Banner Advertiser

Wednesday, September 3, 2014

[mukto-mona] একটি মন্তব্যের ব্যাখ্যা ও বাঙালীর ছাত্রলীগ




বৃহস্পতিবার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৪, ২০ ভাদ্র ১৪২১
একটি মন্তব্যের ব্যাখ্যা ও বাঙালীর ছাত্রলীগ
স্বদেশ রায়
গত সপ্তাহে এ কলামে লিখেছিলাম, 'শেখ হাসিনার সমকক্ষ কোন রাজনীতিক এ মুহূর্তে বাংলাদেশে নেই। ... তাই তাঁর প্রতিপক্ষের এখন একমাত্র উদ্দেশ্য তাঁকে হত্যা করা। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা ছাড়া যেমন তাঁকে ক্ষমতাচ্যুত করার ক্ষমতা বাংলাদেশের কোন রাজনীতিকের বা কোন শক্তির ছিল না বর্তমানেও ঠিক একই অবস্থা। শেখ হাসিনা যে উচ্চে উঠেছেন, তাঁকে হত্যা করা ছাড়া অন্য কোন পথ তাদের জন্য খোলা নেই।'
আমার এই মন্তব্যের একটি ভুল ব্যাখ্যা হতে পারে বলে অনেকেই আমাকে ফোন করেছেন এবং ইমেইল পাঠিয়েছেন। এমনকি বাংলাদেশের একজন বর্ষীয়ান জ্ঞানী রাজনীতিকও আমাকে এ কথা বলেছেন। কেন তাঁরা বলেছেন, সেটা যে এদেশের মানুষসহ আমার একেবারে অজানা তা নয়। কারণ, ১৯৭৩, '৭৪ সালে একটি বিশেষ দৈনিকে খোন্দকার আব্দুল হামিদ, আবুল মনসুর আহম্মদ প্রমুখ লিখতেন, শেখ মুজিবের অবসান ছাড়া বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। কারণ, ক্ষমতা এককেন্দ্রিক হয়ে যাচ্ছে। যাঁরা আমাকে ফোন করেছেন বা ইমেইল পাঠিয়েছেন তাঁদের ভয়টি এখানে, পাছে আমার এই লেখা পরোক্ষভাবে আব্দুল হামিদ বা আবুল মনসুর আহম্মদের মতো উস্কানিতে পরিণত না হয়।
সেদিন আব্দুল হামিদ বা আবুল মনসুর আহম্মদের লেখা যাঁরা পড়তেন তাঁরা মনে হয় আমার গোটা লেখাটা পড়ে ওই কাতারে ফেলবেন না। কারণ, তাঁদের লেখার উদ্দেশ্য ও লেখাজুড়ে থাকত বঙ্গবন্ধুর প্রতি মানুষকে বিষিয়ে তোলার একটি প্রচারণা। সেখানে সত্য তথ্যের থেকে মিথ্যে থাকত ভরপুর আর থাকত বাঙালী জাতিসত্তার বিরুদ্ধে একটি ধর্মীয় সংস্কৃতিকে জাতিসত্তা হিসেবে দাঁড় করানোর প্রচেষ্টা। যা এখন বিএনপি করে। মূলত বিএনপি এই সব ব্যক্তিরই চিন্তা-চেতনা ও চেষ্টার ফসল। অন্যদিকে আমার লেখাটি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও দেশের উন্নয়নে তাঁর প্রতি নিয়ত চেষ্টার একটি সত্য ছবি। বরং কোথায় কোথায় তাঁর অর্থাৎ দেশের ও গণতন্ত্রের শত্রুরা কাজ করছে সেগুলো তুলে ধরার চেষ্টা করেছিলাম। তাছাড়া আবুল মনসুর আহম্মদ বা খোন্দকার আব্দুল হামিদসহ ওই সময়ের ওই সব লেখকের লেখাগুলো আমার মাথায় ছিল না তাও কিন্তু নয়। তবে আমি লিখেছি বাস্তবে এই সত্য বোঝাতে যে, আসলে বর্তমান বিরোধী দল কী করছে। কারণ, এখন জামায়াত, বিএনপি, জঙ্গী বা জেএমবি সবই এক। বিএনপি বলতে আলাদা কোন দল নেই। হান্নান শাহ, খোকা এরা বার বার আরেকটি ১৫ আগস্টের হুমকি প্রকাশ্যে দিয়েছেন। ফখরুলও সরাসরি না হলেও একই কথা বলছেন। 
বাস্তবতা হলো তাঁরা কেবল এই চেষ্টাই করছেন। তাঁরা রাজনীতি করছেন না এই সত্যটাই তুলে ধরি ওই লেখায়। আর একটি সত্য মনে রাখা দরকার, গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক অঙ্গনে কোন রাজনীতি করার ক্ষমতা বিএনপি বা ওই জঙ্গী গোষ্ঠীর নেই। ধরুন আমাকে যদি বলা হয়, তুমি পদ্মা সেতুর ইঞ্জিনিয়ারিং সাইডটা দেখো, তা কি সম্ভব হবে আমার দ্বারা? ও তো জামিলুর রেজা চৌধুরীর কাজ। কারণ তিনি প্রকৌশলী, আমি সাংবাদিক। আমার দ্বারা সাংবাদিকতাই সম্ভব, এমনকি রাজনীতিও নয়। বিএনপি খুনের মাধ্যমে, সামরিক বাহিনী দ্বারা সৃষ্ট একটি দল। বর্তমানে জঙ্গীদের দ্বারা পরিচালিত। সামরিক বাহিনী রাস্তার একটি দলের জন্য কোন দেশে ক্ষমতা দখল করে না, কারও ক্ষমতায় যেতে সহায়তা করে না। তাই বিএনপি জঙ্গীদের সহায়তায় সন্ত্রাসের মাধ্যমে, খুনের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের চেষ্টা করতে পারে। তাদের পক্ষে গণতান্ত্রিক রাজনীতি করা সম্ভব নয়। কারণ, তারা তো প্রকৌশলী নয়, তারা পদ্মা সেতুর কারিগরি দিক দেখবে কিভাবে? তারা খুনী, জঙ্গী। তারা জঙ্গীদের কাজগুলো করতে পারে। জঙ্গীরা গণতান্ত্রিক রাজনীতি করবে কীভাবে? শেখ হাসিনাকে যে খালেদা ও তারেক হত্যা করতে চায় তার প্রমাণ তো ২১ আগস্ট। আমাদের অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক লেখেন, এমনকি মহা মহা পণ্ডিত রাষ্ট্রদূতের অনেকেও বলেন, বিএনপি ২০১৩-তে গণ-আন্দোলন করতে ব্যর্থ হয়েছে। প্রশ্ন হলো বিএনপি কেন গণ-আন্দোলন করতে পারবে? কবে তারা গণআন্দোলন করতে পেরেছে? তারা বা তাদের সহযোগী জামায়াত তারাও কি গণআন্দোলনের শক্তি? জামায়াত তো ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের সময়ের দল। তাদের একটি উদাহরণ কি আছে গণআন্দোলনের? বিএনপির উদাহরণ আছে? অনেকে বলেন, এরশাদবিরোধী আন্দোলন করেছে বিএনপি। সে সময়ে রাস্তার রিপোর্টার ছিলাম। বিএনপির মিছিল-মিটিং কাভার করতাম। তাদের আন্দোলনের হকিকত জানি। কটা লোক হতো শুধু তাই নয়, কাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে রাজনীতি করত তাও জানি। তাই ঘোলা পানিকে দুধ ভেবে লাভ নেই। বিএনপি, জামায়াত, জঙ্গী এরা যা পারে তাই তারা করেছে ২০১৩ তে। মানুষ হত্যা করেছে। জঙ্গী হামলা চালিয়েছে। শিশু হত্যা, নারী হত্যা সব ধরনের বর্বরতায় তারা পারদর্শী। গণ-মানুষের নেত্রী শেখ হাসিনা, হলফ করে বলতে পারি, তাঁর এতটুকু শক্তি নেই যে তিনি একজন নিরপরাধ মানুষকে হত্যার নির্দেশ দিতে পারবেন। বরং এই হত্যার নির্দেশ দিতে তাঁকে বললে তিনি জায়নামাজে বসে তাকে রক্ষার জন্য প্রার্থনা করবেন। অন্যদিকে খালেদা তাঁর একটি ঠোঁটের লিপস্টিকের একটি টান দিতে দিতে এক কোটি নিরপরাধ মানুষ হত্যার নির্দেশ দিতে পারেন। ২১ আগস্ট কি তার একটি মিনি মহড়া নয়? কোন্ ধরনের গণহত্যা তাঁরা করতে পারে এবং কী ঠাট্টা তিনি করেছিলেন, পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ করে বলেছিলেন, 'ওনাকে আবার মারতে যাবে কে?' কত বড় হৃদয়হীন- বুঝুন! শ্রদ্ধেয় গাফ্ফার চৌধুরী গত সংখ্যায় লিখেছেন লাইক ফাদার লাইক সান। খালেদাও লাইক হাজব্যান্ড লাইক ওয়াইফ। বাংলাদেশের ইতিহাসে জিয়াউর রহমানের মতো কোন নিষ্ঠুর রাষ্ট্র ক্ষমতার অধিকারী এখনও আসেননি। খালেদা তাঁর যোগ্য স্ত্রী এবং তাঁদের চেষ্টাই এখন একটা- শেখ হাসিনাকে হত্যা করা। গত সংখ্যায় সংক্ষেপে এই কথাগুলো বলতে চেয়েছিলাম। 
অনেক পাঠক জানতে চেয়েছেন, সত্যি তারা এ কাজে সফল হবে কি-না? এক ভদ্রমহিলা কেঁদে ফেলেন। তিনি শুধু বলেন, 'বাবা তুমি বল, শেখ হাসিনা বেঁচে থাকবে তো? শেখ হাসিনা বেঁচে না থাকলে আমরা কেউ বাঁচতে পারব না'। তাদের একটি কথাই বলি যে, দেখুন বঙ্গবন্ধু নিহত হয়েছিলেন আন্তর্জাতিক চক্রান্তের ফলে আর আজকের বিশ্ব ব্যস্ত শেখ হাসিনাকে রক্ষা করার জন্য। শেখ হাসিনা ছাড়া এই বাংলাদেশ একটি তালেবানী রাষ্ট্র হবে। যা শুধু দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তার হুমকি নয়, আমেরিকা ও ইউরোপেরও নিরাপত্তার হুমকি। তখন এখানে বসে শিবির ট্রেনিং নিয়ে আরও অনেক ৯/১১ ঘটাবে আমেরিকায়। হামলা হবে প্রতিনিয়ত ইউরোপে। যেখানে আমেরিকা ইউরোপ থেকে জঙ্গী আসছে সিরিয়া, ইরাকে- সেখানে তখন বাংলাদেশে কি ঘটবে সহজে বোঝা যায়। তাই শেখ হাসিনাকে রক্ষা করা এখন বিশ্ব নিরাপত্তার স্বার্থে প্রয়োজন। বাংলাদেশের মানুষের যেমন তাদের দেশের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য প্রয়োজন তেমনি গোটা বিশ্বের নিরাপত্তার জন্য শেখ হাসিনাকে রক্ষা করতে হবে। খালেদাকে এখন জঙ্গীদের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে আর শেখ হাসিনা বিশ্ব নেতৃত্বের সঙ্গে তুলনীয়। বিশ্ব শান্তি রক্ষার অপরিহার্য অঙ্গ শেখ হাসিনা। বিএনপি বা তাদের শুভাকাক্সক্ষীরা আশায় আছেন যে শেখ হাসিনাকে হত্যা করে তারা আবার তাদের লুটেপুটে খাবার দিন ফিরে পাবেন, সেটা হবে না। বর্তমান বিশ্বের রাজনীতি তা বলে না। তাই বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে তাদের পক্ষের পত্রিকাও বলতে বাধ্য হয়েছে, বিএনপির এখন সব থেকে দুর্দিন যাচ্ছে। এ দুর্দিন আসবেই। কারণ, তারা গণতান্ত্রিক দল নয়, অথচ তাদেরকে গণ-আন্দোলন করার জন্য তাদের শুভার্থীরা বলছে। সাঁতার না জেনে সাঁতার কাটবে কিভাবে? আর হত্যা, আরেকটি ১৫ আগস্ট! এ দিবাস্বপ্ন না দেখাই ভাল বরং যুদ্ধাপরাধীদের পরে ২১ আগস্টের হত্যাকারীদের ফাঁসি হবে এ দেশে। এ দেশে ফাঁসি হতেই হবে ২০১৩ তে যে নেত্রীর নির্দেশে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে তাঁরও। এ দেশে অনেক সামরিক অভ্যুত্থান হয়েছে। অনেকে পিতাহারা, স্বামীহারা, সন্তানহারা হয়েছেন। তার জন্য জিয়াউর রহমানের মরণোত্তর বিচার হতেই হবে। গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতায় এগুলো ঘটবে। পার্লামেন্ট ভবনের সামনে থেকে রাজাকারদের কবর এ দেশের তরুণরাই সরাবে। সোহরাওয়ার্দী, শেরেবাংলার মাঝখান থেকে ৫২'র গুলি চালানো নাজিম উদ্দিনের কবরও তরুণ প্রজন্ম সরাবে। এগুলো ঘটবেই। সকলের মনে রাখা উচিত, এটা ত্রিশ লাখ শহীদের ও সাড়ে ছয় লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে কেনা দেশ। এত সহজ দেশ নয় এটা। ইমরান এইচ সরকার, মারুফ রসুল, নাজমুল সিদ্দিকী এরা আবার মাঠে নামবে, তাদের ছোট ভাইরা, বোনেরা আবার মাঠে আসবে। সারাদেশ গণজাগরণ মঞ্চ হবে। শুধু জয় বাংলা নয়, জয় বঙ্গবন্ধু ধ্বনি উঠবে তাদের মুখে। এ দেশ কলঙ্কমুক্ত হবে। অনেক কবর বঙ্গোপসাগরে নিক্ষিপ্ত হবে। এ দেশ নিরাশার নয়, চোখের জলের নয়। এ দেশ বীরের দেশ, সূর্য সেন থেকে শেখ মুজিবের দেশ। তরুণ প্রজন্মের সামনে সহস্র বীর দাঁড়িয়ে আছে। রাজাকার পুত্র ফখরুলদের এখন অস্ত যাওয়ার সময়। টিভি পর্দাগুলো বাঁচিয়ে না রাখলে এতদিন অন্য রকম হতো ইতিহাস। 
নাজমুল সিদ্দিকীর নাম বলাতে তথাকথিত সুশীল সমাজ ভ্রু কুঁচকাতে পারে। তাতে কিছু যায় আসে না। কারণ, বাস্তবতা হলো এই তথাকথিত সুশীল সমাজ মূলত রাজাকার আলবদরদেরই তোষণ করছে। কিন্তু ইমরান এইচ সরকার নিজে মনে করে জয় বাংলার পরে জয় বঙ্গবন্ধু না বললে স্বাধীনতার স্লোগান হয় না, তাছাড়া সকলকেই তাই মনে করতে হবে, অন্যদিকে এটা সত্য বাংলাদেশের অতীতের যত প্রগতির আন্দোলন সেখানে ছাত্রলীগ ছিল, ভবিষ্যতেও থাকবে। ছাত্রলীগ বাঙালীর ছাত্রলীগ। তাই বাঙালীর প্রশ্নে লাঠি হাতে, বুকের রক্ত দিয়ে, জীবন দিয়ে থাকার জন্য ছাত্রলীগের জন্ম। এ ত্যাগ স্বীকার করা ছাত্রলীগের জন্মের ভিতর দিয়ে লেখা। বাঙালীর মুক্তির সংগ্রামে ছাত্রলীগ যত প্রাণ দিয়েছে আর কোন সংগঠনের সে ইতিহাস নেই। শেখ হাসিনা বলেছেন তাদের ত্যাগের রাজনীতি করতে, বাস্তবে এই সংগঠনে ত্যাগ ছাড়া কী আছে? ছাত্রলীগকে নিয়ে লেখার ইচ্ছে ছিল ৩১ আগস্টের পত্রিকায়। প্রতিশ্রুতিবদ্ধও ছিলাম। কারণ ১৫ আগস্ট পালন উপলক্ষে তারা যে ছাত্র সমাবেশ করেছিল ৩১ আগস্ট সেখানে দু'কথা বলার জন্য তাদের সভাপতি সোহাগ আমাকে অনুরোধ করেছিল। পুত্রসম সোহাগকে বুঝিয়ে বলি, দেখ বাপু হয়ত দু'লাইন লিখতে পারি, কিন্তু বলতে পারি না। বরং ৩১ আগস্ট একটি লেখা আমি ছাত্রলীগের ওপর লিখব। কিন্তু ২৯ তারিখ রাত থেকে খুবই অসুস্থ হয়ে পড়াতে আর লিখতে পারিনি। এ লেখাও অসুস্থতা নিয়েই লিখছি। তারা পুত্রসম তবু তাদের কাছে ক্ষমা চাই শারীরিক অসুস্থতার জন্য কথার বরখেলাপ করতে বাধ্য হয়েছিলাম, অন্য কোন কারণে নয়। যা হোক, সেদিন যে কথা মনে মনে লেখার ইচ্ছে ছিল তারই দু'চার কথা লিখে এ লেখা শেষ করব। বর্তমানে পত্র-পত্রিকা এবং কিছু টিভির খুবই রসালো বিষয় ছাত্রলীগ। ছাত্রলীগে ছাত্রলীগে ঝগড়া বা ছাত্রলীগের কোন ত্রুটি পেলে খুবই বড় করে মিডিয়া এ অংশ প্রকাশ করে। শিবিরেরগুলো করে না। এটা এক অর্থে ভাল। কারণ ছাত্রলীগ কেন এ কাজ করবে? তবে ওই দিন অসুস্থ অবস্থায় টেলিভিশনে আমি দুটি বক্তব্য শুনেছিলাম ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের শেষ অংশ আর শেখ হাসিনার পুরো বক্তব্য। শেখ হাসিনার বক্তব্য শুনে এক বন্ধুকে ফোন করে বলি, বাস্তবে যেন ব্রিটিশ কোন বড় গণতান্ত্রিক নেতার ভাষণ শুনলাম অনেক দিন পরে। ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যে একটি কঠিন সত্য ছিল তা হলো, 'ছাত্রলীগ নামধারী কিছু বহিরাগতের জন্য বাঙালীর এই প্রতিষ্ঠানের বদনাম হবে কেন, ছাত্রলীগকে এটা প্রতিরোধ করতে হবে।' 
আমি আওয়ামী লীগের কেউ নই। আমার নীতি-আদর্শের সঙ্গে আওয়ামী লীগের শতভাগ মিলও নেই। তবে বাংলাদেশে এখন যে ক'টি দল আছে তার ভেতর আওয়ামী লীগের সঙ্গে বেশি অংশের মিল হয় আমার নীতি-আদর্শের। যেমন আমি পপুলিস্ট গণতন্ত্র ও অর্থনীতিতে বিশ্বাস করি। আওয়ামী লীগ অনেক জনগণতান্ত্রিক কর্মসূচী নেয়। মিল এখানে। তাই অনেক সময় ছাত্রলীগের ছেলেরা লেখা পড়ে আমাকে আওয়ামী লীগের খুব কাছের লোক মনে করে। তারা অনেকেই আমার কাছে আসে। সাংবাদিক হিসেবে এটা অবশ্য একটা বড় সুযোগ। কারণ, এর ভেতর দিয়ে আমি তরুণ প্রজন্মকে চিনতে পারি। ছাত্রলীগের যেসব ছেলে আসে তাদের দু'একজনের উদাহরণ দিয়েই এ লেখা শেষ করব। ২০০১ সাল, এমআর আখতার মুকুল ভাইয়ের সাগর পাবলিশার্সে দাঁড়িয়ে আড্ডা দিচ্ছি। এমন সময় ছাত্রলীগের কয়েকটি ছেলে আসে। তাদের গায়ে তখনও রক্ত। পরনের প্যান্ট ছেঁড়া, জামা ছেঁড়া। জানতে পারি, তারা জগন্নাথ হলে আশ্রয় নিয়েছিল; কিন্তু বিএনপির সন্ত্রাসী পিন্টু লালবাগ থেকে সশস্ত্র গুণ্ডাবাহিনী এনে পুলিশের সহায়তায় তাদের অনেককে আহত করে। দখল করে জগন্নাথ হল। ওরা আহত অবস্থায় এ পথে যাচ্ছিল, আমাকে দেখে ওখানে একজন ঢোকে, বাকিরা বাইরে দাঁড়িয়ে ছিল। ওদের ওই অবস্থা দেখে এমআর আখতার মুকুল ভাই বলেন, শীঘ্র পোশাক না বদলালে ওদের পুলিশে ধরবে। তাই তিনি, কলিম শরাফী ভাই সঙ্গে সঙ্গে টাকা বের করে দেন, আমার কাছে যে সামান্য টাকা ছিল তাই দিয়ে তখনই বঙ্গবাজার থেকে ওদের জন্য প্যান্ট-শার্ট কেনার ব্যবস্থা করা হয়। জানি না সেই ছেলেগুলো এখন কোথায় আছে, কেমন আছে। '৯৬ থেকে আওয়ামী লীগ তিনবার ক্ষমতায় অথচ ১৯৯২ কী '৯৩ সালে জগন্নাথ হলে ঢুকে ছাত্রলীগের একটি ছেলেকে পুলিশ 'কোহিনুর' মাটিতে ফেলে লাথি মেরে তার কানের পর্দা নষ্ট করে দেয়। সে এখনও আমার কাছে আসে। ওর সঙ্গে যখন চিৎকার করে কথা বলি, তখন আমার চোখে পানি আসে। কারণ, কোহিনুর ওকে বলেছিল তোর জয়বাংলার মারে... (পাকিস্তানী গালিটি) অথচ জয়বাংলা বলার অপরাধে ছেলেটি বধির হতে চলেছে। কেউ দেখার নেই ওর। কেন নেই সেটাও বুঝি। কারণ আওয়ামী লীগকে জনগণ ক্ষমতায় আনলেও ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ থাকে না। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে আজ জিয়াউর রহমানের উপদেষ্টা, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে কটূক্তিকারী মোজাফফর আহমেদ আওয়ামী লীগ আমলে বাংলাদেশ ব্যাংক পুরস্কার পায় কীভাবে? যা হোক ওই ছেলেকে আমি করুণা করার সাহস পাই না। বরং সম্মান করি তার আত্মমর্যাদাবোধ দেখে। ছাত্রলীগের ঐতিহ্যের মতোই তার মাথা উঁচু। মনে মনে ভাবি যদি আমার ক্ষমতা থাকত ছেলেটিকে চিকিৎসা করে সুস্থ করে দিতাম। এমনকি যখন আমার সন্তান বলে, বাবা তুমি কিছু করতে পার না এই কাকুর জন্য, তখনও চোখে জল আসে। অসহায় মনে হয় নিজেকে। যেমন সম্প্রতি ফেসবুকে ছাত্রলীগের একটি ছেলে আমাকে জানিয়েছে, গত দুই ঈদে সে বাড়ি যায় না, আব্বা-আম্মার সামনে সে মুখ দেখাতে পারছে না। পাস করার পরে এখনও তাকে টিউশনি করে চলতে হয়। কোন চাকরি পাচ্ছে না। অনেকবার ব্যর্থ হয়েছে, বর্তমানে একটি ব্যাংকে পরীক্ষা দিয়েছে। চাকরি পাবে কি না জানি না। তার চোখের সামনে লাখ লাখ টাকা দিয়ে শিবিরের ছেলেরা চাকরি পাচ্ছে। এমন অসংখ্য ঘটনার উল্লেখ করতে পারি। যাতে একটা বই হয়ে যাবে। তাই সমগ্র ছাত্রলীগকে নিয়ে যে সব বুদ্ধিজীবী বা সাংবাদিক বন্ধু শক্ত কলাম লিখে কলার ঝাঁকিয়ে এমন একটা ভাব করেন, নৈতিকতার সর্বশ্রেষ্ঠ পরাকাষ্ঠা দেখিয়েছেন। তাদের দলে যেতে পারি না। বরং ওঁদের লেখাগুলো পড়ে মনে হয়, ওরা আসলে কেবল পত্রিকার পাতা পড়ে সাংবাদিকতা করে ও বুদ্ধিজীবী হয়। ওরা জানে না কত অসংখ্য ছাত্রলীগের ছেলে এখনও সৎ, এখনও কত কষ্টে দিন কাটাচ্ছে। আবার মনে করি হয়ত আমি ভুল পথে আছি। তবে যে অপাপবিদ্ধ, বাঙালী চেতনায় উদ্বুদ্ধ সন্তানগুলো আমার সামনে আসে তাদের মুখ মনে করে ভাবি-ভুলই হোক আমার পথ। তবু তো আমি একটি সত্যকে দেখে ভুল করছি।

swadeshroy@gmail.com

Related:
শেখ হাসিনার ভাষণ ও রাজনৈতিক কালচারের পরিবর্তন
স্বদেশ রায়






__._,_.___

Posted by: SyedAslam <Syed.Aslam3@gmail.com>


****************************************************
Mukto Mona plans for a Grand Darwin Day Celebration: 
Call For Articles:

http://mukto-mona.com/wordpress/?p=68

http://mukto-mona.com/banga_blog/?p=585

****************************************************

VISIT MUKTO-MONA WEB-SITE : http://www.mukto-mona.com/

****************************************************

"I disapprove of what you say, but I will defend to the death your right to say it".
               -Beatrice Hall [pseudonym: S.G. Tallentyre], 190





__,_._,___