Banner Advertiser

Thursday, May 14, 2015

[mukto-mona] ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা এবং রবীন্দ্রনাথ ও অন্যান্য মিথ্যা মিথ - ৪ (শেষাংশ)



শনিবার, ১৫ অক্টোবর ২০১১, ৩০ আশ্বিন ১৪১৮
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা এবং রবীন্দ্রনাথ ও অন্যান্য মিথ্যা মিথ
কুলদা রায় ও এমএমআর জালাল
(শেষাংশ)

ঢাকা শহরের পূর্ব সীমান্তে একদল স্কাউট, বহুসংখ্যক স্বেচ্ছাসেবক ও শহরের বিশিষ্ট ভদ্রলোক উপস্থিত ছিলেন। রবীন্দ্রনাথের মোটর দৃষ্টিপথে প্রবিষ্ট হইবামাত্র ঘন ঘন জয়ধ্বনি উত্থিত হয়। তারপর ঢাকার নবাব বাহাদুরের হাউস বোট তুরাগে কবির বিশ্রামের ব্যবস্থা হয়। তুরাগে যাওয়ার পথটি কলাগাছের চারা দিয়ে সাজানো হয়েছিল।
রবীন্দ্রনাথকে প্রথম অভিনন্দনটি জ্ঞাপন করা হয়েছিল ৭ ফেব্রুয়ারি ১৯২৬ তারিখের বিকেল চারটেয় মিউনিসিপ্যালিটি এবং পিপলস এ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে ঢাকার নর্থব্রুক হলে। সমসত্ম হলটি পূর্ণ হয়ে গিয়েছিল এবং বাইরেও ঘন জমায়েত হয়েছিল। ঢাকা মিউনিসিপ্যালিটির কমিশনারগণ মানপত্রে লেখেন।
হে জাতীয়তার দার্শনিক প্রচারক। হিন্দু-মুসলমানের স্থায়ী মিলন কেবল সাহিত্য ও শিক্ষার ভেতর দিয়াই সম্ভবপর। বর্তমান বিরোধ ও অনৈক্য সমাধানের এই গুহ্য মন্ত্র তুমি বহু পূর্ব হইতেই প্রচার করিয়া আসিতেছ। জাতির প্রতি অত্যাচারে নিজকে লাঞ্ছিত মনে করিয়া তুমি রাজদত্ত দুর্লভ সম্মান ঘৃণায় পরিত্যাগ করিয়াছ; দেশবাসীর নিগৃহ হেতু কানাডার নিমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করিয়া আত্মসম্মানবোধ ও দেশনেতার জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত প্রদর্শন করিয়াছ।
এরপরই ঢাকা জনসাধারণের কর্তৃক একটি মানপত্র পাঠ করা হয়। সেখানেও নাইট উপাধি ত্যাগের কথা উলেস্নখ করা হয়েছে। শান্তিনিকেতন, বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশংসা করা হয়েছে। রবীন্দ্রনাথ এখানে একটি লিখিত বক্তব্য দেন।
করোনেশন পার্কে বিকেল ৫.৩০-এ কবিকে আরেকটি সংবর্ধনা দেয়া হয়। উপস্থিত ছিল দশ হাজার লোক। ঢাকা রেটপেয়ার্স এ্যাসোসিয়েশন মানপত্রে বলেন যে, লর্ড কার্জন বাহাদুরের শাসনকালে বঙ্গ বিভাগের ফলে পূর্ববঙ্গ যখন পশ্চিমবঙ্গ হইতে বিচ্ছিন্ন হইয়াছিল তখন সেই কূটনীতির বিরম্নদ্ধে আপনি কাব্যে ও সঙ্গীতে যে ভীষণ সংগ্রাম ঘোষণা করিয়াছিলেন তাহাও আজ স্মরণ-পথে উদিত হইতেছে।
নবাব বাহাদুর খাজা হাবিবু্ল্লাহর সভাপতিতে হিন্দু মোসলেম সেবাশ্রমের পক্ষ থেকে মানপত্র দেয়া হয়।
১০ ফেব্রম্নয়ারি ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল পরিদর্শন করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তারপর দুপুর আড়াইটায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কার্জন হলে উপস্থিত হন। এখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্যার্থী সঙ্ঘ তাঁকে একটি কাব্যাভিনন্দন প্রদান করে।
এখানেই বিকেলে মুসলিম হলে ছাত্র ইউনিয়ন সংবর্ধনার বিপুল আয়োজন করে। ছাত্রসংসদ কবিকে আজীবন সদস্যপদরূপে গ্রহণ করে। মুসলিম হলে সংবর্ধনা সম্পর্কে আবুল ফজলের স্মৃতিচারণ- 'কবি যখন ঢুকলেন হল ঘরের প্রবেশ পথ থেকেই কবির উপর শুরম্ন হয়েছে পুষ্পবৃষ্টি।' মুসলিম হল ছাত্রবৃন্দ মানপত্রে বলেন যে, বিধাতা বড় দয়া করিয়া, প্রাণহীন ভারতের দুর্দিনে তোমার মত বিরাট-প্রাণ মহাপুরম্নষকে দান করিয়াছেন। তোমার প্রাণ মুক্ত, বিশ্বময়। সেখানে হিন্দু নাই, মুসলমান নাই, খ্রিস্টান নাই। আছে মানুষ। একদিকে তুমি মানুষকে নানা কর্মধারায় জাগ্রত করিয়াছ, অন্যদিকে সেই অসীম স্রষ্টার দিকে মনকে আকৃষ্ট করিয়াছ। 'কর্ম ও ধ্যান' উভয়ের সামঞ্জস্য সাধনই মানব জীবনের শ্রেষ্ঠ আদর্শ। ইসলামের এই সার বার্ত্তা তোমার ছন্দে প্রতিধ্বনিত হইয়াছে। তোমার এই ছন্দ আমাদিগকে প্রতিদিন বিশ্বের কল্যাণ সাধনে ও মানুষের সেবায় উদ্বেধিত করম্নক।" রবীন্দ্রনাথ সংবর্ধনার উত্তরে বলেন, "প্রাচীনকালে আমাদের দেশে রাজারা দিগ্বিজয় করে ফিরলে তাঁদের উপর পুষ্পবৃষ্টি অর্পণ করা হতো, আমি কি আমার দেশের জন্য তেমন কিছু জয় করে এনেছি, যার জন্য আজ আমাকেও পুষ্পবর্ষণ করে সংবর্ধনা জানানো হচ্ছে। ভারতের বুকে এত জাতি, এত ধর্ম স্থান লাভ করেছে, তার অর্থ আছে। ভারতের হাওয়ায় এমন শক্তি আছে, যার বলে সকল সম্প্রদায় এখানে আসন লাভ করতে পেরেছে। ভারতের ধর্ম ও সম্প্রদায়ের মধ্যে বিরোধ ও পরস্পরের বিচ্ছেদ দেখে নিতানত্ম দুঃখিত, মর্মাহিত, লজ্জিত হই। ধর্মে ধর্মে বিরোধ হতে পারে না। কারণ ধর্ম হল মিলনের সেতু আর অধর্ম বিরোধের। যখন ধর্মে বিকার উপস্থিত হয় তখনই বিচ্ছেদ প্রবল হয়ে ওঠে। শুধু হিন্দু-মুসলমানে প্রভেদ নয়, সমাজের মধ্যে ভেদের অন্ত নেই। যখন মানুষ মানুষকে অপমান করে, তখন সে দুর্গতি-দারিদ্রের চরম সীমায় উপনীত হয়, আমি আমার সমাজের জন্য লজ্জিত হয়েছি। বিচ্ছেদের রক্তপস্নাবনে মানব-সমাজের প্রতি স্তর কলুষিত হয়েছে। এই সমস্যা ভারতে বহুদিন থেকে আছে। বিরোধের প্রাচীর তুলে ত সমস্যার সমাধান হবে না। শুভবুদ্ধির আলোক বিকীর্ণ হোক। তবেই আমাদের চিত্ত মুক্ত হবে।
সন্ধ্যায় কার্জন হলে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ভাষণ দেন। ভাষণের বিষয় ছিল 'আর্টের অর্থ'। ১১ ও ১২ ফেব্রুয়ারি (২৭ ও ২৮ মাঘ) অসুস্থতার কারণে রবীন্দ্রনাথ কোন অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পারেননি। ১৩ ফেব্রুয়ারি (১ ফাগুন) রবীন্দ্রনাথ কার্জন হলে বক্তৃতার করেন। বক্তৃতার বিষয় ছিল-'দ্য রুল অব দ্য জায়ান্ট'। আগে উল্লেখ করা হয়েছে, অসুস্থতার কারণে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জগন্নাথ হলে ছাত্রদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যেতে পারেননি। ১৫ ফেব্রম্নয়ারি (৩ ফাল্গুন) বিদায়ী দিনে জগন্নাথ হলের ছাত্রদের অনুরোধে হল বার্ষিকী 'বাসন্তিকা'র জন্য একটি গান লিখে দেন।'
এরপরে কবিকে ময়মনসিংহ ও বরিশালেও সংবর্ধনা প্রদান করা হয়।
১৯৩৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কবিকে সম্মানিত ডি লিট উপাধিতে ভূষিত করে। স্থির ছিল, কবি ব্যক্তিগতভাবে উপস্থিত থেকে বিশ্ববিদ্যালয়-প্রদত্ত সম্মান গ্রহণ করবেন। কিন্তু শরীরের কারণে ঢাকা যেতে পারেননি। তাঁর অনুপস্থিতিতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে honoris Causa উপাধিটি প্রদান করেন।
একটি বিষয় লক্ষ্য করা যায় যে, কবির এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানগুলো বিপুল জনসাধারণ, ছাত্র, নেতৃবৃন্দের স্বতঃম্ফূর্ত উপস্থিতিতে মুখরিত। হিন্দু-মুসলিম জাতি-সম্প্রদায় ভেদে সকলেই অংশ নিয়েছেন। রবীন্দ্রনাথ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করেছিলেন এ ধরনের অভিযোগ কেউ করেন নাই। কবিকে স্বজন হিসাবে সবাই গ্রহণ করেছেন।

চার.
জীবনে বহুবার তাঁকে পূর্ববাংলায় আসতে হয়েছে। তিনি শিলাইদহে, শাহজাদপুরে, পতিসরে তাঁর পিতৃপুরম্নষের জমিদারী দেখতে এসেছেন। তার চেয়ে সেখানে আসমানদারীই করেছেন অনেক বেশি। রবীন্দ্রনাথ পূর্ণ হয়েছেন এই বাংলাদেশের জল হাওয়ায়, নদীর ছোঁয়ায়। মানুষের সঙ্গে মানুষের ভেদরেখা তুলে দিয়েছেন। তাঁর জমিদারীকে প্রজাকল্যাণের কাজে লাগিয়েছেন। নিজে স্থাপন করেছেন স্কুল, কৃষি ব্যাংক, তাঁত প্রশিক্ষণ স্কুল। ৰুদ্রঋণের প্রচলনও করেছেন সেখানে। আর একমাত্র ছেলেকে বিদেশ থেকে লেখাপড়া শিখিয়ে এনে এই শিলাইদহেই কৃষি ফার্ম গড়ে তোলার চেষ্টা করেছেন।
১৯২২ সালে শেষবারের মতো শিলাইদহে রবীন্দ্রনাথ আসেন। এখানে দু'সপ্তাহ ছিলেন। সঙ্গী সুরেন্দ্রনাথ ঠাকুর ও সিএফ এন্ডরম্নজ। ২১ চৈত্র গ্রামবাসীরা কবি ও এন্ডরুজ সাহেবকে আনুষ্ঠানিক সংবর্ধনা জানান। এই সভায় একাধিক মানপত্র দেয়া হয়। এ দিনই শিলাইদহ অঞ্চলের মুসলমান মহিলাদের পক্ষ থেকে কবিকে একটি নকশিকাঁথা উপহার দেয়া হয়। এটি বর্তমানে রবীন্দ্রভবনে সংরক্ষিত আছে। 'জগৎপূজ্য কবিসম্রাট শ্রীল শ্রীযুক্ত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, মহোদয়ের শ্রীচরণ কমলেষু' নামে খোরসেদপুরের অধিবাসিবৃন্দ মানপত্রে লেখেন_
আবার এসেছে ফিরে এ পল্লীর আনন্দ দুলাল
দশদিক আকুলিয়া পত্র পুষ্পে সেজে ওঠ কদম্ব তমাল।
শাখে শাখে ডাকে পাখি দাঁড়াইলা পল্লী আজি উৎসব সজ্জায়
কবীন্দ্রের চরণের তলে, অর্ঘ্য করে নতমুখী সেবিকার প্রায়।
১৯৩৭ সালে পতিসরের প্রজাদের আমন্ত্রণে রবীন্দ্রনাথ সে বছরের পূন্যাহে (১০ শ্রাবণ ১৩৪৪ বঙ্গাব্দ) পতিসরে আসেন। সেখান থেকে কালীগ্রামে। এখানে কবি বারো বছর পরে এলেন। তখন থাকতেন বোটে। কবির আগমন উপলক্ষে রসুনচৌকি আর দিশি বাদ্যভাণ্ডের ধ্বনিতে সরগরম হয়ে উঠল গ্রামগুলো। পরের দিন সংবর্ধনা জানাবার বিপুল আয়োজন করেছেন গ্রামবাসীরা।

jalalabir@gmail.com
শনিবার, ১৫ অক্টোবর ২০১১, ৩০ আশ্বিন ১৪১৮

আরও পড়ুন:

রবীন্দ্রনাথ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করেন নাই



মঙ্গলবার, ১১ অক্টোবর ২০১১, ২৬ আশ্বিন ১৪১৮
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা এবং রবীন্দ্রনাথ ও অন্যান্য মিথ্যা মিথ  
কুলদা রায় / এমএমআর জালাল

http://oldsite.dailyjanakantha.com/news_view.php?nc=16&dd=2011-10-11&ni=73505

বুধবার, ১২ অক্টোবর ২০১১, ২৭ আশ্বিন ১৪১৮
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা এবং রবীন্দ্রনাথ ও অন্যান্য মিথ্যা মিথ - 2
কুলদা রায় / এমএমআর জালাল

বৃহস্পতিবার, ১৩ অক্টোবর ২০১১, ২৮ আশ্বিন ১৪১৮
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা এবং রবীন্দ্রনাথ ও অন্যান্য মিথ্যা মিথ - ৩


শনিবার, ১৫ অক্টোবর ২০১১, ৩০ আশ্বিন ১৪১৮
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা এবং রবীন্দ্রনাথ ও অন্যান্য মিথ্যা মিথ -  ৪  (শেষাংশ)
কুলদা রায় ও এমএমআর জালাল


__._,_.___

Posted by: SyedAslam <Syed.Aslam3@gmail.com>


****************************************************
Mukto Mona plans for a Grand Darwin Day Celebration: 
Call For Articles:

http://mukto-mona.com/wordpress/?p=68

http://mukto-mona.com/banga_blog/?p=585

****************************************************

VISIT MUKTO-MONA WEB-SITE : http://www.mukto-mona.com/

****************************************************

"I disapprove of what you say, but I will defend to the death your right to say it".
               -Beatrice Hall [pseudonym: S.G. Tallentyre], 190





__,_._,___