Banner Advertiser

Sunday, November 2, 2014

[mukto-mona] জঁ পল সার্ত্র - নোবেল প্রত্যাখ্যানের পঞ্চাশ বছর



জঁ পল সার্ত্র

নোবেল প্রত্যাখ্যানের পঞ্চাশ বছর

হাসান ফেরদৌস | আপডেট: প্রিন্ট সংস্করণ

জঁ পল সার্ত্র (২১ জুন ১৯০৫—১৫ এপ্রিল ১৯৮০), প্রতিকৃতি: মাসুক হেলালজঁ পল সার্ত্র নোবেল পুরস্কার পেতে যাচ্ছেন, এমন গুজব অনেকের মতো সার্ত্র নিজেও শুনেছিলেন। কিন্তু এই পুরস্কার তিনি চান না। সাত বছর আগে, ১৯৫৭ সালে, একসময়ের বন্ধু আলব্যের কামুর নোবেলপ্রাপ্তি তাঁর মনে সম্ভবত একধরনের উষ্মার জন্ম দিয়েছিল। অথচ কামুকে বিশ্বের কাছে তিনিই পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন। এই পুরস্কারের প্রতি তাচ্ছিল্যবোধের সূচনা সেখানেই।
প্রতিবছর অক্টোবরের প্রথম বা দ্বিতীয় সপ্তাহে ঘোষণা হয় সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার। ৪ অক্টোবর ১৯৬৪ প্যারিসের ল্য ফিগারো দৈনিকে সার্ত্র নোবেল পাচ্ছেন, এই মর্মে একটি খবর ছাপা হয়। সে খবর তাঁর নজরে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে নোবেল কমিটির সচিবের উদ্দেশে একটি চিঠি পাঠিয়ে সার্ত্র জানালেন, এই পুরস্কার তাঁর কাম্য নয়। শুধু এই বছর নয়, অন্য কোনো সময়েই এই পুরস্কার তাঁকে দেওয়া হোক, তা তিনি চান না। বিস্তর বিনয় ও ক্ষমা প্রার্থনা করে অনুরোধটি করলেন তিনি।
অজ্ঞাত কারণে সেই চিঠি সময়মতো স্টকহোমে এসে পৌঁছায়নি। অথবা পৌঁছালেও নোবেল কমিটির সচিবের সেই চিঠি পড়া হয়নি সময়মতো। ২২ অক্টোবর অনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষিত হলো, ১৯৬৪ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন ফরাসি দার্শনিক ও কথাসাহিত্যিক জঁ পল সার্ত্র। সেদিনই প্যারিসে এক সংবাদ সম্মেলনে সার্ত্র জানালেন, এ পুরস্কার গ্রহণে তিনি অপারগ। তাঁর এই সিদ্ধান্তের পেছনে যেমন ব্যক্তিগত কারণ রয়েছে, তেমনি রয়েছে বস্তুগত কারণও। তিনি জানালেন, কোনো লেখকেরই প্রাতিষ্ঠানিক পুরস্কার বা সম্মাননা গ্রহণ করা উচিত নয়। কারণ এ জাতীয় সম্মাননা লেখকের জন্য আপসকামিতার জন্ম দেয়। যে প্রতিষ্ঠান তাঁকে পুরস্কার দিচ্ছে, তার প্রভাব লেখকের সঙ্গে যুক্ত হোক—পাঠকের জন্য তা কাম্য নয়।
তাঁর এই ব্যাখ্যা পর্যাপ্ত নয়, বরং তা বিস্তর বিতর্কের সূত্রপাত করেছে টের পেয়ে একই দিন অর্থাৎ ২২ অক্টোবর সার্ত্র ল্য মঁদ পত্রিকায় এক নাতিদীর্ঘ পত্রে তাঁর নোবেল প্রত্যাখ্যানের ব্যাখ্যা করলেন আরও বিস্তারিতভাবে। ব্যক্তিগত কারণের ব্যাখ্যা হিসেবে জানালেন, খেয়ালের বশে তিনি এই সিদ্ধান্ত নেননি। বরাবরই তিনি সরকারি স্বীকৃতির বিপক্ষে। এর আগে ১৯৪৫ সালে ফরাসি সরকার তাঁকে 'লেজিওঁ দ্য অনার' পদকে ভূষিত করতে চাইলেও তিনি সেটি গ্রহণ করেননি। 'একজন লেখক, যাঁর নিজস্ব রাজনৈতিক, সামাজিক বা সাহিত্যবিষয়ক অবস্থান রয়েছে, তাঁর উচিত নিজস্ব শক্তি অর্থাৎ লিখিত শব্দের শক্তি দিয়ে চালিত হওয়া। পুরস্কৃত হওয়ার ফলে লেখকের ওপর (প্রাতিষ্ঠানিক) চাপ সৃষ্টি হয়, যা কখনোই কাম্য নয়। আমার নাম জঁ পল সার্ত্র, অথচ যদি লেখা হয় জঁ পল সার্ত্র, নোবেল বিজয়ী, তাহলে দুটো বিষয় এক হবে না।'
সার্ত্র আপত্তির বস্তুনিষ্ঠ বা 'অবজেক্টিভ' কারণের যে ব্যাখ্যা দিলেন, তা কিঞ্চিৎ জটিল। তিনি লিখলেন, বর্তমান সময়ে সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে একমাত্র যে লড়াই সম্ভব, তা হলো পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান। এই দুইয়ের মধ্যে যে দ্বন্দ্ব রয়েছে, সে সম্বন্ধে তিনি অবগত। তিনি নিজে যদিও বুর্জোয়া সংস্কৃতির সৃষ্টি, তবে তাঁর পক্ষপাত পূর্বের অর্থাৎ সমাজতন্ত্রের প্রতি। তার পরেও পূর্ব বা পশ্চিম কোনো তরফের পুরস্কারই তিনি চান না। একই লেখায় সার্ত্র তুললেন পুরস্কারের অর্থমানের প্রসঙ্গ। আড়াই লাখ ক্রাউন, অর্থাৎ সেই সময়ের মূল্যমানে ৫৩ হাজার ডলার, তিনি গ্রহণ করে তা কোনো অর্থপূর্ণ কাজে দান করতে পারতেন। তিনি যে তা করেননি, সার্ত্র জানালেন, এ নিয়ে তাঁর মনে কোনো দ্বন্দ্ব নেই, 'আমি আড়াই লাখ ক্রাউন প্রত্যাখ্যান করছি, কারণ পূর্ব বা পশ্চিম কোনো পক্ষের কাছেই প্রাতিষ্ঠানিকভাবে দায়বদ্ধ হতে চাই না আমি। যে নীতির কথা বলছি, তা কেবল আমার একার নয়, আমার সহযোদ্ধাদেরও।'
এখানে স্মরণ যেতে পারে, সার্ত্র ছাড়া অন্য একমাত্র যে লেখক নোবেল পুরস্কার পেয়েও প্রত্যাখ্যান করেছিলন, তিনি জর্জ বার্নাড শ। পরে সম্ভবত পুরস্কারের অর্থের পরিমাণ ঠাহর করতে পেরে শ সেই অর্থ গ্রহণ করেন, তবে নিজের কাজে ব্যবহার না করে পুরো টাকাটাই দান করেন সুইডিশ সাহিত্যের ইংরেজি অনুবাদের কাজে।
নীতিগত কারণে পুরস্কার প্রত্যাখ্যান বিষয়ে সার্ত্রের বক্তব্য গ্রহণযোগ্য মনে হলেও আত্মপক্ষ সমর্থনে এরপর তিনি যা বলেছিলেন, তা পুরোপুরি স্ববিরোধী। ল্য মঁদ-এ তিনি লিখলেন, নোবেল পুরস্কারটি শুধু পশ্চিমের লেখক বা পুবের ভিন্নমতাবলম্বী লেখকদের জন্য নির্ধারিত। এই পুরস্কার পাবলো নেরুদাকে দেওয়া হয়নি। লুই আরাগঁকেও দেওয়া হয়নি (এঁরা দুজনেই সোভিয়েতপন্থী কমিউনিস্ট হিসেবে পরিচিত)। এমনকি সোভিয়েত ইউনিয়নের সেরা লেখক মিখাইল শোলোখভকে না দিয়ে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়েছে বরিস পাস্তারনাককে, যাঁর বই নিজের দেশে নিষিদ্ধ। (অন্য কথায়, পাস্তারনাক সাহিত্যগুণে পুরস্কার পাননি, পেয়েছেন তাঁর সোভিয়েত স্বার্থবিরোধী রাজনৈতিক অবস্থানের কারণে।) তবে সার্ত্র ভুলে গেলেন আলজেরীয়-ফরাসি লেখক কামু ও ইতালীয় কবি সালভাতোরে কোয়াসিমোদো তত দিনে পেয়েছেন এই পুরস্কার, তাঁরা দুজনেই বামপন্থী হিসেবে সুপরিচিত। পরবর্তীকালে নেরুদা ও দারিও ফোর মতো বামপন্থী কবি ও নাট্যকার সেই পুরস্কার পেয়েছেন।
সবচেয়ে বিস্ময়কর, শোলোখভের জন্য তাঁর সুপারিশ। শোলোখভের ধীরে বহে ডন ১৯৬৫ সালে নোবেল পুরস্কার পায়। পাস্তারনাকের ডক্টর জিভাগো যে শোলোখভের ধীরে বহে ডন-এর চেয়ে গুণগতভাবে শ্রেষ্ঠ, এ নিয়ে এখন আর কোনো বিতর্কই নেই। তবে বিতর্ক আছে ধীরে বহে ডন শোলোখভের লেখা কি না, সেটি নিয়ে। জোর গুজব রয়েছে যে ধীরে বহে ডন-এর প্রকৃত লেখক শোলোখভ নন, ফিওদর ক্রিয়কফ নামে এক যুবক।
এ এমন এক সময়ের কথা, যখন সার্ত্র প্যারিসের বুদ্ধিজীবী মহলের শিরোমণি। শুধু দার্শনিক বা সাহিত্যিক নন, তখন তিনি মস্ত বামপন্থী তাত্ত্বিক ও অ্যাকটিভিস্টও। তাই তাঁর নোবেল প্রত্যাখ্যানের কথা চাউর হতে না হতেই সাংবাদিকেরা ছেঁকে ধরলেন তাঁকে। এক নাছোড়বান্দা সাংবাদিক ধাওয়া করে পৌঁছালেন তাঁর বাড়ি পর্যন্ত। নিতান্ত বিরক্ত হয়ে সার্ত্র তাঁকে জানালেন, 'আমি এমন লোকেদের জন্য লিখি, যারা আমার লেখা পড়তে চায়। সেলিব্রেটি সংগ্রাহকদের জন্য আমি লিখি না। আমি পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেছি, কারণ আমি কারও অধীনস্থ হতে চাই না, আমি মুক্ত থাকতে চাই।'
তাঁর নোবেল প্রত্যাখ্যানের এই সিদ্ধান্ত কোনো কোনো মহলে অভিনন্দিত হলেও অনেকেই সার্ত্রকে তুলোধুনো করে ছাড়লেন। রেনে মেহু, সে সময় তিনি ইউনেসকোর মহাপরিচালক, সার্ত্রকে তুলনা করলেন সক্রেটিসের সঙ্গে। অন্যদিকে গাব্রিয়েল মারসেল তাঁকে 'মিথ্যাবাদী, অসৎ ও তরুণদের জন্য অতীব ক্ষতিকর' বলে করলেন সমালোচনা। এমনকি একসময়ের বামপন্থী ও পরাবাস্তববাদী আন্দোলনের গুরু আন্দ্রে ব্রেতোঁ জানালেন, পুরো ব্যাপারটা পূর্ব ব্লকের জন্য 'রাজনৈতিক প্রপাগান্ডা' ছাড়া আর কিছুই নয়।
সার্ত্র এই পুরস্কার এমন এক সময়ে প্রত্যাখ্যান করলেন, যখন আদর্শগতভাবে তিনি সোভিয়েত ইউনিয়নের নিকটবর্তী। স্তালিনের হাতে সোভিয়েত লেখকদের নিগ্রহের কথা জানা সত্ত্বেও তিনি হয় তা অস্বীকার করেছেন, নয় বিষয়টিকে কোনো গুরুত্ব দেননি। স্তালিন প্রশ্নে মতবিরোধের কারণেই দীর্ঘদিনের বন্ধু আলবে্যর কামুর সঙ্গে তাঁর বিচ্ছেদ ঘটে। অনেকেরই ধারণা, তাঁর আগে কামুকে পুরস্কৃত করায় তিনি ক্ষিপ্ত হয়েছিলেন, নোবেল প্রত্যাখ্যানের সেটিই আসল কারণ।
১৯৪৬-এ কামু প্রথমবারের মতো স্তালিনের হাতে সোভিয়েত ভিন্নমতাবলম্বীদের নিগ্রহের প্রতিবাদ জানান এবং সার্ত্রকে সেই সমালোচনায় যোগ দিতে অনুরোধ করেন। সার্ত্র তাতে সম্মত হননি। এমনকি সোভিয়েত ইউনিয়নের ভেতর লক্ষ লক্ষ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীভুক্ত নাগরিককে নিজেদের আবাস থেকে জোরপূর্বক স্থানান্তর করা হচ্ছে, কামুর অনুরোধ সত্ত্বেও সার্ত্র এর প্রতিবাদ করেননি। কামু সার্ত্রর নীরবতার প্রতি কটাক্ষ করে লেখেন, 'তাত্ত্বিকভাবে ব্যক্তির মুক্তির কথা বলব, অথচ মানুষ যখন পুরো একটি ব্যবস্থার অধীনে বন্দী, তখন নীরব থাকব— এমন মানুষকে সৎ বলি কীভাবে?' এরপর কামুর সে কথায় ক্রুদ্ধ হয়ে সার্ত্র নিজের পত্রিকা মডার্ন টাইমস-এ লিখলেন, 'সোভিয়েত শ্রমশিবির আমার পছন্দ নয়, কিন্তু বুর্জোয়া পত্রপত্রিকায় এ নিয়ে প্রতিদিন যে বাড়াবাড়ি হচ্ছে, তা-ও কোনোভাবে সহ্য করা যায় না।' সেই একই লেখায় সার্ত্র কামুর লেখাকে অবান্তর ও যুক্তিহীন বলে ব্যঙ্গ করলেন। কামুর সঙ্গে তাঁর দীর্ঘদিনের বন্ধুত্বকে বিদায় জানিয়ে লিখলেন, 'প্রিয় কামু, তোমার সঙ্গে বন্ধুত্ব খুব সহজ ছিল না, কিন্তু এখন থেকে তার অভাব আমি বোধ করব।' (অর্থাৎ, 'আমাদের বন্ধুত্ব এখানেই শেষ')।
সোভিয়েত প্রশ্নে অক্তাভিও পাজের সঙ্গেও সার্ত্রর বচসার সূত্রপাত হয়। পাজ নিজে কঠোর নীতিবান লেখক, লেখকের নৈতিক দায়িত্ব স্মরণ করে স্তালিনের নৃশংসতার বিরুদ্ধে তিনি সার্ত্র ও অন্যান্য ফরাসি বুদ্ধিজীবীকে প্রতিবাদ করতে আহ্বান জানিয়েছিলেন ভিক্তোরিয়া ওকাম্পোর পত্রিকা সুর-এ। সার্ত্র সেই ডাকেও সাড়া দেননি। এমনকি স্তালিনের ভাড়া করা খুনির হাতে ট্রটস্কি নিহত হলে প্রতিবাদ জানাতে ব্যর্থ হন সার্ত্র। এই বাস্তবতায় সার্ত্রর মৃত্যুর পর ১৯৮৪-তে পাজ যে দীর্ঘ প্রবন্ধ পিএনআর পত্রিকায় লেখেন, তাতে তাঁর দ্বিচারিতার কঠোর সমালোচনা করেন তিনি। ১৯৫৬-তে হাঙ্গেরির গণবিদ্রোহ ঠেকাতে খ্রুশ্চেভ ট্যাংক পাঠিয়েছিলেন, সার্ত্র তার প্রতিবাদ করেননি। সে কথা স্মরণ করে পাজ লিখলেন, সার্ত্র তাঁকে বলেছিলেন, খ্রুশ্চেভের উচিত হয়নি স্তালিনের সমালোচনা করা। কারণ এর ফলেই শ্রমিকশ্রেণি খেপে ওঠে। 'শ্রমিকশ্রেণি উত্ত্যক্ত হয়, এমন কিছু করা উচিত নয়।' সার্ত্র পাজকে এ কথাও বলেছিলেন, নিজেদের দেশে শ্রমিকদের ওপর নিগ্রহ ঠেকাতে তাঁরা ব্যর্থ হয়েছেন, অতএব পাজের মতো বুর্জোয়া লেখকদের সোভিয়েত ইউনিয়নের সমালোচনা করার কোনো অধিকার নেই।
বুলগেরীয় ফরাসি লেখক ও মনোবিশারদ জুলিয়া ক্রিস্তেভা দ্য সেন্স অ্যান্ড নন-সেন্স অব রিভোল্ট নামে এক বইয়ে সার্ত্রর নোবেল পুরস্কার প্রত্যাখ্যান নিয়ে আধা মনস্তাত্বিক, আধা রাজনৈতিক এক প্রবন্ধে মন্তব্য করেছেন, খ্যাতিমান এই বুদ্ধিজীবীর চরিত্রে যে অনেক বৈপরীত্য ও দ্বন্দ্ব রয়েছে, এ ঘটনা তার প্রমাণ। সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে তাঁর অবস্থান আপসহীন, অথচ পূর্বে যখন মানুষের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয় এবং সে বিষয়ে সার্ত্র নীরব থাকেন, তখন তাঁর নৈতিক অবস্থানের দৃঢ়তা নিয়ে ধন্দ জাগে। শোলোখভের কথা উল্লেখ করে ক্রিস্তেভা মন্তব্য করেছেন, এই বইটি যে অন্যের লেখা, সে কথা তাঁর জানার কথা নয়। কিন্তু পাস্তারনাককে যে পুরস্কার নিতে তাঁর দেশের বাইরে আসার অনুমতি দেওয়া হয়নি, এ কথা তো তাঁর অজানা নয়। সোভিয়েত ইউনিয়নে ভিন্নমতাবলম্বীদের জন্য শ্রমশিবির রয়েছে, সে কথাও তিনি জানতেন। সার্ত্র আরাগঁর জন্য নোবেল সুপারিশ করেছেন, কিন্তু আরাগঁও কখনো সোভিয়েত পুলিশি ব্যবস্থার নিন্দা করেননি। কোনো কোনো বিদ্রোহ যে অর্থহীন, জুলিয়া সার্ত্রর উদাহরণে কার্যত সে কথাই বলেছিলেন।
সার্ত্রর যুক্তির সবচেয়ে খোঁড়া অংশ হলো পুরস্কার পাওয়া মানেই লেখকের পুরস্কারদাতা প্রতিষ্ঠানের কেনা গোলাম হয়ে যাওয়া—এই দাবি। বাংলার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নোবেল পুরস্কার পাওয়ার পরেই উপনিবেশবাদ, তথা পশ্চিমা সভ্যতা ও জাতীয়তাবাদী চেতনার কঠোর সমালোচক হয়ে ওঠেন। কামু বা উইলিয়াম ফকনার পুরস্কারের আগে বা পরে তাঁদের বিশ্বাসে কোনো আপস করেছেন, এ কথা বলাও অসত্য হবে। দারিও ফো বা হ্যারল্ড পিন্টারকে নিয়েও একই কথা বলা যায়।
এ কথা বলা বোধহয় অত্যুক্তি হবে না, যদি বলি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার নিয়ে কিছুটা বাড়াবাড়ি—তার কিছুটা অতি মূল্যায়ন করা হয়। এ পর্যন্ত এই পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখকদের তালিকায় চোখ বোলালে এমন সব লেখকের নাম পড়বে, যাঁরা এখন কার্যত বিস্মৃত। (হেনরিক শিয়েঙ্কেভিচ, রুদলফ ইউকেন, এলভিন্দ জনসন, জয়েস হ্যারিহননি—এঁরা কারা?) অথচ লিও তলস্তয়, জেমস জয়েস, জোসেফ কনরাড বা হেনরি জেমস এই পুরস্কারের জন্য যোগ্য বিবেচিত হননি। অতএব, সার্ত্রর নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্তি এবং তা প্রত্যাখ্যানের পঞ্চাশ বছর পরে এটি নিয়ে সাতকাহন গাইবার খুব একটা যৌক্তিকতা আছে বলে মনে হয় না।
সার্ত্রর ব্যাপারে বরং অনেক বেশি জরুরি প্রশ্ন, লেখক হিসেবে, বিশেষত দার্শনিক হিসেবে তিনি এখনো কি প্রাসঙ্গিক? সে প্রসঙ্গ আজ নয়, আরেক দিন।

নোবেল কমিটিকে সার্ত্রর চিঠি
১৯৬৪ সালের ২৩ অক্টোবর নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকায় জঁ পল সার্ত্রর নোবেল প্রত্যাখ্যানের খবর১৪ অক্টোবর ১৯৬৪, প্যারিস
প্রিয় সচিব মহোদয়,
আমি আজই জানতে পেরেছি, কোনো কোনো সূত্র অনুসারে আমি এ বছর সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেতে পারি। পুরস্কার ঘোষিত হওয়ার আগে তা নিয়ে কথা বলা অবিবেচনাপ্রসূত মনে হতে পারে, কিন্তু কোনো ভুল বোঝাবুঝি ঠেকানোর জন্য এই পত্রের অবতারণা। আপনাকে আমি আশ্বস্ত করতে চাই যে সুইডিশ একাডেমি, যা অনেক খ্যাতিমান লেখককে সম্মানিত করেছে, তার প্রতি আমার অগাধ শ্রদ্ধা রয়েছে। তা সত্ত্বেও ব্যক্তিগত ও বস্তুগত কারণে আমি সেসব লেখকের তালিকাভুক্ত হতে চাই না। শুধু ১৯৬৪ সালে নয়, এর পরে কোনো সময়েই এই সম্মান আমার কাঙ্ক্ষিত নয়।
বিনম্র শ্রদ্ধাসহ,
জঁ পল সার্ত্র


http://www.prothom-alo.com/art-and-literature/article/358831/

Jean-Paul Sartre - Wikipedia, the free encyclopedia

en.wikipedia.org/wiki/Jean-Paul_Sartre
Wikipedia
Jean-Paul Charles Aymard Sartre was a French philosopher, playwright, novelist, screenwriter, political activist, biographer, and literary critic. He was one of the ...
  1. Jean-Paul Sartre - Biographical - Nobelprize.org

    Jean-Paul Sartre, (1905-1980) born in Paris in 1905, studied at the École Normale Supérieure from 1924 to 1929 and became Professor of Philosophy at Le ...



__._,_.___

Posted by: "Jamal G. Khan" <M.JamalGhaus@gmail.com>


****************************************************
Mukto Mona plans for a Grand Darwin Day Celebration: 
Call For Articles:

http://mukto-mona.com/wordpress/?p=68

http://mukto-mona.com/banga_blog/?p=585

****************************************************

VISIT MUKTO-MONA WEB-SITE : http://www.mukto-mona.com/

****************************************************

"I disapprove of what you say, but I will defend to the death your right to say it".
               -Beatrice Hall [pseudonym: S.G. Tallentyre], 190





__,_._,___