এসিডে দগ্ধ রোগী এলেই দেখতে যাই। নিজের বিষয় না হলেও সময় পেলেই দেখে আসি, কথা বলি, জানার চেষ্ঠা করি, সান্তনা দিই। আমাদের থানার একটি মেয়ে এসিড সন্ত্রাসের শিকার হয়েছিল। নিজের থানার হওয়াতে বেশি করে যেতাম। ভাগ্য ভাল মেয়েটির মুখের বেশ অংশ পুড়ে গেলেও চেহারা একেবারে বিকৃত হয়ে যায়নি।
সুস্থ হওয়ার পর দাওয়াত দিয়েছিলাম। বাসায় এসেছিল। ঘটনা জানতে চাইলাম।
একজনের সাথে গভীর প্রেম ছিল। গভীর মানে গভীরই! প্রেমিক ছেলেটি রাজনীতি করে সাথে নানা রকম খারাপ কাজের সাথে জড়িত। শুরুতে না জানলেও আস্তে আস্তে বুঝতে পেরেছে ছেলেটি ভাল নয়। সবকিছু জেনে, পরিবার রাজী হবেনা বুঝতে পেরে সরে আসতে চাইল। ছেলেটি মেনে নেয়না। প্রথমে অনুরোধ পরে হুমকি-ধমকি এরপর বেশ কিছুদিন চুপ। এরমধ্যে মেয়েটি আরেক ছেলের সাথে জড়িয়ে পড়ে। সেটা শুনে আগের ছেলেটি কঠিন প্রতিশোধ নেয় এসিড মেরে।
বাংলাদেশের ৯০% এসিড সন্ত্রাসের পিছনে দায়ী অবৈধ প্রেম, অশ্লীলতা, অনৈতিক সম্পর্ক ইত্যাদি। এসিড সন্ত্রাস থেকে সকলকে রক্ষা করতে হলে সর্বপ্রথম প্রয়োজন সর্বস্তরে নৈতিক শিক্ষার প্রসার, অশ্লীলতার সকল পথ বন্ধ করা।
অথচ একদিকে সরকার ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষার নামে নৈতিক শিক্ষার সকল পথ বন্ধ করে দিচ্ছে, অন্যদিকে ভারতীয় নগ্ন ছবির নায়িকা পাওলী দাম, ঋতুপর্ণা ও লকেট চ্যাটার্জিদের আনা হচ্ছে এসিডদগ্ধ নারীদের সহায়তা করার নামে ফ্যাশন শো করতে!আওয়ামী লীগ এম.পি. আসাদুজ্জামান নূরের দেশটিভি'র সহযোগীতায় আগামী ৩ ফেব্রুয়ারী ঢাকায় অনুষ্ঠিত সেই শো'তে অংশগ্রহণ করবে আরো অনেক র্যাম্প মডেল!
আশ্চর্য! যারা নগ্ন শরীর দেখিয়ে যুবক-যু্বতীদের নৈতিক চরিত্র ধ্বংস করে দিয়ে অনৈতিক কর্মকান্ডে লিপ্ত হতে উৎসাহ দেয়, যাদের উলঙ্গপনা দেখেই যুবসমাজ নারীকে লোভনীয় মাংসপিন্ড মনে করে, এরপর না পেলে নানা রকম সহিংসতা, নির্যাতন ও এসিড সন্ত্রাসে লিপ্ত হয়, যাদের কারণে নারী এসিড সন্ত্রাসের শিকার হয়, তারাই নাকি সেই এসিডদগ্ধ নারীকে সাহায্য করবে তাদের সেই নগ্ন শরীর দেখিয়ে! অর্থাৎ নগ্ন শরীর দেখিয়ে প্রথমে নারীকে এসিডে দগ্ধ করার ব্যবস্থা করা হবে, আবার সেই নগ্ন শরীর দেখিয়ে এসিডদগ্ধ নারীকে সাহায্য করা হবে...! কি বিকৃত তাদের চিন্তাধারা!
নারীকে এসিড সন্ত্রাস থেকে রক্ষা করতে হলে প্রয়োজন বাংলাদেশকে পাওলী দাম, ঋতুপর্ণা, লকেট চ্যাটার্জির মতো নগ্ন ছবির নায়িকা মুক্ত করা। তা না করে উল্টো তাদেরকে আনা হচ্ছে এসিড সন্ত্রাসের শিকার নারীদের সহযোগীতার নামে! ওই নায়িকারা কি পারবে এসিডে দগ্ধ নারীর আগের শরীর ফিরিয়ে দিতে? পারবে সেই নারীর সুন্দর চেহারা ফিরিয়ে দিতে? পারবে সেই নারীর সারাজীবনের কষ্ট দূর করতে? তাহলে কি সহযোগীতা করা হবে?
সবকিছুই আসলে ব্যবসা। ফ্যাশন শো'র নামে নগ্নতা ও অশ্লীলতা নারীর প্রতি যুবকদের আরো সহিংস করে তুলবে, আরো অনেক নারী সহিংসতার শিকার হবে, চরিত্র ধ্বংস তো হবেই। ওরা ব্যবসা করবে আর ক্ষতি যা হওয়ার আসলে নারীরই হচ্ছে, এদেশের যুবক-যুবতীদের হচ্ছে। তাই সতর্ক হতে হবে। নৈতিক চরিত্র ধ্বংসের এসব কর্মকান্ড বন্ধ করতে হবে।
__._,_.___