Banner Advertiser

Monday, June 8, 2015

[mukto-mona] Articles

অনন্ত বিজয় দাসঃ মৃত্যুই যেখানে শেষ কথা নয়

পাপলু বাঙ্গালী


দার্শনিক সরদার ফজলুল করিম বলতেন, 'আমি বলি যে মানুষের জন্ম কবে হয়। আমি
কবে জন্মাব? মৃত্যুর মধ্য দিয়েই আমি জন্মাব।' মানুষ সময়ে-অসময়ে নিরন্তর
চলা এক ঐতিহাসিক নদীর নাম। নদীর জল ঋতু চক্রে শুকিয়ে যেতে পারে কিন্তু
নদীর নিরন্তর ছুঁটে চলা থামে না। মানুষও সেরকম তাঁর মৃত্যু নেই। কিন্তু
অবশ্যই জাত-পাত, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মানুষ হতে হবে। মানুষ তাঁর
চিন্তা-চেতনা নিয়ে অবিরত ছুটে চলা এক একটা স্রোতস্বীনি।

শুদ্ধ কবি জীবনানন্দ দাশ তাই লিখেছিলেন, 'মানুষের মৃত্যু হলে তবুও মানব থেকে যায়;।

অনন্ত বিজয় দাশ। এক অপার সম্ভাবনাময় তরুণ ছিলেন। আমার কাছে শহরের এক খসে
পড়া নক্ষত্র অনন্ত বিজয়। যাকে এক অন্ধকার সমাজ প্রকাশ্য ভোরের হাওয়া
মিলিয়ে যাওয়ার পূর্বেই চাপাতি দিয়ে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করেছে। কী
তাঁর অপরাধ ছিল নিজেরাই নিজেদের জিজ্ঞেস করুন। আমাদের কাছে অনন্ত বর্বর
আদিম সমাজে জন্ম নেয়া এক ফিনিক্স। যে তাঁর চিন্তা নিয়ে বারবার ফিরে আসবে
তাঁকে পরাজিত করা যাবে না। তাকে ধ্বংস করা যায় না। শহরের নতুন রোদ্দূরে
তাঁর দেখা মিলবে, ভোরের চমৎকার বাতায়নে অনন্ত এসে দাঁড়াবে। অনন্তদের
মৃত্যু নেই মৃত্যু হতে পারে না।

যার বিজ্ঞানমনস্ক চিন্তা চেতনায় এবং নতুন ভাবনায় অনেকেই স্বস্তি
পাচ্ছিলো না। হাজার বছরের সমাজের ভাবনায় গেঁথে যাওয়া শৈবাল পরিষ্কারের
দায়িত্ব নিয়েছিলেন তরুণ অনন্ত। যা কূপমণ্ডুকদের অন্ধকার চাষাবাদের এবং
আদিম রুটি-রুজির দিকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছিল এক শহুরে হাতে কলম ধরা
তরুণ।

যিনি মানুষের অতি প্রাকৃতিক শক্তির চিন্তার জায়গায় প্রাকৃতিক ব্যাখ্যার
পরিমণ্ডল তৈরির চেষ্টা করেছিলেন। অদম্য চেষ্টা আর চর্চায় যিনি হয়ে
উঠেছিলেন যুক্তিবাদী তরুণ। গড়তে চেয়েছিলেন বিজ্ঞানমনস্ক সমাজ, ছড়িয়ে দিতে
চেয়েছিলেন যুক্তিবাদী চিন্তা-চেতনা। শহরের অন্যান্য বিজ্ঞানমনস্ক তরুণদের
নিয়ে তাই গড়ে তুলেছিলেন 'বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী কাউন্সিল।' যার মাধ্যমে
কুসংস্কার আর অজ্ঞতাকে সরিয়ে জায়গা দিতে চেয়েছিলেন গবেষণালব্ধ
জ্ঞান-বিজ্ঞানকে। শুধু বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী কাউন্সিলই গড়ে তুললেন না।
মানুষের কাছে বিজ্ঞানের গবেষণালব্ধ জ্ঞান আর যুক্তিবাদী চিন্তা ছড়িয়ে
দিতে নিজের সম্পাদনায় বিজ্ঞান ও বিজ্ঞানমনস্কতার ছোট কাগজ 'যুক্তি' দিয়ে
বিজ্ঞান আন্দোলনের নিবিড়ভাবে সক্রিয় থাকার চেষ্টায় থাকলেন।

চিন্তায়, শ্রমে আর ঘামে এই সমাজকে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন বিজ্ঞানমনস্ক সমাজ
হিসেবে। আর সেই মানুষগুলো তাঁর সঙ্গে নতুন দিনের সারথি হবে। কিন্তু
পুরাতন সমাজের আবর্জনা থেকে জন্ম নেয়া মস্তিষ্ক তাড়ি মানুষ তাঁকে হত্যা
করলো নির্মমভাবে। শুধুমাত্র ধ্বংস করতে পারলো না। অতীতে যেমন থামানো
সম্ভব হয়নি নতুন চিন্তার জয়রথকে।

ষোল শতাব্দিতে পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ঘুরছে এই কথাটা বলাও বিপজ্জনক
ছিল। কিন্তু সেই সময় কোপার্নিকাস তত্ত্বটা সামনে নিয়ে এসেছিলেন।
কোপার্নিকাস এক ধাক্কা দিয়ে পৃথিবীকে সরিয়ে দিয়েছিলেন মহাবিশ্বের
কেন্দ্র থেকে। মনে হতে পারে এটা তো স্বাভাবিক ঘটনা-পৃথিবী সূর্যের
চারিদিকে ঘুরছে- এটা আমরা অহরহ বলছি। কিন্তু সেই সময় এই কথাটা বলা
বিপজ্জনকই ছিল না-প্রাণঘাতীও ছিল। আজকের বিজ্ঞান এই জায়গায় আসতে
ধর্মান্ধদের বাঁধার ভীড়ে কয়েক'শ বছর লেগেছিল। তবুও লড়াই থেমে থাকে নি।

প্রকৃতিকে যুক্তি দিয়ে বিচারের জায়গা থেকে যুক্তিবাদী মানুষ সরে আসে নাই।
তাই মধ্যযুগীয় চার্চের নির্দেশ ব্রুনোকে পুড়ে মরতে হয়েছিল, গ্যালিলিওকে
সইতে হয়েছিল অসহ্য যন্ত্রণা। সবচেয়ে বেদনাদায়ক এবং নৃশংস পরিণতি বরণ করতে
হয়েছিল জ্যোর্তিবিজ্ঞানী হাইপেসিয়াকে। চার্চের এক রিডারের নেতত্বে
আলেকজান্দ্রিয়ার রাস্তায় জ্যোর্তিবিজ্ঞানী হাইপেসিয়াকে ঝিনুকের খোল দিয়ে
ঘষে ঘষে তার শরীরের চামড়া আর মাংস ছড়িয়ে নেয়া হয়েছিল। তারপর আগুন দিয়ে
পুড়িয়ে দেয়া হল।

ভয়-ভীতি অত্যাচারের অবজ্ঞা করে অতীতের মতো সেবারও আস্তে আস্তে বিজ্ঞান
এগিয়ে গিয়েছিল। হাইপেশিয়াকে, ব্রুনোকে,গ্যালিলিওকে কিংবা যখন ডারউইনকে
'শয়তানের সঙ্গী' আখ্যায়িত করা হয় তখন খুবই অল্প মানুষকে পাওয়া যাবে হয়তো
প্রতিবাদ করেছিল, কিন্তু বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রা থেমে থাকে নি। বরং জ্ঞান
আর অজ্ঞতাকে সরিয়ে প্রবল প্রতাপে বিজ্ঞানই জায়গা করে নিয়েছিল তার
অবস্থান।

অনন্ত বিজয় দাশকে যারা হত্যা করেছিল তারা তাঁর চিন্তার কাছে পরাজিত হয়ে,
যুক্তির কাছে হেরে গিয়ে সেই আলেকজান্দ্রিয়ার রাস্তার ধর্মান্ধদের মতো
ছুঁটে এসেছিল সুজলা-সুফলা এই অনন্তের প্রিয় শহরের চাপাতি নিয়ে। কিন্তু যে
চারজন অনন্ত বিজয়ের সামনে এসেছিল চাপাতি হাতে তারা অনন্তের কাছে শুধু
মানুষ হিসেবেই এসেছিল। তাঁর কাছে তাদের একটা পরিচয় ছিল,তারা মানুষ।
চাপাতি হাতে সেই মানুষরূপি নরখাদকগুলো নিশ্চয়ই এখন হাঁটছে, ফিরছে,
হাসছে। কিন্তু তাদের মনে শান্তি নেই, হৃদয়ে প্রচণ্ড ভয় ভর করেছে। তারা
অস্থির সময় পার করছে। মানুষ হত্যার ঠুনকো মতাদর্শ নিয়ে তো ভালোভাবে
বাঁচা যায় না। মানুষ অনন্তকে তারা হত্যা করতে পারে নাই। তারা শুধু তার
ক্ষণজন্মের অগ্রযাত্রাকে থামিয়ে দিতে পেরেছে। কিন্তু অনন্ত মাথা উঁচু করে
তাঁর চিন্তা নিয়ে সারা দেশ, সারা বিশ্ব দাপিয়ে বেড়াবেন। অথচ সেই অন্ধকার
চাষাবাদ করা হিংস্র দাঁতাল শুকরগুলো পড়ে থাকবে পুরাতন দেয়ালের খুপড়িঘরে।
যেখানে আলো নেই, ভালোবাসা নেই।

অনন্ত বিজয় দাশ হত্যার দিন গড়িয়ে, সপ্তাহ গড়িয়ে মাস চলে যাচ্ছে কিন্তু
তাঁর খুনিদের গ্রেফতার করতে পারে নাই এই রাষ্ট্র নামের অথর্ব প্রশাসন।
একই ঘটনা দেশের সম্ভাবনাময় তরুণ বিজ্ঞান লেখক অভিজিৎ রায়ের ক্ষেত্রেও।
হত্যার একশ' দিন যাওয়ার পরও কাউকে গ্রেফতার করতে পারে নাই। বিচারহীনতার
সংস্কৃতির কথা আমরা বলি বারবার কিন্তু সেই বিচারহীনতার সংস্কৃতি আবার সকল
জায়গায় সক্রিয় নয়। যেমন প্রধানমন্ত্রীকে কটুক্তি করলে তাদের কয়েক ঘন্টার
মধ্যে খুঁজে বের করে গ্রেফতার করা হয়। তথাকথিত ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত
লাগার কথা বলে অনেক ব্লগার, লেখককে কয়েক ঘন্টার ভেতর এই রাষ্ট্রে
গ্রেফতার করার ইতিহাস আছে। কিন্তু মুক্তমনা লেখক কিংবা ব্লগার হত্যার পর
সেই সক্রিয়তা খুঁজে পাওয়া যায় না। এইখানে ধিক্কার জানানো এবং ঘৃণা
জানিয়ে দেয়া ছাড়া আপাতত আমাদের কোন সামর্থ্য নেই।

এই রাষ্ট্র হয়তো অভিজিৎ, অনন্ত বিজয় দাশের হত্যার বিচার করতে পারবে কিনা
কিংবা সেই ইচ্ছা তাদের আছে কিনা জানি না। কিন্তু আমরা বিচার প্রাপ্তির
জন্য লড়ে যাবো, নৃশংস মানুষ হত্যার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করবো, মুক্ত
মতামতের উপর পশুদের আক্রমণ প্রতিহত করতে রাজপথে থাকবো। একই সঙ্গে
বিজ্ঞানভিত্তিক-একই ধারার শিক্ষা ব্যবস্থার জন্যও আমাদের লড়ে যেতে হবে।
আমার বিশ্বাস করি একটা বিজ্ঞানভিত্তিক-একইধারার-বৈষম্যহীন শিক্ষা
ব্যবস্থাই পারে আগামী অনন্তদের গড়ে তুলতে। আর অনন্ত বিজয় দাশ বেঁচে
থাকবেন অন্ধকার দূর করা ভিষণ তেজোদ্বিপ্ত আলো হয়ে। সেই আলো তিনি
আমাদের হাতে দিয়ে গেছেন। যে আলোর ধ্বংস হয় না পরম্পরা ছুঁটে চলে। সেটা
এখন আমাদের বয়ে নিয়ে যাবার পালা। সকল ভয়-ভীতি,অত্যাচার-অজ্ঞতাকে পেছনে
ফেলে আমরা এগিয়ে যাবো।

শেষ করার আগে আবারও দার্শনিক সরদার ফজলুল করিমের আরেকটা কথা আমাদের সামনে
চলে আসে, 'ব্যক্তিমানুষের মৃত্যু আছে, তার আদর্শ বা স্বপ্নের মৃত্যু
নেই।' সত্যি অনন্ত বিজয় দাসের মৃত্যু হতে পারে না।

শহরের নক্ষত্র পতন হয়েছিল ১২ মে ২০১৫ সালে। আরো হাজার-হাজার, লক্ষ-লক্ষ
নক্ষত্র তৈরি হয়ে আছে। পতনের শব্দ শুনার জন্য অপেক্ষায় আছে একবিংশ
শতাব্দি। তবুও হারা চলবে না। জীবন যেখানে দ্রোহের প্রতিশব্দ মৃত্যুই
সেখানে শেষ কথা নয়।

অনন্ত বিজয় দাশ, আপনাকে লাল সালাম!


------------------------------------
Posted by: Shohiduzzaman Paplu <paplubangali@gmail.com>
------------------------------------

****************************************************
Mukto Mona plans for a Grand Darwin Day Celebration:
Call For Articles:

http://mukto-mona.com/wordpress/?p=68

http://mukto-mona.com/banga_blog/?p=585

****************************************************

VISIT MUKTO-MONA WEB-SITE : http://www.mukto-mona.com/

****************************************************

"I disapprove of what you say, but I will defend to the death your right to say it".
-Beatrice Hall [pseudonym: S.G. Tallentyre], 190
------------------------------------

Yahoo Groups Links

<*> To visit your group on the web, go to:
http://groups.yahoo.com/group/mukto-mona/

<*> Your email settings:
Individual Email | Traditional

<*> To change settings online go to:
http://groups.yahoo.com/group/mukto-mona/join
(Yahoo! ID required)

<*> To change settings via email:
mukto-mona-digest@yahoogroups.com
mukto-mona-fullfeatured@yahoogroups.com

<*> To unsubscribe from this group, send an email to:
mukto-mona-unsubscribe@yahoogroups.com

<*> Your use of Yahoo Groups is subject to:
https://info.yahoo.com/legal/us/yahoo/utos/terms/