Banner Advertiser

Wednesday, May 14, 2014

[mukto-mona] আওয়ামী লীগকে নিয়ে কী লিখব? আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী



আওয়ামী লীগকে নিয়ে কী লিখব?
আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী
আগামী মাসের ২৩ তারিখে (২৩ জুন) বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বয়স হবে পয়ষট্টি বছর। এই উপলক্ষে আওয়ামী লীগ একটি বৃহদাকার সঙ্কলন বের করবে। এ জন্যে সঙ্কলনের কর্মকর্তারা আওয়ামী লীগ সম্পর্কে আমার একটি লেখা চান। এই সঙ্কলন প্রকাশের মুখ্য দায়িত্ব দলেরই একজন কর্মকর্তা নূহ আলম লেনিনের ওপর। তিনি আমাকে চেনেন এবং আমাদের সম্পর্ক অত্যন্ত ভাল। কিন্তু পদের গৌরবে গৌরবান্বিত হলে যা হয়, তিনি নিজে আমার কাছে লেখা চাননি। আমার বন্ধু মোনায়েম সরকারের মাধ্যমে অনুরোধটি আমাকে জানিয়েছেন। তাতে আমার আপত্তি নেই। কিন্তু ভাবছি কী লিখব?
এর আগেও আওয়ামী লীগকে নিয়ে একটি সঙ্কলন বের করা হয়েছিল। সম্পাদনায় ছিলেন নূহ আলম লেনিনই। আমি বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগ সম্পর্কে অজস্র লেখা লিখেছি। তার একটিও না ছেপে আমার সঙ্গে কোন পরামর্শ না করেই বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে শিশু-কিশোরদের জন্য আমার লেখা একটি কবিতা তাতে স্থান দেয়া হয়। সঙ্কলনটির ছাপা বাঁধাই অত্যন্ত মনোমুগ্ধকর হয়েছিল। অর্থাৎ প্রচুর অর্থ ব্যয়ে সঙ্কলনটি বের করা হয়েছিল। কিন্তু ভেতরের অধিকাংশ লেখাই ছিল নিম্নমানের। আমরা ব্রিটেনের লেবার পার্টির এবং ভারতের দুই কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিআই ও সিপিএম) সঙ্কলনগুলো দেখেও কোন কিছু শিখিনি। এই সঙ্কলনগুলোতে কেবল দলের স্তুতিমূলক লেখা নয়, সমালোচনামূলক লেখাও আছে এবং তা তথ্যে ও মননশীলতায় সমৃদ্ধ। সে তুলনায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সঙ্কলনগ্রন্থ 'গা সুন্দর খালাত ভাই।'
আওয়ামী লীগের যে নতুন সঙ্কলন গ্রন্থটি বের হতে যাচ্ছে, সেটিতে লেখার জন্য সম্পাদক নিজে আমাকে আমন্ত্রণ জানালেও আমার পক্ষে লেখা সম্ভব নয়। আওয়ামী লীগ নিয়ে আমি কী লিখব? আর লিখলেই বা কে শোনে? বঙ্গবন্ধু হত্যার পর এমন এক সময় ছিল যখন আওয়ামী লীগ ও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখার কোন লোক ছিলেন না। ভয়ে বঙ্গবন্ধুর নামটি পর্যন্ত কেউ উচ্চারণ করতেন না। তখন বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগকে নিয়ে দু'হাতে লিখেছি।
এখন আওয়ামী লীগকে ঘিরে লেখক ও বুদ্ধিজীবীর অন্ত নেই। তাদের স্তাবকতার সঙ্গে পাল্লা দিতে পারি, এই আশি বছরের বুড়োর সেই ক্ষমতা নেই। থাকিও বিদেশে। তাই বন্ধুবর মোনায়েম সরকারকে জানিয়েছি, আমি এই স্তাবকদের ভিড়ে যোগ দিতে চাই না। মনোমুগ্ধকর রঙিন সঙ্কলনের জন্য কিশোর পাঠ্য লেখা লিখতে চাই না। আমার যা লেখার তা সংবাদপত্রের পাতায় লিখব। নিজের কলামেই লিখব।
আমি একজন উঁচুদরের সাংবাদিক না হতে পারি, কিন্তু বড় সৌভাগ্যবান সাংবাদিক। ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন তারিখে (১৭৫৭ সালে এই দিনে পলাশীর যুদ্ধ অনুষ্ঠিত হয়েছিল) ঢাকার রোজগার্ডেনে আওয়ামী মুসলিম লীগকে জন্মগ্রহণ করতে দেখেছি। দলের প্রথম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন শামসুল হক। অসাধারণ বাগ্মী। ইংরেজী ও বাংলা দুই ভাষাতেই পা-িত্যপূর্ণ বক্তৃতা দিতে পারতেন। দীর্ঘকাল মানসিক রোগে ভুগে তিনি মারা যান।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে আমি বঙ্গবন্ধু (তখন বঙ্গবন্ধু হননি) শেখ মুজিবুর রহমানকে দেখেছি। তিনি শুধু সাধারণ সম্পাদক ছিলেন না, ছিলেন দলের প্রাণপুরুষ। দলকে সংগঠিত করার জন্য তিনি স্বেচ্ছায় মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দলের দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন। আওয়ামী লীগ যে আজ পয়ষট্টি বছর বয়সেও বেঁচে আছে তার কারণ, বঙ্গবন্ধু তাঁর অসাধারণ সাংগঠনিক ক্ষমতায় দলের শিকড় একেবারে তৃণমূল পর্যায়ে পৌঁছে দিয়েছিলেন। 
বঙ্গবন্ধুর পর তাজউদ্দীন আহমদকে দেখেছি দলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে। তাঁর বাগ্মিতা তেমন ছিল না, ক্যারিশমাও তেমন ছিল না। ছিল অসাধারণ কর্মক্ষমতা ও প্রতিভা। তিনি নীরবে এবং শক্ত হাতে দলের দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন। দলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে প্রয়াত নেত্রী আমেনা বেগমকে দেখেছি। ছয় দফার ঐতিহাসিক আন্দোলনের সময় বঙ্গবন্ধুসহ আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতাকর্মী যখন জেলে, ঢাকার ১৫ নম্বর পুরানা পল্টনে আওয়ামী লীগের তখনকার অফিসে বাতি দেয়ার যখন কেউ ছিল না, তখন গ্রেফতার, পুলিশী লাঞ্ছনার হুমকি অগ্রাহ্য করে তিনি আওয়ামী লীগের বাতি জ্বালিয়ে রেখেছেন; ছয় দফার আন্দোলন চালিয়ে রাখা এবং বঙ্গবন্ধুর মুক্তি দাবিতে উল্কাবেগে সারা বাংলাদেশ চষে বেড়িয়েছেন। পরে তিনি নানা কারণে পথভ্রষ্ট হন। কিন্তু আওয়ামী লীগের ভিত্তি শক্ত করার ব্যাপারে তাঁর অবদান অস্বীকার করার মতো নয়।
তার পরও আওয়ামী লীগ অনেক চড়াই-উতরাই পার হয়েছে। দলের সাধারণ সম্পাদক পদে আরও অনেকে এসেছেন এবং চলে গেছেন। তাঁদের অবদানও অনস্বীকার্য। কিন্তু বর্তমানের আওয়ামী লীগের অবস্থা দেখলে মনে হয় এটি আমার দেখা অতীতের সেই গৌরবোজ্জ্বল আওয়ামী লীগের ভগ্নাবশেষ। বার্ধক্যে মানুষের দেহে যেমন মেদ বৃদ্ধি পেয়ে তাকে বিপুলাকার করে, কিন্তু তার দেহে শক্তি থাকে না; বর্তমান আওয়ামী লীগ তেমনি মেদবহুল বিপুলাকার শরীর। কিন্তু সেই শরীরে কোন শক্তি নেই। দুর্নীতি, স্বার্থদ্বন্দ্ব, সন্ত্রাস এবং নীতিহীনতা দলটিকে এমনভাবে পেয়ে বসেছে যে, আওয়ামী লীগের শত্রু এখন আওয়ামী লীগই। তার বাইরের শত্রুর কোন প্রয়োজন নেই। দেশে নির্বাচন এলেই দেখা যায়, আওয়ামী লীগের সরকারী প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থীরা লড়ছে। বিএনপি ও জামায়াতের প্রার্থীকে জয়ী করাচ্ছে। দলের অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা ও চেন অব কমান্ড বহুকাল আগেই বিলুপ্ত।
দলের যে বিভিন্ন শক্তিশালী ফ্রন্ট ছিল, যেমন যুবলীগ, ছাত্রলীগ, শ্রমিক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ইত্যাদি- এগুলো এখন আর দলের শক্তি ও জনপ্রিয়তার ভিত্তি নয়; বরং দলের জন্য লায়াবিলিটি। রোজই খবরের কাগজের পাতা খুললে চাঁদাবাজি, টেন্ডার, লাইসেন্সবাজিতে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের রক্তাক্ত হানাহানি, হত্যা, অপহরণের খবর পাওয়া যায়। ব্যবসায়ীকে গুম করে মুক্তিপণ আদায় করতে গিয়ে ছাত্রলীগের একাধিক নেতার (কেন্দ্রীয় নেতাসহ) গ্রেফতার হওয়ার খবর সম্প্রতি ঢাকার কাগজেই পড়েছি। ছাত্রদল বা শিবিরের সঙ্গে সন্ত্রাস ও দুর্নীতিতে ছাত্রলীগের এখন আর কোন পার্থক্য নেই।
তার পরও আওয়ামী লীগ কী করে টিকে আছে? শুধু টিকে থাকা নয়, ক্ষমতায় রয়েছে এটা একটা বড় প্রশ্ন। এই প্রশ্নের জবাব, বঙ্গবন্ধু ও তাজউদ্দীন এই সংগঠনের ভিত্তি এমন শক্তভাবে নির্মাণ করে গেছেন যে, সেটা ভেঙ্গে পড়তেও সময় লাগছে। তাছাড়া বর্তমানে আওয়ামী লীগের শক্তি ও ঐক্যের চালিকাশক্তি একমাত্র বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। তাঁকে কেন্দ্র করেই আওয়ামী লীগ এখনও টিকে আছে এবং ক্ষমতায় আছে। শেখ হাসিনা না থাকলে আওয়ামী লীগের অবস্থা দাঁড়াবে ভারতের ইন্দিরাবিহীন কংগ্রেসের মতো। কংগ্রেস এখনও টিকে আছে। কিন্তু তার আগের রাজনৈতিক শক্তি ও প্রতাপ নেই। সোনিয়া-মনমোহন সিংয়ের নেতৃত্বে কংগ্রেস এখন আগের মতো সর্বভারতীয় রাজনৈতিক শক্তি নয়; বরং আমলাতন্ত্র ও বিগ কর্পোরেশন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত একটি দল ও সরকার।
শেখ হাসিনা একা কত দিক সামলাবেন? সামলাতে গিয়ে তিনিও ক্রমশ আমলা, টেকনোক্র্যাট ও বিজনেস সিন্ডিকেটের ওপর বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়ছেন। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে দলের ভেতরে ও বাইরে বিভিন্ন স্বার্থান্বেষী গ্রুপ তাদের ঘাঁটি শক্ত করছে। একটি গণতান্ত্রিক দলের আমলাতন্ত্রায়নেরও পরিণতি দাঁড়ায় দলটির রাজনৈতিক শক্তি লোপ এবং অস্তিত্বের সঙ্কট। আমার আশঙ্কা আওয়ামী লীগের জনবিচ্ছিন্নতা এবং আমলানির্ভরতা যেভাবে বাড়ছে, তাতে এই দলেও শীঘ্রই অস্তিত্বের সঙ্কট দেখা দিলে বিস্মিত হওয়ার কিছু নেই।
ভারতে কংগ্রেসের ক্রমাগত জনবিচ্ছিন্নতা, আমলানির্ভরতা দলটির রাজনৈতিক শক্তি ধ্বংস করেছে এবং দলটিকে অস্তিত্বের সঙ্কটে ফেলেছে। এবারের নির্বাচনে ভরাডুবি হলে কংগ্রেস একটি প্রান্তিক রাজনৈতিক দলে পরিণত হবে। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নে এত শক্তিশালী সোভিয়েত কমিউনিস্ট পার্টি ৭০ বছরের বেশি সংগঠনের শক্তি ধরে রাখতে পারেনি ক্রমাগত পার্টি ব্যুরোক্রেসির ওপর নির্ভরতা বৃদ্ধি ও জনবিচ্ছিন্নতার দরুন। এই একই জনবিচ্ছিন্নতা ও আমলানির্ভরতার দরুন পশ্চিমবঙ্গে ত্রিশ বছরের বেশি রাজত্ব করার পর সিপিএম শুধু শোচনীয়ভাবে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হয়নি; অস্তিত্বের সঙ্কটে পড়েছে। ভারতের সব বামপন্থী দল ঐক্যবদ্ধ ফ্রন্ট গঠন করেও সর্বভারতীয় রাজনীতিতে কোন প্রভাব ফেলতে পারছে না।
এ অবস্থায় বাংলাদেশের আওয়ামী লীগের ভবিষ্যত নিয়ে কী লিখতে পারি? জনবিচ্ছিন্নতা ও আমলানির্ভরতাও কি আওয়ামী লীগের জন্য ভারতের কংগ্রেস বা সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের কমিউটিস্ট পার্টির চাইতে ভিন্ন কোন পরিণতি বহন করবে? তা মনে হয় না। তবে আওয়ামী লীগের জন্য এখনও আত্মশোধনের ও জনগণের কাছে ফিরে যাওয়ার সময় আছে। আর এখনও আছে শেখ হাসিনার ব্যক্তিত্ব ও ক্যারিশমেটিক নেতৃত্ব। কিন্তু তিনি ব্যক্তিগতভাবে যথেষ্ট সাহসী হলেও দলের জনবিচ্ছিন্নতা দূর করতে এবং তাঁর সরকারের আমলানির্ভরতা কমাতে কোন বলিষ্ঠ পদক্ষেপ নিতে পারবেন কি? যদি না পারেন, তাহলে নিয়তি আওয়ামী লীগকেও নিষ্ঠুর পরিণতি বরণে ছাড় দেবে না।
বর্তমান সরকারের আরেকটি ত্রুটি, তারা অনেক সময় সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগেন এবং ভাল সিদ্ধান্ত নিলেও এত বিলম্বে নেন যে, তা আর জনমনে কোন প্রভাব ফেলে না। নারায়ণগঞ্জের সাত হত্যাকা-ের পর মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন মায়ার এক পুত্র ও জামাতা সম্পর্কে গুরুতর অভিযোগ ওঠার পরও তিনি পদত্যাগ করেননি। র‌্যাবের অভিযুক্ত তিন অফিসার ও কর্মকর্তাকেও এখন পর্যন্ত কাস্টোডিতে নেয়া হয়েছে বলে জানা যায়নি। সরকার হয়ত নানা কারণে সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না। সম্ভবত এমন সময় সিদ্ধান্তটি নেবেন, যখন জনমনে তার কোন প্রভাবই দেখা যাবে না। সময়ের এক ঘা এবং অসময়ের দশ ঘায়ের পার্থক্য সরকারকে বুঝতে হবে। 
আওয়ামী লীগে একটি সংস্কার প্রয়োজন। কঠোর সংস্কার। একেবারে সংগঠনের নিচুতলা পর্যন্ত। শেখ হাসিনা অন্তত একবারের জন্য হলেও নিজে কঠোর সংস্কারপন্থী হোন। দলটাকে বাঁচান, দেশ বাঁচান।

[লন্ডন ॥ মঙ্গলবার ॥ ১৩ মে ২০১৪]



__._,_.___


****************************************************
Mukto Mona plans for a Grand Darwin Day Celebration: 
Call For Articles:

http://mukto-mona.com/wordpress/?p=68

http://mukto-mona.com/banga_blog/?p=585

****************************************************

VISIT MUKTO-MONA WEB-SITE : http://www.mukto-mona.com/

****************************************************

"I disapprove of what you say, but I will defend to the death your right to say it".
               -Beatrice Hall [pseudonym: S.G. Tallentyre], 190





__,_._,___