Banner Advertiser

Saturday, May 10, 2014

[mukto-mona] নারায়ণগঞ্জ হত্যাকাণ্ড ॥ উসকানি নয়, সহযোগিতা করুন



নারায়ণগঞ্জ হত্যাকাণ্ড ॥ উসকানি নয়, সহযোগিতা করুন
ড. আবদুল মান্নান চৌধুরী
এক সময় নারায়ণগঞ্জের সুখ্যাতি উপমহাদেশের সীমানা ছাড়িয়ে সুদূর যুক্তরাজ্য পর্যন্ত ব্যাপৃত ছিল। ব্রিটিশ শাসনামল থেকে এই সেদিন পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জ প্রাচ্যের ডান্ডি বলে পরিচিতি পেয়েছিল। গানে, কবিতায় বা নাটক-নভেলে তার উল্লেখ মিলে। আদমজী জুট মিল বন্ধ হবার পর নারায়ণগঞ্জে বিকল্প শিল্পকারখানা গড়ে ওঠে এবং দেশের অর্থনীতি বা বাণিজ্যে তার অবদান স্বীকৃত। তবে ত্বকী হত্যার পর থেকে নারায়ণগঞ্জের একটি কলঙ্কিত দিক ও সন্ত্রাসী চেহারা উদ্ঘাটিত হতে থাকে। নারায়ণগঞ্জের সিটি মেয়র সেলিনা হায়াত আইভী ও খান বাহাদুর ওসমান আলীর দৌহিত্রের মধ্যে ঠা-া লড়াই, সরব উচ্চারণ ও পরবর্তীতে গণমাধ্যমে প্রকাশিত ছিনতাই, চাঁদাবাজি, নদী দখল, বালি মহাল দখল, অবৈধ উপার্জন, হত্যা, গুম ও নিখোঁজের খবরে নারায়ণগঞ্জ সন্ত্রাসের জনপদ হিসেবে পাদপ্রদীপের আলোতে এসে যায়।
সম্প্রতি প্রথমে মানবাধিকার কর্মী সৈয়দা রেজোয়ানা হাসানের স্বামী ব্যবসায়ী এবি সিদ্দিক অপহৃত হলে পর এই অপকর্মের সঙ্গে রাজনীতি ও প্রশাসনের জড়িত থাকার বিষয়টি নিম্নস্বরে হলেও উচ্চারিত হতে থাকে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ত্বরিত হস্তক্ষেপে এবি সিদ্দিকের উদ্ধারে জনমনে একটি স্বস্তির ভাব ফিরে আসার পূর্বেই নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের কমিশনার ও প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামসহ ৭ জনের অপহরণ নতুন করে নারায়ণগঞ্জ দৃশ্যপটে চলে আসে। এই ৭ জনের মধ্যে একজন সজ্জন আইনজীবীও ছিলেন। গণমাধ্যমগুলো বিষয়টিকে সমাধিক গুরুত্ব দিয়ে তুলে ধরায় এখন সারাদেশে এমনকি দেশের বাইরে বসবাসকারী বাঙালী বা বাংলাদেশীদের অন্যতম প্রধান আলোচ্য বিষয় হচ্ছে নারায়ণগঞ্জ। 
মেয়র সেলিনা হায়াত আইভি ও এমপি শামীম ওসমানের বাকবিত-া ছাড়িয়ে বিষয়টি মেঠো বক্তা হতে শুরু করে সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, টকশোর অভিনেতা-অভিনেত্রীদের ডিঙ্গিয়ে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও বিরোধী রাজনৈতিক ও তার জোট বিএনপি পর্যন্ত এই আলোচনা ক্রমশ অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগে রূপ লাভ করে। বিএনপি ও তার জোট এই অপহরণ নিয়ে সরকারকে অভিযুক্ত করতে থাকলেও অপহৃত ব্যক্তিবর্গ ও অপহরণকারীদের তালিকায় সরকারী দল বা তার সমর্থকদের এবং বিএনপির সদস্যদের নাম আসতে থাকে। তারপর বিরোধী দল তাকে সরকারের অভ্যন্তরীণ কোন্দল, বিরোধী দলকে খামোশ করার পদ্ধতি কিংবা নিরাপত্তা বাহিনী তথা র‌্যাবের ক্রসফায়ারে হত্যার বিকল্প কৌশল হিসেবে অপহরণ, গুম ও হত্যাকে চিহ্নিত করে। এই বিতর্কের মাঝেই নারায়ণগঞ্জে সিভিল, পুলিশ প্রশাসন ও র‌্যাবে দৃশ্যমান পরিবর্তন আনা হয়।
নতুন জেলা প্রশাসক ও নতুন এসপি দায়িত্ব গ্রহণের পর অপহৃতদের মৃতদেহ উদ্ধার হয় এবং অপহরণ নেপথ্যের কাহিনী ও কুশীলবদের পরিচিতি উন্মোচিত হতে থাকে। বিভিন্ন মহল থেকে দায়িত্বপ্রাপ্তদের দায়িত্বে অবহেলা, অমনোযোগিতা ও যোগসাজশের কথা উচ্চারণের সঙ্গে সঙ্গে এই অপহরণের মূল নায়ক নূর হোসেন ও তার কথিত মাসোহারাভোগীদের নাম দৃশ্যপটে আসতে থাকে। কয়েকদিন পর নজরুল ইসলামের শ্বশুর ও স্ত্রী প্রকাশ্যেই র‌্যাব ও পুলিশকে অভিযুক্ত করে বিবৃতি-বক্তব্য দিতে শুরু করে। এক পর্যায়ে শামীম ওসমান ও আইভীর বক্তব্যে ভিন্নতা লক্ষ্য করা যায়। এই সময় একটি কথিত চিঠির ভাষ্যে প্রকাশিত হয়, হত্যাকারী নূর হোসেন গং শামীম ওসমানের কাছের লোক হলেও আসলে তারা শামীম ওসমানের কট্টর সমালোচক ও দুশমন। এই সময় থেকে শুরু করে শামীম ওসমান আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং একই সঙ্গে আইভী সমর্থকদের এই হত্যার জন্য দায়ী বলে বক্তব্য দিতে থাকেন। শামীম ওসমান এ কথাও বলেন যে, ঘটনা ঘটার ১০ মিনিটের মধ্যে তিনি বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী, র‌্যাব ও পুলিশকে অবগত করেন। তারপর শামীমের উপস্থিতিতেই নজরুলের শ্বশুর অপহরণকারী হিসেবে র‌্যাবের নাম উচ্চারণ করেন। এর আগে নিহত নজরুলের পরিবারের সদস্যগণ পুলিশের কর্তব্যে অবহেলা বা অপহরণকারী র‌্যাবের যোগসাজশকারী হিসেবে পুলিশ সুপারের নাম উল্লেখ করে। ইতোমধ্যে সেই পুলিশ সুপার নারায়ণগঞ্জ থেকে প্রত্যাহৃত হয়ে যে জায়গায় পদস্থ হয়েছেন তাকে সংবাদপত্র প্রাইজ পোস্টিং বলে চিহ্নিত করেছে। জেলা প্রশাসকের দায়দায়িত্বকে তারা কিছুটা খাটো করে দেখলেও তার নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে বর্তমান যুগ্ম-সচিবের দায়িত্ব গ্রহণকে প্রাইজ পোস্টিং বলেই গণমাধ্যম বিবেচনা করে। 
ইত্যবসরে প্রয়াত নজরুলের শ্বশুর অভিযোগ করেন যে নূর হোসেন গংয়ের কাছ থেকে পাওয়া ৬ কোটি টাকার বিনিময়ে র‌্যাব তাঁর জামাতাকে অপহরণ করে ও হত্যা করে। পরিবারের ভাষ্যমতে, এই টাকা ব্যাংকের মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যক্তির হিসেবে বিভিন্নভাবে জমা হয়েছে। 
পরিবারের ভাষ্যে জানা যায়, পুলিশ এবং বিশেষত পুলিশ সুপার তার একাংশ পেয়েছে বলেই তিনি অহেতুক সময় ক্ষেপণ করেছেন এবং র‌্যাবের দ্বারস্থ হতে বার বার পরামর্শ দিয়েছেন। পরিবারের সদস্যরা নাকি র‌্যাব ও তার স্থানীয় প্রধানের কাছে গিয়েছিলেন, পা জাপটে ধরে ১২ কোটি টাকার বিনিময়ে নজরুলের জীবিত উদ্ধার কামনা করেছিলেন। তাঁরা পুলিশ ও র‌্যাবের কাছে হেস্তনেস্ত হয়েছেন বলে প্রকাশ হলে নারায়ণগঞ্জের রাজনৈতিক দল, আইনজীবী সমিতি ও জনসাধারণ হরতাল করেছে, রাস্তায় থেকেছে, এমনকি র‌্যাব অফিস ঘেরাওয়ের পথ ধরে। 
সরকার র‌্যাবের ব্যাপারে অতিদ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছে। র‌্যাব তাদের তিন অফিসারকে প্রথমে নিজ নিজ বাহিনীতে ফিরিয়ে নিয়েছে এবং পরে তাদের চাকরি থেকে বরখাস্ত বা অকাল অবসর দিয়েছে। এ ব্যবস্থার ফলে জনরোষ হয়ত কমেছে। কিন্তু বিরোধী পক্ষীয়দের ধারণা অর্থাৎ 'র‌্যাবই অপহরণ ও হত্যার সঙ্গে জড়িত ছিল বলে' প্রচারণা ডালপালা গজাচ্ছে। বিভিন্ন প্রশাসনিক ও অন্যান্য কমিটির অনুসন্ধানে কি আসে তাও দেখার অপেক্ষায় না থেকে কারও কারও ধারণা হচ্ছে তদন্ত সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে না। তবে স্বতন্ত্র প্রশাসনিক তদন্ত কমিটি গঠিত হবার পরে এবং র‌্যাবের অভিযুক্তরা এখন চাকরিতে অধিষ্ঠিত নয় বলে তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত নিরপেক্ষ ও বস্তুনিষ্ঠ হতে পারে। র‌্যাব সদস্যদের ত্বরিত অপসারণও বিভিন্ন কথার জন্ম দিয়েছে। কিন্তু একেবারে নজরুলের শ্বশুরের দাবিতেই র‌্যাব ব্যবস্থা নিয়েছে সে কথা বলা অবান্তর। কারণ, এই ব্যবস্থা ভবিষ্যতে ব্যাক-ফায়ার করতে পারে বলে পর্যাপ্ত তথ্য ও পর্যালোচনার পরেই প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে তাদের ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে ধারণা করার কারণ আছে। তাদের ব্যাপারে পরবর্তী করণীয়ও নির্ধারিত হয়ে যাচ্ছে। এমনকি তাদের সঙ্গে অন্যদের যোগাযোগও সীমিত করা হয়েছে। 
পুলিশের সুপার বদলি হবার পরও দুই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাগণ তাদের অবস্থানেই ছিলেন। এই নিয়ে নজরুলের শ্বশুর বিভিন্ন কটূকথাও বলেছেন। ইত্যবসরে পুলিশের মহাপরিদর্শক হাসান মাহমুদ খন্দকার ঘোষণা দিয়েছেন, দায়িত্বে অবহেলার জন্য যে কাউকে ট্রান্সফার বা ক্লোজ করা হবে। তবে পুলিশ সুপার ও ডিসির নতুন পদায়নকে যখন প্রাইজ পোস্টিং হিসেবে গণমাধ্যমে বিবেচনা করা হচ্ছে তখন বিষয়টার প্রতি আরও নিবিড় নজর দেয়া প্রয়োজন। তা না হলে একাধিক ভাল পদক্ষেপ একটি বিতর্কিত পদক্ষেপের কারণে কার্যকারিতা হারাতে বাধ্য। 
অনেকে বলছেন, র‌্যাবের পথ অনুসরণ করে অন্তত তদন্তকালীন অবস্থায় পুলিশের অভিযুক্ত কর্মচারীদের সাময়িক বরখাস্ত করা যেতে পারে। এবারের দায়িত্বে অবহেলাই নয়, অতীতেও তিনি বা তারা এমন দায়িত্বহীনতা বা পক্ষপাতমূলক আচরণ করেছেন কিনা তাও তলিয়ে দেখা প্রয়োজন। অতীতে তিনি বা তারা অন্য কোন রাজনৈতিক দলের অনুসারী ছিলেন কিনা এবং অতীত প্রভুদের মঙ্গলার্থে অমনোযোগিতার পরিচয় দিয়ে সরকারকে বিতর্কে ঠেলে দিয়েছেন কিনা, তাও দেখা উচিত। বিপুলসংখ্যক পুলিশ কর্মকর্তা বা কর্মচারীকে বিভিন্ন জায়গায় বদলি তদন্তকে সহায়তা করবে বলে বিশ্বাস। 
নারায়ণগঞ্জের ঘটনা সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করেছে। দেশে-বিদেশে বিরূপ প্রতিক্রিয়ায় সহায়তা করেছে। বিরোধী পক্ষ সরকারের পদত্যাগ ও নতুন করে নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে, জোটের শরিকদের মাঝে মতদ্বৈধতা সৃষ্টি করেছে। বিরোধী পক্ষকে ছাড়িয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন উদ্বেগ প্রকাশ করে ত্বরিত ব্যবস্থা কামনা করেছে। 
এমতাবস্থায় প্রধানমন্ত্রী যখন তার দলের প্রভাবশালী সদস্য ও মন্ত্রীকে বিবেচনায় নিচ্ছেন না তখন পুলিশ প্রশাসন কেন তার সদস্যদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে পারবে না? পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজি) ও র‌্যাব প্রধান সোজাসাপটা মানুষ, তারা পক্ষপাতদুষ্ট নন বলেই জানি। তারা নিজেরা সরকারেরই অংশ এবং দায়িত্ববোধে সদাজাগ্রত; এটাও অনেকে মনে করেন। মাঠ পর্যায়ে যারা দায়িত্বে ছিলেন তাদের অবহেলা বা যোগসাজশের দায়িত্ব যেন সরকার প্রধানের ঘাড়ে না এসে পড়ে। উচ্চ আদালতের নির্দেশে প্রশাসনিক যে তদন্ত কমিটি হয়েছে তার প্রতি কারও অবিশ্বাস বা অনাস্থা থাকার কথা নয়। তাদের করণীয় নির্ধারিত হয়েই তারা মাঠে নেমেছেন এবং আশা করা যাচ্ছে তারা যাকেই সন্দেহভাজন মনে করবেন, তাদের বিরুদ্ধেই অনুসন্ধান চালাবেন। প্রয়োজনে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটিও গঠন করা যায়। তবে অহেতুক রাজনৈতিক বিতর্ক উস্কিয়ে দিয়ে এসব গুম ও হত্যার অনুসন্ধানে বিঘœ সৃষ্টি অবাঞ্ছিত কাজ। এসব থেকে বিরত থাকা ও রাখা একান্ত কাম্য। 
অভিযুক্ত নূর হোসেন ও তার সহযোগীরা কি করে অস্ত্রের লাইসেন্স পেল আর কি করে বাস হেল্পার থেকে দৈনিক ৫০ লাখ টাকা উপার্জনের সামর্থ্য অর্জন করল, তা তলিয়ে না দেখলে বরং তদন্ত অসম্পূর্ণই রয়ে যাবে। ইতোমধ্যে সুযোগ পেয়ে র‌্যাবকে একহাত নেবার পাঁয়তারা কেউ কেউ করছে। কিন্তু সাধারণ মানুষের জীবন, সম্পদ রক্ষার্থে ও দানবদের অবদমনে র‌্যাব প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করছে বলে সমাজের অধিকাংশ মানুষ মনে করে। অতএব এক মণ দুধে এক ফোঁটা গো-চনার আবির্ভাব যাতে প্রতিহত করা যায়, তার ব্যবস্থাও নিতে হবে। 
লেখক : মুক্তিযোদ্ধা ও শিক্ষাবিদ




__._,_.___


****************************************************
Mukto Mona plans for a Grand Darwin Day Celebration: 
Call For Articles:

http://mukto-mona.com/wordpress/?p=68

http://mukto-mona.com/banga_blog/?p=585

****************************************************

VISIT MUKTO-MONA WEB-SITE : http://www.mukto-mona.com/

****************************************************

"I disapprove of what you say, but I will defend to the death your right to say it".
               -Beatrice Hall [pseudonym: S.G. Tallentyre], 190





__,_._,___