Banner Advertiser

Saturday, April 25, 2015

[mukto-mona] জাপান ও রবীন্দ্রনাথ





জাপান ও রবীন্দ্রনাথ 
প্রবীর বিকাশ সরকার 
(সমাগত রবীন্দ্র জন্মবার্ষিকী স্মরণে) 
Probir Bikash Sarker's photo.

১৯২৯ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শেষবারের মতো জাপানে আসেন। এটা তাঁর পঞ্চম ভ্রমণ। আমন্ত্রিত হয়ে কানাডা থেকে আমেরিকায় যান বক্তৃতা দেবার জন্য। কিন্তু তাঁর পাসপোর্ট হারিয়ে ফেলেন সহযাত্রী ব্যক্তিগত সচিব অধ্যাপক অপূর্বকুমার চন্দ। যে কারণে তিনি আমেরিকায় প্রবেশ করতে পারেননি। অভিবাসন কর্মকর্তারা তাঁর সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে। অপমানিত হয়ে ব্যথাভারাক্রান্তমনে স্বদেশে ফেরার পথে জাপানে উঠে মানসিক ক্লান্তি ও বিষাদ দূর করবেন বলে স্থির করেন। জাহাজ থেকেই বার্তা পাঠান তাঁর ভক্ত ও দোভাষী মাদাম কোওরা তোমিকে। সে বার্তা গিয়ে পৌঁছায় জাপানে আশ্রিত মহাবিপ্লবী রাসবিহারী বসুর কানে। 

গুরুদেব আসবেন তাঁর থাকার জন্য উপযুক্ত একটি আবাস খোঁজার দায়িত্ব বর্তায় তাঁর ওপর। কবিগুরু তখন ৬৮ এবং অসুস্থ। তিনি বিশ্রাম নিতে এবং লেখালেখি করতে পারেন এমন একটি বাসস্থান কোথায় আছে খুঁজতে লাগলেন। 

খুঁজতে খুঁজতে তাঁর হঠাৎ মনে হলো কাগজ আমদানীকারক শিল্পপতি ও আধ্যাত্মিক গবেষক ড.ওওকুরা কুনিহিকোর নাম। গভীর জাতীয়তাবোধসম্পন্ন এশিয়াবাদী কুনিহিকো ছিলেন রাসবিহারীর ঘনিষ্ঠ বন্ধু। তিনিই প্রথম জাপানে আধুনিক আধ্যাত্মিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান 'ওওকুরা সেইশিন কেনকিউজো' (ওওকুরা স্পিরিচুয়াল রিসার্চ ইনস্টিটিউট) স্থাপন করে য়োকোহামা বন্দর নগরের ওওকুরায়ামা শহরে। তাঁর সঙ্গেই গুরুদেবের মিলমিশ হবে ভালো বলে রাসবিহারী মনে করলেন এবং বাস্তবে তাইই হয়েছিল। 

কালবিলম্ব না করে ওওকুরা কুনিহিকোর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে গুরুদেবের জাপান আগমনের সংবাদটি দিলেন এবং অনুরোধ জানালেন তাঁর বাসভবনে গুরুদেব কিছুদিন বিশ্রাম নিতে পারেন কিনা। 

কুনিহিকো প্রাচ্যের প্রথম নোবেল বিজয়ী কবি এবং ১৯১৩ সালে যখন নোবেল পদকে ভূষিত হন জাপানে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছিল। সমগ্র এশিয়া মহাদেশের প্রথম আধুনিক শিল্পোন্নত দেশের জাপানি বুদ্ধিজীবীমহল ধরে নিয়ে নিয়েছিলেন এই দেশেরই কেউ সাহিত্যে প্রথম নোবেল পুরস্কারটি পাবেন! সেইসময় ভারতীয় বাঙালি কবি ও সাহিত্যিক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাম জাপানে জানতেন মুষ্টিমেয় কিছু পণ্ডিত ও ধর্মীয় নেতা বা পুরোহিত। তাঁদের অন্যতম প্রধান ছিলেন শিল্পাচার্য ওকাকুরা (কাকুজোও) তেনশিন। যিনি ১৯০২ সালে বৃটিশ-ভারতের রাজধানী কলিকাতায় গিয়ে ঠাকুর পরিবারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হন স্বামী বিবেকানন্দের কল্যাণে। কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে গভীর বন্ধুত্বে বাঁধা পড়েন। সূচনা হয় জাপান-বাংলা শিক্ষা-সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক সম্পর্কের। যে ধারা আজও অব্যাহত। 

বিংশ শতাব্দীর প্রারম্ভে এই সম্পর্কের সূচনা হলেও জাপানে তা আদৌ প্রভাব ফেলতে পারেনি ১৯১৩ সালে রবীন্দ্রনাথের নোবেল না অর্জন পর্যন্ত। যখন গুরুদেব পুরস্কারটি পেলেন সেই সংবাদ দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ল জাপানের সর্বত্র। নড়েচড়ে উঠলেন জাপানের সর্বস্তরের প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। কে এই রবীন্দ্রনাথ টেগোর যে পরাধীন ভারত থেকে বিশ্বের শ্রেষ্ঠতম সম্মান অর্জন করতে সক্ষম হলেন! অতিদ্রুত জাপানে তাঁর ভক্তের সংখ্যা বাড়তে থাকলো। অনুবাদ হতে থাকলো তাঁর সদ্য নোবেলঅর্জিত 'গীতাঞ্জলি'সহ একাধিক গ্রন্থ ইংরেজি থেকে। নতুন ভক্তরা তাঁকে প্রাচ্যের ঋষিকবি, দার্শনিক, শিক্ষক, ধর্মীয় সংস্কারক ইত্যাদি দৃষ্টিতে দেখতে সচেষ্ট হলেন। অগণিত ভক্তরা কবিকে জাপানে দেখতে চায়, শুনতে চায়, জানতে চায় প্রত্যক্ষভাবে। কিন্তু কে তাঁকে আমন্ত্রণ জানাবে? ওদিকে বন্ধু ওকাকুরার সঙ্গে সাক্ষাতের পর থেকেই রবীন্দ্রনাথ জাপান নামক প্রাচ্যের রহস্যময় দেশটি কেমন তা স্বচক্ষে দেখার, জানার জন্য উদগ্রীব হয়ে উঠছিলেন। কিন্তু মোক্ষম সুযো্গ আসছে না। অথচ ওকাকুরার বদলৌতে জাপানি সংস্কৃতি প্রবেশ করতে শুরু করেছে শান্তিনিকেতনে। জুদোও, ইকেবানা, চাদোও, চিত্রকলা, সঙ্গীত, বাগানচর্চা, কাঠের কারুকাজ ইত্যাদি যা বিশ্বে স্বতন্ত্রধারার জাপানি ঐতিহ্য। ততদিনে বন্ধু ওকাকুরাও বেঁচে নেই। ১৯১২ সালে শেষবারের মতো কলকাতায় ওকাকুরার সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের সাক্ষাৎ হয়েছিল মনে হয়। হয়ে থাকলে এই শেষদেখা। আত্মীয়া কবি প্রিয়বম্বদা বন্দ্যোপাধ্যায় সদ্য পরিচিত জাপানি অতিথি ওকাকুরার সম্মানার্থে একটি চা-সমাবেশের আয়োজন করেছিলেন নিজভবনে সেখানে ওকাকুরার সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের সাক্ষাৎ হয়েছিল কিনা জানি না। 

সেযাক। ওকাকুরা রবীন্দ্রনাথের নোবেল অর্জনের মাত্র কয়েকদিন আগে স্বর্গবাসী হয়েছেন ১৯১৩ সালের ২রা সেপ্টেম্বর তারিখে। তিনি বেঁচে থাকলে কী যে আনন্দিত হতেন তা আজ কল্পনারও বাইরে! বেঁচে থাকলে তিনিও একদিন নোবেল অর্জন করতে পারতেন বলে আমার ধারণা তাঁর লিখিত বিখ্যাত গ্রন্থ 'দি বুক অফ টি'র জন্য। গ্রন্থটি গীতাঞ্জলিরই মতোই আধ্যাত্মিক সুরাশ্রিত অসাধারণ একটি দর্শন। অবশ্য না পাওয়ার শক্তিশালী পটভূমিও ছিল এই জগৎশ্রেষ্ঠ 'শ্বেতাঙ্গ-স্বীকৃতি'র ক্ষেত্রে। 

যাহোক, ওকাকুরা বেঁচে নেই, তাঁর পরিবর্তে জাপান সরকারকে একটা উদ্যোগ গ্রহণের জন্য নাড়া দিয়েছিল কেউ। ধারণা করা যায় 'এশিয়া ইজ ওয়ান' (এক এশিয়া) এই আপ্তবাক্য উচ্চারিত প্রাচ্যভাতৃত্ববাদের (প্যান এশিয়ানিজম=দাই আজিয়াশুগি) উদ্গাতা ওকাকুরা তেনশিনের ভাবশিষ্যদের কেউ হবেন, তিনি হতে পারেন আধুনিক জাপানের অন্যতম প্রধান কারিগর শিল্পপতি ভিসকাউন্ট শিবুসাওয়া এইইচি বা রবীন্দ্রনাথের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ওকাকুরার ছাত্র প্রভাবশালী চিত্রশিল্পী য়োকোয়ামা তাইকান যিনি নাড়াটি দিয়েছিলেন। তাতে কাজ হয়েছিল। সরকার প্রতিনিধি পাঠিয়েছিলেন কলকাতায় বলে কোনো কোনো সূত্র থেকে জানা যায়। কারণ আয়োজন করলেও রবীন্দ্রনাথ জাপানে আসতে পারবেন কিনা এই নিয়ে সন্দেহ ছিল। সন্দেহ এই কারণে যে, প্রচণ্ড জাতীয়তাবাদী, এশিয়াবাদী ওকাকুরা প্রথম কলকাতায় ঠাকুর পরিবারের সদস্য তথা রবীন্সুদ্রেরনাথের ভ্রাতুষ্পুত্র সুরেন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাসভবনে প্রায় দশ মাস আতিথ্য গ্রহণকালে (১৯০২) এক সংবর্ধনা সভায় সরাসরি সুরেন্দ্রনাথকে প্রশ্ন করেছিলেন ভারতের স্বাধীনতার বিষয়ে কী ভাবছেন বলে এবং গুপ্ত বিপ্লবী অনুশীলন সমিতি গঠনে প্রভাব বিস্তার করেছিলেন অর্থাৎ ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামের অগ্নিতে ঘি বর্ষণ করেছিলেন। সেই আগুন বাংলা থেকে সুদূর জাপানেও পরবর্তীকালে সম্প্রসারিত হয়েছিল ১৯১৫ সালে পলাতক বিপ্লবী রাসবিহারী বসুর 'পি এন ঠাকুর (প্রিয়নাথ ঠাকুর)' নামে রবীন্দ্রনাথের আত্মীয় পরিচয়ে জাপান-প্রবাসী হওয়ার মধ্য দিয়ে। তাঁর কঠোর পরিশ্রম ও লাগাতার প্রচেষ্টা ছাড়া ভারতের স্বাধীনতা ১৯৪৭ সালে আদৌ মিলত বলে আমার মনে হয় না। 

বলা বাহুল্য যে, বাংলায় স্বাধীনতার অগ্নুৎপাত ঘটিয়েছিল ঠাকুর পরিবার। সুতরাং এই পরিবারের সঙ্গে ওকাকুরার সাক্ষাৎ, 'এশিয়ার জাগরণ' নামক গ্রন্থরচনা এবং উগ্রপন্থী অনুশীলন সমিতি গঠনের সঙ্গে জড়িত হওয়া ইত্যাদি তথ্যসমূহ ব্রিটিশরাজ ভালো করেই জানতো। তাছাড়া রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নিজেও জাতীয়তাবাদী এবং স্বাধীনতার জন্য সোচ্চার। দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসীসম বিপ্লবী রাসবিহারী ইতিমধ্যেই জাপানে আশ্রয় নিয়েছেন---আশ্রয় দিয়েছেন ওকাকুরার ভাবানুসারী একচ্ছত্র রাজনৈতিক আধিপত্যবাদী, প্যান-এশিয়ানিস্ট, প্রচণ্ড শক্তিশালী গুপ্ত সন্ত্রাসবাদী সংস্থা 'গেনয়োশা'র প্রতিষ্ঠাতা গুরু তোওয়ামা মিৎসুরু। যিনি ইতিমধ্যে চীনা জাতীয়তাবাদী নেতা ড.সান-ইয়াৎ সেনকে জাপানে রাজনৈতিক আশ্রয় দিয়েছেন জাপান সরকারের নিষেধাজ্ঞাকে তোয়াক্কা না করেই। সুতরাং রবীন্দ্রনাথ জাপানে গেলে পরে ওকাকুরার অসংখ্য ভাবানুসারীর সঙ্গে সহজেই যোগাযোগ হবে এবং ব্রিটিশের বিপক্ষে আন্দোলন, সংগ্রাম ও লড়াই ক্রমাগত শক্তিশালী হবে সেটা সহজেই অনুমেয়। জাপান উদীয়মান সাম্রাজ্যবাদী শ্বেতাঙ্গ শক্তি রাশিয়াকে যুদ্ধে (১৯০৪-৫) পরাস্ত করে ফেলেছে! এর আগে চীনকে পরাজিত করেছে। যদিওবা জাপান-ব্রিটিশ মৈত্রীচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে ১৯০২ সালে। কিন্তু জাপান সরকারকে চালায় মূলত ওকাকুরার ভাবশিষ্য প্যান-এশিয়ানিস্টরা যাঁরা চাইছে এশিয়া মহাদেশ থেকে দখলদার শ্বেতাঙ্গ শক্তিকে হটিয়ে দিতে। শ্বেতাঙ্গরা প্রাচ্যদর্শন, প্রাচ্য সংস্কৃতি ও প্রকৃতিকে ধ্বংস করে চলেছে সতের শতাব্দী থেকে। 

কাজেই রবীন্দ্রনাথকে জাপানে না আসার জন্য বাধা দিতে পারে ব্রিটিশ সরকার। এর আগে ১৯০৩ সালে ত্রিপুরার রাজপ্রাসাদে শৈল্পিক কাজ করার জন্য আমন্ত্রিত হয়ে গিয়েছিলেন ওকাকুরার দুই ঘনিষ্ঠ শিষ্য চিত্রশিল্পী য়োকোয়ামা তাইকান ও হিশিদা শুনসোও কিন্তু তাঁদেরকে কাজ করার সুযোগ দেয়নি ব্রিটিশ সরকার রবীন্দ্রনাথের চেষ্টা-তদ্বির সত্ত্বেও। সুতরাং রবীন্দ্রনাথকে আমন্ত্রণের প্রস্তাব রবীন্দ্রনাথ গ্রহণ করলেও ব্রিটিশরাজ তাঁকে ছাড়পত্র দেবে কিনা সন্দেহ ছিল। বস্তুত, গোপনে দেনদরবার করেই রবীন্দ্রনাথের জাপানভ্রমণের অনুমোদন মিলেছিল বলে আমার ধারণা যদিওবা রবীন্দ্রনাথ জাপানভ্রমণের ক্ষেত্রে ব্যস্ততার অজুহাত দেখিয়েছেন। ১৯১৫ সালেই তিনি জাপানে আসতে চেয়েছিলেন বলে জানা যায় কিন্তু সেই বছর বিপ্লবী রাসবিহারী বসু ও বিপ্লবী হেরম্বলাল গুপ্ত জাপানে প্রবেশ করেন গোপনে ভারত ত্যাগ করেন তখন তাঁদের মাথার ওপর ঝুলছে ধরিয়ে দেয়ার বিপুল টাকার পুরস্কার! কাজেই ওই বছর জাপানে এলে পরিস্থিতি সুখকর হতো না কারণ জাপান সরকার বিপ্লবী দুজনকে জাপান ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছিল ব্রিটিশ সরকারের আবেদনে সাড়া দিয়ে। কিন্তু রক্ষা করেছিলেন গুরু তোওয়ামা মিৎসুরু। 

যাহোক, পরের বছর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জাপানে এলেন, তাঁকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন ইন্ডিয়া-জাপান অ্যাসোসিয়েশন যা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৯০৩ সালে, এর তৃতীয় প্রেসিডেন্ট ভিসকাউন্ট শিবুসাওয়াই আমন্ত্রণ পাঠান। রবীন্দ্রনাথ এসে রীতিমতো বিপ্লব ঘটালেন গণমাধ্যমে, একাধিক সভা ও সংবর্ধনায় জাপান সরকারের বিপক্ষে, উগ্র জাতীয়তাবাদ এবং আগ্রাসী সমরতন্ত্রের বিরুদ্ধে। টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রদত্ত বক্তৃতায় তিনি জাপানিদের জাতীয়তাবাদী চেতনায় আঘাত করেন এবং বুদ্ধিজীবী মহলে সমালোচিত ও শীতল মনোভাবের কারণ হন। অবশ্য পরবর্তী বক্তৃতা দেন প্রসিদ্ধ কেইওগিজুকু বিশ্ববিদ্যালয়ে জাপানি আধ্যাত্ম্য, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও সৌন্দর্যচিন্তার ওপর তাতে করে কিছুটা শীতলতা কেটে গেলেও এক শ্রেণীর কট্টোর জাতীয়তাবাদীর কাছে তিনি অপছন্দনীই থেকে যান। 

প্রকৃতপক্ষে রবীন্দ্রনাথ একটা ডিপ্লম্যাসি খেলেছিলেন এখানে জাপানিদের সুহৃদও ছিলেন আবার কঠোর সমালোচকও ছিলেন ব্রিটিশরা যা বোঝার বুঝে নিয়েছিল। নদীর জল যেভাবে প্রবাহিত হওয়ার কথা ছিল হয়েছে। জাপানে যতবার রবীন্দ্রনাথ এসেছিলেন ততবার তাঁর অগণিত ভক্তরা তাঁকে প্রাণঢালা অভ্যর্থনা জানিয়েছেন, অভিমানীরা অভিমান করেই থেকেছেন, রাসবিহারী বসুরাও তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন, শান্তিনিকেতনের জন্য চাঁদা তুলে দিয়েছেন। স্বাধীনতা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার জন্য প্রবাসী বিপ্লবীদেরকে উৎসাহিত করেছেন। রাসবিহারীর মাধ্যমে উগ্র জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব গুরু তোওয়ামা মিৎসুরুর সঙ্গেও ঘনিষ্ঠ হয়েছেন, ধস্যবাদ জ্ঞাপন করেছেন গুরু তোওয়ামাকে ভারতীয় স্বাধীনতার জন্য লড়াইয়ে সহযোগী হওয়ার জন্য, গুরু তোওয়ামা গেনয়োশা'র পক্ষ থেকে তাঁকে জমকালো সংবর্ধনাও প্রদান করেছেন.........বিস্তর নানা ঘটনা রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে যা একটি মাঝারি মহাভারত! 

১৯১৬ সালে প্রথম এসে প্রায় তিন মাস ছিলেন য়োকোহামার বিখ্যাত সিল্ক বণিক ও শিল্পকলার পৃষ্ঠপোষক হারা তোমিতারোও এর সানকেইএন বাগানবাড়িতে। তোমিতারোও এর সঙ্গে গভীর বন্ধুত্বে আবদ্ধ হয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। বন্ধুকে ভুলে যাননি শেষবার ১৯২৯ সালে যখন নতুন শুভাকাঙ্ক্ষী ড.ওওকুরা কুনিহিকোর প্রাসাদোপম বাসভবনে অতিথি ছিলেন একবার সানকেইএন বাগানবাড়িটি পরিদর্শনে যান----নয়নাভিরাম এই সবুজ বাগানবাড়িটি তাঁকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিল যেমনটি করেছিল প্রথম ভ্রমণেই কারুইজাওয়ার প্রাকৃতিক শোভা। শান্তিনিকেতনকে সানকেইএন এর মতোই সাজাতে চেয়েছিলেন কবিগুরু যা হয়নি জীবদ্দশাতেই। 

১৩ বছর পর বন্ধু রবীন্দ্রনাথকে পেয়ে আনন্দ-আবেগে আপ্লুত হয়েছিলেন হারা তোমিতারোও এই ছবিটিই তার উজ্জ্বল প্রমাণ। বাঁ দিক থেকে বিশিষ্ট ব্যবসায়ী, হোটেল নিউ ইংল্যান্ডের কর্ণধার এবং য়োকোহামা বণিক সমিতির প্রধান নোমুরা য়োওজোও, হারা তোমিতারোও, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, রবীন্দ্রসুহৃদ বিখ্যাত চিত্রশিল্পী আরাই কানপো এবং অধ্যাপক অপূর্বকুমার চন্দ। ছবিটি আমার বান্ধবী রবীন্দ্রভক্ত য়োকোহামাবাসী ওওবা তামিকোর সৌজন্যে প্রাপ্ত। 

[এই লেখাটি যে কেউ তার পত্রিকা, সংকলন ও সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ করতে পারেন তবে লিঙ্ক পাঠালে কৃতজ্ঞ থাকবো।]
 


__._,_.___

Posted by: Farida Majid <farida_majid@hotmail.com>


****************************************************
Mukto Mona plans for a Grand Darwin Day Celebration: 
Call For Articles:

http://mukto-mona.com/wordpress/?p=68

http://mukto-mona.com/banga_blog/?p=585

****************************************************

VISIT MUKTO-MONA WEB-SITE : http://www.mukto-mona.com/

****************************************************

"I disapprove of what you say, but I will defend to the death your right to say it".
               -Beatrice Hall [pseudonym: S.G. Tallentyre], 190





__,_._,___