http://www.amardeshonline.com/pages/details/2011/09/22/107000
ট্রাইব্যুনালে মাওলানা সাঈদীর শুনানিতে আইনজীবীরা : বায়বীয় অভিযোগে বিচার বেআইনি ও মানবতাবিরোধী
স্টাফ রিপোর্টার
জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ও আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন মুফাসসেরে কোরআন আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে সরকারের উত্থাপিত কথিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগের জবাবে তার আইনজীবীরা শুনানিতে বলেছেন, বায়বীয় অভিযোগের ভিত্তিতে কারও বিচার আইনসম্মত নয়। মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে সরকারের অভিযোগ সুনির্দিষ্ট নয়। শুধু রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হওয়ার অপরাধেই সরকার তার বিরুদ্ধে মনগড়া অভিযোগ এনেছে। একাত্তর সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি কাকে, কোথায়, কোন তারিখে এবং কোন সময় হত্যা করেছেন? হত্যাকাণ্ডে তার ভূমিকা কী ছিল? অভিযোগপত্রে এর কিছুই উল্লেখ নেই। সরকার শুধু অভিযোগ করেছে, 'মাওলানা সাঈদী যুদ্ধের সময় কোনো এক তারিখে, কোনো এক সময়, কোনো এক স্থানে কিছু লোককে হত্যা করেছেন।' আইনজীবীরা সরকারের এ অভিযোগের জবাবে আরও বলেন, এ ধরনের আজগুবি ও বায়বীয় অভিযোগপত্রের ভিত্তিতে কোনো আসামির বিচারের আয়োজন বিশ্বে এটাই প্রথম।
এ অভিযোগপত্রের ভিত্তিতে বিচার করা হলে সেটা হবে বেআইনি এবং আরেকটি মানবতাবিরোধী অপরাধ। বিশ্বের বিচার ইতিহাসে নতুন করে একটি কলঙ্কজনক অধ্যায় রচিত হবে। আদালত স্বাধীন হয়ে থাকলে সরকারের এ গল্প আমলে নিতে পারেন না। পুরনো হাইকোর্ট ভবনে স্থাপিত আন্তর্জাতিক/ডমেস্টিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে গতকাল আল্লামা সাঈদীর উপস্থিতিতে এ শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।
সরকার পক্ষে অভিযোগপত্র পাঠ শেষ হওয়ার পর গত মঙ্গলবার মাওলানা সাঈদীর পক্ষে তার আইনজীবীদের শুনানির কথা ছিল। মাওলানা সাঈদীকে অসুস্থ দেখিয়ে কারাগার থেকে তাকে আদালতে হাজির না করায় ওইদিন শুনানি হয়নি। মঙ্গলবারের পরিবর্তে গতকাল শুনানি হয়। শুনানির শুরুতেই মাওলানা সাঈদীর আইনজীবী অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম মাওলানা সাঈদীর অভিযোগ আমলে নেয়ার আদেশ প্রত্যাহার করার প্রার্থনা জানিয়ে বলেন, আমরা গত মঙ্গলবার আদালতের এ সংক্রান্ত আদেশ প্রত্যাহার বা পুনর্বিবেচনার জন্য একটি আবেদন করেছি। আমরা এটা মনে করি, সরকার পক্ষ থেকে মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে যে অভিযোগপত্র জমা দেয়া হয়েছে, তার ভিত্তিতে আদালত অভিযোগ আমলে নিতে পারেন না। এটা আমলে নেয়ার মতো প্রয়োজনীয় উপাদনও নেই। মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে অভিযোগপত্রে ৩৮ জন সাক্ষীর কথা বলা হয়েছে। কিন্তু অভিযোগপত্রের সঙ্গে তাদের বিস্তারিত বিবরণ ও বক্তব্য আদালতে পেশ করা হয়নি। ওই অবস্থায় আদালত অভিযোগপত্রটি আমলে নিয়েছেন। এটি আমলে নেয়ার একমাস পর সরকার আদালতে সাক্ষীদের বক্তব্য ও জবানবন্দি পেশ করেছে। অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলামের এ বক্তব্যের জবাবে আদালত বলেন, সরকার যতটুকু দিয়েছে তাতেই আমরা সন্তুষ্ট হয়েছি। আমরা সন্তুষ্ট হয়েই অভিযোগপত্র আমলে নিয়েছি। আদালতের এ মন্তব্যের জবাবে অ্যাডভোকেট তাজুল বলেন, এটা ন্যায়বিচারের কথা নয়। প্রয়োজনীয় নথিপত্র পেশ করার এক মাস আগেই যদি আদালত সরকারের মৌখিক বক্তব্যের ওপর ভিত্তি করে অভিযোগ আমলে নিয়ে থাকেন, তাহলে শুনানি করারও দরকার নেই। শুনানি না করে রায় দিয়ে দিলে হয়। অযথা সময়ক্ষেপণ করারও কোনো যৌক্তিকতা নেই। দেশি-বিদেশি বিভিন্ন নজির পেশ করে অ্যাডভোকেট তাজুল আদালতের আগে আদেশ প্রত্যাহারের জন্য জোরালো আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালত তা নামঞ্জুর করে চার্জ শুনানি করতে বলেন।
চার্জ শুনানিতে অ্যাডভোকেট তাজুল বলেন, সরকারের উত্থাপিত অভিযোগপত্রের ভিত্তিতে মাওলানা সাঈদীকে অভিযুক্ত করা হবে বিশ্বের বিচার ইতিহাসের নির্মম পরিহাস। তার বিরুদ্ধে সরকারের অভিযোগ সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়নি। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া বিচার করার কোনো বিধান আইনে নেই। এটা করা হলে তা হবে স্পষ্টতর বেআইনি কাজ। অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, মাওলানা সাঈদী একাত্তর সালের কোনো একটি তারিখে, কোনো এক সময়ে কোনো এক স্থানে ৪০ জন মানুষকে হত্যা ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এখানে কোনো কিছুরই সুনির্দিষ্ট বিবরণ নেই। নিহত ৪০ জনের পরিচয়ও নেই। হত্যাকাণ্ডে মাওলানা সাঈদীর কী ভূমিকা ছিল, সেটাও বলা হয়নি। এ ধরনের বায়বীয় অভিযোগে কারও বিচার হয়েছে, এমন নজির বিচার ইতিহাসে খুঁজে পাওয়া যায় না। তিনি বলেন, আইসিসি সনদ অনুযায়ী অপরাধের সুনির্দিষ্ট বিবরণ থাকাও বাধ্যতামূলক। এসব কিছু ছাড়াই সরকার শুধু রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে এ বিচার প্রহসনের আয়োজন করেছে। আদালত আগামী রোববার পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করেছেন।
মাওলানা সাঈদীর পক্ষে শুনানিতে আরও উপস্থিত ছিলেন ব্যারিস্টার মুন্সি আহসান কবির, ব্যারিস্টার তানভির আল আমিন, অ্যাডভোকেট নাজীর আল হোসাইন, অ্যাডভোকেট মিজানুল আহমেদ, অ্যাডভোকেট মঞ্জুর আনসারী, অ্যাডভোকেট ফরিদ হোসাইন, ব্যারিস্টার এহসান এ সিদ্দিকী, ব্যারিস্টার নাজিব মোমেন, অ্যাডভোকেট জসিমউদ্দিন সরকার প্রমুখ।
- শেষের পাতা
__._,_.___