http://www.dailysangram.com/news_details.php?news_id=66662
বৃটিশ আইনজীবী টবি ক্যাডম্যানের বিবৃতি
ট্রাইব্যুনালের আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখার প্রস্তাব এখনো মানা হচ্ছে না
যুদ্ধাপরাধ বিশেষজ্ঞ টবি ক্যাডম্যান
স্টাফ রিপোর্টার : জামায়াতে ইসলামীর নেতৃবৃন্দের পক্ষে নিযুক্ত বৃটিশ আইনজীবী টবি ক্যাডম্যান বলেছেন, যুদ্ধাপরাধ বিচারের জন্য গঠিত ট্রাইব্যুনালের আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখার জন্য বিশ্ব সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে যেসব আবেদন এবং প্রস্তাব করা হয়েছিল সেগুলো এখনো মানা হচ্ছে না বিচারের ক্ষেত্রে। গতকাল রোববার দীর্ঘ এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে ২০টি অভিযোগ আনা হয়েছে। এর মধ্যে ৯টি অভিযোগের কোন দিন তারিখ উল্লেখ নেই। এমনকি চারটি অভিযোগ বিষয়ে ধারে কাছেও কোন তারিখ উল্লেখ করা হয়নি। শুধু উল্লেখ করা হয়েছে তিনি ১৯৭১ সালে এসব অপরাধ করেছেন। তিনি আরো বলেন, যারা স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন তাদেরকে বিচার থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে বিচারের জন্য দাঁড় করানো হয়েছে তাদেরকে সাংবিধানিক মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে।
টবি ক্যাডম্যান বলেন, সরকারের বিভিন্ন মহল থেকে জিগির তোলা হয়েছে যে, নুরেমবার্গ
খবর
- যু্দ্ধাপরাধ বিচার অবশ্যই রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত হতে হবে -হিলারী
- কথিত যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে বিনা বিচারে আটক নেতৃবৃন্দের অবিলম্বে মুক্তি দাবি
- যুদ্ধাপরাধের বিচারের রকমফের
- যুদ্ধাপরাধের নামে প্রহসনের বিচার চলছে -খন্দকার মাহবুব
- বিচার বিচারের প্রক্রিয়ায় হতে হবে || সাক্ষী প্রমাণসহ করতে হবে
এ সংশ্লিষ্ট আরো খবর এবং টোকিও ট্রাইব্যুনালে আসামী পক্ষের যেমন মধ্যবর্তী আপিলের সুযোগ ছিল তেমনি বাংলাদেশেও এ ব্যবস্থা রয়েছে যা মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। টবি ক্যাডম্যান ১৪ দফার একটি সমালোচনা উপস্থাপন করে বলেন, আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম বলেছেন, এ যাবতকালে বিশ্বে যুদ্ধাপরাধ বিষয়ক যত বিচার হয়েছে তার চেয়েও নিরপেক্ষ এবং স্বচ্ছ হবে তাদের ট্রাইব্যুনালের বিচার। এর মাধ্যমে আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম ট্রাইব্যুনালের অতিশয় উচ্চ মান নির্ধারণ করে দিলেন। তাহলে এখন সে অনুযায়ী বিচারপতিররা বিচার কাজ সম্পন্ন করুক।
সরকারের পক্ষ থেকেও ইতোপূর্বে বারবার বলা হয়েছে, তাদের বিচার এমন স্বচ্ছ এবং নিরপেক্ষ হবে যে তা বিশ্বের জন্য একটি উদাহরণ হবে। আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সাথে বৈঠক করেছেন যাতে বিচারে আন্তর্জাতিক মান মেনে চলা হয়। এ থেকে বোঝা যায়, বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধের বিচার ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্ট (আইসিসি), ইন্টারন্যাশনাল এডহক ট্রাইব্যুনালস এবং বিশ্বে আরো যত এ জাতীয় ট্রাইব্যুনাল গঠিত হয়েছে তার সবগুলোর মানকে ছাড়িয়ে যাবে বাংলাদেশের ট্রাইব্যুনাল।
সরকারের পক্ষ থেকে ট্রাইব্যুনালকে আন্তর্জাতিক মানের করার বিষয়ে যতই ঘোষণা দেয়া হোকনা কেন বাস্তবে কিন্তু তার বিপরীতটা দেখা যাচ্ছে। যেমন আসামী পক্ষের প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাককে ১৯ সেপ্টেম্বর রাজপথে গাড়ি পোড়ানোর ঘটনায় জড়ানো হয়েছে। অথচ ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক ঐ ঘটনার সময় আমার সাথে ইউরোপে অবস্থান করছিলেন এবং জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠকে ব্যস্ত ছিলেন।
তাছাড়া দৈনিক নিউএজ পত্রিকায় কর্মরত বৃটিশ সাংবাদিক ডেভিড বার্গমান গত ৩ অক্টোবর ট্রাইব্যুনাল বিষয়ে একটি প্রবন্ধ লেখার কারণে তিনিসহ ঐ পত্রিকার সম্পাদক এবং প্রকাশকের বিরুদ্ধে কারণ দর্শানোর জন্য বলা হয়েছে, কেন তাদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ আনা হবে না মর্মে আগামী ২৩ তারিখ আদালতে হাজির হয়ে তাদের জবাব দিতে বলা হয়েছে। এ থেকে বোঝা যায় তারা স্বাধীন গণমাধ্যমের ওপর প্রভাব বিস্তার করতে চায় এবং ট্রাইব্যুনালের বিরুদ্ধে যে কোন ধরনের সমালোচনার টুটি চেপে ধরতে চায়।
তিনি বলেন, ট্রাইব্যুনালের বিচারপতিগণ একসময় বলেছিলেন এটি একটি দেশীয় আদালত এবং আন্তর্জাতিক মান বজায়ের দরকার নেই। যদি এটি দেশীয় আদালত হয় তাহলে বাংলাদেশের অপরাধ বিচারের জন্য প্রচলিত আদালতে যেসব বিধি-বিধান মেনে চলা হয়, সেগুলো এখানে প্রয়োগ করতে তো কোন বাধা থাকার কথা নয়। সেজন্য সাংবিধানিক এবং মৌলিক অধিকার হরণ করার কোন যুক্তি থাকতে পারে না। হাইকোর্টে মধ্যবর্তী আপিলে তো কোন বাধা থাকা উচিত নয়। দোষী সাব্যস্ত হবার পর আপীলের সুযোগ রাখার কথা বলে সরকারের পক্ষ থেকে জিগির তোলা হয়েছে যে, এ ব্যবস্থা নুরেমবার্গ ট্রায়াল এবং টোকিও ট্রাইব্যুনালেও ছিল। কিন্তু এ দাবি একেবারেই অগ্রহণযোগ্য। নুরেমবার্গ ট্রায়াল সম্পর্কে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি বলেছিলেন, ''আদিমকালে পরাজিত শত্রু এবং তাদের নেতাদের যেভাবে বর্বর কায়দায় হত্যা করা হত তারই একটি নতুন রূপ হচ্ছে এ বিচার। ''
টবি ক্যাডম্যান বলেন, আসামী পক্ষকে বর্তমানে যেসব অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে ঠিক একই অবস্থায় তারা অপরাধী সাব্যস্ত হবার পরে যদি উচ্চ আদালতে যাবার সুযোগ পান তাহলে সেখান থেকেও তারা কোন লাভবান হতে পারবে না। যুদ্ধাপরাধের দায়ে গ্রেফতারকৃতদের মধ্য থেকে মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে সর্ব প্রথম গত ৩ অক্টোবর অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের জবাব তৈরির জন্য আসামী পক্ষকে মাত্র ২১ দিন সময় দেয়া হয়েছে এবং আগামী ৩০ অক্টোবর মাওলানা সাঈদীর বিচার শুরু হবে।
তিনি বলেন, বর্তমান পিরোজপুর জেলায় সাঈদীর বিরুদ্ধে অপরাধ সংঘটনের স্থান হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। রাজাকার বাহিনীর নেতৃত্বদানকালে তিনি এসব অপরাধ করেছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে। সাঈদীর বিরুদ্ধে মোট ২০ টি অভিযোগ আনা হয়েছে। এর মধ্যে তিনটি গণহত্যাজনিত। বাকী ১৭টির মধ্যে রয়েছে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ, খুন, ধর্ষণ, অগ্নি সংযোগ, নির্যাতন এবং অপহরণ প্রভৃতি। তিনি আরো বলেন, মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে আনীত এসব অভিযোগের বিরুদ্ধে আসামী পক্ষ থেকে অনেকগুলো আপত্তি উত্থাপন করা হয়েছে। বিশেষ করে ১৯৭৩ সালের আইনের ধারায়ও অপরাধের যে সংজ্ঞা দেয়া হয়েছে তার আওতায়ও পড়েনা সাঈদীর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো। ২০টির মধ্যে ৯টি অভিযোগের কোন সুস্পষ্ট দিন তারিখ উল্লেখ নেই। চারটি অভিযোগ আবার এমন তা কবে কখন সংঘটিত হয়েছে সে বিষয়ে ধারে কাছেও কোন সন তারিখ উল্লেখ করা হয়নি। শুধুমাত্র বলা হয়েছে উক্ত অপরাধ তিনি ১৯৭১ সালে করেছেন।
টবি ক্যাডম্যান আরো বলেন, সাঈদীর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ বিষয়ে মন্তব্য জানাতে বলা হয় তাকে। মাওলানা সাঈদী এজন্য আইনজীবীর সাথে নিয়ম অনুযায়ী কথা বলতে চাইলেও তাকে কথা বলতে দেয়া হয়নি এবং শেষে তিনি তাৎক্ষণিকভাবে সেখানেই বক্তব্য দেন। বক্তব্যে তিনি তার বিরুদ্ধে আনা সকল অভিযোগকে মিথ্যা, ভিত্তিহীন এবং শতাব্দীর সেরা মিথ্যাচার বলে আখ্যায়িত করেন। তিনি নিজেকে সম্পূর্ণ নিদোর্ষ দাবী করে বলেন, তার সাথে কখনো রাজাকার, আল বদর আল শামস বা পাকিস্তান বাহিনীর কোন সম্পর্ক ছিল না।
বলা হচ্ছে, ১৯৭৩ সালের আইনে যেসব অপরাধ উল্লেখ করা হয়েছে সেগুলো প্রচলিত আন্তর্জাতিক আইনের অংশ। কিন্তু প্রচলিত আন্তর্জাতিক আইনে অপরাধ এবং অপরাধের উপাদানের যে সংজ্ঞা প্রদান করা হয়েছে বাংলাদেশের ১৯৭৩ সালের আইনে সেসব আইনের কোন সুস্পষ্ট অবস্থান, সংজ্ঞা এবং উপাদান উল্লেখ করা হয়নি। যেমন, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ, গণহত্যা, অপহরণ, এসব বিষয়ে সুস্পষ্ট সংজ্ঞা নেই এবং অপরাধের উপাদান বিষয়েও উল্লেখ নেই।
বিচার বিষয়ে টবি ক্যাডম্যান ১৪ দফার একটি সমালোচনা উপস্থাপন করেছেন যার মধ্যে রয়েছে, যারা স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন তাদেরকে বিচার থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে বিচারের জন্য দাড় করানো হয়েছে তাদেরকে সাংবিধানিক মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। আগে থেকে কোন কিছু না জানিয়ে এবং আইনজীবীর অনুপস্থিতিতে অভিযুক্তদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ট্রাইব্যুনালের কোন সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করার কোন ব্যবস্থা নেই। চ্যালেঞ্জ করলে বিচারপতি নিজেই তার নিজের সিদ্ধান্ত পুনরায় বিবেচনা করবেন। অন্য কেউ নয়। ১৯৭৩ সালের আইন, বিচারপতি নিয়োগ এবং ট্রাইব্যুনালের ক্ষমতা এবং আওতা নিয়ে কোন চ্যালেঞ্জ করা যাবে না। আসামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের পর আসামী পক্ষের আইনজীবী মাত্র তিন সপ্তাহ সময় পাবেন তার জবাব তৈরির জন্য। অভ্যন্তরীণ বিচার ব্যবস্থায় যেসব বিধি বিধান প্রয়োগ করা হয় তা এখানে অনুপস্থিত। অভিযুক্ত হবার আগ পর্যন্ত আপীলের কোন সুযোগ নেই।
__._,_.___