Banner Advertiser

Sunday, January 11, 2015

[mukto-mona] একটি ফোনালাপ ও রাজনৈতিক দেউলিয়াপনার উদাহরণ



এইচ এম মহসীন

একটি ফোনালাপ ও রাজনৈতিক দেউলিয়াপনার উদাহরণ

জানুয়ারী ১২, ২০১৫

h m mohsinদেশের উত্তপ্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতি যে জনমানুষের জীবনে চরম অশান্তি ও শঙ্কার সৃষ্টি করেছে সেটি দেশের রাজনীতিকরা অনুধাবন করেন বলে বিশ্বাস করার মতো লক্ষণ নেই। আমাদের রাজনৈতিক নেতারা বরং দেউলিয়াত্বের নানা উদাহরণ দেখিয়ে চলেছেন। এর মধ্যে সর্বসাম্প্রতিক হল ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপির প্রেসিডেন্ট অমিত শাহের সঙ্গে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কথিত টেলিকথনের খবর এবং বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস সদস্যদের ভুয়া বিবৃতি সংক্রান্ত সংবাদ মিডিয়াতে প্রকাশ।

৮ জানুয়ারি লন্ডন-ভিত্তিক অনলাইন নিউজ পোর্টাল, 'ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস টাইমস'এর দেখাদেখি, দেশের বেশ কয়েকটি পত্রিকাও খবর প্রকাশ করে যে, মিডিয়া ও বিরোধী দলীয় রাজনীতিবিদদের ওপর দমন-পীড়নে বাংলাদেশ সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের তীব্র নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি প্রদান করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের 'ইউএস হাউস কমিটি অন ফরেন অ্যাফেয়ারস' ('হাউস ফরেন অ্যাফেয়ারস কমিটি' নামেও পরিচিত, এটি আসলে যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের নিম্ন কক্ষ, 'হাউস অব রিপ্রেজেনেটেটিভ'এর একটি স্ট্যান্ডিং কমিটি)এর চেয়ারম্যান এডওয়ার্ড রয়েসসহ পাঁচ কংগ্রেসম্যান।

বর্তমানে দেশে বিরোধী রাজনীতিকদের ওপর দমন-নিপীড়ন যে চলছে সেটি নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করার কিছু দেখছি না। তাই যুক্তরাষ্ট্রের মতো 'অভিভাবক' দেশের কংগ্রেসের কতিপয় সদস্য তাদের নিজ দেশের জনগণের অর্পিত 'দেশসেবা'র দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি, বাংলাদেশের মতো উদীয়মান দেশের অভ্যন্তরীন বিষয়ে নাক গলাবেন, সেটি নিতান্তই স্বাভাবিক। এমন একটি বিবৃতি নিয়ে দেশের জনগণের খুব উল্লসিত বা চিন্তিত হবার কারণ নেই।

ঝামেলা বাঁধিয়েছে এডওয়ার্ড রয়েসের পাল্টা বিবৃতি, যেখানে তিনি পরিস্কার করে ওই বিবৃতি 'জাল' বলে আখ্যায়িত করেছেন। পরবর্তীতে 'ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস টাইমস' তাদের মূল প্রতিবেদনটি প্রত্যাহার করে এবং ওই ভুয়া বিবৃতিটি তারেক রহমানের জ্যেষ্ঠ সহকারী, হুমায়ুন কবির পত্রিকাটিকে সরবরাহ করেন বলে জানায়।

ঝামেলা বাঁধিয়েছে এডওয়ার্ড রয়েসের পাল্টা বিবৃতি, যেখানে তিনি পরিস্কার করে ওই বিবৃতি 'জাল' বলে আখ্যায়িত করেছেন

ঝামেলা বাঁধিয়েছে এডওয়ার্ড রয়েসের পাল্টা বিবৃতি, যেখানে তিনি পরিস্কার করে ওই বিবৃতি 'জাল' বলে আখ্যায়িত করেছেন

প্রায় একই সময়ে, বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান সংবাদ সম্মেলনে প্রকাশ করেন যে, ৭ জানুয়ারি ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির সভাপতি অমিত শাহ খালেদা জিয়াকে ফোন করেছেন; পিপার স্প্রের প্রভাবে খালেদার শারীরিক সমস্যা হবার বিষয়টি জেনে তাঁর আশু সুস্থতা কামনা করেছেন।

প্রতিবেশি দেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর অমিত শাহ নিতেই পারেন। তবে ঘটা করে সংবাদ সম্মেলন করে এমন একটি খবর জানানোর প্রয়োজন আছে কিনা সেটি প্রশ্নাতীত নয়। সে যাই হোক, এই ফোনালাপের ঘটনাও যে বানোয়াট, সেটিও ইতোমধ্যেই মিডিয়ার কল্যাণে প্রমাণিত হয়ে গেছে।

ঘটনা দুটি যে অত্যন্ত ন্যাক্কারজনক সেটি বলার অপেক্ষা রাখে না। এখানে দুটি বিষয় খুবই আপত্তিকর। প্রথমত, মুখে 'জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস' বললেও জনগণকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বিদেশিদের প্রভু হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা; দ্বিতীয়ত জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে জনগণের ওপরে সেটি চাপিয়ে দেওয়ার প্রবণতা।

বিদেশিদের সমর্থন আদায়ের মাধ্যমে আন্দোলন বেগবান করা, অথবা ক্ষমতা গ্রহণের চেষ্টার নজির বাংলাদেশের প্রধান দুটি দলেরই রয়েছে। যখনই যে দল ক্ষমতার বাইরে থাকে, বিদেশি প্রভুদের নেক নজর আদায়ের চেষ্টা করে; তাদের বিরুদ্ধে সরকারের দমন-নিপীড়নের অভিযোগ করে এবং প্রভাবশালী দেশের কূটনীতিকদের হস্তক্ষেপের মাধ্যমে সমাধানের পথ খোঁজে।

শুধু রাজনীতিকরাই নন, দেশের মিডিয়াও এ ক্ষেত্রে কম যায় না। বিভিন্ন সময়ে বিদেশ থেকে আগত কূটনীতিক বা রাষ্ট্রদূত, এমনকি প্রখ্যাত কোনো ব্যবসায়ী বা শিক্ষাবিদ এলেই সাংবাদিকরা তাদের কাছে ছুটে গিয়ে, বাংলাদেশের ভবিষ্যত কী বা সরকারের করণীয় কী ইত্যাদি ধরনের নানা প্রশ্ন করতে থাকেন। স্বাধীন, সার্বভৌম একটি দেশের সকল সমস্যা বা ইস্যুতেই বিদেশিদের হস্তক্ষেপ অথবা মতামত কামনা করার এই প্রবণতা কিন্তু আত্নবিশ্বাসের ঘাটতির বিষয়টি প্রমাণ করে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস বাংলাদেশ সম্বন্ধে বিবৃতি প্রদান করে থাকলেও, সেটি ঘটা করে প্রকাশ করার পেছনের মনস্তত্ব আসলে কী? সুস্পষ্টভাবেই এটি রাজনৈতিক দেউলিয়াপনার উদাহরণ। জনগণের স্বার্থের কথা বলে, 'দেশ বাঁচাও, মানুষ বাঁচাও' বলে রাজনীতি করে দলগুলো যখন দেশের জনগণের চেয়ে বিদেশি প্রভুদের প্রতি বেশি নির্ভরশীল হতে চায়, সেটি দলগুলোর নিজ নিজ রাজনৈতিক ক্ষমতা ও আদর্শের ওপর নিজেদেরই আস্থাহীনতা প্রকাশ করে দিচ্ছে।

এবার আসি জালিয়াতি প্রসঙ্গে। উল্লিখিত জালিয়াতির ঘটনা দুটি কিন্তু হালকা করে দেখার অবকাশ নেই। দুটি ঘটনার সঙ্গে বিএনপির দুই শীর্ষ নেতার ঘনিষ্ঠজনের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসম্যানদের বিবৃতি জালিয়াতির বিষয়টি তো সংশ্লিষ্ট পত্রিকা পরিস্কার করেছে। প্রশ্ন হচ্ছে, তারেক রহমান কি তার জ্যেষ্ঠ সহকারী হুমায়ুন কবিরের এই জালিয়াতির বিষয়ে অবগত ছিলেন না? যদি তিনি এই জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত থেকে না থাকেন, তাহলে কি তিনি তার সহকারীর বিরুদ্ধে যথাযথ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন? যদি হুমায়ুন কবির নিজে নিজে এই ঘটনা ঘটিয়ে থাকেন তাহলে তিনি বিএনপির অপূরণীয় ক্ষতি করেছেন এবং এর শাস্তি তার অবশ্যই প্রাপ্য। যদি তার বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে দেখা না যায়, তাহলে এটা কি বলা অনুচিত হবে যে, তারেক রহমান নিজেই এর পরিকল্পনায় সম্পৃক্ত ছিলেন? সে ক্ষেত্রে তিনি একটি দলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নেতা হতে পারেন কিনা সে বিষয়টি নিয়ে দেশের মানুষকে ভাবতে হবে।

বিএনপি চেয়ারপারসনকে অমিত শাহের ফোনের প্রসঙ্গটিও প্রায় একই রকম। চেয়ারপারসনের প্রেস সচিব মারুফ কামাল খানের পাশাপাশি, দলের যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভীও টেলিফোনে আলোচনার ঘটনা 'নির্ভেজাল' সত্য বলে দাবি করেছেন। তবে 'বাসস', 'বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম' ও 'প্রথম আলো'সহ বিভিন্ন সংবাদ সংস্থা তদন্ত করে জানিয়েছে যে, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বিজেপির প্রধানের ফোনালাপের সংবাদটি ছিল ভুয়া। দুটি টেলিভিশন সংস্থা রীতিমতো অমিত শাহের সঙ্গে ফোনালাপের অডিও রেকর্ড দর্শকদের শুনিয়েছে।

দুটি টেলিভিশন সংস্থা রীতিমতো অমিত শাহের সঙ্গে ফোনালাপের অডিও রেকর্ড দর্শকদের শুনিয়েছে

দুটি টেলিভিশন সংস্থা রীতিমতো অমিত শাহের সঙ্গে ফোনালাপের অডিও রেকর্ড দর্শকদের শুনিয়েছে

স্বীকার করতে দ্বিধা নেই যে, মার্কিন কংগ্রেসম্যানরা নিজেরাই বিবৃতি জালিয়াতির বিষয়টি প্রকাশ করেছেন বলে এটির জালিয়াতির বিষয়ে আর প্রমাণের দরকার নেই। কিন্তু অমিত শাহের সঙ্গে খালেদা জিয়ার ফোনালাপের দাবিটি যে মিথ্যা সেই প্রমাণ 'অতটা অকাট্য' নয় বলে অনেকে দাবি করছেন।। তবে এতগুলো সংবাদ মাধ্যম অমিত শাহের ফোনালাপ অস্বীকার করার রেফারেন্স প্রকাশ করার পরে, একেও পরিকল্পিত মিথ্যাচার বলে বিশ্বাস করা বাড়াবাড়ি হবে না।

দেশের অন্যতম প্রধান একটি রাজনৈতিক দলের শীর্ষ পর্যায়ে নেতাদের কাছ থেকে এমন মিথ্যাচার অনাকাঙ্ক্ষিত; এভাবে জনসমর্থন ও সহানুভূতি আদায়ের চেষ্টাও নিন্দনীয়।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত নির্বাচন সু্ষ্ঠু হয়েছিল কিনা, তার চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, ওই নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের অধিকাংশ মানুষের মতামতের প্রতিফলন ঘটেছিল কিনা। সে সব নিয়ে কঠোর আওয়ামী লীগ সমর্থক ছাড়া সাধারণ মানুষের মধ্যে বিতর্ক নেই। অধিকন্তু, গণতান্ত্রিক দেশে একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর অফিসের সামনে বালুর বস্তা ভরা ট্রাক দিয়ে কার্যত তাঁকে 'অফিসবন্দি' করে, তাঁকে সমাবেশ করার অধিকার থেকে বঞ্চিত করে সরকারের দায়িত্বশীল মন্ত্রীরা যখন তাঁকে 'নিরাপত্তা' দেওয়া হচ্ছে বলে বিবৃতি দেন– সেটিও জনগণের সঙ্গে প্রহসন।

এ অবস্থায় জনগণের সহানুভূতি পুঁজি করে তাদের দাবি ও আন্দোলনে জনগণকে সম্পৃক্ত করার চেষ্টা করতে পারতেন বিএনপির নেতৃবৃন্দ– সেটাই কাঙ্ক্ষিত ছিল। তা না করে জালিয়াতির মাধ্যমে জনসমর্থন আদায়ের প্রচেষ্টা অত্যন্ত ন্যাক্কারজনক।

আমাদের দেশের রাজনীতিকরা বরাবরই সাধারণ মানুষকে 'বেকুব' ভাবেন– ব্যাপারটি অপমানজনক। তারা মনে করেন, জনগণ তাদের সকল 'ওহী' বিশ্বাস করতে বাধ্য। এই যেমন, বর্তমান সরকারের একজন মন্ত্রী বলেছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ভবন সংস্কারের জন্য ইট ও বালুর ট্রাক নিয়ে গেছেন তাঁর দলের অফিসে। এ রকম রাজনৈতিক ভাঁড়ামিও 'গিলতে' হয়েছে আমজনতাকে!

বাস্তবতা হচ্ছে, বালু ও ইটের ট্রাকের প্রচলন, কিংবা 'সরকারি অবরোধ'এর বিষয়টিও দেশের মানুষ ভালোভাবেই জানেন। যেমন তারা জানেন, হরতালের উপহাস করে ক্রিকেট খেলার প্রচলন শুরুর কথা; অথবা গায়েবি ভবন থেকে ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণের ইতিহাস; মিডিয়ার সামনে 'উই আর লুকিং ফর শত্রুজ' বলে পেছনে জঙ্গিদের মদদদানের গল্প।

পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, মিথ্যাচার, ভণ্ডামি আর জালিয়াতি করেও অতীতে অনেক রাজনীতিক পার পেয়ে গিয়েছেন, জনগণের ভোগান্তি শেষ হয়নি। আশার কথা হচ্ছে, প্রযুক্তির এই যুগে মিথ্যাচার করে পার পাওয়া খুব কঠিন। নাগরিকরা এখন সচেতন বলে মিডিয়াও আড়ালের সব সত্য বের করে আনতে তৎপর।

নতুন বছরের শুরুতে আলোচিত এসব আন্তর্জাতিক কেলেঙ্কারি থেকে অন্যরা শিক্ষা নেবেন সেটাই সকলের প্রত্যাশা।

এইচ এম মহসীন: স্ট্র্যাটেজি প্রফেশনাল।

http://opinion.bdnews24.com/bangla/archives/24111




__._,_.___

Posted by: "Jamal G. Khan" <M.JamalGhaus@gmail.com>


****************************************************
Mukto Mona plans for a Grand Darwin Day Celebration: 
Call For Articles:

http://mukto-mona.com/wordpress/?p=68

http://mukto-mona.com/banga_blog/?p=585

****************************************************

VISIT MUKTO-MONA WEB-SITE : http://www.mukto-mona.com/

****************************************************

"I disapprove of what you say, but I will defend to the death your right to say it".
               -Beatrice Hall [pseudonym: S.G. Tallentyre], 190





__,_._,___