Banner Advertiser

Friday, August 8, 2014

[mukto-mona] খোলা চোখে ঘুষবিদ্যা বড় বিদ্যা যদি...



খোলা চোখে

ঘুষবিদ্যা বড় বিদ্যা যদি...

হাসান ফেরদৌস | আপডেট: প্রিন্ট সংস্করণ

ঢাকার আজিমপুর গার্লস স্কুল ও কলেজকে গত বছর সরকারি ব্যবস্থাপনায় আনার ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যেই কথা সেই কাজ। সরকারি হওয়ার ফলে শিক্ষার্থীদের বেতন নাটকীয়ভাবে কমে আসে। ৩০০ টাকা থেকে হয় মাত্র ১২ টাকা। সরকারি হওয়ার কারণে শিক্ষকদের বেতন বাড়ার কথা। কিন্তু এক বছর পরেও যথাযথ সরকারি বরাদ্দ এসে পৌঁছায়নি। এদিকে শিক্ষার্থীদের বেতন কমে যাওয়ায় স্কুলের আয় গেছে কমে। ফলে শিক্ষকদের বেতন দেওয়ার মতো পর্যাপ্ত তহবিল স্কুলের নেই। সাত মাস ধরে তাঁরা বেতন পাচ্ছেন না। তাঁরা পড়লেন মহাসংকটে। ওপরতলার কর্তাব্যক্তিদের টু-পাইস না দিলে সমস্যার সমাধান হবে না, সে কথা বুঝতে পেরে অধ্যক্ষের মধ্যস্থতায় শিক্ষকবৃন্দ ঠিক করলেন, তাঁরা নিজেরাই টাকা তুলে মোটা একটা অঙ্কের উৎকোচ যথাস্থানে পৌঁছে দেবেন। কেউ দিলেন ১৫ হাজার, কেউ দিলেন ১০, একদম অধস্তন কর্মচারীরা দিলেন পাঁচ হাজার করে। সব মিলিয়ে বেশ ভদ্রগোছের একটা ব্যবস্থা হলো।শিকে তার পরেও ছিঁড়ল না। হবে হবে করে এত দিন যাঁরা আশায় বুক বেঁধে ছিলেন, তাঁরা দিশেহারা হয়ে পড়লেন। গত সপ্তাহে এই নিয়ে নিজেদের মধ্যে হাতাহাতি। শেষ পর্যন্ত স্থানীয় সাংসদকে এসে অবস্থা সামাল দিতে হলো। শিক্ষকেরা জানিয়েছেন, ঘুষ দেওয়ার ব্যাপারটা তিনিও জানতেন।
মাস্টার সাহেবরা এমন একটা কাজ করতে পারলেন জেনে স্কুলের অভিভাবকদের বিচলিত হওয়ার কথা। শুধু বিদ্যা শিক্ষা নয়, নীতিজ্ঞান লাভও শিক্ষার একটি উপাদান। ঘুষ দেওয়া-নেওয়া খুব সম্মানজনক কোনো ব্যাপার নয়। তো, শিক্ষকেরা নিজেরাই যদি ঘুষ দেওয়া অপরাধ বলে বিবেচনা না করেন, তাহলে শিক্ষার্থীদের সে নীতিশিক্ষা যতভাবে দেন না কেন, কেউ তাঁদের সে কথায় বিশ্বাস করবে না। তার চেয়েও ভয়ের কথা, শিক্ষকেরা ঘুষ দেন, অতএব তাঁরা ঘুষ নিতেও পারেন, শিক্ষার্থীদের মধ্যে এই ধারণা সংক্রমিত হবে। সেই যুক্তিতে ভর করে ছাত্রদের পক্ষে তাদের পছন্দমতো পরীক্ষার ফল, অথবা পরীক্ষার আগাম প্রশ্নপত্র আদায় করে নেওয়া কঠিন কোনো ব্যাপার হওয়ার কথা নয়।
আমার এই উদ্বেগের কথা এক বন্ধুকে শোনাতে তিনি চোখ কপালে তুললেন। 'আমরা কোন দেশে থাকি বলে তুমি ভাব?' এরপর পাক্কা তিন মিনিট তিনি ভাষণ দিয়ে গেলেন শুধু এই কথা বোঝাতে, যে দেশে ক্ষমতাবান মাত্রই কোনো না কোনোভাবে টু-পাইস বানাতে সিদ্ধহস্ত, সেখানে বেচারা শিক্ষকদের কাছ থেকে ভিন্ন কিছু আশা করা একদমই বাতুলতা। যে সমাজের তাঁরা বাসিন্দা, তার নিয়মকানুন তাঁদের মেনে চলতেই হবে। 'নো ঘুষ-নো ফাইল', এ তো জানা কথা।
বন্ধুটি নিজে একসময় সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ছিলেন, নিজে কখনো ঘুষ দিয়েছেন বা নিয়েছেন, এমন অভিযোগ কেউ কখনো করেছে বলে শুনিনি। এমন নিপাট একজন ভদ্রলোক শিক্ষকদের ঘুষ দেওয়ার ব্যাপারটা এত সহজে মেনে নিলেন দেখে আমার বিস্ময় গোপন রাখলাম না। জবাবে তিনি আমাকে কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র থেকে পড়ে শোনালেন। খ্রিষ্টপূর্ব তিন শ সালে চাণক্য ছিলেন সম্রাট চন্দ্রগুপ্তের সভাসদ। কৌটিল্য নামে যে 'অর্থশাস্ত্র' তিনি লেখেন, এই বিষয়ে সেটি সম্ভবত আদিতম গ্রন্থ। বন্ধু জানালেন, সেই আড়াই হাজার বছর আগেই চাণক্যবাবু টের পেয়েছিলেন, সুযোগ পেলে টু-পাইস হাতাবে না, এমন রাজকর্মচারী ভূ-ভারতে নেই। তিনি লিখছেন, পানির নিচে মাছ যেমন কখন পানি খায় তা জানা যায় না, ঠিক সে রকম রাজকর্মচারী কখন কী হাতাচ্ছে, তা জানাও অসম্ভব। খোদ রাজাকে তিনি হিসাবে ধরেননি, কারণ তিনি দেশের মালিক, অতএব তাঁর টু-পাইস হাতানোর প্রশ্ন ওঠে না। কিন্তু তাঁর অধস্তন প্রত্যেকেই সুযোগ পেলে মাল কামাবে।
আমি সে কথা শুনে হতবাক হলাম। প্রাচীন ভারত মুনি-ঋষির দেশ, চন্দ্রগুপ্ত অতি সজ্জন সম্রাট। তিনি অথবা তাঁর সুপণ্ডিত সভাসদ কেন এমন দুষ্ট বুদ্ধি দেবেন, সে কথা আমার মাথায় ঢুকছিল না। বন্ধু জানালেন, দুষ্টবুদ্ধি নয়। চাণক্য অতি বাস্তব বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ ছিলেন, আজকের যুগে যাদের আমরা 'প্র্যাকটিক্যাল' বলি, সে রকম। তিনি জানতেন, শুধু নীতিকথা বলে পেট ভরানো যাবে না। রাজাকে তিনি পরামর্শ দিয়েছিলেন, দুর্নীতি কমানোর একটা পথ হলো, রাজার অধীনস্থ সব কর্মচারীকে যথাযথ পারিশ্রমিক অথবা মাসোহারার নিশ্চয়তা। যাঁর যে কাজ, তাঁর সেই রকম পারিশ্রমিক চাই। আজকে আমরা যাকে 'ইনসেনটিভ' বলি, তার ধারণা চাণক্যের কাছ থেকেই পাওয়া। ভালো কাজের জন্য পুরস্কার অর্থাৎ বোনাস এবং কাজে ব্যর্থ হলে তিরস্কার, প্রয়োজন হলে শাস্তি, সে ধারণাও চাণক্যবাবুর কাছ থেকে শেখা। এমনকি নজরদারি বা 'ওভারসাইট'—সে কথাও কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রে রয়েছে।
আমার বন্ধুর ভাষণ শোনার পর কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র নতুন করে উল্টেপাল্টে দেখেছি। নৈতিকতার বিষয়টি চাণক্য মোটেই বাতিল করেননি। তিনি মনে করতেন, নৈতিকতার ব্যাপারটা আসতে হবে রাজ্য প্রশাসনের মাথা থেকে। তারাই ঠিক করবে কোনটা ঠিক, কোনটা বেঠিক। চাণক্য মনে করিয়ে দিয়েছেন, মাছের পচন ধরে মাথা থেকে। অতএব, ওই মাথাটা পচনের বাইরে রাখতে হবে। নৈতিকতার মানদণ্ড প্রতিষ্ঠা করবেন রাজা। একইভাবে, যার যার মন্ত্রণালয়ে সেই মান প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব সেই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রীর।
শুধু মন্ত্রী নয়, এই নিয়মটা প্রসারিত করতে হবে প্রশাসনের সর্বস্তরে, ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত। বিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত হবেন তার প্রধান শিক্ষক অথবা অধ্যক্ষ। (কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রের একটি ইংরেজি অনুবাদ পাওয়া যায়, আগ্রহী পাঠক তা এখানে পড়ে নিতে পারেন: http://bit.ly/1zOa2p1)
উৎকোচ যে রাজ্য পরিচালনায় একটি প্রয়োজনীয় উপাদান, চাণক্যের অর্থশাস্ত্র থেকে তেমন সিদ্ধান্ত গ্রহণ কঠিন নয়। পত্রিকার প্রতিবেদন যদি সঠিক হয়ে থাকে, তাহলে শিক্ষকবৃন্দ অতি সাবধানতার সঙ্গে তাঁদের ন্যায্য পাওনা আদায়ের লক্ষ্যে ঘুষকে একটি উপযোগী কৌশল অথবা হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের চেষ্টা করেছিলেন। আজকাল অনেক অর্থনীতিবিদ 'যদি কাজ হয়, তাহলে ঘুষ দেওয়া শাস্ত্রসম্মত' এমন ফতোয়া দিয়েছেন। কোনো কাজ যদি লালফিতার নিচে বছরের পর বছর পড়ে থাকে, আর তার ফলে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা গচ্চা যায়, তাহলে একটা রফা করাই তো ভালো। আজিমপুরের শিক্ষকেরা এই নীতিই অনুসরণ করেছিলেন। তাঁরা শুধু বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষকেই নয়, স্থানীয় সাংসদকেও জড়িয়েছিলেন। স্কুলের পরিচালনা পরিষদের কেউ কেউও ব্যাপারটায় সমর্থন দিয়েছিলেন। সমস্যা হলো, যারা টাকা খেয়ে কাজ করে দেবে বলেছিল, তারা টাকা হজম করেছে, কিন্তু কাজ করে দেয়নি। আমার বন্ধুটি রায় দিলেন, অপরাধী যদি কাউকে বলতে হয়, তো সে হলো ওপরতলার ওই কর্তাব্যক্তিরা। চাণক্য বলেছেন, মানদণ্ড প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব কর্তাদের। ঘুষ খেয়ে কাজ 'ডেলিভারি' দিতে হবে, আজকের দিনে ওই বই লিখলে চাণক্য সে কথা স্পষ্ট করে লিখে দিতেন।
বন্ধুর কথা শুনে আমি মুখ কালো করে বসে থাকি। শিক্ষক তাঁর বেতন পাবেন সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, সে নিয়ম যদি পালিত না হয়, সে কথা নিয়ে দাবি তোলার অধিকার তাঁর অবশ্যই আছে। এ নিয়ে সাংসদের কাছে আবেদন করা যেত, মন্ত্রীর কাছে যৌথ চিঠি পাঠানো যেত, কোনো কিছুতে কাজ না হলে পত্রপত্রিকায় লেখালেখি করতে পারতেন তাঁরা। অবস্থা তাঁদের জন্য অসহনীয় হয়ে এলে ধর্মঘটের কথা, এমনকি অনশনের কথাও ভাবা যেত। সে পথে না গিয়ে আমাদের মাননীয় শিক্ষকবৃন্দ ধরলেন সবচেয়ে সহজ পথটি। ভয় এখানেই। সবখানেই আমরা এখন শর্টকাট খুঁজছি। মাস্টার সাহেবরা তাঁদের ন্যায্য পাওনা আদায়ের শর্টকাট হিসেবে বেছে নিয়েছেন ঘুষ। শিক্ষার্থীরাও শর্টকাট হিসেবে নোটবই, ফাঁস প্রশ্নপত্র বা নিজে পরীক্ষায় না বসে ভাড়াটে ছাত্রকে বসাচ্ছে। এরপর হয় আরও সহজ শর্টকাট বেরোবে। পড়াশোনা করতে হবে না, পরীক্ষাও দিতে হবে না, কিন্তু ঠিকই পাস হবে (চাইকি প্রথম শ্রেণিতে)। সবই যখন ঘুষে সম্ভব, তখন এত কষ্ট কেন?
যাঁরা এতে উদ্বেগের কোনো কারণ দেখেন না, তাঁদের মনে করিয়ে দিই, এসব শিক্ষার্থী একদিন ডাক্তার হবে, ইঞ্জিনিয়ার হবে, বিজ্ঞানী হবে। তাদের হাতে আপনার কিডনি অপারেশন হবে, পদ্মা সেতু হবে, বহুতল ভবনের নকশা হবে। হবে বলছি বটে, কিন্তু আসলে হবে কি?
হাসান ফেরদৌস: প্রাবন্ধিক ও কলাম লেখক৷


Prothom Alo





__._,_.___

Posted by: "Jamal G. Khan" <M.JamalGhaus@gmail.com>


****************************************************
Mukto Mona plans for a Grand Darwin Day Celebration: 
Call For Articles:

http://mukto-mona.com/wordpress/?p=68

http://mukto-mona.com/banga_blog/?p=585

****************************************************

VISIT MUKTO-MONA WEB-SITE : http://www.mukto-mona.com/

****************************************************

"I disapprove of what you say, but I will defend to the death your right to say it".
               -Beatrice Hall [pseudonym: S.G. Tallentyre], 190





__,_._,___