বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় আমি কলেজের ছাত্র, কৈশোরের চাঞ্চল্যতা শেষে যৌবনের সিঁড়ি বেয়ে অনেকটা পথ পেরিয়ে যখন এগিয়ে গেছি আর প্রতিটি যুবক-যুবতীর মাঝে যেমন ভালোলাগা বা প্রীতির অনুভূতি জন্ম নেয় ঠিক তখনই আমাকে স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে হয়। কাব্যের জগৎকে পিছু ফেলে স্বাধীনতার ডাকে অস্ত্র হাতে নিয়েছিলাম। সেপ্টেম্বরের এক সোনালী সকালে সহযোদ্ধাদের সাথে রণক্ষেত্রে গেরিলা আক্রমনের প্রস্তুতি পর্বে সবাই যখন সমরাস্ত্র ও গোলাবারুদ গোছাতে ব্যস্ত তখন আমি হঠাৎ করেই দারুন আবেগপ্রবণ হয়ে এই কয়েকটি লাইন কবিতায় গেঁথে রেখেছিলাম। আজ বিজয় দিবসের এই আনন্দঘন পরিবেশে কি আমার সেদিনের লিখে রাখা কবিতার কোনো প্রয়োজনীয়তা আছে? তবুও পাঠকদের জন্যে সেদিনের প্রচন্ড জেগে উঠবার অনুভূতি ভাগ করে দিলাম।
তিন সেপ্টেম্বর ১৯৭১
============
আমাদের আস্তানার ঠিক পাশেই একটাই বিশাল বটগাছ,
বটগাছটা আমাদেরকে ছায়া দিয়েছে গত তিনদিন ধরে।
আর আমরা চারজন - খোকন, মুকুল, আজাদ আর আমি,
এই বটগাছ তলাতেই আমাদের পরবর্তী এম্বুশের প্রস্তুতি নিছি।
বাঁকি দুজন - শফিক ও কামরুলকে রেকিতে পাঠানো হয়েছে,
গতকাল রাত্রেই, ওরা শত্রু আস্তানার খবরে গেছে, এখনো ফেরেনি।
জানিনা ওরা ফিরবে কিনা, যেমনটা ফিরতে পারেনি এর আগে তাজু ,
সেও গেছিল রেকিতে আর ফেরেনি সহযোদ্ধা তাজু, জানিনা আর ফিরবে কি না ,
তাই তো ঝটপট আমরা আমাদের আস্তানা বদলিয়ে ফেললাম তিনদিন আগে
এখন আমরা আবার নতুন করে মৃতুর সাথে পাঞ্জা লড়তে যাচ্ছি,
একান্ত আমরা চার জন - খোকন, মুকুল, আজাদ আর আমি।
প্রেমিকরা আপনারা সরে যান এখানথেকে, এখানে ভালবাসা খুজবেন না।
অথবা যারা মিটিং মিছিল করেন তারাও সরে যান, কাপড়ে রক্ত লাগতে পারে।
নেতারা, আপনারা শোকসভায় প্রস্তাব নিন "স্টপ জেনোসাইড" বলে চিৎকার করুন
অথবা বিদেশে শুভেচ্ছা সফরে যাওয়ার সময় যুদ্ধের কিছু পোস্টার নিয়ে যান।
আর আমরা চারজন - খোকন, মুকুল, আজাদ আর আমি
এই বটগাছ টিকে সাক্ষী রেখেই মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি।
-মীর মোনাজ হক
__._,_.___