Banner Advertiser

Thursday, May 14, 2015

[mukto-mona] ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা এবং রবীন্দ্রনাথ ও অন্যান্য মিথ্যা মিথ - ৩




ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা এবং রবীন্দ্রনাথ ও অন্যান্য মিথ্যা মিথ
কুলদা রায় ও এমএমআর জালাল
(পূর্ব প্রকাশের পর) 
প্রশানত্মকুমার পাল রবিজীবনী গ্রন্থের ষষ্ঠ খণ্ডে জানাচ্ছেন, এ দিনই তিনি একটি কবিতা লেখেন। কবিতার নাম 'স্থির নয়নে তাকিয়ে আছি'। স্থির নয়নে তাকিয়ে আছি/মনের মধ্যে অনেক দূরে।/ ঘোরাফেরা যায় যে ঘুরে। গভীরধারা জলের ধারে,/আঁধার-করা বনের পারে,/সন্ধ্যামেঘে সোনার চূড়া/উঠেছে ওই বিজন পুরে/মনের মাঝে অনেক দূরে। 
দিনের শেষে মলিন আলোয়/কোন্ নীড়ের টানে/বিদেশবাসী হাঁসের সারি/উড়ছে সেই পারের পানে।/ঘাটের পাশে ধীর বাতাসে/উদাস ধ্বনি উধাও আসে,/বনের ঘাসে ঘুম-পাড়ানে/তান তুলেছে কোন্পুরে/মনের মাঝে অনেক দূরে। 
নিচল জলে নীল নিকষে/সন্ধ্যাতারার পড়ল রেখা,//পারাপারের সময় গেলখেয়াতরীর নাইকো দেখা।/পশ্চিমের ওই সৌধছাদে/স্বপ্ন লাগে ভগ্ন চাঁদে,/একলা কে যে বাজায় বাঁশি /বেদনভরা বেহাগ সুরে/মনের মাঝে অনেক দূরে।/সারাটি দিন কাজে/হয় নি কিছুই দেখাশুনা,/ কেবল মাথার বোঝা ব'হে/হাটের মাঝে আনাগোনা।/এখন আমায় কে দেয় আনি/কাজ-ছাড়ানো পত্রখানি;/সন্ধ্যাদীপের আলোয় ব'সে/ওগো আমার নয়ন ঝুরে/মনের মাঝে অনেক দূরে। 
এই কবিতাটি গীতিমাল্য কাব্যগ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত ৪ সংখ্যক কবিতা। এর পর বাকি ১৫ দিনে শিলাইদহে থেকে রবীন্দ্রনাথ আরও ১৭টি কবিতা বা গান লেখেন। এর মধ্যে একটি গান 'আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ। '১৪ চৈত্র, ১৩১৮ বঙ্গাব্দ। রচনার স্থান শিলাইদহ। ২৬ চৈত্র ১৩১৮ (এপ্রিল ৮, ১৯১২) বঙ্গাব্দেও তিনি শিলাইদহে। সেখান থেকে লিখেছেন_ 'এবার আমায় ভাসিয়ে দিতে হবে আমার। এপ্রিল ১২, ১৯১২ তারিখে লিখছেন_'এবার তোরা আমার যাবার বেলাতে।' শিলাইদহে রচিত। তথ্য বলছে_সে সময়ে রবীন্দ্রনাথ কলকাতায় নয়, শিলাইদহে ছিলেন। 
তাহলে রবীন্দ্রনাথ শিলাইদহে কেন গেলেন? কখন গেলেন? তার একটু হদিস নেয়া যেতে পারে। 
১৯ মার্চ ১৯১২ (৬ চৈত্র, ১৩১৮ বঙ্গাব্দ) ভোরে কলকাতা থেকে সিটি অব প্যারিস জাহাজে রবীন্দ্রনাথের ইংল্যান্ড যাত্রার জন্য কেবিন ভাড়া করা হয়েছিল। সঙ্গী মেয়ে হাসপাতালের ডা. দ্বিজেন্দ্রনাথ মৈত্র। কবিকে বিদায় জানানোর জন্য বহু ব্যক্তি সেদিন জাহাজঘাটায় উপস্থিত। কবির জিনিসপত্রও জাহাজে উঠে গেছে আগের দিন। কিন্তু 'খবর এলো যে, কবি অসুস্থ; আসতে পারবেন না। ঐ গরমে উপর্যুপরি নিমন্ত্রণ-অভ্যর্থনাদির আদর-অত্যাচারে রওনা হ'বার দিন ভোরে প্রস্তুত হতে গিয়ে, মাথা ঘুরে পড়ে যান। ডাক্তাররা বললেন, তাঁর এ-যাত্রা কোনোমতেই সমীচীন হতে পারে না। রইলেন তিনি; আর ক্যাবিনে একা রাজত্ব করে, তাঁর বাঙ্পেটরা নিয়ে চলস্নুম আমি একলা।' এটা লিখেছেন ডা. মিত্র। 
রবিপুত্র রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর পিতৃস্মৃতি গ্রন্থে লিখছেন_ "জাহাজ ছাড়বার আগের দিন রাত্রে স্যার আশুতোষ চৌধুরীর বাড়িতে বাবার নিমন্ত্রণ। কেবল খাওয়া-দাওয়া নয়, সেই সঙ্গে 'বাল্মিকীপ্রতিভা' অভিনয়ের ব্যবস্থা হয়েছিল। দিনেন্দ্রনাথ বাল্মীকির ভূমিকায় অভিনয় করেন। অসুস্থ শরীরে বাবাকে অনেক রাত অবধি জাগতে হলো। আমরা ঘরে ফিরলাম রাত করে। বাকি রাতটুকু বাবা না ঘুমিয়ে চিঠির পর চিঠি লিখে কাটিয়ে দিলেন। ভোরবেলা উঠে বাবার শরীরের অবস্থা দেখে আমরা ভয় পেয়ে গেলাম, ক্লান্তিতে অবসাদে যেন ধুঁকছেন। তাড়াতাড়ি ডাক্তার ডাকতে হলো। জাহাজ আমাদের জিনিসপত্র সমেত যথাসময়ে পাড়ি দিল, কিন্তু আমাদের সে যাত্রা আর যাওয়া হলো না।" 
আকস্মিকভাবে যাত্রা প- হয়ে যাওয়ায় খুব বেদনা পেয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। তিনি ২১ মার্চ ১৯১২ (৮ চৈত্র ১৩১৮ বঙ্গাব্দ) তারিখে ডা. দ্বিজেন্দ্রনাথ মৈত্রকে লেখেন_ 'আমার কপাল মন্দ, কপালের ভেতরে যে পদার্থ আছে, তারও গলদ আছে, নইলে ঠিক জাহাজে ওঠবার মুহূর্তেই মাথা ঘুরে পড়লুম কেন? অনেক দিনের সঞ্চিত পাপের দণ্ড সেইদিনই প্রতু্যষে আমার একেবারে মাথার ওপরে এসে পড়ল। রোগের প্রথম ধাক্কাটা তো এক রকম কেটে গেছে। এখন ডাক্তারের উৎপাতে প্রাণ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। লেখাপড়া নড়াচড়া প্রভৃতি সজীব প্রাণী মাত্রেরই অধিকার আছে, আমার পক্ষে তা একেবারে নিষিদ্ধ।' 
২৪ মার্চ ১৯১২ (১১ চৈত্র ১৩১৮ বঙ্গাব্দ) বিশ্রামের উদ্দশ্যে রবীন্দ্রনাথ শিলাইদহে রওনা হন। ঠাকুরবাড়ির ক্যাশবহিতে লেখা আছে, শ্রীযুক্ত রবীন্দ্র বাবু মহাশয় ও শ্রীযুক্ত রথীন্দ্র বাবু মহাশয় ও শ্রীমতি বধূমাতাঠাকুরাণী শিলাইদহ গমনের ব্যয় ৩৭৯ নং ভাউচার ১১ চৈত্র ১৫।।৩।. পরদিন সোমবার ১২ চৈত্র ২৫ মার্চ ১৯১২ খ্রিস্টাব্দে রবীন্দ্রনাথ মৌচাক পত্রিকার সম্পাদক সুধীরচন্দ্র সরকারের ভগ্নী কাদম্বিনী দত্তকে (১২৮৫, ১৩৫০ বঙ্গাব্দ) এক চিঠিতে লেখেন_এখনো মাথার পরিশ্রম নিষেধ। শিলাইদহে নির্জ্জনে পালাইয়া আসিয়াছি। 
কোথায় কলকাতার গড়ের মাঠ? আর কোথায় শিলাইদহ!! তাহলে ২৮ মার্চ ১৯১২ খ্রীস্টাব্দ তারিখে রবীন্দ্রনাথ কি করে শিলাইদহ থেকে অসুস্থ শরীরে কলকাতার গড়ের মাঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সভায় উপস্থিত ছিলেন? 
ঢাকা বিশ্বিদ্যালয়ের অধ্যাপক গীতিআরা নাসরীন জানাচ্ছেন_ রবীন্দ্রনাথের বিরম্নদ্ধে এই অপপ্রচারের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় সিনেট বার্ষিক অধিবেশনের (২৮-২৯ জুন, ২০১১) আলোচনায় আসে। অধ্যাপক ফকরম্নল আলমের কথার অংশ থেকে লিখছি_ "রবীন্দ্রনাথ এক সময় বঙ্গভঙ্গের বিরম্নদ্ধে বিরোধী ছিলেন কিন্তু চার পাঁচ বছর পর তার পুরনো পজিশন পরিবর্তন করে ফেলেছিলেন। অবশ্যই তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে গ্রহণ করেছেন বলে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মাননায় এসেছিলেন। যারা ইতিহাসকে এক জায়গায় রেখে দেয় তারা ইতিহাসকে বিকৃত করে, তারা সত্যকে বিকৃত করে।" (কার্যবিবরণী, পৃ:১৭৮)। 
এই ইতিহাসবিকৃতি বাংলাদেশে একটি গোষ্ঠীকর্তৃক রবীন্দ্রবিরোধিতারই একটি নমুনা। নিছক অসত্য তথ্য। গোয়েবলসের সূত্রে তথ্যটি তৈরি হয়েছিল গোপনে, করেছিলেন একজন অজানা লেখক। প্রকাশক ইসলামী ফাউন্ডেশন। আর তা বইতে লিখেছেন মেজর জেনারেল (অবঃ) আব্দুল মতিন। এবং এ বছর রবীন্দ্রনাথের সার্ধশত জন্মবার্ষিকীর লগ্নে টেলিভিশনের পর্দায় জনগণের উদ্দেশ্য প্রকাশ করছেন_দি নিউ এজ পত্রিকার স্বনামধন্য সম্পাদক নূরুল কবীর। বলছেন_ আলী নিয়ামত নামে একজন কলাম লেখক। তথ্য পেলেই তো হবে না। তা যাচাই-বাছাই করার দরকার রয়েছে। 
এই ভূখ-ে রবীন্দ্রবিরোধিতা নতুন নয়। পাকিস্তান আমলে শুরু। এখন আবারও পাকিস্তানী কায়দার সেরকম বিরোধিতা চলছে। যাঁরা করছেন_তাঁদের ভাবনার সঙ্গে পাকিস্তানপন্থার একটি সংযোগ আছে। কিন্তু একটি প্রশ্ন মাথায় ঘুরে-ফিরে আসছে, রবীন্দ্রনাথ যদি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠারই বিরোধিতা করেই থাকেন, তাহলে সেই বিরোধিতাকারী রবীন্দ্রনাথ এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মাত্র পাঁচ বছর পরে সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাঙ্গনেই বিপুলভাবে সংবর্ধিত হন কিভাবে? তখন তো পাকিস্তান জামানা নয়। বাংলাদেশও নয়। ব্রিটিশ রাজত্ব চলছে। বঙ্গবিভাগ থেমে গেছে। পূর্ব বাংলার মুসলমান নেতৃবৃন্দ ক্ষুব্ধ এই বঙ্গভঙ্গ বাতিল করার জন্য। আবার রবীন্দ্রনাথ বঙ্গভঙ্গের বিরোধিতা করেছিলেন। সুতরাং পূর্ব বাংলার গ্রামে-গঞ্জে এবং খোদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রবীন্দ্রনাথকে সংবর্ধনা প্রদানের কোন কারণ থাকার কথা নয়। কিন্তু বাস্তবে তো রবীন্দ্রনাথকে হিন্দু- মুসলমান, ধনী নির্ধনী, জমিদার-প্রজা মিলে বিপুল আড়ম্বরে সংবর্ধনা দিচ্ছেন। সেখানে তো এই অভিযোগটি কেউ তুলছেন না। কোন সাম্প্রদায়িক ভেদরেখা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। তাহলে? 
তিন. 
১৯২৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রবীন্দ্রনাথকে আমন্ত্রণ জানায় বক্তৃতাদি প্রদানের জন্য। সফরসঙ্গী হয়েছিলেন পুত্র রথীন্দ্রনাথ, পুত্রবধূ প্রতীমা দেবী, তাঁদের পালিতা কন্যা নন্দিনী, ভ্রাতষ্পুত্র দিনেন্দ্রনাথ, হিরজিভাই, মরিস, চিনা অধ্যাপক লিম নো ছিয়াঙ এবং ইতালিয়ান অধ্যাপক ফার্মিসি ও তুচ্চি। 
৯ ফেব্রুয়ারি ১৯২৬ তারিখে আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় ঢাকায় রবীন্দ্রনাথ নারায়ণগঞ্জে বিপুল অভ্যর্থনা গতকল্য রবীন্দ্রনাথ ঢাকায় পৌঁছিয়াছেন, ঢাকায় অধিবাসীবৃন্দ তাঁহাকে বিপুল অভ্যর্থনা করিয়াছেন। প্রকৃতপক্ষে বলিতে গেলে এইবারই রবীন্দ্রনাথ সর্বপ্রথম ঢাকায় আসিয়াছেন। ইতিপূর্বে তিনি ভাল করিয়া ঢাকা পরিদর্শন করেন নাই। স্থানীয় অভ্যর্থনা-সমিতি নারায়ণগঞ্জে বহুসংখ্যক স্বেচ্ছাসেবক প্রেরণ করিয়াছিলেন। নারায়ণগঞ্জ স্টীমার স্টেশন সেদিন জনসমুদ্রে পরিণত হইয়াছিল। স্টীমার ঘাটে আসিবার বহু পূর্ব হইতেই তথায় জনসমাগম হইতে আরম্ভ হয়। দেখিতে দেখিতে এত লোক জড় হয় যে, কি ঘাটে, কি জেটিতে একটুকুও স্থান ছিল না। রবীন্দ্রনাথের স্টীমার ঘাটে পৌঁছিলে চতুর্দিক হইতে ঘন ঘন আনন্দধ্বনি উত্থিত হয়। কয়েকজন বিশিষ্টনেতা অগ্রসর হইয়া তাঁহাকে পুষ্পমাল্যে বিভূষিত করেন এবং স্টীমার হইতে নামাইয়া আনেন। মোটরে চড়িয়া ঢাকা অভিমুখে যাত্রা করেন। (চলবে)
 
jalalabir@gmail.com
বৃহস্পতিবার, ১৩ অক্টোবর ২০১১, ২৮ আশ্বিন ১৪১৮

আরও পড়ুন:

রবীন্দ্রনাথ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করেন নাই



মঙ্গলবার, ১১ অক্টোবর ২০১১, ২৬ আশ্বিন ১৪১৮
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা এবং রবীন্দ্রনাথ ও অন্যান্য মিথ্যা মিথ  
কুলদা রায় / এমএমআর জালাল

http://oldsite.dailyjanakantha.com/news_view.php?nc=16&dd=2011-10-11&ni=73505

বুধবার, ১২ অক্টোবর ২০১১, ২৭ আশ্বিন ১৪১৮
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা এবং রবীন্দ্রনাথ ও অন্যান্য মিথ্যা মিথ - 2
কুলদা রায় / এমএমআর জালাল


শনিবার, ১৫ অক্টোবর ২০১১, ৩০ আশ্বিন ১৪১৮
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা এবং রবীন্দ্রনাথ ও অন্যান্য মিথ্যা মিথ -  ৪  (শেষাংশ)
কুলদা রায় ও এমএমআর জালাল


__._,_.___

Posted by: SyedAslam <Syed.Aslam3@gmail.com>


****************************************************
Mukto Mona plans for a Grand Darwin Day Celebration: 
Call For Articles:

http://mukto-mona.com/wordpress/?p=68

http://mukto-mona.com/banga_blog/?p=585

****************************************************

VISIT MUKTO-MONA WEB-SITE : http://www.mukto-mona.com/

****************************************************

"I disapprove of what you say, but I will defend to the death your right to say it".
               -Beatrice Hall [pseudonym: S.G. Tallentyre], 190





__,_._,___