শুক্রবার, ৩১ জানুয়ারী ২০১৪, ১৮ মাঘ ১৪২০
জহির রায়হান হত্যার চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ
স্টাফ রিপোর্টার ॥ শহীদ বুদ্ধিজীবী জহির রায়হানের হত্যা নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ করেছেন এক প্রত্যক্ষদর্শী। মুক্তিযুদ্ধের সময় ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের ১২ নম্বর প্লাটুনের ল্যান্স নায়েক আমির হোসেন জানিয়েছেন, মিরপুরে জহির রায়হানকে কয়েক বিহারী আঘাতের পরে টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে যায়। বৃহস্পতিবার একটি টেলিভিশন চ্যানেলের বিশেষ প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর থানার দৌলতপুরের বাসিন্দা আমির হোসেন জানান, জহির রায়হান তিন পুলিশ অফিসার, দু'জন এক্সারভেশন কর্মকর্তা ও পুলিশের অতিরিক্ত এসপি লোদীর সঙ্গে কথা বলছিলেন। সে সময় বিহারীরা তাঁর দেহে আঘাত করলে একটি পানির ট্যাঙ্কের পাশে তিনি হাঁটু গেড়ে বসেছিলেন। এ সময় তাঁর পিঠের কাপড় ছিল রক্তমাখা। তিনি পরেছিলেন ছাই রঙের একটি প্যান্ট। এছাড়া তিনি পরেছিলেন একটি সাদা ফুল শার্ট। আর শার্টের ওপর ছিল ঘিয়ে রঙের হাফহাতা সোয়েটার। তারপর তাঁকে কয়েক বিহারী টেনে-হিঁচড়ে পানির টাঙ্কের পশ্চিম দিকে নিয়ে যায়। তবে কোথায় নিয়ে যাওয়া হয়, সেটা তিনি জানেন না।
আমির হোসেন বর্তমানে ব্রাহ্মণবাড়িয়া আদালতে আইনজীবী সহকারী হিসেবে কর্মরত। তিনি জানান, ১৯৭১ সালে মিরপুরে ৪০ থেকে ৪৫ পুলিশকেও হত্যা করা হয়েছিল। ৩১ জানুয়ারি মিরপুর মুক্ত হয়।
তবে জহির রায়হান অন্তর্ধান হন ৩০ জানুয়ারি। খ্যাতিমান ঔপন্যাসিক ও চলচ্চিত্রের প্রবাদপুরুষ জহির রায়হান ১৯৭২ সালের ৩০ জানুয়ারি তাঁর নিখোঁজ ভাই শহীদুল্লাহ কায়সারকে খুঁজতে শুরু করেন, যিনি স্বাধীনতার ঠিক আগমুহূর্তে বাহিনীর হাতে অপহৃত হয়েছিলেন। জহির রায়হান ভাইয়ের সন্ধানে মিরপুরে যান এবং সেখান থেকে আর ফিরে আসেননি। মিরপুর ছিল ঢাকা থেকে কিছুটা দূরে অবস্থিত বিহারী অধ্যুষিত এলাকা এবং এমন প্রমাণ পাওয়া গেছে যে, সেদিন বিহারীরা ও ছদ্মবেশী পাকিস্তানী সৈন্যরা বাংলাদেশীদের ওপর গুলি চালালে তিনি নিহত হন।
১৯৩৫ সালের ১৯ আগস্ট বর্তমান ফেনী জেলার মজুপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন জহির রায়হান। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর তিনি তাঁর পরিবারের সঙ্গে কলকাতা হতে বাংলাদেশে (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) স্থানান্তরিত হন। তিনি ১৯৫৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে বাংলায় স্নাতক ডিগ্রী লাভ করেন।
১৯৫০ সালে তিনি যুগের আলো পত্রিকায় সাংবাদিক হিসেবে কাজ করা শুরু করেন। পরবর্তীতে তিনি খাপছাড়া, যান্ত্রিক, সিনেমা ইত্যাদি পত্রিকাতেও কাজ করেন। ১৯৫৬ সালে তিনি সম্পাদক হিসেবে প্রবাহ পত্রিকায় যোগ দেন। ১৯৫৫ সালে তার প্রথম গল্পগ্রন্থ 'সূর্যগ্রহণ' প্রকাশিত হয়।
চলচ্চিত্র জগতে তাঁর পদার্পণ ১৯৫৭ সালে, 'জাগ হুয়া সাবেরা' ছবিতে সহকারী হিসেবে কাজ করার মাধ্যমে। তিনি সালাউদ্দীনের ছবি 'যে নদী মরু পথেতে'ও সহকারী হিসেবে কাজ করেন। প্রখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক এহতেশাম তাঁকে 'এ দেশ তোমার আমার'-এ কাজ করার আমন্ত্রণ জানান। জহির রায়হান এ ছবির নামসঙ্গীত রচনা করেছিলেন।
১৯৬০ সালে তিনি রুপালি জগতে পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন 'কখনো আসেনি' চলচ্চিত্রের মাধ্যমে। ১৯৬৪ সালে তিনি পাকিস্তানের প্রথম রঙিন চলচ্চিত্র 'সঙ্গম' নির্মাণ করেন এবং পরের বছর তাঁর প্রথম সিনেমাস্কোপ চলচ্চিত্র 'বাহানা' মুক্তি দেন।
জহির রায়হান ভাষা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন এবং ২১ ফেব্রুয়ারির ঐতিহাসিক আমতলা সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন। ভাষা আন্দোলন তাঁর ওপর গভীর প্রভাব ফেলেছিল, যার ছাপ দেখতে পাওয়া যায় তাঁর বিখ্যাত চলচ্চিত্র 'জীবন থেকে নেওয়া'তে। তিনি ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি কলকাতায় চলে যান এবং সেখানে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে প্রচারাভিযান ও তথ্যচিত্র নির্মাণ শুরু করেন।
কলকাতায় তাঁর নির্মিত চলচ্চিত্র 'জীবন থেকে নেওয়া'র বেশ কয়েকটি প্রদর্শনী হয় এবং চলচ্চিত্রটি দেখে সত্যজিৎ রায়, মৃণাল সেন, তপন সিনহা এবং ঋত্বিক ঘটক প্রমুখ ভূয়সী প্রশংসা করেন। সে সময়ে তিনি চরম অর্থনৈতিক দৈন্যের মধ্যে থাকা সত্ত্বেও তাঁর চলচ্চিত্র প্রদর্শনী হতে প্রাপ্ত সমুদয় অর্থ তিনি মুক্তিযোদ্ধা তহবিলে দান করে দেন। সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য আদমজী সাহিত্য পুরস্কার ও বাংলা একাডেমী পুরস্কার পান তিনি।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর থানার দৌলতপুরের বাসিন্দা আমির হোসেন জানান, জহির রায়হান তিন পুলিশ অফিসার, দু'জন এক্সারভেশন কর্মকর্তা ও পুলিশের অতিরিক্ত এসপি লোদীর সঙ্গে কথা বলছিলেন। সে সময় বিহারীরা তাঁর দেহে আঘাত করলে একটি পানির ট্যাঙ্কের পাশে তিনি হাঁটু গেড়ে বসেছিলেন। এ সময় তাঁর পিঠের কাপড় ছিল রক্তমাখা। তিনি পরেছিলেন ছাই রঙের একটি প্যান্ট। এছাড়া তিনি পরেছিলেন একটি সাদা ফুল শার্ট। আর শার্টের ওপর ছিল ঘিয়ে রঙের হাফহাতা সোয়েটার। তারপর তাঁকে কয়েক বিহারী টেনে-হিঁচড়ে পানির টাঙ্কের পশ্চিম দিকে নিয়ে যায়। তবে কোথায় নিয়ে যাওয়া হয়, সেটা তিনি জানেন না।
আমির হোসেন বর্তমানে ব্রাহ্মণবাড়িয়া আদালতে আইনজীবী সহকারী হিসেবে কর্মরত। তিনি জানান, ১৯৭১ সালে মিরপুরে ৪০ থেকে ৪৫ পুলিশকেও হত্যা করা হয়েছিল। ৩১ জানুয়ারি মিরপুর মুক্ত হয়।
তবে জহির রায়হান অন্তর্ধান হন ৩০ জানুয়ারি। খ্যাতিমান ঔপন্যাসিক ও চলচ্চিত্রের প্রবাদপুরুষ জহির রায়হান ১৯৭২ সালের ৩০ জানুয়ারি তাঁর নিখোঁজ ভাই শহীদুল্লাহ কায়সারকে খুঁজতে শুরু করেন, যিনি স্বাধীনতার ঠিক আগমুহূর্তে বাহিনীর হাতে অপহৃত হয়েছিলেন। জহির রায়হান ভাইয়ের সন্ধানে মিরপুরে যান এবং সেখান থেকে আর ফিরে আসেননি। মিরপুর ছিল ঢাকা থেকে কিছুটা দূরে অবস্থিত বিহারী অধ্যুষিত এলাকা এবং এমন প্রমাণ পাওয়া গেছে যে, সেদিন বিহারীরা ও ছদ্মবেশী পাকিস্তানী সৈন্যরা বাংলাদেশীদের ওপর গুলি চালালে তিনি নিহত হন।
১৯৩৫ সালের ১৯ আগস্ট বর্তমান ফেনী জেলার মজুপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন জহির রায়হান। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর তিনি তাঁর পরিবারের সঙ্গে কলকাতা হতে বাংলাদেশে (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) স্থানান্তরিত হন। তিনি ১৯৫৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে বাংলায় স্নাতক ডিগ্রী লাভ করেন।
১৯৫০ সালে তিনি যুগের আলো পত্রিকায় সাংবাদিক হিসেবে কাজ করা শুরু করেন। পরবর্তীতে তিনি খাপছাড়া, যান্ত্রিক, সিনেমা ইত্যাদি পত্রিকাতেও কাজ করেন। ১৯৫৬ সালে তিনি সম্পাদক হিসেবে প্রবাহ পত্রিকায় যোগ দেন। ১৯৫৫ সালে তার প্রথম গল্পগ্রন্থ 'সূর্যগ্রহণ' প্রকাশিত হয়।
চলচ্চিত্র জগতে তাঁর পদার্পণ ১৯৫৭ সালে, 'জাগ হুয়া সাবেরা' ছবিতে সহকারী হিসেবে কাজ করার মাধ্যমে। তিনি সালাউদ্দীনের ছবি 'যে নদী মরু পথেতে'ও সহকারী হিসেবে কাজ করেন। প্রখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক এহতেশাম তাঁকে 'এ দেশ তোমার আমার'-এ কাজ করার আমন্ত্রণ জানান। জহির রায়হান এ ছবির নামসঙ্গীত রচনা করেছিলেন।
১৯৬০ সালে তিনি রুপালি জগতে পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন 'কখনো আসেনি' চলচ্চিত্রের মাধ্যমে। ১৯৬৪ সালে তিনি পাকিস্তানের প্রথম রঙিন চলচ্চিত্র 'সঙ্গম' নির্মাণ করেন এবং পরের বছর তাঁর প্রথম সিনেমাস্কোপ চলচ্চিত্র 'বাহানা' মুক্তি দেন।
জহির রায়হান ভাষা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন এবং ২১ ফেব্রুয়ারির ঐতিহাসিক আমতলা সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন। ভাষা আন্দোলন তাঁর ওপর গভীর প্রভাব ফেলেছিল, যার ছাপ দেখতে পাওয়া যায় তাঁর বিখ্যাত চলচ্চিত্র 'জীবন থেকে নেওয়া'তে। তিনি ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি কলকাতায় চলে যান এবং সেখানে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে প্রচারাভিযান ও তথ্যচিত্র নির্মাণ শুরু করেন।
কলকাতায় তাঁর নির্মিত চলচ্চিত্র 'জীবন থেকে নেওয়া'র বেশ কয়েকটি প্রদর্শনী হয় এবং চলচ্চিত্রটি দেখে সত্যজিৎ রায়, মৃণাল সেন, তপন সিনহা এবং ঋত্বিক ঘটক প্রমুখ ভূয়সী প্রশংসা করেন। সে সময়ে তিনি চরম অর্থনৈতিক দৈন্যের মধ্যে থাকা সত্ত্বেও তাঁর চলচ্চিত্র প্রদর্শনী হতে প্রাপ্ত সমুদয় অর্থ তিনি মুক্তিযোদ্ধা তহবিলে দান করে দেন। সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য আদমজী সাহিত্য পুরস্কার ও বাংলা একাডেমী পুরস্কার পান তিনি।
প্রকাশ: RbKÉ, শুক্রবার, ৩১ জানুয়ারী ২০১৪, ১৮ মাঘ ১৪২০
জহির রায়হান Zahir Raihan | |
---|---|
Zahir Raihan | |
Born | August 19, 1935 Feni, Noakhali, British India(present-day Bangladesh) |
Occupation | filmmaker, novelist, writer |
Education | BA (Bengali) |
Alma mater | Dhaka University |
Notable award(s) | Bangla Academy Award (1972) |
Spouse(s) | Sumita Devi (1961-1968) Shuchonda (1968-1971) |
Relative(s) | Shahidullah Kaiser (brother) |
__._,_.___