যে সাক্ষ্যে কাদের মোল্লার ফাঁসি
বুধবার, ১১ ডিসেম্বর ২০১৩, ২৭ অগ্রহায়ন ১৪২০
আরাফাত মুন্না ॥ একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে সুপ্রীমকোর্ট থেকে মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত জামায়াত নেতা কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে আনা ছয় অভিযোগের মধ্যে পাঁচটি অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছিল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে। তবে প্রমাণিত হলেও ষষ্ঠ অভিযোগে কাদের মোল্লাকে দেয়া হয়েছে যাবজ্জীবন। এই অভিযোগেই কাদের মোল্লাকে দেয়া হয়েছে মৃত্যুদণ্ড। এই অভিযোগ সম্পর্কে সুপ্রীমকোর্ট রায়ে বলেন, সাজার দণ্ডে অপরাধের মাত্রা এবং অপরাধীর দায়ের মাত্রার প্রতিফলন ঘটতে হবে। অপরাধের মাত্রা যদি কাদের মোল্লার সাজার ভিত্তি ধরা হয়, তাহলে ৬ নম্বর অভিযোগে কাদের মোল্লাকে সর্বোচ্চ দণ্ড প্রদানের ক্ষেত্রে উপযুক্ততম মামলা যেখানে হত্যা এবং ধর্ষণ ছিল বর্বরোচিত, ঠাণ্ডা মাথার ও নিষ্ঠুরতম। এই অপরাধের গুরুত্ব বিবেচনায় এই মামলায় যদি ট্রাইব্যুনাল সর্বোচ্চ সাজা না দেয় তাহলে সর্বোচ্চ সাজা দেয়ার মতো অন্য কোন মামলা পাওয়া কঠিন হবে।
ষষ্ঠ অভিযোগে বলা হয়েছে, একাত্তরের ২৬ মার্চ কাদের মোল্লা, তার সহযোগী এবং পাকিস্তানী সেনারা মিরপুরের ১২ নম্বর সেকশনে হযরত আলী লস্করের বাসায় যান। কাদের মোল্লার নির্দেশে হযরত, তার স্ত্রী, দুই মেয়ে এবং দুই বছরের এক ছেলেকে হত্যা করা হয়। ধর্ষণের শিকার হন শহীদ হযরত আলী লস্করের এক মেয়ে। হযরত আলী লস্করের ওই মেয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্যও দিয়েছিলেন। তবে সেটি ছিল ক্যামেরা ট্রায়ালে। সাক্ষ্যটি ক্যামেরা ট্রায়ালে হওয়ায় কোন সংবাদ মাধ্যমেই এ বিষয়টি নিয়ে কোন সংবাদ প্রকাশ করা হয়নি। মোমেনা বেগমের সাক্ষ্যের বিষয়ে আপীল শুনানিতে এ্যাটর্নি জেনারেল বলেছিলেন, মোমেনা বেগমের সাক্ষ্য বিশ্বাস করা প্রয়োজন ছিল। কারণ তার জবানবন্দীতে উঠে এসেছে কাদের মোল্লার অপরাধের হিংস্রতা। এ হিংস্র অপরাধে কাদের মোল্লার মৃত্যুদ- ছাড়া অন্য কিছু হতে পারে না। জনকণ্ঠের পাঠকদের জন্য পেপার বুক থেকে সংগৃহীত মোমেনা বেগমের ওই সাক্ষ্যের জবানবন্দীর অংশটুকু হুবহু তুলে ধরা হলো।
'আমার নাম মোমেনা বেগম। স্বামীর নাম হাবিবুর রহমান। মুক্তিযুদ্ধের সময় আমার বয়স ছিল ১২/১৩ বছর। আমরা ৪ বোন ১ ভাই। ভাই-বোনদের মধ্যে আমি সবার বড়। আমার বাবার নাম হযরত আলী লস্কর। আমার বাবা দরজির কাজ করতেন। তিনি আওয়ামী লীগ করতেন এবং বঙ্গবন্ধুর ভক্ত ছিলেন। আমার বাবা মিছিলে যেতেন, নৌকা মার্কার পোস্টার লাগাতেন। আমার মা ২৬ মার্চ, ১৯৭১ সালে গর্ভবতী ছিলেন। আমরা তখন মিরপুরে ১২ নম্বর সেকসনে কালাপানি ৫ নম্বর লেনের ২১ নম্বর বাসায় থাকতাম।'
'২৬ মার্চ ১৯৭১ সন্ধ্যায় বেলা ডোবার আগেই ঘটনাটা ঘটে। সেই সময় আমার আব্বা দৌড়াইয়া দৌড়াইয়া আসে এবং বলতে থাকে কাদের মোল্লা মেরে ফেলবে। আক্তার গুন্ডা বিহারীরা তারা ও পাক বাহিনীরা দৌড়াইয়া আসছিল আমার বাবাকে মেরে ফেলার জন্য। তখন আমার আব্বা ঘরে এসে দরজার খিল লাগায়ে দেয়। ঘরের মধ্যে আমার মা-বাবা, ভাই-বোনেরা সবাই ছিলেন। আব্বা বলেন, তোমরা খাটের নিচে লুকাও। তখন আমরা দুই বোন আমেনা ও আমি খাটের নিচে লুকাই। কাদের মোল্লা ও বিহারীরা দরজার সামনে এসে বলে যে, "এই হারামিকা বাচ্চা দরজা খোল, বোমা মারদেঙ্গা" দরজা না খোলায় তারা একটি বোমা মারে। আমার আম্মা হাতে একটা দা নিয়ে দরজাটা খোলে। দরজা খোলার সাথে সাথে আমার আম্মাকে তারা গুলি করে। আমার আব্বা আমার আম্মাকে ধরতে গেলে অভিযুক্ত কাদের মোল্লা পিছন থেকে শার্টের কলার টেনে ধরে বলে, এই শুয়ারের বাচ্চা, এখন আর আওয়ামী লীগ করবি না? বঙ্গবন্ধুর সাথে যাবি না? মিছিল করবি না? জয় বাংলা বলবি না? তখন আমার বাবা হাত জোড় করে কাদের মোল্লাকে বলে, "কাদের ভাই আমাকে ছেড়ে দাও।" বাবা আক্তার গুন্ডাকে বলে, "আক্তার ভাই আমাকে ছেড়ে দাও।" তখন তারা আমার বাবাকে টেনে হেঁচড়ে ঘরের বাইরে নিয়ে যায়। দাও দিয়ে আমার মাকে তখন তারা জবাই করে (সাক্ষী তখন অঝোরে কাঁদছিল)। তখন চাপাতি দিয়ে খোদেজাকে জবাই করে, তাসলিমাকেও জবাই করে। আমার একটি ভাই ছিল বাবু বয়স ছিল ২ বছর তাকে আছড়িয়ে মারে। বাবু মা মা করে চিৎকার করছিল। এ চিৎকার শুনে আমেনাও চিৎকার দেয়। চিৎকার দেয়ার সাথে সাথে আমেনাকে তারা টেনে বের করে। টেনে বের করে তারা আমেনার সব কাপড়-চোপড় ছিঁড়ে ফেলে। ছিঁড়ে ফেলে তারা তখন আমার বোনকে নারী নির্যাতন করতে থাকে। তখন আমেনা অনেক চিৎকার করে, এক পর্যায়ে চিৎকার বন্ধ হয়ে যায়। (এ পর্যায়ে সাক্ষী কিছু সময়ের জন্য কাঁদতে কাঁদতে অজ্ঞান হয়ে পড়ে)। তার পর প্রায় সন্ধ্যা হয়ে আসে, অন্ধকার হয়ে আসে তখন তারা কি দিয়ে যেন খুচাচ্ছিল, দেখছে ঘরে আর কেউ আছে কি না। এই পর্যায়ে একটি খোঁচা আমার বাম পায়ে গেঁথে যায়। আমি খুব আঘাতপ্রাপ্ত হই। খোঁচা লাগার পরে আমাকে যখন টেনে বের করে তখন আমি আর কিছু বলতে পারি না। আমি অজ্ঞান হয়ে যাই। আঘাত পাবার পর আমি চিৎকার করি এবং অজ্ঞান হয়ে যাই। আমার যখন জ্ঞান ফেরে তখন অনেক রাত। আমার পেটে তখন প্রচন্ড ব্যথা এবং ভেজা-আমি হাঁটতে পারি না। আমার পেটে অনেক ব্যাথা। আমি প্যান্ট পরা ছিলাম, প্যান্ট ফাড়া। তখন আমি আস্তে আস্তে অনেক কষ্টে ফকির বাড়ি যাই। ফকির বাড়ি যাওয়ার পরে ঐ বাড়িতে আমি বলি, মা দরজাটা খোল, বাবা দরজাটা খোল। তখন দরজা খোলে। তখন আমার শরীরের কাপড়-চোপড় রক্তে ভেজা দেখে আমার প্যান্টটা ফাড়া দেখে। তারা একটি কাপড় দিয়ে আমার পায়ের ক্ষতস্থান বেঁধে দেয় এবং তাদের বড় ছালোয়ার আমাকে পরতে দেয় এবং পরের দিন ডাক্তার এনে আমাকে চিকিৎসা করায় এবং ঔষধপত্র দেয়। খুব ছোটবেলায় আমার বিয়ে হয়েছিল কিন্তু তখনও স্বামীর ঘরে যাইনি। ফকির বাড়ির লোকজন আমাকে জিজ্ঞেস করে আমার বাড়ি কোথায়, আমার স্বামী কোথায়। তখন তারাই আমার শ্বশুরবাড়িতে খবর দেয়। আমার শ্বশুর এসে আমাকে নিয়ে যায়। নিয়ে গিয়ে আমাকে তারা চিকিৎসা করায়। আমার শ্বাশুড়ি রাতে আমাকে বুকের মধ্যে রাখতেন। আমি পাগলের মতো এদিক-সেদিক দৌড়াদৌড়ি করতাম। আমার শ্বশুর-শাশুড়ি আমাকে ধরে নিয়ে এসে বুকে জড়ায়ে রাখত।'
বাংলাদেশ স্বাধীন হলেও মিরপুর তখনও স্বাধীন হয়নি। টেকনিক্যাল থেকে একটি কাগজে তিন ঘন্টার টাইম লিখে নিয়ে আমার মা-বাবার লাশ খুঁজতে যেতাম। আমাদের বাড়িতে আমি কাউকে পাইনি শুধু দুর্গন্ধ, সেখানে অনেক লোক মেরেছে। কামাল খান নামে একটা লোক ছিল সে মুক্তিযোদ্ধাদের চা বানিয়ে খাওয়াত। তিনি আমাকে বলত কাদের মোল্লা তোর বাবা-মাকে মেরে ফেলেছে। আক্কাছ মোল্লা আমার উকিল বাবা ছিলেন, তিনিও একই কথা বলতেন। তিনি বলতেন আল্লার কাছে বিচার দাও, আল্লাহ কাদের মোল্লার বিচার করবে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে প্রায় তিন বছর আমি পাগল ছিলাম। আমাকে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখত। ১৯৭১ সালে আমার চোখের সামনে বাবা-মা, ভাই-বোনদের হত্যা করার সেই দৃশ্য আজও ভুলতে পারি না। সেই জন্যই আমি প্রায় পাগল ছিলাম। আমি বেঁচে থেকেও মরে আছি। আমি বিচার চাই। (অভিযুক্ত কাদের মোল্লা ওকে শনাক্ত)। তখন তিনি আরও জোয়ান ছিলেন, অল্প বয়সী ছিলেন, পাঞ্জাবি পরেছিলেন। আমি তাকে জিজ্ঞাস করতে চাই "আমার বাবা কোথায়?" এই মামলার তদন্তকারী অফিসার আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল।
ষষ্ঠ অভিযোগে বলা হয়েছে, একাত্তরের ২৬ মার্চ কাদের মোল্লা, তার সহযোগী এবং পাকিস্তানী সেনারা মিরপুরের ১২ নম্বর সেকশনে হযরত আলী লস্করের বাসায় যান। কাদের মোল্লার নির্দেশে হযরত, তার স্ত্রী, দুই মেয়ে এবং দুই বছরের এক ছেলেকে হত্যা করা হয়। ধর্ষণের শিকার হন শহীদ হযরত আলী লস্করের এক মেয়ে। হযরত আলী লস্করের ওই মেয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্যও দিয়েছিলেন। তবে সেটি ছিল ক্যামেরা ট্রায়ালে। সাক্ষ্যটি ক্যামেরা ট্রায়ালে হওয়ায় কোন সংবাদ মাধ্যমেই এ বিষয়টি নিয়ে কোন সংবাদ প্রকাশ করা হয়নি। মোমেনা বেগমের সাক্ষ্যের বিষয়ে আপীল শুনানিতে এ্যাটর্নি জেনারেল বলেছিলেন, মোমেনা বেগমের সাক্ষ্য বিশ্বাস করা প্রয়োজন ছিল। কারণ তার জবানবন্দীতে উঠে এসেছে কাদের মোল্লার অপরাধের হিংস্রতা। এ হিংস্র অপরাধে কাদের মোল্লার মৃত্যুদ- ছাড়া অন্য কিছু হতে পারে না। জনকণ্ঠের পাঠকদের জন্য পেপার বুক থেকে সংগৃহীত মোমেনা বেগমের ওই সাক্ষ্যের জবানবন্দীর অংশটুকু হুবহু তুলে ধরা হলো।
'আমার নাম মোমেনা বেগম। স্বামীর নাম হাবিবুর রহমান। মুক্তিযুদ্ধের সময় আমার বয়স ছিল ১২/১৩ বছর। আমরা ৪ বোন ১ ভাই। ভাই-বোনদের মধ্যে আমি সবার বড়। আমার বাবার নাম হযরত আলী লস্কর। আমার বাবা দরজির কাজ করতেন। তিনি আওয়ামী লীগ করতেন এবং বঙ্গবন্ধুর ভক্ত ছিলেন। আমার বাবা মিছিলে যেতেন, নৌকা মার্কার পোস্টার লাগাতেন। আমার মা ২৬ মার্চ, ১৯৭১ সালে গর্ভবতী ছিলেন। আমরা তখন মিরপুরে ১২ নম্বর সেকসনে কালাপানি ৫ নম্বর লেনের ২১ নম্বর বাসায় থাকতাম।'
'২৬ মার্চ ১৯৭১ সন্ধ্যায় বেলা ডোবার আগেই ঘটনাটা ঘটে। সেই সময় আমার আব্বা দৌড়াইয়া দৌড়াইয়া আসে এবং বলতে থাকে কাদের মোল্লা মেরে ফেলবে। আক্তার গুন্ডা বিহারীরা তারা ও পাক বাহিনীরা দৌড়াইয়া আসছিল আমার বাবাকে মেরে ফেলার জন্য। তখন আমার আব্বা ঘরে এসে দরজার খিল লাগায়ে দেয়। ঘরের মধ্যে আমার মা-বাবা, ভাই-বোনেরা সবাই ছিলেন। আব্বা বলেন, তোমরা খাটের নিচে লুকাও। তখন আমরা দুই বোন আমেনা ও আমি খাটের নিচে লুকাই। কাদের মোল্লা ও বিহারীরা দরজার সামনে এসে বলে যে, "এই হারামিকা বাচ্চা দরজা খোল, বোমা মারদেঙ্গা" দরজা না খোলায় তারা একটি বোমা মারে। আমার আম্মা হাতে একটা দা নিয়ে দরজাটা খোলে। দরজা খোলার সাথে সাথে আমার আম্মাকে তারা গুলি করে। আমার আব্বা আমার আম্মাকে ধরতে গেলে অভিযুক্ত কাদের মোল্লা পিছন থেকে শার্টের কলার টেনে ধরে বলে, এই শুয়ারের বাচ্চা, এখন আর আওয়ামী লীগ করবি না? বঙ্গবন্ধুর সাথে যাবি না? মিছিল করবি না? জয় বাংলা বলবি না? তখন আমার বাবা হাত জোড় করে কাদের মোল্লাকে বলে, "কাদের ভাই আমাকে ছেড়ে দাও।" বাবা আক্তার গুন্ডাকে বলে, "আক্তার ভাই আমাকে ছেড়ে দাও।" তখন তারা আমার বাবাকে টেনে হেঁচড়ে ঘরের বাইরে নিয়ে যায়। দাও দিয়ে আমার মাকে তখন তারা জবাই করে (সাক্ষী তখন অঝোরে কাঁদছিল)। তখন চাপাতি দিয়ে খোদেজাকে জবাই করে, তাসলিমাকেও জবাই করে। আমার একটি ভাই ছিল বাবু বয়স ছিল ২ বছর তাকে আছড়িয়ে মারে। বাবু মা মা করে চিৎকার করছিল। এ চিৎকার শুনে আমেনাও চিৎকার দেয়। চিৎকার দেয়ার সাথে সাথে আমেনাকে তারা টেনে বের করে। টেনে বের করে তারা আমেনার সব কাপড়-চোপড় ছিঁড়ে ফেলে। ছিঁড়ে ফেলে তারা তখন আমার বোনকে নারী নির্যাতন করতে থাকে। তখন আমেনা অনেক চিৎকার করে, এক পর্যায়ে চিৎকার বন্ধ হয়ে যায়। (এ পর্যায়ে সাক্ষী কিছু সময়ের জন্য কাঁদতে কাঁদতে অজ্ঞান হয়ে পড়ে)। তার পর প্রায় সন্ধ্যা হয়ে আসে, অন্ধকার হয়ে আসে তখন তারা কি দিয়ে যেন খুচাচ্ছিল, দেখছে ঘরে আর কেউ আছে কি না। এই পর্যায়ে একটি খোঁচা আমার বাম পায়ে গেঁথে যায়। আমি খুব আঘাতপ্রাপ্ত হই। খোঁচা লাগার পরে আমাকে যখন টেনে বের করে তখন আমি আর কিছু বলতে পারি না। আমি অজ্ঞান হয়ে যাই। আঘাত পাবার পর আমি চিৎকার করি এবং অজ্ঞান হয়ে যাই। আমার যখন জ্ঞান ফেরে তখন অনেক রাত। আমার পেটে তখন প্রচন্ড ব্যথা এবং ভেজা-আমি হাঁটতে পারি না। আমার পেটে অনেক ব্যাথা। আমি প্যান্ট পরা ছিলাম, প্যান্ট ফাড়া। তখন আমি আস্তে আস্তে অনেক কষ্টে ফকির বাড়ি যাই। ফকির বাড়ি যাওয়ার পরে ঐ বাড়িতে আমি বলি, মা দরজাটা খোল, বাবা দরজাটা খোল। তখন দরজা খোলে। তখন আমার শরীরের কাপড়-চোপড় রক্তে ভেজা দেখে আমার প্যান্টটা ফাড়া দেখে। তারা একটি কাপড় দিয়ে আমার পায়ের ক্ষতস্থান বেঁধে দেয় এবং তাদের বড় ছালোয়ার আমাকে পরতে দেয় এবং পরের দিন ডাক্তার এনে আমাকে চিকিৎসা করায় এবং ঔষধপত্র দেয়। খুব ছোটবেলায় আমার বিয়ে হয়েছিল কিন্তু তখনও স্বামীর ঘরে যাইনি। ফকির বাড়ির লোকজন আমাকে জিজ্ঞেস করে আমার বাড়ি কোথায়, আমার স্বামী কোথায়। তখন তারাই আমার শ্বশুরবাড়িতে খবর দেয়। আমার শ্বশুর এসে আমাকে নিয়ে যায়। নিয়ে গিয়ে আমাকে তারা চিকিৎসা করায়। আমার শ্বাশুড়ি রাতে আমাকে বুকের মধ্যে রাখতেন। আমি পাগলের মতো এদিক-সেদিক দৌড়াদৌড়ি করতাম। আমার শ্বশুর-শাশুড়ি আমাকে ধরে নিয়ে এসে বুকে জড়ায়ে রাখত।'
বাংলাদেশ স্বাধীন হলেও মিরপুর তখনও স্বাধীন হয়নি। টেকনিক্যাল থেকে একটি কাগজে তিন ঘন্টার টাইম লিখে নিয়ে আমার মা-বাবার লাশ খুঁজতে যেতাম। আমাদের বাড়িতে আমি কাউকে পাইনি শুধু দুর্গন্ধ, সেখানে অনেক লোক মেরেছে। কামাল খান নামে একটা লোক ছিল সে মুক্তিযোদ্ধাদের চা বানিয়ে খাওয়াত। তিনি আমাকে বলত কাদের মোল্লা তোর বাবা-মাকে মেরে ফেলেছে। আক্কাছ মোল্লা আমার উকিল বাবা ছিলেন, তিনিও একই কথা বলতেন। তিনি বলতেন আল্লার কাছে বিচার দাও, আল্লাহ কাদের মোল্লার বিচার করবে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে প্রায় তিন বছর আমি পাগল ছিলাম। আমাকে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখত। ১৯৭১ সালে আমার চোখের সামনে বাবা-মা, ভাই-বোনদের হত্যা করার সেই দৃশ্য আজও ভুলতে পারি না। সেই জন্যই আমি প্রায় পাগল ছিলাম। আমি বেঁচে থেকেও মরে আছি। আমি বিচার চাই। (অভিযুক্ত কাদের মোল্লা ওকে শনাক্ত)। তখন তিনি আরও জোয়ান ছিলেন, অল্প বয়সী ছিলেন, পাঞ্জাবি পরেছিলেন। আমি তাকে জিজ্ঞাস করতে চাই "আমার বাবা কোথায়?" এই মামলার তদন্তকারী অফিসার আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল।
বুধবার, ১১ ডিসেম্বর ২০১৩, ২৭ অগ্রহায়ন ১৪২০
---------------------------------------------------------------------------------------------
Also read:
ছাত্র ইউনিয়ন ছেড়ে আলবদর কমান্ডার আবদুল কাদের মোল্লা !
Related video:
লাকী আক্তার- Tui Rajakar Slogan leading by Lucky akter
__._,_.___