বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার ॥ একুশের চেতনায় উজ্জীবিত তরুণ-তরুণীরা যুদ্ধাপরাধের বিচার দ্রুত সম্পন্ন ও বাংলা ভাষা বিকৃতি প্রতিরোধের দাবি আদায়ে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। একুশের নানা কর্মসূচীতে অংশ নেয়া তরুণ প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র গঠনে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে রাষ্ট্র পরিচালকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
মঙ্গলবার ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে এসে তরুণদের মুখে শোনা গেল যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবি। তাদের মতে, ভাষা আন্দোলনের সূত্র ধরেই মুক্তিযুদ্ধের সূত্রপাত। এমন দিনে তাই বিশেষভাবে শপথ তাদের জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করার। তবে বিচার নিয়ে অনেকেই সংশয় প্রকাশ করেছেন।
'সরকার এমন সুযোগ আর নাও পেতে পারে। এখনই সময় যুদ্ধাপরাধীর বিচার করে তা কার্যকর করা। কেননা সামনে জনগণের ম্যান্ডেন্ট যে তারা পাবে তার নিশ্চয়তা কী? এভাবেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবির কথা তুলে ধরেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল বিভাগের শেষ বর্ষের ছাত্র মোঃ তানজীদুর রহমান।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী রাশেদ শাহরিয়ার আদর্শিক বা সাংস্কৃতিকভাবে তাদের মোকাবেলা করা না হলে এদের বীজ নষ্ট হবে না বলে মনে করেন। তিনি বলেন, শুধু ফাঁসি দিয়ে হবে না, অসাম্প্রদায়িক চেতনা গড়ে তোলার আয়োজন চাই। বিচারের সংশয় জানিয়ে তিনি ট্রাইব্যুনালকে আরও শক্তিশালী করার আহ্বান জানান।
হাসানুর রহমান হাসু বলেন, আমি মনে করি যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তিটা আমাদের বর্তমান যে কোন দাবির চেয়ে প্রাধান্য পাওয়া উচিত। আমরা আর কলঙ্ক বয়ে বেড়াতে চাই না।
স্বাধীনতার ৪০ বছরেও যুদ্ধাপরাধীমুক্ত বাংলাদেশ না পাওয়ায় আক্ষেপ প্রকাশ করে শামস-উল আলম বলেন, ভাষা আন্দোলনের পথ ধরে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি। আজ ভাষা আন্দোলনের ৬০ বছরে আরেকটা আন্দোলন দরকার। তাহলো যুদ্ধাপরাধীদের দ্রুত বিচারের আন্দোলন। যেভাবে কার্যক্রম চলছে সেভাবে বিচার হবে কিনা তা নিয়েই সংশয় প্রকাশ করেন তিনি।
অপরদিকে বাংলা ভাষার সঠিক ব্যবহার নিয়ে তরুণদের মতামত স্পষ্ট। তারা মনে করেন যে কোন ভাবেই হোক এর সঠিক প্রয়োগ প্রয়োজন। আর এ বিষয়েও সরকারকে আন্তরিক হওয়ার পাশাপাশি সকলেরই এগিয়ে আসতে হবে বলে তাদের অভিমত।
বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত ওয়ালিউর রহমান বাধন বলেন, আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলায় লিখতে পারি না। শিক্ষকরা ক্লাসও নেন ইংরেজীতে। তাই বাধ্য হয়ে বাংলার চাইতে ইংরেজীটাই বেশি চর্চা করতে হয়। আর মাতৃভাষা আমাদের বাংলা। যে কারণে দুইটা ভাষা মাঝে মাঝে একত্রে এসে যায়।
শহীদ মিনারে ফুল দিতে আসা ঢাকা কলেজের শেষ বর্ষের ছাত্র তাসলিমুল হক বলেন, আসলে তরুণদের দায়িত্বই সবচেয়ে বেশি। আমরাই পারি সর্বস্তরে বাংলার প্রচলন ঘটাতে।
এর জন্য প্রয়োজন শুধু আন্তরিকতা। আমরা সবাই মিলে সবক্ষেত্রে বাংলা ব্যবহার করতে পারি।
কিন্তু তার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেন তারই বন্ধু রাফিজা ইয়াসমিন। তিনি বলেন, বর্তমান প্রজন্ম শুদ্ধ বাংলা জানেই না অনেকে। তিনি তার বক্তব্যে ইংরেজী মাধ্যমে পড়া তার চাচাত ভাইয়ের উদাহরণ টেনে বলেন, তার মত অনেকেই আছে যারা বাংলিশ ছাড়া কথাই বলতে পারে না।
হিন্দী সিনেমা আর সিরিয়াল দেখে অনেকেই হিন্দীতে আকৃষ্ট হচ্ছে এ বিষয়ে আক্ষেপ প্রকাশ করেন অনেকে। সম্প্রতি শিক্ষাজীবন শেষ করা এনামুল কবির বলেন, হিন্দী ভাষার প্রকোপ মুক্ত করাটা হওয়া উচিত সরকারের প্রথম পদক্ষেপ। এতে বাংলা দূষণমুক্ত হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে অধ্যয়নরত সাদ্দাম হোসেন বলেন, ভাষার বিবর্তন-পরিবর্তন হবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু বিবৃতি আর বিবর্তন এক জিনিস নয়।
রাশেদ শাহরিয়ার বলেন, শুধু ভাষা নয়, সমস্ত সংস্কৃতিকে ধ্বংসের একটা চক্রান্ত চলছে। ভাষার বিষয়ে সচেতনতাই কেবল পারে এটি রক্ষা করতে বলে মন্তব্য করেন ঢাবি ভাষাবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র সাদমিন সজীব।
ইডেন কলেজের তাবাসসুম হায়দার বলেন, আমাদের একুশে ফেব্রুয়ারির চেতনা হওয়া উচিত শহীদদের কথা স্মরণ করে শুদ্ধ বাংলার চর্চা করা। আমরাই পারি সর্বস্তরে বাংলার প্রচলন করতে। তরুণদের দায়িত্বই সবচেয়ে বেশি।