"If it was in USA or BRITAIN , Khaleda Zia would have been in Jail for her irresponsible comment " --- High Court.
সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ড বিষয়ে আদালতবিরোধীদলীয় নেতা রায় দিয়ে দিয়েছেন
তাঁর বক্তব্য দায়িত্বজ্ঞানহীন নিজস্ব প্রতিবেদক
তাঁর বক্তব্য দায়িত্বজ্ঞানহীন নিজস্ব প্রতিবেদক
সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ড নিয়ে 'জজ মিয়া প্রস্তুত', 'জজ মিয়া খোঁজা হচ্ছে'- এ ধরনের অনুমাননির্ভর সংবাদ প্রকাশ না করার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এ জন্য ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে তথ্যসচিবকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। এ ছাড়া সুনির্দিষ্ট তথ্য ছাড়া তদন্ত প্রভাবিত হতে পারে, এমন কোনো মন্তব্য না করতেও তদন্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে লালমনিরহাটের জনসভায় বিরোধীদলীয় নেতা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার দেওয়া বক্তব্যকে দায়িত্বজ্ঞানহীন, আদালত অবমাননাকর, তদন্ত ও বিচারকাজকে প্রভাবিত করার শামিল বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট। আদালত খালেদা জিয়ার বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা করে বলেছেন, ব্রিটেন বা আমেরিকা হলে এ বক্তব্যের জন্য বিরোধীদলীয় নেতাকে কারাগারে পাঠানো হতো। বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী ও বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিমের বেঞ্চ গতকাল মঙ্গলবার এ আদেশ দেন এবং মন্তব্য করেন।
এ ছাড়া হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা এবং হত্যার কারণ নির্ণয়ে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। দুই সপ্তাহের মধ্যে স্বরাষ্ট্রসচিব, তথ্যসচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক, র্যাবের মহাপরিচালক, ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার, ডিসি-ডিবিসহ (দক্ষিণ) সাতজনকে এই রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) করা এক রিট আবেদনের শুনানিতে হাইকোর্ট গতকাল এসব আদেশ দেন এবং বিরোধীদলীয় নেতার সমালোচনা করেন।
'জজ মিয়া প্রস্তুত', 'জজ মিয়া খোঁজা হচ্ছে' এ ধরনের সংবাদ প্রকাশ বন্ধে আদালতের আদেশ চেয়ে এ রিট আবেদন করা হয়। এই আবেদনের সঙ্গে দৈনিক যুগান্তর এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকায় প্রকাশিত এ সংক্রান্ত দুটি প্রতিবেদন সংযুক্ত করে দেওয়া হয়।
গতকাল আদালত বলেন, সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনির হত্যাকাণ্ড নিয়ে লালমনিরহাটে বিরোধীদলীয় নেতা একটি রায় দিয়েছেন যে সরকারই খুন করেছে। তাঁর এই মন্তব্যের সমালোচনা করার ভাষা এই আদালতের জানা নেই। তাঁর এ বক্তব্য তদন্তকে প্রভাবিত করতে বাধ্য। এ ধরনের বক্তব্য দেওয়া দুর্ভাগ্যজনক। বিরোধীদলীয় নেতার এ বক্তব্য আদালত অবমাননাকর, তদন্ত ও বিচারকাজকে প্রভাবিত করার শামিল। ব্রিটেন বা আমেরিকা হলে এ বক্তব্যের জন্য বিরোধীদলীয় নেতাকে কারাগারে পাঠানো হতো।
আদেশে বলা হয়, দেশের মানুষ এ ঘটনার সঠিক তদন্ত দেখতে চায়। দুটি সংবাদপত্র প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে যে জজমিয়া খোঁজা হচ্ছে, জজ মিয়া প্রস্তুত। এসব সংবাদও তদন্তকে প্রভাবিত করতে পারে। দায়িত্বশীলের উদৃ্লতি ছাড়া সূত্র ব্যবহার করে এমন কোনো কিছু লেখা ঠিক হবে না, যা তদন্তকে প্রভাবিত করে। আদালত আরো বলেন, যারা মরে গেছে তাদের আত্মার প্রতি তাঁর (খালেদা) কোনো শ্রদ্ধা নেই। নিহত দুই সাংবাদিকের পরিবারের প্রতিও তাঁর সমবেদনা নেই। তাঁর এ বক্তব্য আইনের শাসন ও সাংবিধানিক শাসনের জন্য হুমকিস্বরূপ।
আদালত তদন্তকাজে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, 'আমরা লক্ষ করছি, দুই সাংবাদিকের হত্যার ঘটনা তদন্তে সরকার সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছে। এ তদন্তে কোনো ধরনের ভুল অথবা অবহেলা আমাদের চোখে এখনো পড়েনি। একাধিক তদন্ত সংস্থা এ ঘটনার পুরো সত্য বের করে আনার জন্য কাজ করছে। সরকারপ্রধান ঘটনাটি মনিটরিংয়ের দায়িত্ব নিয়েছেন। এখন পর্যন্ত যতটুকু অগ্রগতি হয়েছে তাতে আমরা সন্তুষ্ট। কিন্তু আমরা অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে লক্ষ করছি, কিছুসংখ্যক রাজনীতিবিদ তদন্তকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য করছেন। তাঁরা নিজেদের স্বার্থ সিদ্ধির জন্য এ ধরনের মন্তব্য করছেন।'
আদালত বলেন, 'এই ঘটনার একটি সঠিক তদন্তের জন্য আমরা মুখিয়ে আছি। আমরা আশা করব, বক্তব্য দেওয়ার ক্ষেত্রে তাঁরা আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার বিষয়টি বিবেচনা করবেন।'
আদালত আরো বলেন, 'দুটি পত্রিকা এ ব্যাপারে সংবাদ প্রকাশ করেছে। এটাও তদন্তকে প্রভাবিত করতে বাধ্য। আমরা বিশ্বাস করি, এটি এমন একটি পরিস্থিতির সৃষ্টি করবে, যা তদন্তকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। এ ধরনের সংবাদ প্রকাশ করলে সাংবাদিকদের মাধ্যমেই নিহত দুই সাংবাদিকের বিচার ও তদন্ত প্রভাবিত হবে।'
গতকাল রিট আবেদনকারীপক্ষে অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ আদালতে বলেন, তদন্ত সঠিকভাবেই হচ্ছে বলে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। কিন্তু কিছু সংবাদপত্র জজ মিয়া নাটকের কথা বলছে। এখন যদি এ বিষয়ে আদালত আদেশ না দেন, তাহলে সত্যিকার আসামি গ্রেপ্তার হলে তাকেও জজ মিয়া হিসেবেই মানুষ জানবে। সংবাদ মাধ্যমে বিভিন্ন কথা আসার কারণে তদন্তের গ্রহণযোগ্যতা নষ্ট হবে। তাই এ বিষয়ে একটি আদেশ দরকার।
এ সময় আদালতকক্ষে উপস্থিত বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন এমপিকে আদালত জিজ্ঞেস করেন, 'আপনাদের সময়ও তো খুন হয়েছে। তদন্ত চলাকালে এ ধরনের মন্তব্য করে আপনারা তো তদন্ত ব্যাহত করছেন। বিচার ব্যাহত করছেন। কাল একজন গুরুত্বপূর্ণ রাজনীতিক বলেছেন, সরকারই এই ঘটনা ঘটিয়েছে, কারণ নিহতদের কাছে সরকারের দুর্নীতির অনেক তথ্য ছিল।'
মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, 'আইনজীবী হিসেবে বলব, বিচারাধীন বিষয়ে কোনো পক্ষেরই মন্তব্য করা ঠিক নয়। এ হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীও মন্তব্য করেছেন। বেডরুমে নিরাপত্তা দিতে পারবেন না বলেছেন। সরকারের দুজন মন্ত্রীও বক্তব্য দিয়েছেন। এটা আমাদের দেশের কালচার হয়ে গেছে। তিনি আরো বলেন, লালমনিরহাটে বিরোধীদলীয় নেতার সঙ্গে আমি ছিলাম। তিনি যে কথা বলেছেন সেটি হচ্ছে গত কয়েক দিনের পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের একটি সারমর্ম।'
আদালত বলেন, প্রধানমন্ত্রী তো ঠিকই বলেছেন, 'ঘরে ঘরে পুলিশ দিয়ে নিরাপত্তা দেওয়া কি সরকারের পক্ষে সম্ভব? আমরা তো এই দেশের গুরুত্বপূর্ণ ভিআইপি। আমাদের দুজনের গানম্যান আছে। বাসায় পাহারা আছে। কিন্তু কেউ যদি আমাদের খুন করতে চায়, তাহলে এর মাধ্যমে কি খুন প্রতিরোধ করা যাবে? এই নিরাপত্তা কি যথেষ্ট? বস্তুত সাধ্য অনুযায়ী নিরাপত্তা দেওয়া সরকারের দায়িত্ব।'
আদালত বলেন, 'আপনার নেত্রী তো এই ঘটনা নিয়ে রায় দিয়ে দিয়েছেন। বিচারক থেকে শুরু করে সবাই আপনার নেত্রীর কথায় প্রভাবিত হবে। এর মাধ্যমে তিনি আদালতের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। ইংল্যান্ডে এ ধরনের মন্তব্য কেউ করলে তাকে জেলে যেতে হতো।'
জবাবে ব্যারিস্টার খোকন বলেন, বিদেশে এ ঘটনা ঘটলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদত্যাগ করতেন।
এ সময় আদালতকক্ষে উপস্থিত সিনিয়র আইনজীবী আওয়ামী লীগের সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম সুজন এমপি, অ্যাডভোকেট শ ম রেজাউল করিম ও অ্যাডভোকেট এ এম আমিন উদ্দিন এবং দৈনিক ইত্তেফাকের আইন, সংবিধান ও নির্বাচন কমিশনবিষয়ক সম্পাদক সালেহউদ্দিনের বক্তব্য জানতে চান আদালত।
অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন বলেন, মৃতদেহ নিয়ে রাজনীতি করা ঠিক না। মুক্ত মনে বিষয়টির তদন্ত করতে দেওয়া উচিত।
নুরুল ইসলাম সুজন বলেন, বিরোধীদলীয় নেতার বক্তব্য সঠিক নয়। এ সময় আদালত বলেন, এ ধরনের বক্তব্যের পর আদালত নিরপেক্ষ বিচার করতে পারবেন কি না? এ প্রশ্নের জবাবে সুজন বলেন, শুধু আদালত নন, তদন্তও প্রভাবিত হয়, যা অনাকাঙ্ক্ষিত। যদি মামলা না হতো কিংবা তদন্ত না হতো তাহলে বক্তব্য দেওয়া যেত। কিন্তু এখানে তদন্ত হচ্ছে, মামলা হয়েছে। তাই সবার সহযোগিতা করা উচিত।
শ ম রেজাউল করিম বলেন, সরকার এ হত্যাকাণ্ডের রহস্য বের করতে অনেক বেশি তাগিদ দিয়েছে। যা আগে কখনো হয়নি। আরো দ্রুত তদন্ত করলে প্রকৃত বিচার থেকে বঞ্চিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এ হত্যাকাণ্ড তদন্তে ছয়টি দল কাজ করছে।
এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, যদি তাঁর (খালেদা জিয়া) কাছে এ ধরনের কোনো তথ্য থাকে তাহলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাকে এ ব্যাপারে সহযোগিতা করতে পারেন। এ সময় আদালত বলেন, 'এ দেশে এসব কথা বলা অন্যায়। আমাদের বিচার ব্যবস্থা স্বাধীন। এ রকম মন্তব্য করলে বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে কাঁদবে।
সালেহউদ্দিন বলেন, এ দেশের নাগরিকরা অপরাজনীতির শিকার। তদন্তাধীন বিষয় নিয়ে কারোরই বক্তব্য দেওয়া ঠিক নয়। কিন্তু এই ইস্যুতে দুই পক্ষ থেকেই বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্য আসছে। তদন্ত সূত্রেও একেক সময় একেক তথ্য সরবরাহ করা হচ্ছে। সাংবাদিকরা দায়িত্বশীলতার সঙ্গে তদন্ত কার্যক্রমের পর্যালোচনা সংবাদপত্রে তুলে ধরছেন। আমরা চাই আদালত এমন নির্দেশনা দেবেন, যাতে এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার হয়।
এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে লালমনিরহাটের জনসভায় বিরোধীদলীয় নেতা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার দেওয়া বক্তব্যকে দায়িত্বজ্ঞানহীন, আদালত অবমাননাকর, তদন্ত ও বিচারকাজকে প্রভাবিত করার শামিল বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট। আদালত খালেদা জিয়ার বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা করে বলেছেন, ব্রিটেন বা আমেরিকা হলে এ বক্তব্যের জন্য বিরোধীদলীয় নেতাকে কারাগারে পাঠানো হতো। বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী ও বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিমের বেঞ্চ গতকাল মঙ্গলবার এ আদেশ দেন এবং মন্তব্য করেন।
এ ছাড়া হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা এবং হত্যার কারণ নির্ণয়ে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। দুই সপ্তাহের মধ্যে স্বরাষ্ট্রসচিব, তথ্যসচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক, র্যাবের মহাপরিচালক, ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার, ডিসি-ডিবিসহ (দক্ষিণ) সাতজনকে এই রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) করা এক রিট আবেদনের শুনানিতে হাইকোর্ট গতকাল এসব আদেশ দেন এবং বিরোধীদলীয় নেতার সমালোচনা করেন।
'জজ মিয়া প্রস্তুত', 'জজ মিয়া খোঁজা হচ্ছে' এ ধরনের সংবাদ প্রকাশ বন্ধে আদালতের আদেশ চেয়ে এ রিট আবেদন করা হয়। এই আবেদনের সঙ্গে দৈনিক যুগান্তর এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকায় প্রকাশিত এ সংক্রান্ত দুটি প্রতিবেদন সংযুক্ত করে দেওয়া হয়।
গতকাল আদালত বলেন, সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনির হত্যাকাণ্ড নিয়ে লালমনিরহাটে বিরোধীদলীয় নেতা একটি রায় দিয়েছেন যে সরকারই খুন করেছে। তাঁর এই মন্তব্যের সমালোচনা করার ভাষা এই আদালতের জানা নেই। তাঁর এ বক্তব্য তদন্তকে প্রভাবিত করতে বাধ্য। এ ধরনের বক্তব্য দেওয়া দুর্ভাগ্যজনক। বিরোধীদলীয় নেতার এ বক্তব্য আদালত অবমাননাকর, তদন্ত ও বিচারকাজকে প্রভাবিত করার শামিল। ব্রিটেন বা আমেরিকা হলে এ বক্তব্যের জন্য বিরোধীদলীয় নেতাকে কারাগারে পাঠানো হতো।
আদেশে বলা হয়, দেশের মানুষ এ ঘটনার সঠিক তদন্ত দেখতে চায়। দুটি সংবাদপত্র প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে যে জজমিয়া খোঁজা হচ্ছে, জজ মিয়া প্রস্তুত। এসব সংবাদও তদন্তকে প্রভাবিত করতে পারে। দায়িত্বশীলের উদৃ্লতি ছাড়া সূত্র ব্যবহার করে এমন কোনো কিছু লেখা ঠিক হবে না, যা তদন্তকে প্রভাবিত করে। আদালত আরো বলেন, যারা মরে গেছে তাদের আত্মার প্রতি তাঁর (খালেদা) কোনো শ্রদ্ধা নেই। নিহত দুই সাংবাদিকের পরিবারের প্রতিও তাঁর সমবেদনা নেই। তাঁর এ বক্তব্য আইনের শাসন ও সাংবিধানিক শাসনের জন্য হুমকিস্বরূপ।
আদালত তদন্তকাজে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, 'আমরা লক্ষ করছি, দুই সাংবাদিকের হত্যার ঘটনা তদন্তে সরকার সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছে। এ তদন্তে কোনো ধরনের ভুল অথবা অবহেলা আমাদের চোখে এখনো পড়েনি। একাধিক তদন্ত সংস্থা এ ঘটনার পুরো সত্য বের করে আনার জন্য কাজ করছে। সরকারপ্রধান ঘটনাটি মনিটরিংয়ের দায়িত্ব নিয়েছেন। এখন পর্যন্ত যতটুকু অগ্রগতি হয়েছে তাতে আমরা সন্তুষ্ট। কিন্তু আমরা অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে লক্ষ করছি, কিছুসংখ্যক রাজনীতিবিদ তদন্তকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য করছেন। তাঁরা নিজেদের স্বার্থ সিদ্ধির জন্য এ ধরনের মন্তব্য করছেন।'
আদালত বলেন, 'এই ঘটনার একটি সঠিক তদন্তের জন্য আমরা মুখিয়ে আছি। আমরা আশা করব, বক্তব্য দেওয়ার ক্ষেত্রে তাঁরা আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার বিষয়টি বিবেচনা করবেন।'
আদালত আরো বলেন, 'দুটি পত্রিকা এ ব্যাপারে সংবাদ প্রকাশ করেছে। এটাও তদন্তকে প্রভাবিত করতে বাধ্য। আমরা বিশ্বাস করি, এটি এমন একটি পরিস্থিতির সৃষ্টি করবে, যা তদন্তকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। এ ধরনের সংবাদ প্রকাশ করলে সাংবাদিকদের মাধ্যমেই নিহত দুই সাংবাদিকের বিচার ও তদন্ত প্রভাবিত হবে।'
গতকাল রিট আবেদনকারীপক্ষে অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ আদালতে বলেন, তদন্ত সঠিকভাবেই হচ্ছে বলে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। কিন্তু কিছু সংবাদপত্র জজ মিয়া নাটকের কথা বলছে। এখন যদি এ বিষয়ে আদালত আদেশ না দেন, তাহলে সত্যিকার আসামি গ্রেপ্তার হলে তাকেও জজ মিয়া হিসেবেই মানুষ জানবে। সংবাদ মাধ্যমে বিভিন্ন কথা আসার কারণে তদন্তের গ্রহণযোগ্যতা নষ্ট হবে। তাই এ বিষয়ে একটি আদেশ দরকার।
এ সময় আদালতকক্ষে উপস্থিত বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন এমপিকে আদালত জিজ্ঞেস করেন, 'আপনাদের সময়ও তো খুন হয়েছে। তদন্ত চলাকালে এ ধরনের মন্তব্য করে আপনারা তো তদন্ত ব্যাহত করছেন। বিচার ব্যাহত করছেন। কাল একজন গুরুত্বপূর্ণ রাজনীতিক বলেছেন, সরকারই এই ঘটনা ঘটিয়েছে, কারণ নিহতদের কাছে সরকারের দুর্নীতির অনেক তথ্য ছিল।'
মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, 'আইনজীবী হিসেবে বলব, বিচারাধীন বিষয়ে কোনো পক্ষেরই মন্তব্য করা ঠিক নয়। এ হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীও মন্তব্য করেছেন। বেডরুমে নিরাপত্তা দিতে পারবেন না বলেছেন। সরকারের দুজন মন্ত্রীও বক্তব্য দিয়েছেন। এটা আমাদের দেশের কালচার হয়ে গেছে। তিনি আরো বলেন, লালমনিরহাটে বিরোধীদলীয় নেতার সঙ্গে আমি ছিলাম। তিনি যে কথা বলেছেন সেটি হচ্ছে গত কয়েক দিনের পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের একটি সারমর্ম।'
আদালত বলেন, প্রধানমন্ত্রী তো ঠিকই বলেছেন, 'ঘরে ঘরে পুলিশ দিয়ে নিরাপত্তা দেওয়া কি সরকারের পক্ষে সম্ভব? আমরা তো এই দেশের গুরুত্বপূর্ণ ভিআইপি। আমাদের দুজনের গানম্যান আছে। বাসায় পাহারা আছে। কিন্তু কেউ যদি আমাদের খুন করতে চায়, তাহলে এর মাধ্যমে কি খুন প্রতিরোধ করা যাবে? এই নিরাপত্তা কি যথেষ্ট? বস্তুত সাধ্য অনুযায়ী নিরাপত্তা দেওয়া সরকারের দায়িত্ব।'
আদালত বলেন, 'আপনার নেত্রী তো এই ঘটনা নিয়ে রায় দিয়ে দিয়েছেন। বিচারক থেকে শুরু করে সবাই আপনার নেত্রীর কথায় প্রভাবিত হবে। এর মাধ্যমে তিনি আদালতের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। ইংল্যান্ডে এ ধরনের মন্তব্য কেউ করলে তাকে জেলে যেতে হতো।'
জবাবে ব্যারিস্টার খোকন বলেন, বিদেশে এ ঘটনা ঘটলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদত্যাগ করতেন।
এ সময় আদালতকক্ষে উপস্থিত সিনিয়র আইনজীবী আওয়ামী লীগের সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম সুজন এমপি, অ্যাডভোকেট শ ম রেজাউল করিম ও অ্যাডভোকেট এ এম আমিন উদ্দিন এবং দৈনিক ইত্তেফাকের আইন, সংবিধান ও নির্বাচন কমিশনবিষয়ক সম্পাদক সালেহউদ্দিনের বক্তব্য জানতে চান আদালত।
অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন বলেন, মৃতদেহ নিয়ে রাজনীতি করা ঠিক না। মুক্ত মনে বিষয়টির তদন্ত করতে দেওয়া উচিত।
নুরুল ইসলাম সুজন বলেন, বিরোধীদলীয় নেতার বক্তব্য সঠিক নয়। এ সময় আদালত বলেন, এ ধরনের বক্তব্যের পর আদালত নিরপেক্ষ বিচার করতে পারবেন কি না? এ প্রশ্নের জবাবে সুজন বলেন, শুধু আদালত নন, তদন্তও প্রভাবিত হয়, যা অনাকাঙ্ক্ষিত। যদি মামলা না হতো কিংবা তদন্ত না হতো তাহলে বক্তব্য দেওয়া যেত। কিন্তু এখানে তদন্ত হচ্ছে, মামলা হয়েছে। তাই সবার সহযোগিতা করা উচিত।
শ ম রেজাউল করিম বলেন, সরকার এ হত্যাকাণ্ডের রহস্য বের করতে অনেক বেশি তাগিদ দিয়েছে। যা আগে কখনো হয়নি। আরো দ্রুত তদন্ত করলে প্রকৃত বিচার থেকে বঞ্চিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এ হত্যাকাণ্ড তদন্তে ছয়টি দল কাজ করছে।
এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, যদি তাঁর (খালেদা জিয়া) কাছে এ ধরনের কোনো তথ্য থাকে তাহলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাকে এ ব্যাপারে সহযোগিতা করতে পারেন। এ সময় আদালত বলেন, 'এ দেশে এসব কথা বলা অন্যায়। আমাদের বিচার ব্যবস্থা স্বাধীন। এ রকম মন্তব্য করলে বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে কাঁদবে।
সালেহউদ্দিন বলেন, এ দেশের নাগরিকরা অপরাজনীতির শিকার। তদন্তাধীন বিষয় নিয়ে কারোরই বক্তব্য দেওয়া ঠিক নয়। কিন্তু এই ইস্যুতে দুই পক্ষ থেকেই বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্য আসছে। তদন্ত সূত্রেও একেক সময় একেক তথ্য সরবরাহ করা হচ্ছে। সাংবাদিকরা দায়িত্বশীলতার সঙ্গে তদন্ত কার্যক্রমের পর্যালোচনা সংবাদপত্রে তুলে ধরছেন। আমরা চাই আদালত এমন নির্দেশনা দেবেন, যাতে এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার হয়।
এই প্রতিবেদন সম্পর্কে আপনার মতামত দিতে এখানে ক্লিক করুন
প্রথম পাতা -এর আরো সংবাদ
পাঠকের মন্তব্যরাজা ত্রিদিব রায় যেহেতু নিজে সরাসরি বাংলাদেশ ...Bhuiyan Kissloo, Dhaka, bangladeshআওয়ামীলীগ সংখ্যা গরিষ্ঠ আসনে ক্ষমতায় গিয়ে নিচে ...MD.KHAIRUL ALAM, KHULNA, bangladeshনানান বিভ্রান্তি দূর হয়ে সত্য একদিন বের ...Rabbani Chowdhury , Dhaka, bangladesh
আরো মন্তব্য »
অনলাইন জরিপআজকের প্রশ্নঢাকা সিটি করপোরেশনের দুই অংশের নির্বাচনের সময় এবং প্রশাসকের দায়িত্ববান দ্বিগুণ করে সংসদে বিল পাস হয়েছে। সরকারের এ ধরনের তৎপরতা সমর্থন করেন কি?হ্যাঁনা
আজকের পাঠকসংখ্যা
১৩২৩৯৫
সকল ফিচার
__._,_.___