আন্দোলনের ঢেউ লেগেছিল আসামেও
Published : Friday, 12 February, 2016 at 12:00 AM, Update: 11.02.2016 11:13:15 PM
নিজস্ব প্রতিবেদক
১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রভাষা বাংলা প্রতিষ্ঠার জন্য বাঙালির বেগবান আন্দোলনের ঢেউ ৯ বছর পর আছড়ে পড়েছিল ভারতের আসামেও। মাতৃভাষা বাংলার অধিকার অর্জনে 'জান দেব, জবান দেব না'Ñ সেøাগানে ফেটে পড়েছিলেন আসামের বাঙালিরা। ভাষার অধিকার আদায়ের সেই আন্দোলনে ১৯৬১ সালের ১৯ মে আসামের শিলচর রেলস্টেশনে প্রাণ বিসর্জন দেন ১১ বাঙালি তরুণ-তরুণী। যাদের প্রায় সবার বয়স ছিল ২৫ বছরের মধ্যে।
সেদিন আসামের ১১ তরুণ-তরুণীর প্রাণ বিসর্জন বিফলে যায়নি। দাবি মানতে বাধ্য হয় আসাম রাজ্য সরকার। বাংলাকে সরকারি ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। আজ আসামের দ্বিতীয় রাজ্যভাষা বাংলা। পাশাপাশি আসামের বরাক উপত্যকার প্রধান সরকারি ভাষাও বাংলা। সেই দিনটিকে স্মরণ করে ভারতে ১৯ মে পালিত হয় 'জাতীয় মাতৃভাষা দিবস।' ১৯৫২-এর মতো বাঙালির মায়ের ভাষার অধিকার অর্জনের এ ইতিহাসও রক্তভেজা।
এদিকে ভাষা আন্দোলন সম্পর্কিত বায়ান্নর মার্কিন গোপন দলিল পর্যালোচনা করে জানা যায়, একাত্তরে পূর্ব পাকিস্তানে কেন্দ্রীয় সরকারের গণহত্যার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন মার্কিন কূটনীতিক অর্চার কেন্ট ব্লাড। নিক্সন-কিসিঞ্জারের নীতির বিরোধিতাকারী সেই বহুল আলোচিত 'ব্লাড টেলিগ্রামে'র রূপকার ব্লাড একুশে ফেব্রুয়ারির ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন। সারা দেশে শহীদ দিবস পালনের ব্যাপকতা বৃদ্ধির জন্য তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের ভূমিকার প্রশংসা করেন।
১৯৬২ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকা থেকে ওয়াশিংটনে পাঠানো এক বার্তায় সে বছরের একুশে ফেব্রুয়ারি পালনের বিবরণ উল্লেখ করা হয়। তখন তিনি ছিলেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন কনসাল। ব্লাড লেখেন, খুব সকালে ছাত্ররা বুকে কালো ব্যাজ ধারণ করে আজিমপুর সমাধিতে জড়ো হতে শুরু করে।
তাদের হাতের প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল 'শহীদ স্মৃতি দীর্ঘজীবী হোক।' বাংলা ভাষার ব্যাপকভিত্তিক প্রচলন এবং স্বীকৃতির পক্ষে অনেক প্রচারপত্র ছিল। ছাত্ররা অত্যন্ত সুশৃঙ্খলভাবে মেডিক্যাল কলেজ চত্বরের স্মৃতিসৌধে সমবেত হয়। স্মৃতিসৌধটি কালো কাপড়ে ঢাকা ছিল। ছাত্ররা সেখানে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও সভা করে। এ সভায় একুশে ফেব্রুয়ারি সরকারি ছুটি ঘোষণা, সর্বস্তরে বাংলা ভাষার প্রচলন, ১৯৫৮ সালের পরিকল্পনা অনুযায়ী স্মৃতিসৌধের নির্মাণকাজ সম্পন্নের দাবি জানায় তারা।
অর্চার ব্লাড লেখেন, ছাত্রদের ওই সভায় সরকারি কমিটিতে ১৫ জন ছাত্রসহ পূর্ব পাকিস্তানের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের ভাইস প্রেসিডেন্ট আতাউর রহমান খানকে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাবও পাস হয়। তারা ১৯৫২ সালে নিহত ছাত্রদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রদানের দাবি জানায়। সভা প্রায় এক ঘণ্টা স্থায়ী ছিল এবং ছাত্ররা শান্তিপূর্ণভাবে সভাস্থল ত্যাগ করে।
ব্লাড আরও উল্লেখ করেন, শহীদ দিবস পালন উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকাগুলোয় পুলিশ বাহিনীকে লাঠি ও অস্ত্র নিয়ে সতর্ক পাহারায় দেখা যায়। বিভিন্ন সরকারি স্থাপনায় পূর্ব পাকিস্তান রাইফেলসের মোবাইল রেডিও ইউনিটকে সক্রিয় থাকতে দেখা গেছে।
ওইদিন দুপুরে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর সভাপতিত্বে বাংলা একাডেমিতে আলোচনাসভা হয়। সভায় ড. কাজী মোতাহার হোসেন বাংলা লিখতে রোমান হস্তলিপি চালুর তীব্র বিরোধিতা করেন।
ময়মনসিংহের করটিয়া কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ইব্রাহীম খাঁ সভায় ২১ ফেব্রুয়ারির ঘটনার স্মরণে স্মৃতিসৌধ স্থাপনের সিদ্ধান্তের জন্য পূর্ব পাকিস্তান সরকারকে ধন্যবাদ জানান। ব্লাডের কথায়, ভাষা আন্দোলনে যোগদানের দায়ে জেল খাটা বামপন্থি অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী ধনী পরিবারের ইংরেজিপ্রীতির নিন্দা জানান। ব্লাড তার বার্তার শেষে মন্তব্য করেন, সরকার বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে এবারের ভাষা দিবসের কর্মসূচি পালনে কোনো হস্তক্ষেপ করেনি। - See more at: http://www.dainikamadershomoy.com/2016/02/12/73011.php#sthash.wfGeQ87T.dpuf
সেদিন আসামের ১১ তরুণ-তরুণীর প্রাণ বিসর্জন বিফলে যায়নি। দাবি মানতে বাধ্য হয় আসাম রাজ্য সরকার। বাংলাকে সরকারি ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। আজ আসামের দ্বিতীয় রাজ্যভাষা বাংলা। পাশাপাশি আসামের বরাক উপত্যকার প্রধান সরকারি ভাষাও বাংলা। সেই দিনটিকে স্মরণ করে ভারতে ১৯ মে পালিত হয় 'জাতীয় মাতৃভাষা দিবস।' ১৯৫২-এর মতো বাঙালির মায়ের ভাষার অধিকার অর্জনের এ ইতিহাসও রক্তভেজা।
এদিকে ভাষা আন্দোলন সম্পর্কিত বায়ান্নর মার্কিন গোপন দলিল পর্যালোচনা করে জানা যায়, একাত্তরে পূর্ব পাকিস্তানে কেন্দ্রীয় সরকারের গণহত্যার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন মার্কিন কূটনীতিক অর্চার কেন্ট ব্লাড। নিক্সন-কিসিঞ্জারের নীতির বিরোধিতাকারী সেই বহুল আলোচিত 'ব্লাড টেলিগ্রামে'র রূপকার ব্লাড একুশে ফেব্রুয়ারির ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন। সারা দেশে শহীদ দিবস পালনের ব্যাপকতা বৃদ্ধির জন্য তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের ভূমিকার প্রশংসা করেন।
১৯৬২ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকা থেকে ওয়াশিংটনে পাঠানো এক বার্তায় সে বছরের একুশে ফেব্রুয়ারি পালনের বিবরণ উল্লেখ করা হয়। তখন তিনি ছিলেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন কনসাল। ব্লাড লেখেন, খুব সকালে ছাত্ররা বুকে কালো ব্যাজ ধারণ করে আজিমপুর সমাধিতে জড়ো হতে শুরু করে।
তাদের হাতের প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল 'শহীদ স্মৃতি দীর্ঘজীবী হোক।' বাংলা ভাষার ব্যাপকভিত্তিক প্রচলন এবং স্বীকৃতির পক্ষে অনেক প্রচারপত্র ছিল। ছাত্ররা অত্যন্ত সুশৃঙ্খলভাবে মেডিক্যাল কলেজ চত্বরের স্মৃতিসৌধে সমবেত হয়। স্মৃতিসৌধটি কালো কাপড়ে ঢাকা ছিল। ছাত্ররা সেখানে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও সভা করে। এ সভায় একুশে ফেব্রুয়ারি সরকারি ছুটি ঘোষণা, সর্বস্তরে বাংলা ভাষার প্রচলন, ১৯৫৮ সালের পরিকল্পনা অনুযায়ী স্মৃতিসৌধের নির্মাণকাজ সম্পন্নের দাবি জানায় তারা।
অর্চার ব্লাড লেখেন, ছাত্রদের ওই সভায় সরকারি কমিটিতে ১৫ জন ছাত্রসহ পূর্ব পাকিস্তানের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের ভাইস প্রেসিডেন্ট আতাউর রহমান খানকে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাবও পাস হয়। তারা ১৯৫২ সালে নিহত ছাত্রদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রদানের দাবি জানায়। সভা প্রায় এক ঘণ্টা স্থায়ী ছিল এবং ছাত্ররা শান্তিপূর্ণভাবে সভাস্থল ত্যাগ করে।
ব্লাড আরও উল্লেখ করেন, শহীদ দিবস পালন উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকাগুলোয় পুলিশ বাহিনীকে লাঠি ও অস্ত্র নিয়ে সতর্ক পাহারায় দেখা যায়। বিভিন্ন সরকারি স্থাপনায় পূর্ব পাকিস্তান রাইফেলসের মোবাইল রেডিও ইউনিটকে সক্রিয় থাকতে দেখা গেছে।
ওইদিন দুপুরে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর সভাপতিত্বে বাংলা একাডেমিতে আলোচনাসভা হয়। সভায় ড. কাজী মোতাহার হোসেন বাংলা লিখতে রোমান হস্তলিপি চালুর তীব্র বিরোধিতা করেন।
ময়মনসিংহের করটিয়া কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ইব্রাহীম খাঁ সভায় ২১ ফেব্রুয়ারির ঘটনার স্মরণে স্মৃতিসৌধ স্থাপনের সিদ্ধান্তের জন্য পূর্ব পাকিস্তান সরকারকে ধন্যবাদ জানান। ব্লাডের কথায়, ভাষা আন্দোলনে যোগদানের দায়ে জেল খাটা বামপন্থি অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী ধনী পরিবারের ইংরেজিপ্রীতির নিন্দা জানান। ব্লাড তার বার্তার শেষে মন্তব্য করেন, সরকার বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে এবারের ভাষা দিবসের কর্মসূচি পালনে কোনো হস্তক্ষেপ করেনি। - See more at: http://www.dainikamadershomoy.com/2016/02/12/73011.php#sthash.wfGeQ87T.dpuf
__._,_.___