Banner Advertiser

Sunday, February 23, 2014

[mukto-mona] জাওয়াহিরির বার্তা, বিএনপি-জামায়াতের তাচ্ছিল্য এবং সুশীল বাটপাড়দের প্রগাঢ় নিস্তব্ধতা




সোমবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০১৪, ১২ ফাল্গুন ১৪২০
জাওয়াহিরির বার্তা, বিএনপি-জামায়াতের তাচ্ছিল্য এবং সুশীল বাটপাড়দের প্রগাঢ় নিস্তব্ধতা
মুনতাসীর মামুন
আয়মান জাওয়াহিরির ভিডিও বার্তা নিয়ে আলোচনা এখনও থামেনি। সরকার, সরকারী দল, বিরোধী দল ও ভাষ্যকারদের বক্তব্য বিষয়টিকে খানিকটা জটিল করে তুলছে এবং সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। বার্তাটি সবার নজরে আসে ১৫ ফেব্রুয়ারি।
বার্তাটি নজরে এলে তথ্যমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী প্রথম প্রতিক্রিয়া জানান। তাঁরা জানান, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে, আল কায়েদা যদি কিছু করে তা হলে বাংলাদেশ প্রতিরোধে সম্পূর্ণ প্রস্তুত বা বাংলাদেশ দেখে নেবে। সব বিষয় নিয়ে না বুঝে বক্তব্য রাখাটা সমীচীন নয়। আমি মাঝে মাঝে যখন এসব ভাবি তখন বাংলাদেশের যথার্থতা মনে পড়ে। কত বছরের অভিজ্ঞতার আলোকে তৈরি হয়েছে একেকটি প্রবাদ! যেমন, হাতি ঘোড়া গেল তল, মশা বলে কত জল। সন্ত্রাস নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ, এমন কি রাশিয়া জেরবার হয়ে যাচ্ছে সেখানে বাংলাদেশ প্রতিরোধে সম্পূর্ণ প্রস্তুত কথাটি ফালতু কথারই প্রতিধ্বনি। গত বছর সাতক্ষীরাসহ অন্যান্য অঞ্চলে জামায়াত-বিএনপি যে তা-ব চালিয়েছে তা আয়ত্তে আনতে কতদিন লেগেছে এবং এই কয়দিনে কত মানুষ মারা গেছেন নিরাপত্তাকর্মীসহ এবং ঐ নৃশংস হামলার মুখে সরকার কতজনকে কার্যকর নিরাপত্তা দিতে পেরেছে? আর বক্তব্যটি খতিয়ে দেখারইবা কি আছে? বক্তব্যটি যদি জাওয়াহিরির নাও হয় তাহলেও সরকারের জানা উচিত, বিশেষ করে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর যে, ক্লিনটন কেন তার বাংলাদেশ সফর মার্কিন দূতাবাসের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রেখেছিলেন। জাওয়াহিরি দীর্ঘদিন ধরে এ ধরনের কথাবার্তা বলে আসছেন। নতুন কিছু নয়। আর বক্তব্যটি ১৫ ফেব্রুয়ারির নয়, ৩০ নবেম্বর ২০১৩ সালের। যদি তা জাওয়াহিরির নাই হতো তা'হলে অবশ্যই এই বক্তব্যের প্রতিবাদ করা হতো। কয়েকদিন আগে পত্রিকার প্রতিবেদনে দেখলাম, মার্কিন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কণ্ঠস্বরটি জওয়াহিরির। সরকার অবশ্য এখনও বলছে, বিষয়টি খতিয়ে দেখছে।
জাওয়াহিরির বার্তার একটি ক্রমপঞ্জি তুলে ধরেছে ডেইলি স্টার। পাকিস্তানের বালাকাত মিডিয়া পরিচালিত দাওয়াহিলাল্লাহ ব্লগে এই বার্তাটি প্রথম আপলোড করা হয়। পরে সেই সূত্র পাঠানো হয় টাঙ্গাইলের রাসেলকে [যাকে র‌্যাব গ্রেফতার করেছে]। রাসেল তার ব্লগ ইসলামের আলোতে তা অন্তর্ভুক্ত করে। যুক্তরাষ্ট্রের জিহাদ সংক্রান্ত খবরাখবরের ওয়েবসাইট জিহাদোলজিতে তা প্রকাশ করা হয়। শাহরিয়ার কবির লিখেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের বেসরকারী সন্ত্রাস নিরূপণ সংস্থা জেমসটাউন ফাউন্ডেশনেও তা আপলোড করা হয়। ৪ ফেব্রুয়ারি করাচির সেই দাওয়াহিলাল্লাহ নতুন শিরোনামে তা আবার প্রচার করে। শিরোনামটি ছিলÑ 'বাংলাদেশ জেনোসাইড বিহাইন্ড এ ওয়াল অব সাইলেন্স।' ৮ ফেব্রুয়ারি রাসেল শিরোনামটি ছোট করে 'সাইলেন্ট জেনোসাইড বাংলাদেশ' নামে আবার সেই একই বক্তব্য প্রচার করে। ১৫ ফেব্রুয়ারি তা মিডিয়ার নজরে আসে। মাহফুজ আনাম যৌক্তিক প্রশ্ন রেখেছেন। 'আমাদের নিরাপত্তা সংক্রান্ত এজেন্সিসমূহ কী করছিল? যেখানে আমাদের জাতীয় স্বার্থ বিঘœ হওয়ার পথে।' তিনি যর্থাথই প্রশ্ন রেখেছেন, যেখানে নিয়ত তারা নাগরিকদের ফোনালাপ রেকর্ড করে, ওয়েবসাইট মনিটর করে, তাদের তিন মাস লাগল কেন এ বিষয়ে। তিনি আরও লিখেছেন, এ বিষয়ে তদন্ত হওয়া উচিত এবং যাদের শৈথিল্যে এমনটি ঘটেছে তাদের শাস্তি হওয়া উচিত। বিজ্ঞ মাহফুজ আনাম জানেন কিনা জানি না, কোন দলই সরকারে গেলে নিরাপত্তা এজেন্সিসমূহ এবং সেনাবাহিনী সংক্রান্ত সব বিষয়ে কোন তদন্ত করা দূরে থাকুক, করের অধিকাংশ টাকা তাদের পিছে ব্যয় করতে আনন্দ পায় এবং এ সব বিষয়ে কোন নাগরিকের প্রশ্ন করার মৌল অধিকারকে দেশদ্রোহিতামূলক মনে করে। এবং প্রতিটি সরকার পতনে নিরাপত্তা সংস্থাসমূহের তথ্য গোপন, ভুল তথ্য ও বিশ্লেষণ সহায়তা করে। বর্তমান সরকার তো নিরাপত্তা সংস্থাসমূহ ও সেনাবাহিনীর ওপর আরও বেশি নির্ভরশীল। এর একটি কারণ, জামায়াত-বিএনপির সরকার উৎখাতে সংবিধানবিরোধী সহিংস আন্দোলন এবং সুশীল বাটপাড় ও মিডিয়ার প্রভাবশালী অংশের সর্মথন।
জাওয়াহিরি বা আল কায়েদার সঙ্গে বাংলাদেশের সন্ত্রাসীদের [জেহাদী নামে যারা পরিচিত] মাখামাখি অনেক দিনের। আয়মান জাওয়াহিরি মিসরীয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ চালানোর দায়ে ১৯৯৭ সালে মিসরীয় আদালত তাকে প্রাণদ-ে দ-িত করে। সন্ত্রাস বিশেষজ্ঞ ব্রুম রিডেল লিখেছেন,
২৩ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৮ সালে বিন লাদেন পাকিস্তান এবং বাংলাদেশের সন্ত্রাসী গ্রুপ ও তার গ্রুপ একত্রিত হয়ে গঠন করে জিহাদের জন্য বিশ্ব ইসলামিক পক্ষ বা ওয়ার্ল্ড ইসলামিক ফ্রন্ট। এরপর তারা নেমে পড়ে বিভিন্ন সন্ত্রাসী হামলায়। এর অর্থ ১৯৯৮ সালের আগেই এবং পরে বাংলাদেশে এ সব সন্ত্রাসী গ্রুপ গঠন করা হয়। যদি স্মৃতিভ্রম না ঘটে থাকে তা'হলে বলতে হয়, ঐ আমলেই অর্থাৎ শেখ হাসিনার আমলেই প্রথম হরকত-উল-জেহাদ কবি শামসুর রাহমানকে আক্রমণ করে। তারপর শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা, কমিউনিস্ট পার্টির সভায় বোমা হামলা, উদীচীর সভায় হামলা প্রভৃতি শুরু হয়।
রিডেল দেখিয়েছেন জাওয়াহিরি বিভিন্ন সময় ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ সম্পর্কে বক্তব্য রেখেছেন। জাওয়াহিরি মনে করেন, পশ্চিমে আমেরিকা, ইউরোপ, [ইসরাইল তো আছেই] এবং পূর্বে ভারত ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। ১৯৪৭ সালের ভারত বিভাগ ভারতীয়দের খুশি করেনি। এবং ভারতের হিন্দু সরকার শুধু দক্ষিণ এশিয়ায় আধিপত্য বিস্তার করতে চায় না, তারা পুরনো সীমান্তে ফিরে যেতে চায় এবং পাকিস্তান ও বাংলাদেশকে সেই সীমার অন্তর্ভুক্ত করতে চায়।
জওয়াহিরি বার বার বলেছেন, পাশ্চাত্যের লক্ষ্যই হচ্ছে পাকিস্তানকে বিভক্ত করে দুর্বল করা যাতে ভারত সেগুলোকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে। এর উদাহরণ হিসেবে তিনি ১৯৭১ সালের কথা উল্লেখ করেন। ঐ সময় বাংলাদেশের সৃষ্টি হয়। জাওয়াহিরি যে সময় এই উক্তি করেন সেই সময় মুশাররফ ছিলেন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট। জওয়াহিরি বলেছিলেন, মুশাররফকে হত্যা না করলে পাকিস্তান আবার ১৯৭১ সালের মতো গাড্ডায় পড়বে। যখন এক লাখ পাকিস্তানী সৈন্যকে আত্মসমর্পণ করতে হয়েছিল। লক্ষণীয় জামায়াতও সেই ১৯৭১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত একই ধরনের কথাবার্তা বলে আসছে।
সুতরাং যে বার্তা আমরা এখন পাচ্ছি তা নতুন কিছু নয়। পার্থক্য এই যে, বার্তাটি একটু বিস্তৃত, নির্যাস একইÑ তা' হলো, হিন্দু ভারত দখল করতে চায় পাকিস্তান ও বাংলাদেশ। সুতরাং হিন্দু ভারতকে ধ্বংস করতে হবে। এবং তা করতে হলে দুই দেশেই ইসলাম পছন্দ সরকার থাকতে হবে। এর অর্থ ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখা ইসলামবিরোধী এবং যারা রাখে তাদের হত্যা করতে হবে।
আল কায়েদা প্রকল্পটি লাদেন, জাওয়াহিরি প্রমুখের সাহায্যে, আমেরিকা ও তাদের ঘনিষ্ঠ বন্ধু পৃথিবীর একমাত্র আইনী সন্ত্রাসী সংস্থা আইএসআইয়ের সাহায্যে তালেবানদের সংঘটিত করে। তালেবানদের একরকম মুখপত্র ছিল আল কায়েদা। বেনজীর ভুট্টো লিখেছেন, তার দলের এমপিদের ঘুষ দিয়ে সরকার পতনের জন্য আইএসআই বিন লাদেনকে ১০ মিলিয়ন ডলার দিয়েছিল। ১৯৯৫ সালে সন্ত্রাসী রামজী বিন ইউসুফ স্বীকার করেন ১৯৯৩ সালে আইএসআই ও বিন লাদেনের সহায়তায় দু'বার বেনজীরকে তিনি হত্যার চেষ্টা করেন এবং অবশেষে সফল হন।
২০০০ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন ভারত সফর করেন। একদিনের জন্য তার ঢাকায় আসার কথা। ব্রুস রিডেল তখন হোয়াইট হাউসের উপদেষ্টা। আত্মস্মৃতিমূলক রচনায় লিখেছেন। যাত্রা শুরুর আগের দিন সিআইএ জানাল, তারা খবর পেয়েছে প্রেসিডেন্টের প্লেন ঢাকায় অবতরণের সঙ্গে সঙ্গে মাটি থেকে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ (সারফেস টু এয়ার মিসাইল) করে তাকে হত্যা করা হবে। হোয়াইট হাউসে তখন সভা বসল, সফর থেকে ঢাকা বাদ যাবে কিনা তা নিয়ে সমস্যা হলো, প্রেসিডেন্ট পাকিস্তান যাবেন বাংলাদেশ যাবেন না, তা'হলে উপমহাদেশে তা কি বার্তা দেবে যেখানে বাংলাদেশ দারিদ্র্য বিমোচন করে এগিয়ে যাচ্ছে। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে? রিডেল স্পষ্ট ভাষায় বললেন, বাংলাদেশ যেতে হবে ঘড়ি যবধফবফ নু ঝযবরশ ঐধংরহধ, ধ ভবসধষব ঢ়ৎরসব সরহরংঃবৎ ধহফ ঃযঁং ধ ৎধৎব পড়সসড়ফরঃু রহ ঃযব ওংষধসরপ ড়িৎষফ, রঃ ধিং ধষংড় ধ ঢ়ড়ংঃবৎ পযরষফ ভড়ৎ ঃযব সরপৎড়পৎবফরঃ পড়হপবঢ়ঃ ফবাবষড়ঢ়বফ নু ঈষরহঃড়হ'ং ষড়হম ঃরসব ভৎরবহফ সড়যধসসধফ ুঁহঁং রহ যরং এৎধসববহ ইধহশ রহ ইধহমষধফবংয. ঋঁৎঃযবৎ সড়ৎব, ঃযব পড়ঁহঃৎু ফরফহড়ঃ ংঁঢ়ঢ়ড়ৎঃ ঃবৎৎড়ৎরংস. ফরফহড়ঃ ংববশ ঃড় ধপয়ঁরৎব বিধঢ়ড়হং ড়ভ সধংং ফবংঃৎঁপঃরড়হ ধহফ ধিং হড়ঃ ধ ঃযৎবধঃ ঃড় ৎবমরড়হধষ ঢ়বধপব. ওহ ড়ঃযবৎ ড়িৎফং রঃ ধিং ঃযব শরহফ ড়ভ সঁংষরহ ফবসড়পৎধপু ধিহঃবফ ঃড় ঝঁঢ়ঢ়ড়ৎঃবৎ"
রিডেলের যুক্তি অবশেষে গ্রাহ্য হয়। এবং ঠিক হয় দিল্লি থেকে ক্লিনটন একা আসবেন। দিনের বেলাটুকু থাকবেন। শেখ হাসিনা তাকে অনুরোধ করেছিলেন টুঙ্গিপাড়া যেতে, আর ড. ইউনূসের জয়পুরা গ্রাম। কোনটিতেই তিনি যাবেন না। যানওনি।
দৈনিক জনকণ্ঠ বিদেশী বিভিন্ন মাধ্যমের প্রতিবেদন সংকলন করে লিখেছে, জাওয়াহিরি ২০০২ সালে 'মক্কা' নামক জাহাজে করে ৪০ জন সশস্ত্র লোক ও অস্ত্রের চোরাচালান নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন। এক মাসের বেশি সময় বাংলাদেশে ছিলেন। এবং এক মৌলবাদী নেতার বাসায় ছিলেন। সরকার ও গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গেও তার আলাপ হয়। এর আগের বছর সেই এমভি মক্কা আফগানিস্তানে প্রশিক্ষিত ৫০ জনকে বাংলাদেশে পৌঁছে দেয়।[২২-২-২০১২]
সুতরাং হঠাৎ করে জওয়াহিরি বার্তা প্রদান করলেন তা' নয়। এর ধারাবাহিকতা ও কারণ আছে। ভুলে গেলে চলবে না ২৩ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৮ সালে এই সন্ত্রাসীদের যে চুক্তি হয় সেখানে ঘোষণা করা হয় বাংলাদেশে জেহাদী আন্দোলন জোরদার করা হবে। এবং সেখানে সই করেন বিন লাদেনের পক্ষে পাকিস্তানের ফজলুর রহমান।
জিয়াউর রহমান যখন বঙ্গবন্ধুর সমস্ত নিষেধাজ্ঞা বাতিল করেন ধর্মভিত্তিক রাজনীতিসহ তখন থেকেই জামায়াতে ইসলামীর প্রাক্তন সদস্যরা বিভিন্ন সংগঠনের নামে রাজনীতি শুরু করেন এবং সৌদি আরব ও প্রবাস থেকে প্রকাশ্যে চাঁদা নেয়া শুরু করেন। ১৯৮৪ সাল থেকে সেই সরকার সাপ্তাহিক বিচিত্রা ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন তথ্য প্রমাণসহ বিষয়গুলো তুলে ধরে। কিন্তু কেউ তা গ্রাহ্য করেনি। আর রাজনীতি প্রতিকূল থাকায় রাজনীতিবিদরাও খুব উচ্চবাচ্য করেননি। যখন যুদ্ধাপরাধ বিরোধী আন্দোলন শুরু হয়, জানিয়েছেন শাহরিয়ার, তখন ১৯৯২ সালের এপ্রিল মাসে হরকত-উল-জেহাদ আত্মপ্রকাশ করে। এবং জামায়াত সদস্যরাই সেটি গঠন করে। তারপর থেকে বিভিন্ন উপায়ে তারা বাংলাদেশ দখলের পরিকল্পনা নেয়। এ কারণেই আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে জামায়াত কর্মীরা প্রশিক্ষণ নেয়া শুরু করে। হুসাইন হাক্কানী লিখেছেন, আইএসআই পরিকল্পনা নিয়েছিল ভারতকে ঘিরে ফেলতে হবে। সে কারণেই তাদের পরিকল্পনা ছিল বাংলাদেশে জিহাদী নামে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর লালন-পালন শুরু করে এবং তারা নিশ্চিত করতে চেয়েছে ক্ষমতায় যেন সব সময় আওয়ামীবিরোধীরা থাকে অর্থাৎ, বিএনপি-জামায়াত। ১৯৭১ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত যেসব পাকিস্তানী প্রশিক্ষিত সেনাকর্মকর্তা ছিলেন তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ এই মতে বিশ্বাসী ছিলেন এবং তাদের নিরাপত্তা সংস্থা ডিজিএফআইয়ের সঙ্গে আইএসআইয়ের সম্পর্ক ছিল ঘনিষ্ঠ। আমার লেখা 'বাংলাদেশী জেনারেলদের মন'-এ এ সম্পর্কে বিস্তারিত লেখা হয়েছে, তাই এখানে তা আর লিখলাম না।
ফজলুর রহমানের চুক্তি স্বাক্ষরের পর হুজি তার শক্তি প্রদর্শনে নেমে পড়ে। ১৯৯৯ সালের ২৮ জানুয়ারি তাদের সদস্যরা কবি শামসুর রাহমানের ওপর হামলা করে। শেখ হাসিনা ছিলেন প্রধানমন্ত্রী। টিপিক্যাল আওয়ামী লীগাররা যা বলেন বা করেন প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া তাদের ছিল এরকম। 
অর্থাৎ শামসুর রাহমান পাবলিসিটির জন্য এরকম করেছেন। কিন্তু শেখ হাসিনা তখনই কঠোর অবস্থান নিয়েছিলেন জঙ্গীদের বিরুদ্ধে। ৪৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তার মধ্যে বিদেশীও ছিল। এবং হুজিই যে কবিকে হত্যা করতে চেয়েছিল তা স্বীকার করে। শুধু তাই নয়, একজন স্বীকারোক্তি দেয় যে, আইএসআই তাদের ২ কোটি টাকা দিয়েছে ৪২৫টি মাদ্রাসা থেকে সদস্য রিক্রুট করতে। ২০০০ সালে শেখ হাসিনাকে হত্যার জন্য টুঙ্গিপাড়ায় বোমা পেতে রাখা হয় এবং একই সময় কোটালিপাড়ায় বোমা হামলা করা হয়। এতে অনেকে নিহত হন। এর পর পর কমিউনিস্ট পার্টির জনসভায় হামলা হয়। লক্ষ্য করবেন, কমিউনিস্টদের জামায়াত বা পাশ্চাত্য বিশেষ করে আমেরিকা সবচেয়ে বড় শত্রু মনে করে। এদিক থেকে জামায়াত, সন্ত্রাসী ও যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রীয় দর্শনের মিল আছে। সেই বোমা হামলায়ও অনেকে নিহত হন। খুলনায় কাদিয়ানী মসজিদে বোমা হামলা হয় ১৯৯৯ সালে। নারায়ণগঞ্জের চাষাড়ায় শামীম ওসমানের কর্মীসভায় বোমা হামলা হয় ২০০১ সালে।
জামায়াত-বিএনপি ক্ষমতায় আসে ২০০১ সালে। তারা কীভাবে ক্ষমতায় এসেছিল সে পটভূমি আমাদের জানা। সংক্ষেপে শুধু বলব, সেই সময় পাকিস্তানী পত্রিকায় খবর ওঠে ছাপা হয় যে, বাংলাদেশের সেনাকর্মকর্তাকে প্রচুর টাকা দেয়া হয়েছে উপঢৌকন হিসেবে। নির্বাচনে জামায়াত-বিএনপির পক্ষে সেনাবাহিনী বিশেষ ভূমিকা রাখে। মিডিয়া, আমলাতন্ত্র, বড় ব্যবসায়ী সবাই ছিল আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে।
বিএনপি-জামায়াত আমলে সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য দুটিÑ একটি দেশজুড়ে প্রকাশ্যে জঙ্গী মৌলবাদীদের সাহায্য। দুই. ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সাহায্য। এর মধ্যে হঠাৎ ধরা পড়ে ১০ ট্রাক অস্ত্র, আরও পরে এক ট্রাক গোলাবারুদ। এসবই ছিল আইএসআই তথা সন্ত্রাসবাদী বা জিহাদী বা আল কায়েদা নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত। সেই সমময়ই সেøাগান দেয়া হয়Ñ আমরা সব তালেবান, বাংলা হবে আফগান। শাহরিয়ার কবির সেই সময় এই ধরনের গোপন সংগঠনগুলোর যে তালিকা তৈরি করেন তাতে দেখা যায়, ২০০১ সালের আগে যেখানে এ ধরনের গোপন সংগঠনের সংখ্যা ছিল ৩টি। ২০০১-৬ সালে তা দাঁড়ায় ১২৫টিতে।
এ সময় বড় ধরনের যেসব বোমা হামলা হয় সেগুলো হলোÑ
২০০২ সাতক্ষীরা সিনেমা হল
২০০২ ময়মনসিংহ সিনেমা হল
২০০৩ লক্ষ্মীপুর সিনেমা হল
২০০৪ শাহজালাল (র) মাজার
২০০৪ ব্রিটিশ হাইকমিশনারের গাড়ি
২০০৪ সিলেট সিনেমা হল
২০০৪ বঙ্গবন্ধু এ্যাভিনিউতে গ্রেনেড হামলা
২০০৪ আহসানউল্লাহ মাস্টার হত্যা
২০০৫ এএসএম কিবরিয়া হত্যা।
এ সমস্ত হামলায় অনেকে নিহত হন। এসব হামলার একটা প্যাটার্নও লক্ষণীয়। হামলার লক্ষ্যবস্তু সিনেমা, মাজার, সার্কাস মেলা ও প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক সংস্থাসমূহ এবং আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ। আদর্শগতভাবে জেহাদীরা এর বিরোধী। আর আওয়ামী লীগ তো রাজনৈতিক দল হিসেবে শত্রু, যেহেতু তারা পাকিস্তানে বিশ্বাস করে না। দুই. ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের লালন পালন।
জামায়াত-বিএনপি এভাবে দেশটিকে আফগানিস্তান/পাকিস্তান বানাবার পরিকল্পনা নিয়ে ভালভাবে এগুচ্ছিল। যেসব বিদেশী শক্তি বিএনপি-জামায়াতের পক্ষে ছিল প্রাথমিকভাবে তার মধ্যে ভারত, আমেরিকাও ছিল। তারা প্রমাদ গোনে। কারণ যে দানবকে বোতলের ছিপি খুলে বের করা হয়েছে তাকে বোতলে ঢোকানো মুশকিল হয়ে পড়ে। মিডিয়াও এক সময় হতাশ হয়ে পড়ে। কারণ, সাংবাদিক হত্যা ও নির্যাতন সমানতালে চলছিল। এমনকি ক্লিনজিংয়ের তো কথাই নেই। ক্ষমতায় থাকার জন্য বিএনপি যেসব কুমতলব করেছিল সেগুলোও ফাঁস হয়ে পড়ে। এবং এক সময় বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হয়।
জামায়াত-বিএনপি নেতৃবৃন্দ প্রায়ই বলেন, তাদের আমলে জঙ্গীদের গ্রেফতার করা হয়। তাদের আমলে বাধ্য হয়ে শায়খ আব্দুর রহমান এবং বাংলাভাইকে গ্রেফতার করতে হয়। কিন্তু আওয়ামী লীগ আমলে গ্রেফতারকৃতদের জামিনে ছেড়ে দেয়া হয়। শামসুর রাহমান হত্যা চেষ্টা মামলায় বিএনপির আমলে যে চার্জশীট দেয়া হয়, বিচারক তাতে ক্ষুব্ধ হয়ে বলেন, যেখানে, যতিচিহ্নহীন একটি বাক্য ১৫০ লাইন দীর্ঘ এবং সেখানে প্রায় লেখা হয়েছে 'শোনা যায়', 'নাকি,' সেখানে চার্জশীট টেকে কিভাবে? তাকে তো বাধ্য হয়েই জামিন দিতে হয়। গ্রেনেড হামলায় বিএনপি-জামায়াত গ্রেফতার করেছিল জজ মিয়াকে, ময়মনসিংহ বোমা হামলায় শাহরিয়ার ও আমাকে। এই হচ্ছে জঙ্গী দমনের নমুনা। উল্লেখ্য, শামসুর রাহমানের মামলায় আওয়ামী লীগ সরকারের গ্রেফতারকৃত ৪৮ জন জামিন পান বিএনপি আমলে।
যুদ্ধাপরাধ বিচারে জামায়াত-বিএনপি বিরোধিতা করেছে এবং পাকিস্তান তাদের সমর্থন করে বিবৃতি দিয়েছে। এমনকি সংসদে নিন্দা প্রস্তাব পাস করেছে। গত এক বছরে এ কারণেই তারা সহিংস আক্রমণ চালিয়েছে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির ওপর।
জাওহিরির বার্তার পর অনেকে বলেছেন, জামায়াত-বিএনপি এবং বিএনপি না হলেও জামায়াতের কোন না কোন হাত আছে এ ব্যাপারে। নবেম্বরে যেহেতু বার্তাটি প্রচারিত হয়েছে সেহেতু এই সন্দেহ। অনেক ভাষ্যকারও আপত্তি তুলেছেন এ বলে যে, সব ঘটনার জন্য বিএনপি-জামায়াতকে দোষী করা ঠিক নয়। আওয়ামী লীগ থেকেও বলা হয়েছে, এর পেছনে প্ররোচনা যুগিয়েছে বিএনপি-জামায়াত। সরকার থেকে এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করা হয়নি।
জামায়াত-বিএনপি যে এদেশে জঙ্গীবাদের উদ্যোক্তা, প্রশ্রয়দাতা এ ব্যাপারে তো লুকোছাপার কোন ব্যাপার নেই, ডিফেন্ড করার ব্যাপার নেই। আমি যে সব ঘটনার সংক্ষিপ্ত বিবরণ দিয়েছি তাতে নিশ্চয়ই একটা প্যাটার্ন খুঁজে পাওয়া যায়।
জাওয়াহিরি ১৯৭১ থেকে সবকিছুর জন্য হিন্দু ভারতকে দায়ী করেন। জামায়াত-বিএনপিও তাই করে। তারা বলছে, ভারতগামী ট্রেনে আছে সরকার। তারা ভুলে যায়, ভারতে মুসলমানের সংখ্যা বাংলাদেশ থেকেও বেশি। পাকিস্তান যুদ্ধাপরাধ বিচার সমর্থন করেনি। বিএনপি-জামায়াতও না। অধিকাংশ গোপন জঙ্গী সংগঠন জামায়াতের সঙ্গে কোন না কোনভাবে যুক্ত। জাওয়াহিরি যেমন মনে করেন, বাংলাদেশ হবে মুসলমানদের স্থান বিএনপি-জামায়াতও তাই মনে করে। জিয়াউর রহমান কর্তৃক বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ সৃষ্টি সেই কারণে। এবং 'আমরা হবো তালেবান' এই সেøাগান তো আওয়ামী লীগের নয়, ১৯ দলীয় জোটভুক্ত কয়েকটি দলের। এই সেøাগানের কারণে খালেদা জিয়া কি তাদের তিরস্কার করেছিলেন?
জাওয়াহিরির বার্তা সম্পর্কে মির্জা ফখরুল বলেছেন, বর্তমান সরকার আমেরিকাকে কাছে আনতে চায় সে জন্য এই বার্তার দায় তাদের ওপর চাপিয়েছে। রাজনীতিবিদরা ফালতু কথা যত কম বলবেন ততই ভাল। মির্জা ফখরুলের ভাষ্য অনুযায়ী আমেরিকা তাহলে তাদের পক্ষে আছে। সেটি স্বাভাবিক। ১৯৭১ সালে ছিল, ২০১৪-তে ছিল, ভবিষ্যতেও থাকবে। আমেরিকা নিজ দেশে জিহাদী বা সন্ত্রাসীদের ঠাঁই দেবে না কিন্তু অন্য দেশে থাকলে সমর্থন করবে। তালেবান আমেরিকানদের সৃষ্টি। বিভিন্ন দেশে অস্থিতিশীলতা থাকলে আমেরিকার সুবিধা। সন্ত্রাসকে যদি মন থেকে আমেরিকা নির্মূল করতে চাইত তাহলে জামায়াত-বিএনপিকে গণতন্ত্রের নামে সমর্থন দিত না। নিজ দেশে তারা এ সমর্থন দেয় না। মজেনাকে কেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভ্য আখ্যা দেয়া হয় মির্জা ফখরুল কি তা জানেন না?
যাহোক, আমাদের মূল বিষয় তা নয়। জাওয়াহিরির বার্তাকে খাটো করে দেখার উপায় নেই। এই ক্ষেত্রে শোভন হতো যদি সব রাজনৈতিক দল বলত, এই বার্তা আমাদের জন্য অশনি সংকেত, আসুন আমরা একসঙ্গে তা প্রতিহত করি তাহলে তা যুক্তিযুক্ত হতো। কিন্তু বিএনপি-জামায়াতের পক্ষে তা সম্ভব হবে না। কারণ, পূর্ব ইতিহাস।
বাংলাদেশ তালেবানী রাষ্ট্র হলে কি জামায়াত-বিএনপির সুবিধা হবে? বিন্দুমাত্র নয়, বিএনপির তো নয়ই। এখন বিএনপির যেসব নেতা লাফালাফি করেন তাদেরও নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে হবে। এ কথা কি তারা বোঝেন? জওয়াহিরির বার্তার বিরুদ্ধে যদি তারা বার্তা দিতেন তাহলে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে পরিবর্তন হতো। সমঝোতার একটি জায়গা তৈরি হতো। দেশের স্বার্থ রক্ষা হতো। এ দিকটা রাজনীতিবিদরা কখনও ভেবে দেখবেন কিনা কে জানে।
সবচেয়ে আশ্চর্য, আমাদের সেই বিখ্যাত মিডিয়া সৃষ্ট সিভিল সমাজ। নির্বাচনের আগে পাকিস্তানপন্থী মুক্তিযুদ্ধবিরোধী জামায়াত-বিএনপির সংবিধান বিরোধী দাবি কেন মেনে নেয়া হচ্ছে না সে জন্য তাদের বিশাল ক্রোধ, পাকিস্তানীরা নির্বাচনে আসছে না দেখে হাহাকার। তাদের ছাড়া নির্বাচন হয়ে গেল বলে গণতন্ত্র ভেঙ্গে গেছে বলে আর্তচিৎকার। জওয়াহিরির বার্তার পর তারা পিরামিডের মতো নিস্তব্ধ। একটি নিন্দা বাক্যও বের হয়নি তাদের মুখ থেকে। এর কারণ কি? তারা তো 'নিরপেক্ষ।' শুধু আওয়ামী লীগের যে কোন কর্মকা-ে তাদের শরীর চুলকায়, পাকিস্তানীরা, জঙ্গী মৌলবাদীরা যাই বলুক মনে যেন তাদের প্রশান্তি এনে দেয়। সুশীল বাটপাড় শব্দটির উদ্ভব কেন হয়েছিল পাঠক নিশ্চয় তা অনুমান করতে পারছেন।
প্রকাশ : সোমবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০১৪, ১২ ফাল্গুন ১৪২০



বাংলাদেশে জিহাদের ডাক 'আল কায়েদার'

নিউজ ডেস্ক,  বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

Published: 2014-02-15 12:58:45.0 BdST Updated: 2014-02-15 17:05:30.0 BdST

RELATED VIDEOs

জাওয়াহিরির বার্তা-১

জাওয়াহিরির বার্তা-২



al-Qaeda urges jihad in Bangladesh




__._,_.___


****************************************************
Mukto Mona plans for a Grand Darwin Day Celebration: 
Call For Articles:

http://mukto-mona.com/wordpress/?p=68

http://mukto-mona.com/banga_blog/?p=585

****************************************************

VISIT MUKTO-MONA WEB-SITE : http://www.mukto-mona.com/

****************************************************

"I disapprove of what you say, but I will defend to the death your right to say it".
               -Beatrice Hall [pseudonym: S.G. Tallentyre], 190




Your email settings: Individual Email|Traditional
Change settings via the Web (Yahoo! ID required)
Change settings via email: Switch delivery to Daily Digest | Switch to Fully Featured
Visit Your Group | Yahoo! Groups Terms of Use | Unsubscribe

__,_._,___