মহরম-বিসর্জন বিতর্কে জল ঢেলে
সম্প্রীতির ধর্মে আস্থা
সম্প্রীতির ঐতিহ্যই বজায় থাকল বাংলায়। মহরম-বিসর্জন বিতর্কে জল ঢেলে রবিবার নিরুপদ্রব বাতাবরণেই পালিত হল দুই সম্প্রদায়ের অনুষ্ঠান। পুলিশ প্রশাসন তার নিজের ভূমিকা পালন করল সদর্থক ভাবেই। আর সমাজও দেখিয়ে দিল, বাংলার চিরন্তন সংস্কৃতি সম্প্রীতিই।
কী ভাবে এই সম্প্রীতি রক্ষায় এগিয়ে এল সমাজ?
আরও পড়ুন: দশমীর মেলা, সরলো মহরমের লাঠিখেলা
মেদিনীপুর শহরের গোলকুয়াচকে মহরমের মিছিল বরণ করে নিতে দেখা গেল স্থানীয় দুর্গাপুজোর উদ্যোক্তাদের। হাতে ফুল দিয়ে মিষ্টিমুখও করানো হয়। রাতে শহরের কুইকোটায় একটি বারোয়ারি পুজোর বিসর্জন-মিছিল বেরোয়। তবে, সেখানেও উদ্যোক্তারা মহরমের তাজিয়া শেষ হওয়ার পরে নিরঞ্জনের শোভাযাত্রা বের করার সিদ্ধান্ত নেন। পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুকে আবার প্রথা ভেঙে এ দিন মহরমের তাজিয়া বেরিয়েছে অস্ত্র ছাড়াই। লাঠিখেলা বা অন্য কোনও কসরতও হয়নি। উদ্যোক্তারা জানান, তাঁদের অনুষ্ঠান অন্য সম্প্রদায়ের মানুষকে ভীত-সন্ত্রস্ত করুক, তা তাঁরা চান না। তাই নিরস্ত্র মিছিল। জগদ্দল, ঘাটাল, এগরা, সিউড়িতেও অস্ত্র ছাড়া মহরমের মিছিল হয়। অস্ত্র ছাড়া তাজিয়া দেখা গিয়েছে বসিরহাটের মতো এলাকাতেও। কোচবিহার দেবোত্তর ট্রাস্ট বোর্ডের উদ্যোগে মহরমের মিছিল বের হয় হরিণচওড়া থেকে। জলপাইগুড়ির পিলখানা পুজো কমিটির পক্ষ থেকে মহরমের লাঠিখেলার জন্য পুরস্কারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
এমন সম্প্রীতির টুকরো টুকরো উদাহরণ রয়েছে গোটা রাজ্য জুড়েই। মহরমের দিন বিসর্জন হবে কিনা, তা নিয়ে পুজোর আগে বিতর্ক গড়িয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট পর্যন্ত। হাইকোর্ট অবশ্য নির্দেশ দিয়েছিল, প্রশাসন অনুমতি দিলে মহরম তথা একাদশীর দিন দুর্গাপ্রতিমা বিসর্জন দেওয়া যাবে। এ দিন যে সব জায়গায় দুর্গাপ্রতিমা বিসর্জনের জন্য উদ্যোক্তারা আবেদন করেছিলেন, বেশির ভাগ জায়গাতেই পুলিশ অনুমতি দিয়েছে। যদিও সব জায়গাতেই অনুমতি চাইতে এসেছে হাতোগোনা কিছু পুজো কমিটি।
হাইকোর্টের রায়ের পরেই কলকাতার পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমার জানান, কলকাতায় একাদশীর দিন বিসর্জন হবে না। কারণ, অনলাইনে পুজোর অনুমতি চাওয়ার সময়েই বিসর্জনের দিন জানিয়ে দিতে হয়। কলকাতার কোনও বারোয়ারিই রবিবার বিসর্জন দেবে বলে জানায়নি। এ দিন দেখা গেল, কলকাতার গঙ্গা এবং কিছু পুকুর-ঝিলে শুধু বেশ কিছু বাড়ির প্রতিমা বিসর্জন হয়েছে। কোনওটিতেই শোভাযাত্রা হয়নি। প্রশাসন সূত্রের খবর, হাওড়া, হুগলি, নদিয়া, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম ইত্যাদি জেলার বেশ কিছু পুজো কমিটি প্রথমে একাদশীর দিন বিসর্জনের কথা ভাবলেও শেষমেশ ওই পরিকল্পনা বাতিল করে।
সম্প্রীতি রক্ষায় সদর্থক ভূমিকা দেখা গিয়েছে প্রশাসনেও। প্রয়োজনে প্রশাসন কড়াও হয়ে হয়েছে। কিছু জায়গায় বিসর্জনের অনুমতি বাতিল করা হয়েছে। বিজেপির অন্যতম সর্বভারতীয় মুখপাত্র তেজেন্দ্র বাগ্গা বিসর্জনের প্রশ্নে মুখ্যমন্ত্রীকে 'চ্যলেঞ্জ' জানাতে যাচ্ছেন বলে টুইট করে শনিবার পৌঁছেছিলেন কলকাতায়। বিমানবন্দরে নামামাত্রই পুলিশ তাঁকে আটক করে। দিল্লির টিকিট কেটে তাঁকে পত্রপাঠ ফেরত পাঠানো হয়। রাজ্য সরকারি সূত্রে বলা হয়েছে, প্ররোচনা বা উত্তেজনা সৃষ্টির চেষ্টা যে-ই করবে, তাকেই আটকানো হবে।
দিনের শেষে সমাজ ও প্রশাসনের ভূমিকার তারিফ করেছে রাজনৈতিক দলগুলিও। কংগ্রেস, তৃণমূল এবং সিপিএম একবাক্যেই বলেছে, এই সম্প্রীতিই বাংলার ঐতিহ্য।
মহাসমারোহে পালিত মহরম
মহরম-বিসর্জন বিতর্কে জল ঢেলে সম্প্রীতির ধর্মে আস্থা
মহরমে নিরস্ত্র মিছিল থেকে শান্তির বার্তা
অস্ত্র ছাড়া এ বার মহরমের মিছিল
সম্প্রীতির অনন্য নজির, দুর্গাপুজোর কমিটি পুরস্কার দিল মহরম কমিটিকে
মহরম দেখতে ভিড় বসিরহাটে
__._,_.___