বর্ষবরণে যৌন হয়রানি
তিন পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ
নুরুজ্জামান লাবু | ১৫ মে ২০১৫, শুক্রবারকমিটির সদস্য ডিবির উপ-কমিশনার জাহাঙ্গীর হোসেন মাতুব্বর বলেন, আমরা তিন পুলিশ কর্মকর্তার দায়িত্বে অবহেলার প্রমাণ পেয়েছি। তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। এ ছাড়া বর্ষবরণে এমন কোন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা যাতে না ঘটে তার জন্য কিছু সুপারিশও করা হয়েছে।
পুলিশ সূত্র জানায়, বর্ষবরণের দিন যৌন নিপীড়নের ঘটনার সময় টিএসসি এলাকায় দায়িত্ব পালন করছিলেন এই তিন পুলিশ কর্মকর্তা। এদের মধ্যে শাহবাগ থানার এসআই আশরাফুল আলমের হাতে কয়েকজন বখাটেকে ধরে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনি তাদের ছেড়ে দিয়েছিলেন। কমিটি মনে করছে, এটি চূড়ান্তভাবে একটি অপেশাদার কাজ হয়েছে। যাচাই-বাছাইয়ের আগেই সন্দেহভাজন কাউকে ছেড়ে দেয়াটা উচিত হয়নি। এ ছাড়া পাশেই দায়িত্ব পালনকারী শাহবাগ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সাইদুল ইসলামও এ ঘটনায় সঠিকভাবে দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছেন। এ কারণে এই দুজনের বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলার কথা প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে কমিটি। এ ছাড়া পুরো টিএসসি এলাকার দায়িত্বে ছিলেন পুলিশের সহকারী কমিশনার সাবেরুল ইসলাম। তিনি যৌন হয়রানির ঘটনাটির ভয়াবহতা অনুধাবন করতে পারেননি বলে তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে।
কমিটি সূত্র জানায়, পুলিশের গঠিত তদন্ত কমিটি যৌন হয়রানির ঘটনার সত্যানুসত্য অনুসন্ধান করে ঘটনার কিছু প্রমাণ পেয়েছে। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সম্পাদক লিটন নন্দীসহ কয়েকজনের বক্তব্য রেকর্ড করেছে। এ ছাড়া অনেকেই ফোনে কমিটির সদস্যদের কাছে ঘটনার বিবরণ দিয়েছেন। তবে কমিটির কাছে যৌন হয়রানির শিকার কোন নারী অভিযোগ করেনি বা এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। কমিটি নির্বিঘ্নে বর্ষবরণ পালনের জন্য কিছু সুপারিশ করেছেন। এসবের মধ্যে বিকাল ৩টার মধ্যে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, টিএসসি এলাকা ও রমনা পার্ক খালি করে দেয়া। উদ্যানের আরও বেশি প্রশস্ত গেট তৈরি করা, যাতে উদ্যানে ঢুকতে ও বেরোতে জটের সৃষ্টি না হয়। একই সঙ্গে পুরো এলাকা সিসিটিভি ক্যামেরার নিয়ন্ত্রণে আনার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
এদিকে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন দাখিলের এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও দায়িত্বে অবহেলায় অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থ্যা নেয়া হয়নি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শাহবাগ থানার এসআই আশরাফুল আলম এখনো শাহবাগ থানাতেই দায়িত্ব পালন করছেন। তবে সপ্তাহ খানেক আগে থানার পরিদর্শক তদন্ত সাইদুল ইসলাম ভুঁইয়াকে উত্তরা জোনের তুরাগ থানায় বদলি করা হয়েছে। পুলিশ সূত্র জানায়, নিয়মিত বদলির অংশ হিসেবেই সাইদুল ইসলামকে তুরাগে বদলি করা হয়েছে। এ ছাড়া সহকারী পুলিশ কমিশনার সাবেরুল ইসলামও তার আগের কর্মস্থলেই দায়িত্ব পালন করছেন। ডিএমপির একটি সূত্র জানায়, কমিশনার প্রতিবেদনটি পর্যালোচনা করছেন। পর্যালোচনা শেষে তিনি অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিবেন।
উল্লেখ্য, পহেলা বৈশাখের সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি সংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গেটে সংঘবদ্ধ একদল বখাটে পরিকল্পিতভাবে নারীদের যৌন হয়রানি করে। এ সময় লিটন নন্দীসহ কয়েকজন এর প্রতিবাদ করে নারীদের উদ্ধার করেন। এতে বখাটেদের হামলায় লিটন নন্দীর হাত ভেঙ্গে যায়। বিষয়টি নিয়ে সারা দেশে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। অভিযোগ ওঠে পুলিশের নাকের ডগায় এমন ঘটনা ঘটলেও তারা চুপ করে দাঁড়িয়ে ছিল। এমনকি কয়েক বখাটেকে ধরে দেয়ার পরও পুলিশ তাদের ছেড়ে দেয়। এই ঘটনার প্রতিবাদে ডিএমপি কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচিতেও পুলিশ মারমুখি আচরণ করে। এমনকি প্রতিবাদকারী এক নারীকে চুলের মুঠি ধরে নিয়ে যেতেও দেখা যায় এক পুলিশ সদস্যকে। পরে অবশ্য ওই পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
__._,_.___