Banner Advertiser

Monday, February 27, 2012

[mukto-mona] আওয়ামী লীগের ইতিহাস ॥ সোহরাওয়ার্দী থেকে শেখ হাসিনা part-2 !!!!!!!



আওয়ামী লীগের ইতিহাস ॥ সোহরাওয়ার্দী থেকে শেখ হাসিনা
এম এ বার্ণিক
(পূর্ব প্রকাশের পর)
এ আধিপত্যকে ভর করে তৎকালীন পাকিস্তানের প্রশাসকরা পূর্ববাংলার (বর্তমান বাংলাদেশের) মানুষের ওপর ব্যাপকভাবে বৈষম্য প্রদর্শন শুরু করেন। সেই বৈষম্যের বেড়াজালমুক্ত করে নতুন রাজনৈতিক ধারা সৃষ্টিতে ওয়ার্কার্স ক্যাম্প বিরাট ভূমিকা পালন করে।
ঢাকার ১৫০ মোগলটুলীস্থ মুসলিম লীগের পার্টি অফিসটি 'ওয়ার্কার্স ক্যাম্প' নাম ধারণ করে ১৯৪৮ সালে একটি সম্মেলন করে। এ সময় শামসুল হক এবং শেখ মুজিবুর রহমান ১৫০ নম্বর মোগলটুলীর পার্টি অফিসটিকে ওয়ার্কার্স ক্যাম্প নামে অভিহিত করে সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধির লক্ষ্যে মুসলিম লীগ কর্মী সম্মেলন আহ্বান করেছিলেন। এ জন্য চাঁদা ওঠাতে রসিদ বইয়ের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। এ সময় বঙ্গীয় মুসলিম লীগের সভাপতি মওলানা আকরম খাঁ ওয়ার্কার্স ক্যাম্প কর্মীদেরকে রাষ্ট্রদ্রোহী আখ্যা দিয়ে রসিদ বই সরবরাহে বিরত থাকেন। এ অবস্থায় ওয়ার্কার্স ক্যাম্প গ্রুপ কেন্দ্রীয় মুসলিম লীগ সভাপতি খালেকুজ্জামানের নিকট অভিযোগ উত্থাপন করেও কোন ফল পাননি। মওলানা আকরম খাঁর সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি মূলত তৎকালীন শাসকদলের অধিকাংশ কেন্দ্রীয় নেতার মধ্যে বিদ্যমান ছিল। ওয়ার্কার্স ক্যাম্পের কর্মীরা আবুল হাশিমের প্রতি বলিষ্ঠভাবে শ্রদ্ধাশীল থাকাটাও আকরম খাঁ প্রমুখের পছন্দনীয় ছিল না। এ সব বিরোধ ডাল-পালা বিস্তার করে ১৫০ নম্বর মোগলটুলীতে মুসলিম লীগ ভেঙে আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠনের পরিবেশ তৈরি হয়। ওয়ার্কার্স ক্যাম্পের কনভেনর ছিলেন শামসুল হক এবং ক্যাম্প ইনচার্জ ছিলেন শওকত আলী। ক্যাম্প অফিসে সার্বক্ষণিক অবস্থান নিশ্চিত করার জন্য শওকত আলী ক্যাম্প অফিস সন্নিবেশস্থলে নিজের বাসস্থান নেন। ওয়ার্কার্স ক্যাম্প অফিসের সাথে শওকত আলীর বাসা সেখানকার নেতাকর্মীদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে। একটি স্বতন্ত্র দল গঠনের ক্ষেত্রে অর্থাৎ আওয়ামী মুসলিম লীগ নামক দলটি প্রতিষ্ঠার পেছনে ওয়ার্কার্স ক্যাম্পের সাথে শওকত আলীর বাসস্থানের ঐতিহাসিক গুরুত্ব অনিবার্য হয়ে ওঠে।

টাঙ্গাইলের উপনির্বাচনে শামসুল হকের বিজয়ের মধ্যদিয়ে ওয়ার্কার্স ক্যাম্পের নেতারা নতুন দল গঠনে অনুপ্রাণিত হন

মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীকে পূর্ববাংলায় অপাঙক্তেয় করার জন্য তাঁর বিরুদ্ধে নির্বাচনী ত্রুটির অপরাধ এনে গভর্নরের এক আদেশে তাঁর সদস্যপদ খারিজ করে তাঁকে ১৯৫০ সাল অবধি নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার অযোগ্য ঘোষণা করা হয়। বিষয়টি ওয়ার্কার্স ক্যাম্পের নেতৃবর্গকে ব্যথিত করে তোলে। উক্ত শূন্য আসনে ২৬ এপ্রিল ১৯৪৯ তারিখে উপনির্বাচনের ঘোষণা দিয়ে মুসলিম লীগ থেকে খুররম খান পন্নীকে প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করানো হয়। উল্লেখ্য, খুররম খান পন্নীও নির্বাচনী ত্রুটির জন্য একইভাবে প্রার্থী হওয়ার অযোগ্য হয়েছিলেন। কিন্তু নূরুল আমীন সরকার নির্লজ্জভাবে খুররম খান পন্নীর নিষেধাজ্ঞা তুলে তাঁকে নির্বাচনে প্রার্থী করে। কিন্তু মওলানা ভাসানীর ওপর নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখে। এতে জনমনে ক্ষোভের সঞ্চার হয়। এ অবস্থায় ওয়ার্কার্স ক্যাম্পের নেতা শামসুল হককে খুররম খান পন্নীর বিরুদ্ধে প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করানোর জন্য শওকত আলী, আজিজ আহমদ, ইয়ার মোহাম্মদ খান, খন্দকার মোশতাক আহমদ, হযরত আলী প্রমুখ নেতৃবর্গ সিদ্ধান্ত নেন।
শেষ পর্যন্ত শামসুল হক স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে টাঙ্গাইলে উপনির্বাচন করেন। উপনির্বাচনকে কেন্দ্র করে ১৫০ নম্বর মোগলটুলীস্থ ওয়ার্কার্স ক্যাম্প কর্মীরা সর্বতোভাবে শামসুল হকের পক্ষে কাজ করার জন্য এগিয়ে আসেন। খন্দকার মোশতাক আহমদ (পরবর্তীকালে বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের সাথে জড়িত) আলোচ্য নির্বাচনের মূল সংগঠকদের অন্যতম ছিলেন। অন্যান্য সক্রিয় সহযোগীরা ছিলেনÑকামরুদ্দীন আহমদ, শওকত আলী, আজিজ আহমদ, শামসুজ্জোহা, আলমাস আলী, আবদুল আউয়াল, হযরত আলী প্রভৃতি।
নির্বাচন উপলক্ষে মুসলিম লীগের মুখপত্র দৈনিক আজাদ শামসুল হকের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করে নিম্নোক্ত সম্পাদকীয় মতামত প্রকাশ করে :
"আমরা অবশ্য শামসুল হক সাহেবের এই মুসলিম লীগ বিরোধিতায় বিস্মিত হইনি। তিনি আগেও যত না ছিলেন সত্যিকার মুসলিম লীগমনা কর্মী, তার চেয়েও বেশি ছিলেন আবুল হাশিম সাহেবের অন্ধ ভক্তশিষ্য। আবুল হাশিমের হঠকারিতাপূর্ণ কীর্তিকলাপের সাথে পূর্ব-পাকিস্তানের জনসাধারণের বিশেষ করে মুসলিম লীগারদের পরিচয় যথেষ্টই আছে, কাজেই সে সম্পর্কে এখানে পুনরালোচনা অনাবশ্যক। সেই আবুল হাশিম সাহেবের অন্ধ ভক্তশিষ্য হঠকারিতার বশবর্তী হয়ে মুসলিম লীগ নির্দেশ অমান্য করে চলবেন, তাতে বিস্ময়ের বিষয় আর কি থাকতে পারে। টাঙ্গাইলের ভোটারদের কাছে আমাদের আরজ : এখনো পূর্ব-পাকিস্তান সর্বাংশে বিপদমুক্ত হয়নি। এখনো বাইরের শত্রুদল পাকিস্তানের নাম-নিশানা মুছে ফেলার জন্য সুযোগের অপেক্ষায় ওঁৎপেতে আছে এবং পাকিস্তানপন্থীদের মধ্যে অন্তর্বিরোধ ও ভাঙ্গন সৃষ্টির মধ্যদিয়েই যে সে সুযোগ আসবে, এরা তা জানে। কাজেই আমরা ভোটারদের উদ্দেশে সতর্কবাণী উচ্চারণ করিÑসাধু সাবধান" (সূত্র : দৈনিক আজাদ, ২৩ এপ্রিল ১৯৪৯)।
নির্বাচনে শামসুল হক বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে মুসলিম লীগ সরকার শামসুল হক এবং তাঁর সহযোগী খন্দকার মোশতাক আহমদ ও স্থানীয় বদিউজ্জামানের বিরুদ্ধে মামলা ঠুকে দেয়। সাপ্তাহিক সৈনিক পত্রিকায় শামসুল হকের বিজয়ের তাৎপর্য সম্পর্কে একটি সম্পাদকীয় নিবন্ধ প্রকাশিত হয়। এতে নিম্নোক্ত বক্তব্য তুলে ধরা হয় :
"যা আশংকা করা হয়েছিল, তা-ই হলো। টাঙ্গাইলের উপনির্বাচনে লীগ প্রার্থী খুররম খান পন্নী হেরে গেছেন। তাঁকে বহু ভোটে পরাজিত করে স্বতন্ত্র প্রার্থী শামসুল হক পূর্ববঙ্গ আইন সভার সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর, একটা উপনির্বাচনে, পাকিস্তানের জাতীয় প্রতিষ্ঠান মুসলিম লীগের এ পরাজয় ঘটনাপ্রবাহের অনিবার্য গতিরই দিকনির্দেশ করছে।
...বাতাস কোন দিকে বইছে, ঘড়ির কাঁটা কোন দিকে ঘুরছে, মুসলিম লীগ নেতা ও মুসলিম লীগ সরকারের তা বোঝা উচিত। টাঙ্গাইলের উপনির্বাচনের পরও দেয়ালের লেখা পড়তে তাদের কষ্ট হওয়ার কথা নয়। এখনো যদি দুই অন্ধের চোখ না খোলে, বালতিতে মুখ গুঁজে যদি মনে করে, বিপদের কোন সম্ভাবনা নেই, আমাদের নসিবই খারাপ বলতে হবে" (সূত্র : সাপ্তাহিক সৈনিক, ৬ মে ১৯৪৯)।
টাঙ্গাইলের উপনির্বাচনে মুসলিম লীগ প্রার্থীর পরাজয় এবং শামসুল হকের জয় সে সময় সর্বমহলে ব্যাপক আলোচিত হয়। মূলত টাঙ্গাইল উপনির্বাচনে পরাজয়ের পর দেশের রাজনীতিতে মুসলিম লীগ বলয়ের বাইরে নতুন ধারা সৃষ্টি হওয়ার সুস্পষ্ট ইঙ্গিত পাওয়া যায়। মুসলিম লীগের মুখপত্র দৈনিক আজাদের সম্পাদকীয়তে এ ব্যাপারে যে মতামত প্রকাশিত হয়েছিল প্রসঙ্গত তা নিম্নে উদ্ধৃত করা হলো :
"টাঙ্গাইলের উপনির্বাচনে মুসলিম লীগ মনোনীত প্রার্থী হেরে গিয়েছেন। এটি মুসলিম লীগ নির্বাচনের ইতিহাসে এক অভিনব এবং অভাবিতপূর্ব ব্যাপার। ... জাতির আশা-আকাক্সক্ষার প্রতীক এবং জাতির একমাত্র বলে বহুকীর্তিত মুসলিম লীগের ভাগ্যে এ কলঙ্কস্পর্শ অত্যন্ত শোচনীয় ঘটনা। এক হিসেবে একে পূর্ব-পাকিস্তানের রাজনৈতিক ইতিহাসের অন্যতম প্রধান মর্মান্তিক ব্যাপার বলে ... দেশের মানুষ স্মরণ করবে।
...একটু তলিয়ে দেখলেই একটা সত্য সকলের নিকট পরিষ্কার হয়ে যাবে যে, পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর মুসলিম লীগের জীবন ও কার্যে এরূপ কতকগুলো ব্যাপার সংঘটিত হয়েছে, যার ফলে মুসলিম লীগ নিজের জনপ্রিয়তা এবং আবেদনের অনিবার্যতা অনেকখানি হারিয়ে ফেলেছে। ... মুসলিম লীগ আজ সর্বত্র সরকারি ইচ্ছা ও অনিচ্ছার বাহন হয়ে দাঁড়িয়েছে, জনগণের ইচ্ছা-অনিচ্ছার মুসলিম লীগ আর বাহন নয়। এরই দরুন মুসলিম লীগ আজ জনপ্রিয়তা হারাতে বসেছে।
... টাঙ্গাইলের পরাজয় মুসলিম লীগের পরাজয় নিশ্চয়ই কিন্তু এটা এক হিসেবে সরকারের ওপর অনাস্থা। নির্বাচনী প্রচার কাজে পাঁচজন মন্ত্রীর উপস্থিতিও এর ফলাফল প্রভাবান্বিত করতে পারল না। ঘটনার ইঙ্গিত আজ সকলকে গভীরভাবে ভেবে দেখতে হবে। টাঙ্গাইলের পরাজয়কে বিপদসংকেত বলে সকলকে আজ গ্রহণ করতে হবে। মুসলিম লীগের বিরুদ্ধে উত্তোলিত বিদ্রোহের পতাকা একদিন সমগ্র পাকিস্তানকে আচ্ছন্ন করবে কিনা, মুসলিম লীগ এবং পাকিস্তান বিচ্ছিন্ন ও বিধ্বস্ত হবে কিনা, এ কথাও হয়তো এখন থেকেই চিন্তা করতে হবে" (সূত্র : দৈনিক আজাদ, ৩ মে ১৯৪৯)।
মুসলিম লীগের মুখপত্র দৈনিক আজাদের উপরোলিখিত সম্পাদকীয় নিবন্ধের শেষের দিকে টাঙ্গাইলের উপনির্বাচনে মুসলিম লীগের পরাজয় এবং শামসুল হকের বিজয়ের ঘটনায় মুসলিম লীগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার সম্ভাবনার কথা পরিষ্কারভাবে বলা হয়েছে। অর্থাৎ ওয়ার্কার্স ক্যাম্প নেতা শামসুল হকের উপনির্বাচনে বিজয়ের ঘটনা তৎকালীন রাজনৈতিক বাস্তবতায় নতুন রাজনৈতিক শিবির গড়ে ওঠার পক্ষে সহায়ক হবে বলেই তখন সকলের মনে বদ্ধমূল ধারণার জন্ম দেয়। ওয়ার্কার্স ক্যাম্পের তরুণ নেতাকর্মীরা তো তেমনটাই প্রত্যাশা করেছেন।
টাঙ্গাইলের উপনির্বাচনের পরই নতুন দল গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করে দেন ওয়ার্কার্স ক্যাম্পের নেতাকর্মীরা। শামসুল হক সঙ্গত কারণেই এ প্রক্রিয়ায় বহমান তরঙ্গের শীর্ষে ছিলেন। ১৬ এপ্রিল থেকে ২৩ জুনÑব্যবধান মাত্র ২ মাস ৭ দিন। এরই মধ্যে একটি নতুন দল গঠনের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়ে গেল। এভাবেই 'মুসলিম লীগ' থেকে 'আওয়ামী মুসলিম লীগ' নামে নতুন ধারার রাজনীতির সূচনা হয়।
কিন্তু শাসক দল এ ঘটনা হজম করতে পারেনি। তারা শামসুল হকের বিজয় ঠেকাতে না পারলেও তাঁকে আইন-সভার বৈঠকে যোগদান ঠেকাতে উঠে-পড়ে লেগে যায়। তাঁর বিরুদ্ধে একটি সাজানো মামলা দায়ের করা হয়। মামলার পটভূমি দাঁড় করানোর জন্য কথিত একটি প্রচারপত্রকে ভিত্তি করা হয়। প্রচারপত্রটি হযরত আলী নামক শামসুল হকের একজন সমর্থক উপনির্বাচনের সময় বিলি করার পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। এ প্রচারপত্রে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর স্বাক্ষর ছিল।
এখানে আরও উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, উপনির্বাচনের সময় মওলানা ভাসানী আসামের ধুবড়ি জেলখানায় আটক ছিলেন। উল্লেখিত হযরত আলী ধুবড়িতে গিয়ে শামসুল হকের পক্ষে একটি খসড়া প্রচারপত্রে মওলানা ভাসানীর স্বাক্ষর গ্রহণ করেন। এতে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি নেয়া হয়নি। মওলানা ভাসানীর স্বাক্ষর সংবলিত প্রচারপত্র বিলি করার মধ্যে পাকিস্তান সরকার বে-আইনি কারবার খুঁজে পায়। এটিকে 'জাল' স্বাক্ষর বলে উল্লেখ করে শামসুল হকের বিরুদ্ধে বিশেষ ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করা হয়। ট্রাইব্যুনাল সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে যে, মামলাটি নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত শামসুল হক আইন-সভায় যোগদান করতে পারবেন না। স্পষ্টত পাকিস্তান সরকারের কারসাজিতে নির্বাচিত হয়েও শামসুল হক পূর্ব-পাকিস্তান ব্যবস্থা সভায় যোগদান করতে পারেননি।
১৯৫০ সাল পর্যন্ত ট্রাইব্যুনালে মামলা চলে। অবশেষে প্রকাশিত রায়ে সরকারের ইচ্ছারই প্রতিফলন ঘটে। শামসুল হকের সদস্যপদ বাতিল ঘোষণা করা হয়। ১৯৫৪ সালের সাধারণ নির্বাচনের আগে এ আসনটি এবং আরও কয়েকটি আসনে উপনির্বাচন অনুষ্ঠানে শাসকদল সাহস পায়নি। ইতোমধ্যে পানি অনেক দূর গড়িয়ে যায়।

আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রাথমিক সংগঠন প্রক্রিয়া

'আওয়ামী মুসলিম লীগ' নামক দলটি গঠনের পেছনে ঢাকার ১৫০ মোগলটুলীতে বসবাসকারী এবং ওয়ার্কার্স ক্যাম্পের নেতা শওকত আলীর প্রাথমিক ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। "তিনি দবিরুল ইসলামের মামলা পরিচালনার জন্য হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীকে ট্রাঙ্কল করে ঢাকা আসার অনুরোধ জানান এবং তাঁর অনুরোধ মতো হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী জুন মাসে (১৯৪৮) ঢাকা এসে ক্যাপ্টেন শাহজাহানের 'নূরজাহান ভিলাস্থ' বাসায় ১১ দিন অবস্থান করেন। মামলা শেষ হওয়ার পর সোহরাওয়ার্দী কলকাতা ফেরত যাওয়ার ব্যবস্থা করতে বলায় শওকত আলী তাঁকে বলেন যে, তাড়াতাড়ি কলকাতা ফেরত না গিয়ে তাঁর ঢাকাতেই থাকা উচিতÑকারণ, ঢাকাতে না থেকে শুধু যাওয়া-আসা করলে তাতে কোন সমস্যার সমাধান হবে না। সোহরাওয়ার্দী এর উত্তরে শুধু তাদেরকে মুসলিম লীগের রাজনীতি বর্জন করে তদপরিবর্তে উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের 'আওয়ামী মুসলিম লীগের' মতো একই নামে একটি নতুন প্রতিষ্ঠান গঠনের পরামর্শ দেন" (সূত্র : পূর্ব-বাংলার ভাষা-আন্দোলন ও তৎকালীন রাজনীতি, ১ম খ- : ঢাকা, সূবর্ণ, ১৯৭৯ : পৃ. ২৩৮)। উল্লেখ্য, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর অনুপ্রেরণায় উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ নেতা মানকি শরিফের পীর সাহেব সে বছর (১৯৪৮ সালে) 'আওয়ামী মুসলিম লীগ' নামে একটি দল গঠন করে তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক আন্দোলন শুরু করেছিলেন। সোহরাওয়ার্দী সাহেব একইভাবে পূর্ব-পাকিস্তানে নতুন একটি রাজনৈতিক দল গঠন করার জন্য শওকত আলীকে অনুপ্রেরণা দেন।
শওকত আলীর আগ্রহ এবং সোহরাওয়ার্দীর উৎসাহ ওয়ার্কার্স ক্যাম্পের নেতাকর্মীদেরকে আলোড়িত করে। ওয়ার্কার্স ক্যাম্প নেতা-কর্মীরা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে স্থির করেন যে, একটি কর্মী সম্মেলনের মাধ্যমে মুসলিম লীগ থেকে সাংগঠনিক প্রক্রিয়ায় বের হয়ে নতুন প্যাটফর্ম গড়ে তোলা যেতে পারে। এ সময় মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী আসামের ধুবড়ি জেল থেকে মুক্তিলাভের পর ঢাকা আসেন এবং আলী আমজাদ খানের বাসায় অবস্থান করছিলেন। নতুন রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম গড়ে তোলার স্বপ্নে বিভোর ওয়ার্কার্স ক্যাম্পের কয়েকজন নেতা আমজাদ আলী খানের বাসায় গিয়ে এ ব্যাপরে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর সাথে আলোচনায় মিলিত হন। ওয়ার্কার্স ক্যাম্প নেতা শওকত আলী সে-সময়ে মওলানা ভাসানীকে একটি কনফারেন্সের মাধ্যমে নতুন সংগঠনের জন্য প্রস্তুতি নেয়ার প্রয়োজনীয়তার কথা জানান। এতে মওলানা ভাসানীর ইতিবাচক সাড়া পেয়ে তাঁরা সোৎসাহে ফিরে আসেন এবং ১৫০ নম্বর মোগলটুলীস্থ ওয়ার্কার্স ক্যাম্প অফিসে একটি পরামর্শ সভা আহ্বান করেন। এ সভায় ওয়ার্কার্স ক্যাম্পের নেতাকর্মী ছাড়াও টাঙ্গাইল উপ-নির্বাচনের সময় যারা মনে-প্রাণে কাজ করেছেন তাদের মধ্যের অনেকে যোগদান করেন। এ ধরনের বক্তিবর্গের মধ্যে ছিলেন কুষ্টিয়ার শামসুদ্দীন আহমদ, চেম্বার অব কমার্সের সাখাওয়াত হোসেন এবং নোয়াখালীর (বর্তমান ফেনীর) আজিজ আহমদ, খোন্দকার আবদুল হামিদ প্রমুখ। বৈঠকে মওলানা ভাসানীও যোগদান করেন।
পরামর্শ বৈঠকটি একান্তভাবে ওয়ার্কার্স ক্যাম্প নেতৃবর্গের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে বলে কাক্সিক্ষত ছিল। কার্যত বাইরের কিছু শুভাকাক্সক্ষী ও উৎসাহী নেতা সেদিন উক্ত বৈঠকস্থলে এসে হাজির হলে ওয়ার্কার্স ক্যাম্পের কয়েকজন নেতার মধ্যে বিরূপ ধারণার সৃষ্টি হয়। এঁদের মধ্যে শওকত আলী অন্যতম। তিনি রাগে ও বিরক্ত হয়ে সম্মেলনস্থল ত্যাগ করে উপরের তলায় চলে যান এবং সম্মেলনের সাথে সম্পর্কচ্ছেদের কথাও চিন্তা করেন। (চলবে)

লেখক: সভাপতি, ইতিহাস গবেষণা সংসদ



__._,_.___


****************************************************
Mukto Mona plans for a Grand Darwin Day Celebration: 
Call For Articles:

http://mukto-mona.com/wordpress/?p=68

http://mukto-mona.com/banga_blog/?p=585

****************************************************

VISIT MUKTO-MONA WEB-SITE : http://www.mukto-mona.com/

****************************************************

"I disapprove of what you say, but I will defend to the death your right to say it".
               -Beatrice Hall [pseudonym: S.G. Tallentyre], 190




Your email settings: Individual Email|Traditional
Change settings via the Web (Yahoo! ID required)
Change settings via email: Switch delivery to Daily Digest | Switch to Fully Featured
Visit Your Group | Yahoo! Groups Terms of Use | Unsubscribe

__,_._,___