বুধবার, ২০ আগষ্ট ২০১৪, ৫ ভাদ্র ১৪২১
ফিরে দেখা পঁচাত্তর: মুজিব হত্যা, খুনি মেজররা ও আমাদের দ্বিচারিতা
জিয়া-ডালিম ও ১৫ আগস্ট লে. কর্নেল (অব) ডালিমের বয়ান
মুনতাসীর মামুন
আজ থেকে শুরু হচ্ছে ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মুনতাসীর মামুনের 'জিয়া-ডালিম ও ১৫ আগস্ট ॥ লে. কর্নেল (অব) ডালিমের বয়ান' শীর্ষক ধারাবাহিক রচনা। রচনাটিতে বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের পূর্বাপর অনেক অপ্রকাশিত তথ্য ও সত্য উপস্থাপিত হয়েছে। ইতিহাসের আলোকে জিয়াউর রহমানও যে বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের সঙ্গে নানাভাবে জড়িত তার পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্য-উপাত্তও রচনাটির উল্লেখযোগ্য দিক। সেনাবাহিনীর একটি বিভ্রান্ত অংশ যারা বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশের চেতনাবিরোধী তাদের সঙ্গে জিয়াউর রহমানের ছিল ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ। বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ে তার ছিল প্রত্যক্ষ সমর্থন। আলোচ্য লেখাটিতে উঠে এসেছে বঙ্গবন্ধু হত্যাকা- ও তৎপরবর্তী ইতিহাসের নানা উল্লেখযোগ্য দিক।
আমার পাঠকভাগ্য তেমন ভাল নয়। প্রায় এক দশক খেটে গবেষণামূলক একটি বই লিখেছিলাম, নাম, 'বাংলাদেশী জেনারেলদের মন।' গত বছর সময় প্রকাশনী তা প্রকাশ করেছিল। বইটি পাঠকদের তেমন আকৃষ্ট করতে পেরেছে বলে মনে হয় না। প্রকাশকের হাস্যহীন মুখই এর প্রমাণ।
বইটির মূল উপজীব্য ছিল ১৯৭৫ সালের পর তিন দশক যেসব সেনা কর্মকর্তা দেশের ভাগ্য নিয়ন্ত্রণ করেছে তাদের মনমানসিকতার ওপর। কাকুল প্রশিক্ষিত ৩৩ জন সেনা কর্মকর্তার লিখিত বইয়ের ওপর ছিল মূল আলোচনা। কাকুলের বাইরে ছিলেন একজন, জেনারেল মঈন ইউ আহমেদ। কেন আমাদের দেশটির সবকিছু এমন জগাখিচুড়ি পাকিয়ে গেল তার একটি ধারণা হয়ত পাওয়া যাবে ঐ বইয়ে।
জাতীয় শোক দিবসে এই বইটির কথা ফের মনে হলো। ঐ বইতে বঙ্গবন্ধুর খুনী লে. কর্নেল (অব.) শরিফুল হক ডালিম, আমাদের কাছে যিনি পরিচিত মেজর ডালিম নামে তাঁর সম্পর্কে আলোচনা আছে। আপনারা হয়ত অনেকে জানেন না, ডালিম একটি আত্মজীবনী লিখেছেন, যার নাম- 'যা দেখেছি, যা বুঝেছি, যা করেছি'। ঐ আলোচনার সূত্র ধরেই আজকের প্রবন্ধ।
বইয়ের শেষ প্রচ্ছদে বইয়ের নির্যাস দেয়া হয়েছে ডালমীয় ভাষায়। 'ডালিম বলছি'- তে তিনি লিখেছেন-
''বাংলাদেশ এবং স্বাধীনতার যুদ্ধ সম্পর্কে অনেক কিছু লেখা হলেও পুরো সত্য এখনও উদঘাটিত হয়নি। যারা প্রথম থেকেই ভারতীয় নীলনকশা সম্পর্কে অবগত ছিলেন এবং শেখ মুজিবের বিরোধিতা করেছিলেন তাঁদের পক্ষে বিশ্বাস করা তেমন কঠিন ছিল না যে, দেশের সার্বিক অবস্থা ক্রমান্বয়ে চরম পরিণতির দিকেই ধাবিত হবে। কিন্তু যারা শেখ মুজিবের ওপর অগাধ বিশ্বাস রেখেছিলেন তাঁদের পক্ষে তেমনটি যে ঘটবেই সেটা মেনে নেয়া কিছুতেই সম্ভব ছিল না। শেখ মুজিব সাধারণ ব্যক্তি ছিলেন না, যে পদে তিনি অধিষ্ঠিত হয়েছিলেন সেটাও ছিল অসাধারণ। সমভাবে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বিষয়টিও ছিল অত্যন্ত জটিল। সেদিক থেকে বিচার করলে এই বইয়ের মাধ্যমে বেরিয়ে আসা প্রত্যেকটি ইস্যুই বিশদ বিশ্লেষণের দাবিদার। আন্দোলনের সময় মুজিব ছিলেন অতি জনপ্রিয় একজন কাক্সিক্ষত নেতা কিন্তু স্বাধীনতার উত্তরকালে তিনিই হয়ে ওঠেন জনধিক্কৃত নিকৃষ্টতম এক স্বৈরাচারী শাসক। তাঁর এই দুই বিপরীত চরিত্রের মধ্যে রয়েছে এক হারিয়ে যাওয়া যোগসূত্র। শেখ মুজিবের এই চারিত্রিক দ্বৈততাকে এক সূত্রে বেঁধে ছিল কোন একটি বিশেষ তাড়না : "
ডালিমের এই বক্তব্যই বলে দেয় তার বইয়ে কী থাকবে। মূলত আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য এ বইটি লেখা। সে কারণে যাকে খুন করেছেন তাকে যদি 'নিকৃষ্টতম স্বৈরাচারী শাসক' হিসেবে আখ্যায়িত করা না যায়, তাহলে তাদের কর্মকা-ের যৌক্তিকতা থাকে না। যেমন, জিয়াকে স্বাধীনতার ঘোষক না বললে তার 'নেতা' হওয়ার যৌক্তিকতা থাকে না।
ডালিম মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়েছিলেন বটে কিন্তু তার চিন্তা চেতনায় মুক্তিযুদ্ধের 'ম'ও ছিল না। বরং, পাকিস্তানী মানস তার লেখায় স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। পাকিস্তানী নেতারা তার কাছে 'নিকৃষ্টতম স্বৈরাচারী শাসক' নন বরং তাদের প্রতি প্রশংসার সুর আছে। গণহত্যা, ধর্ষণ বা ঘাতকদের সম্পর্কে তিনি প্রায় নীরব। প্রত্যেক সামরিক অফিসার যারা ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়েছিলেন, তাদের বইয়ে যুদ্ধের বিস্তারিত বর্ণনা আছে। ডালিমের বইতে তা' নেই।
পাকিস্তানীদের মতোই তিনি মনে করেন, তাজউদ্দীন ভারতের হয়ে কাজ করেছেন এবং ভারত এই যুদ্ধে সাহায্য করেছে নিজ স্বার্থ রক্ষায়। মুক্তিযুদ্ধের আগে ও পরে তিনি কেবল 'র-এর ষড়যন্ত্র' দেখেছেন। আইএসআই মনে হবে মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে ছিল। তার সমস্ত ক্রোধ বঙ্গবন্ধুর ওপর, বাংলাদেশ স্বাধীন করে মনে হয় তিনি অপরাধ করেছিলেন।
এ প্রবন্ধে ডালিমের যে বয়ান দেয়া হয়েছে তা ডালিমেরই। এবং তা যে অতিরঞ্জিত এবং নিজেকে নায়ক হিসেবে প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা হয়েছে তা বলাই বাহুল্য। এখানেই আসে পদ্ধতির কথা। তার ভাষ্য কিভাবে আমরা বিশ্লেষণ করব? বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে তার বয়ান যদি অতিরঞ্জিত হয় তাহলে একই সূত্রে বলতে হয়, জিয়া সম্পর্কেও তার বয়ান হতে পারে অতিরঞ্জিত। ব্যাপারটি কিন্তু তা নয়। জিয়া ও তার সাথীদের নিয়ে তিনি যেসব ঘটনার কথা উল্লেখ করেছেন তাতে হয়ত অতিরঞ্জন খানিকটা থাকতে পারে কিন্তু পুরোটা নয়। কারণ ঐ সময় তারা যে রকম কর্মকা- করেছেন ১৯৭৫ সালের পরও তাই করেছেন। এবং সমসাময়িক অন্যান্যদের ভাষ্যও কিন্তু ডালিমের ভাষ্য সমর্থন করে। আর ষড়যন্ত্রের বিষয়টি তিনি যদি বয়ান না করেন তাহলে তার নায়ক হয়ে ওঠাও তো হয় না।
অন্যদিকে, বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে তার যে ভাষ্য তা সমসাময়িক ভাষ্য থেকে ভিন্ন। এই ভাষ্যের সঙ্গে মিল আছে অতিবাম, অতিডান দলগুলোর। খুব সাধারণ একটা কথা বলি, বঙ্গবন্ধু যদি 'নিকৃষ্টতম স্বৈরাচারী' হতেন, তা হলে ডালিম যা করেছেন [তার নিজের ভাষ্য অনুযায়ী] তখনই তাকে কোর্ট মার্শাল করে ফাঁসি দেয়া হতো। কিন্তু তা তো করা হয়ইনি, বরং বঙ্গবন্ধু তাকে সুযোগ দিয়েছেন খুন করার। আবার জিয়াউর রহমান হাজারখানেক সেনা কর্মকর্তাকে ফাঁসি দিয়েছেন কারণে অকারণে। কর্নেল তাহের এর উদাহরণ। কর্নেল তাহের বা জাসদ তো বঙ্গবন্ধু সরকারকেই উৎখাত করতে চেয়েছে, গণবাহিনীই তার উদাহরণ। হত্যা হয়ত করতে চায়নি। সেই অপরাধে যদি কর্নেল তাহেরের ফাঁসি হয়, তাহলে বঙ্গবন্ধু সরকারকে উৎখাত ও তাঁকে সপরিবারে খুন করার জন্য ডালিম-নূরদের কয়েকবার ফাঁসি দেয়া উচিত ছিল। কিন্তু তাদের দেয়া হয়েছিল দায়মুক্তি। কারণ তাদের ষড়যন্ত্রে জিয়াও ছিলেন যুক্ত এবং ডালিমের বয়ানে তার বিস্তারিত বিবরণ আছে।
সেনা কর্মকর্তারা মুক্তিযুদ্ধের পর পরই কর্তৃত্ব চেয়েছিলেন। আমি 'বাংলাদেশী জেনারেলদের মনে' তা দেখিয়েছি। ডালিমের বয়ানেও সে কথা লেখা হয়েছেÑ
"...বইয়ের বিষয়গুলো ঐ সমস্ত লোকের জীবন থেকে নেয়া যারা শুধুমাত্র নিষ্ক্রিয় নীরব দর্শক ছিলেন না। তারা সবাই ছিলেন স্বাধীনতার সংগ্রামে প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণকারী বীর মুক্তিযোদ্ধা। তখনকার ঘটনাপ্রবাহ এবং পরবর্তীকালে স্বাধীন বাংলাদেশের রাজনীতির সাথেও তারা সবাই ছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণকারী বীর মুক্তিযোদ্ধা। তখনকার ঘটনাপ্রবাহ এবং পরবর্তীকালে স্বাধীন বাংলাদেশের রাজনীতির সাথেও তারা [সেনা কর্মকর্তা] ছিলেন প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত। তাই যুক্তিসঙ্গত কারণেই মুক্তিযুদ্ধ এবং দেশ সম্পর্কে কর্তৃত্বের সাথে কথা বলার অগ্রাধিকার রয়েছে।''
বঙ্গবন্ধুকে খুন করা হয়েছিল শুধু বাংলাদেশ আদর্শ বিলোপের জন্যই নয়, সেনাদের কর্তৃত্ব রাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠা করার জন্যও। ১৯৭৫ সালের পর প্রায় দু'দশক সে কারণেই তারা বন্দুকের জোরে শাসন করেছেন।
গত কয়েকদিন ধরে বিএনপি নেতৃবৃন্দ বলছেন, বঙ্গবন্ধু হত্যার সঙ্গে জিয়ার কোন সম্পর্ক ছিল না এবং প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রতিক অীভযোগের আগে এ বিষয়ে কেউ কোন কথা তোলেনি। এটি সর্বৈব মিথ্যা। বঙ্গবন্ধু হত্যার সঙ্গে জিয়াউর রহমানের সংশ্লিষ্টতা প্রথম প্রকাশ্যে ঘোষণা করেন খুনী চক্রের রশীদ আর ফারুক। তারপর সাংবাদিক এ্যান্থনি মাসকারেনহাস। লেখার শুরুতে আমার যে বইয়ের কথা উল্লেখ করেছি তাতেও এ সম্পর্কে পর্যাপ্ত তথ্য আছে।
লে. কর্নেল ডালিমের বয়ানে পরিষ্কারভাবে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে খুনের সঙ্গে জিয়াউর রহমানের সংশ্লিষ্টতার তথ্য আছে। জিয়া সংশ্লিষ্ট ছিলেন দেখেই খুনী চক্রকে দায়মুক্তি দিয়েছিলেন।
অনেকদিন আগে লিখেছিলাম, মুক্তিযুদ্ধ করা যত সহজ ছিল মুক্তিযোদ্ধা থাকাটা তত সহজ ছিল না। এ মন্তব্যে তখন অনেকে ক্ষুব্ধ হলেও এখন রাজনৈতিক নেতা থেকে কলাম লেখকÑ অনেকেই এ মন্তব্য ব্যবহার করেন। কারণ, প্রমাণিত হয়েছে, স্বতঃস্ফূর্তভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়া গেছে। তারপর বিভিন্ন ধরনের লোভ, উচ্চাকাক্সক্ষার কারণে তারা আর ঐ পবিত্র পথে থাকতে পারেননি। জিয়া থেকে ডালিম সবাই এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ।
ডালিম মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। তাকে এ জন্য বীরউত্তম উপাধি দেয়া হয়েছিল। পদক বিতরণেও তৎকালীন সেনা কর্মকর্তাদের দারুণ পক্ষপাতিত্ব পরিলক্ষিত হয়। কিছু সেনা কর্মকর্তা বাদে প্রায় সবাইকে মুক্তিযুদ্ধের উপাধি বিতরণ করা হয় এটা প্রমাণে যে, তারাই ছিলেন যুদ্ধের চালিকাশক্তি। মেজর আবু ওসমান, মেজর জলিল বা ক্যাপ্টেন সুবিদ আলী ভূঁইয়ার মতো কিছু সেনা কর্মকর্তাকে পদক দেয়া হয়নি, হয়ত ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বের কারণে। ডালিমদের থেকে ঢের সাহসিকতা দেখিয়েছেন অনেক সিভিলিয়ান মুক্তিযোদ্ধা। তাদের কোন পদক দেয়া হয়নি।
যাক সে কথা, ডালিম বা তার সঙ্গীরা কি সেই পদকের মর্যাদা রাখতে পেরেছেন? যিনি পদক দিয়েছেন, যিনি তাদের সর্বাধিনায়ক ছিলেন, ডালিম যে রাষ্ট্রে চাকরি করতেন, সে রাষ্ট্রই যিনি সৃষ্টি করেছিলেন, যিনি ছিলেন নিরস্ত্র, তাকে সপরিবারে খুন করা এক ধরনের কাপুরুষতা, বিশ্বাসঘাতকতা ও দেশদ্রোহিতা। শিশু রাসেলকে যারা হত্যা করতে পারে তারা তো মানুষ নয়। বেগম মুজিব বা সুলতানা কামালের মতো অসহায় নারীদের যারা হত্যা করতে পারে তাদের সাহসিকতা নিয়েও প্রশ্ন আছে। যারা মানুষ নয় তাদের গলায় তো রাষ্ট্রীয় পদক শোভা পায় না।
কোন আওয়ামী নেতা বা সত্যিকারের মুক্তিযোদ্ধা গত ৩৯ বছরে এই প্রশ্ন তোলেননি। ব্যক্তিগত নিরাপত্তা জলাঞ্জলি দিয়ে আমি এ প্রশ্ন উত্থাপন করলাম। এ দাবি করছি, যারা ১৯৭৫ সালের খুনের জন্য দায়ী তাদের যদি কোন রাষ্ট্রীয় পদক দেয়া হয়ে থাকে তবে তা অবিলম্বে প্রত্যাহার করা হোক। লে. কর্নেল (অব.) ডালিম বঙ্গবন্ধুর হত্যার জন্য দায়ী এবং সে কারণে মৃত্যুদ-প্রাপ্ত। মুক্তিযুদ্ধে তার যত অবদানই থাকুক জাতির পিতার হত্যা, নারী ও শিশু হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার অর্থ হচ্ছে তিনি প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না। তারা পাকিস্তানের হয়ে কাজ করছিলেন। ইসলামাবাদে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে ১৯৭৫ সালের মার্চ মাসে জুলফিকার আলী ভুট্টো বলেছিলেন, খুব শীঘ্রই মুজিব সরকারকে উৎখাত করা হবে এবং সেনা শাসন প্রতিষ্ঠিত হবে। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশকে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ঘোষণা করা হবে। কিভাবে ভুট্টো এ কথা বলেন যদি আইএসআইয়ের যোগসাজশ না থাকে। লে. কর্নেল (অব.) ফারুক, বিজয়ের একদিন আগে যোগ দিয়ে মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট দাবি করেছিলেন। জেনারেল ওসমানীর হস্তক্ষেপের জন্য তা দেয়া হয়নি। অর্থাৎ, পুরো চক্রটিরও যোগসাজশ ছিল আইএসআইয়ের সঙ্গে। সুতরাং যদি বলা হয় খুনী চক্র ও সংশ্লিষ্টরা মুক্তিযুদ্ধে যোগই দিয়েছিল পাকিস্তানের স্বার্থ দেখার জন্য তা হলে তা অযৌক্তিক হবে কেন? এরা মুক্তিযুদ্ধে ছিলেন বলেই সব মাফ হয়ে যায় না। ডালিম বা তার সঙ্গীরা যে অপরাধ করেছেন, সে অপরাধের কারণে এবং জনস্বার্থে তাদের সব ধরনের উপাধি ও র্যাঙ্ক বাতিল করা হবে রাষ্ট্রীয় কর্তব্য। না হলে সমাজে, রাষ্ট্রে এ ধরনের উপাধির গুরুত্ব হ্রাস পাবে। আমার মনে আছে, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় আসে তখন পুরস্কার প্রদানের দিন পুরস্কারপ্রাপ্ত বুয়েটের উপাচার্যের পুরস্কার বাতিল করা হয়। এটি হচ্ছে রাষ্ট্রের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পুরস্কার। আর জাতির জনক, শিশু ও নারী হন্তারকদের উপাধি-র্যাঙ্ক বহাল থাকবে তা হতে পারে না এবং তা বিসদৃশ। (চলবে)
আমার পাঠকভাগ্য তেমন ভাল নয়। প্রায় এক দশক খেটে গবেষণামূলক একটি বই লিখেছিলাম, নাম, 'বাংলাদেশী জেনারেলদের মন।' গত বছর সময় প্রকাশনী তা প্রকাশ করেছিল। বইটি পাঠকদের তেমন আকৃষ্ট করতে পেরেছে বলে মনে হয় না। প্রকাশকের হাস্যহীন মুখই এর প্রমাণ।
বইটির মূল উপজীব্য ছিল ১৯৭৫ সালের পর তিন দশক যেসব সেনা কর্মকর্তা দেশের ভাগ্য নিয়ন্ত্রণ করেছে তাদের মনমানসিকতার ওপর। কাকুল প্রশিক্ষিত ৩৩ জন সেনা কর্মকর্তার লিখিত বইয়ের ওপর ছিল মূল আলোচনা। কাকুলের বাইরে ছিলেন একজন, জেনারেল মঈন ইউ আহমেদ। কেন আমাদের দেশটির সবকিছু এমন জগাখিচুড়ি পাকিয়ে গেল তার একটি ধারণা হয়ত পাওয়া যাবে ঐ বইয়ে।
জাতীয় শোক দিবসে এই বইটির কথা ফের মনে হলো। ঐ বইতে বঙ্গবন্ধুর খুনী লে. কর্নেল (অব.) শরিফুল হক ডালিম, আমাদের কাছে যিনি পরিচিত মেজর ডালিম নামে তাঁর সম্পর্কে আলোচনা আছে। আপনারা হয়ত অনেকে জানেন না, ডালিম একটি আত্মজীবনী লিখেছেন, যার নাম- 'যা দেখেছি, যা বুঝেছি, যা করেছি'। ঐ আলোচনার সূত্র ধরেই আজকের প্রবন্ধ।
বইয়ের শেষ প্রচ্ছদে বইয়ের নির্যাস দেয়া হয়েছে ডালমীয় ভাষায়। 'ডালিম বলছি'- তে তিনি লিখেছেন-
''বাংলাদেশ এবং স্বাধীনতার যুদ্ধ সম্পর্কে অনেক কিছু লেখা হলেও পুরো সত্য এখনও উদঘাটিত হয়নি। যারা প্রথম থেকেই ভারতীয় নীলনকশা সম্পর্কে অবগত ছিলেন এবং শেখ মুজিবের বিরোধিতা করেছিলেন তাঁদের পক্ষে বিশ্বাস করা তেমন কঠিন ছিল না যে, দেশের সার্বিক অবস্থা ক্রমান্বয়ে চরম পরিণতির দিকেই ধাবিত হবে। কিন্তু যারা শেখ মুজিবের ওপর অগাধ বিশ্বাস রেখেছিলেন তাঁদের পক্ষে তেমনটি যে ঘটবেই সেটা মেনে নেয়া কিছুতেই সম্ভব ছিল না। শেখ মুজিব সাধারণ ব্যক্তি ছিলেন না, যে পদে তিনি অধিষ্ঠিত হয়েছিলেন সেটাও ছিল অসাধারণ। সমভাবে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বিষয়টিও ছিল অত্যন্ত জটিল। সেদিক থেকে বিচার করলে এই বইয়ের মাধ্যমে বেরিয়ে আসা প্রত্যেকটি ইস্যুই বিশদ বিশ্লেষণের দাবিদার। আন্দোলনের সময় মুজিব ছিলেন অতি জনপ্রিয় একজন কাক্সিক্ষত নেতা কিন্তু স্বাধীনতার উত্তরকালে তিনিই হয়ে ওঠেন জনধিক্কৃত নিকৃষ্টতম এক স্বৈরাচারী শাসক। তাঁর এই দুই বিপরীত চরিত্রের মধ্যে রয়েছে এক হারিয়ে যাওয়া যোগসূত্র। শেখ মুজিবের এই চারিত্রিক দ্বৈততাকে এক সূত্রে বেঁধে ছিল কোন একটি বিশেষ তাড়না : "
ডালিমের এই বক্তব্যই বলে দেয় তার বইয়ে কী থাকবে। মূলত আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য এ বইটি লেখা। সে কারণে যাকে খুন করেছেন তাকে যদি 'নিকৃষ্টতম স্বৈরাচারী শাসক' হিসেবে আখ্যায়িত করা না যায়, তাহলে তাদের কর্মকা-ের যৌক্তিকতা থাকে না। যেমন, জিয়াকে স্বাধীনতার ঘোষক না বললে তার 'নেতা' হওয়ার যৌক্তিকতা থাকে না।
ডালিম মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়েছিলেন বটে কিন্তু তার চিন্তা চেতনায় মুক্তিযুদ্ধের 'ম'ও ছিল না। বরং, পাকিস্তানী মানস তার লেখায় স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। পাকিস্তানী নেতারা তার কাছে 'নিকৃষ্টতম স্বৈরাচারী শাসক' নন বরং তাদের প্রতি প্রশংসার সুর আছে। গণহত্যা, ধর্ষণ বা ঘাতকদের সম্পর্কে তিনি প্রায় নীরব। প্রত্যেক সামরিক অফিসার যারা ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়েছিলেন, তাদের বইয়ে যুদ্ধের বিস্তারিত বর্ণনা আছে। ডালিমের বইতে তা' নেই।
পাকিস্তানীদের মতোই তিনি মনে করেন, তাজউদ্দীন ভারতের হয়ে কাজ করেছেন এবং ভারত এই যুদ্ধে সাহায্য করেছে নিজ স্বার্থ রক্ষায়। মুক্তিযুদ্ধের আগে ও পরে তিনি কেবল 'র-এর ষড়যন্ত্র' দেখেছেন। আইএসআই মনে হবে মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে ছিল। তার সমস্ত ক্রোধ বঙ্গবন্ধুর ওপর, বাংলাদেশ স্বাধীন করে মনে হয় তিনি অপরাধ করেছিলেন।
এ প্রবন্ধে ডালিমের যে বয়ান দেয়া হয়েছে তা ডালিমেরই। এবং তা যে অতিরঞ্জিত এবং নিজেকে নায়ক হিসেবে প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা হয়েছে তা বলাই বাহুল্য। এখানেই আসে পদ্ধতির কথা। তার ভাষ্য কিভাবে আমরা বিশ্লেষণ করব? বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে তার বয়ান যদি অতিরঞ্জিত হয় তাহলে একই সূত্রে বলতে হয়, জিয়া সম্পর্কেও তার বয়ান হতে পারে অতিরঞ্জিত। ব্যাপারটি কিন্তু তা নয়। জিয়া ও তার সাথীদের নিয়ে তিনি যেসব ঘটনার কথা উল্লেখ করেছেন তাতে হয়ত অতিরঞ্জন খানিকটা থাকতে পারে কিন্তু পুরোটা নয়। কারণ ঐ সময় তারা যে রকম কর্মকা- করেছেন ১৯৭৫ সালের পরও তাই করেছেন। এবং সমসাময়িক অন্যান্যদের ভাষ্যও কিন্তু ডালিমের ভাষ্য সমর্থন করে। আর ষড়যন্ত্রের বিষয়টি তিনি যদি বয়ান না করেন তাহলে তার নায়ক হয়ে ওঠাও তো হয় না।
অন্যদিকে, বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে তার যে ভাষ্য তা সমসাময়িক ভাষ্য থেকে ভিন্ন। এই ভাষ্যের সঙ্গে মিল আছে অতিবাম, অতিডান দলগুলোর। খুব সাধারণ একটা কথা বলি, বঙ্গবন্ধু যদি 'নিকৃষ্টতম স্বৈরাচারী' হতেন, তা হলে ডালিম যা করেছেন [তার নিজের ভাষ্য অনুযায়ী] তখনই তাকে কোর্ট মার্শাল করে ফাঁসি দেয়া হতো। কিন্তু তা তো করা হয়ইনি, বরং বঙ্গবন্ধু তাকে সুযোগ দিয়েছেন খুন করার। আবার জিয়াউর রহমান হাজারখানেক সেনা কর্মকর্তাকে ফাঁসি দিয়েছেন কারণে অকারণে। কর্নেল তাহের এর উদাহরণ। কর্নেল তাহের বা জাসদ তো বঙ্গবন্ধু সরকারকেই উৎখাত করতে চেয়েছে, গণবাহিনীই তার উদাহরণ। হত্যা হয়ত করতে চায়নি। সেই অপরাধে যদি কর্নেল তাহেরের ফাঁসি হয়, তাহলে বঙ্গবন্ধু সরকারকে উৎখাত ও তাঁকে সপরিবারে খুন করার জন্য ডালিম-নূরদের কয়েকবার ফাঁসি দেয়া উচিত ছিল। কিন্তু তাদের দেয়া হয়েছিল দায়মুক্তি। কারণ তাদের ষড়যন্ত্রে জিয়াও ছিলেন যুক্ত এবং ডালিমের বয়ানে তার বিস্তারিত বিবরণ আছে।
সেনা কর্মকর্তারা মুক্তিযুদ্ধের পর পরই কর্তৃত্ব চেয়েছিলেন। আমি 'বাংলাদেশী জেনারেলদের মনে' তা দেখিয়েছি। ডালিমের বয়ানেও সে কথা লেখা হয়েছেÑ
"...বইয়ের বিষয়গুলো ঐ সমস্ত লোকের জীবন থেকে নেয়া যারা শুধুমাত্র নিষ্ক্রিয় নীরব দর্শক ছিলেন না। তারা সবাই ছিলেন স্বাধীনতার সংগ্রামে প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণকারী বীর মুক্তিযোদ্ধা। তখনকার ঘটনাপ্রবাহ এবং পরবর্তীকালে স্বাধীন বাংলাদেশের রাজনীতির সাথেও তারা সবাই ছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণকারী বীর মুক্তিযোদ্ধা। তখনকার ঘটনাপ্রবাহ এবং পরবর্তীকালে স্বাধীন বাংলাদেশের রাজনীতির সাথেও তারা [সেনা কর্মকর্তা] ছিলেন প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত। তাই যুক্তিসঙ্গত কারণেই মুক্তিযুদ্ধ এবং দেশ সম্পর্কে কর্তৃত্বের সাথে কথা বলার অগ্রাধিকার রয়েছে।''
বঙ্গবন্ধুকে খুন করা হয়েছিল শুধু বাংলাদেশ আদর্শ বিলোপের জন্যই নয়, সেনাদের কর্তৃত্ব রাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠা করার জন্যও। ১৯৭৫ সালের পর প্রায় দু'দশক সে কারণেই তারা বন্দুকের জোরে শাসন করেছেন।
গত কয়েকদিন ধরে বিএনপি নেতৃবৃন্দ বলছেন, বঙ্গবন্ধু হত্যার সঙ্গে জিয়ার কোন সম্পর্ক ছিল না এবং প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রতিক অীভযোগের আগে এ বিষয়ে কেউ কোন কথা তোলেনি। এটি সর্বৈব মিথ্যা। বঙ্গবন্ধু হত্যার সঙ্গে জিয়াউর রহমানের সংশ্লিষ্টতা প্রথম প্রকাশ্যে ঘোষণা করেন খুনী চক্রের রশীদ আর ফারুক। তারপর সাংবাদিক এ্যান্থনি মাসকারেনহাস। লেখার শুরুতে আমার যে বইয়ের কথা উল্লেখ করেছি তাতেও এ সম্পর্কে পর্যাপ্ত তথ্য আছে।
লে. কর্নেল ডালিমের বয়ানে পরিষ্কারভাবে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে খুনের সঙ্গে জিয়াউর রহমানের সংশ্লিষ্টতার তথ্য আছে। জিয়া সংশ্লিষ্ট ছিলেন দেখেই খুনী চক্রকে দায়মুক্তি দিয়েছিলেন।
অনেকদিন আগে লিখেছিলাম, মুক্তিযুদ্ধ করা যত সহজ ছিল মুক্তিযোদ্ধা থাকাটা তত সহজ ছিল না। এ মন্তব্যে তখন অনেকে ক্ষুব্ধ হলেও এখন রাজনৈতিক নেতা থেকে কলাম লেখকÑ অনেকেই এ মন্তব্য ব্যবহার করেন। কারণ, প্রমাণিত হয়েছে, স্বতঃস্ফূর্তভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়া গেছে। তারপর বিভিন্ন ধরনের লোভ, উচ্চাকাক্সক্ষার কারণে তারা আর ঐ পবিত্র পথে থাকতে পারেননি। জিয়া থেকে ডালিম সবাই এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ।
ডালিম মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। তাকে এ জন্য বীরউত্তম উপাধি দেয়া হয়েছিল। পদক বিতরণেও তৎকালীন সেনা কর্মকর্তাদের দারুণ পক্ষপাতিত্ব পরিলক্ষিত হয়। কিছু সেনা কর্মকর্তা বাদে প্রায় সবাইকে মুক্তিযুদ্ধের উপাধি বিতরণ করা হয় এটা প্রমাণে যে, তারাই ছিলেন যুদ্ধের চালিকাশক্তি। মেজর আবু ওসমান, মেজর জলিল বা ক্যাপ্টেন সুবিদ আলী ভূঁইয়ার মতো কিছু সেনা কর্মকর্তাকে পদক দেয়া হয়নি, হয়ত ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বের কারণে। ডালিমদের থেকে ঢের সাহসিকতা দেখিয়েছেন অনেক সিভিলিয়ান মুক্তিযোদ্ধা। তাদের কোন পদক দেয়া হয়নি।
যাক সে কথা, ডালিম বা তার সঙ্গীরা কি সেই পদকের মর্যাদা রাখতে পেরেছেন? যিনি পদক দিয়েছেন, যিনি তাদের সর্বাধিনায়ক ছিলেন, ডালিম যে রাষ্ট্রে চাকরি করতেন, সে রাষ্ট্রই যিনি সৃষ্টি করেছিলেন, যিনি ছিলেন নিরস্ত্র, তাকে সপরিবারে খুন করা এক ধরনের কাপুরুষতা, বিশ্বাসঘাতকতা ও দেশদ্রোহিতা। শিশু রাসেলকে যারা হত্যা করতে পারে তারা তো মানুষ নয়। বেগম মুজিব বা সুলতানা কামালের মতো অসহায় নারীদের যারা হত্যা করতে পারে তাদের সাহসিকতা নিয়েও প্রশ্ন আছে। যারা মানুষ নয় তাদের গলায় তো রাষ্ট্রীয় পদক শোভা পায় না।
কোন আওয়ামী নেতা বা সত্যিকারের মুক্তিযোদ্ধা গত ৩৯ বছরে এই প্রশ্ন তোলেননি। ব্যক্তিগত নিরাপত্তা জলাঞ্জলি দিয়ে আমি এ প্রশ্ন উত্থাপন করলাম। এ দাবি করছি, যারা ১৯৭৫ সালের খুনের জন্য দায়ী তাদের যদি কোন রাষ্ট্রীয় পদক দেয়া হয়ে থাকে তবে তা অবিলম্বে প্রত্যাহার করা হোক। লে. কর্নেল (অব.) ডালিম বঙ্গবন্ধুর হত্যার জন্য দায়ী এবং সে কারণে মৃত্যুদ-প্রাপ্ত। মুক্তিযুদ্ধে তার যত অবদানই থাকুক জাতির পিতার হত্যা, নারী ও শিশু হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার অর্থ হচ্ছে তিনি প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না। তারা পাকিস্তানের হয়ে কাজ করছিলেন। ইসলামাবাদে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে ১৯৭৫ সালের মার্চ মাসে জুলফিকার আলী ভুট্টো বলেছিলেন, খুব শীঘ্রই মুজিব সরকারকে উৎখাত করা হবে এবং সেনা শাসন প্রতিষ্ঠিত হবে। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশকে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ঘোষণা করা হবে। কিভাবে ভুট্টো এ কথা বলেন যদি আইএসআইয়ের যোগসাজশ না থাকে। লে. কর্নেল (অব.) ফারুক, বিজয়ের একদিন আগে যোগ দিয়ে মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট দাবি করেছিলেন। জেনারেল ওসমানীর হস্তক্ষেপের জন্য তা দেয়া হয়নি। অর্থাৎ, পুরো চক্রটিরও যোগসাজশ ছিল আইএসআইয়ের সঙ্গে। সুতরাং যদি বলা হয় খুনী চক্র ও সংশ্লিষ্টরা মুক্তিযুদ্ধে যোগই দিয়েছিল পাকিস্তানের স্বার্থ দেখার জন্য তা হলে তা অযৌক্তিক হবে কেন? এরা মুক্তিযুদ্ধে ছিলেন বলেই সব মাফ হয়ে যায় না। ডালিম বা তার সঙ্গীরা যে অপরাধ করেছেন, সে অপরাধের কারণে এবং জনস্বার্থে তাদের সব ধরনের উপাধি ও র্যাঙ্ক বাতিল করা হবে রাষ্ট্রীয় কর্তব্য। না হলে সমাজে, রাষ্ট্রে এ ধরনের উপাধির গুরুত্ব হ্রাস পাবে। আমার মনে আছে, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় আসে তখন পুরস্কার প্রদানের দিন পুরস্কারপ্রাপ্ত বুয়েটের উপাচার্যের পুরস্কার বাতিল করা হয়। এটি হচ্ছে রাষ্ট্রের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পুরস্কার। আর জাতির জনক, শিশু ও নারী হন্তারকদের উপাধি-র্যাঙ্ক বহাল থাকবে তা হতে পারে না এবং তা বিসদৃশ। (চলবে)
প্রকাশ : বুধবার, ২০ আগষ্ট ২০১৪, ৫ ভাদ্র ১৪২১
†hfv‡e †mbvcÖavb n‡jb †Rbv‡ij wRqv
How Gen Zia took the helm of army
As biggest beneficiary of Aug 15, he became chief martial law administrator, and finally, president
http://www.thedailystar.net/frontpage/how-gen-zia-took-the-helm-of-army-37291
Bangabandhu Killing : Zia passively involved
As biggest beneficiary of Aug 15, he became chief martial law administrator, and finally, president
http://www.thedailystar.net/frontpage/how-gen-zia-took-the-helm-of-army-37291
Bangabandhu Killing : Zia passively involved
Zia passively involved - The Daily Star
- Mar 15, 2011 - Zia decided to kill Taher as he wanted to appease the army officers ... was passively involved in the assassination of Bangabandhu Sheikh ...
- Video:
Mar 15, 2011 - Zia decided to kill Taher as he wanted to appease the army officers ... was passively involved in the assassination of Bangabandhu Sheikh ...
Video:
http://www.youtube.com/watch?v=dglIcOQtYUk
The killer duo Rashid and Farook tells Anthony Mascarenhas in an interview why they killed Mujib and the role of Zia and Mustaq and how they featured in their plan. The interview was taken in 1976 in London
http://www.youtube.com/watch?v=dglIcOQtYUk
The killer duo Rashid and Farook tells Anthony Mascarenhas in an interview why they killed Mujib and the role of Zia and Mustaq and how they featured in their plan. The interview was taken in 1976 in London
ফিরে দেখা পঁচাত্তর: মুজিব হত্যা, খুনি মেজররা ও আমাদের দ্বিচারিতা
__._,_.___