বর্ধমান বিস্ফোরণ মমতা ব্যানার্জীর বিদায় নিশ্চিত করবে'চলে যাও বর্ধমান--' নজরুলের গুলি (মার্বেল) খেলা নিয়ে এ উক্তিটি থেকে ছেলেবেলায় আমরা বর্ধমানের সাথে পরিচিত। বর্ধমানের পুরুলিয়া গ্রামে কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্ম। এতকাল পরে আমরা আবার নুতন করে বর্ধমানের সাথে পরিচিত হচ্ছি; কারণ তথায় এক বোমা বিস্ফোরণে দুই বাংলাদেশী নিহত হয়েছে। ওরা পথচারী ছিলোনা, বোমা তৈরীর সময় মারা গেছে, সুতরাং ওদের সন্ত্রাসী বলা যায়। বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গে এনিয়ে এখন প্রচুর লেখালেখি হচ্ছে। বলা হচ্ছে, দুই বাংলার জামাতী জঙ্গীরা যে একসাথে কাজ করছে, বর্ধমান বিস্ফোরণ এর প্রমান। কলকাতা পুলিশের ধারণা, ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে এবং বাংলাদেশে হামলার ব্যাপক পরিকল্পনা নিয়ে ঐসব বিস্ফোরক তৈরী হচ্ছিলো। ভারতীয় গোয়েন্দাদের আর এক রিপোর্টে বলা হয়, শেখ হাসিনাকে হত্যার বিষয়টিও এতে ছিলো।পত্রপত্রিকার ভাষ্যমতে, হিলারী ক্লিন্টন যখন মমতা ব্যানার্জীর সাথে বৈঠক করেন তখনই তিনি পশ্চিমবংগ তথা ভারতের পূর্বাঞ্চলকে কিভাবে জঙ্গী কার্যকলাপের আঁতুরঘর পরিনত করার চেষ্টা চলছে তা জানিয়েছিলেন। আর এই প্রচেষ্টায় জঙ্গী সংগঠনগুলো বাংলাদেশকে ভারতে ঢোকার প্রবেশদ্বার হিসাবে ব্যবহার করার চেষ্টা করছে বলেও জানানো হয়। একইভাবে বাংলাদেশও বর্ধমানে জঙ্গী ডেরার কথা ভারতকে জানিয়েছিলো। পশ্চিমবঙ্গে শাসক দলের আশ্রয়ে মৌলবাদীদের ডেরার যে তালিকা ঢাকা দিয়েছিলো তাতে বর্ধমানের নাম ছিলো। ভারতের গোয়েন্দা রিপোর্ট অনুযায়ী জামাতের সাহায্য নিয়ে তালেবানী জঙ্গীরা খালেদা জিয়ার আমলে ঢাকায় বেশ ক'টি বৈঠক করেন। কিছু প্রাক্তন পাকসেনা অফিসার ঐসব বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। জামাত ও তালেবানী জঙ্গী সংগঠনগুলো উত্তর-পূর্বাঞ্চলে সবকটি জঙ্গী-সংগঠনকে একই ছাতার তলায় নিয়ে আসার কৌশলও নিয়েছিলো। শেখ হাসিনা ক্ষমতাসীন হলে জঙ্গীদমন কাজে হাত দেন। সুষমা স্বরাজ ঢাকা গিয়ে এজন্যে হাসিনা সরকারের প্রশংসা করেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও এবার আমেরিকায় এসে বলেছেন, জঙ্গী কিভাবে দমন করতে হয় তা শেখ হাসিনার কাছ থেকে শেখা উচিত। হিলারিও জঙ্গীতত্পরতা দমনে হাসিনা সরকারের সাথে ভারত সরকারের সু-সম্পর্ক বজায় রাখার ওপর গুরুত্ব দিয়েছিলেন।মমতা ব্যানার্জী মুখ্যমন্ত্রী হবার পর ওই রাজ্যে জঙ্গী তত্পরতা কমে তো নাই-ই বরং বেড়েছে বলে দিল্লি মনে করে। মমতার আমলে কলকাতায় বাংলাদেশের জামাতীদের সমর্থনে বিশাল বিক্ষোভ হয়েছে। ঐসব বিক্ষোভে 'শেখ হাসিনার ফাঁসী চাই'; 'গোলাম আজমের মুক্তি চাই' বা 'যুদ্বাপরাধাদিদের বিচারের নিমিত্ত গঠিত ট্রাইবুনাল ভেঙ্গে দেয়ার দাবী সম্বলিত প্ল্যাকার্ড শোভা পায়। অথচ মমতা শাহাবাগীদের সমর্থনে কোন সমাবেশ করতে দেয়নি, বরং পুলিশ দিয়ে পিটিয়েছেন। এরআগে শারদার টাকা জামাতের পেটে যাবার কথা আমরা শুনেছি। দিল্লী এসময়ে মমতার বিপক্ষে, শেখ হাসিনার পক্ষে, মমতা বাধ্য হবেন 'তিস্তা' প্রশ্নে আপোষ করতে। তাছাড়া মমতাকে এখন প্রমান করতে হবে যে তিনি জঙ্গীদের প্রশ্রয় দিচ্ছেন না, যদিও কাজটা বেশ কঠিন হবে। মমতা দিল্লীর (কেন্দ্রের) বিরুদ্ভে আস্ফালন করছেন, কিন্তু জঙ্গী মদতের সামান্য আলামত পেলে পশ্চিমবঙ্গে কেন্দ্রের শাসন জারি হওয়া অসম্ভব নয়। বাংলাদেশ ও ভারত দু'দেশই সন্ত্রাসীদের ধরতে ব্যাপক তল্লাশী-ধরপাকড় চালাচ্ছে। এই প্রথম দুই দেশের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা সংস্থাগুলো যৌথভাবে না হলেও পৃথক পৃথক ভাবে একই সময়ে একসাথে কাজ করছে। দুই দেশের বর্ধমান-সাতক্ষীরা সীমান্তে রেড এলার্ট রয়েছে। বলা হচ্ছে, জেএমবি, ওয়াজিরিস্তানের আনসার-উল-তাওহিদ, ভারতের ইন্ডিয়ান ম্যুভমেন্ট কানেকশন রয়েছে। এও বলা হচ্ছে, বর্ধমানের বোমা বাংলাদেশে যাচ্ছিলো, এ তথ্য ভারতীয় গোয়েন্দাদের। এই প্রথম বিভিন্ন তথ্য-উপাত্তে প্রমাণিত যে, বাংলাদেশী সন্ত্রাসীরা পশ্চিমবঙ্গের মাটি ব্যবহার করছে এবং এটা মমতার জন্যে বিব্রতকর বটে। মমতার সরকার ইতিমধ্যে চাপের মধ্যে আছে যে, সন্ত্রাস দমনে তারা তেমন কোন কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি। যে বাড়ীতে বোমা ফেটেছে সেই বাড়িটি একজন তৃনমূল নেতার এবং তার জামাতী কানেকশন রয়েছে। একই বাড়ীতে তৃণমূলের অফিসও ছিলো, যদিও বোমা বিস্ফোরণের পর কে বা করা সাইনবোর্ড উঠিয়ে নেয়। সব যেন কেমন ভুতুরে এবং খালেদা জিয়ার বাংলাদেশ শাসনামলের সাথে মিলে যাচ্ছে! এতকিছু হচ্ছে, অথচ মমতা কিছুই জানতেন না! এযেন হওয়া ভবন থেকে সবকিছু হচ্ছে, অথচ খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী থেকেও কিছুই জানতেন না! খালেদার শাসনামলের সাথে মমতার জামানার কত মিল!বর্ধমান বিস্ফোরণ এবং সারদা কেলেঙ্কারী মমতাকে ডুবাবে। মাগুরা নির্বাচনে কারচুপি যেমন খালেদা জিয়ার পতনকে ত্বরাণ্বিত করেছিলো, তেমনি বর্ধমান বিস্ফোরণ মমতা ব্যানার্জীর বিদায় নিশ্চিত করবে। দুর্নীতির দায়ে জয়ললিতার জেল হয়েছে, জঙ্গী প্রশ্রয় বা সারদার কারণে মমতা জেলে গেলেও অবাক হবার কোন কারণ থাকবে না। পক্ষান্তরে সারদা ও বর্ধমান শেখ হাসিনার জন্যে 'শাপেবর' হয়েছে। মমতা বাংলাদেশী সন্ত্রাসীদের প্রশ্রয় দিচ্ছেন, এই অভিযোগ এখন বহুলাংশে প্রমাণিত। সুতরাং বাংলাদেশ মমতার ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারবে। কথায় বলে, 'বিপদ একা আসেনা', মমতার জন্যে এখন একথা সত্য। এখন অপেক্ষা মমতার জন্যে সামনে কি আসছে! মমতার বিপদ যত বাড়বে, শেখ হাসিনার জন্যে বা বাংলাদেশের পক্ষে তা মঙ্গলকর হবে। কারণ দিল্লি শেখ হাসিনাকে ঘাটাবে না, অথবা নুতন নির্বাচনের কথা বলবে না। বিএনপি'র আমলে বাংলাদেশ ছিলো সেভেন সিস্টারের ভিলেনদের জন্যে অভয়ারণ্য, কিন্তু আওয়ামী লীগ তা পাল্টে দিয়েছে এবং ভারত এজন্যে কৃতজ্ঞ। ভারতের উর্ধতন মহলের মতে, শেখ হাসিনা আমাদের জন্যে এতটা করেছেন, অথচ ভারতের মাটিতে তার বিরোধীরা প্রশয় পাবে অথবা তাকে উত্খাতের জন্যে ষড়যন্ত্র করবে তা হতে পারেনা। ভারতের এই মনোভাব যতদিন থাকে ততদিন শেখ হাসিনার পোয়াবারো। শেখ হাসিনারএখন পৌষমাস, তো বিএনপি-জামাতের সর্বনাশ। বিএনপি'র কপাল মন্দ, চাইলেও ভারত এসময়ে নির্বাচনের কথা বলবে না। জামাতের অবস্থা তো আরো খারাপ। আন্ত:দেশীয় সন্ত্রাসী কানেকশন তাদের জন্যে কাল হচ্ছে। দেশে নির্বাচনের আগেপরে সন্ত্রাসের জন্যেও তাদের দায়ী করা হচ্ছে। মৌলবাদ যেমন জামাত-বিএনপি'র আদর্শ, তেমনি সন্ত্রাস ওদের ভিত্তি, সন্ত্রাস বাদ দিয়ে এরা বাঁচবে কেমন করে? তাই এরা এখন অস্তিত্বের সংকটে। ওই শিবিরে নুতন পোলারাইজেসন হতেই হবে। আওয়ামী লীগের অবস্থাও ততটা সুবিধার নয়, দেশে উন্নয়নের ছোয়া লাগলেও মানুষএখনো সরকারের পক্ষে চলে আসেনি। বিজেপি'র এক নেতার বক্তব্য শুনলাম। তিনি বর্ধমানের বোমার জন্যে মমতাকে দায়ী করলেন, যেটা স্বাভাবিক। ২০১৬-তে বিজেপি পশ্চিম বাংলায় ক্ষমতায় আসবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করলেন। বললেন, মোদীর নেতৃত্বে ভারত এগিয়ে যাবে। ভাল কথা, প্রতিবেশী বন্ধু দেশ হিসাবে আমরাও চাই ভারত এগিয়ে যাক, কিন্তু আমাদের সন্ত্রাসীরা কলকাতায় আশ্রয় পাক বা ওখানে বসে বোমা বানাক তা চাইনা,এবংওইবোমা আমাদের বিরুদ্ধে অথবা ভারতের বিরুদ্ধে ব্যবহার হোক তাও চাইনা। সন্ত্রাস নির্মূলেবাংলাদেশ'জিরো টলারেন্স' নীতিতে অটল।শিতাংশু গুহ, কলাম লেখক।নিউইয়র্ক, ২২শে অক্টোবর ২০১৪।
__._,_.___