চাচার পাঁচালি
ভরাডুবি
মাহবুব তালুকদার | ২৮ মে ২০১৪, বুধবার, ১০:০৬ | মতামত: ১ টি
চাচা বললেন, আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মস্ত বড় একটা ভুল করে ফেলেছেন।
প্রধানমন্ত্রী কখনও ভুল করতে পারেন না। রাজনীতির বিষয়ে তো নয়ই। একথা আপনি বলেছিলেন। আমি মনে করিয়ে দিলাম ।বলেছিলাম নাকি?
হ্যাঁ। আপনি আরও বলেছিলেন, প্রধানমন্ত্রীর ভুল করা রীতিমতো অ্যাবসার্ড ব্যাপার। কারণ তিনি যখনই কোন ভুল সিদ্ধান্তের মুখোমুখি হন, তখন তার সিক্সথ সেন্স মনের ভেতর ঘণ্টা বাজাতে থাকে। ভুল করার আগেই তিনি নিজেকে শুধরে নেন। এসব তো আপনারই কথা।
হবে হয়তো। চাচা নিম্নস্বরে বললেন।
আমি জানতে চাইলাম, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কি ভুল করেছেন?
তিনি ভারতের নির্বাচনে কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীকে ঠিকমতো বুঝিয়ে পড়িয়ে দিলে তাদের এত বড় ভরাডুবি হতো না। অথচ আমাদের নির্বাচনের সময় কংগ্রেস সরকার কি না করেছে! তারা ভারতের বিদেশ সচিব সুজাতা সিংকে ব্যক্তিগতভাবে বাংলাদেশে পাঠিয়ে এরশাদকে নির্বাচনে অংশ নিতে চাপ সৃষ্টি করতে দ্বিধা করেনি। একতরফা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জেতার পেছনে কংগ্রেসের উৎসাহ-উদ্দীপনা কম ছিল না। চাচা এ বিষয়ে একটা নাতিদীর্ঘ বক্তৃতাই দিয়ে ফেললেন।
কিন্তু চাচা, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ভারতের নেত্রী সোনিয়া গান্ধীকে কি বিষয়ে বুঝিয়ে পড়িয়ে দেবেন? তিনি কি কম বোঝেন?
অবশ্যই কম বোঝেন। নির্বাচনে ভরাডুবি হচ্ছে তার প্রমাণ। চাচা উদ্দীপ্ত স্বরে বললেন, এবার নির্বাচনের সময় কংগ্রেস ক্ষমতায় ছিল। নির্বাচনে কত সুবিধা ছিল তাদের। সুবিধা পেয়ে সুবিধা গ্রহণ না করা হচ্ছে এক ধরনের ক্রাইম। আসলে সোনিয়া গান্ধী রাজনীতির কিছুই বোঝেন না।
কি করা উচিত ছিল তার?
উচিত ছিল আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে নির্বাচন বিষয়ে 'টিপস' নেয়া। প্রধানমন্ত্রী তাকে বুঝিয়ে দিতে পারতেন কিভাবে প্রধান বিরোধী দলকে জাতীয় নির্বাচনে দূরে সরিয়ে রেখে একতরফা নির্বাচন করা যায়, কিভাবে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করা যায়। সোনিয়া গান্ধী বা তার ছেলে রাহুল গান্ধীর এসব টেকনিক্যাল বিষয়ে কোন ধারণাই নেই। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যদি 'একতরফা নির্বাচন ও সাফল্যের উপায়' এবং 'বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচনের সহজ পদ্ধতি' নামে দু'টো বই লিখতেন, তাতে দেশে-বিদেশে হৈচৈ পড়ে যেতো। কথাটা কিভাবে তার কানে তোলা যায়, আমি তাই-ই ভাবছি।
কিন্তু প্রধানমন্ত্রী কি তার এই 'সিক্রেট' জনগণের কাছে প্রকাশ করবেন?
তা একটা কথা বটে। চাচা আমতা আমতা করে বললেন।
চাচা! নরেন্দ্র মোদি সম্পর্কে কিছু বলুন।
কি বলবো! আমি ভেবে পাই না ভারতের জনগণ এমন একজন ব্যক্তিকে কিভাবে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বরণ করছে। তিনি একজন বাজে লোক।
নরেন্দ্র মোদি বাজে লোক! কি করেছেন তিনি?
নরেন্দ্র মোদি খালেদা জিয়াকে উস্কানি দিচ্ছেন।
কি বলছেন আপনি?
আমি ঠিকই বলছি। চাচা মুখ ভার করে বললেন, নরেন্দ্র মোদি পার্লামেন্টে একটা শক্তিশালী বিরোধী দল চান। এর অর্থ কি হতে পারে, তা বুঝতে পারো?
না তো!
এর অর্থ হচ্ছে, বাংলাদেশেও যেন একটি শক্তিশালী বিরোধী দল গঠিত হয়। খালেদা জিয়াকে শক্তিশালী বিরোধী দলের জন্য উস্কে দেয়া নরেন্দ্র মোদির লক্ষ্য।
বাংলাদেশে তো বিরোধী দল আছেই।
সেটা যে গৃহপালিত বিরোধী দল, তা তুমিও জানো, আমিও জানি। নরেন্দ্র মোদিরও তা জানা আছে। তিনি বিএনপিকে চাঙ্গা করার জন্য শক্তিশালী বিরোধী দলের কথা বলেছেন। নইলে ক্ষমতায় থেকে কেউ শক্তিশালী প্রতিপক্ষ চায় নাকি? আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তো জেনেশুনেই এমন বিরোধী দল তৈরি করেছেন, যারা উঠতে বললে ওঠে, বসতে বললে বসে।
কিন্তু বর্তমান বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ নিজেদের শক্তিশালী দেখানোর জন্য উঠেপড়ে লেগেছেন।
কি রকম? চাচার প্রশ্ন।
তিনি ঘোষণা দিয়েছেন অপহরণ গুম খুনের প্রতিবাদে তিনি রাজপথে নামবেন। আন্দোলন করবেন।
তার সঙ্গে তার দলের মন্ত্রীরাও কি রাজপথে নামবেন?
তারাও কি সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করবেন?
হতে পারে। নতুন ধরনের গণতন্ত্রে সবই সম্ভব। আমি বললাম, আপনারাই তো নতুন ধরনের গণতন্ত্রের কথা বলেছেন।
বলেছি। না বলে উপায় কি? ভারতের গণতন্ত্র আর বাংলাদেশের গণতন্ত্রে অনেক ফারাক। চাচা উদ্দীপ্ত হয়ে বললেন, বাংলাদেশের গণতন্ত্র অন্য কোন দেশের কার্বন কপি নয়। আমাদের গণতন্ত্রে বিরোধী দলকে অনেক বেশি ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। তুমি এটাকে ডান হাত ও বাঁ-হাতের গণতন্ত্র বলতে পারো।
মানে? মানে খুব সোজা। জাতীয় সংসদে ইয়েস-নো ভোটাভুটি হয়ে থাকে। ইয়েস মাসে ডান হাত তোলা, নো মানে বাঁ হাত।
কিন্তু বিরোধী দলকে অধিক ক্ষমতা কিভাবে দেয়া হলো?
অত অস্থির হইও না, ধৈর্য ধারণ করো। সবই তোমাকে বুঝিয়ে দিচ্ছি। সরকারি দল সংসদে কোন প্রস্তাব আনলে সরকারি দলের সদস্যরা ডান হাত তুলবেন। তাদের কিন্তু বাঁ হাত তোলার অধিকার নেই। কিন্তু বিরোধী দলের সদস্যরা কোন প্রস্তাবে ডান হাত তুলতে পারেন এবং বাঁ-হাতও তুলতে পারেন। কারণ তারা এদিকেও আছেন, ওদিকেও আছেন।
তারা যদি দু'হাতই তোলেন?
তুলতে পারেন। তাতে কিছু আসে যায় না। চাচা মৃদু হাস্যে বললেন, বিরোধী দলের হাত তোলা রেওয়াজ মাত্র। প্রস্তাব তো কণ্ঠ ভোটে এমনিতে পাস হয়ে যাবে।
নতুন ধরনের গণতন্ত্র সম্পর্কে চাচার কাছে যত কথা শুনছি, ততই বিস্মিত হচ্ছি। এই কনসেপ্টটা হিন্দু পুরাণে আছে 'অর্ধনারীশ্বর' নামে। অর্ধনারীশ্বরের একদিকে পুরুষের মুখ, অন্যদিকে নারীর মুখ। একই দেহে নারী ও পুরুষের কল্পনা অভিনব সন্দেহ নাই। সম্ভবত এটা থেকেই সংসদে রওশনীয় বিরোধী দলের কনসেপ্টের জন্ম। নরেন্দ্র মোদি যদি 'অর্ধনারীশ্বরে'র ন্যায় পরস্পরবিরোধী বিরোধী দলের এহেন কনসেপ্টের ব্যাপারটি জানতে পারেন, তাহলে ভারতের লোকসভার বিরোধী দলকে বাংলাদেশের বিরোধী দলের আদলে ঢেলে সাজানো হতে পারে। এটা হলে ভারতের পার্লামেন্ট বাংলাদেশের নতুন ধরনের গণতন্ত্রে অভিষিক্ত হবে। বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের জন্য এটা একটা প্লাস পয়েন্ট হতে পারে। কথাটা চাচাকে বলা উচিত হবে কিনা ভেবে চুপ হয়ে রইলাম।
চাচা বললেন, নরেন্দ্র মোদি এই উপমহাদেশের একটা বড় ক্ষতি করে দিয়েছেন।
উপমহাদেশের ক্ষতি করার সাধ্য কি তার? কিন্তু ক্ষতিটা কি ধরনের?
তিনি ঐতিহ্যগত গণতন্ত্রকে একেবারে নস্যাৎ করে দিয়েছেন।
এর মানে কি?
দীর্ঘদিন ধরে আমাদের তিনটি দেশে গণতন্ত্রের যে ঐতিহ্য গড়ে উঠেছিল, নরেন্দ্র মোদি তার মূলে কুঠারাঘাত করেছেন।
আমি কিন্তু এখনও কথাটা ঠিক বুঝতে পারলাম না।
বুঝিয়ে দিচ্ছি। বলে চাচা তার টেবিলের ড্রয়ার থেকে একটা ফটোগ্রাফ বের করলেন। আমি তাতে দেখলাম ভুট্টো, মুজিব ও ইন্দিরা গান্ধীর ছবি তাতে পাশাপাশি ছাপা রয়েছে। কিন্তু এ ছবিতে কিছুই বোঝা যায় না। আমি জিজ্ঞাসুনেত্রে চাচার মুখের দিকে তাকালাম। চাচা মৃদু হেসে প্রশ্ন করলেন, কিছু বুঝতে পারছো?
না তো!
এরা তিনজন হচ্ছেন তিনটি দেশের গণতন্ত্রের অতন্দ্র প্রহরী। প্রায় একই সময়ে ক্ষমতায় ছিলেন তারা। এদেরকে গণতন্ত্রের মহীরুহ বলা যায়। এদের সন্তানদের এবং পরবর্তীতে তাদের সন্তানদের হাতে গণতন্ত্রের ঐতিহ্যকে সমুন্নত রাখার সুযোগ তৈরি হয়েছিল। পরিবার তিনটির ছত্রছায়ায় গণতন্ত্র নিরাপদ ছিল। নরেন্দ্র মোদি এই তিনটি দেশের গণতন্ত্রের শিকড় উৎপাটন করেছেন। এর পরিণতি যে কত ভয়াবহ হতে পারে, তা চিন্তা করে আমি আতঙ্কিত।
এতে আতঙ্কের কি আছে?
কি বলছো তুমি? চাচা চোখের চশমা খুলে তা মুছতে মুছতে বললেন, রাহুল গান্ধী, সজীব ওয়াজেদ জয় আর বিলাওয়ালের ভবিষ্যৎ নিয়ে আমি ভাববো না?
প্রধানমন্ত্রী কখনও ভুল করতে পারেন না। রাজনীতির বিষয়ে তো নয়ই। একথা আপনি বলেছিলেন। আমি মনে করিয়ে দিলাম ।বলেছিলাম নাকি?
হ্যাঁ। আপনি আরও বলেছিলেন, প্রধানমন্ত্রীর ভুল করা রীতিমতো অ্যাবসার্ড ব্যাপার। কারণ তিনি যখনই কোন ভুল সিদ্ধান্তের মুখোমুখি হন, তখন তার সিক্সথ সেন্স মনের ভেতর ঘণ্টা বাজাতে থাকে। ভুল করার আগেই তিনি নিজেকে শুধরে নেন। এসব তো আপনারই কথা।
হবে হয়তো। চাচা নিম্নস্বরে বললেন।
আমি জানতে চাইলাম, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কি ভুল করেছেন?
তিনি ভারতের নির্বাচনে কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীকে ঠিকমতো বুঝিয়ে পড়িয়ে দিলে তাদের এত বড় ভরাডুবি হতো না। অথচ আমাদের নির্বাচনের সময় কংগ্রেস সরকার কি না করেছে! তারা ভারতের বিদেশ সচিব সুজাতা সিংকে ব্যক্তিগতভাবে বাংলাদেশে পাঠিয়ে এরশাদকে নির্বাচনে অংশ নিতে চাপ সৃষ্টি করতে দ্বিধা করেনি। একতরফা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জেতার পেছনে কংগ্রেসের উৎসাহ-উদ্দীপনা কম ছিল না। চাচা এ বিষয়ে একটা নাতিদীর্ঘ বক্তৃতাই দিয়ে ফেললেন।
কিন্তু চাচা, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ভারতের নেত্রী সোনিয়া গান্ধীকে কি বিষয়ে বুঝিয়ে পড়িয়ে দেবেন? তিনি কি কম বোঝেন?
অবশ্যই কম বোঝেন। নির্বাচনে ভরাডুবি হচ্ছে তার প্রমাণ। চাচা উদ্দীপ্ত স্বরে বললেন, এবার নির্বাচনের সময় কংগ্রেস ক্ষমতায় ছিল। নির্বাচনে কত সুবিধা ছিল তাদের। সুবিধা পেয়ে সুবিধা গ্রহণ না করা হচ্ছে এক ধরনের ক্রাইম। আসলে সোনিয়া গান্ধী রাজনীতির কিছুই বোঝেন না।
কি করা উচিত ছিল তার?
উচিত ছিল আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে নির্বাচন বিষয়ে 'টিপস' নেয়া। প্রধানমন্ত্রী তাকে বুঝিয়ে দিতে পারতেন কিভাবে প্রধান বিরোধী দলকে জাতীয় নির্বাচনে দূরে সরিয়ে রেখে একতরফা নির্বাচন করা যায়, কিভাবে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করা যায়। সোনিয়া গান্ধী বা তার ছেলে রাহুল গান্ধীর এসব টেকনিক্যাল বিষয়ে কোন ধারণাই নেই। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যদি 'একতরফা নির্বাচন ও সাফল্যের উপায়' এবং 'বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচনের সহজ পদ্ধতি' নামে দু'টো বই লিখতেন, তাতে দেশে-বিদেশে হৈচৈ পড়ে যেতো। কথাটা কিভাবে তার কানে তোলা যায়, আমি তাই-ই ভাবছি।
কিন্তু প্রধানমন্ত্রী কি তার এই 'সিক্রেট' জনগণের কাছে প্রকাশ করবেন?
তা একটা কথা বটে। চাচা আমতা আমতা করে বললেন।
চাচা! নরেন্দ্র মোদি সম্পর্কে কিছু বলুন।
কি বলবো! আমি ভেবে পাই না ভারতের জনগণ এমন একজন ব্যক্তিকে কিভাবে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বরণ করছে। তিনি একজন বাজে লোক।
নরেন্দ্র মোদি বাজে লোক! কি করেছেন তিনি?
নরেন্দ্র মোদি খালেদা জিয়াকে উস্কানি দিচ্ছেন।
কি বলছেন আপনি?
আমি ঠিকই বলছি। চাচা মুখ ভার করে বললেন, নরেন্দ্র মোদি পার্লামেন্টে একটা শক্তিশালী বিরোধী দল চান। এর অর্থ কি হতে পারে, তা বুঝতে পারো?
না তো!
এর অর্থ হচ্ছে, বাংলাদেশেও যেন একটি শক্তিশালী বিরোধী দল গঠিত হয়। খালেদা জিয়াকে শক্তিশালী বিরোধী দলের জন্য উস্কে দেয়া নরেন্দ্র মোদির লক্ষ্য।
বাংলাদেশে তো বিরোধী দল আছেই।
সেটা যে গৃহপালিত বিরোধী দল, তা তুমিও জানো, আমিও জানি। নরেন্দ্র মোদিরও তা জানা আছে। তিনি বিএনপিকে চাঙ্গা করার জন্য শক্তিশালী বিরোধী দলের কথা বলেছেন। নইলে ক্ষমতায় থেকে কেউ শক্তিশালী প্রতিপক্ষ চায় নাকি? আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তো জেনেশুনেই এমন বিরোধী দল তৈরি করেছেন, যারা উঠতে বললে ওঠে, বসতে বললে বসে।
কিন্তু বর্তমান বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ নিজেদের শক্তিশালী দেখানোর জন্য উঠেপড়ে লেগেছেন।
কি রকম? চাচার প্রশ্ন।
তিনি ঘোষণা দিয়েছেন অপহরণ গুম খুনের প্রতিবাদে তিনি রাজপথে নামবেন। আন্দোলন করবেন।
তার সঙ্গে তার দলের মন্ত্রীরাও কি রাজপথে নামবেন?
তারাও কি সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করবেন?
হতে পারে। নতুন ধরনের গণতন্ত্রে সবই সম্ভব। আমি বললাম, আপনারাই তো নতুন ধরনের গণতন্ত্রের কথা বলেছেন।
বলেছি। না বলে উপায় কি? ভারতের গণতন্ত্র আর বাংলাদেশের গণতন্ত্রে অনেক ফারাক। চাচা উদ্দীপ্ত হয়ে বললেন, বাংলাদেশের গণতন্ত্র অন্য কোন দেশের কার্বন কপি নয়। আমাদের গণতন্ত্রে বিরোধী দলকে অনেক বেশি ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। তুমি এটাকে ডান হাত ও বাঁ-হাতের গণতন্ত্র বলতে পারো।
মানে? মানে খুব সোজা। জাতীয় সংসদে ইয়েস-নো ভোটাভুটি হয়ে থাকে। ইয়েস মাসে ডান হাত তোলা, নো মানে বাঁ হাত।
কিন্তু বিরোধী দলকে অধিক ক্ষমতা কিভাবে দেয়া হলো?
অত অস্থির হইও না, ধৈর্য ধারণ করো। সবই তোমাকে বুঝিয়ে দিচ্ছি। সরকারি দল সংসদে কোন প্রস্তাব আনলে সরকারি দলের সদস্যরা ডান হাত তুলবেন। তাদের কিন্তু বাঁ হাত তোলার অধিকার নেই। কিন্তু বিরোধী দলের সদস্যরা কোন প্রস্তাবে ডান হাত তুলতে পারেন এবং বাঁ-হাতও তুলতে পারেন। কারণ তারা এদিকেও আছেন, ওদিকেও আছেন।
তারা যদি দু'হাতই তোলেন?
তুলতে পারেন। তাতে কিছু আসে যায় না। চাচা মৃদু হাস্যে বললেন, বিরোধী দলের হাত তোলা রেওয়াজ মাত্র। প্রস্তাব তো কণ্ঠ ভোটে এমনিতে পাস হয়ে যাবে।
নতুন ধরনের গণতন্ত্র সম্পর্কে চাচার কাছে যত কথা শুনছি, ততই বিস্মিত হচ্ছি। এই কনসেপ্টটা হিন্দু পুরাণে আছে 'অর্ধনারীশ্বর' নামে। অর্ধনারীশ্বরের একদিকে পুরুষের মুখ, অন্যদিকে নারীর মুখ। একই দেহে নারী ও পুরুষের কল্পনা অভিনব সন্দেহ নাই। সম্ভবত এটা থেকেই সংসদে রওশনীয় বিরোধী দলের কনসেপ্টের জন্ম। নরেন্দ্র মোদি যদি 'অর্ধনারীশ্বরে'র ন্যায় পরস্পরবিরোধী বিরোধী দলের এহেন কনসেপ্টের ব্যাপারটি জানতে পারেন, তাহলে ভারতের লোকসভার বিরোধী দলকে বাংলাদেশের বিরোধী দলের আদলে ঢেলে সাজানো হতে পারে। এটা হলে ভারতের পার্লামেন্ট বাংলাদেশের নতুন ধরনের গণতন্ত্রে অভিষিক্ত হবে। বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের জন্য এটা একটা প্লাস পয়েন্ট হতে পারে। কথাটা চাচাকে বলা উচিত হবে কিনা ভেবে চুপ হয়ে রইলাম।
চাচা বললেন, নরেন্দ্র মোদি এই উপমহাদেশের একটা বড় ক্ষতি করে দিয়েছেন।
উপমহাদেশের ক্ষতি করার সাধ্য কি তার? কিন্তু ক্ষতিটা কি ধরনের?
তিনি ঐতিহ্যগত গণতন্ত্রকে একেবারে নস্যাৎ করে দিয়েছেন।
এর মানে কি?
দীর্ঘদিন ধরে আমাদের তিনটি দেশে গণতন্ত্রের যে ঐতিহ্য গড়ে উঠেছিল, নরেন্দ্র মোদি তার মূলে কুঠারাঘাত করেছেন।
আমি কিন্তু এখনও কথাটা ঠিক বুঝতে পারলাম না।
বুঝিয়ে দিচ্ছি। বলে চাচা তার টেবিলের ড্রয়ার থেকে একটা ফটোগ্রাফ বের করলেন। আমি তাতে দেখলাম ভুট্টো, মুজিব ও ইন্দিরা গান্ধীর ছবি তাতে পাশাপাশি ছাপা রয়েছে। কিন্তু এ ছবিতে কিছুই বোঝা যায় না। আমি জিজ্ঞাসুনেত্রে চাচার মুখের দিকে তাকালাম। চাচা মৃদু হেসে প্রশ্ন করলেন, কিছু বুঝতে পারছো?
না তো!
এরা তিনজন হচ্ছেন তিনটি দেশের গণতন্ত্রের অতন্দ্র প্রহরী। প্রায় একই সময়ে ক্ষমতায় ছিলেন তারা। এদেরকে গণতন্ত্রের মহীরুহ বলা যায়। এদের সন্তানদের এবং পরবর্তীতে তাদের সন্তানদের হাতে গণতন্ত্রের ঐতিহ্যকে সমুন্নত রাখার সুযোগ তৈরি হয়েছিল। পরিবার তিনটির ছত্রছায়ায় গণতন্ত্র নিরাপদ ছিল। নরেন্দ্র মোদি এই তিনটি দেশের গণতন্ত্রের শিকড় উৎপাটন করেছেন। এর পরিণতি যে কত ভয়াবহ হতে পারে, তা চিন্তা করে আমি আতঙ্কিত।
এতে আতঙ্কের কি আছে?
কি বলছো তুমি? চাচা চোখের চশমা খুলে তা মুছতে মুছতে বললেন, রাহুল গান্ধী, সজীব ওয়াজেদ জয় আর বিলাওয়ালের ভবিষ্যৎ নিয়ে আমি ভাববো না?
__._,_.___