সোমবার, ১৩ জানুয়ারী ২০১৪, ৩০ পৌষ ১৪২০
নির্বাচন, বিরোধী রাজনৈতিক দল ও সুশীলদের বিশাল ক্রোধ এবং তারপর
মুনতাসীর মামুন
(পঞ্চম কিস্তি)
খালেদা জিয়া বাংলাদেশের রাজনীতি করেন বটে কিন্তু দেশটির প্রতি তার কোন ভালবাসা নেই। তিনি কীভাবে ১৫ আগস্ট জন্মদিন পালন করেন? শেখ হাসিনা তাকে কাতরভাবে অনুরোধ করেছিলেন, আপনি অনুগ্রহ করে ১৫ আগস্ট জন্মদিন পালন করবেন না। আমার কষ্ট হয়। খালেদার উত্তর ছিল, ১৫ আগস্ট কি কারও জন্মদিন হতে পারে না? যৌক্তিক উত্তর। কিন্তু আমরা তো জানি ১৫ আগস্ট তাঁর জন্মদিন নয়। এটি একটি অরুচিকর ব্যাপার যা তার ঘনিষ্ঠ মওদুদ আহমদও উল্লেখ করেছেন। শুধু অরুচিকর নয়, এটি এক ধরনের নিষ্ঠুরতা, প্রতারণা তো বটেই। জাতির জনককে হেয় করা সুস্থ মানসিকতার পরিচয় নয়।
কয়েকদিন আগেও তিনি বলেছেন, গোপালগঞ্জের নাম মুছে দেবেন। এটির উৎসও সেই বঙ্গবন্ধু ও তাঁর কন্যা তথা মুক্তিযুদ্ধের প্রতি ব্যক্তিগত আক্রোশ। গোপালগঞ্জের নাম পাকিস্তানী হানাদাররাও বদলাতে পারেননি। তিনি কী করে পারবেন? শুনেছি, ফেসবুক ও অনলাইনে নাকি 'বলাবলি' হচ্ছে গোপালগঞ্জ নাম বদলে জানজুয়াগঞ্জ রেখে তিনি প্রতিশোধ নেবেন। এ কারণেই গোপালগঞ্জের বাসিন্দাদের বলেছেন গোপালি। হাসিনা ঠাট্টা করে অবশ্য বলেছেন। গোপালিরা কপালিও। বর্তমান অবস্থা অবশ্য সেটি প্রমাণ করে।
এই দৃষ্টিভঙ্গির যখন একজন কোন দলের নেতা হন তখন সেই দলের চরিত্র কেমন হতে পারে তা অনুমেয়।
ইদানীং অনেক সুশীল বলছেন, গত কয়েক মাসে যা ঘটল তার জন্য দুদলই দায়ী। কেন একদল নয়, দুদল দায়ী তার ব্যাখ্যা তারা দেন না। সংবিধান অনুসারে চলা তা হলে অপরাধ? বায়োলেন্সের চাপে পড়ে সংবিধান বদল করা তাহলে খুব ভাল? ভায়োলেন্সই যদি প্রধান আপত্তির বিষয় হয় তাহলে ভায়োলেন্স যারা করছে এবং যারা করছে না তাদের মধ্যে পার্থক্য থাকবে না। বিরোধীদলের নেতাদের গ্রেফতার করা গণতন্ত্র বিরোধী, একমত। কিন্তু যারা ভায়োলেন্স প্রচার করছে তারা যদি তা না করে তাহলে গ্রেফতারের যুক্তি সরকারের থাকত না। সুশীলদের এই যুক্তি ঠিক হলে দলে দলে লোক আজ রাস্তায় নেমে বিরোধী দলের প্রতি আচরণের প্রতিবাদ করতেন। পুলিশের বাধা মানতেন না। জেলের ভয়ও করতেন না। বাংলাদেশে সে ধরনের ঘটনা ঘটেছে তা তো অস্বীকারের উপায় নেই।
সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপিকে জামায়াত ছেড়ে আসতে তাহলে আলোচনার পথ সুগম হবে। তার সঙ্গে আমি দ্বিমত পোষণ করি। এ যুক্তি আওয়ামী লীগের টিপিক্যাল যুক্তি। সে বিষয়ে পরে আসছি। উত্তরে খালেদা জিয়া বলেছেন, তিনি কাকে সঙ্গে রাখবেন কি রাখবেন না এটি তার ব্যাপার। আমি মনে করি উত্তরটি সঠিক।
আওয়ামী লীগের বহুদিনের তত্ত্ব, বিএনপি-জামায়াতকে আলাদা করা যাতে নির্বাচনে ভোটের সুবিধা হয়। এই অবস্থান আদর্শগত দিক থেকেও বেশি সুবিধাবাধ। প্রথমে দেখা যাক দুটি দলের আদর্শ ও লক্ষ্য কী? কয়েকটি উদাহরণ দেবÑ
১. বিএনপি ও জামায়াত ঐতিহাসিকভাবে ভায়োলেন্সে বিশ্বাসী এবং ভায়োলেন্সের মাধ্যমে ক্ষমতায় যেতে বা দখলে আগ্রহী। এ ক্ষেত্রে যদি সাধারণ মানুষেরও কষ্ট হয় বা মৃত্যু হয় তাতেও তাদের আপত্তি নেই।
২. যুদ্ধাপরাধ বিচারে দুটি দলেরই আপত্তি। দুটি দলেই রাজাকারের সংখ্যা বেশি। এবং বর্তমান সংঘাতের কারণও তাই।
৩. পাকিস্তান সংসদ যখন বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নিন্দা প্রস্তাব গ্রহণ করে তখন জামায়াত নিশ্চুপ থাকে এবং বিএনপি 'মর্মাহত' হয়। প্রেমিক চলে গেলে মর্মাহত হতে পারে কেউ। কিন্তু নিন্দা প্রস্তাব বা প্রতিবাদ 'মর্মাহত' থেকে আলাদা বিষয়।
৪. বিএনপি ঐতিহাসিক হিসেবেই জামায়াতের সাথী। আওয়ামী লীগের নয়।
৫. গত কয়েক মাস যৌথভাবেই তারা মানুষ পুড়িয়ে, কুপিয়ে, পিটিয়ে হত্যা করেছে। ১০০০-এর বেশি যানবাহন পুড়িয়েছে। অগণিত মানুষকে জখম করেছে।
তাহলে দুটি দল আলাদা হলো কীভাবে। জামায়াত ১৯৭১ সালে যে ভূমিকা রেখেছে তা ঐতিহাসিকভাবে সত্য। সে জন্য জামায়াতকে সব সময় দোষী করা সহজ। আমাদের অনেকের আত্মীয়স্বজন বন্ধুবান্ধব বিএনপির সঙ্গে যুক্ত। স্বার্থগত কারণেই কি আমরা বিএনপিকে আলাদাভাবে দেখাতে চাই?
ধরা যাক, নির্বাচনে একটি এলাকায় বিএনপি আওয়ামী লীগ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। বিএনপি-জামায়াত আলাদা হলে কি জামায়াত সমর্থকরা নৌকায় ভোট দেবে? কখনই না। ১৯৭১ যেমন পাকিস্তান ভোলেনি, জামায়াতও কখনও তা ভোলেনি। এবং যুদ্ধাপরাধের বিচারের কারণে কখনও জামায়াতীরা ভোট দেবে না আওয়ামী লীগকে। এ সহজ সত্যটা কেন আমরা বিস্মৃত হই। চীনা বিপ্লবের সময় চীনা কমিউনিস্ট পার্টি একই সঙ্গে কুওমিনটাং ও জাপানীদের বিরুদ্ধে লড়েছিল। এখানেও প্রতিরোধটা দুই ফ্রন্টে হতে হবে। জামায়াত-বিএনপির রাজনীতি যেহেতু একই রকম সে কারণে দুটি দলের রাজনীতি প্রতিরোধই বাঞ্ছনীয়। আরেকটি উদাহরণ দিই, বঙ্গবন্ধুকে বিএনপি সব সময় হেয় করে। কিন্তু জামায়াত কি পূজা করে তাকে? বঙ্গবন্ধু প্রশ্নে দুটি দলের ভূমিকাও এক রকম। এ ক্ষেত্রে তাহলে কী হবে?
আমরা মনে করি বাংলাদেশে যেসব দল রাজনীতি করবে সবাইকে বাংলাদেশের মূল স্পিরিটটাকে সমর্থন করতে হবে। তা যদি না হয়, তাহলে গণতন্ত্রের অজুহাতে তাদের রাজনীতি করতে দেয়া যাবে না। সুতরাং দুটি দলকে আলাদা এককে বিচার করা এক ধরনের বিভ্রান্তি সৃষ্টি করবে।
আমাদের মনে রাখা উচিত বিএনপির নেতা তারেক জিয়া বলেছিলেন, জামায়াত-বিএনপি একই বৃন্তে দুটি ফুল। তারেক এ ব্যাপারে স্বচ্ছ। আওয়ামী লীগ নয়।
নির্বাচন পরবর্তী অবস্থা কী হতে পারে
নির্বাচন পরবর্তী অবস্থা কী হবে বাংলাদেশে কারও পক্ষে নিশ্চিতভাবে তা বলা সম্ভব নয়। বাংলাদেশের ইতিহাসের একটি উপাদান অনিশ্চয়তা।
নির্বাচনের পর সরকারের প্রথম চ্যালেঞ্জ অবরোধের অনিশ্চয়তার অবসান ঘটানো, কঠোরভাবে সহিংসতা দমন যাতে সবার মনে হয় যে দেশে একটি সরকার আছে। একই সঙ্গে এমন একটি মন্ত্রিসভা গঠন করা যাতে সবার আস্থা থাকে। দলের সাংগঠনিক সচলতাও বাঞ্ছনীয়। ওয়েবসাইটে প্রার্থীদের সম্পদের যে বিবরণ দেয়া হয়েছে তা নিয়ে পত্র-পত্রিকা একতরফাভাবে মন্তব্য করেছে। শেখ হাসিনা সংবাদ সম্মেলনে তার একটি ব্যাখ্যাও দিয়েছেন। কিন্তু, অনেকে যে দুর্নীতির আশ্রয় নিয়েছে তা অস্বীকার করা হবে সত্যকে অস্বীকার করা। তাদের বিরুদ্ধে যদি যথাযথ কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিতে চায় তাতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না করাই বিধেয়।
নির্বাচনের পর গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান বিশেষ করে স্থানীয় সরকার শক্তিশালী করা জরুরী। স্থানীয় সরকার শক্তিশালী হলে এমপিদের দুর্নীতি করার পরিসর হ্রাস পাবে। একই সঙ্গে রাজনৈতিক সহিষ্ণুতার ওপর গুরুত্ব আরোপ করতে হবে। বিএনপি যদি ভায়োলেন্স বা অবরোধ পরিত্যাগ করে সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনে আগ্রহী হয় তা হলে তাদের আগ্রহকে অগ্রাধিকার দিলে যে বিভক্তি তৈরি হয়েছে দেশে তা খানিকটা হলেও হ্রাস পাবে।
১৪ দল বিশেষ করে আওয়ামী লীগের কাছে রাজনৈতিক আদর্শের শক্তিশালীকরণ সবার আশা। এই রাজনৈতিক আদর্শই বর্তমান সংঘাতের মূল কারণ। এখানে অস্পষ্টতা থাকলে মানুষ বিভ্রান্ত হবে, দল নিছক সুবিধাবাদের রাজনীতির দল হয়ে পড়বে। সম্প্রতি হানিফের জামায়াতের আমিরকে বরণ ও সম্পদ নিয়ে উক্তি কেউ পছন্দ করেনি। এতে হানিফ সুবিধা পেতে পারেন কিন্তু দলের ক্ষতি হয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে স্বদেশ রায় যা লিখেছেন তা যুক্তিযুক্ত। তিনি হানিফ ছাড়াও বগুড়ার একটি ঘটনার উল্লেখ করেছেন। উদ্ধৃতিটি দীর্ঘ হলেও উদ্ধৃত করছি। কারণ তা এই প্রবন্ধের সঙ্গে প্রাসঙ্গিকÑ
''বগুড়ার মমতাজউদ্দিন ভোটের দিন অবধিও জামায়াতকে সহযোগিতা করে গেছেন। নির্বাচনের কয়েক দিন আগে বগুড়াতে ৬৫ জন জামায়াত-বিএনপির ক্রিমিনালকে আটক করেছিল যৌথবাহিনী। তাদের সেরা দশ ক্রিমিনালকে ছাড়িয়ে দেন বগুড়ার ডিসিকে তদ্বির করে এই মমতাজ উদ্দিনই। সেখানে চাকরি করেন এমন একজন স্বাধীনতার সপক্ষের পুলিশ কর্মকর্তা যে কারণে চোখের পানি ফেলেছে আওয়ামী লীগ নেতার এ আচরণ দেখে। কারণ, তিনি মাত্র কয়েক দিন আগে ভাগ্যক্রমে শিবিরের বোমার হাত থেকে বেঁচে যান। তাই শেখ হাসিনাকে এই স্বাধীনতাবিরোধী জঙ্গীদের সঙ্গে লড়তে হলে অবিলম্বে এসব মমতাজ উদ্দিনদের দল থেকে বাদ দিতে হবে, নইলে নিষ্ক্রিয় করে সৎ ও আদর্শের প্রতি অনুগতদের দায়িত্ব দিতে হবে। গাইবান্ধা, রংপুরে নির্বাচনের আগে এমন ঘটল কেন- এ নিয়ে যতটুকু যা খোঁজ নিয়েছি তাতে দুটি বিষয় বেরিয়ে এসেছে। এক. ওই সব জায়গায় প্রশাসন জামায়াতের প্রতি অনুগত ছিল এবং ওই সব এলাকার নেতাদের দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার কারণে কর্মীরা তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। ইতোমধ্যে প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন তাদের উইথড্র করেছে। এখন শেখ হাসিনাকে খোঁজ নিতে হবে তাঁর সংগঠনের কারা দায়ী। সে সব জায়গায় পরিবর্তন আনতে হবে। পাশাপাশি হঠকারী কথাবার্তা যে সব নেতা বলছেন তাঁদের সাবধান করে দিতে হবে। যেদিন শেখ হাসিনা প্রেস কনফারেন্স করে বলছেনÑবিএনপিকে জামায়াত ছেড়ে আসতে, ওইদিনই টেলিভিশনে হানিফ বলছেন, নতুন প্রজন্মের জামায়াত ভুল স্বীকার করে আওয়ামী লীগেও যোগ দিতে পারে। মি. হানিফ রাজনীতিতে নবাগত। তা ছাড়া কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে তিনি সিঁড়ি বেয়ে ওঠেননি। হাত ধরে উঠেছেন। সংগঠন হিসেবে জামায়াত সম্পর্কে তাঁর কতটুকু ধারণা আছে জানি না। এই সাপের বিষেই কিন্তু বিএনপির শরীর নীল হয়ে গেছে। মুক্তিযুদ্ধের সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এ দেশের প্রগতিশীল মানুষের সংগঠন। এটাকে নিয়ে খেলতে যাবেন না। আপনাদের মতো নেতারা কেউ হেফাজতের সঙ্গে আপোস করতে যান, কেউ জামায়াতকে দলে টানতে যান। আর শেষ পর্যন্ত ডোবান শেখ হাসিনাকে। শেখ হাসিনাকে বাইরে অনেক যুদ্ধ করতে হচ্ছে। তাঁকে যুদ্ধ করার জন্য ঘরের ভেতর ফ্রন্ট খুলবেন না। জামায়াতের নতুন প্রজন্ম কী করবে সে দায়ভার ইতিহাসের ওপর, ইতিহাস বলেনি সে দায় মি. হানিফকে কাঁধে নিতে হবে? বরং যাতে শেখ হাসিনাকে সহযোগিতা করা হয় সেটাই করুন।'' [জনকণ্ঠ, ৯.১.১৪]
বিএনপি নেতাদেরও দল নিয়ে ভাবতে হবে। ভায়োলেন্সকে অগ্রাধিকার দিলে আমেরিকার মদদেও বাংলাদেশের রাজনীতিতে কাজ হবে না। তারেক পাকিস্তানের মোহাজিরদের নেতা আলতাফ হোসেনের মতো ভিডিও বার্তায় নির্দেশ দিচ্ছেন। একজন তা দেখে মন্তব্য করছিলেন-স্যুটেডবুটেড হয়ে নিশ্চিন্তে থেকে তিনি নির্দেশ দিচ্ছেন লন্ডন থেকে। আর আমরা পুলিশের ডা-া খাব, জেলে যাব, বিষয়টি কি এতই সোজা। তবে, মনে হচ্ছে মাতা-পুত্রের মধ্যে পলিসিগত বিবাদ হচ্ছে। খালেদা জিয়া এখন 'সমঝোতা' শব্দটি ব্যবহার করছেন। তারেক তাতে আগ্রহী নয়। বিদেশে তিন জায়গায় তিনি অফিস খুলছেন আন্দোলন তীব্র করার জন্য [কালের কণ্ঠ ৯.১.১৪]। ইতোমধ্যে তিনি ঘোষণা করেছেন, ১৯৭২ সালের সংবিধান গণআকাক্সক্ষাবিরোধী। কেননা [সেটি তিনি বলেননি] সেখানে ধর্মনিরপেক্ষতার কথা আছে। সেই সংবিধান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রাখার সংবিধান। খালেদা জিয়াও কিন্তু এসব কথা কখনও বলেননি। বোঝা যাচ্ছে, তারেক বিএনপিকে জামায়াত ও জঙ্গীদের সঙ্গে একত্র করে চরম ডান একটি সংগঠনে রূপান্তরিত করতে চান। বর্তমান বর্ষীয়ান নেতাদের দল থেকে বাদ দিতে চান। আর শেখ হাসিনা যদি পাঁচ বছর সরকার চালাতে পারেন তাহলে বর্ষীয়ান নেতারা অস্থির হয়ে যাবেন। ফলে, বিএনপিতে ভাঙন দেখা দিলেও আশ্চর্য হওয়ার কিছু থাকবে না।
জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের আনুকূল্য পেয়ে যা অর্জন করেছে এটিই তাদের শেষ অর্জন বলে ধরা যেতে পারে।
তারেক জিয়া তাঁর সর্বশেষ ভাষণে বলেছেন, বর্তমান সরকার অবৈধ। এর সঙ্গে কোন আলোচনা হতে পারে না। এর অর্থ আমরা যতই আশা করি সংঘাত নিরসনের জামায়াত-বিএনপি তাতে রাজি নয়। অর্থাৎ সংঘাত চলবেই। সরকারের প্রধান কাজ হবে এই সংঘাত পুরোপুরি এড়াতে না পারলেও তাকে যতটা পারা যায় সীমিত রাখা, যাতে অর্থনৈতিক বিপর্যয় না হয়। অর্থনীতির চাঙ্গাকরণের ওপর নির্ভর করবে বর্তমান সরকারের ভবিষ্যত।
সুতরাং বলা যেতে পারে, সংঘাত শেষ হবে না। যদি না বিরোধীরা তার নিরসন চায়। শুধু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর নির্ভর করে সরকার সংঘাত রুখতে পারবে না। এর জন্য দরকার মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সবাইকে একত্র করা। সিভিল সমাজকে সঙ্গে রাখা। জনসাধারণকে সম্পৃক্ত না করলে বিরোধী ও আন্তর্জাতিক চাপের মুখে এ সরকারের টিকে থাকা দুষ্কর হবে। সবচেয়ে বড় কথা, দুটি দ্বন্দ্বমুখর আদর্শের একটি পদানত না হলে এ দেশে নিরবচ্ছিন্ন শান্তি ও স্থিতিশীলতা আনা দুষ্কর হয়ে উঠবে। তখন বলতে হবে, সব আল্লা জানে! (সমাপ্ত)
http://www.dailyjanakantha.com/news_view.php?nc=16&dd=2014-01-13&ni=160424এই দৃষ্টিভঙ্গির যখন একজন কোন দলের নেতা হন তখন সেই দলের চরিত্র কেমন হতে পারে তা অনুমেয়।
ইদানীং অনেক সুশীল বলছেন, গত কয়েক মাসে যা ঘটল তার জন্য দুদলই দায়ী। কেন একদল নয়, দুদল দায়ী তার ব্যাখ্যা তারা দেন না। সংবিধান অনুসারে চলা তা হলে অপরাধ? বায়োলেন্সের চাপে পড়ে সংবিধান বদল করা তাহলে খুব ভাল? ভায়োলেন্সই যদি প্রধান আপত্তির বিষয় হয় তাহলে ভায়োলেন্স যারা করছে এবং যারা করছে না তাদের মধ্যে পার্থক্য থাকবে না। বিরোধীদলের নেতাদের গ্রেফতার করা গণতন্ত্র বিরোধী, একমত। কিন্তু যারা ভায়োলেন্স প্রচার করছে তারা যদি তা না করে তাহলে গ্রেফতারের যুক্তি সরকারের থাকত না। সুশীলদের এই যুক্তি ঠিক হলে দলে দলে লোক আজ রাস্তায় নেমে বিরোধী দলের প্রতি আচরণের প্রতিবাদ করতেন। পুলিশের বাধা মানতেন না। জেলের ভয়ও করতেন না। বাংলাদেশে সে ধরনের ঘটনা ঘটেছে তা তো অস্বীকারের উপায় নেই।
সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপিকে জামায়াত ছেড়ে আসতে তাহলে আলোচনার পথ সুগম হবে। তার সঙ্গে আমি দ্বিমত পোষণ করি। এ যুক্তি আওয়ামী লীগের টিপিক্যাল যুক্তি। সে বিষয়ে পরে আসছি। উত্তরে খালেদা জিয়া বলেছেন, তিনি কাকে সঙ্গে রাখবেন কি রাখবেন না এটি তার ব্যাপার। আমি মনে করি উত্তরটি সঠিক।
আওয়ামী লীগের বহুদিনের তত্ত্ব, বিএনপি-জামায়াতকে আলাদা করা যাতে নির্বাচনে ভোটের সুবিধা হয়। এই অবস্থান আদর্শগত দিক থেকেও বেশি সুবিধাবাধ। প্রথমে দেখা যাক দুটি দলের আদর্শ ও লক্ষ্য কী? কয়েকটি উদাহরণ দেবÑ
১. বিএনপি ও জামায়াত ঐতিহাসিকভাবে ভায়োলেন্সে বিশ্বাসী এবং ভায়োলেন্সের মাধ্যমে ক্ষমতায় যেতে বা দখলে আগ্রহী। এ ক্ষেত্রে যদি সাধারণ মানুষেরও কষ্ট হয় বা মৃত্যু হয় তাতেও তাদের আপত্তি নেই।
২. যুদ্ধাপরাধ বিচারে দুটি দলেরই আপত্তি। দুটি দলেই রাজাকারের সংখ্যা বেশি। এবং বর্তমান সংঘাতের কারণও তাই।
৩. পাকিস্তান সংসদ যখন বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নিন্দা প্রস্তাব গ্রহণ করে তখন জামায়াত নিশ্চুপ থাকে এবং বিএনপি 'মর্মাহত' হয়। প্রেমিক চলে গেলে মর্মাহত হতে পারে কেউ। কিন্তু নিন্দা প্রস্তাব বা প্রতিবাদ 'মর্মাহত' থেকে আলাদা বিষয়।
৪. বিএনপি ঐতিহাসিক হিসেবেই জামায়াতের সাথী। আওয়ামী লীগের নয়।
৫. গত কয়েক মাস যৌথভাবেই তারা মানুষ পুড়িয়ে, কুপিয়ে, পিটিয়ে হত্যা করেছে। ১০০০-এর বেশি যানবাহন পুড়িয়েছে। অগণিত মানুষকে জখম করেছে।
তাহলে দুটি দল আলাদা হলো কীভাবে। জামায়াত ১৯৭১ সালে যে ভূমিকা রেখেছে তা ঐতিহাসিকভাবে সত্য। সে জন্য জামায়াতকে সব সময় দোষী করা সহজ। আমাদের অনেকের আত্মীয়স্বজন বন্ধুবান্ধব বিএনপির সঙ্গে যুক্ত। স্বার্থগত কারণেই কি আমরা বিএনপিকে আলাদাভাবে দেখাতে চাই?
ধরা যাক, নির্বাচনে একটি এলাকায় বিএনপি আওয়ামী লীগ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। বিএনপি-জামায়াত আলাদা হলে কি জামায়াত সমর্থকরা নৌকায় ভোট দেবে? কখনই না। ১৯৭১ যেমন পাকিস্তান ভোলেনি, জামায়াতও কখনও তা ভোলেনি। এবং যুদ্ধাপরাধের বিচারের কারণে কখনও জামায়াতীরা ভোট দেবে না আওয়ামী লীগকে। এ সহজ সত্যটা কেন আমরা বিস্মৃত হই। চীনা বিপ্লবের সময় চীনা কমিউনিস্ট পার্টি একই সঙ্গে কুওমিনটাং ও জাপানীদের বিরুদ্ধে লড়েছিল। এখানেও প্রতিরোধটা দুই ফ্রন্টে হতে হবে। জামায়াত-বিএনপির রাজনীতি যেহেতু একই রকম সে কারণে দুটি দলের রাজনীতি প্রতিরোধই বাঞ্ছনীয়। আরেকটি উদাহরণ দিই, বঙ্গবন্ধুকে বিএনপি সব সময় হেয় করে। কিন্তু জামায়াত কি পূজা করে তাকে? বঙ্গবন্ধু প্রশ্নে দুটি দলের ভূমিকাও এক রকম। এ ক্ষেত্রে তাহলে কী হবে?
আমরা মনে করি বাংলাদেশে যেসব দল রাজনীতি করবে সবাইকে বাংলাদেশের মূল স্পিরিটটাকে সমর্থন করতে হবে। তা যদি না হয়, তাহলে গণতন্ত্রের অজুহাতে তাদের রাজনীতি করতে দেয়া যাবে না। সুতরাং দুটি দলকে আলাদা এককে বিচার করা এক ধরনের বিভ্রান্তি সৃষ্টি করবে।
আমাদের মনে রাখা উচিত বিএনপির নেতা তারেক জিয়া বলেছিলেন, জামায়াত-বিএনপি একই বৃন্তে দুটি ফুল। তারেক এ ব্যাপারে স্বচ্ছ। আওয়ামী লীগ নয়।
নির্বাচন পরবর্তী অবস্থা কী হতে পারে
নির্বাচন পরবর্তী অবস্থা কী হবে বাংলাদেশে কারও পক্ষে নিশ্চিতভাবে তা বলা সম্ভব নয়। বাংলাদেশের ইতিহাসের একটি উপাদান অনিশ্চয়তা।
নির্বাচনের পর সরকারের প্রথম চ্যালেঞ্জ অবরোধের অনিশ্চয়তার অবসান ঘটানো, কঠোরভাবে সহিংসতা দমন যাতে সবার মনে হয় যে দেশে একটি সরকার আছে। একই সঙ্গে এমন একটি মন্ত্রিসভা গঠন করা যাতে সবার আস্থা থাকে। দলের সাংগঠনিক সচলতাও বাঞ্ছনীয়। ওয়েবসাইটে প্রার্থীদের সম্পদের যে বিবরণ দেয়া হয়েছে তা নিয়ে পত্র-পত্রিকা একতরফাভাবে মন্তব্য করেছে। শেখ হাসিনা সংবাদ সম্মেলনে তার একটি ব্যাখ্যাও দিয়েছেন। কিন্তু, অনেকে যে দুর্নীতির আশ্রয় নিয়েছে তা অস্বীকার করা হবে সত্যকে অস্বীকার করা। তাদের বিরুদ্ধে যদি যথাযথ কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিতে চায় তাতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না করাই বিধেয়।
নির্বাচনের পর গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান বিশেষ করে স্থানীয় সরকার শক্তিশালী করা জরুরী। স্থানীয় সরকার শক্তিশালী হলে এমপিদের দুর্নীতি করার পরিসর হ্রাস পাবে। একই সঙ্গে রাজনৈতিক সহিষ্ণুতার ওপর গুরুত্ব আরোপ করতে হবে। বিএনপি যদি ভায়োলেন্স বা অবরোধ পরিত্যাগ করে সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনে আগ্রহী হয় তা হলে তাদের আগ্রহকে অগ্রাধিকার দিলে যে বিভক্তি তৈরি হয়েছে দেশে তা খানিকটা হলেও হ্রাস পাবে।
১৪ দল বিশেষ করে আওয়ামী লীগের কাছে রাজনৈতিক আদর্শের শক্তিশালীকরণ সবার আশা। এই রাজনৈতিক আদর্শই বর্তমান সংঘাতের মূল কারণ। এখানে অস্পষ্টতা থাকলে মানুষ বিভ্রান্ত হবে, দল নিছক সুবিধাবাদের রাজনীতির দল হয়ে পড়বে। সম্প্রতি হানিফের জামায়াতের আমিরকে বরণ ও সম্পদ নিয়ে উক্তি কেউ পছন্দ করেনি। এতে হানিফ সুবিধা পেতে পারেন কিন্তু দলের ক্ষতি হয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে স্বদেশ রায় যা লিখেছেন তা যুক্তিযুক্ত। তিনি হানিফ ছাড়াও বগুড়ার একটি ঘটনার উল্লেখ করেছেন। উদ্ধৃতিটি দীর্ঘ হলেও উদ্ধৃত করছি। কারণ তা এই প্রবন্ধের সঙ্গে প্রাসঙ্গিকÑ
''বগুড়ার মমতাজউদ্দিন ভোটের দিন অবধিও জামায়াতকে সহযোগিতা করে গেছেন। নির্বাচনের কয়েক দিন আগে বগুড়াতে ৬৫ জন জামায়াত-বিএনপির ক্রিমিনালকে আটক করেছিল যৌথবাহিনী। তাদের সেরা দশ ক্রিমিনালকে ছাড়িয়ে দেন বগুড়ার ডিসিকে তদ্বির করে এই মমতাজ উদ্দিনই। সেখানে চাকরি করেন এমন একজন স্বাধীনতার সপক্ষের পুলিশ কর্মকর্তা যে কারণে চোখের পানি ফেলেছে আওয়ামী লীগ নেতার এ আচরণ দেখে। কারণ, তিনি মাত্র কয়েক দিন আগে ভাগ্যক্রমে শিবিরের বোমার হাত থেকে বেঁচে যান। তাই শেখ হাসিনাকে এই স্বাধীনতাবিরোধী জঙ্গীদের সঙ্গে লড়তে হলে অবিলম্বে এসব মমতাজ উদ্দিনদের দল থেকে বাদ দিতে হবে, নইলে নিষ্ক্রিয় করে সৎ ও আদর্শের প্রতি অনুগতদের দায়িত্ব দিতে হবে। গাইবান্ধা, রংপুরে নির্বাচনের আগে এমন ঘটল কেন- এ নিয়ে যতটুকু যা খোঁজ নিয়েছি তাতে দুটি বিষয় বেরিয়ে এসেছে। এক. ওই সব জায়গায় প্রশাসন জামায়াতের প্রতি অনুগত ছিল এবং ওই সব এলাকার নেতাদের দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার কারণে কর্মীরা তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। ইতোমধ্যে প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন তাদের উইথড্র করেছে। এখন শেখ হাসিনাকে খোঁজ নিতে হবে তাঁর সংগঠনের কারা দায়ী। সে সব জায়গায় পরিবর্তন আনতে হবে। পাশাপাশি হঠকারী কথাবার্তা যে সব নেতা বলছেন তাঁদের সাবধান করে দিতে হবে। যেদিন শেখ হাসিনা প্রেস কনফারেন্স করে বলছেনÑবিএনপিকে জামায়াত ছেড়ে আসতে, ওইদিনই টেলিভিশনে হানিফ বলছেন, নতুন প্রজন্মের জামায়াত ভুল স্বীকার করে আওয়ামী লীগেও যোগ দিতে পারে। মি. হানিফ রাজনীতিতে নবাগত। তা ছাড়া কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে তিনি সিঁড়ি বেয়ে ওঠেননি। হাত ধরে উঠেছেন। সংগঠন হিসেবে জামায়াত সম্পর্কে তাঁর কতটুকু ধারণা আছে জানি না। এই সাপের বিষেই কিন্তু বিএনপির শরীর নীল হয়ে গেছে। মুক্তিযুদ্ধের সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এ দেশের প্রগতিশীল মানুষের সংগঠন। এটাকে নিয়ে খেলতে যাবেন না। আপনাদের মতো নেতারা কেউ হেফাজতের সঙ্গে আপোস করতে যান, কেউ জামায়াতকে দলে টানতে যান। আর শেষ পর্যন্ত ডোবান শেখ হাসিনাকে। শেখ হাসিনাকে বাইরে অনেক যুদ্ধ করতে হচ্ছে। তাঁকে যুদ্ধ করার জন্য ঘরের ভেতর ফ্রন্ট খুলবেন না। জামায়াতের নতুন প্রজন্ম কী করবে সে দায়ভার ইতিহাসের ওপর, ইতিহাস বলেনি সে দায় মি. হানিফকে কাঁধে নিতে হবে? বরং যাতে শেখ হাসিনাকে সহযোগিতা করা হয় সেটাই করুন।'' [জনকণ্ঠ, ৯.১.১৪]
বিএনপি নেতাদেরও দল নিয়ে ভাবতে হবে। ভায়োলেন্সকে অগ্রাধিকার দিলে আমেরিকার মদদেও বাংলাদেশের রাজনীতিতে কাজ হবে না। তারেক পাকিস্তানের মোহাজিরদের নেতা আলতাফ হোসেনের মতো ভিডিও বার্তায় নির্দেশ দিচ্ছেন। একজন তা দেখে মন্তব্য করছিলেন-স্যুটেডবুটেড হয়ে নিশ্চিন্তে থেকে তিনি নির্দেশ দিচ্ছেন লন্ডন থেকে। আর আমরা পুলিশের ডা-া খাব, জেলে যাব, বিষয়টি কি এতই সোজা। তবে, মনে হচ্ছে মাতা-পুত্রের মধ্যে পলিসিগত বিবাদ হচ্ছে। খালেদা জিয়া এখন 'সমঝোতা' শব্দটি ব্যবহার করছেন। তারেক তাতে আগ্রহী নয়। বিদেশে তিন জায়গায় তিনি অফিস খুলছেন আন্দোলন তীব্র করার জন্য [কালের কণ্ঠ ৯.১.১৪]। ইতোমধ্যে তিনি ঘোষণা করেছেন, ১৯৭২ সালের সংবিধান গণআকাক্সক্ষাবিরোধী। কেননা [সেটি তিনি বলেননি] সেখানে ধর্মনিরপেক্ষতার কথা আছে। সেই সংবিধান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রাখার সংবিধান। খালেদা জিয়াও কিন্তু এসব কথা কখনও বলেননি। বোঝা যাচ্ছে, তারেক বিএনপিকে জামায়াত ও জঙ্গীদের সঙ্গে একত্র করে চরম ডান একটি সংগঠনে রূপান্তরিত করতে চান। বর্তমান বর্ষীয়ান নেতাদের দল থেকে বাদ দিতে চান। আর শেখ হাসিনা যদি পাঁচ বছর সরকার চালাতে পারেন তাহলে বর্ষীয়ান নেতারা অস্থির হয়ে যাবেন। ফলে, বিএনপিতে ভাঙন দেখা দিলেও আশ্চর্য হওয়ার কিছু থাকবে না।
জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের আনুকূল্য পেয়ে যা অর্জন করেছে এটিই তাদের শেষ অর্জন বলে ধরা যেতে পারে।
তারেক জিয়া তাঁর সর্বশেষ ভাষণে বলেছেন, বর্তমান সরকার অবৈধ। এর সঙ্গে কোন আলোচনা হতে পারে না। এর অর্থ আমরা যতই আশা করি সংঘাত নিরসনের জামায়াত-বিএনপি তাতে রাজি নয়। অর্থাৎ সংঘাত চলবেই। সরকারের প্রধান কাজ হবে এই সংঘাত পুরোপুরি এড়াতে না পারলেও তাকে যতটা পারা যায় সীমিত রাখা, যাতে অর্থনৈতিক বিপর্যয় না হয়। অর্থনীতির চাঙ্গাকরণের ওপর নির্ভর করবে বর্তমান সরকারের ভবিষ্যত।
সুতরাং বলা যেতে পারে, সংঘাত শেষ হবে না। যদি না বিরোধীরা তার নিরসন চায়। শুধু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর নির্ভর করে সরকার সংঘাত রুখতে পারবে না। এর জন্য দরকার মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সবাইকে একত্র করা। সিভিল সমাজকে সঙ্গে রাখা। জনসাধারণকে সম্পৃক্ত না করলে বিরোধী ও আন্তর্জাতিক চাপের মুখে এ সরকারের টিকে থাকা দুষ্কর হবে। সবচেয়ে বড় কথা, দুটি দ্বন্দ্বমুখর আদর্শের একটি পদানত না হলে এ দেশে নিরবচ্ছিন্ন শান্তি ও স্থিতিশীলতা আনা দুষ্কর হয়ে উঠবে। তখন বলতে হবে, সব আল্লা জানে! (সমাপ্ত)
সোমবার, ১৩ জানুয়ারী ২০১৪, ৩০ পৌষ ১৪২০
Related:
নির্বাচন, বিরোধী রাজনৈতিক দল ও সুশীলদের বিশাল ক্রোধ এবং তারপর - (প্রথম কিস্তি)
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ৯ জানুয়ারী ২০১৪, ২৬ পৌষ ১৪২০
নির্বাচন, বিরোধী রাজনৈতিক দল ও সুশীলদের বিশাল ক্রোধ এবং তারপর - (দ্বিতীয় কিস্তি)
প্রকাশ:শুক্রবার, ১০ জানুয়ারী ২০১৪, ২৭ পৌষ ১৪২০
নির্বাচন, বিরোধী রাজনৈতিক দল ও সুশীলদের বিশাল ক্রোধ এবং তারপর -(তৃতীয় কিস্তি)
মুনতাসীর মামুন
প্রকাশ: শনিবার, ১১ জানুয়ারী ২০১৪, ২৮ পৌষ ১৪২০
নির্বাচন, বিরোধী রাজনৈতিক দল ও সুশীলদের বিশাল ক্রোধ এবং তারপর - (চতুর্থ কিস্তি)
মুনতাসীর মামুন
প্রকাশ: রবিবার, ১২ জানুয়ারী ২০১৪, ২৯ পৌষ ১৪২০
__._,_.___