Banner Advertiser

Wednesday, July 23, 2014

[mukto-mona] জিয়ার যেসব কর্মকাণ্ডের কথা জানে না অনেকেই




  •  ২২ জুলাই ২০১৪ ০৪:৫৩

জিয়ার যেসব কর্মকাণ্ডের কথা জানে না অনেকেই

এই যে বলা হয় জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষক, তার তথ্যনিষ্ঠতা কতটুকু, সে সময়ে তৎকালীন সামরিক বাহিনীতে জিয়াউর রহমানের মর্যাদা ও ক্ষমতা কেমন ছিল, তার অবস্থান কোথায় ছিল, মুক্তিযুদ্ধের প্রতি আদৌ তার কোনো দায়বোধ ছিল কি না, স্বাধীনতার ঘোষণা দেওয়ার অধিকার ছিল কি না- সত্য অন্বেষণে এসব বিষয় খতিয়ে দেখাটা বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত জরুরি। ১৯৭১-এর তথ্য অনুযায়ী এটা পরিষ্কার যে, ২৫ মার্চ মধ্যরাত পর্যন্ত জিয়া পরিপূর্ণভাবে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একজন অনুগত সেনা কর্মকর্তা ছিলেন। সত্তরের নির্বাচনের পর দেশজুড়ে বিরাজমান অস্থিরতা, মুক্তিকামী বাঙালির স্বাধীনতা প্রস্তুতি- এসবের কিছুই তাকে প্রভাবিত করেনি। তিনি দিব্যি যাচ্ছিলেন চট্টগ্রাম বন্দরের দিকে, এমভি সোয়াত জাহাজ থেকে অস্ত্র খালাস করতে, যেখানে ইতোমধ্যে অসংখ্য বন্দর শ্রমিককে গুলি করে হত্যা করা হয় অস্ত্র খালাসে অস্বীকৃতির জন্য। বন্দরের পথে আগ্রাবাদ রাস্তায় ব্যারিকেড দেওয়া ছিল। সৈনিকরা সেসব পরিষ্কারে রত ছিলেন আর জিয়া ফুটপাতে পায়চারী করছিলেন। এসময় তার অধীনস্থ অফিসার খালেকুজ্জামান তাকে সংবাদ দেন যে, চট্টগ্রাম সেনানিবাসে অবস্থানরত বাঙালি সৈনিকদের নির্বিচারে হত্যা করা হচ্ছে। জিয়া তবুও দ্বিধান্বিত ছিলেন। যখন নিশ্চিত হন যে, তারও প্রাণাশঙ্কা রয়েছে তারপরই কেবল তিনি পক্ষ ত্যাগ করেন। তার ভাগ্য ভালো, তিনি যে ব্যাটালিয়নের উপ-অধিনায়ক ছিলেন সেই ৮ম ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টকে ইতোমধ্যে পাকিস্তানে বদলি করা হয়, ২০০ সৈন্য চলেও যায় এবং বাকি সৈনিকদের শহরের রাজনৈতিক পরিস্থিতি তাৎক্ষণিক সামাল দিতে ক্যান্টনমেন্টের বাইরে ষোলশহরে অস্থায়ীভাবে রাখা হয়। এটি ছিল ইস্টবেঙ্গলের কনিষ্ঠতম ব্যাটালিয়ন এবং সৈনিকরা সদ্য রিক্রুটকৃত। আগ্রাবাদ থেকে ফিরে সৈনিকদের সঙ্গে জিয়া চট্টগ্রাম শহরের দক্ষিণে নিরাপদ অবস্থানে চলে যান। অথচ চট্টগ্রাম শহরে তখন প্রতিরোধ যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। হালিশহরে ইপিআর ঘাঁটি ক্যাপ্টেন রফিকের নিয়ন্ত্রণে। বাঙালি পুলিশরাও নেমে পড়েছে। সঙ্গে হাজার হাজার মুক্তিকামী মানুষ রাস্তায়। ক্যান্টনমেন্টে পাকিস্তানের ২০ বেলুচ রেজিমেন্ট অবরুদ্ধ। মাত্র একটি ব্যাটালিয়ন তখন সেখানে। পদাতিক বাহিনীর প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টাল সেন্টারের (ইবিআরসি) বাঙালি কমান্ড্যান্ট লে. কর্নেল এম আর চৌধুরীসহ এক হাজার বাঙালি সৈনিককে ওই রাতেই হত্যা করা হয়। এই কর্নেল চৌধুরী মেজর জিয়াকে সঙ্গে নিয়ে মাত্র একদিন আগেই ক্যাপ্টেন রফিকের সঙ্গে ইপিআর-এর রেলওয়ে হিল দপ্তরে দেখা করেছিলেন। ওখানে মেজর জিয়া ক্যাপ্টেন রফিককে 'বিদ্রোহমূলক' কিছু না করার পরামর্শ দেন (লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে- রফিক-উল ইসলাম পৃষ্ঠা : ৬৬)। অর্থাৎ দেখা যায় সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পূর্ব দিনেও জিয়ার মধ্যে কেনো ইতিবাচক ভাবান্তর ছিল না।

যা হোক, ২৬ তারিখ প্রত্যুষে মেজর জিয়া তার ক্ষুদ্র সেনাদলকে নিয়ে নিরাপদ অবস্থানে পশ্চাদপসরণ করেন। কিন্তু এই কাপুরুষোচিত কাজটি না করে তিনি যদি তার সৈনিকদের নিয়ে চট্টগ্রাম সেনানিবাস ও রেজিমেন্টাল সেন্টারে আটকে পড়া বাঙালি সৈনিকদের উদ্ধারে অগ্রসর হতেন তাহলে বেলুচ রেজিমেন্টকে আত্মরক্ষায় চলে যেতে হতো এবং বাঙালি সৈনিকরা ক্যান্টনমেন্ট থেকে সরে আসার সুযোগ পেতেন। এটা খুবই সম্ভব ছিল, কারণ ২০ বেলুচ রেজিমেন্টের লোকবল তখন ছিল আনুমানিক ৪০০ এবং এর বিপরীতে বাঙালি সৈনিক ও ইপিআর জওয়ানদের সংখ্যা ২০০০-এর মতো। জিয়া এটা তো করলেনই না, বরং পশ্চাদপসরণে গিয়ে কক্সবাজার এবং কাপ্তাই থেকে ইপিআর-এর যেসব সৈনিক আসছিলেন তাদেরও কালুরঘাটে আটকে ফেলেন। এতে করে তারা চট্টগ্রাম শহরে অবস্থানরত ইপিআর বাহিনীর সঙ্গে যুক্ত হতে পারেনি। ফলে দেখা যায়, মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে মেজর জিয়ার জন্য বীরত্বগাথা তৈরির যে সুযোগ সৃষ্টি হয়েছিল সেটা প্রকারান্তে ভীরুত্বগাথায় রূপলাভ করে। তা শুধু নয়, এক সম্ভাবনাময় প্রতিরোধ যুদ্ধের মূলেও এটা কুঠারাঘাত করে। মেজর জিয়া তার সৈন্যবাহিনী নিয়ে পটিয়ার যে স্থানে অবস্থান নেন, সেই করইলডাঙ্গা গ্রামের কাছেই কালুরঘাটে ছিল চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্রের ট্রান্সমিশন সেন্টার। মেজর জিয়া সহজেই ওই কেন্দ্র দখল করতে পারতেন। কিন্তু করেননি। এটা কি তার ভীরুতা, সীদ্ধান্তহীনতা, দোদুল্যমানতা নাকি বাংলাদেশের প্রতি, মুক্তিযুদ্ধের প্রতি তার ক্ষমাহীন দায়বোধহীনতা। পরের ঘটনাসমূহে কি দেখা যায়? বেতারের কয়েকজন কর্মী তাকে করইলডাঙ্গা থেকে ধরে নিয়ে আসেন এবং তাদেরই অনুরোধে বেতার কেন্দ্র থেকে তিনি তার 'ঘোষণা' প্রদান করেন ২৭ তারিখ সন্ধ্যায়। প্রথমে বুঝে হোক বা না বুঝে হোক তিনি নিজেকে রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে ঘোষণা করে বসেন। পরপরই অবশ্য ঘোষণার টেক্সট পাল্টে ফেলতে বাধ্য হন। বাংলার অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধুই যে এদেশের প্রকৃত স্থপতি, তার একক নির্দেশেই যে সব কিছু পরিচালিত এবং তাকে ঘিরেই যে বাঙালির স্বপ্নসাধ আবর্তিত সেটা বুঝতে পেরে জিয়া 'মহান নেতা বঙ্গবন্ধুর পক্ষে' স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন।

তো ওই ঘোষণার বদৌলতে জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষক। পুরো বিষয়টার গুরুত্ব অনুধাবন করতে তখনকার জিয়াউর রহমানকে একটু চিনে নেওয়া দরকার। জন্মের পর পূর্ববাংলার কোথাও কখনো তার জীবন কাটেনি। তার পিতৃপুরুষের ভিটা বগুড়ার গাবতলীতে। এ ভিটার সঙ্গে তার পিতার তেমন সম্পর্কই ছিল না। প্রতিবেশীদের ভাষ্য অনুযায়ী জিয়াউর রহমানের একজন চাচার শুধু ভিটেমাটিতে যাতায়াত ছিল। জিয়ার পিতা মনসুর রহমান চাকরি করতেন কলকাতায়। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তির পর তিনি পূর্ববাংলায় না এসে চলে যান করাচি। ওখানেই শুরু জিয়ার শৈশব। ভর্তি হন একাডেমি স্কুলে, যেখানে মাতৃভাষা হিসেবে আবশ্যিক বিষয় পড়েছিলেন উর্দু। সেই শুরু। পরবর্তী সময়ে তাকে কখনো বাংলা পড়তে হয়নি। বাংলায় কথা বলারও খুব প্রয়োজন পড়েনি। ১৯৫২ সালে যখন রাষ্ট্রভাষা বাংলা আন্দোলন, তখন ওই বছরই তিনি আবশ্যিক ভাষা হিসেবে উর্দু নিয়ে প্রবেশিকা পাস করেন। পরে পেশাজীবন শুরু হয় সামরিক বাহিনীতে। সুতরাং দেখা যাচ্ছে তার জীবনের শুরুটা কোনোভাবেই বাংলার সঙ্গে সংযুক্ত ছিল না। আর এ কারণেই হয়ত বাংলা উচ্চারণে সাবলীলতা ছিল না। স্বাভাবিকভাবেই তার চিন্তা আর মননে বাংলার কৃষ্টি, সংস্কৃতি, বাংলার প্রতি মমত্ববোধ না থাকারই কথা। তার শৈশব, কৈশোর যেখানে কেটেছে, তার বেড়ে ওঠা যে সমাজে, ছাত্রজীবনে যে ভাষা তিনি আত্মস্থ করেন সেসবের প্রতিই তো তার মমত্ব থাকবে। এতে অস্বাভাবিকতা কিছু তো নেই। পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে চাকরি করে তিনি যে প্রফেশনালিজম আত্মস্থ করেন তাকে ছাপিয়ে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, বাংলার মানুষের স্বাধীনতার অভিপ্রায় এবং তার প্রতি দায়বদ্ধতা যদি জিয়ার মন খুঁড়ে জায়গা করতে না পারে তাহলে তো দোষ দেওয়া যায় না। আর এ কারণেই যখন তিনি ২৫ মার্চ রাতে একজন বাধ্য-অনুগত সৈনিকের মতো তার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার আদেশ পালন করতে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে অস্ত্র খালাস করতে রওনা হন তাতে বিস্ময়েরও কিছু নেই।

মুক্তিযুদ্ধের একটিমাত্র যে ঘটনা তাকে কিংবদন্তীতুল্য করে তোলে সেই তথাকথিত 'স্বাধীনতার ঘোষক' হওয়ার ক্ষেত্রেও তার নিজস্ব কোনো অবদান নেই, নেই কোনো কৃতিত্ব। শুধুমাত্র সময় এবং ঘটনার আনুকূল্য তাকে ওই অবস্থানে বসিয়েছে। পটিয়ার করইলডাঙ্গা থেকে স্বপ্রণোদিত হয়ে কালুরঘাটের বেতার ট্রান্সমিশন স্টেশনে যাননি। সৈন্যবাহিনী নিয়ে সেটা দখল করার প্রয়োজনীয়তাও অনুভব করেননি। বেতার কর্মীরা বরং তাকে সেখানে নিয়ে যান। তারাই তাকে দিয়ে স্বাধীনতার পক্ষে 'কিছু একটা ঘোষণা' করান যাতে মুক্তিকামী বাংলার মানুষ এই ভেবে আশ্বস্ত হয় যে, বাঙালি সৈনিকরা তাদের সঙ্গে রয়েছে। যদিও এ ঘটনার অনেক আগেই জয়দেবপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চুয়াডাঙ্গায় মেজর শফিউল্লাহ, মেজর খালেদ মোশাররফ, মেজর আবু ওসমান চৌধুরী প্রতিরোধ সংগ্রাম শুরু করে দেন। এদের সমরাঙ্গনে কোনো বেতারকেন্দ্র না থাকায় দেশের মানুষ তা জানতে পারেনি। জিয়া  ২৫ মার্চ রাতে যখন চট্টগ্রামে আগ্রাবাদের রাস্তায় 'বিদ্রোহ' করেন, তার অনেক আগেই জুনিয়র সহকর্মীরা অন্যসব জায়গায় বিদ্রোহ করেন। অর্থাৎ 'বিদ্রোহের' ক্ষেত্রে তিনি সর্বকনিষ্ঠ হওয়া সত্ত্বেও প্রচারটা পেয়ে যান ১০ কিলোওয়াট শক্তিসম্পন্ন একটি বেতার কেন্দ্রের সুবাদে। আর এতে করে তিনি 'স্বাধীনতার ঘোষক' বনে যান। অদ্ভুত ব্যাপার, দেশের স্থপতি একজন এবং ঘোষক আরেকজন। আর এ 'ঘোষক' কে? যিনি বাংলার মানুষের দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামে কখনো কোনোভাবে জড়িত ছিলেন না। যে বেতারকেন্দ্র থেকে তিনি ঘোষণাটি দেন বা পাঠ করেন সেটা তার দখলকৃতও নয়। এ ঘোষণাটি এমন এক বেতারকেন্দ্র থেকে প্রচারিত তখন যার সম্প্রচার ব্যাপ্তি এলাকা আকাশ দূরত্বে সর্বোচ্চ মাত্র একশ বর্গমাইলের মতো। অর্থাৎ এ ঘোষণা দেশের একটি ক্ষুদ্র অংশের কিছুসংখ্যক সেসব মানুষই কেবল শুনতে পান, যাদের রেডিও ছিল এবং সে বৈরী সময়ে তা সচল ছিল। জিয়াউর রহমান তখন একজন মেজর পদবিধারী জুনিয়র সেনা কর্মকর্তা যিনি একটি ব্যাটালিয়নের উপ-অধিনায়ক। লে. কর্নেল জানজুয়া ছিলেন অধিনায়ক। তিনি এই যে ব্যাটালিয়নটির দ্বিতীয় প্রধান ব্যক্তি ছিলেন সেটি বেঙ্গল পদাতিক-এর সদ্যপ্রতিষ্ঠিত ব্যাটালিয়ন যেখানে নতুন অভিষিক্ত সৈনিকরা অন্তর্ভুক্ত, যাদের প্রায় অর্ধেককে সেসময় পাকিস্তানে বদলি করা হয়ে গেছে, আর অবশিষ্টাংশ স্থানান্তরের জন্য অপেক্ষমাণ। জিয়াউর রহমানের ভাষায়, ১৯৭১ সালের এপ্রিল মাসে এ ব্যাটালিয়নকে পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। এজন্য আমাদের সেখানে পাঠাতে হয়েছিল দুইশ জওয়ানের একটি অগ্রগামী দল। অন্যরা ছিল একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ের সৈনিক। আমাদের তখন যেসব অস্ত্র দেওয়া হয়েছিল তার মধ্যে ছিল তিনশ পুরনো ৩.৩ রাইফেল, চারটা এলএমজি ও দুটি তিন ইঞ্চি মর্টার। গোলাবারুদের পরিমাণও ছিল নগণ্য। আমাদের এন্টি ট্যাঙ্ক বা ভারী মেশিনগান ছিল না (একটি জাতির জন্ম, ২৬/৩/৭৪, সাপ্তাহিক বিচিত্রা)। তাহলে 'স্বাধীনতার ঘোষক' জিয়াউর রহমানের তৎকালীন পরিচয়টা কেমন? প্রথমত, তিনি বাংলার মানুষের কাছে একেবারে অপরিচিত একজন ব্যক্তি, যার মন-মননে বাঙালিত্ব প্রায় অনুপস্থিত ছিল। দ্বিতীয়ত, মুক্তিযুদ্ধের সূচনালগ্নেও যিনি সম্পূর্ণভাবে পাকিস্তানের প্রতি দায়বদ্ধ ছিলেন এবং নিয়তি তাকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ঠেলে দেয়। তৃতীয়ত, মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে সুযোগ থাকা সত্ত্বেও তিনি চট্টগ্রামে প্রতিরোধযুদ্ধে সংযুক্ত না হয়ে সৈন্যসহ কাপুরুষের মতো পশ্চাদপসরণ করে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যান। চতুর্থত, তিনি সেসময় একটি ব্যাটালিয়নের খণ্ডাংশের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড যেটা মুক্তিযুদ্ধের বিশাল ক্যানভাসে প্রায় গুরুত্বহীন একটি অবস্থান। পঞ্চমত, কথিত ওই ঘোষণার অনেক আগেই পেশাদার বাঙালি সৈন্যরা বিভিন্ন স্থানে যুদ্ধ শুরু করে দেন এবং যে বেতারকেন্দ্র থেকে ওই ঘোষণা সম্প্রচার হয় তার ক্যাচমেন্ট এরিয়া ছিল অত্যন্ত কম, ফলে ওই ঘোষণা যে মানুষকে যুদ্ধোন্মুখ করে তোলে তা মনে করার কোনো কারণ নেই। সবশেষে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ছিল একটি দীর্ঘ ধারাবাহিক সংগ্রামের চূড়ান্ত রূপ, যার প্রধান রূপকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৭০-এর নির্বাচনে বাংলার মানুষ তাকেই দেশের মানুষের পক্ষে সকল সিদ্ধান্ত গ্রহণের ম্যান্ডেট দেয়। তিনিই ছিলেন বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা। মওলানা ভাসানীর মতো সর্বজন শ্রদ্ধেয় জননেতাও নিজে স্বাধীনতার ঘোষণা দেননি, বরং বঙ্গবন্ধুকেই স্বাধীনতা ঘোষণা দেওয়ার আহ্বান জানান। বাস্তবতার এ প্রেক্ষাপটে মুক্তিযুদ্ধের অনুকূল মেরুতে না থাকা একজন অখ্যাত জুনিয়র সেনা অফিসারের 'স্বাধীনতার ঘোষক' বনে যাওয়া হাস্যকরই শুধু নয়, ইতিহাসের চরম বিকৃতিও।

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালেও মেজর জিয়ার অধিনায়কত্বে গৌরবের তেমন কিছু পাওয়া যায়নি। বরং যুদ্ধক্ষেত্রে তার মতো অপর দুই ব্রিগেড অধিনায়ক শফিউল্লাহ ও খালেদ মোশাররফের চেয়ে তিনি নিষ্প্রভই ছিলেন। এখানে উল্লেখ্য, মুক্তিযুদ্ধের ঊষালগ্নে কে এম শফিউল্লাহর নেতৃত্বাধীন দ্বিতীয় ইস্টবেঙ্গল এবং খালেদ মোশাররফের চতুর্থ ইস্টবেঙ্গল ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় একত্রিত হয়ে সিলেটের তেলিয়াপাড়ায় চলে আসে এবং সেখানে সদর দপ্তর স্থাপন করে। ঠিক একই সময়ে মেজর জিয়া তার সেনাদল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে রামগড়ে অবস্থান করছিলেন। তার অষ্টম বেঙ্গলের সৈনিকরা নেতৃত্বহীন অবস্থায় পাকিস্তান সরকারের আশ্রয়পুষ্ট বিদ্রোহী ভারতীয় মিজো গেরিলা ও পাকিস্তানি সৈন্যদের যুগপৎ আক্রমণে প্রচণ্ডভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অবশেষে বিএসএফ-এর সহায়তায় তারা সীমান্ত অতিক্রম করে। এপ্রিলের ৪ তারিখ তেলিয়াপাড়ায় কর্নেল ওসমানীসহ বাঙালি সেনা কর্মকর্তারা যুদ্ধকৌশল নির্ধারণে আলোচনায় বসেন। তারা বাংলাদেশকে ৪টি সামরিক অঞ্চলে বিভক্ত করেন। জিয়াউর রহমানের দায়িত্বে পড়ে চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও নোয়াখালী জেলার একাংশ। শফিউল্লাহ, খালেদ মোশাররফ ও আবু ওসমানকেও অনুরূপ দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু জুলাই মাস পর্যন্ত জিয়ার নেতৃত্বাধীন অঞ্চলে উল্লেখযোগ্য কোনো অপারেশন হয়নি। যদিও দেশজুড়ে মুক্তিযোদ্ধারা অসংখ্য বীরত্বপূর্ণ গেরিলা আক্রমণ করেন। প্রবাসী মুজিবনগর সরকার অবশেষে মুক্তিযুদ্ধকে সুসংগঠিত করতে কলকাতায় ৮নং পার্ক স্ট্রিটে সেনা কর্মকর্তাদের নিয়ে এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করেন। জুলাইয়ের ১১ থেকে ১৭ তারিখ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত ওই সম্মেলন সভায় জিয়া কর্নেল ওসমানীকে বাদ দিয়ে কর্মরত বাঙালি সেনা কর্মকর্তাদের নিয়ে 'ওয়ার কাউন্সিল' গঠনের প্রস্তাব করেন। যা কর্নেল ওসমানীকে ক্ষীপ্ত করে ফেলে। তিনি পদত্যাগও করেন। অবশেষে অন্য সামরিক কর্মকর্তারা এ প্রস্তাবকে নাকচ করে দিলে জিয়া আর এগোননি। ওসমানীকেও পদত্যাগ থেকে নিবৃত্ত করা হয়। এখানেও জিয়াউর রহমান জনপ্রতিনিধিদের প্রতি এক ধরনের অবজ্ঞা প্রদর্শনের ঔদ্ধত্য দেখান। এতে স্পষ্ট বোঝা যায় যে, তিনি মুক্তিযুদ্ধের আদর্শিক চেতনাবোধ লালন করতেন না এবং জনআকাঙ্ক্ষা ও জনমতের প্রতিও বিশ্বস্ত ছিলেন না। সেনা নায়কদের ওই সম্মেলনেই মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার জন্য বাংলাদেশকে ১১টি সেক্টরে বিভক্ত করা হয়। প্রতিটি সেক্টরের জন্য একেকজন সেক্টর কমান্ডারকেও নিয়োগ দেওয়া হয়। একই সঙ্গে তিনটি ব্রিগেডও গঠন করা হয়। তিনজন অধিনায়কের নামের আদ্যক্ষর দিয়ে যথা- জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বাধীন জেড ফোর্স, শফিউল্লাহর 'এস' ফোর্স ও খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে 'কে' ফোর্স গঠন করা হয়। এখানে আরেকটি বিষয় প্রণিধানযোগ্য যে, ব্রিগেড পরিচালনার পাশাপাশি খালেদ মোশাররফকে ২নং এবং শফিউল্লাহকে ৩নং সেক্টরের দায়িত্বও দেওয়া হয়, কিন্তু জিয়ার নেতৃত্বে কোনো সেক্টর রাখা হয়নি। তার কর্তত্বাধীন ইতোপূর্বেকার চট্টগ্রাম এলাকা অর্পণ করা হয় মেজর রফিকুল ইসলামের কাছে। পরবর্তী সময়ে দেখা যায় এসব ব্রিগেড নয় বরং সেক্টরগুলোই সক্রিয় ছিল। স্বাভাবিকভাবে পুরো যুদ্ধ সময়ে জিয়া 'রিয়াদে' বসেই মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তেসরা ডিসেম্বর ভারতের সেনাবাহিনী সর্বাত্মক যুদ্ধে জড়িয়ে পড়লে সবগুলো ব্রিগেডই অকার্যকর হয়ে পড়ে। ব্রিগেডগুলো সক্রিয় না হওয়ার অরেকটি বড় কারণ, দায়িত্বপ্রাপ্ত  মেজরদের ব্রিগেড পরিচালনায় কোনো অভিজ্ঞতা ছিল না, তা থাকার কথাও নয়। র‍্যাঙ্ক অনুযায়ী একজন মেজর কোনো একটি ব্যাটালিয়নের সেকেন্ড ইন কমান্ড হয়ে থাকেন। ব্রিগেড থাকে ন্যূনপক্ষে একজন ওয়ান স্টার জেনারেলের নিয়ন্ত্রণে।

বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর নানা কৌশলে, নানা ঘটনাপ্রবাহের জন্ম দিয়ে জিয়াউর রহমানের রাষ্ট্রপতি হওয়ার পথ পরিক্রমায়ও তার চারিত্রিক, স্বভাবজাত ও মননবৈশিষ্ট্য ধরা পড়ে। বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুতে তিনিই সবচেয়ে বড় সুবিধাভোগী। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পূর্ব পরিকল্পনা তিনি যে জানতেন তা খুনি ফারুকের সাক্ষাৎকারেই জানা যায়। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ডেপুটি চিফ অব স্টাফ ছিলেন তখন জিয়াউর রহমান। হত্যা পরিকল্পনাটি যখন তাকে জানানো হয়, তিনি নিজে জড়িত হতে অপারগতা জানালেও তাদের সাফল্য কামনা করেন। পঁচাত্তরের পনেরই আগস্টের মর্মান্তিক ঘটনার পর আরও নৃশংসতা, ষড়যন্ত্র আর নাটকীয়তার মধ্য দিয়ে জিয়া ক্ষমতায় আসীন হন। আর এ সময়ের সবগুলো দৃশ্যপটের মূল কুশীলব ছিলেন জিয়া। অসম্ভব ধূর্ততায় তিনি তার আসন সংহত করেন। অনৈতিকভাবে সংবিধানের মূলনীতি পরিবর্তন করে মুক্তিযুদ্ধের মূল আদর্শ থেকে রাষ্ট্রকে সরিয়ে আনেন। সেনা আইন পরিবর্তন করে নিজ পদবির জ্যেষ্ঠতা অর্জনসহ রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচনকে আইনসিদ্ধ করেন। তথাকথিত বহুদলীয় গণতন্ত্রের দোহাই পেড়ে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রকাশ্য প্রতিপক্ষসহ সব সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীকে শুধু রাজনৈতিক অধিকার দেননি, ক্ষমতার অংশীদারও করেন। বঙ্গবন্ধু হত্যাকারী দলের ১২ সদস্যকে কূটনৈতিক পদে নিয়োগ দিয়ে পুরস্কৃত করেন। দেশের ১১টি বৃহদায়তন শিল্প প্রতিষ্ঠান পাকিস্তানি মালিকদের ফিরিয়ে দেন। বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার পর তিনি সেনাপ্রধান হন এবং এরপর থেকে অত্যন্ত ঠান্ডা মাথায় এগুতে থাকেন। পথের কাঁটা সরিয়ে দিতে তিনি চরম নৃশংস হতে কখনো দ্বিধা করেননি। পঁচাত্তরের নভেম্বর বিপ্লবে তাকে রক্ষাকারী কর্নেল তাহেরকে ফাঁসিতে লটকাতে তার অন্তর একটুও কাঁপেনি। তার ক্ষমতাকালে সেনা কর্মকর্তাসহ কয়েক হাজার সৈনিককে তার নির্দেশে হত্যা করা হয়। পঁচাত্তরের তেসরা নভেম্বর সংঘটিত জেল হত্যাকাণ্ড তদন্ত করার জন্য খোন্দকার মুশতাক যে কমিটি গঠন করেছিলেন, তা তিনি বাতিল করে দেন। তৎকালীন প্রধান বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েমকে রাষ্ট্রপতি ও প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের পদে বসিয়ে সেনাপ্রধান হিসেবে নিজে উপপ্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হন এবং প্রকৃত ক্ষমতা নিজের হাতেই রাখেন। এক বছর পর ১৯৭৬-এর ২৮ নভেম্বর নিজেই প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং এর কিছুদিন পর ১৯৭৭-এর ২১ এপ্রিল বিচারপতি সায়েমকে বঙ্গভবন থেকে সরিয়ে দেন। এভাবে পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর থেকে রাষ্ট্রপতি পদে জিয়াউর রহমানের অভিষিক্ত হওয়ার মধ্যকার সময়টুকু ষড়যন্ত্র আর নৃশংসতায় ভরা এক বিষাদময় অধ্যায়।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিছক একটি স্বাধীনতা যুদ্ধ ছিল না। শুধু পাকিস্তানি নিগড় থেকে দেশকে মুক্ত করাই লক্ষ্য ছিল না, এটা ছিল একটি আদর্শিক মুক্তযুদ্ধ। দ্বিজাতিতত্ত্বের ওপর প্রতিষ্ঠিত পাকিস্তানের ঈমান, একতা, শৃঙ্খলার মতো নীতি দিয়ে ভৌগোলিকভাবে বিচ্ছিন্ন একটি বহুজাতিক রাষ্ট্রকে 'ঈমানী জোশে একতাবদ্ধ' রাখার যে ব্যর্থ প্রয়াস ছিল তাকে সরিয়ে বাঙালি চেতনাবোধে উদ্বুদ্ধ সমতাভিত্তিক একটি অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র গঠন ছিল মুক্তিযুদ্ধের মৌল আদর্শ। জিয়া মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করলেও এ আদর্শ যে ধারণ করেননি, রাষ্ট্রক্ষমতা গ্রহণ করেই তার কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে তিনি তা বুঝিয়ে দেন। তিনি 'বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা' বলে গলাবাজি করা হয়। কিন্তু এ আবরণে তিনি মুক্তিযুদ্ধের শত্রুদের রাজনীতি করার সুযোগ করে দেন। পৃথিবীতে যেসব দেশে সশস্ত্র সংগ্রামের মধ্যদিয়ে স্বাধীনতা এসেছে তার কোনোটিতেই শত্রুপক্ষকে রাজনীতি করতে দেওয়া হয়নি। গত শতাব্দীর পঞ্চাশের দশক থেকে আশির দশক পর্যন্ত এশিয়া, আফ্রিকা এবং লাতিন আমেরিকার যেসব দেশে সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে শৃঙ্খলমুক্তি ঘটেছে সবগুলোতেই একই চিত্র। যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী দল বা জোট রাষ্ট্রক্ষমতা পরিচালনা করেছে। সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীনতাকে সংহত করতে এটাই পথ। এর ব্যত্যয় ঘটলে কি হয় তার উদাহরণ বাংলাদেশ এবং এ ধারার স্থপতি মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান। 'মুক্তি' শব্দটার প্রতিই জিয়ার অনীহা ছিল। তাই ক্ষমতায় এসে সামরিক ফরমানের মাধ্যমে তিনি সংবিধানে উল্লিখিত 'জাতীয় মুক্তির জন্য ঐতিহাসিক সংগ্রাম'-এর জায়গায় 'জাতীয় স্বাধীনতার জন্য ঐতিহাসিক যুদ্ধ' সন্নিবেশ করেন। বাংলাদেশ বেতার পাকিস্তানি আদলে রেডিও বাংলাদেশ এবং জয় বাংলাকে বাংলাদেশ জিন্দাবাদ করা হয় বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পরপরই। জিয়া এগুলোকে বহাল রাখেন। জাতীয় সঙ্গীত পরিবর্তনের পদক্ষেপ নেন। পতাকার মধ্যকার লাল সূর্যকে কমলা রঙের করতে 'পাইলট কর্মসূচি' হিসেবে ১৯৭৮ সালের ১৬ ডিসেম্বর কয়েকটি সরকারি ভবনে 'সবুজ জমিনে কমলা রঙের বৃত্ত' সম্বলিত পতাকা উত্তোলন করা হয়। কিন্তু পতাকার অবমাননার বিরুদ্ধে প্রবল প্রতিবাদের পর জিয়া আপাতত ওই পরিকল্পনা বাদ দেন (সানরাইজ, লন্ডন, এপ্রিল-মে সংখ্যা ১৯৭৯)। বিপ্লবের প্রতীক লাল রঙকে জিয়ার ভয় ছিল। ১৯৭১ সালে কালুরঘাটের বেতার কেন্দ্রে গিয়ে তিনি 'বিপ্লবী বেতার কেন্দ্র' নাম থেকে 'বিপ্লবী' শব্দটি তুলে দিতে অনুরোধ করেন। 
 
খোন্দকার মুশতাক চেয়েছিলেন বাংলাদেশকে মুসলিম বাংলায় রূপান্তর করতে। চেষ্টাও শুরু করেছিলেন। কিন্তু শেষ অবধি যাওয়ার সময় পাননি। তবে ওই আদলেই জিয়াউর রহমান 'বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ' প্রবর্তন করেন। ১৯৭৭-এর ২১ এপ্রিলের সামরিক ফরমান বলে তিনি সংবিধানে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ অন্তর্ভুক্ত করেন। এর অবশ্য একটা 'শানে নযুল' আছে। এ সময় ইত্তেফাক পত্রিকায় খন্দকার আব্দুল হামিদ 'স্পষ্টভাষী' ছদ্মনামে উপসম্পাদকীয় লিখতেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর দোসর এই ব্যক্তিটি শহীদ সাংবাদিক সিরাজউদ্দিন হোসেন হত্যাকাণ্ডের অন্যতম আসামি। একাত্তরে পাকিস্তানি প্রতিনিধি দলের সদস্য হিসেবে তিনি জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধাচরণ করেন। বঙ্গবন্ধু নিহত হলে তিনি বিবর থেকে বেরিয়ে আবার তার পুরনো কর্মস্থল ইত্তেফাকে যোগ দেন। ১৯৭৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বাংলা একাডেমিতে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের ওপর একটা ক্ষুদ্র নিবন্ধ উপস্থাপন করে জিয়াউর রহমানের সুদৃষ্টি আকর্ষণে সক্ষম হন। এদিকে প্রায় একই সময়ে পশ্চিমবঙ্গের বসন্ত চ্যাটার্জি তার 'ইনসাইড বাংলাদেশ টুডে' গ্রন্থে বাংলাদেশের মানুষকে বাংলাদেশি হিসেবে পরিচিত হওয়াটাই সঙ্গত বলে যুক্তি উপস্থাপন করেন। আনন্দবাজার পত্রিকায় সন্তোষ কুমার ঘোষও তার কয়েকটি নিবন্ধে একই অভিমত ব্যক্ত করেন। পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে বাংলাদেশের সুস্পষ্ট বিভেদ রাখাই ছিল তাদের (সন্তোষ-বসন্তের) মুখ্য উদ্দেশ্য। বাঙালি জাতীয়তাবোধের ঐকতানের ঢেউ পশ্চিমবঙ্গে আছড়ে পড়লে তা ভারতীয় সংহতির জন্য হুমকি হতে পারে, এ ভীতি তাদের মধ্যে কাজ করেছে বলে দুই বাংলার বাংলাভাষীদের মধ্যে একটা মনস্তাত্ত্বিক বিভেদ সৃষ্টি করে রাখা ছিল তাদের উদ্দেশ্য। কাকতালীয়ভাবে এ উদ্দেশ্যটি মিলে যায় মন-মননে দ্বিজাতিতত্ত্ব লালনকারী বাংলাদেশিদের সঙ্গেও এবং পরিণতিতে বাঙালি জাতীয়তাবাদ 'বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদে' রূপলাভ করে। এমনকি বাংলাভাষাও হয়ে যায় বাংলাদেশি ভাষা। জিয়ার রাজাকার প্রধানমন্ত্রী শাহ আজিজ ১৯৭৯ সালে জাতীয় সংসদে আলোচনাকালে বাংলাকে বাংলাদেশি ভাষা হিসেবে উল্লেখ করেন। তো যাহোক, জিয়ার অস্বাভাবিক মৃত্যু তার প্রতি দেশবাসীর সহানুভূতি বাড়িয়ে দেয়। ব্যাপারটা ওখানেই যদি থেমে থাকত তাহলেই ভালো হতো। কিন্তু তার স্ত্রী-পুত্র এবং অনুসারীরা গত দুই দশক ধরে তাকে যেসব অতিরঞ্জিত বিশেষণে ভূষিত করে চলেছেন তাতেই দেখা দিয়েছে যত বিপত্তি।

গ্রিক মিথোলজি অনুযায়ী দেবতা জিউস তার প্রথম রমণী প্যানডোরাকে একটি বাক্স দিয়ে তা খুলতে নিষেধ করেছিলেন। কিন্তু কৌতূহল দমন করতে না পেরে তিনি বাক্স খুলে ফেলেন। বাক্স থেকে বেরিয়ে এল জরা, মৃত্যু, লোভ-লালসা, দুঃখ-কষ্ট, হিংসা-বিদ্বেষ ইত্যাদি। সুন্দর পৃথিবী অসুন্দরে ছেয়ে গেল। এ পুরাণ কাহিনী অনুসরণে বলা যায়, উনিশ শ একাত্তর থেকে একাশি পর্যন্ত জিয়ার কর্মকালীন এক দশকের বাক্সটির ঢাকনা না খুললেই ভালো, অন্তত তার আত্মার মঙ্গল কামনায় হলেও।

আনোয়ারুল কাদির
অধ্যাপক, কলাম লেখক
সৌজন্য : এই সময়।

http://www.poriborton.com/post/59552/%E0%A6%9C%E0%A6%BF%E0%A7%9F%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%AF%E0%A7%87%E0%A6%B8%E0%A6%AC-%E0%A6%95%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%AE%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%A3%E0%A7%8D%E0%A6%A1%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%95%E0%A6%A5%E0%A6%BE-%E0%A6%9C%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A7%87-%E0%A6%A8%E0%A6%BE-%E0%A6%85%E0%A6%A8%E0%A7%87%E0%A6%95%E0%A7%87%E0%A6%87




__._,_.___

Posted by: SyedAslam <Syed.Aslam3@gmail.com>


****************************************************
Mukto Mona plans for a Grand Darwin Day Celebration: 
Call For Articles:

http://mukto-mona.com/wordpress/?p=68

http://mukto-mona.com/banga_blog/?p=585

****************************************************

VISIT MUKTO-MONA WEB-SITE : http://www.mukto-mona.com/

****************************************************

"I disapprove of what you say, but I will defend to the death your right to say it".
               -Beatrice Hall [pseudonym: S.G. Tallentyre], 190





__,_._,___