সাংবাদিক পরিচয়ের সুবিধা নিতেন কামারুজ্জামান
প্রকাশিত: ১০:০০ পূর্বাহ্ন, নভেম্বর ৪, ২০১৪
আপডেট: ১০:৩৪ পূর্বাহ্ন, নভেম্বর ৪, ২০১৪
জুলফিকার আলী মাণিক॥
যুদ্ধাপরাধের দায়ে মৃত্যুপ্রাপ্ত জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ কামারুজ্জামান। তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে সাংবাদিক পরিচয় উপভোগ করেছেন ৬২ বছর বয়সের এ জামায়াত নেতা। জাতীয় প্রেসক্লাবেরও সদস্য ছিলেন তিনি।কামারুজ্জামান হলেন দ্বিতীয় জামায়াত নেতা যিনি আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনা পর চূড়ান্তভাবে মৃত্যুদণ্ড পেলেন। গতকাল সোমবার এ রায় দেন আপিল বিভাগ। এর আগে জামায়াতের নেতা কাদের মোল্লা আপিল রায়ে মৃত্যুদণ্ড দেন সুপ্রিম কোর্ট। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের যে রায় দিয়েছিলেন তা পুনর্বিবেচনা করে ফাঁসির আদেশ দেন আপিল বিভাগ। ২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর রাত ১০টা ১ মিনিটে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে তার কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। কাদের মোল্লাও কয়েক দশক ধরে সাংবাদিকের মর্যাদা ভোগ করে আসছিলেন। পেশাদার সাংবাদিকদের সংগঠন জাতীয় প্রেসক্লাবের সদস্য হিসেবে এর যাবতীয় সুবিধাও তিনি ভোগ করেছেন। কামারুজ্জামানের জ্যেষ্ঠ পুত্র হাসান ইকবাল জানান, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানের আমলে মিরপুরের সাংবাদিক কলোনিতে প্লটও বরাদ্দ পেয়েছিলেন কাদের মোল্লা। অবশ্য পরে এটি বিক্রি করে দেওয়া হয়। ইকবাল বলেন, তার বাবা সরকার থেকে কোনও বরাদ্দ পাননি। বরং সরকারের কাছ থেকে বরাদ্দ পাওয়া মতিউর রহমান চৌধুরীর প্লট কিনেছিলেন তিনি। মতিউর রহমান চৌধুরী বর্তমানে ট্যাবলয়েড দৈনিক মানবজমিনের প্রধান সম্পাদক। সাংবাদিকদের একটি আবাসন সমবায় সমিতির সভাপতি রুহুল আমিন গাজী বলেন, 'আমার যতদূর মনে পড়ে কাদের মোল্লা একটি প্লটের অফার পেয়েছিলেন। কিন্তু তিনি সেটা নেননি। কিন্তু এটা সত্য যে, মতিউর রহমান চৌধুরীর কাছ থেকে কামারুজ্জামান প্লট কিনেছিলেন।' রুহুল আমিন গাজী বলেন, প্লট বরাদ্দের প্রক্রিয়া শুরু হয় জিয়ার আমলে। বরাদ্দপ্রাপ্ত সাংবাদিকদের নামে এগুলোর রেজিস্ট্রি হয় এরশাদ সরকারের আমলে। আর ১৯৯১-১৯৯৬ মেয়াদে খালেদা জিয়ার সরকারের আমলে এগুলো হস্তান্তর করা হয়। ইকবাল বলেন, ২০০০ সালে তার পরিবার রাজধানীর মগবাজার থেকে সাংবাদিক কলোনিতে তাদের বাসস্থান পরিবর্তন করে। কামারুজ্জামানের বাড়ি শেরপুরে। মুক্তিযুদ্ধকালে বৃহত্তর ময়মনসিং এলাকায় তিনি মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। ওই সময়ে কামারুজ্জামান ছিলেন একজন ছাত্র। পাঁচ ছেলে-মেয়ের বাবা কামারুজ্জামান। বাংলাদেশের স্বাধীনতার কিছুদিন পর পাক বাহিনীর সন্দেহভাজন সহযোগী হিসেবে গ্রেফতার হন তিনি। ইকবালের দাবি, তার বাবা পরে কারাগার থেকে মুক্তি পান। ১৯৭৩ সালে ঢাকা আইডিয়াল কলেজ থেকে ডিগ্রি পাস করেন। তিন বছর পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতায় স্নাতোকত্তর পাস করেন। তিনি সলিমুল্লাহ হলে থাকতেন। ইকবাল জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হিসেবে জামায়াতের মুখপাত্র দৈনিক সংগ্রামের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করেন কামারুজ্জামান। পাশ করে বের হওয়ার পর যোগ দেন মাসিক ঢাকা ডাইজেস্ট পত্রিকায়। ১৯৮১ সালে যোগ দেন জামায়াতে ইসলামীর সাপ্তাহিক প্রকাশনা সোনার বাংলা পত্রিকায়। পরে নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে দৈনিক সংগ্রামে ফিরে আসেন কামারুজ্জামান। ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত তিনি দৈনিক সংগ্রামেই ছিলেন। ইকবাল জানান, তার বাবা পরে আবারও যোগ দেন সাপ্তাহিক সোনার বাংলায়। সম্পাদক হিসেবেই পত্রিকাটিতে যোগ দেন তিনি। ২০১১ সালে যুদ্ধাপরাধের দায়ে গ্রেফতারের আগ পর্যন্ত তিনি সেখানেই কাজ করতেন। শাহবাগ আন্দোলনের দাবির মুখে গতবছর জাতীয় প্রেসক্লাব কর্তৃপক্ষ ঘোষণা করে, তারা প্রেসক্লাব থেকে কাদের মোল্লা ও কামারুজ্জামান উভয়ের সদস্যপদ বাতিল করেছে।তিনি আরও বলেন, 'জাতীয় প্রেসক্লাব কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে বাবার সদস্যপদ বাতিলের বিষয়ে আমরা কোনও আনুষ্ঠানিক চিঠি পাইনি। এ ব্যাপারটি আমরা কেবল সংবাদপত্রেই পড়েছি।' এই দুইজনের বাইরে আরেক অপরাধী চৌধুরী মঈনুদ্দিনও সাংবাদিক হিসেবে পরিচিত। চৌধুরী মঈনুদ্দিনের সঙ্গে এই দুইজনের পার্থক্য হচ্ছে বাংলা দৈনিক পূর্বদেশ-এর সাংবাদিক থাকাকালে তিনি যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। অন্যদিকে কাদের মোল্লা ও কামারুজ্জামান মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের পর সাংবাদিক হিসেবে পরিচিতি পান। মুক্তিযুদ্ধ শেষ হওয়ার অল্প কিছুদিন আগে মুঈনুদ্দিন ঢাকা ত্যাগ করেন। বর্তমানে ব্রিটিশ নাগরিক হিসেবে তিনি লন্ডনে বাস করছেন।
Also Read:
কামারুজ্জামানের ফাঁসি দ্রুত কার্যকর চান সোহাগপুরের বিধবারা
I see who is the decision maker জ্যেষ্ঠ বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার
কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড বহাল
__._,_.___