১৭ বছর আগে ম্যান্ডেলার সেই স্মৃতি চির অম্লান থাকবে শনিবার, ৭ ডিসেম্বর ২০১৩, ২৩ অগ্রহায়ন ১৪২০
আজ থেকে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক
ফিরোজ মান্না ॥ দিনটি ছিল ১৯৯৭ সালের ২৬ মার্চ। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট কিংবদন্তি নেতা নেলসন ম্যান্ডেলা রাষ্ট্রীয় সফরে বাংলাদেশে এসেছিলেন। রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে যোগদান করেন এই মহান নেতা। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ফিলিস্তিনি নেতা ইয়াসির আরাফাত এবং তুরস্কের প্রেসিডেন্ট সুসেসান ডেমিরেল। তিনজনই স্বকীয়তার জন্য বিশ্বমানবতার নেতা হিসেবে পরিচিত হয়েছিলেন। ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমেদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেদিন উপস্থিত ছিলেন দেশের বিরোধীদলের নেতা বেগম খালেদা জিয়া। আজ থেকে ১৭ বছর আগের কথা। ১৯৯৭ সালের স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রীয় অতিথি দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট নেলসন ম্যান্ডেলা এক কালজয়ী বক্তৃতা করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, আমি যদি আজ ঘণ্টার পর ঘণ্টা বলি বর্ণবাদী শাসকগোষ্ঠী যুগযুগ ধরে আমাদের দেশ শাসন করার কারণে দেশের কোন উন্নয়ন হয়নি। এতে আমাদের দেশের মানুষের কোন লাভ হবে না। বরং আমাকে স্মরণ রাখতে হবে দেশের মানুষ অপশাসনের অবসান ঘটিয়ে আমাকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করেছেন। সেদিন তিনি বলেছিলেন, আজ আমাকে ভাবতে হবে আমি তাদের সেই স্বপ্ন ও আকাক্সক্ষা পূরণে কতটুকু সচেষ্ট হয়েছি। আমার সারাজীবন উৎসর্গ করেছি আফ্রিকার জনগণের মুক্তি সংগ্রামে। আমি লড়েছি শ্বেতাঙ্গ কৃষ্ণাঙ্গ শোষণের বিরুদ্ধে।
বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু নেলসন ম্যান্ডেলার মৃত্যুতে শনিবার থেকে সোমবার তিন দিন রাষ্ট্রীয়ভাবে এই শোক পালন করা হবে। তথ্য অধিদফতরের উপপ্রধান তথ্য কর্মকর্তা ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত জনসংযোগ কর্মকর্তা এএসএম আমিনুল ইসলাম জানান, এই তিন দিন সব সরকারী-বেসরকারী কার্যালয় ও বিদেশে বাংলাদেশের সব মিশনে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে। তবে দাফতরিক কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবেই চলবে।
দীর্ঘদিন ফুসফুসের সংক্রমণে ভুগে বৃহস্পতিবার জোহানেসবার্গে নিজের বাড়িতে মারা যান দক্ষিণ আফ্রিকার কিংবদন্তি নেতা ম্যান্ডেলা। তাঁর মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়াসহ বিশ্ব নেতৃবৃন্দ গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। প্রতিবেশী দেশ ভারতও ম্যান্ডেলার মৃত্যুতে পাঁচদিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার রজতজয়ন্তী উদ্যাপনে ১৯৯৭ সালের ২৬ মার্চ বাংলাদেশে এসেছিলেন নেলসন ম্যান্ডেলা।
বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় রাত পৌনে ১০টার দিকে দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের অবিসংবাদিত নেতা নেলসন ম্যান্ডেলা পৃথিবী ছেড়ে মহাপ্রয়াণে চলে যান। এই খবর নিশ্চিত করেন, দেশটির প্রেসিডেন্ট জ্যাকব জুমা। তিনি রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে ম্যান্ডেলার পরলোকগমনের খবর ঘোষণা করেন।
মানব মুক্তির অগ্রপথিক নেলসন ম্যান্ডেলা বাংলাদেশে এসেছিলেন আজ থেকে ১৭ বছর আগে। দিনটি ছিল ১৯৯৭ সালের ২৬ মার্চ। এদিন বাংলাদেশে একটি গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় স্থাপনা উদ্বোধনের জন্য একই সারিতে দাঁড়িয়েছিলেন ম্যান্ডেলা, ফিলিস্তিনের অবিসংবাদিত নেতা ইয়াসির আরাফাত, তুরস্কের রাষ্ট্রপ্রধান সুলেমান ডেমিরেল, বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দিনটি ছিল বাংলাদেশের জন্য খুবই তাৎপর্যময়। স্বাধীনতার রজতজয়ন্তী। এ দিন রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে রজতজয়ন্তীর স্মারক 'শিখা চিরন্তন' উদ্বোধন করেন মানব মুক্তির নেতা নেলসন ম্যান্ডেলা।
সেদিন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে তাঁকে দেখতে মানুষের ঢল নেমেছিল। এই মহান নেতাকে দেখতে মানুষের ভিড় সামাল দিতে সেদিন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হিমশিম খেতে হয়েছিল। বাংলাদেশের মুক্তিকামী মানুষ এমন একজন মুক্তবাকের মানুষকে পেয়ে আনন্দে আত্মহারা হয়েছিলেন। সেদিনের স্মৃতি আজ এক মহান ইতিহাস। বাংলাদেশ যত দিন বেঁচে থাকবে ওই ইতিহাসও তত দিন বেঁচে থাকবে। দিনটি বাংলাদেশের ইতিহাসে সোনার অক্ষরে লেখা আছে। থাকবেও চিরদিন। বাংলাদেশ ম্যান্ডেলাকে শ্রদ্ধা করে। আজও এ দেশের মানুষ শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছেন সেই দিনটি, যেদিন তিনি বাংলাদেশের মাটিতে পা রেখেছিলেন। আজ বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যমগুলো ম্যান্ডেলার বর্ণিল জীবন নিয়ে নানা আয়োজনে সংবাদ পরিবেশন করছে। এসব সংবাদের মধ্যে বাংলাদেশে তাঁর আগমনের দিনটিও সমানে গুরুত্ব পেয়েছে। তাঁর চিরবিদায়ে বাংলাদেশও আজ তাঁকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছে। ম্যান্ডেলার দেহের মৃত্যু হয়েছে ঠিকই কিন্তু তাঁর কীর্তির মৃত্যু হবে না কোন দিন। এমন এক কিংবদন্তি মানুষের মৃত্যু হয় না কোন দিন।
বর্ণবাদবিরোধী মহান নেতা নেলসন ম্যান্ডেলার বয়স হয়েছিল ৯৫ বছর। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে তিনি তাঁর জোহানেসবার্গের হাউটন শহরতলিতে নিজ বাড়িতে বিশেষ ব্যবস্থায় নিবিড় চিকিৎসাধীনে ছিলেন। ফুসফুসে সংক্রমণজনিত অসুস্থতার কারণে প্রিটোরিয়ার মেডিক্লিনিক হাসপাতালে তিন মাস চিকিৎসা নেয়ার পর গত ১ সেপ্টেম্বর বাড়িতে ফেরেন তিনি।
দক্ষিণ আফ্রিকার জাতির জনক হিসেবে নেলসন ম্যান্ডেলা ১৯৯৪ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত দেশটির প্রেসিডেন্ট ছিলেন। এর আগে দীর্ঘ ২৭ বছর ৮ মাস কারাভোগ করেন তিনি। ম্যান্ডেলার জন্ম ১৯১৮ সালের ১৮ জুলাই। দক্ষিণ আফ্রিকায় ১৯৪৮-এর নির্বাচনে বর্ণবাদবিশ্বাসী ও বিভিন্ন জাতিকে আলাদা করার পক্ষপাতী দল ন্যাশনাল পার্টি জয়লাভ করে। ন্যাশনাল পার্টির ক্ষমতায় আসার প্রেক্ষাপটে ম্যান্ডেলা সক্রিয়ভাবে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। তিনি ১৯৫২ সালে আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসের নেতা হিসেবে অসহযোগ আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন। ১৯৫৫ সালে জনগণের সম্মেলনে তাঁর ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। এখানেই দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের মূলভিত্তি মুক্তি সনদ প্রণয়ন করেন তিনি।
ম্যান্ডেলা তাঁর রাজনৈতিক জীবনের প্রথমভাগে মহাত্মা গান্ধীর দর্শন দ্বারা প্রভাবিত হয়ে অহিংস আন্দোলনের সঙ্গে যোগ দেন। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদী শ্বেতাঙ্গ সরকার ১৯৫৬ সালের ৫ ডিসেম্বর ম্যান্ডেলাসহ ১৫০ জন বর্ণবাদবিরোধী কর্মীকে দেশদ্রোহিতার মামলায় গ্রেফতার করে। দীর্ঘ পাঁচ বছর মামলা চলার পর তাঁরা নির্দোষ প্রমাণিত হন। ১৯৬১ সালে এএনসির সশস্ত্র সংগঠনের নেতৃত্ব হাতে নেন ম্যান্ডেলা। বর্ণবাদী সরকার ও তাঁর সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অন্তঘাতী ও চোরাগোপ্তা হামলার পরিকল্পনা ও সমন্বয় করেন। এতে বর্ণবাদী সরকার পিছু না হটলে প্রয়োজনবোধে গেরিলা যুদ্ধে যাওয়ারও পরিকল্পনা নেন।
১৯৬২ সালের ৫ আগস্ট ম্যান্ডেলাকে গ্রেফতার করে বর্ণবাদী সরকার। টানা ২৭ বছর বর্ণবাদী সরকারের কারাগারে বন্দী ছিলেন তিনি। এরই মধ্যে দীর্ঘ সংগ্রাম চালিয়ে গেছেন ম্যান্ডেলার সহযোদ্ধারা। নানা দমন-পীড়ন আর নির্যাতনের বিরুদ্ধে অবিচল থেকে সারা বিশ্বের মুক্তিকামী মানুষের কাছে শ্রদ্ধার আসনে প্রতিষ্ঠিত করেছেন নিজেকে। ১৯৯০ সালের ২ ফেব্রুয়ারি দক্ষিণ আফ্রিকার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট এফডব্লিউডি ক্লার্ক আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসসহ অন্য বর্ণবাদবিরোধী সংগঠনের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেন। ম্যান্ডেলা মুক্তি পান ১৯৯০ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি। বর্ণবাদ অবসানের লক্ষ্যে সরকারের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যান ম্যান্ডেলা। শান্তি আলোচনা ফলপ্রসূ হওয়ার পর ১৯৯৪ সালে দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো সব বর্ণের মানুষের অংশগ্রহণে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। গণতান্ত্রিকভাবে প্রথম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন ম্যান্ডেলা। হলেন দেশটির প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট। ১৯৯৪ থেকে ১৯৯৯ পর্যন্ত প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। দক্ষিণ আফ্রিকা সরকারের সঙ্গে শান্তি আলোচনায় অবদান রাখার জন্য নেলসন ম্যান্ডেলা এবং এফডব্লিউডি ক্লার্ক ১৯৯৩ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কার পান।
বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু নেলসন ম্যান্ডেলার মৃত্যুতে শনিবার থেকে সোমবার তিন দিন রাষ্ট্রীয়ভাবে এই শোক পালন করা হবে। তথ্য অধিদফতরের উপপ্রধান তথ্য কর্মকর্তা ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত জনসংযোগ কর্মকর্তা এএসএম আমিনুল ইসলাম জানান, এই তিন দিন সব সরকারী-বেসরকারী কার্যালয় ও বিদেশে বাংলাদেশের সব মিশনে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে। তবে দাফতরিক কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবেই চলবে।
দীর্ঘদিন ফুসফুসের সংক্রমণে ভুগে বৃহস্পতিবার জোহানেসবার্গে নিজের বাড়িতে মারা যান দক্ষিণ আফ্রিকার কিংবদন্তি নেতা ম্যান্ডেলা। তাঁর মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়াসহ বিশ্ব নেতৃবৃন্দ গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। প্রতিবেশী দেশ ভারতও ম্যান্ডেলার মৃত্যুতে পাঁচদিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার রজতজয়ন্তী উদ্যাপনে ১৯৯৭ সালের ২৬ মার্চ বাংলাদেশে এসেছিলেন নেলসন ম্যান্ডেলা।
বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় রাত পৌনে ১০টার দিকে দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের অবিসংবাদিত নেতা নেলসন ম্যান্ডেলা পৃথিবী ছেড়ে মহাপ্রয়াণে চলে যান। এই খবর নিশ্চিত করেন, দেশটির প্রেসিডেন্ট জ্যাকব জুমা। তিনি রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে ম্যান্ডেলার পরলোকগমনের খবর ঘোষণা করেন।
মানব মুক্তির অগ্রপথিক নেলসন ম্যান্ডেলা বাংলাদেশে এসেছিলেন আজ থেকে ১৭ বছর আগে। দিনটি ছিল ১৯৯৭ সালের ২৬ মার্চ। এদিন বাংলাদেশে একটি গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় স্থাপনা উদ্বোধনের জন্য একই সারিতে দাঁড়িয়েছিলেন ম্যান্ডেলা, ফিলিস্তিনের অবিসংবাদিত নেতা ইয়াসির আরাফাত, তুরস্কের রাষ্ট্রপ্রধান সুলেমান ডেমিরেল, বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দিনটি ছিল বাংলাদেশের জন্য খুবই তাৎপর্যময়। স্বাধীনতার রজতজয়ন্তী। এ দিন রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে রজতজয়ন্তীর স্মারক 'শিখা চিরন্তন' উদ্বোধন করেন মানব মুক্তির নেতা নেলসন ম্যান্ডেলা।
সেদিন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে তাঁকে দেখতে মানুষের ঢল নেমেছিল। এই মহান নেতাকে দেখতে মানুষের ভিড় সামাল দিতে সেদিন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হিমশিম খেতে হয়েছিল। বাংলাদেশের মুক্তিকামী মানুষ এমন একজন মুক্তবাকের মানুষকে পেয়ে আনন্দে আত্মহারা হয়েছিলেন। সেদিনের স্মৃতি আজ এক মহান ইতিহাস। বাংলাদেশ যত দিন বেঁচে থাকবে ওই ইতিহাসও তত দিন বেঁচে থাকবে। দিনটি বাংলাদেশের ইতিহাসে সোনার অক্ষরে লেখা আছে। থাকবেও চিরদিন। বাংলাদেশ ম্যান্ডেলাকে শ্রদ্ধা করে। আজও এ দেশের মানুষ শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছেন সেই দিনটি, যেদিন তিনি বাংলাদেশের মাটিতে পা রেখেছিলেন। আজ বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যমগুলো ম্যান্ডেলার বর্ণিল জীবন নিয়ে নানা আয়োজনে সংবাদ পরিবেশন করছে। এসব সংবাদের মধ্যে বাংলাদেশে তাঁর আগমনের দিনটিও সমানে গুরুত্ব পেয়েছে। তাঁর চিরবিদায়ে বাংলাদেশও আজ তাঁকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছে। ম্যান্ডেলার দেহের মৃত্যু হয়েছে ঠিকই কিন্তু তাঁর কীর্তির মৃত্যু হবে না কোন দিন। এমন এক কিংবদন্তি মানুষের মৃত্যু হয় না কোন দিন।
বর্ণবাদবিরোধী মহান নেতা নেলসন ম্যান্ডেলার বয়স হয়েছিল ৯৫ বছর। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে তিনি তাঁর জোহানেসবার্গের হাউটন শহরতলিতে নিজ বাড়িতে বিশেষ ব্যবস্থায় নিবিড় চিকিৎসাধীনে ছিলেন। ফুসফুসে সংক্রমণজনিত অসুস্থতার কারণে প্রিটোরিয়ার মেডিক্লিনিক হাসপাতালে তিন মাস চিকিৎসা নেয়ার পর গত ১ সেপ্টেম্বর বাড়িতে ফেরেন তিনি।
দক্ষিণ আফ্রিকার জাতির জনক হিসেবে নেলসন ম্যান্ডেলা ১৯৯৪ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত দেশটির প্রেসিডেন্ট ছিলেন। এর আগে দীর্ঘ ২৭ বছর ৮ মাস কারাভোগ করেন তিনি। ম্যান্ডেলার জন্ম ১৯১৮ সালের ১৮ জুলাই। দক্ষিণ আফ্রিকায় ১৯৪৮-এর নির্বাচনে বর্ণবাদবিশ্বাসী ও বিভিন্ন জাতিকে আলাদা করার পক্ষপাতী দল ন্যাশনাল পার্টি জয়লাভ করে। ন্যাশনাল পার্টির ক্ষমতায় আসার প্রেক্ষাপটে ম্যান্ডেলা সক্রিয়ভাবে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। তিনি ১৯৫২ সালে আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসের নেতা হিসেবে অসহযোগ আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন। ১৯৫৫ সালে জনগণের সম্মেলনে তাঁর ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। এখানেই দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের মূলভিত্তি মুক্তি সনদ প্রণয়ন করেন তিনি।
ম্যান্ডেলা তাঁর রাজনৈতিক জীবনের প্রথমভাগে মহাত্মা গান্ধীর দর্শন দ্বারা প্রভাবিত হয়ে অহিংস আন্দোলনের সঙ্গে যোগ দেন। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদী শ্বেতাঙ্গ সরকার ১৯৫৬ সালের ৫ ডিসেম্বর ম্যান্ডেলাসহ ১৫০ জন বর্ণবাদবিরোধী কর্মীকে দেশদ্রোহিতার মামলায় গ্রেফতার করে। দীর্ঘ পাঁচ বছর মামলা চলার পর তাঁরা নির্দোষ প্রমাণিত হন। ১৯৬১ সালে এএনসির সশস্ত্র সংগঠনের নেতৃত্ব হাতে নেন ম্যান্ডেলা। বর্ণবাদী সরকার ও তাঁর সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অন্তঘাতী ও চোরাগোপ্তা হামলার পরিকল্পনা ও সমন্বয় করেন। এতে বর্ণবাদী সরকার পিছু না হটলে প্রয়োজনবোধে গেরিলা যুদ্ধে যাওয়ারও পরিকল্পনা নেন।
১৯৬২ সালের ৫ আগস্ট ম্যান্ডেলাকে গ্রেফতার করে বর্ণবাদী সরকার। টানা ২৭ বছর বর্ণবাদী সরকারের কারাগারে বন্দী ছিলেন তিনি। এরই মধ্যে দীর্ঘ সংগ্রাম চালিয়ে গেছেন ম্যান্ডেলার সহযোদ্ধারা। নানা দমন-পীড়ন আর নির্যাতনের বিরুদ্ধে অবিচল থেকে সারা বিশ্বের মুক্তিকামী মানুষের কাছে শ্রদ্ধার আসনে প্রতিষ্ঠিত করেছেন নিজেকে। ১৯৯০ সালের ২ ফেব্রুয়ারি দক্ষিণ আফ্রিকার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট এফডব্লিউডি ক্লার্ক আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসসহ অন্য বর্ণবাদবিরোধী সংগঠনের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেন। ম্যান্ডেলা মুক্তি পান ১৯৯০ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি। বর্ণবাদ অবসানের লক্ষ্যে সরকারের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যান ম্যান্ডেলা। শান্তি আলোচনা ফলপ্রসূ হওয়ার পর ১৯৯৪ সালে দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো সব বর্ণের মানুষের অংশগ্রহণে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। গণতান্ত্রিকভাবে প্রথম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন ম্যান্ডেলা। হলেন দেশটির প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট। ১৯৯৪ থেকে ১৯৯৯ পর্যন্ত প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। দক্ষিণ আফ্রিকা সরকারের সঙ্গে শান্তি আলোচনায় অবদান রাখার জন্য নেলসন ম্যান্ডেলা এবং এফডব্লিউডি ক্লার্ক ১৯৯৩ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কার পান।
শনিবার, ৭ ডিসেম্বর ২০১৩, ২৩ অগ্রহায়ন ১৪২০
আমি আমার জীবনকে উপভোগ করেছি ॥ ম্যান্ডেলা
'জীবনের শেষ প্রান্তে এসে পৌঁছেছি- এই বিষয়টি বুঝতে পেরেও আমি আশাবাদী রয়েছি। আমার মনোবল অতি উচ্চমাত্রার। কারণ, আমি এরই মধ্যে জীবনকে উপভোগ করেছি।' কথাগুলো বলেছেন দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের নায়ক জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থাকা নেলসন ম্যান্ডেলা। তবে এখন নয়, প্রায় ১৫ বছর আগের বলা কথা এটি। ১৯৯৮ সালে দেশের প্রেসিডেন্ট থাকা অবস্থায় ক্যান্সারে আক্রান্ত মৃত্যুপথযাত্রী এক কিশোরকে দেখতে গিয়ে ওই কথাগুলো বলেছিলেন ম্যান্ডেলা। সেই দৃশ্যের ভিডিও ধারণ করা হয়েছিল, যা এতদিন অপ্রকাশিত ছিল। যুক্তরাষ্ট্রের ....
বিদায় মাদিবা
'আমাদের বিদ্রোহ- অমানিশা পার হতে আলোকের পথে, মেধাবী, সুগন্ধময় সুন্দরে... মুক্তির যাত্রায় এ পথ আমার বুঝি আর শেষ হওয়ার নয়।' নিজের লেখা এই বাক্যের মর্ম জীবনে ধারণ করে যিনি বিশ্বের মুক্তিকামী মানুষের প্রেরণার উৎস হয়ে ওঠেন, সেই অবিসংবাদিত মহান নেতা নেলসন ম্যান্ডেলা চলে গেছেন পৃথিবীর মায়া ছেড়ে। দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গের...
__._,_.___