On Wednesday, May 14, 2014 11:39 AM, Mohiuddin Anwar <mohiuddin@netzero.com> wrote:
কান ধরে টান দিতে ভয় লাগে – যদি মাথাটি বেরিয়ে আসে
মিনার রশীদ
এক লোক নিজের স্ত্রীর কাছে হাতে নাতে ধরা খায়। তারপরেও স্ত্রীর কাছে নিজেকে ধোয়া তুলসী পাতা হিসাবে প্রমাণের চেষ্টা করে। স্ত্রীকে বলে, বিশ্বাস করো, এই হতভাগা মেয়েটি তোমার মত একই রংয়ের শাড়ি পড়েছিল বলেই এই ভুলটি করে ফেলেছি। এই স্বামী তার স্ত্রীকে যতটুকু বোকা মনে করেছিলেন সরকারের মন্ত্রীগণ এদেশের মানুষকে তার চেয়েও বড় বোকা ঠাহর করে বসেছেন ।
সরকারের প্রতিটি পাপ নগ্নভাবে প্রকাশ পাওয়ার পর সরকারের মন্ত্রীদের মন্তব্যগুলি এই স্বামীধনের আত্মপক্ষ সমর্থনের মতই চিত্তাকর্ষক ও অভিনব। বুঝতে পারছি না যে এই ধরনের মগজ খালি ওয়ালারা সব সময় মন্ত্রী হয় নাকি মন্ত্রী হওয়ার পর মগজ এই ভাবে ড্রেইন বা খালি হয়ে যায়।
রানা প্লাজা থেকে শুরু করে বিশ্বজিৎ হত্যা এমনকি হালের নারায়নগঞ্জের ঘটনাতেও তাদের সেই প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে। সাংস্কৃতিক মন্ত্রী নূর আজ এক সমাবেশে বলেছেন, অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টিতে স্বাধীনতা বিরোধীরা দায়ী।
কিন্তু সব জায়গায় ধরা খাচ্ছে আবার তাদের জয়বাংলার মায়া গণ। অন্যদিকে এক ব্যবসায়ীকে আটকে মুক্তিপণ আদায় করতে গিয়ে গতকাল ছাত্রলীগের পাঁচজন হাতে নাতে ধরা খেয়েছে। আটক হওয়া ব্যক্তিরা হলেন: ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির উপ-ক্রীড়া সম্পাদক সৃজন ঘোষ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির সহসভাপতি তানভীরুল ইসলাম, জগন্নাথ হল কমিটির সহসভাপতি অনুপম চন্দ্র, মুহসীন হল কমিটির ছাত্রবৃত্তিবিষয়ক সম্পাদক মামুন, জসীমউদ্দীন হল কমিটির সাবেক সহসম্পাদক বাপ্পী ও ছাত্রলীগের কর্মী হিমেল।
কাজেই অ-সুশীল হাছান মাহমুদ, হানিফ কিংবা আমির হোসেন আমুদের সাথে এই সুশীল ঘরানার আসাদুজ্জামান নূরের মানসিক গঠনে কোনই পার্থক্য নেই ।
আমু দাবি করেছেন , 'সরকারকে বিপদে ফেলার জন্যে বিএনপিই সারা দেশে এখন পরিকল্পিতভাবে গুম-হত্যা করছে।' হাছান মাহমুদ নারায়নগঞ্জের ঘটনায় বিরোধীদলের সম্পৃক্ততা খুজে বের করার নির্দেশ দিয়েছেন।
নারায়নগঞ্জের ঘটনায় অনুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়েও প্রধানমন্ত্রীর অফিস কোন বিরোধী দলের নেতা কিংবা তাদের কোন মামা শ্বশুর বা খালু শ্বশুরকে খুঁজে পাচ্ছে না। বিশ্বজিত কেইসে প্রধানমন্ত্রীর অফিস খুনী ছাত্রলীগ নেতাদের মধ্যে কারো কারো বিএনপি-জামায়াতের আত্মীয় খুজে পেয়ে ইউরেকা ইউরেকা বলে চেঁচিয়ে উঠেছিল । রানা প্লাজার রানার কপালে আওয়ামী এমপি মুরাদ জংয়ের স্নেহের চুম্বনরত ছবি যখন সারা দেশবাসী উপভোগ করছে তখন প্রধানমন্ত্রী সাভারের যুবলীগ নেতাদের তালিকা দেখিয়ে বলেছেন যে লিষ্টটিতে রানার নাম নেই। দেশের মানুষ কোনটি বিশ্বাস করবে, প্রধানমন্ত্রীর হাতের লিষ্ট নাকি নিজেদের চোখ?
সমস্ত আলামত দেখে মনে হচ্ছে স্বয়ং স্রষ্টা তার কোন পরিকল্পনা থেকে প্রশিক্ষিত খুনীদের এতসব সতর্কতার পরেও সাত সাতটি লাশ ভাসিয়ে দিয়েছেন। লাশের সঙ্গে ইট বেঁধে এবং নাভির নিচে ছিদ্র করে দেয়ার পরেও যখন লাশগুলি ভেসে ওঠে তখন এটাকে স্বয়ং স্রষ্টার ষড়যন্ত্র না বলে উপায় থাকে না। পাপ নাকি তার বাপকেও ছাড়ে না। তবে আমাদের এখানে মনে হচ্ছে পাপ তার বাপকে খাতির করে ছেড়ে দেয়। মাঝে মাঝে দুয়েকজন চাচাদের খেয়ালের বশে ধরে ফেলে।
অনেক সময় এই পাপের শুধু কানটি ভেসে ওঠে । তখন কানটি ধরে টান দিলে মাথাটি বেরিয়ে আসতে পারে এই ভয়ে আমাদের মিডিয়া ও সুশীল সমাজ এই কান নিয়ে বেশি টানাটানি করতে ভয় পায়। শেয়ার বাজার, হলমার্ক, বেসিক ব্যাংক, কুইক রেন্টাল, ডেসটিনি, সাগর-রুনি, পদ্মাসেতু সব জায়গায় এই কানটি দেখা গেলেও মাথাটি ভালোভাবে দেখা হয়ে ওঠেনি এদেশের মানুষের।
পদ্মা সেততে যে কানটি দৃষ্টির মধ্যে এসেছিল তা ধরে সামান্য টান দিলে মাথাটি বেরিয়ে আসতে শুরু করেছিল। এই সময় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিজের স্বজনদের পরিধিটি ছোট্ট করে ফেললেন। বললেন নিজের ও বোনের ছেলেমেয়ে ছাড়া তাঁর আর কোন স্বজন নেই।
পদ্মা সেতুর দুর্নীতির সাথে জড়িত বেশ কয়টি নাম এই লাশের মত ভেসে উঠেছিল। সরকারের ভয়ে কিংবা প্রীতিতে মুখ বন্ধ করে রাখা এদেশের মিডিয়া এই নামগুলি নিয়ে তখন তেমন নাড়াচড়া করে নি। হাওয়া ভবনে সমপরিমাণ মাল মসলা পেলে এদেশের মিডিয়া কী করতো তা কল্পনা করলেও জলতেষ্টা পেয়ে যায়।
এদের মধ্যে একটি নাম আবারও অন্য কারনে ভেসে উঠেছে। তার স্ত্রীর অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে । কিন্তু এই ব্যাপারে মিডিয়া এবং প্রশাসনের ফিসিফসানি টাইপের অঙ্গভঙ্গি দেখে মনে হয়েছে যে দেশটি যেন মধ্য প্রাচ্যের শেখ শাসিত কোন একটি রাজ্য। মধ্যপ্রাচ্যের কোন প্রিন্সের স্ত্রীর এই ধরনের অপমৃত্যু হলে যে ধরনের ট্রিটমেন্ট দেওয়া হতো এই ঘটনাটিতে সেই ধরনের প্যারামেডিক, প্রশাসনিক ও মিডিয়া ট্রিটমেন্ট দেয়া হয়েছে । এতে স্পষ্ট হয়েছে যে প্রধানমন্ত্রী তাঁর স্বজনের পরিধিকে যতটুকু ছোট্ট বলে দাবি করেছেন বাস্তবে এটা ততটুকু ছোট্ট নয়।
সাধারন মানুষের বউ অপ -মৃত্যুতে মারা গেলে যতটুকু ঝামেলা পোহাতে হয়, রাজা শাসিত রাজ্যের রাজপুত্রদের তা পোহাতে হয় না । এটা নিয়ে মানুষের মনে সৃষ্ট অনেক প্রশ্ন বিশেষ বোতলে ঢুকিয়ে আপাতত ছিপি মেরে রাখা হয়েছে। কোনদিন এই ছিপি খোলা যাবে কি না জানি না।
সমাজে এক ধরনের বিচারহীনতার সংস্কৃতি বা বোধ আমাদেরকে গ্রাস করে ফেলেছে। এখন কেউ যদি তার বেয়াই বা বেয়াইনের চেয়ে দুর্বল হয় তবে প্রিয় সন্তানটি এভাবে অপমৃত্যুর মুখোমুখি হলে তার ময়না তদন্ত না করে তাড়াতাড়ি সমাহিত করার জন্যে একান্ত বাধ্য বেয়াই সাজতে হবে। কোন রাজপরিবারে কিংবা নিজের চেয়ে শক্তিসালী পরিবারে মেয়ে বিয়ে দিয়ে তৃপ্তির ঢেকুর তোলার দিন বোধ হয় শেষ হয়ে পড়েছে। কারন কুইনাইন (বেয়াইন) দিয়ে জ্বর সারালেও এই কুইনাইন (বেয়াইন) সারাবে কে?
টিভি চ্যানেলে প্রচারিত একটি অনুষ্ঠানে দেখলাম এক এলাকার এক শাহানশাহ এক সমাবেশে গর্ব ভরে বলছেন যে আপা তার, সেনাবাহিনী তার। সেই মঞ্চে দেখা গেলো সদ্য বিধবা হওয়া নারীটিও যেন তারই সহানুভূতির কাঙাল। অর্থাৎ বিধবাটিও তার। এক কথায় আপা তার,সেনাবাহিনী তার, বিধবাও তার। এই হলো শাহান শাহ।
বোবা একটা দৃষ্টি দিয়ে জনগণ শুধু হা করে তাকিয়ে দেখছে। এদের ঘুটির চালে কেউ বিধবা হলে আবার তাদেরই সহানুভূতি গ্রহন করতে চাহিবামাত্র স্মরণ সভা বা প্রতিবাদ সভার সভামঞ্চে উপস্থিত হতে হবে। কারো কলিজার টুকরা মেয়ের অপমৃত্যু হলে জামাই বাবাজিকে কুর্নিশ করে খুশি মনেই ময়না তদন্ত ছাড়াই মেয়ের লাশটি দাফন করতে হবে। বাবার কাধে এই সন্তানের লাশ কতটুকু ভারি লাগবে তা ঘুণাক্ষরেও বলা যাবে না।
কারন
ইনহাস্ত ওয়াতনাম ।
এই তো আমার জন্ম ভূমি!
লেখক: মিনার রশীদ
(সংগৃহিত)
http://tazakhobor.com/bangla/ltte/28137-2014-05-10-18-28-36?q=809c51b79547d50f301b9172fa74f14f230106123
__._,_.___