ডা. মানিক : ১৯৭৫ সালে সপরিবারে জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু এবং জাতীয় চার নেতার হত্যাকান্ডের পর বাংলাদেশ যখন "রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতার মূল্যবোধ" হারিয়ে দিকবিহীন জাহাজের মত অথৈ সাগরে ভাসছিল , সেই সংকটময় মুহুর্তে নিপুন নাবিকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে যিনি বাংলাদেশ নামক জাহাজটিকে আলোর সন্ধান দেখিয়ে তীরে নিয়ে এসেছিলেন , তিনি হলেন শ্রদ্ধাভাজন মহিয়সী এক নারী জোহরা তাজউদ্দিন , স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদের সহধর্মিনী ৷ দেশবাসীকে শোকের সাগরে ভাসিয়ে আজ তিনি ফিরে গেছেন না ফেরার দেশে ৷
দৃঢ়চেতা , মুক্তিযুদ্ধের কন্ঠস্বর এই নেত্রীর সাথে আমার প্রথম পরিচয় হয় আটলান্টা নগরীতে ২০০০ সালের প্রথম দিকে তার ভাইয়ের মেয়ে পারিবারিক বন্ধু সীমা ভাবি-খোকা ভাইয়ের বাসায় ৷ মুক্তিযুদ্ধের অনেক অজানা কাহিনী শোনার সৌভাগ্য হয়েছিল তার কাছ থেকে সেই সময় ৷ পরিবারকে এক অনিশ্চিয়তার মাঝে রেখে দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার সময় প্রিয়তমা স্ত্রীকে লেখা তাজউদ্দিন আহমেদের সেই অবিশ্বরনীয় চিরকুট "সাড়ে সাত কোটি মানুষের সাথে মিশে যাও , দেখা হবে মুক্তির পরে" , সেই কথাটি আজও মনে পরছে ! মনে পরছে মুক্তিযুদ্ধের সময় কলকাতায় তার সেই প্রবাস জীবনের কথা , যখন কাছে থেকেও প্রানপ্রিয় স্বামীর সাক্ষাত পান নি , কেননা তাজউদ্দিন আহমেদ সপথ করেছিলেন দেশ স্বাধীন না হওয়া পর্যন্ত পরিবারের সাথে কোনো দেখা সাক্ষাত করবেন না ! মনে পরছে নয় মাসের সোহেল তাজকে কোলে নিয়ে '৭৫ এর পট পরিবর্তনের পর সারা দেশ চষে বেরিয়ে মৃতপ্রায় আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করা ! সেই সময় জর্জিয়া আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আমরা তাকে একটি সম্বর্ধনা দিয়েছিলাম যার সঞ্চালক ছিলাম আমি ৷ এর পরে আটলান্টায় তিনি আরো কয়েকবার এসেছিলেন , আসলেই দেখা করতে চলে যেতাম খোকা ভাই এর বাসায় , কখনো বা আমার বাসায় নিয়ে আসতাম , মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে শুনতাম তার কাছে মুক্তিযুদ্ধ এবং দেশের কাহিনী ৷ আমার স্ত্রীকে তিনি খুবই আদর করতেন , "আমার শাকেরা " বলেই সম্বোধন করতেন ওকে ৷ এর পরে দেশে যখনই বেড়াতে গিয়েছি প্রতিবারই এই মহিয়সী নারীর সাথে দেখা করেছি , মায়ের মত আদর করে তার সেই আতিথেয়তার কথা আজও ভুলিনি ! মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধরে রেখে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে তার সেই আবেগময়ী উপদেশ বাণীর কথা আজও মনে পরছে ৷ আজ তিনি আমাদের মাঝে নেই কিন্তু যতদিন বাংলাদেশ থাকবে , যতদিন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থাকবে , ততদিন তিনি চির স্বরনীয় হয়ে থাকবেন আমাদের সবার মাঝে ৷
আজ বাদ জুমা স্থানীয় কুবা মসজিদে তার বিদেহী আত্মার স্বরণে এক দোআ মহফিলের আয়োজন করা হয় , আমার সৌভাগ্য হয়েছিল সেই মহফিলে অংশগ্রহন করার ৷ সর্বশক্তিমান আল্লাহ তায়ালার নিকট তার বিদেহী আত্বার মাগফেরাত এবং জান্নাতবাসীর কামনা করছি ৷ এখানে উল্লেখযোগ্য যে এই দোআ মহফিলটি পূর্ব নির্ধারিত ছিল সীমা ভাবির আম্মার (জোহরা তাজুদ্দিনের ভাবি) এবং সুইটি ভাবির আম্মার মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ৷
ডা. মানিক: আটলান্টা।
0 Comments
__._,_.___