Banner Advertiser

Friday, August 1, 2014

[mukto-mona] কালের পুরান : আমাদেরও একজন সঞ্জয় মিত্র চাই



কালের পুরান 

আমাদেরও একজন সঞ্জয় মিত্র চাই

সোহরাব হাসান | আপডেট: ০০:০৭, আগস্ট ০২, ২০১৪ প্রিন্ট সংস্করণ

কোনো দেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বা সহিংসতা হলে সেটি যে সেই দেশের সংখ্যালঘুদের চেয়ে সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের জন্য বড় লজ্জার বিষয়, এই সত্যটি দেশবাসীকে জানান দিলেন সঞ্জয় মিত্র নামের একজন মহান ভারতীয় নাগরিক।১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর উগ্রপন্থী হিন্দুদের হাতে অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ ধ্বংস হওয়ার প্রতিবাদে সঞ্জয় মিত্র ২১ বছর ধরে রোজা রেখে চলেছেন। বাবরি মসজিদ ভাঙার সঙ্গে ব্যক্তি সঞ্জয় মিত্রের কোনো সম্পর্ক নেই। সে সময়ে ভারতের অনেক স্থানে দাঙ্গা-হাঙ্গামা হলেও সঞ্জয় মিত্র যে শহরের বাসিন্দা, সেই কলকাতা তথা পশ্চিমবঙ্গে কোনো অঘটন ঘটেনি। তার পরও সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ হিসেবে তিনি মনে করেন, এই ঘটনার প্রতিবাদ হওয়া উচিত। কীভাবে প্রতিবাদ হবে? একসময় সঞ্জয় মিত্র বামপন্থী রাজনীতি করতেন। তখন প্রতিবেশী মুসলিম পাড়ায় গিয়ে সদলবলে তাদের পাহারা দিতেন, যাতে দুর্বৃত্তরা কোনো ক্ষতি করতে না পারে। বর্তমানে তিনি রাজনীতি থেকে দূরে। তাই ব্যক্তিগতভাবে ব্যতিক্রমী এক প্রতিবাদের ভাষা বেছে নিলেন রমজান মাসের ৩০ দিন রোজা রেখে। প্রতিবেশী মুসলমানদের সঙ্গে সময় মিলিয়ে তিনিও রোজা রাখেন, তাঁদের সঙ্গে ইফতার করেন। তাঁর মতে, এটি হলো প্রতিবেশী মুসলমানদের প্রতি সহমর্মিতা জানানোর পাশাপাশি নিজ সম্প্রদায়ের পাপমোচনের উপায়। রোজা রেখে তিনি তাঁর সম্প্রদায়ের মানুষকে সংযমী হতে বলেন, হিংসা ও দ্বেষ থেকে দূরে থাকার শিক্ষা দেন। সঞ্জয় মিত্র আপনাকে অভিনন্দন। অন্য সম্প্রদায়ের মানুষের প্রতি আপনার এই সহমর্মিতা অনন্য উদাহরণ হয়ে থাকবে। সঞ্জয় মিত্র ভালো করেই জানেন যে তাঁর রোজা রাখার কারণে ভেঙে যাওয়া বাবরি মসজিদটি পুনঃপ্রতিষ্ঠা পাবে না। কিন্তু উগ্র হিন্দুরা মসজিদটি ভেঙে যে অন্যায় করেছেন, তার প্রতিকার না হওয়া পর্যন্ত প্রতিবাদ চালিয়ে যেতে হবে। ব্যক্তিগত ও শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ। ভারতে সে সময় অনেকেই বাবরি মসজিদ ভাঙার প্রতিবাদ করেছিলেন, এখনো করছেন। পশ্চিমবঙ্গের একজন বুদ্ধিজীবী বলেছিলেন, 'ওরা বাবরি মসজিদ ভাঙেনি, ভারতের হৃদয় ভেঙেছে।'

মসজিদ যেমন মুসলমানদের কাছে পবিত্র, তেমনি হিন্দু সম্প্রদায়ের কাছে মন্দিরও পবিত্র। খ্রিষ্টানদের কাছে গির্জা ও বৌদ্ধদের কাছে প্যাগোডা। ভারতে বাবরি মসজিদ ভাঙার প্রতিবাদে একজন সঞ্চয় মিত্র ২১ বছর ধরে রোজা রেখেছেন আর বাংলাদেশে যে হিন্দুদের শত শত মন্দির ভাঙা হচ্ছে, তার প্রতিবাদে সংখ্যাগুরু মুসলমান সম্প্রদায় কী করছে? রুটিন মাফিক প্রতিবাদ ও মৌখিক সহানুভূতি ছাড়া তেমন কিছু চোখে পড়ে না।
আমি রাষ্ট্রনীতি ও রাজনীতিকদের কথা বলছি না। রাষ্ট্রের নীতি বরাবরই শাসকগোষ্ঠীর স্বার্থে পরিচালিত হয়। সেই শাসকগোষ্ঠীকে পরিচালনা করে যে অর্থ বা পুঁজিতন্ত্র, তার কোনো বর্ণ নেই। যখন যে পাত্রে রাখা হয় সেই পাত্রের রং ধারণ করে। আমি বলছি সংখ্যাগুরু মুসলমান সম্প্রদায়ের কথা। আমি বলছি সমাজের বিবেক নামে পরিচিত লেখক, বুদ্ধিজীবী, শিক্ষক, আইনজীবী, সংস্কৃতিসেবীসহ সচেতন অংশের কথা। আমাদের রাজনীতিকেরা কথায় কথায় বাংলাদেশকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উজ্জ্বল উদাহরণ বলে দাবি করেন। কিন্তু দেশি-বিদেশি গবেষণা সংস্থাগুলোর প্রতিবেদন তার বিপরীত চিত্রই তুলে ধরে।


গত ২৮ জুলাই প্রকাশিত যুক্তরাষ্ট্রের ধর্মীয় স্বাধীনতাবিষয়ক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, 'বাংলাদেশজুড়ে ধর্মীয় সংখ্যালঘু, বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের মন্দির-ঘরবাড়িতে আগুন ধরানোর পাশাপাশি লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। গত বছর বিভিন্ন মন্দিরের ৪৯৫টি মূর্তি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া, হিন্দু সম্প্রদায়ের ২৭৮টি বাড়ি ও ২০৮টি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে হামলা চালানো হয়েছে। এসব ঘটনায় একজনের মৃত্যু ও ১৮৮ জন আহত হয়েছে। (প্রথম আলো, ১ আগস্ট ২০১৪)
হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর নির্বাচন ও যুদ্ধাপরাধের বিচারকে কেন্দ্র করে সংঘটিত সহিংসতায় হিন্দু সম্প্রদায়ের পাঁচ হাজার বসতবাড়ি ও অর্ধশতাধিক মন্দিরে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।
মানুষের বসতবাড়ি ভাঙলে একটি বাড়িই ভাঙে, যা আবার নির্মাণ করা যায়। কিন্তু মন্দির বা উপাসনালয় কেবল ইট-পাথরের স্থাপনা নয়, মানুষের হৃদয় ও পবিত্রতার প্রতীক। সেটি ভাঙা মানে তার হৃদয় ভাঙা। তাঁর ধর্ম ও গোটা সম্প্রদায়কে আহত করা।
ভারতে বাবরি মসজিদ ভাঙার জন্য কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে আসামির কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীকে তদন্ত কমিশনের সামনে জবাবদিহি করতে হয়েছে। গুজরাটে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার দায় থেকে নরেন্দ্র মোদি রেহাই পেলেও অনেকে শাস্তি পেয়েছেন। জেল খেটেছেন। কিন্তু বাংলাদেশে ২০০১ সালের সাম্প্রদায়িক সহিংসতার তথ্য উদ্ঘাটনে গঠিত সাহাবুদ্দিন কমিশনের রিপোর্ট এখনো ফাইলবন্দী হয়ে আছে। অপরাধীদের শাস্তি দূরের কথা, কারও বিরুদ্ধে একটি মামলাও হয়নি। যেকোনো নির্বাচন এলে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন মহা আতঙ্কে থাকেন। ভোট দিলে এক পক্ষ খুশি হয়, আরেক পক্ষ বাড়িতে গিয়ে বলে আসে, 'আপনার ভোট পেয়ে গেছি। কষ্ট করে ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার প্রয়োজন নেই।'

সরকারের 'ধর্মনিরপেক্ষ' নীতি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অতি সতর্কতাও বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের জানমালের নিরাপত্তা দিতে যে ব্যর্থ হয়েছে, তার প্রমাণ নির্বাচনের আগে ও পরে দিনাজপুর, নোয়াখালী, যশোর, সাতক্ষীরা প্রভৃতি স্থানের ঘটনাবলি। গত ঈদের দুই দিন আগেও চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতেও কয়েকটি হিন্দু বাড়িতে দুর্বৃত্তরা হামলা চালায় গুজব ছড়িয়ে। কেবল হিন্দু সম্প্রদায় নয়, ২০১২ সালে এক বৌদ্ধ যুবকের নামে একটি ভুয়া স্ট্যাটাস দিয়ে রামু, টেকনাফসহ কয়েকটি স্থানে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ঘরবাড়ি ও উপাসনালয় পুড়িয়ে দেওয়া হয়। সরকার সেই সব দগ্ধ ভিটিতে নতুন ঘর তৈরি করেছে, গৌতম বুদ্ধের ভাঙা মূর্তিগুলোও নতুন রূপে সাজিয়েছে। কিন্তু বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মানুষগুলো এখনো নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। তাদের ভয় দুর্বৃত্তরা যেহেতু কেউ শাস্তি পায়নি, সেহেতু তারা যেকেনো সময়ে যেকোনো অজুহাতে ফের হামলা চালাতে পারে।
৪৩ বছর ধরেই বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর ও উপাসনালয়ে হামলার ঘটনা ঘটছে। কখনো কম, কখনো বেশি। পাকিস্তান আমলে প্রণীত কুখ্যাত শত্রু সম্পত্তি আইন বাতিল হলেও হিন্দু সম্প্রদায় তাদের অপহৃত সম্পত্তি ফিরে পাচ্ছে না। আইনের মারপ্যাঁচে আটকে আছে। এখনো অনেকের ঘরবাড়ি দখল হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু সঞ্জয় মিত্রের মতো সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের কেউ সেটিকে নিজের অপরাধ মনে করে 'রোজা' রাখেননি। নিজ সম্প্রদায়ের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ জানাননি। সবাই মনে করছেন, ঝামেলা বাড়িয়ে লাভ কী? এটি সংখ্যালঘুদের জন্য নয়, বরং সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের জন্যই নিদারুণ লজ্জার ও অপমানের। একটি সমাজ গণতান্ত্রিক কি না, তা নির্ধারিত হয় সেই সমাজে বসবাসকারী প্রান্তিক ও সংখ্যালঘু মানুষগুলোর নিরাপত্তাবোধের ওপর।
তাই বাংলাদেশেও একজন সঞ্জয় মিত্র চাই, যিনি সমাজকে পথ দেখাবেন। কেবল উপদেশ দেবেন না, নজির সৃষ্টি করবেন। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মনের ব্যথাটি বুঝবেন এবং অন্যকে বোঝাতে সচেষ্ট থাকবেন। তিনি হয়তো অন্য সম্প্রদায়ের ধর্মীয়
আচারণ পালন করবেন না। তবে সেই আচার পালনে যাতে কেউ বাধা না দিতে পারে সেই ব্যবস্থা করবেন। তাদের এই বলে অভয় দেবেন যে, পুলিশ প্রহরা ছাড়াই আপনারা আপনাদের ধর্ম পালন করুন। কেউ বাধা দেবে না। বাধা দিলে আমি জীবন দিয়ে তাদের রুখে দেব। তাহলেই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ শত দুর্যোগ-দুর্বিপাকের মুখেও বুক চিতিয়ে বলতে পারবে, 'এ আমার দেশ। এ দেশ ছেড়ে আমি কোথাও যাব না।'
বাংলাদেশের সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের ভেতর থেকে কেবল একজন নয়, হাজার হাজার সঞ্জয় মিত্র কিংবা আমির হোসেন চৌধুরীর (১৯৬৪ সালের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা রুখতে গিয়ে যিনি দাঙ্গাবাজদের হাতে খুন হয়েছিলেন) জন্ম হোক। এই দেশটি কেবল মুসলমানের নয়, কেবল বাঙালির নয়। দেশটি হোক সব মানুষের।

সোহরাব হাসান: কবি, সাংবাদিক।



__._,_.___

Posted by: "Jamal G. Khan" <M.JamalGhaus@gmail.com>


****************************************************
Mukto Mona plans for a Grand Darwin Day Celebration: 
Call For Articles:

http://mukto-mona.com/wordpress/?p=68

http://mukto-mona.com/banga_blog/?p=585

****************************************************

VISIT MUKTO-MONA WEB-SITE : http://www.mukto-mona.com/

****************************************************

"I disapprove of what you say, but I will defend to the death your right to say it".
               -Beatrice Hall [pseudonym: S.G. Tallentyre], 190





__,_._,___