ কেরানীর তুলনা' করেন তাঁরা একটি হীন উদ্দেশ্যে তা করেন। এটাকে মতলববাজি ছাড়া অন্য কিছু বলা যাবে না। কিংবা একজন শান্ত সিগ্ধ, সুশীল, মেধাবী, দূরদর্শী রাষ্ট্রনেতার পাশে সশিক্ষিতা কলতলার মুখরা রমণীকে বসান, তাদের উদ্দেশ্য ভাল নয়। গণতন্ত্রের মানসকন্যার সঙ্গে সন্ত্রাসের রানীর তুলনা হয় না।
বর্তমান বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ইংরেজী দৈনিক 'The Daily Star' পত্রিকার গত মঙ্গলবারের ইস্যুতে সম্পাদক মাহফুজ আনাম An appeal to our higher judiciary–save us from hartal, pre-Hartal violence শিরোনামে একটি মন্তব্য প্রতিবেদন লিখেছেন। পত্রিকার প্রথম পৃষ্ঠার ডান পাশে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে ছাপা হয়েছে। প্রতিবেদনের পাশেই একটি ছবি ছাপা হয়েছে যাতে দেখা যাচ্ছে সারা শরীর অগ্নিদগ্ধ কিশোর মুনিরের (১৪ বছর) পাশে তার বাবা মাথায় হাত দিয়ে বসে আছেন। ছবির ক্যাপশন হল "In the name of politics this is what they do to people"-এর নিচে ৫ কলাম শিরোনাম দিয়ে শাহীন মোল্লা ও জায়েমা ইসলামের রিপোর্ট। রিপোর্টটির শিরোনাম হলো "Brutality beyond belief".
মাহফুজ আনাম তাঁর মন্তব্য প্রতিবেদনে (১৯৬৭-৭৩ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে জানাশোনা ছিল) হরতাল সমর্থনকারীদের বা তথাকথিত পিকেটারদের বোমায় তামাম শরীর ঝলসে যাওয়া কিশোর মুনির ও শিশু সুমীর অসহনীয় কষ্টের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে, এর বিচার চেয়ে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত হাইকোর্ট সুপ্রীমকোর্টের কাছে আবেদন করেছেন। With due respect for our high court and appellate division of the supreme court judges, we humbly draw their kind attention to our front page picture (সারা শরীর অগ্নিদগ্ধ কিশোর মুনিরের পাশে মাথায় হাত বাবার ছবি) of 14 year old Munir and urged them to kead his story and that of the 8 year old Shumi..........."
প্রিয় সম্পাদক মহোদয় তাঁর মন্তব্য প্রতিবেদনে মুনীর-সুমীদের যন্ত্রণার প্রতি উচ্চতর আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করে মূলত যে কথাটি বলেছেন তা হলো আপনারা কিছু একটা পদক্ষেপ নিন। যে হরতাল মানুষের জীবন কেড়ে নেয়, শরীর পুড়িয়ে ঝলসে দেয়, ধন-সম্পদ পুড়িয়ে ছাই করে, গাড়ি-বাড়ি-দোকানপাট পুড়িয়ে ছাই করে, ভেঙ্গে চুরমার করে দেয়, সে হরতাল ডাকার এবং তা বাস্তবায়নের অধিকার কোন প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর আছে কিনা? এটিই বলতে চেয়েছেন বলে আমি মনে করি। আমি সম্মানীয় সম্পাদকের সঙ্গে একমত পোষণ করে বলতে চাই, সময় এসেছে ভুক্তভোগী জনগণের পক্ষে আদালতের দাঁড়ানোর। এটি একেবারেই আমার অভিমত এ কারণে যে আমার মনে হয় আমাদের সংবিধান আদালতকে সেই অধিকার দিয়েছে। কেননা, হরতাল আহ্বান যদি খালেদা জিয়া বা জোটের পা-াদের মৌলিক অধিকার হয়, তবে মুনির-সুমীদের কি মানবাধিকার থাকতে নেই? মৌলিক অধিকার থাকতে নেই? ১৯৯৯ সালে মাননীয় হাইকোর্ট হরতালকে 'সাংবিধানিক অধিকার' হিসেবে ঘোষণা করার সঙ্গে এও বলেছিলেন যে, 'জবরদস্তিমূলকভাবে হরতাল চাপিয়ে দেয়া অপরাধ' হিসেবে গণ্য হবে। পরবর্তীকালে সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগ এই রায়ের প্রথম অংশ বহাল রেখে দ্বিতীয় অংশ অর্থাৎ 'জবরদস্তিমূলক হরতাল অবৈধ' এই অংশ বাতিল করে দেন। ফলে হরতাল আহ্বানকারীরা আরও বেশি বেশি নাশকতা করতে উৎসাহী হলো এই রায়ের মাধ্যমে। আমি জানি না মাননীয় সুপ্রীমকোর্ট আমার মতামতটি কিভাবে গ্রহণ করবেন, না কি আদালত অবমাননার দায়ে আমাকে হাতকড়া পরাবেন? আমি মনে করি যারা দায়িত্বহীন হরতাল ডাকবেন সে জন্য তাদের ওপর জরিমানার একটি আইন থাকা দরকার। এই যেমন আমরা শুনেছি হরতাল আহ্বানকারীরা ঘরে বসে থাকে আর জামায়াত-শিবির সন্ত্রাসীরা রাস্তায় মানুষ মারছে, পুলিশ হত্যা করছে, বোমা মেরে কারো শরীর ঝলসে দিচ্ছে, কারো অঙ্গ বিচ্ছিন্ন করছে। শোনা যায় হরতালে পিকেটিং করার জন্য সন্ত্রাসী, বোমাবাজ ভাড়া করা হচ্ছে। তাদের এডভান্স তো দিচ্ছেই, কাজ হবার পর আরও টাকা দিচ্ছে। অথচ হরতাল আহ্বানকারীরা বলে উঠবেন, না, স্বতঃস্ফূর্ত হরতাল হয়েছে। যেমন ডেইলি স্টার-এর মুনীরের পুড়ে যাওয়া শরীর ও তার বাবার মাথায় হাত দিয়ে বসে থাকা- এই ছবিটির পাশে দুই জোটের দুইজন নেতার ২টি মন্তব্য ছাপা হয়েছে। বিএনপির ভারাক্রান্ত মহাসচিব মিথ্যার ডিকশেনারি মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বললেন, 'ওঃং ঃযব মড়াবৎহসবহঃ ধমবহঃং যিড় পধৎৎু ড়ঁঃ ংঁপয ধপঃরারঃরবং ঃড় ফবভধসব ড়ঁৎ ঢ়বধপবভঁষ যধৎঃধষ' পক্ষান্তরে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ বলছেন 'ঈধফৎবং ড়ভ ইঘচ-ঔধসধঃ, যিরপয যধং পধষষবফ ঃযব রষষবমধষ যধৎঃধষ ধৎব ৎবংঢ়ড়হংরনষব ভড়ৎ ঃযব রহপরফবহঃ'
এই কমেন্ট দেখে একটি হিন্দী ছবির কথা মনে পড়ল। আদালতে বিচার প্রার্থী এক নারী (বাঙালি নায়িকা বিদ্যা বালান), তাঁর বোনকে কে বা কারা খুন করেছে। বোনের নাম জেসিকা। তাঁর পক্ষে মামলা লড়ছেন আরেক বাঙালী নায়িকা রানী মুখার্জি। এক পর্যায়ে মামলার রায় হলো, রায়ে আসামিরা সব খালাস পেয়ে গেল। রানী মুখার্জি চিৎকার করে বলছেন ঔঁংঃরপব যধং নববহ ফবহরবফ, লঁংঃরপব যধং নববহ ফবহরবফ কিন্তু কে শোনে কার কথা? অর্থাৎ জেসিকা নামে এক নারী ছিল এবং তাকে হত্যা করা হয়েছে, এ সবই মিথ্যা প্রমাণিত হলো। এইভাবে ছবিটির নাম দেয়া হয়েছে "ঘড় ড়হব শরষষবফ ঔবংরশধ" এ থেকে আমরা কি শিক্ষা পেলাম, কেউ মুনীর সুমীর গায়ে বোম মারেনি, মুনীর বা সুমীদের গা ঝলসে দেয়নি। তবে টিভিতে হরতালের যে চিত্র দেখা যায় তার সঙ্গে মাহবুব আলম হানিফের কথার মিল খুঁজে পাওয়া যাবে।
বাস্তবতা হচ্ছে তথাকথিত গণতান্ত্রিক অধিকার হরতাল পালনের নামে সমাজে এক ভয়ংকর অবস্থার সৃষ্টি করা হচ্ছে। অফিস-আদালত কল কারখানা ব্যবসা-বাণিজ্য তো ব্যাহত হচ্ছেই, অবলীলায় মানুষও মরছে, হাত-পা হারাচ্ছে, গাড়ি-বাড়ি জ্বলছে। দেশের উৎপাদন, অগ্রগতি, প্রবৃদ্ধির হারে ধাক্কা লাগছে।
বিষফোঁড়ার ট্রিটমেন্ট অপারেশন, পেইন কিলার নয়
জামায়াত-শিবির বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক বিষফোঁড়া এবং এই বিষফোঁড়াকে অপারেশন করে সমূলে উৎপাটন করতে হবে। একে পেইন কিলার, এন্টিবায়োটিক দিয়ে ট্রিটমেন্ট করা যাবে না। এখনও কি জামায়াতকে চেনা বাকি আছে? আমরা তো এই সন্ত্রাসীদের ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের মধ্যেই চিনে ফেলেছি। দুর্ভাগ্য আমাদের বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়া চিনেও চিনছেন না, কেবল তাদের অস্ত্র বোমার ঘাড়ে চড়ে ক্ষমতায় যাবার লোভে। জামায়াতীদের সঙ্গে হাত মেলাতে গিয়ে খালেদা জিয়াই এখন জামায়াতী হয়ে গেছেন, সঙ্গে জুটেছে তেঁতুল হুজুর হেফাজতীরা। এই খালেদা জিয়ার আঁচল ধরেই জামায়াতী সন্ত্রাসীরা রাস্তায় পুলিশ মারছে, সাধারণ মানুষের জীবন নিচ্ছে, ধন-সম্পদ ধ্বংস করছে, সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণ করছে। অতি সম্প্রতি পাবনার সাঁথিয়ায় হিন্দু এলাকার বেশ কিছু ঘরবাড়ি ধ্বংস করেছে, তাদের সম্পদ দখলে নেবার চক্রান্ত করছে। জামায়াতী-শিবির রাজনীতিই হলো অন্ধ, হিংসাত্মক এবং ধর্মের নামে ভা-ামি। তাদের কাছে ধর্ম হলো রাজনৈতিক ফায়দা লুটার বাহন। এরা এত নৃশংস এবং হিংস্র যে একজন মানুষকে জবাই করে, হাত পায়ের রগ কাটে ঠা-া মাথায়। এদের নেতা-কর্মীরা বেতনভোগী। হরতালের বেতনের বাইরেও কাজের ওপর বাড়তি টাকা। গাড়ি ভাঙলে... টাকা, পোড়ালে... টাকা, পুলিশ পেটালে... মারলে... টাকা। সাধারণ মানুষ পোড়ালে... টাকা, মারলে ...টাকা, পঙ্গু বানালে... টাকা, এভাবে তারা বাড়তি টাকা পায় এবং বাড়তি টাকার অংশ পুলিশের গাড়িতে ঢিল মারলে ৫০০/১০০০ থেকে বেড়ে ১৫০০/২০০০০ টাকা পর্যন্ত গড়ায়। পুলিশের অস্ত্র কেড়ে নিতে পারলে পুরস্কারের অর্থ আরও মোটা হয়ে যায়। ওদের কেউ মারা গেলে জামায়াত মৃত ব্যক্তির পরিবারবর্গের যাবতীয় ব্যয়ভার গ্রহণ করে। এইভাবে তারা গরিব মেধাবী ছাত্রদের নিজেদের দিকে ভেড়ায়। প্রথমে ধর্মীয় আচার-আচরণ (সবই লোক দেখানো) দিয়ে তাদের আকৃষ্ট করে, পরে তাদের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করা এবং ভর্তির প্রশ্নে জামায়াত-শিবিরের একটা গোপন দুর্নীতির নেটওয়ার্ক কাজ করে। এই নেটওয়ার্ক পরিচালনা করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ঘাপটি মেরে থাকা জামায়াতী শিক্ষক। তাদের অর্থেরও কোন অভাব নেই। ভর্তি করানোর ক্ষেত্রে তারা যেমন ঘুষ দেয় তেমনি একটি চাকরি কেনার জন্যে যে কোন অঙ্কের টাকা খরচ করে। তাদের টাকার কাছে স্বাধীনতার পক্ষের কেউ কেউ আত্মসমর্পণ করে। এরা রাজধানী ঢাকায় প্রধানত ফার্মগেটের চারপাশে জাহানারা গার্ডেন, মনিপুরি পাড়া, মতিঝিল, মগবাজার এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশে আস্তানা পেতে কাজ করে। আজ তো তাদের পোয়া বারো। একদিকে খালেদাপুত্র তারেক তাদের ভাই, এক মায়ের পেটের সন্তান। খালেদা তো আরও আগে জামায়াতী হয়ে বসে আছেন। শ্রদ্ধেয় সাংবাদিক কলামিস্ট আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী লিখেছেণ্ড ড্রাকুলা যেমন কাউকে কামড়ালে সেও ড্রাকুলা হয়ে যায়, খালেদাও জামায়াতের কামড়ে জামায়াতী হয়ে গেছেন।
এ অবস্থায় হাইকোর্ট যখন জামায়াতের নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করেছে তখন জামায়াত-শিবিরকে আমাদের জাতি রাষ্ট্রের শরীর থেকে উপড়ে ফেলে দিতে হবে। কেউ কেউ মনে করেন নিষিদ্ধ করলে জামায়াত বিএনপিতে জয়েন করবে এবং জামায়াতের সব ভোট বিএনপিকে দেবে। আমার প্রশ্ন এখন বিএনপির বাইরে আছে? এখনি তো তারা নির্বাচনে সিট ভাগাভাগি করছে, যেখানে তাদের প্রার্থী নেই, সেখানে সব ভোট বিএনপিকেই দিচ্ছে। বরং জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করলে তারা যে কোন আন্দোলনে রাজপথে নামার সাংবিধানিক অধিকার হারাবে। তখন ওদের আর রাস্তায় নামারও সাহস থাকবে না। ধর্মের দিক ভাবলেও দেখা যাবে মানুষও তাদের বিশ্বাস করবে না। জামায়াত যে দ্বীনি ইসলামী কোন দল নয় তার প্রমাণ তো জামায়াতের গঠনতন্ত্র ও ঘোষণাপত্রেই বিদ্যমান। যেমন গঠনতন্ত্রের ধারা-৭ এর সদস্য (রোকন) হওয়ার শর্তাবলী ৪ উপধারায় বলা হয়েছে :
৭(৪) 'শরীয়তের নির্ধারিত ফরজ ও ওয়াজিবসমূহ আদায় করে এবং কবীরা গুনাহ হইতে বিরত থাকে' সে ব্যক্তি জামায়াতের রোকন হতে পারবে।
এখানে দেখার বিষয় হলো যে ব্যক্তি কেবল ফরজ ও ওয়াজিব আদায় করে, সে জামায়াতের সদস্য বা রোকন হতে পারবে, তাহলে রাসুল (স)-এর সুন্নত কি হবে, আদায় না করলেও চলবে? (নাউজুবিল্লাহ)।
একইভাবে কবীরা গুনাহ থেকে বিরত থাকলেই চলবে। তাহলে কি সগীরা গুনাহ করা যাবে? (নাউজুবিল্লাহ)
এই হচ্ছে ধর্মের লেবাসধারী জামায়াত। তাছাড়া তারা যে আজ বিএনপি নামক ইসলামপন্থী নয় এমন একটি দলের সঙ্গে গাটছড়া বেঁধে চলছে তা কি ইসলামিক? তবে হ্যাঁ একটা জাগায় তাদের মিল আছে তা হলো বিএনপিও পাকিস্তানপন্থী সাম্প্রদায়িক দল, জামায়াতও পাকিস্তানপন্থী সম্প্রদায়িক দল।
আমাদের জাতি রাষ্ট্র পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাদের চিনতেন বলেই স্বাধীন বাংলাদেশের শুরুতেই তাদের নিষিদ্ধ করেছিলেন। এমন কি জামায়াত-মুসলিম লীগের প্রধান প্রধান দালাল রাজাকারদের নাগরিকত্বও বাতিল করে দিয়েছিলেন। তারপর থেকে তো এই হায়েনার দল গর্তে পালিয়েছিল। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর খুনী মোশতাকের সহযোগী সামরিক ক্যুদেতা জেনারেল জিয়া তাদের পুনরায় রাজনীতিতে আনেন। সেই বিষবৃক্ষই ডাল-পালা গজিয়ে আজ নৃশংস হয়ে উঠেছে।
আগে কি বোঝা উচিত ছিল না?
বেশ আগে ঞযব ফধরষু ংঃধৎ-এর এক সম্পাদকীয়েেত একটা লাইন ছিল- 'বি যধাব ড়ঁৎ ঃড়ি হধঃরড়হধষ ষবধফবৎং- ইধহমধনড়হফযঁ ঝযবরশয গঁলরনঁৎ জধযসধহ ধহফ ষধঃব চৎবংরফবহঃ তরধঁৎ জধযসধহৃ' তাঁর এক কি দু'দিন পর প্রেসক্লাবে সম্পাদক মাহফুজ আনামের সঙ্গে দেখা হলে কথায় কথায় জানতে চাইলাম 'ঞড়ি ঘধঃরড়হধষ খবধফবৎ" বলতে যেয়ে বাঙালী জাতি-রাষ্ট্র-পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পাশে মিলিটারি ক্যুদেতা জিয়ার নাম আনা কি ঠিক হলো? একটু বাড়াবাড়ি হয়ে গেল না? বঙ্গবন্ধুর পাশে কারও নাম এলে তা আসবে শেরে বাংলা, সোহরাওয়ার্দী ও মওলানা ভাসানীর নাম। কমরেড মণি সিং বা প্রফেসর মোজাফ্ফর আহমেদের নামও আসতে পারে। কিন্তু কোন মিলিটারির নাম আসতে পারে না। বাড়ির মনিবের পাশে দারোয়ানের নাম মানায় না বরং মনিবকে অপমান করা হয়। ডেইলি স্টার বাংলাদেশ বর্ণাঢ্য রাজনীতিকেই অপমান করল। এমন কি সম্পাদক মহোদয়ের পিতা আবুল মনসুর আহমদকেও অসম্মান করা হলো।
কে এই জিয়া? এই ভদ্রলোকই জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত প্রতিটি মুহূর্তে ষড়যন্ত্রের জাল বুনছেন। জাতির পিতার নাম মুছে দেয়ার জন্য নিজে ঘোষকের ভূমিকায় নেমেছেন বা নামানো হয়েছে। পাকি দালালি ও গণহত্যার দোসর হওয়ায় যে গোলাম আযমের নাগরিকত্ব বাতিল করা হয়েছিল, মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের পূর্বক্ষণে পাকিস্তানে পালিয়েছিল, যে জামাতকে গণহত্যার সহযোগী হিসেবে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল, জিয়া সেই পলাতক গোলাম আযমকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনেন, জামায়াতকে আবার রাজনীতি করতে দেন। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর। এতে অবাক হবার কিছু নেই। জিয়া খুনী মোশতাককে সহযোগী হিসেবে মুক্তিয্দ্ধু ভুলিয়ে বাংলাদেশকে আবার পাকি ধারায় নিয়ে যাবার জন্য শেষ দিনটি পর্যন্ত চেষ্টা করেছেন, ষড়যন্ত্র করেছেন। তার দ্ইু উদ্দেশ্যে হাসিলের জন্যে ফ্যাসিস্ট হিটলারের মত জাতীয়তাবাদী নাম দিয়ে বিএনপি বানান। গোলাম আযমের মত জিয়া খালেদা বাংলার বিশ্বাসঘাতক।
যদ্দুর জানি সম্পাদক মাহফুজ আনাম মুক্তিযোদ্ধা। তিনি কি করে গোলাম-জিয়ার খপ্পরে পড়লেন আবার জিয়ার মৃত্যুর পর গোলাম-খালেদার খপ্পরে পড়ে মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে অবস্থান নিলেন। বন্ধু সম্পাদক কলামিস্ট আবেদ খানের কাছ থেকে ধার করে বলছি, লোভী মানুষ খুব সহজেই 'সুন্দরী রাক্ষসী' মোহে পড়ে।
জামায়াত-শিবির যে হিটলারের গেস্টাপো বাহিনীর মতো ফ্যাসিস্ট রাজনৈতিক দল তা বাংলাদেশের মানুষ বুঝতে পারলেও মাহফুজ আনামের মতো সম্পাদক বুদ্ধিজীবীরা বুঝতে পারেন না, তা বিশ্বাস করা কঠিন। মাহফুজ সাহেব নিশ্চয়ই জানেন-
ক. জামায়াত-শিবির ফ্যাস্টিট রাজনৈতিক দল
খ. জামায়াত-শিবির ইসলামিক দল নয়
গ. জামাত-শিবির ইসলামের নামে রাজনীতি করে
ঘ. জামায়াত-শবির ইসলামের যত ক্ষতি করেছে, করছে তা আর কেউ করেনি, করছে না
ঙ. জামায়াত-শিবির ফিতনা এ মওদুদী
চ. জামায়াত-শিবির হিংস্র, বর্বর রগকাটা-কব্জিকটা সন্ত্রাসী ফ্যাসিস্ট রাজনৈতিক দল
ছ. জামায়াত-শিবির রাষ্ট্রদ্রোহী রাজনৈতিক দল
জ. জামায়াতের পেছনে নামাজ পড়বেন না- বলেছেন হযরত মওলানা শামসুল হক ফরিদপুরি (মওদুদী জামায়াত ফেৎনার স্বরূপ)
ঝ. 'যাহারা সাহাবায়ে কিরামের দোষ চর্চা লিপ্ত তাহারা যে কেউই হোন না কেন তাহাদিগকে ইমাম বানাইয়া পিছনে নামাজ পড়া কিছুতেই জায়েজ হইবে না-তাহারা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত হইতে খারিজ হইয়া গিয়াছে' (হযরত শামসুল হক ফরিদপুরি প্রথম দিকে জামায়াতে ছিলেন। এক পর্যায়ে জামায়াতের আসল চেহারা সামনে হাজির হলে তিনি জামায়াত ত্যাগ করেন ওপরের কথা বলে)
ঙ. জামায়াত-শিবির ঈমান ও ধর্ম বিশ্বাস ধ্বংসকারী ফেৎনা- বলেছেন হযরত হাফেজজী হুজুর। তিনি মুসলমানদের মুখোশধারী এই দল থেকে দূরে থাকতে বলেন। হাফেজজী হুজুরকে সমর্থন করে তাঁর জামায়াত সম্পর্কে 'সতর্ক বাণী' পুস্তকে স্বাক্ষর করেন মাওলানা আজিজুল হক, মাওলানা আমিনুল ইসলাম, মাওলানা শামসুদ্দিন কাশেমীসহ চার শতাধিক শীর্ষস্থানীয় আলেম।
বিশিষ্ট মুহাদ্দিস হযরত যাকারিয়া বলেছেন, 'মওদুদী জামায়াতে যোগদান করা হারাম। তাদের বই-পুস্তক পড়া ক্ষতিকর' (মওদুদী-জামায়াত ফেৎনার স্বরূপ)
এরপর কি করে একজন ধর্মপ্রাণ মুসলমান জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে হাঁটতে পারে? কেবল ধর্মপ্রাণ মুসলিমই নয়, কোন সভ্য-ভব্য মানুষ সমর্থন তো দূরের কথা জামায়াত-শিবিরের ছায়াও মাড়াতে পারে না। তবুও এক শ্রেণীর বুদ্ধিজীবী মাড়াচ্ছেন। ফরহাদ মজহার, পেয়াজ করিম, আসিফ নজরুল, উল্লাহ ভ্রাতৃদ্বয় কিংবা ইফতেখার মজুমদারগণ আওয়ামী লীগ পছন্দ করে না ভাল কথা, কিন্তু আওয়ামী লীগের বিরোধিতা করতে গিয়ে জামায়াত-শিবির এবং তাদের লালনকারী বিএনপি নেত্রী বাংলার বিষবৃক্ষ খালেদার খপ্পরে পড়বেন তা আশা করা যায় না। আমাদের মাহফুজ আনাম বা টুইন মতিরা তার আল দিয়ে হাঁটছেন। তাঁদের কারও কারও মাথায় (ফরহাদ মজহার, পিয়াজ করিম উল্লেখ) একটা বিচি আছে- পকিস্তানী বিচি, এই বিচি থেকে চারা গজিয়েছে তারা বুদ্ধিবিচি এবং বুদ্ধিবিচি থেকে বুদ্ধিজীবি।
আমাদের প্রিয় সম্পাদক মাহফুজ আনাম ১৪ বছরের কিশোর মুনির ও ৮ বছরের শিশু সুমীর জন্য কাঁদলেন। হরতাল আহ্বানকারী হে+জা+বিদের নিক্ষিপ্ত বোমা বিশেষ করে ফ্যাসিস্ট জামায়াত- শিবিরের আগুনে দগ্ধ হয়ে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছে। আমরাও মাহফুজ আনামের সঙ্গে একমত। সমব্যথী। সঙ্গে সঙ্গে এই প্রশ্নটিও করতে পারি। অর্থাৎ আপনাদের শক্তিশালী মিডিয়া প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে ঐ গেস্টাপো বাহিনীকে সমর্থন শক্তি জুগিয়ে জাগিয়ে দিনে দিনে যে মনস্টার বানিয়েছেন, সে মুনীর- সুমীদের খাবে এটাই তো স্বাভাবিক। আজ বাংলার মানুষ জানে জামায়াত-শিবির হলো ফ্যাসিস্ট হিটলারের গেস্টাপো বাহিনীর মতোই। খালেদা জিয়ার গেস্টাপো বাহিনী। খালেদা জিয়াকে সমর্থন করতে গিয়ে তাদের সমর্থন করা হয়েছে, হচ্ছে।
সর্বশেষ খবর হলো অগ্নিদগ্ধ কিশোর মুনীর বৃহস্পতিবার মারা গেছে, আসুন আমরা ইন্নালিল্লাহি ... রাজিউন পড়ি।
ঢাকা- ৮ নবেম্বর ২০১৩
লেখক : ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক
প্রকাশ : ০৮ নভেম্বর, ২০১৩ ০১:৫২:৪৫ | অঅ-অ+ |
বিএনপির হরতালের আরেক বলি
ঢাকা দেখতে এসে লাশ হয়ে ফিরল মনির
মনির হোসেন। ১৩ বছর বয়সী শিশু। ঢাকার অদূরে গাজীপুরের কালিয়াকৈরের বড়কাঞ্চনপুরে তাদের বাড়ি। সেখানেই স্থানীয় একটি স্কুলের পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ত সে।
সমকাল প্রতিবেদক
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের চিকিৎসক পার্থশঙ্কর প্রামাণিক জানান, মনিরের শরীরের ৯৫ ভাগই পুড়ে গিয়েছিল। এ অবস্থা থেকে পোড়া রোগী ফিরে আসে না। তবু ছেলেটিকে আইসিইউতে নিয়ে নিবিড় পরিচর্যায় রাখা হয়েছিল। ..........
http://www.samakal.net/2013/11/08/18700
An Appeal to Our Higher Judiciary
Save us from hartal, pre-hartal violence
Mahfuz Anam
http://www.thedailystar.net/beta2/news/save-us-from-hartal-pre-hartal-violence/
In the name of politics
Brutality beyond belief
Two kids, CNG driver left to cling on to their lives as mindless hartal pickets set vehicles on fire
Shaheen Mollah and Zyma Islam
__._,_.___