জাতীয় গ্রীডের ত্রুটির কারণে বিদ্যুৎ বিপর্যয় এ কথা গ্রহণযোগ্য নয়।
উন্নত গ্রীড প্রযুক্তি ও সঞ্চালন ব্যবস্থা সমুন্নত করে দেশকে সুসংহত রাখতে হবে।
উন্নত গ্রীড প্রযুক্তি ও সঞ্চালন ব্যবস্থা সমুন্নত করে দেশকে সুসংহত রাখতে হবে।
সমস্ত প্রশংসা মুবারক খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য; যিনি সকল সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের নবী, রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি অফুরন্ত পবিত্র দুরূদ শরীফ ও সালাম মুবারক। অভ্যন্তরীণ গ্রীডে ত্রুটির কারণে বিদ্যুৎ বিপর্যয় হয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদনে বিষয়টি উঠে এসেছে। বিদ্যুৎ, জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রী অবশেষে একথা বলেছে। এর আগে গত ইয়াওমুল আরবিয়া অর্থাৎ বুধবার তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন নিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেছিলো, বিগত দিনের মতো ট্র্যাডিশনালভাবে রিপোর্ট হারিয়ে যাবে না। তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে। ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের ঘটনা আর না ঘটে সে জন্য বিদ্যুতের লোড ব্যবস্থাপনার জন্য ব্যবস্থা নেয়া হবে। উল্লেখ্য, গত অর্থবছরের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) অনুযায়ী, বাংলাদেশে এক দিনে যে কাজ হয়, তার আকার প্রায় ৩ হাজার ৬৯৮ কোটি টাকা। ব্লাকআউটের ক্ষতি এর চেয়ে অনেক বেশি বলে মনে করছেন গবেষক ও অর্থনীতিবিদরা। বলাবাহুল্য বিদ্যুৎ ব্যবস্থায় গ্রিড একটি স্পর্শকাতর বিষয়। এটি বন্ধ হয়ে বিদ্যুৎ বিপর্যয় ঘটার অনেক কারণ রয়েছে। বিশ্বের যে কোনো দেশ এ বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে পারে। অতি পুরনো ও জরাজীর্ণ সঞ্চালন লাইনে ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত বিদ্যুৎ সঞ্চালন করা হলে গ্রিডের সার্কিট পুড়ে বিপর্যয় ঘটতে পারে। বিদ্যুৎ সঞ্চালনের ফ্রিকোয়েন্সিতে হেরফের হলেও গ্রিড বন্ধ হতে পারে। এমনকি চালু বা সক্রিয় অবস্থায় সঞ্চালন লাইনে পাখি বসলে কিংবা গাছ অথবা গাছের ডালপালা ভেঙে পড়লেও গ্রীড বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এছাড়া আরো নানা কারণে ব্ল্যাকআউটের ঘটনা ঘটতে পারে। তবে যে কোনো দেশের জাতীয় গ্রীডের একটি প্রধান অংশ থাকে। তার সঙ্গে যুক্ত থাকে একাধিক আঞ্চলিক গ্রীড। এগুলো আবার এক সুতায় গাঁথা। এর মধ্যে এমন কারিগরি ব্যবস্থা রয়েছে, যাতে জাতীয় গ্রীডের কোনো আঞ্চলিক অংশে যে কোনো কারণে কোনো ত্রুটি দেখা দিলে বা বন্ধ হয়ে গেলে সম্পূর্ণ গ্রীড বন্ধ হবে না। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, গত ১লা নভেম্বর বাংলাদেশে তাই ঘটেছে। সাধারণত বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেলে চাপ কমানোর জন্য সমপরিমাণ বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু করতে হয়। কিন্তু লোড ডেসপাস কোম্পানি সমপরিমাণ বিদ্যুৎ চালু না করায় ভারতীয় ও বাংলাদেশের বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইনের সংযোগ স্থলে বিপর্যয় ঘটে। এর ফলেই সারা দেশ ব্লাক আউট হয়ে যায়। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিকল্প ব্যবস্থা রাখছে না এটা গোটা দেশ ও জাতির জন্য মহা ভয়ঙ্কর। পাশাপাশি উল্লেখ্য সরকার দাবী করছে, বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয় ১১ হাজার মেগাওয়াট কিন্তু বাস্তবে সরবরাহ কেন হয় ৭ হাজার মেগাওয়াট অর্থাৎ ক্যাপাসিটির ৭০ ভাগ সরবরাহ হয়। এতটা গ্যাপ গ্রহণযোগ্য নয়। এছাড়া আমাদের এখানে হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎ কেন্দ্র অনেকগুলো হওয়া দরকার। দেশে বর্তমানে পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন হলেও জরাজীর্ণ বিতরণ লাইনের কারণে তার সুফল থেকে গ্রাহকদের বঞ্চিত হওয়ার সংবাদ হতাশাজনক। জানা গেছে, রাজধানীসহ দেশের অধিকাংশ বিতরণ লাইনের অবস্থা জরাজীর্ণ ও বেহাল। দীর্ঘদিন ধরে উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ না হওয়ায় পুরনো লাইন ওভারলোডেড হয়ে ঘন ঘন ট্রান্সফরমার জ্বলে যাওয়ার পাশাপাশি লাইন পুড়ে ও ছিঁড়ে গিয়ে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। বিদ্যুৎ বিভাগের হিসাব মতে, দেশে মোট ২ লাখ ৬৬ হাজার ৪৬০ কিলোমিটার বিতরণ লাইন রয়েছে। এর অন্তত ৪০ শতাংশই জরাজীর্ণ। সরকারি হিসাব মতে, বিগত সাড়ে চার বছরে মাত্র ১০ শতাংশ বিতরণ লাইন সম্প্রসারণ করা হয়েছে। অথচ এ সময়কালে যে পরিমাণ বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে, তাতে বিতরণ লাইন কমপক্ষে ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশে উন্নীত করার প্রয়োজন থাকলেও তা করা হয়নি। দেশের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক কর্মকা- বৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিতে হলে বিদ্যুতের চাহিদা ও বিতরণ ব্যবস্থা কেমন হওয়া উচিত- এ নিয়ে দেশে আজ পর্যন্ত কোনো সমীক্ষা হয়নি। দীর্ঘমেয়াদি চাহিদা ও বিতরণ ব্যবস্থার কলাকৌশল সম্পর্কে সরকারের সঠিক কোনো ধারণা না থাকায় বিদ্যুতের উৎপাদন ও বিতরণ গ্রাহক চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হচ্ছে না। বাস্তবসম্মত পদ্ধতি অনুসরণের মাধ্যমে সরকার এসব সমস্যার সমাধানে কাঙ্খিতভাবে সক্রিয় হচ্ছেনা। প্রসঙ্গত আমরা মনে করি যে, ১লা নভেম্বরের ব্লাকআউটের ঘটনা আরো তদন্ত হোক। বিশেষত অন্যান্য ঘটনার আড়ালে এ তদন্ত রিপোর্ট যেন চাপা পড়ে না যায়, সে বিষয়ে ওয়াদা ঠিক রাখার কথাই বলব আমরা। বর্তমান প্রযুক্তির এ যুগে এমন বিপর্যয় রোধ করা কঠিন নয়। গ্রিডে সমস্যা হলেও তার তীব্রতা নিয়ন্ত্রণের প্রযুক্তি আছে বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোকে গ্রীডের সঙ্গে এমনভাবে যুক্ত করতে হবে যাতে গ্রীডে সমস্যা দেখা দিলেও বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি সচল থাকবে। এতে গ্রীডে সমস্যার কারণে বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ হওয়ার ঝুঁকি থাকে না। সে ক্ষেত্রে আমরা চাইব, সরকার বিদ্যুৎ খাত পরিচালনায় যুগোপযোগী প্রযুক্তির সন্নিবেশ ঘটাবে। অর্থমন্ত্রী স্বীকার করেছে, ট্রান্সমিশন লাইনের দুর্বলতার কারণে এ বিপর্যয়। ছয় বছরের বেশি সময় দেশ পরিচালনার পর তার এমন বক্তব্য কাম্য নয়। বিপর্যয়ের দায় সরকারকেই নিতে হবে। দ্রুত সে দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠার মাধ্যমে সরকার নাগরীকদের প্রতি তার দায়িত্ব পালন করবে এবং দেশের সার্বভৌমত্ব সুসংহত রাখবে এটাই সবার প্রত্যাশা। মূলত, এসব অনুভূতি ও দায়িত্ববোধ আসে পবিত্র ঈমান ও পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনাদের অনুভূতি ও প্রজ্ঞা থেকে। আর তার জন্য চাই নেক ছোহবত তথা মুবারক ফয়েজ, তাওয়াজ্জুহ। |
__._,_.___