Banner Advertiser

Tuesday, August 12, 2014

[mukto-mona] ফিরে দেখা পঁচাত্তর :‘আমি সবাইকে মেরে প্রতিশোধ নিয়েছি’



ফিরে দেখা পঁচাত্তর

'আমি সবাইকে মেরে প্রতিশোধ নিয়েছি'

মহিউদ্দিন আহমদ | আপডেট: প্রিন্ট সংস্করণ

গতকালের পর
বঙ্গবন্ধুর তিন খুনি— ফারুক, রশিদ ও নূর চৌধুরী

শেখ মুজিবের হত্যাকাণ্ডের আকস্মিকতায় অনেকেই হতবুদ্ধি হয়ে পড়লেও সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে তেমন উত্তেজনা লক্ষ করা যায়নি। হুদা বাতেনকে বলেছিলেন, এ রকম একটা ঘটনা দু-একটি ব্যতিক্রম ছাড়া সবার কাম্য ছিল। শুধু দুটো বিষয়ে তাঁদের অনেকের অজ্ঞতা ছিল। প্রথমত, ঘটনাটি কবে ঘটানো হবে এবং দ্বিতীয়ত, শেখ মুজিবকে হত্যা করা হবে কি না। রশিদ-ফারুকের পরিকল্পনায় এই অভ্যুত্থানে যাঁরা অংশ নিয়েছিলেন, তাঁরা সবাই হত্যা পরিকল্পনার কথা জানতেন না।
মেজর নুর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালীন সময়ে পিকিংপন্থী ছাত্র ইউনিয়নের সদস্য ছিলেন। পরে তিনি সর্বহারা পার্টির সঙ্গে যুক্ত হন। সিরাজ শিকদারের নিহত হওয়ার ঘটনায় তিনি ক্ষুব্ধ হন। ১৫ আগস্টের কয়েক দিন পর সর্বহারা পার্টির কয়েকজন নেতা কলাবাগান বাসস্ট্যান্ডের পাশে একটা বাসায় সন্ধ্যাবেলা বৈঠক করেন। তাঁদের মধ্যে ছিলেন লে. কর্নেল জিয়াউদ্দিন, আকা ফজলুল হক ও মহসীন আলী। তাঁরা নূর ও ডালিমকে ডেকে পাঠান। নূর একাই এসেছিলেন। শেখ মুজিবের পরিবারের সবাইকে হত্যা করার বিষয়ে জানতে চাইলে নূর বলেন, 'ওরা আমার নেতাকে খুন করেছে, আমি সবাইকে মেরে প্রতিশোধ নিয়েছি।' নূরের উদ্ধত আচরণে এবং নৃশংসতার পরিচয় পেয়ে জিয়াউদ্দিন ক্ষুব্ধ হন।
অনেক দিন পর বনানী ডিওএইচএসে কর্নেল ফারুকের বাসায় ফারুক ও রশিদের সঙ্গে আলাপ করার সময় আকা ফজলুল হককে কর্নেল রশিদ বলেছিলেন: শেখ মুজিবকে রেখে ক্যু করা যাবে কি না, তা নিয়ে আমরা অনেক ভেবেছি। কিন্তু দেখলাম তা সম্ভব নয়। রক্ষীবাহিনীর চিফ ব্রিগেডিয়ার নুরুজ্জামানকে আগেই দেশের বাইরে পাঠিয়ে দেওয়ার বন্দোবস্ত হয়। মুজিব পরিবারের অন্য সদস্যদের হত্যা করার কোনো পরিকল্পনা ছিল না। সিদ্ধান্তটি অভিযানে অংশগ্রহণকারীরা তাৎক্ষণিকভাবে নিয়েছিল।
মুজিব হত্যার পরিকল্পনায় বিমানবাহিনীর কয়েকজন কর্মকর্তার অংশ নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পরে তাঁদের বাদ দিয়েই এই অপারেশন চালানো হয়। এ রকম একটা 'অ্যাডভেঞ্চারে' শরিক হতে না পেরে তাঁরা মনঃক্ষুণ্ন হয়েছিলেন। এর প্রকাশ ঘটেছিল নভেম্বরে।
কর্নেল তাহের সম্ভবত জানতেন না, ১৫ আগস্ট তারিখটিই অভ্যুত্থানের জন্য নির্ধারিত হয়ে আছে। তবে এ রকম একটা ঘটনা যে ঘটতে পারে, তা তাঁর অজানা থাকার কথা নয়। কোটি টাকার প্রশ্ন ছিল, কবে, কখন? শেখ মুজিবের সরকারকে উৎখাতের জন্য তাহেরের নিজস্ব পরিকল্পনা ছিল। শেখ মুজিবের প্রতি তাঁর ক্ষোভ ছিল অপরিসীম।
তাহের মনে করতেন, 'মুজিব সরকার সেনাবাহিনীর উন্নয়নে চরম অবহেলা দেখিয়েছে এবং রক্ষীবাহিনীর মতো একটা কুখ্যাত আধা সামরিক বাহিনী তৈরি করেছে। তিনি সংশ্লিষ্ট মহলের কাছে এর তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। যুদ্ধের সময় ভারতের সঙ্গে করা গোপন চুক্তির ব্যাপারেও তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন।
বাহাত্তর সালের নভেম্বরেই এসব ঘটেছিল এবং এ কারণেই লে. কর্নেল জিয়াউদ্দিন এবং তিনি যাঁর যাঁর রাজনৈতিক লাইন বেছে নিয়েছিলেন। অবশ্য তাঁরা পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন এবং সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে মতবিনিময় করতেন।' ছিয়াত্তরে তাহের ও অন্যদের বিচারের সময় ট্রাইব্যুনালে দেওয়া জবানবন্দিতে তাহের এসব কথা উল্লেখ করেন।
শেখ মুজিব সম্পর্কে কর্নেল তাহেরের মূল্যায়ন ছিল এ রকম: শেখ মুজিব জনগণের নেতা ছিলেন। এটা অস্বীকার করার অর্থ হবে সত্যকে অস্বীকার করা। চূড়ান্ত বিশ্লেষণে তাঁর ভাগ্য নিয়ন্ত্রণের ভার জনগণের ওপরই বর্তায়। জনগণের জন্য সঠিক পথ হবে জেগে ওঠা এবং প্রতারণার দায়ে মুজিবকে উৎখাত করা। আমার দৃঢ়বিশ্বাস, যে জনগণ মুজিবকে নেতা বানিয়েছে, তারাই একদিন স্বৈরাচারী মুজিবকে ধ্বংস করবে। জনগণ কাউকে ষড়যন্ত্র করার অধিকার দেয়নি।
হুদার সঙ্গে কথাবার্তায় বাতেনের মনে হয়েছিল, তাঁদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব আছে। সবাই সবটা জানেন না। যাঁরা এ ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন, তাঁদের মধ্যে একটা বিষয়ে ঐকমত্য ছিল। শেখ মুজিবের বিরুদ্ধে তাঁদের সবার ব্যক্তিগত ক্ষোভ ছিল।
আওয়ামী লীগ-বাকশালের বাইরে ওই সময় সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল ছিল জাসদ। জাসদের প্রধান নেতা সিরাজুল আলম খান তখন দেশে নেই। দলে একাধিক 'কেন্দ্র'। গণবাহিনীর ইউনিটগুলো বিভিন্ন জেলায় মোটামুটি স্বাধীনভাবে কাজ করছে নিজেদের শক্তি-সামর্থে্যর ওপর নির্ভর করে। ঘটনার আকস্মিকতায় সবাই হকচকিত, বিহ্বল। জাসদের মধ্যে যাঁরা ষাটের দশকের রাজনৈতিক সংগ্রামের উত্তরাধিকার বহন করে চলেছেন, ১৫ আগস্টের মতো একটা ঘটনা ঘটতে পারে, এটা তাঁরা কখনো চিন্তা করেননি।
১৫ আগস্ট সকালে ঢাকা নগর গণবাহিনীর অন্যতম সদস্য মীর নজরুল ইসলাম বাচ্চুর নেতৃত্বে তিতুমীর কলেজের সহসভাপতি কামালউদ্দিন আহমদ, গণবাহিনীর আবদুল্লাহ আল মামুন, ওয়াহিদুল ইসলাম সুটুল ও রতন ধানমন্ডিতে তাজউদ্দীনের বাসায় যান। কামালের বাড়ি ঢাকার কাপাসিয়া থানায়। তাঁর বড় ভাই নৌবাহিনীর প্রাক্তন লিডিং সি-ম্যান সুলতানউদ্দিন আহমদ আগরতলা মামলার অন্যতম অভিযুক্ত এবং জাসদের কেন্দ্রীয় কমিটির প্রচার সম্পাদক ছিলেন। তাজউদ্দীনের সঙ্গে তাঁর পূর্বপরিচয় ছিল এবং একই এলাকায় বাড়ি বলে তাঁদের মাঝেমধ্যে দেখা-সাক্ষাৎ হতো।
তাজউদ্দীনের বাসায় গিয়ে তাঁরা শুনলেন, তিনি গোসল করছেন। তাঁরা বাইরের ঘরে অপেক্ষা করতে থাকলেন। মিনিট দশেক পর তাজউদ্দীন এলেন। পরনে একটা পায়জামা, গায়ে হাতাওয়ালা গেঞ্জি। সিলিং ফ্যানের নিচে দাঁড়িয়ে দুই হাতের আঙুল দিয়ে ব্যাকব্রাশের মতো ভঙ্গিতে চুল থেকে পানি ঝরাচ্ছিলেন। পানির ঝাপটা কামালের চোখে-মুখে এসে লাগছিল।
তাজউদ্দীন উত্তেজিত হয়ে বলতে থাকলেন, 'বোকার দল লাল বাহিনী বানায়, নীল বাহিনী বানায়। কোনো বাহিনী তাঁকে বাঁচাতে পারল?'
বাচ্চু বললেন, 'আপনাকে আমাদের সঙ্গে যেতে হবে।' তাজউদ্দীন বললেন, 'কোথায় যাব? কেন তোমাদের সঙ্গে যাব?' বাচ্চু বারবার বলছিলেন, 'যেতেই হবে।'
তাজউদ্দীন বললেন, 'এটা কারা করল? রাইটিস্টরা না লেফটিস্টরা? লেফটিস্টরা হলে আমাকে আর জীবিত রাখবে না।' লেফটিস্ট বলতে তিনি পিকিংপন্থীদের বোঝাচ্ছিলেন। বাচ্চুর কথার জবাবে তিনি বললেন, 'সিরাজ কোথায়? ও যদি বলে তাহলে যেতে পারি। তাকে নিয়ে আসো।' বাচ্চু বেরিয়ে গেলেন। আধঘণ্টা পর তিনি ফিরে এসে জানালেন, সিরাজুল আলম খান কোথায় আছেন, তা জানা যায়নি। বাচ্চু জানতেন না, তিনি দেশে নেই। অগত্যা তাজউদ্দীনকে ছাড়াই তাঁরা ফিরে এলেন।
তাজউদ্দীনকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হবে এবং কেন, এটা বাচ্চু ছাড়া তাঁর অন্য সহযোগীরা জানতেন না। পঁচাত্তরের ২৬ নভেম্বরে ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশনে অভিযানের ঘটনায় বাচ্চু নিহত হলে বিষয়টি চাপা পড়ে যায়। এটা আর হয়তো কোনো দিনই জানা যাবে না, কে বাচ্চুকে পাঠিয়েছিল এবং কী উদ্দেশ্যে।
আগামীকাল শেষ পর্ব: বাকশালকে বাদ দিয়ে তাহেরের জাতীয় সরকার?
প্রথমা প্রকাশন থেকে প্রকাশিতব্য বই জাসদের উত্থান-পতন: অস্থির সময়ের রাজনীতি থেকে নেওয়া অংশবিশেষ।
মহিউদ্দিন আহমদ: লেখক ও গবেষক।
mohi2005@gmail.com

http://www.prothom-alo.com/opinion/article/289297/%E2%80%98

Prothom Alo

ফিরে দেখা পঁচাত্তর : 

তাজউদ্দীন খুনিদের প্রস্তাব নাকচ করে দিলেন


মহিউদ্দিন আহমদ | আপডেট: ০০:০৬, আগস্ট ১২, ২০১৪ | প্রিন্ট সংস্করণ                                                                                               পরবর্তী অংশ

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাজউদ্দীন আহমদ


আগামীকাল: নূর বললেন, 'আমি সবাইকে মেরে প্রতিশোধ নিয়েছি'
প্রথমা প্রকাশন থেকে প্রকাশিতব্য বই জাসদের উত্থান-পতন: অস্থির সময়ের রাজনীতি থেকে নেওয়া অংশবিশেষ।
মহিউদ্দিন আহমদ: লেখক ও গবেষক।
mohi2005@gmail.com

http://www.prothom-alo.com/opinion/article/288475

তাজউদ্দীন-খুনিদের-প্রস্তাব-নাকচ-করে-দিলেন

তাজউদ্দীন-খুনিদের-প্রস্তাব-নাকচ-করে-দিলেন-part-2

Prothom Alo




__._,_.___

Posted by: SyedAslam <Syed.Aslam3@gmail.com>


****************************************************
Mukto Mona plans for a Grand Darwin Day Celebration: 
Call For Articles:

http://mukto-mona.com/wordpress/?p=68

http://mukto-mona.com/banga_blog/?p=585

****************************************************

VISIT MUKTO-MONA WEB-SITE : http://www.mukto-mona.com/

****************************************************

"I disapprove of what you say, but I will defend to the death your right to say it".
               -Beatrice Hall [pseudonym: S.G. Tallentyre], 190





__,_._,___