From: সাইমুন চৌধুরী <ullashchowdhury@gmail.com>
Date: 2015-05-14 23:23 GMT+06:00
Subject: ব্লগারটাই কি আসল পরিচয়?
To: news@sahos24.com
রাজীব হায়দার, অভিজিৎদা, ওয়াশিকুর বাবু, অনন্ত বিজয় দাশ। এদের মারা হল। মিডিয়ায় এদের "ব্লগার" বলে আখ্যায়িত করছে। তারা কি সত্যিই ব্লগার? ব্লগারই কি তাদের আসল পরিচয়?
প্রথমত,
ব্লগিং কোনো পেশা নয়। ব্লগার কোনো পরিচয় নয়। ব্লগিং করে কেউ টাকা পায় না। ব্লগ লিখে আয়-রোজগার হয় না। নানান পেশার মানুষ কাজের ফাঁকে অবসরে ব্লগিং করেন। যে কারণে শিক্ষক-চিকিৎসক-কবি-আমলা-আর্মি-পুলিশ অনেকেই নিয়মিত অনিয়মিত ব্লগিং করলেও তাঁদের 'ব্লগার' পরিচয়টিকে আমরা প্রধান হিসেবে দেখি না। কবি নির্মলেন্দু গুণ ফেসবুকে প্রায় নিয়মিত তাঁর মতামত পোস্ট করেন। নির্মলেন্দু গুণকে আপনি ব্লগার বলবেন?
দ্বিতীয়ত,
নিহত রাজিব হায়দার প্রকৌশলী ছিলেন। কিন্তু ঘাতকদের হাতে খুন হবার পর মিডিয়ায় তাঁর পরিচিতিতে তাঁকে বলা হলো 'ব্লগার'। খুন হবার পর লেখক এবং প্রকৌশলী অভিজিৎ রায়কেও মিডিয়াতে 'ব্লগার'ই বলা হলো। ধর্মান্ধদের আরও এক শিকার ওয়াশিকুর বাবু একটি ট্রাভেল এজেন্সিতে কাজ করতেন। মিডিয়ায় বাবুকেও বলা হচ্ছে 'ব্লগার'। সর্বশেষ তাদের শিকার অনন্ত বিজয় দাশ পূবালী ব্যাংকে চাকরী করতেন। একজন ব্যাঙকার। ধর্মান্ধরা একজন 'ব্লগার'কে নৃশংসভাবে প্রকাশ্যে খুন করলে আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্র চুপ করে থাকে। ব্লগার খুন হওয়াটা যেনো বা খুব স্বাভাবিক একটা ঘটনা। কারণ? কারণ ব্লগাররা নাস্তিক। একজন নাস্তিকের মৃত্যু তা যতো নৃশংস উপায়েই হোক না কেনো, প্রতিবাদ বা প্রতিরোধযোগ্য নয়। কেউ নাস্তিক হলেই খুন হওয়াটা তার জন্যে যথার্থ একটি বিধান।
তৃতীয়ত,
ব্লগারদের ললাটে এই নাস্তিক ট্যাগটা লাগিয়ে দিয়েছিলো মিডিয়া। একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে ২০১৩ সালে কয়েকজন ব্লগারের উদ্যোগে শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চ তৈরি হলে এই মঞ্চের তরুণ ব্লগারদের 'নাস্তিক' আখ্যা দিতে তৎপর হয়েছিলো দৈনিক 'আমার দেশ' নামের পত্রিকাটি। খুন হওয়া রাজিব হায়দারকে নাস্তিক প্রমাণ করতে হেন কাজ নেই যা করেনি 'আমার দেশ'। পরবর্তীতে আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার করা হলে আমাদের সব কয়টা প্রগতিশীল পত্রিকার সব কয়টা প্রগতিশীল সম্পাদক তাঁর মুক্তির দাবিতে বিবৃতি দিয়েছিলেন! ১৬ সম্পাদকের বিবৃতির কথা কি মনে আছে আপনাদের? সেই ১৬ সম্পাদকের পত্রিকাসমূহও নিহত লেখক কিংবা প্রকৌশলীকে অতঃপর 'ব্লগার' বলতেই স্বাচ্ছন্দবোধ করে আসছে।
চতুর্থ,
ব্লগার খুন হলে আমাদের কারো কিছুই আসে যায় না। কয়েকদিনের মধ্যেই সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে আসে। ফেসবুকে খানিকটা ঝড় বয়ে যায়। ভার্চুয়াল বিপ্লবীরা কিছুদিন হইচই করে। পত্রিকার ফার্স্ট লিড থেকে খুনের ঘটনাটা ভেতরের পাতায় ঠাঁই নেয়। টেলিভিশনগুলো কোনো আপডেট প্রচার করে না। টকশোজীবীরা নতুন টপিক নিয়ে রগড়ে মশগুল হয়। দেশ এগিয়ে চলে। কিন্তু হুমায়ূন আজাদের হত্যাকাণ্ডের তদন্ত ও বিচার সমাপ্ত হয়না। রাজিব হায়দার হত্যার তদন্ত ও বিচার সমাপ্ত হয়না। অভিজিৎ হত্যার তদন্ত ও বিচার সমাপ্ত হবার সম্ভাবনার আগেই খুন হয়ে যায় আরো একজন।
পঞ্চমত,
আমাদের প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া খুন হয়ে যাওয়া একজন ভিক্টিমকে 'ব্লগার' তকমা দিয়ে নতুন আরেকটি খুনের কাহিনি সম্প্রচার করে আর সাধারণ মানুষ আরেকজন নাস্তিকের করুণ পরিণতি অবলোকন করে সুখে নিদ্রা যায়। পুলিশ ঘটনার তদন্ত করে। কিন্তু তদন্ত আর শেষ হয় না। সাসপেক্ট জামিন পায়। ঘাতককে খুঁজে পাওয়া যায় না। ঘাতকের শাস্তি হয় না। আরেকজন 'ব্লগার' খুন না হওয়া পর্যন্ত আগের খুনটিকে কারো মনেই থাকে না। ব্লগার খুন হলে আমাদের কী বা আসে যায়!
__._,_.___