Banner Advertiser

Monday, July 14, 2014

[mukto-mona] রক্তের খেলা এবং মাঠের খেলা



|| নীরক্তকরবীর মালা/কনক জ্যোতি || 
রক্তে শিহরণ জাগানো বিশ্বকাপ ফুটবলের তীব্র উন্মাদনার মধ্যে রক্তের খেলা চলছে ফিলিস্তিনের গাজায়। আজ যখন বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলায় মাতাল হবে বিশ্বের দর্শকগণ, তখন অস্ত্রবিরতির জন্য আন্তর্জাতিক চাপ উপেক্ষা করে ইসরাইল উলটো গাজায়  বেসামরিক লক্ষ্যবস্তুর ওপর নিজেদের বোমা হামলার পরিধি আরও বাড়িয়েেেছ । গত ছয়দিনের হামলায় ১৬০ জনের বেশি ফিলিস্তিনী নিহত হয়েছেন বলে দেশটির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। শনিবার এক বিবৃতিতে ইসরাইল ও  গাজা উপত্যকার ফিলিস্তিনীদের মধ্যে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানায় জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ। পাল্টাপাল্টি হামলা থামিয়ে আলোচনা শুরু করার আহ্বান জানায় তারা। এতে বলা হয়, ১৫ সদস্যের নিরাপত্তা পরিষদ সর্বসম্মতিক্রমে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে। গত মঙ্গলবার গাজায় ইসরাইলী হামলা শুরু হওয়ার পর এই প্রথম নিরাপত্তা পরিষদের পক্ষ থেকে প্রতিক্রিয়া এলো। এর আগে এ ধরনের বিবৃতি দেয়ার বিষয়ে জাতিসংঘের সবচেয়ে ক্ষমতাধর এই পরিষদের সদস্যদের মধ্যে মতভেদ তৈরি হয়েছিল। এদিকে গাজায় বিমান হামলায় নিহতের সংখ্যা ১৬০ জন ছাড়িয়েছে বলে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। হামলায় আরো এক হাজার একশ'র বেশি মানুষ আহত হয়েছেন বলে মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র রোববার ভোরে সিএনএনকে জানিয়েছেন। এদিন ভোরের দিকে গাজার প্রতিরক্ষা সদরদপ্তর ও থানায় বিমান হামলা হয়েছে বলে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। বিবিসির গাজা প্রতিনিধির মতে, গত ৮ জুলাই ইসরাইলী হামলা শুরুর পর এদিনই সবচেয়ে বড় ধরনের বোমা হামলা হয়। শনিবার সন্ধ্যায় ইসরাইলের বিমান হামলায় গাজার একই পরিবারের ১৭ জন নিহত হয়েছেন। এদিন গাজা  থেকে হামাস সদস্যরা প্রায় ৯০টি রকেট নিক্ষেপ করেছে বলে দাবি করেছে ইসরাইল। এদিকে গাজার একটি রকেট উৎক্ষেপণ কেন্দ্রে অভিযান চালানোর জন্য সেনা সদস্যদের পাঠানো হয়েছে বলে ইসরাইল জানিয়েছে। বিবৃতিতে গাজার সঙ্কটজনক পরিস্থিতিতে উভয়পক্ষের বেসামরিক নাগরিকদের নিরাপত্তা  নিয়ে গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যরা। উত্তেজনা প্রশমিত করে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে এবং ২০১২ সালের নবেম্বরের যুদ্ধবিরতিতে আবার ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে বিবৃতিতে। বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করাসহ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের প্রতি শ্রদ্ধা দেখানোর জন্যও বিবদমান দুই পক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে পরিষদের সদস্যরা। দুই রাষ্ট্রের ভিত্তিতে সমন্বিত একটি শান্তি চুক্তিতে পৌঁছানোর লক্ষ্যে  ইসরাইল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে সরাসরি শান্তি আলোচনা আবারো শুরু করার আহ্বান জানিয়েছে নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যরা। যুদ্ধবিরতির জন্য আন্তর্জাতিক চাপ সত্ত্বেও গাজা  থেকে রকেট নিক্ষেপ বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত  সেখানে অভিযান চালানোর  ঘোষণা দিয়েছে ইসরাইল। চলতি সপ্তাহে গাজার রকেট হামলায় পাঁচ ইসরাইলী আহত হলেও এ পর্যন্ত  দেশটির কোনো নাগরিক নিহত হননি। ইসরাইলের দাবি, তারা জঙ্গি ও জঙ্গিদের স্থাপনা লক্ষ্য করে হামলা চালাচ্ছে। জঙ্গি গোষ্ঠীর জ্যেষ্ঠ নেতাদের বাড়ি লক্ষ্য করেও হামলা চলছে। হামলায় নিহতদের মধ্যে অধিকাংশই "সন্ত্রাসী" বলে দাবি করেছে ইসরাইল। তবে গাজায় নিহতদের মধ্যে ৭৭ শতাংশ বেসামরিক নাগরিক বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। শনিবার মাগরিবের নামাজের সময় একটি মসজেিদ ইসরাইলী হামলায় অন্তত ১৮ জন মুসল্লি নিহত হয়েছে । উল্লেখ্যে, ২০০৯ সালের ইসরাইলী স্থল অভিযানে প্রায় ১৪০০ ফিলিস্তিনী নিহত হয়েছিল।

এমন পরিস্থিতিতে রক্তের খেলা আর মাঠের খেলার মধ্যে পার্থক্য করতে পারছে না অনেক মানুষই। মানবিক বোধ ভোতা হয়ে যাওয়ায় নেশার মতো খেলায় মেতে আছে অনেক আসক্ত। আসক্ত বললাম এজন্য যে, আগ্রহ যখন মাত্রা ছাড়ায়, তখন সেটা আসক্তিই বটে। খেলার জন্য মরে যাওয়া, দলের পতাকা টাঙাতে গিয়ে জখম হওয়া, রাত-দিন দলের জন্য উন্মাদ হওয়া আসক্তি  বৈকি । যেসব দেশকে সমর্থন করতে জার্সি গায়ে দিয়ে বা বিশাল বিশাল পতাকা উড়ানো হয়েছে, সেসব দেশ নিজেরাও এত আদিখ্যেতা করে বলে মনে হয় না। এই অন্ধ অনুসরণ ও উল্লম্ফনের পরিণতি কোথায় কে জানে?

বাংলাদেশে আবেগ ও উত্তেজনার মাধ্যমে মানুষের মধ্যে নেশা ধরিয়ে দেয়া এক অতি সহজ ব্যাপার। রাজনীতি থেকে খেলা বা গুজবে এদেশে মানুষ উত্তেজিত হয়ে ওঠে। ঘরে ভাত নেই, পরনে কাপড় নেই, তবু ব্রাজিল বা আর্জেন্টিনার পতাকা মাথায় পাগড়ির মতো বেঁধে পথে পথে নাচছে, এমন লোকের অভাব এ দেশে নেই। এমনই হলো এদেশের অবস্থা। খেলার উত্তেজনায় দেশের বাইরে গাজায় কি হলো বা আমাদের নিজের দেশ সমুদ্রসীমায় কি পেলো বা হারালো, দক্ষিণ তালপট্টি নিয়ে কি হলো, সেসবও জানার ফুসরত নেই কারো। প্রয়োজনও নেই অনেকের। এমনই একদেশদর্শিতায় চলছে সবাই।

সমাজবিজ্ঞানীরা হয়ত গবেষণা করে অতি-আবেগ, অতি-উগ্রতার ব্যাখ্যা করতে পারবেন। বলতে পারবেন, কেন এদেশের মানুষ, বিশেষত তরুণ সমাজ আবেগ ও উত্তেজনার নেশায় মাতাল হয়ে ওঠে। যুক্তি ও আবেগের মধ্যে বিরাট ফারাক এদেশে সব সময়ই দেখা যাচ্ছে। 'ভাবিয়া করিও কাজ, করিয়া ভাবিও না', এ তত্ত¦ এদেশে মানা হয় না। এদেশে মানা হয়, লাফ দিয়ে আবেগে ঝাঁপিয়ে পড়ার তত্ত¦। সমাজে, রাজনীতিতে, অর্থনীতিতে, সংস্কৃতিতে দাপাদাপি-ঝাঁপাঝাঁপির দিন চলছে। যে যার মতো বাহাদুরি, নর্দন-কুর্দন করেই মাত করছে সবাইকে আর পাচ্ছে বাহাবাও। যে লোকটি নিরন্নকে আহার দিচ্ছে, এদেশে তার কথা কেউ বলে না, কিন্তু যে এক মাইল লম্বা ব্রাজিল বা আর্জেন্টিনার পাতাকা  তৈরি করেছে, তাকে নিয়ে লম্ফ-ঝম্পের শেষ নেই।

আসলে বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষের চিন্তা-চেতনা-দর্শনের জায়গাটুকু ক্রমেই ফাঁপা হয়ে যাচ্ছে। এক সময় বুঝে বা না বুঝে সমাজতন্ত্রের  বৈপ্লবিক লাল মরীচিকার পেছনে এদেশের তরুণদের ছোটানো হয়েছে। তারপর ধাওয়া করা হয়েছে উগ্র জাতীয়তাবাদের পেছনে। এখন পশ্চিমা সমাজের নানা লারে-লাম্পা মার্কা কোকাকোলা সংস্কৃতি আর ব্যক্তিগত ভোগবাদের পেছনে লেলিয়ে দেয়া হয়েছে তরুণ-তরুণীদের। ইউরোপ, আমেরিকা আর ভারতের দোকানদাররা কনজিওমারিজমের ধাক্কায় বেসামাল করে ফেলেছে তরুণ, উঠতি বয়েসী, স্বল্প শিক্ষিত তরুণ-তরুণীকে। বাংলাদেশে এরাই সংখ্যায় বেশি। এরাই এখন সমাজ ও সংস্কৃতির নিয়ামক। পুরাতন প্রথা, প্রতিষ্ঠান, মূল্যবোধ ভেঙে চলাই তাদের নিয়ম।

এটা ঠিক যে, যে কোন দেশ বা সমাজের জন্য তরুণ-তরুণীরাই প্রধান শক্তি। এরাই সমাজ ও প্রগতির বাহন। কিন্তু এরা যদি কেবল ভোগ ও উৎসবে মগ্ন থাকে, তাহলে দেশের স্বার্থ দেখবে কে? দেশী-বিদেশী যড়যন্ত্রের কবল থেকে সমাজ ও মানুষকে বাঁচাবে কে? নতুন প্রজন্মকে কেবলমাত্র ব্যবসা প্রশাসন আর নানা উৎসবের জালে আটকে ফেললে ধর্ম, সমাজতত্ত¦, দর্শন,  নৈতিকতা, আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক রাজনীতি, জাতীয় স্বার্থ ইত্যাদি সম্পর্কে অজ্ঞ রাখা হলে একদিকে মাঠের খেলা আর অন্যদিকে রক্তের খেলা চলতেই থাকবে আর আমরা আসল খেলাটি ধরতে বা বুঝতেই পারবো না। যে রক্ত গাজায়, ফিলিস্তিনে, ইরাকে, সিরিয়ায়, আফগানিস্তানে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে, সে রক্ত ভাসিয়ে দিচ্ছে বিশ্বের গণতন্ত্রকে, মুসলিম জাতিসত্তাকে। কিন্তু গণতন্ত্রের প্রশ্নে বা মুসলমানদের অধিকারের প্রশ্নে সোচ্চারও হওয়া যাচ্ছে না প্রতিপক্ষের মৌলবাদ, যুদ্ধাপরাধী ইত্যাদি চাপিয়ে দেয়া মিথ্যা আরোপ ও অপপ্রচারের কারণে। এখানেও অন্ধ আবেগ আর উগ্রতার বিজয় এবং যুক্তির পরাজয়। কোথাও আইন, যুক্তি,সাক্ষ্য, তথ্য, উপাত্ত ইত্যাদি সম্পর্কে কাউকেই অবহিত করা যাচ্ছে না। দেখবো না, শুনবো না বলে অন্ধ ও বধির আবেগে ঘাড় শক্ত করে রেখেছে অনেকেই। অতএব বিশ্বকাপের খেলা আর রক্তের খেলার প্রবল বিপরীতমুখী বিশ্বপরিস্থিতির মধ্যে দাঁড়িয়ে আমরা দেখছি যে, পুরো দুনিয়া এবং আমাদের আশপাশ ভেসে যাচ্ছে আবেগে। আবেগ আর যুক্তির লড়াইয়ে খুব কম মানুষই যুক্তি, সত্য, ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়াতে পারছেন। সবাই গা ভাসিয়ে দিচ্ছে চলতি হাওয়ার মাতাল উন্মাদনায়। এরই অন্য নাম গড্ডালিকা প্রবাহ। দুঃখের বিষয়, অতি-উচ্চস্তরের নেতা-নেত্রীরা হেমিলনের বংশীবাদকের মতো যে উত্তেজনা আর আবেগের মিছিলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তাতে যুক্তি, বুদ্ধি, আইন ও বিবেকের স্থান  নেই বললেই চলে। ফলে রক্তের খেলা আর মাঠের খেলার পার্থক্য করতে পারছে না মানুষ। মাঠের খেলা দেখে ক্লান্ত হয়ে ঘুমাচ্ছে। অন্যদিকে বিশ্বের মাটি ভিজে যাচ্ছে রক্তে। বিপদ দ্রুত ঘনিয়ে আসতে থাকছে আমাদের দিকেও। অতএব, খেলা শুধু খেলা নয়, ভাবারও বিষয়।



__._,_.___

Posted by: Shahadat Hussaini <shahadathussaini@hotmail.com>


****************************************************
Mukto Mona plans for a Grand Darwin Day Celebration: 
Call For Articles:

http://mukto-mona.com/wordpress/?p=68

http://mukto-mona.com/banga_blog/?p=585

****************************************************

VISIT MUKTO-MONA WEB-SITE : http://www.mukto-mona.com/

****************************************************

"I disapprove of what you say, but I will defend to the death your right to say it".
               -Beatrice Hall [pseudonym: S.G. Tallentyre], 190





__,_._,___