ইতিবাচক বাংলাদেশে বিএনপির নেতিবাচক রাজনীতি
এম. নজরুল ইসলাম
বিশ্বের দৃষ্টি আজ বাংলাদেশের দিকে। এশিয়ার উদীয়মান অর্থনীতির দেশ হিসেবে নিজের অবস্থান শক্ত করার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি প্রতিদিনই উজ্জ্বল হচ্ছে। রাজনৈতিক সংঘাত, হানাহানি দূর হয়েছে। সর্বত্র লেগেছে উন্নয়নের ছোঁয়া। গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা যে একটি দেশের চেহারা অল্পদিনেই পাল্টে দিতে পারে, বাংলাদেশ তারই উদাহরণ তৈরি করেছে। বাংলাদেশ প্রমাণ করেছে, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা একটি দেশের অর্থনীতিকে একটি শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড় করিয়ে দিতে পারে। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সূচক বলছে, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে নতুন গতির সঞ্চার হয়েছে। হোক তা অনেকটাই রেমিট্যান্সনির্ভর, বাংলাদেশের অর্থনীতি ইতিবাচক গতিতেই এগোচ্ছে। জার্মানিভিত্তিক ডয়েচে ব্যাংকের একটি গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি বিনিয়োগ বাড়লে জিডিপি প্রবৃদ্ধি আরও বাড়বে। এ ছাড়া বিপুল জনসংখ্যা শুধু জনশক্তি নয়, তৈরি করেছে অভ্যন্তরীণ একটি বিশাল বাজারও, যা ব্যাপক বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে পারে বলে ঐ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। ঐ প্রতিবেদনে বাংলাদেশ সম্পর্কে বলা হয়েছে, রেমিট্যান্সের মধ্য দিয়ে জনসংখ্যাবহুল দেশটির প্রবৃদ্ধি জোরালো হচ্ছে। ১৯৯১ সাল থেকে সংসদীয় গণতন্ত্র অনুসরণ করছে বাংলাদেশ। জনসংখ্যা প্রায় ১৫ কোটি। বাংলাদেশের নমিনাল জিডিপি ১১৪ বিলিয়ন ডলার।
দেশের অর্থনীতির দিকে দৃষ্টি দিলে দেখা যাবে, বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শিল্প হচ্ছে তৈরি পোশাক শিল্প, যা মোট রফতানির ৬৭ শতাংশ। তবে মাত্র একটি শিল্পের ওপর এ নির্ভরশীলতা নিঃসন্দেহে রফতানির ক্ষেত্রে একটি বড় দুর্বলতা তৈরি করে রেখেছে। পোশাক রফতানির ৮০ শতাংশই যায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে। গত পাঁচ বছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি প্রায় ৬ শতাংশে স্থিতিশীল ছিল।
আবার ঝুঁকির দিকে যে নেই তা নয়। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বড় ধরনের দুটি ঝুঁকি হচ্ছে-জ্বালানি সরবরাহে সীমাবদ্ধতা এবং উচ্চ মূল্যস্ফীতি। সরবরাহের চেয়ে জ্বালানির চাহিদা অনেক বেশি থাকায় তা ঠিকভাবে বণ্টন করা যাচ্ছে না। পূরণ হচ্ছে না বিদ্যুতের চাহিদা। এতে শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। মূল্যস্ফীতি কমে প্রায় ১০ শতাংশে নেমে এলেও তা এখনও এশিয়ার মধ্যে বেশি। মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির অন্যতম কারণ জ্বালানির উচ্চমূল্য এবং কাঠামোগত অপর্যাপ্ততা, যা অনেকটা ভারতের মতো।
বাংলাদেশে সামষ্টিক অর্থনীতি তুলনামূলক স্থিতিশীল। বিশেষ করে বিপুল পরিমাণ রেমিট্যান্স আসায় বৈদেশিক বাণিজ্যের রিজার্ভ রয়েছে যথেষ্ট। যদি অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি বিনিয়োগ আরও বাড়ে, তবে জিডিপি প্রবৃদ্ধিও বাড়বে বলে আশা করা যায়। দেশে যে পরিমাণ রেমিট্যান্স আসে, তা অর্থনীতিতে শক্তিশালী ভূমিকা রাখছে। বাংলাদেশের জিডিপিতে রেমিট্যান্সের অনুপাত বিশ্বের সবচেয়ে বেশি।
ইউনাইটেড নেশনস কনফারেন্স অন ট্রেড এ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, সংক্ষেপে যে প্রতিষ্ঠানটি আঙ্কটাড নামে পরিচিতি, তারা একটি প্রতিবেদনে বাংলাদেশ সম্পর্কে বেশকিছু ইতিবাচক তথ্য উল্লেখ করেছে। আঙ্কটাডের প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, দশম সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে হরতাল-অবরোধসহ নানা সহিংস ঘটনায় গত বছরজুড়ে দেশের অর্থনৈতিক কর্মকা-ে স্থবিরতা নেমে এলেও বিদেশী বিনিয়োগে এর প্রভাব পড়েনি। বরং আগের কয়েক বছরের তুলনায় গত বছরটিতে বেশি বিনিয়োগ এসেছে। আঙ্কটাডের বিশ্ব বিনিয়োগ প্রতিবেদন-২০১৪ অনুযায়ী, ২০১৩ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে দেশে ১৫৯ কোটি ৯০ লাখ ডলারের সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগ বা এফডিআই এসেছে। এটা আগের বছরের তুলনায় ২৪ শতাংশ বেশি। ২০১২ সালে দেশে এফডিআই এসেছে ১২৯ কোটি ৩০ লাখ ডলার। এ সময়ে এফডিআইয়ের অন্তর্মুখী প্রবাহ যেমন বেড়েছে তেমনি বহির্মুখী প্রবাহ কমেছে। গত বছর এফডিআইয়ের বহির্মুখী প্রবাহ ছিল তিন কোটি ২০ লাখ ডলার, ২০১২ সালে যা ছিল পাঁচ কোটি ৩০ লাখ। কয়েক বছর ধরে যেসব এফডিআই প্রক্রিয়াধীন ছিল, এর একটি বড় অংশ গত বছর এসেছে। এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক অস্থিরতা খুব একটা বাধা হতে পারেনি। আঙ্কটাডের এই প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০১৩ সালে আসা এফডিআইর মধ্যে সম্পূর্ণ নতুন বিনিয়োগ ছিল ৫৪ কোটি ১০ লাখ ডলার, যা আগের বছরের তুলনায় ৯ শতাংশ বেশি। সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ এসেছে অর্জিত আয় পুনর্বিনিয়োগের মাধ্যমে। এই খাতে বিনিয়োগ হয়েছে ৬৯ কোটি ৭০ লাখ ডলার, যা ২০১২ সালের তুলনায় ১৯ শতাংশ বেশি। আর মূল কোম্পানি থেকে বাংলাদেশে কার্যরত কোম্পানিগুলো ঋণ বা আন্তঃকোম্পানি ঋণ এনেছে ৩৬ কোটি ১০ লাখ ডলার। এটা ২০১২ সালের তুলনায় ৭৪ শতাংশ বেশি।
খাতওয়ারি বিনিয়োগের তথ্যে দেখা যায়, গত বছর টেলিকমিউনিকেশন খাতে এফডিআই প্রবাহ কমেছে। ২০১৩ সালে এই খাতে বিনিয়োগ এসেছে ৩২ কোটি ৪০ লাখ ডলার। এর আগের বছর এটা ছিল ৩৭ কোটি ৫০ লাখ ডলার। তবে ব্যাংকিং খাতে এফডিআই বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি। ২০১২ সালে ব্যাংকিং খাতে এফডিআই এসেছিল ১৩ কোটি ৬০ লাখ ডলার। ২০১৩ সালে তা বেড়ে ৩২ কোটি ৭০ লাখ ডলার হয়।
এ অবস্থায় নতুন নতুন অনেক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী হয়ে উঠছে। ভিয়েতনামের মোট রফতানির পরিমাণ ১৩০ বিলিয়ন ডলার, যার মধ্যে ২১ বিলিয়ন রফতানি হয় ইলেকট্রনিকস পণ্য উৎপাদনকারী কোরিয়ান প্রতিষ্ঠান স্যামস্যাংয়ের পণ্য। প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশে একটি কারখানা করতে চায়। এ থেকেই অনুধাবন করা যায় বাংলাদেশ একটি বিনিয়োগ সম্ভাবনার দেশ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। আগামীতে বাংলাদেশে অনেক বিনিয়োগ সম্ভাবনা আছে। দেশের ব্যবসায়ী ও অর্থনীতি বিষয়ক বিশেষজ্ঞদেরও ধারণা আগামী শতকটি হবে বাংলাদেশের।
এর পাশাপাশি এশিয়ার বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক আরও দৃঢ় হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি জাপান ও চীন সফর করে এসেছেন। তাঁর এই সফরের ভেতর দিয়ে দুই দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক আরও গভীর হয়েছে। জাপান ও চীন বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের বন্ধু ও উন্নয়ন সহযোগী। প্রধানমন্ত্রীর সফরের সময় সহায়তা হিসেবে বাংলাদেশকে ছয় বিলিয়ন মার্কিন ডলার দেয়ার অঙ্গীকার করেছে জাপান। আগামী চার থেকে পাঁচ বছরে এ সহায়তা বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বিনিয়োগ করা হবে। প্রধানমন্ত্রীর চীন সফরের সময় দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক ভারসাম্যহীনতা কমিয়ে আনতে চীন সরকার সম্ভাব্য সব পদক্ষেপ গ্রহণ করবে বলে সে দেশের প্রেসিডেন্ট আশ্বাস দিয়েছেন। অতিসম্প্রতি বাংলাদেশে চীনের অনুদান ২৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে ৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে বৃদ্ধি পেয়েছে।
বাইরের বিশ্বে যখন বাংলাদেশের ভাবমূর্তি এভাবে উজ্জ্বল হচ্ছে, বাংলাদেশ নিজের অবস্থান দৃঢ় করছে তখন নিকট প্রতিবেশীদের সঙ্গেও বাংলাদেশের সম্পর্কও দৃঢ় হচ্ছে। ভারতে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সরকার পরিবর্তনের পর অনেকে ধারণা করেছিলেন, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের উষ্ণতায় ছেদ পড়বে। বাংলাদেশ প্রসঙ্গে ভারতের নতুন সরকারের দৃষ্টিভঙ্গী কেমন হবে, তা নিয়ে নানা রকম দ্বিধা-দ্বন্দ্ব কাজ করছিল বাংলাদেশের রাজনীতিবিদসহ নানা মহলের মধ্যে। ভারতের নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের তিন দিনের সফরের মধ্য দিয়ে এসব দ্বিধাদ্বন্দ্ব অনেকটাই কেটে গেছে। ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্পষ্ট করেই বলেছেন, গত কয়েক বছরে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক যতদূর এগিয়েছে, তার সরকার সেখান থেকে এই সম্পর্ক আর অনেকদূর এগিয়ে নিতে চায়। তিস্তার পানিবণ্টন এবং সীমান্তচুক্তি বাস্তবায়নের ব্যাপারেও তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের মানুষের আকাক্সক্ষা বাস্তবায়নে তার সরকার আন্তরিক এবং দ্রুততম সময়ে তা বাস্তবায়ন করা হবে। ভারতের নতুন সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে এটাই ছিল তার প্রথম পূর্ণাঙ্গ বিদেশ সফর, যাকে গণমাধ্যমে শুভেচ্ছা সফর হিসেবেই উল্লেখ করা হয়েছে। তা সত্ত্বেও সফর থেকে এটি স্পষ্ট হয় যে প্রতিবেশী বাংলাদেশের সঙ্গে সুসম্পর্কের বিষয়টিকে ভারত কতটা গুরুত্বপূর্ণ মনে করে। ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ভাষায়, 'দীর্ঘস্থায়ী, নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশের জন্য বিদ্যমান এ সহযোগিতা অব্যাহত রেখে তা আরও জোরদার করতে হবে।' বাংলাদেশের জন্যও এ কথা সমভাবে প্রযোজ্য। দুই প্রতিবেশীর উন্নয়ন ও স্থিতিশীলতা অবশ্যই পারস্পরিক সুসম্পর্কের ওপর বহুলাংশে নির্ভরশীল। তাই সম্পর্কের উত্তরোত্তর উন্নয়নে দুই দেশকেই সমানভাবে ও দায়িত্বশীলতার সঙ্গে কাজ করে যেতে হবে। দীর্ঘ সীমান্ত সংবলিত দুটি দেশের মধ্যে অনেক অমীমাংসিত সমস্যা থেকে যায় এবং সেগুলো প্রায়শ সুসম্পর্কের ভিতকে নড়বড়ে করে তোলে। ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আশ্বাস অনুযায়ী বিরোধগুলো কমিয়ে আনা হলে তা অবশ্যই সম্পর্ক জোরদার করবে।
জাতীয় ঐকমত্য সৃষ্টি করে বাংলাদেশের সঙ্গে শিগগিরই তিস্তা চুক্তি স্বাক্ষর এবং ভারতীয় সংসদে আলোচনার মাধ্যমে ১৯৭৪ সালের স্থলসীমান্ত চুক্তি ও এর ২০১১ সালের প্রটোকল বাস্তবায়ন করার জন্য আবারও আশ্বাস দিয়েছে ভারত। এর আগে মনমোহন সিংয়ের নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকার বাংলাদেশকে একাধিকবার এ আশ্বাস দিলেও তা বাস্তবায়ন করতে পারেনি। এবার নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় আসা নরেন্দ্র মোদি সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তার প্রথম একক সফরে বাংলাদেশে এসে বৈঠক করে এ আশ্বাস দিলেন। ভারত ত্রিপুরার পালাটানা থেকে বাংলাদেশকে ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত দেয়ার কথা জানিয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশীদের জন্য বিদ্যমান ভিসা ব্যবস্থার বাইরে ১৩ বছরের কম ও ৬৫ বছরের বেশি বয়সীদের 'মাল্টিপল ট্যুরিস্ট ভিসা' দেয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে।
সীমান্তে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সমন্বিত সীমান্ত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনার (সিবিএমপি) সুষ্ঠু পরিচালনার বিষয়ে ভারতীয় পক্ষ সন্তোষ প্রকাশ করে। সীমান্তে বাংলাদেশী হত্যার সংখ্যা শূন্যে নামিয়ে আনার ব্যাপারে আবারও ভারত সরকারের পক্ষ থেকে আশ্বাস পুনর্ব্যক্ত করা হয়। তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি দ্রুত সম্পন্ন করতে বাংলাদেশের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এ বিষয়ে অভ্যন্তরীণ ঐকমত্য গঠনের জন্য প্রচেষ্টা চলছে। তিনি তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
বাংলাদেশ স্থলসীমান্ত চুক্তি ও এর প্রটোকল বাস্তবায়নের অনুরোধ জানালে সুষমা স্বরাজ এ ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। অর্থাৎ ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের বাংলাদেশ সফরের ভেতর দিয়ে এটা প্রমাণিত হয়েছে, সরকার বদল হলেও ভারতের পররাষ্ট্রনীতিতে কোন পরিবর্তন আসেনি। ভারত বাংলাদেশের ওপর পূর্ণ আস্থা রাখতে চায়।
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত করতে গিয়েই নালিশ করে এসেছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। সেখানে গিয়ে তিনি নাকি বলেছেন, বাংলাদেশে কোন গণতন্ত্র নেই। গণতন্ত্র থাকা আর গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় বিএনপির অংশ না নেয়া যে এক কথা নয়, সম্মানিত প্রতিবেশীর কাছে নালিশ জানাতে গিয়ে এ কথাটি একেবারেই বিস্মৃত হয়েছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন কারও জন্য রুদ্ধ করা হয়নি। বিএনপি নিজের রাজনৈতিক কৌশলগত কারণে সে নির্বাচনে অংশ নেয়া থেকে বিরত থেকেছে। দলের এ সিদ্ধান্তটি যে একটি ঐতিহাসিক ভুল তা দলের সিনিয়র নেতারা, যারা রাজনৈতিক ধারাবাহিকতার ভেতর দিয়ে এসেছেন, তারা স্বীকার করবেন। সেই ভুল সিদ্ধান্তের খেসারত এখন বিএনপিকে দিতে হচ্ছে জনবিচ্ছিন্ন হয়ে। আর এটাকেই গণতন্ত্রহীনতা বলে চালিয়ে দিতে চাইছেন বিএনপি নেত্রী। কোন রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার সঙ্গে তিনি থাকলেই গণতন্ত্র নিশ্চিত হয়, এমন সংজ্ঞা কোথায় লেখা আছে? স্বাভাবিকভাবেই বিষয়টি দেশের রাজনৈতিক মহলে সমালোচিত হয়েছে। বিশেষ করে যখন যেচে সুষমা স্বরাজের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন খালেদা জিয়া। অনেক কাঠখড় পুড়িয়েই এই এ্যাপয়েন্টমেন্ট নেয়া হয়েছিল। সেখানে গিয়ে দেশের বিরুদ্ধে কথা বললে সেটা রাজনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত হয়। স্বাভাবিকভাবেই দেশের রাজনৈতিক মহলে এর একটি প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গেছে। সমালোচনা উঠেছে সব মহল থেকেই। এখন শাক দিয়ে মাছ ঢাকার মতো বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে খালেদা জিয়া সুষমা স্বরাজের কাছে কোন নালিশ করেননি। তাহলে সেদিন শমসের মবিন চৌধুরী বা ড. মঈন খান যা বলেছিলেন তা মিথ্যে? খালেদা জিয়া সুষমা স্বরাজের কাছে কোন মামলা করেননি এটা প্রমাণ করতে গিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, 'ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের সঙ্গে বৈঠকে রাজনৈতিক বিভিন্ন বিষয় আলোচনা হলেও বিএনপির পক্ষ থেকে কোন নালিশ জানানো হয়নি।' তার মতে, সেখানে স্টেটম্যান্ট অব ফ্যাক্ট হিসেবে বাংলাদেশে গণতন্ত্র নেই, দেশের ৯৫ ভাগ জনগণ ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বর্জন করেছে ইত্যাদি বিষয় আলোচনায় উঠেছে। এটা কোন নালিশ নয়। নালিশের প্রশ্নই ওঠে না।
প্রশ্ন ওঠে। এই 'স্টেটমেন্ট অব ফ্যাক্ট' কে উচ্চারণ করেছেন, এমন প্রশ্ন অবশ্যই করা যায়। 'বাংলাদেশে গণতন্ত্র নেই' এমন কথা তিনিই বলতে পারেন যিনি এটা বিশ্বাস করেন। মির্জা সাহেব আরও বলেছেন, বিদেশীদের কাছে নালিশের অভ্যাস বিএনপির নেই। এটাও মির্জা ফখরুলের সত্য ভাষণ নয়। খালেদা জিয়া এর আগেও দেশের বিরুদ্ধে সরাসরি কথা বলেছেন। আবার সেই কথা যখন সমালোচিত হয়েছে তখন তা অস্বীকার করেছেন। একটা উদাহরণ দেয়া যাক।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রকাশিত 'ওয়াশিংটন টাইমস'-এর মতামত কলামে ২০১৩ সালের ৩০ জানুয়ারি খালেদা জিয়ার নামে 'দ্য থ্যাংকলেস রোল ইন সেভিং ডেমোক্র্যাসি ইন বাংলাদেশ' শিরোনামে নিবন্ধটি প্রকাশিত হয়। পত্রিকাটির মতামত পাতায় ১০টি লেখার মধ্যে অনলাইন সংস্করণে বেগম জিয়ার লেখাটি ১০ নম্বর স্থানে প্রদর্শিত হয়। নিবন্ধে খালেদা জিয়া সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতি-দুঃশাসন, মানবাধিকার লঙ্ঘন, নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. ইউনূসের প্রতি ক্ষমতাসীন সরকারের অবিচার, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে মানবতাবিরোধী (যুদ্ধাপরাধী) বিচারের নামে বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতনের অভিযোগ ছাড়াও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ গোটা বিশ্বকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন আয়োজন ও গণতন্ত্রের ধারা অব্যাহত রাখার জন্য বাংলাদেশ সরকারের ওপর প্রভাব খাটানোর অনুরোধ জানিয়েছিলেন। একইসঙ্গে জিএসপি সুবিধা রাখা বা না রাখার বিষয়েও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয় ঐ নিবন্ধে। নিবন্ধটি প্রকাশের পর বিএনপির একাধিক সিনিয়র নেতাই খালেদা জিয়ার লেখাটির প্রশংসা করে বক্তব্যও দেন। সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিক্রয়া ব্যক্ত করা হলে তার জবাব দিতেও দেরি করেনি বিএনপি। 'খালেদা জিয়া নিবন্ধে সরকারের বিরুদ্ধে সত্য তথ্য তুলে ধরেছেন বলেই তাদের আঁতে ঘা লেগেছে'-তখন বিএনপির নেতাদের বক্তব্য এমনই ছিল। তারা তখন সমস্বরে বলতে চেয়েছিলেন, বিরোধীদলীয় নেত্রী দায়িত্ব নিয়েই নিবন্ধটি লিখেছেন। বিএনপির সিনিয়র নেতারা ওই নিবন্ধের পক্ষে তখন রীতিমতো সাফাই গেয়েছেন। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরীও তখন বলেছিলেন, প্রয়োজনে এমন প্রবন্ধ খালেদা জিয়া আরও লিখবেন। 'রাজনৈতিক ডিগবাজি বিশারদ' ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ একাধিক অনুষ্ঠানে বিএনপি নেতার নিবন্ধের পক্ষে সাফাই গেয়ে বলেছিলেন, গণমাধ্যমে নিবন্ধ লেখার জন্য রাষ্ট্রদ্রোহিতা হয় না। ভাল করে আইন-কানুন জেনে সবার কথা বলা উচিত। আসলে সরকারের দুর্নীতি ও দুঃশাসন নিয়ে খালেদা জিয়া সত্য কথা লেখায় সরকারী দলের আঁতে ঘা লেগেছে। খালেদা জিয়া তিনবারের প্রধানমন্ত্রী ও দু'বারের বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে দায়িত্ব নিয়েই এ সত্য প্রতিবেদন ছাপিয়েছেন, সারা পৃথিবীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। অর্থাৎ মওদুদ সাহেব তখন বলতে চেয়েছিলেন, ঐ প্রবন্ধটি লিখে বেগম খালেদা জিয়া তখন দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেন। কিন্তু কিছুদিন পরই ডিগবাজি। জিএসপি বাতিল হয়ে যাওয়ার পর বেগম খালেদা জিয়া লেখাটির স্বত্ব অস্বীকার করেন। অর্থাৎ লেখাটি যে তার নয়, তখন এটা বেশ জোরের সঙ্গেই বলতে থাকেন খালেদা জিয়া। অর্থাৎ নালিশ করে পরে তা অস্বীকার করার ইতিহাস বিএনপির আছে। যেমনটি এবারও ঘটেছে।
খালেদার এমন উক্তি আসলে নেতিবাচক রাজনীতির ফল। দেশ যখন একটি ইতিবাচক অবস্থায় এসেছে, উন্নয়নের সিঁড়ি বেয়ে এগিয়ে চলেছে। বাংলাদেশ এক নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করতে যাচ্ছে। এই ইতিহাসের সঙ্গী হতে পারত বিএনপিও। কিন্তু ভুল রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত বিএনপিকে ইতিবাচক রাজনীতির পথ থেকে ছিটকে দিয়েছে। ইতিবাচক রাজনীতির পথ থেকে ছিটকে গেলেই নেতিবাচক রাজনীতির পথ বেছে নিতে হবে, এমন কোন কথা নেই। কিন্তু সেই পথেই পা বাড়িয়েছে বিএনপি। শীর্ষ নেতৃত্বের ভুল সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েই কি বিএনপির নেতিবাচক রাজনীতি দেশকে আবার পেছনের দিকে নিতে চাইছে?
লেখক : অস্ট্রিয়া প্রবাসী, মানবাধিকারকর্মী
ও সাংবাদিক
দেশের অর্থনীতির দিকে দৃষ্টি দিলে দেখা যাবে, বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শিল্প হচ্ছে তৈরি পোশাক শিল্প, যা মোট রফতানির ৬৭ শতাংশ। তবে মাত্র একটি শিল্পের ওপর এ নির্ভরশীলতা নিঃসন্দেহে রফতানির ক্ষেত্রে একটি বড় দুর্বলতা তৈরি করে রেখেছে। পোশাক রফতানির ৮০ শতাংশই যায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে। গত পাঁচ বছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি প্রায় ৬ শতাংশে স্থিতিশীল ছিল।
আবার ঝুঁকির দিকে যে নেই তা নয়। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বড় ধরনের দুটি ঝুঁকি হচ্ছে-জ্বালানি সরবরাহে সীমাবদ্ধতা এবং উচ্চ মূল্যস্ফীতি। সরবরাহের চেয়ে জ্বালানির চাহিদা অনেক বেশি থাকায় তা ঠিকভাবে বণ্টন করা যাচ্ছে না। পূরণ হচ্ছে না বিদ্যুতের চাহিদা। এতে শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। মূল্যস্ফীতি কমে প্রায় ১০ শতাংশে নেমে এলেও তা এখনও এশিয়ার মধ্যে বেশি। মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির অন্যতম কারণ জ্বালানির উচ্চমূল্য এবং কাঠামোগত অপর্যাপ্ততা, যা অনেকটা ভারতের মতো।
বাংলাদেশে সামষ্টিক অর্থনীতি তুলনামূলক স্থিতিশীল। বিশেষ করে বিপুল পরিমাণ রেমিট্যান্স আসায় বৈদেশিক বাণিজ্যের রিজার্ভ রয়েছে যথেষ্ট। যদি অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি বিনিয়োগ আরও বাড়ে, তবে জিডিপি প্রবৃদ্ধিও বাড়বে বলে আশা করা যায়। দেশে যে পরিমাণ রেমিট্যান্স আসে, তা অর্থনীতিতে শক্তিশালী ভূমিকা রাখছে। বাংলাদেশের জিডিপিতে রেমিট্যান্সের অনুপাত বিশ্বের সবচেয়ে বেশি।
ইউনাইটেড নেশনস কনফারেন্স অন ট্রেড এ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, সংক্ষেপে যে প্রতিষ্ঠানটি আঙ্কটাড নামে পরিচিতি, তারা একটি প্রতিবেদনে বাংলাদেশ সম্পর্কে বেশকিছু ইতিবাচক তথ্য উল্লেখ করেছে। আঙ্কটাডের প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, দশম সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে হরতাল-অবরোধসহ নানা সহিংস ঘটনায় গত বছরজুড়ে দেশের অর্থনৈতিক কর্মকা-ে স্থবিরতা নেমে এলেও বিদেশী বিনিয়োগে এর প্রভাব পড়েনি। বরং আগের কয়েক বছরের তুলনায় গত বছরটিতে বেশি বিনিয়োগ এসেছে। আঙ্কটাডের বিশ্ব বিনিয়োগ প্রতিবেদন-২০১৪ অনুযায়ী, ২০১৩ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে দেশে ১৫৯ কোটি ৯০ লাখ ডলারের সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগ বা এফডিআই এসেছে। এটা আগের বছরের তুলনায় ২৪ শতাংশ বেশি। ২০১২ সালে দেশে এফডিআই এসেছে ১২৯ কোটি ৩০ লাখ ডলার। এ সময়ে এফডিআইয়ের অন্তর্মুখী প্রবাহ যেমন বেড়েছে তেমনি বহির্মুখী প্রবাহ কমেছে। গত বছর এফডিআইয়ের বহির্মুখী প্রবাহ ছিল তিন কোটি ২০ লাখ ডলার, ২০১২ সালে যা ছিল পাঁচ কোটি ৩০ লাখ। কয়েক বছর ধরে যেসব এফডিআই প্রক্রিয়াধীন ছিল, এর একটি বড় অংশ গত বছর এসেছে। এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক অস্থিরতা খুব একটা বাধা হতে পারেনি। আঙ্কটাডের এই প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০১৩ সালে আসা এফডিআইর মধ্যে সম্পূর্ণ নতুন বিনিয়োগ ছিল ৫৪ কোটি ১০ লাখ ডলার, যা আগের বছরের তুলনায় ৯ শতাংশ বেশি। সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ এসেছে অর্জিত আয় পুনর্বিনিয়োগের মাধ্যমে। এই খাতে বিনিয়োগ হয়েছে ৬৯ কোটি ৭০ লাখ ডলার, যা ২০১২ সালের তুলনায় ১৯ শতাংশ বেশি। আর মূল কোম্পানি থেকে বাংলাদেশে কার্যরত কোম্পানিগুলো ঋণ বা আন্তঃকোম্পানি ঋণ এনেছে ৩৬ কোটি ১০ লাখ ডলার। এটা ২০১২ সালের তুলনায় ৭৪ শতাংশ বেশি।
খাতওয়ারি বিনিয়োগের তথ্যে দেখা যায়, গত বছর টেলিকমিউনিকেশন খাতে এফডিআই প্রবাহ কমেছে। ২০১৩ সালে এই খাতে বিনিয়োগ এসেছে ৩২ কোটি ৪০ লাখ ডলার। এর আগের বছর এটা ছিল ৩৭ কোটি ৫০ লাখ ডলার। তবে ব্যাংকিং খাতে এফডিআই বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি। ২০১২ সালে ব্যাংকিং খাতে এফডিআই এসেছিল ১৩ কোটি ৬০ লাখ ডলার। ২০১৩ সালে তা বেড়ে ৩২ কোটি ৭০ লাখ ডলার হয়।
এ অবস্থায় নতুন নতুন অনেক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী হয়ে উঠছে। ভিয়েতনামের মোট রফতানির পরিমাণ ১৩০ বিলিয়ন ডলার, যার মধ্যে ২১ বিলিয়ন রফতানি হয় ইলেকট্রনিকস পণ্য উৎপাদনকারী কোরিয়ান প্রতিষ্ঠান স্যামস্যাংয়ের পণ্য। প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশে একটি কারখানা করতে চায়। এ থেকেই অনুধাবন করা যায় বাংলাদেশ একটি বিনিয়োগ সম্ভাবনার দেশ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। আগামীতে বাংলাদেশে অনেক বিনিয়োগ সম্ভাবনা আছে। দেশের ব্যবসায়ী ও অর্থনীতি বিষয়ক বিশেষজ্ঞদেরও ধারণা আগামী শতকটি হবে বাংলাদেশের।
এর পাশাপাশি এশিয়ার বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক আরও দৃঢ় হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি জাপান ও চীন সফর করে এসেছেন। তাঁর এই সফরের ভেতর দিয়ে দুই দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক আরও গভীর হয়েছে। জাপান ও চীন বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের বন্ধু ও উন্নয়ন সহযোগী। প্রধানমন্ত্রীর সফরের সময় সহায়তা হিসেবে বাংলাদেশকে ছয় বিলিয়ন মার্কিন ডলার দেয়ার অঙ্গীকার করেছে জাপান। আগামী চার থেকে পাঁচ বছরে এ সহায়তা বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বিনিয়োগ করা হবে। প্রধানমন্ত্রীর চীন সফরের সময় দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক ভারসাম্যহীনতা কমিয়ে আনতে চীন সরকার সম্ভাব্য সব পদক্ষেপ গ্রহণ করবে বলে সে দেশের প্রেসিডেন্ট আশ্বাস দিয়েছেন। অতিসম্প্রতি বাংলাদেশে চীনের অনুদান ২৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে ৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে বৃদ্ধি পেয়েছে।
বাইরের বিশ্বে যখন বাংলাদেশের ভাবমূর্তি এভাবে উজ্জ্বল হচ্ছে, বাংলাদেশ নিজের অবস্থান দৃঢ় করছে তখন নিকট প্রতিবেশীদের সঙ্গেও বাংলাদেশের সম্পর্কও দৃঢ় হচ্ছে। ভারতে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সরকার পরিবর্তনের পর অনেকে ধারণা করেছিলেন, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের উষ্ণতায় ছেদ পড়বে। বাংলাদেশ প্রসঙ্গে ভারতের নতুন সরকারের দৃষ্টিভঙ্গী কেমন হবে, তা নিয়ে নানা রকম দ্বিধা-দ্বন্দ্ব কাজ করছিল বাংলাদেশের রাজনীতিবিদসহ নানা মহলের মধ্যে। ভারতের নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের তিন দিনের সফরের মধ্য দিয়ে এসব দ্বিধাদ্বন্দ্ব অনেকটাই কেটে গেছে। ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্পষ্ট করেই বলেছেন, গত কয়েক বছরে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক যতদূর এগিয়েছে, তার সরকার সেখান থেকে এই সম্পর্ক আর অনেকদূর এগিয়ে নিতে চায়। তিস্তার পানিবণ্টন এবং সীমান্তচুক্তি বাস্তবায়নের ব্যাপারেও তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের মানুষের আকাক্সক্ষা বাস্তবায়নে তার সরকার আন্তরিক এবং দ্রুততম সময়ে তা বাস্তবায়ন করা হবে। ভারতের নতুন সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে এটাই ছিল তার প্রথম পূর্ণাঙ্গ বিদেশ সফর, যাকে গণমাধ্যমে শুভেচ্ছা সফর হিসেবেই উল্লেখ করা হয়েছে। তা সত্ত্বেও সফর থেকে এটি স্পষ্ট হয় যে প্রতিবেশী বাংলাদেশের সঙ্গে সুসম্পর্কের বিষয়টিকে ভারত কতটা গুরুত্বপূর্ণ মনে করে। ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ভাষায়, 'দীর্ঘস্থায়ী, নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশের জন্য বিদ্যমান এ সহযোগিতা অব্যাহত রেখে তা আরও জোরদার করতে হবে।' বাংলাদেশের জন্যও এ কথা সমভাবে প্রযোজ্য। দুই প্রতিবেশীর উন্নয়ন ও স্থিতিশীলতা অবশ্যই পারস্পরিক সুসম্পর্কের ওপর বহুলাংশে নির্ভরশীল। তাই সম্পর্কের উত্তরোত্তর উন্নয়নে দুই দেশকেই সমানভাবে ও দায়িত্বশীলতার সঙ্গে কাজ করে যেতে হবে। দীর্ঘ সীমান্ত সংবলিত দুটি দেশের মধ্যে অনেক অমীমাংসিত সমস্যা থেকে যায় এবং সেগুলো প্রায়শ সুসম্পর্কের ভিতকে নড়বড়ে করে তোলে। ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আশ্বাস অনুযায়ী বিরোধগুলো কমিয়ে আনা হলে তা অবশ্যই সম্পর্ক জোরদার করবে।
জাতীয় ঐকমত্য সৃষ্টি করে বাংলাদেশের সঙ্গে শিগগিরই তিস্তা চুক্তি স্বাক্ষর এবং ভারতীয় সংসদে আলোচনার মাধ্যমে ১৯৭৪ সালের স্থলসীমান্ত চুক্তি ও এর ২০১১ সালের প্রটোকল বাস্তবায়ন করার জন্য আবারও আশ্বাস দিয়েছে ভারত। এর আগে মনমোহন সিংয়ের নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকার বাংলাদেশকে একাধিকবার এ আশ্বাস দিলেও তা বাস্তবায়ন করতে পারেনি। এবার নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় আসা নরেন্দ্র মোদি সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তার প্রথম একক সফরে বাংলাদেশে এসে বৈঠক করে এ আশ্বাস দিলেন। ভারত ত্রিপুরার পালাটানা থেকে বাংলাদেশকে ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত দেয়ার কথা জানিয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশীদের জন্য বিদ্যমান ভিসা ব্যবস্থার বাইরে ১৩ বছরের কম ও ৬৫ বছরের বেশি বয়সীদের 'মাল্টিপল ট্যুরিস্ট ভিসা' দেয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে।
সীমান্তে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সমন্বিত সীমান্ত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনার (সিবিএমপি) সুষ্ঠু পরিচালনার বিষয়ে ভারতীয় পক্ষ সন্তোষ প্রকাশ করে। সীমান্তে বাংলাদেশী হত্যার সংখ্যা শূন্যে নামিয়ে আনার ব্যাপারে আবারও ভারত সরকারের পক্ষ থেকে আশ্বাস পুনর্ব্যক্ত করা হয়। তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি দ্রুত সম্পন্ন করতে বাংলাদেশের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এ বিষয়ে অভ্যন্তরীণ ঐকমত্য গঠনের জন্য প্রচেষ্টা চলছে। তিনি তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
বাংলাদেশ স্থলসীমান্ত চুক্তি ও এর প্রটোকল বাস্তবায়নের অনুরোধ জানালে সুষমা স্বরাজ এ ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। অর্থাৎ ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের বাংলাদেশ সফরের ভেতর দিয়ে এটা প্রমাণিত হয়েছে, সরকার বদল হলেও ভারতের পররাষ্ট্রনীতিতে কোন পরিবর্তন আসেনি। ভারত বাংলাদেশের ওপর পূর্ণ আস্থা রাখতে চায়।
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত করতে গিয়েই নালিশ করে এসেছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। সেখানে গিয়ে তিনি নাকি বলেছেন, বাংলাদেশে কোন গণতন্ত্র নেই। গণতন্ত্র থাকা আর গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় বিএনপির অংশ না নেয়া যে এক কথা নয়, সম্মানিত প্রতিবেশীর কাছে নালিশ জানাতে গিয়ে এ কথাটি একেবারেই বিস্মৃত হয়েছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন কারও জন্য রুদ্ধ করা হয়নি। বিএনপি নিজের রাজনৈতিক কৌশলগত কারণে সে নির্বাচনে অংশ নেয়া থেকে বিরত থেকেছে। দলের এ সিদ্ধান্তটি যে একটি ঐতিহাসিক ভুল তা দলের সিনিয়র নেতারা, যারা রাজনৈতিক ধারাবাহিকতার ভেতর দিয়ে এসেছেন, তারা স্বীকার করবেন। সেই ভুল সিদ্ধান্তের খেসারত এখন বিএনপিকে দিতে হচ্ছে জনবিচ্ছিন্ন হয়ে। আর এটাকেই গণতন্ত্রহীনতা বলে চালিয়ে দিতে চাইছেন বিএনপি নেত্রী। কোন রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার সঙ্গে তিনি থাকলেই গণতন্ত্র নিশ্চিত হয়, এমন সংজ্ঞা কোথায় লেখা আছে? স্বাভাবিকভাবেই বিষয়টি দেশের রাজনৈতিক মহলে সমালোচিত হয়েছে। বিশেষ করে যখন যেচে সুষমা স্বরাজের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন খালেদা জিয়া। অনেক কাঠখড় পুড়িয়েই এই এ্যাপয়েন্টমেন্ট নেয়া হয়েছিল। সেখানে গিয়ে দেশের বিরুদ্ধে কথা বললে সেটা রাজনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত হয়। স্বাভাবিকভাবেই দেশের রাজনৈতিক মহলে এর একটি প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গেছে। সমালোচনা উঠেছে সব মহল থেকেই। এখন শাক দিয়ে মাছ ঢাকার মতো বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে খালেদা জিয়া সুষমা স্বরাজের কাছে কোন নালিশ করেননি। তাহলে সেদিন শমসের মবিন চৌধুরী বা ড. মঈন খান যা বলেছিলেন তা মিথ্যে? খালেদা জিয়া সুষমা স্বরাজের কাছে কোন মামলা করেননি এটা প্রমাণ করতে গিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, 'ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের সঙ্গে বৈঠকে রাজনৈতিক বিভিন্ন বিষয় আলোচনা হলেও বিএনপির পক্ষ থেকে কোন নালিশ জানানো হয়নি।' তার মতে, সেখানে স্টেটম্যান্ট অব ফ্যাক্ট হিসেবে বাংলাদেশে গণতন্ত্র নেই, দেশের ৯৫ ভাগ জনগণ ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বর্জন করেছে ইত্যাদি বিষয় আলোচনায় উঠেছে। এটা কোন নালিশ নয়। নালিশের প্রশ্নই ওঠে না।
প্রশ্ন ওঠে। এই 'স্টেটমেন্ট অব ফ্যাক্ট' কে উচ্চারণ করেছেন, এমন প্রশ্ন অবশ্যই করা যায়। 'বাংলাদেশে গণতন্ত্র নেই' এমন কথা তিনিই বলতে পারেন যিনি এটা বিশ্বাস করেন। মির্জা সাহেব আরও বলেছেন, বিদেশীদের কাছে নালিশের অভ্যাস বিএনপির নেই। এটাও মির্জা ফখরুলের সত্য ভাষণ নয়। খালেদা জিয়া এর আগেও দেশের বিরুদ্ধে সরাসরি কথা বলেছেন। আবার সেই কথা যখন সমালোচিত হয়েছে তখন তা অস্বীকার করেছেন। একটা উদাহরণ দেয়া যাক।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রকাশিত 'ওয়াশিংটন টাইমস'-এর মতামত কলামে ২০১৩ সালের ৩০ জানুয়ারি খালেদা জিয়ার নামে 'দ্য থ্যাংকলেস রোল ইন সেভিং ডেমোক্র্যাসি ইন বাংলাদেশ' শিরোনামে নিবন্ধটি প্রকাশিত হয়। পত্রিকাটির মতামত পাতায় ১০টি লেখার মধ্যে অনলাইন সংস্করণে বেগম জিয়ার লেখাটি ১০ নম্বর স্থানে প্রদর্শিত হয়। নিবন্ধে খালেদা জিয়া সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতি-দুঃশাসন, মানবাধিকার লঙ্ঘন, নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. ইউনূসের প্রতি ক্ষমতাসীন সরকারের অবিচার, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে মানবতাবিরোধী (যুদ্ধাপরাধী) বিচারের নামে বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতনের অভিযোগ ছাড়াও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ গোটা বিশ্বকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন আয়োজন ও গণতন্ত্রের ধারা অব্যাহত রাখার জন্য বাংলাদেশ সরকারের ওপর প্রভাব খাটানোর অনুরোধ জানিয়েছিলেন। একইসঙ্গে জিএসপি সুবিধা রাখা বা না রাখার বিষয়েও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয় ঐ নিবন্ধে। নিবন্ধটি প্রকাশের পর বিএনপির একাধিক সিনিয়র নেতাই খালেদা জিয়ার লেখাটির প্রশংসা করে বক্তব্যও দেন। সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিক্রয়া ব্যক্ত করা হলে তার জবাব দিতেও দেরি করেনি বিএনপি। 'খালেদা জিয়া নিবন্ধে সরকারের বিরুদ্ধে সত্য তথ্য তুলে ধরেছেন বলেই তাদের আঁতে ঘা লেগেছে'-তখন বিএনপির নেতাদের বক্তব্য এমনই ছিল। তারা তখন সমস্বরে বলতে চেয়েছিলেন, বিরোধীদলীয় নেত্রী দায়িত্ব নিয়েই নিবন্ধটি লিখেছেন। বিএনপির সিনিয়র নেতারা ওই নিবন্ধের পক্ষে তখন রীতিমতো সাফাই গেয়েছেন। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরীও তখন বলেছিলেন, প্রয়োজনে এমন প্রবন্ধ খালেদা জিয়া আরও লিখবেন। 'রাজনৈতিক ডিগবাজি বিশারদ' ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ একাধিক অনুষ্ঠানে বিএনপি নেতার নিবন্ধের পক্ষে সাফাই গেয়ে বলেছিলেন, গণমাধ্যমে নিবন্ধ লেখার জন্য রাষ্ট্রদ্রোহিতা হয় না। ভাল করে আইন-কানুন জেনে সবার কথা বলা উচিত। আসলে সরকারের দুর্নীতি ও দুঃশাসন নিয়ে খালেদা জিয়া সত্য কথা লেখায় সরকারী দলের আঁতে ঘা লেগেছে। খালেদা জিয়া তিনবারের প্রধানমন্ত্রী ও দু'বারের বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে দায়িত্ব নিয়েই এ সত্য প্রতিবেদন ছাপিয়েছেন, সারা পৃথিবীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। অর্থাৎ মওদুদ সাহেব তখন বলতে চেয়েছিলেন, ঐ প্রবন্ধটি লিখে বেগম খালেদা জিয়া তখন দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেন। কিন্তু কিছুদিন পরই ডিগবাজি। জিএসপি বাতিল হয়ে যাওয়ার পর বেগম খালেদা জিয়া লেখাটির স্বত্ব অস্বীকার করেন। অর্থাৎ লেখাটি যে তার নয়, তখন এটা বেশ জোরের সঙ্গেই বলতে থাকেন খালেদা জিয়া। অর্থাৎ নালিশ করে পরে তা অস্বীকার করার ইতিহাস বিএনপির আছে। যেমনটি এবারও ঘটেছে।
খালেদার এমন উক্তি আসলে নেতিবাচক রাজনীতির ফল। দেশ যখন একটি ইতিবাচক অবস্থায় এসেছে, উন্নয়নের সিঁড়ি বেয়ে এগিয়ে চলেছে। বাংলাদেশ এক নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করতে যাচ্ছে। এই ইতিহাসের সঙ্গী হতে পারত বিএনপিও। কিন্তু ভুল রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত বিএনপিকে ইতিবাচক রাজনীতির পথ থেকে ছিটকে দিয়েছে। ইতিবাচক রাজনীতির পথ থেকে ছিটকে গেলেই নেতিবাচক রাজনীতির পথ বেছে নিতে হবে, এমন কোন কথা নেই। কিন্তু সেই পথেই পা বাড়িয়েছে বিএনপি। শীর্ষ নেতৃত্বের ভুল সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েই কি বিএনপির নেতিবাচক রাজনীতি দেশকে আবার পেছনের দিকে নিতে চাইছে?
লেখক : অস্ট্রিয়া প্রবাসী, মানবাধিকারকর্মী
ও সাংবাদিক
মঙ্গলবার, ১ জুলাই ২০১৪, ১৭ আষাঢ় ১৪২১
ZIA: The thankless role in saving democracy in Bangladesh
Corruption and stealing threaten a once-vibrant nation
By Begum Khaleda Zia
Wednesday, January 30, 2013
http://www.washingtontimes.com/news/2013/jan/30/the-thankless-role-in-saving-democracy-in-banglade/
__._,_.___