Banner Advertiser

Monday, June 11, 2012

[mukto-mona] Fw: যুদ্ধাপরাধী বিচার :এবার আলীম অভিযুক্ত - গণহত্যা, লুটপাট অগ্নিসংযোগ ধর্ষণসহ ১৭ অভিযোগ গঠন


----- Forwarded Message -----
From: SyedAslam <syed.aslam3@gmail.com>
To: Khobor <khabor@yahoogroups.com>
Sent: Monday, June 11, 2012 5:25 PM
Subject: যুদ্ধাপরাধী বিচার :এবার আলীম অভিযুক্ত - গণহত্যা, লুটপাট অগ্নিসংযোগ ধর্ষণসহ ১৭ অভিযোগ গঠন



এবার আলীম অভিযুক্ত
যুদ্ধাপরাধী বিচার
গণহত্যা, লুটপাট অগ্নিসংযোগ ধর্ষণসহ ১৭ অভিযোগ গঠন
বিকাশ দত্ত ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, গণহত্যা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, নির্যাতন, দেশত্যাগে বাধ্য করা ও উস্কানিমূলক বক্তব্য দেয়াসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে জিয়াউর রহমান সরকারের মন্ত্রিসভার অন্যতম সদস্য আব্দুল আলীমের বিরুদ্ধে ১৭টি অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে আব্দুল আলীম মানবতাবিরোধী মামলায় অভিযুক্ত হলেন। তার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে বিচার শুরু হলো। ৯ জুলাই সরকার পক্ষের বক্তব্য উপস্থাপন শুরু হবে। সোমবার চেয়ারম্যান বিচারপতি এটিএম ফজলে কবীরের নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এই অভিযোগ গঠনের আদেশ দিয়েছে। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে এ আদেশ দেয়া হয়। ট্রাইব্যুনাল আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন ১৯৭৩-এর ৩ (১), ৩ (২) (এ) (সি) (জি), ৪ (১), ২০ (২) ধারায় অভিযোগ এনেছে।
প্রসিকিউটর রানাদাশ গুপ্ত ২৬ এপ্রিল প্রসিকিউশনের পক্ষে বক্তব্য শেষ করেন। ঐ বক্তব্যে তিনি আসামি আব্দুল আলীমের বিরুদ্ধে হত্যা, গণহত্যা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও ধর্ষণসহ ২৮টি অভিযোগ উপস্থাপন করেন। সোমবার ট্রাইব্যুনাল ঐ ২৮টি অভিযোগ যাচাই-বাছাই করে ১৭টি অভিযোগ গঠন করেন। অভিযোগ গঠনের সময় প্রশিকিউশন পক্ষে ছিলেন প্রসিকিউটর রানাদাশগুপ্ত, ও প্রসিকিউটর নূরজাহান বেগম মুক্তা এবং আসামি পক্ষে উপস্থিত ছিলেন এ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ গঠন হবার পর এ নিয়ে মোট তিনটি অভিযোগ গঠন করা হলো। এর আগে ২৮ মে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লা ও ৪ জুন জামায়াত নেতা মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। সোমবার আদেশ দেয়ার সময় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২-এর অপর দু'জন সদস্য ছিলেন বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও জজ মোঃ শাহিনুর ইসলাম।
চার্জ গঠন করার পর ট্রাইব্যুনাল আব্দুল আলীমের কাছে জানতে চান, তিনি দোষী না নির্দোষী। এর জবাবে আব্দুল আলীম বলেন, 'আমি সম্পূর্ণ নির্দোষ। আমাকে শান্তিবাহিনীর সভাপতি ও রাজাকার বাহিনীর কমান্ডার হিসেবে আখ্যায়িত কিরা হয়েছে। যার কোন অস্তিত্ব নেই।' 'বিএনপির মন্ত্রী থাকায় আমার বিরুদ্ধে এ অভিযোগ আনা হয়েছে। জয়পুরহাট থেকে এখন পর্যন্ত আমি ছাড়া অন্য কেউ মন্ত্রী হননি। জয়পুরহাটকে গড়ায় আমার অবদান রয়েছে। তাই জয়পুরহাটের ইট পর্যন্ত আমার পক্ষে কথা বলবে। তিনি আরও বলেন, 'আমার বিরুদ্ধে প্রসিকিউসনের পক্ষ থেকে যেসব অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে, সেগুলোর কোন অস্তিত্ব নেই। আমি এর কোনটির সঙ্গে যুক্ত ছিলাম না। আমি সম্পূর্ণ নির্দোষ।' যে ২৬ জন মুক্তিযোদ্ধার হত্যার কথা বলা হয়েছে। তারা সবাই বেঁচে আছেন।
ট্রাইব্যুনালের অভিযোগ গঠনের পর প্রসিকিউশন পক্ষের প্রসিকিউটর রানা দাশগুপ্ত সাংবাদিকদের কাছে বলেন, আব্দুল আলীম জয়পুরহাটের ডা. আবুল কাশেম হত্যা ও ২৬ জন মুক্তিযোদ্ধার গণহত্যার সঙ্গে জড়িত। তিনি আরও বলেন, চেয়ারম্যান যখন বক্তব্য রাখতে বললেন, তখন তিনি আরও ৫ মিনিট সময় চাইলেন। তিনি বললেন যে ২৬ জনকে আটক করে হত্যার কথা বলা হচ্ছে তাও মিথ্যা। তখন ট্রাইব্যুনাল তাকে জিজ্ঞেস করে, ছবিতে দেখা যাচ্ছে ২৬ জন হাত-পা বাঁধা। একদিকে মেজর আফজাল আরেক দিকে আব্দুল আলীম। আলীম এ সময় বলেন, ছবি দেখিনি। রানা দাশগুপ্ত আরও বলেন, যদি ছবি না দেখে থাকেন তা হলে এই ২৬ জন বেঁচে আছে কি করে বললেন। এর জবাবে আসামি পক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার মুন্সি আহসান কবির বলেন, '২৬ জন মুক্তিযোদ্ধার গণহত্যার যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তা সঠিক নয়। কারণ, ২৬ জন মুক্তিযোদ্ধার সবাই বেঁচে আছেন। আমরা সেটা যথাসময়ে আদালতে উপস্থাপন করব। তাছাড়া আব্দুল আলীম শান্তিবাহিনীর সভাপতি বা রাজাকার বাহিনীর কমান্ডার, কোনোটিই ছিলেন না।' আমরা তা প্রমাণ করব। 
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ বিএনপি নেতা আব্দুল আলীমের বিরুদ্ধে যে সমস্ত অভিযোগ এনেছে তা নিম্নে দেয়া হলো। 
চার্জ-১ ॥ একাত্তরের ২০ এপ্রিল বিকেল আনুমানিক ৫টার দিকে আসামি আলীমের নেতৃত্বে রাজাকার বাহিনী পাঁচবিবি থানাধীন দমদমা গ্রামের মেহের উদ্দিন চৌধুরীর (বর্তমানে মৃত) বাড়িতে হামলা চালায়। হামলা চালিয়ে বাড়ির সব মাল লুটপাট করে বাড়িটি আগুনে ধ্বংস করে দেয়। আসামি আব্দুল আলীমের ভয়ে মেহের উদ্দিন চৌধুরীর বাড়ির সবাই ভয়ে দেশ ত্যাগে বাধ্য হয়। 
চার্জ-২ ॥ একাত্তরের ২৬ এপ্রিল সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টার মধ্যে শান্তি কমিটির চেযারম্যান আব্দুল আলীমের নেতৃত্বে রাজাকার বাহিনী পাকিস্তানী মেজর আফজালকে নিয়ে হিন্দু অধ্যুষিত গ্রাম জয়পুরহাটের কড়ইকাদিপুর হামলা করে। সেখানে ৩৭০ জনকে গুলি করে হত্যা করা হয়। নানা স্থান থেকে এদের ধরে এনে দু'লাইনে দাঁড় করিয়ে গুলি করা হয়। 
নিহতদের মধ্যে রয়েছে লক্ষ্মণন চন্দ্র দেবনাথ, অশ্বিনী চন্দ্র দেবনাথ, দেবেন্দ্র চন্দ্র দেবনাথ প্রকাশ ননী, যোগেন্দ্র চন্দ্র দেবন্থা, মহেন্দ্র চন্দ্র দেবনাথ, জ্যোতিষ চন্দ্র দেবনাথ, ক্ষিতিশ চন্দ্র দেবনাথ, পরীক্ষিত চন্দ্র দেবনাথ, যতন চনদ্্র দেবনাথ, দিলীপ চন্দ্র দেবনাথ, আমিন্দ্র চন্দ দেবনাথ, সুরেশচন্দ্র দেবনাথ, অনাথ চন্দ্র দেবনাথ, গোপীনাথ চন্দ্র দেবনাথ, সুধাংশু চন্দ্র দেবনাথ, গোপেন চন্দ্র দেবনাথ, ক্ষুদিরাম চন্দ্র দেবনাথ, শিবেন চন্দ্র দেবনাথ, খোকন চন্দ্র দেবনাথ, সুখচান চন্দ্র দেবনাথ, রতন চন্দ্র দেবনাথ, ভুন্ডলা চন্দ্র দেবনাথ, যোগেস চন্দ্র দেবনাথ, কানচিরা হোমন্ত, সেদরা চন্দ্র বর্মন, কৃষন চন্দ্র বর্মন ,তরমুজা বর্মন, বানীাকান্দ চন্দ বর্মন, ঘোনা চন্দ্র বর্মন, ব্যাঙ্গা চন্দ্র্রবর্মণ, দুকা চন্দ্র বর্মণ, সন্তোষ চন্দ্র বর্মণ, গৌর চন্দ্র বর্মণ, শিবেন চন্দ্র বর্মণ, প্রিয়বন্দ বর্মণ, দীন নাথ বর্মন, নুশাদচন্দ্র বর্মন ও পাচকড়ি চন্দ্র বর্মন। আটককৃতদের মধ্যে ৯০ বছরের বৃদ্ধ কানচিরা মোহন্তকে জবাই করে হত্যা করা হয়। অশ্বিনী কুমার দেবনাথকে জীবন্ত হত্যা করে মাটিচাপা দেয়া হয়। 
চার্জ-৩ ॥ একাত্তরের ১৮ জুন দুপুর ২টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত আলীমের পরামর্শ ও প্ররোচনায় রাজাকার বাহিনী শুক্রবার জুমার নামাজ আদায় শেষে এবং আদায়ের আগে চিরোলা গ্রামের শান্তি কমিটির সদস্য রিয়াজ মৃধার (বর্তমানে মৃত) সহাযোগিতায় ১১ জন পাঞ্জাবী সেনা ২২ জন মুসল্লিকে আটক করে। তারা নওপাড়া, চরবরকত ,চিলোরা গ্রামের আনুমানিক ৫০০ জন লোককে ও আটক করে। সেখানে আটককৃত সবাইকে আফাজের বাড়ির উঠানে নিয়ে লাইন করে দাঁড় করায়। আসামি আলীমের দেয়া তালিকা অনুসারে পাঞ্জাবী সেনাকে আওয়ামী লীগ, মুক্তিসংগ্রামী ও তাদের আত্মীয় ২৮ জনকে রেখে বাকিদের ছেড়ে দেয়। ২৮ জনকে পিঠ মোড়া করে বেঁধে আফাজের বাড়ির মাটির ঘরে নিয়ে যায়। একগ্রুপে ৮ জনকে করে ২২ জনকে হত্যা করা হয়। ৬ জন বেঁচে যান। 
চার্জ-৪ ॥ একাত্তরের মে মাসের প্রথম দিকে আব্দুল আলীমের নির্দেশে ও প্ররোচনায় পাকিস্তানী সেনাদের নিয়ে বকুলতলা রেললাইনের কাছে একটি ট্রেনে চড়ে আসে। ট্রেন থেকে নেমে তারা বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে কোকতারা, ঘোড়াপা, বাগজানা, কুটাহারা গ্রামে হানা দিয়ে সেখানে বাড়িঘরে লুটপাট চালায়। এবং লুটের পর বাড়িঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়।সেখানে যাদের কে গুলি করে হত্যা করা হয়, তাদের মধ্যে রয়েছে, বাহার রউদ্দিন, সুখচান, হযরত উল্লাহ , আসাদ আলী, বিশারত উল্লাহ, নাছিরউদ্দিন, আযেজ উদ্দিন, ভাদু আকন্দ, ঘোড়াপা গ্রামের হয়রত আলী, আবারী, হুজুর আলী ও বাগজানা গ্রামের লোজাপ, জফি, আলিফ, রোজা খলিফা, মান্নান খলিফা, আদু খলিফা, নাছির খলিফা ও নেপাল খলিফা। 
চার্জ-৫ ॥ একাত্তরের ৯ মে থেকে ১৫ মে কোন একদিন জয়পুরহাটের দক্ষিণ পাহুনন্দা মিশন স্কুলে আসামি আব্দুল আলীম এর নির্দেশে ও প্ররোচনায় ৬৭ জন হিন্দুকে হত্যা করা হয়। রাজাকার বাহিনীর লোকজন ও পাকিস্তানি সেনারা পায়ে হেটে ও গাড়িতে করে মিশন স্কুলে আসে। এদের মধ্যে ৫০/৬০ জনের একটি গ্রুপ মিশন স্কুলে যায। বাদবাকিরা পাগলা দেওয়ানেন দিকে চলে যায়। স্কুলে যাবার পর স্থানীয় গ্রামবাসীদের ফজলুর রহমান, হামিদ দেওয়ান, গনি, মোঃ ফজলুর রহমান, লুৎফর রহমানসহ আরও অনেকে নিজ নিজ বাড়ি থেকে ডেকে মিশন স্কুলে েিয় আসে। এবং তাদের দিয়ে স্কুলের পশ্চিমে ব্যাঙ্কার খোড়ায়। ব্যাঙ্কার খোড়ার পরে ৬৭ জন অপরিচিত হিন্দুর লাশ মাটি চাপা দিতে বাধ্য করে। 
চার্জ-৬ ॥ একাত্তরের মে মাসের প্রথম দিকে কোন একদিন আক্কেলপুরে আব্দুস ছালাম, আব্দুল কুদ্দুস, সমির উদ্দিন ম-ল, আবুল হোসেন মাঝি, আজিম হোসেন মাঝি, আব্দুর রহামান মেম্বর এবারত আলী ম-ল, আব্দুস ছাত্তার, ফজলুর রহমানসহ ১০ জনকে আটক করা হয়। এদের ভারতে যাবার পথে ভাদসা ইউনিয়নের নূরপুর গ্রামে রাত ১১টার দিকে আটক করা হয়। এর পর তাদের পাকিস্তান সেনাবহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হয়। পাকিস্তানী সেনাবাহিনী এদের পাঁচবিবি থানার বাগজানা পুরনো রেলওয়ে স্টেশনের এক মাইল উত্তর দিকে কোকতারা বকুলতলায় নামিয়ে পুকুরপাড়ে খেজুর গাছের নিচে গুলি করে। গুলিতে ৯ জন নিহত হয়। গুলিবিদ্ধদের মধ্যে মোফাজ্জল প্রাণে বেঁচে যায়। পাক সৈন্যরা চলে যাবার পর স্থানীয় লোকজন মৃতদের মাটিচাপা দিয়ে রাখে। 
চার্জ-৭ ॥ একাত্তরের ২৬ মে সকাল ১১টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত নওদা গ্রামের ৪ জনকে অপহরণ, আটক করে পরে হত্যা করা হয়। যাদের অপহরণ করে হত্যা করা হয়েছে তাদের মধ্যে রয়েছে ইলিয়াস উদ্দিন সরদার, ইউসুফ উদ্দিন সরদার, ইউনুস উদ্দিন সরদার ও আবুল কাদের ম-ল। আব্দুল আলীমের পরামর্শে ও প্ররোচনায় শান্তি কমিটি রাজাকার বাহিনী পাক সেনাবাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে জয়পুরহাট জেলার পাঁচবিবি থানাধীন নওদা গ্রামে সশস্ত্র হামলা চালায়। হামলা চলাকালে উক্ত ৪ জনকে তাদের নিজ নিজ বাড়ি থেকে শান্তি কমিটির সভায় যোগ দেবার মিথ্যা আশ্বাসে বালিঘাটা ইউনিয়ন পরিষদের একটি কক্ষে আটকিয়ে রাখা হয়। তাদের আত্মীয়স্বজন আসামি আব্দুল আলীমের কাছে এসে তাদের ছাড়িয়ে নেবার জন্য অনেক আকুতি-মিনতি করেন। কিন্তু আব্দুল আলীম তাতে কোন কর্ণপাত করেননি। বরং তিনি বলেন, আটককৃতদের মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তি হিসেবে ইতোমধ্যে চিহ্নিত করে আটক করা হয়েছে। এ দিনই সন্ধা সাড়ে ৬টা থেকে রাত ৭টার মধ্যে কালী সাহার পুকুর পাড়ে নিয়ে তাদের গুলি করে হত্যা করে মাটিচাপা দেয়া হয়।
চার্জ-৮ ॥ একাত্তরের মে মাসের শেষের দিকে আলীম ও পাকিস্তানী মেজর আফজালের নীলনক্সা ও পরিকল্পনায় জয়পুরহাটের বিভিন্ন উপজেলা, পার্শ¦বর্তী নওগাঁ জেলা এবং দিনাজপুরের সীমান্তবর্তী এলাকায় শান্তিবাহিনীর সহায়তায় লুটপাট চালায়। রোজার ঈদের আগে ক্ষেতলাল থানাধীন উত্তরহাট শহর হাটের পশ্চিম পাশে আনুমানিক বিকেল ৩টায় মেজর আফজাল ও আসামি একটি জীপ গাড়িযোগে আসে। সঙ্গে বহু পাকিস্তানী সেনা। ৫০০/৭০০ জনকে নিয়ে সেখানে মাইক লাগিয়ে জনসভার আয়োজন করা হয়। 
সাধারণ মানুষের সাহস বৃদ্ধির জন্য হিন্দুদের ক্ষমা করা যাবে না। এদের যা পাও লুট করে নাও। হত্যার জন্য ১০ জনকে ক্ষেতলাল সদরে নিয়ে যাওয়া হয়। সকালে ক্ষেতলাল হিন্দুপল্লী, উত্তরহাট শহর, হারুনজাহাটসহ বিভিন্ন স্থানে গণহত্যা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। আসামি আলীমের নির্দেশে যাদের হত্যা করা হয়, তাদের মধ্যে রয়েছে, বাদল, সচীন ওরফে ভানু, প্রবাস চন্দ্র শীল, মনিভূষণ চক্রবর্তী, কার্তিক চন্দ্র বর্মন, নিমাই চন্দ্র বর্মন, প্রিয়নাথ বর্মনসহ আরো অপরিচিত ৩ জন। 
চার্জ-৯ ॥ একাত্তরের ১৪ জুন আব্দুল আলীমের নির্দেশে ও পরিচালনায় বগুড়ার খোকন পাইকারসহ ১৫ যুবক জয়পুরহাটের আক্কেলপুর হয়ে বগুড়ায় যাওয়ার পথে আসামি আব্দুল আলীমের নেতৃত্বাধীন ও পরিচালনাধীন স্থানীয় শান্তি কমিটির লোকজন তাদের "মুক্তিবাহিনী" হিসেবে শনাক্ত করে ধরে নিয়ে যায়। ধরে মোহন লালের গদি ঘরে অবস্থিত শান্তি কমিটির অফিসে নিয়ে আটকে রাখে। আটককৃতদের নিকটবর্তী আক্কেলপুর সিনিয়র মাদ্রাসায় অবস্থিত পাকিস্তান হানাদার বহিনীর ক্যাম্পে যায় এবং সেখানে অবস্থানরত আফজাল বেগের সঙ্গে শলাপরামর্শ করে। উক্ত রূপ শলাপরামর্শ করে সে আটককৃতদের নির্যাতন-পূর্বক হত্যার সিদ্ধান্ত নেয়। ঐ সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে আক্কেলপুরের পশ্চিম আমট্রা গ্রামের নিয়ে আটককৃতদের হাত পা বেঁধে নির্যাতন করে। নির্যাতন চলাকালে পশ্চিম আমট্র গ্রামের মৃত ময়েন তালুকদারের পুত্র তাদের বাড়ি থেকে সেখানে ধরে এনে তাদের দিতে গর্ত খোঁড়ায়। এর পর আটকৃকৃতদের নিরীহ নিরস্ত্র হাত-পা বেঁধে ১৫ জনকে হত্যা করে। এর পর তাদের লাশ মো: দুলু তালুকদার ও রমজানকে দিয়ে গর্তে ফেলে গণকবর দেয়। 
চার্জ-১০ ॥ একাত্তরের জুন মাসের শেষের দিকে সকালে আসামি আব্দুল আলীম জয়পুরহাট সদর রোডের শওনলাল বাজলার গদি ঘরে শান্তি কমিটির অফিসে শান্তি কমিটির সভায় রাজনৈতিক বিদ্বেষ প্রসূত হয়ে ঐ দিন রাতের মধ্যে পাহাড়পুর হতে "মুক্তিযোদ্ধা" সন্দেহে আটককৃত ২৬ যুবককে হত্যার সিদ্ধান্ত নেয়। উক্ত সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে শান্তি কমিটির অফিসের সামনে ২টি ট্রাকে থাকা উক্ত যুবকদের জয়পুরহাট রেল স্টেশনের পশ্চিমে ফাঁকা জায়গায় নিয়ে যায়। তথায় তাদের ট্রাক থেকে নমিয়ে হাত বেঁধে নামিয়ে লাইন করে বসায়। উক্তরূপে আটককৃত যুবকদের সামনে নিজেদের হেফাজত থেকে কয়েকটি অস্ত্র রেখে দখলদার পাকিস্তান সেনাবাহিনী, শান্তি কমিটির সদস্য ও রাজাকার বাহিনীর পাহারা দিতে তাদের পেছনে দাঁড়ায়। 
আসামি আব্দুল আলীম আটককৃত যুবকদের উক্তরূপে তাদের হেফাজতে রেখে সকাল আনুমানিক ১০টায় স্থানীয় "আলোখেলা" নামীয় স্টুডিওতে যায়। সেখানে গিয়ে স্টুডিওর মালিক এএবিএম মোতাছিম বিল্লাকে "মুক্তিযোদ্ধাদের ছবি তুলতে হবে। রিকশায় ওঠো।" নির্দেশ পাবার পর তার কাছে থাকা নিজ ক্যামেরা দিয়ে ছবি তুলে এ এবিএম মোতাছিম বিল্লা নিজ স্টুুডিওতে ফিরে যায়। আটককৃত ২৬ যুবককে পুনরায় ট্রাকে তুলে তাদের জয়পুরহাট সরকারী কলেজের নিয়ে যায় এবং সেখানে তাদের হত্যা করা হয়। ছবি তোলার পরের দিন আসামি আব্দুল আলীম স্টুডিওতে এসে স্টুডিওর মালিকের কাছ থেকে নেগেটিভসহ তিন কপি ছবি নিয়ে গেলেও স্টুডিওর মালিক এর কয়েকটি কপি নিজের কাছে রেখে দেয়। 
চার্জ-১১ ॥ একাত্তরের ২৫ জুন থেকে ৩০ জুনের যে কোন একদিন আসামি আব্দুল আলীম তার রাজাকার বাহিনী নিয়ে মোঃ মোখলেসুর রহমান, আহাদ আলী, নজের আখন্দ, আমজাদ হোসেন , আব্দুল গফুর, আবের জোয়ারদার, ভিকন প্রামানিক, আছির আকন্দ, লজের আখন্দ, মোয়াজ্জেম, তোফাজ্জল ও অপরিচিত আরও ১৪ জন গাড়োয়ালকে আটক করে। তাদের শওনলাল গদি ঘরে নিয়ে আটক করে রাখা হয়। পরে আরও অপরিচিত ১৫ জন গাড়োয়ালকে আটক করা হয়। গাড়োয়াল এবং তাদের আত্মীয়স্বজনসহ মোট ২৬ জনকে জয়পুরহাটের খঞ্জনপুরে কুঠিবাড়ি ব্রিজের নিকটে নিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়। পরে তাদের লাশ নদীতে ফেলে দেয়া হয়। 
চার্জ-১২ ॥ একাত্তরে ২৪ জুলাই রাত ৩টা থেকে ২৬ জুলাই বিকেল পর্যন্ত ডাক্তার আবুল কাশেমকে অপহরণ করা হয়। অপহরণ করার পর আটকে রেখে নির্যাতন করা হয়। পরে তাকে হত্যা করা হয়। আলীমের নির্দেশে ডা. আবুল কাশেমকে ধরে নেয়া হয়। কাশেমের পুত্র ডাক্তার নজরুল ইসলাম ও মেয়ে লাইলী বেগম আসামি আলীমের কাছে দিয়ে পিতাকে ছেড়ে দেবার জন্য অনেক আকুতি-মিনতি করে। রাজাকার আতিকুল্লাহ তার মেয়েকে জানায় আলীম হুকুম দিয়েছে তাকে মেরে ফেলতে। পরে ২৬ জুলাই খঞ্জনপুরের ব্রিজের কাছে নিয়ে তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। 
চার্জ-১৩ ॥ একাত্তরের সেপ্টেম্বরের দিকে আব্দুল আলীমের নির্দেশে ১১ যুবককে হত্যা করা হয়। ১ যুবককে দুটি ট্রাকে আজিমউদ্দিন সরদারের বাড়ির সামনে নিয়ে আসা হয়। সেখানে আলীম জীপের হুটে দাঁড়িয়ে বলে, ১১ আদমী ভারতকা চর হ্যায়। পাকিস্তানি দুশমন। মুক্তিফৌজ হে। ইসকো ভেস দো।" ঐ ঘোষণার পর পর পাকিস্তানি সৈন্যরা গুলি করে ১১ জনকে হত্যা করে। 
চার্জ-১৪ ॥ একাত্তরের ৭ অক্টোবর ফজলুল করিমসহ ৩ জনকে হত্যা করা হয়। মেজর আফজালের নেতৃত্বে শান্তি কমিটির লোকজন এবং রাজাকার বাহিনীর সদস্যরা রাজনৈতিক বিদ্বেষ প্রসূত হয়ে জয়পুরহাটের আক্কেলপুর থানাধীন আক্কেলপুর সদরের মৃত আলহাজ আব্দুর রহিমের পুত্র ফজলুল করিমসহ আরও ২ জনকে আটক করে মাকি বাঁধানো ট্রাকে জয়পুরহাটের সিও (ডেভ) অফিসের সামনে হাজির হয়। 
এ সাংবাদ পেয়ে জয়পুরহাট মহকুমার শান্তি কমিিিটর চেয়ারম্যান ও রাজাকার কমান্ডার আসামি আব্দুল আলীম সিও অফিস থেকে বের হয়ে সেখানে আসে। তার উপস্থিতিতে তারই নির্দেশে আটককৃতদের মুখে চুনকালি লাগিয়ে আসামি আব্দুল আলীম মেজর আফজাল ট্রাকে উঠে নিরীহ নিরস্ত্র বাঙালীদের ভয় দেখানোর বদ উদ্দেশ্যে জয়পুরহাট শহর প্রদক্ষিণ করতে থাকে। 
প্রদক্ষিণকালে আসামি আব্দুল আলীম মেজর আফজালসহ মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে বক্তব্য দেয়। আলীম তার বক্তব্যে বলেন, " মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে। ফজলুল করিমের বাবা আমার বন্ধু। তাকে তার ছেলেদের বিপথ থেকে ফিরিয়ে আনার জন্যে বার বার বলা সত্ত্বে¡ও তাদের ফেরত আনেনি। বিরত করেনি । সুতরাং তার ছেলেকে জীবন দিতেই হবে। "শহর প্রদক্ষিণ শেষে তাদের জয়পুরহাটের খঞ্জনপুর কুঠিকাড়ি ঘাটে নিয়ে নির্যাতনের পর গুলিতে হত্যা করে। হত্যা করলেও লাশ পাওয়া যায়নি। 
চার্জ-১৫ ॥ ২৫ অক্টোবর সকাল থেকে এর পর ৯ম দিন শুক্রবার পর্যন্ত জয়পুরহাট চিনিকলে আটকে রেখে ২৫ জনকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এদের মধ্যে ৪ জন আহত হয়। আহতরা হলেন সোলেমান আলী ফকির, আব্দুল খালেক, আফতাব হোসেন, আব্দুস সামাদ। অভিযোগ বলা হয়, পাঁচবিবি থানার সৈয়দ আলী ফকিরের বাড়িতে একাত্তরের ২৫ আগষ্ট সকালবেলাতে গিয়ে তার পুত্র সোলেয়ামান আলী ফকিরকে বলে যে, "এলাকায় থাকতে হলে শান্তি কমিটির কাছ থেকে পরিচয়পত্র নিতে হবে। না নিলে এলাকায় ঘোরাফেরার সমস্যা হবে।" নির্যাতনে তাদের শরীরের বিভিন্ন স্থান ক্ষত বিক্ষত হয়ে যায়। ঐ কক্ষে আরও ২৫ জনকে আগে থেকেই আটকিয়ে রাখা হয়েছিল। 
চার্জ-১৬ ॥ জয়পুরহাট চিনিকলে যে ২৫ জনকে আটক রাখা হয়েছিল, তার মধ্যে ৮ম রাতে ২৩ জনকে হত্যা করা হয়। আটকের পর ৯ম দিন শুক্রবার বেলা আনুমানিক ২টায় চিনিকলের ক্লাবঘরে কোর্ট বসে। তার পাশে বসেছিল আসামি আব্দুল আলীম। ঐ কোর্টে সোলেমান আলী ফকির,আবদুল খালেক, আব্দুস সামাদ ও আফতাব হোসেনকে হাজির করা হয়। তাদের হাজির করা হলে আসামি আলীম তারা কোন্ দল করে, কত তারিখে ভারতে গিয়েছিল, ভারতের কোথায় ছিল। মুক্তিবাহিনীর পোশাক অস্ত্র কোথায়, ভারতে কি করত ইত্যাদি জিজ্ঞেস করে। আসামি আব্দুল আলীম উর্দুতে বলে তাদের ৪ জনকে ছেড়ে দিলে তারা ভারতে চলে যাবে এবং সেখানে রিপোর্ট করলে ব্যাপক ক্ষতি হবে। তাই তাদের ছেড়ে দেয়া যাবে না। কর্নেলের কাছে আসামি আলীমের উর্দুতে বলা এসব কথা আটককৃতরা বুঝতে পেরে কর্নেলকে অনুরোধ করে বলে ,আমরা কখনও ভারতে যাব না । এক পর্যায়ে কর্নেল আলীমের কথা না শুনে তাদেরকে ছেড়ে দেয়ার নির্দেশ দেয় । সেখান থেকে ছাড়া পেয়ে বাড়িতে এসে গ্রামে থাকা নিরাপদ নয় ভেবে সোলেমান আলী ফকিরসহ আবুদস সামাদ ম-ল ভারতে চলে যায়। 
চার্জ-১৭ ॥ নবেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহ সকালে জব্বল হোসেনকে অপহরণ করা হয়। এর পর তাকে আটক রেখে হত্যা করা হয়। জয়পুহাটের পাঁচবিবি ধুরইল গ্রামের নাজিমউদ্দিন বাড়িতে চট্টগ্রামের কালুরঘাটের ১৭ উইংয়ের ইপিআর সুবেদার মেজর জব্Ÿল হোসেন গুরুতর জখমপ্রাপ্ত অবস্থায় আশ্রয় নেয়। খরব পেয়ে রাজাকাররা তার বাড়ি ঘেরাও করে জব্বলকে অপহরণ করে। জব্Ÿল হোসেনের জামাতা গোলাম রসুলসহ আরও অনেকে শান্তি কমিটি অফিসে গিয়ে আব্দুল আলীমের কাছে অনুরোধ করে জব্বলকে ছেড়ে দিতে। তখন আলীম জানাজা যেহেতু জব্বল চট্টগ্রাম দিয়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীদের সঙ্গে যুদ্ধ করেছে, তাকে ছাড়া যাবে না। এর পরবর্তীতে আবারও জব্বলকে ছেড়ে দিতে আসামি আলীমের কাছে উপরোক্ত মতে বারংবার একই অনুরোধ জানায় । শেষ পর্যায়ে জব্বল হোসেনের আত্মীয়স্বজন জানতে পারে যে, আব্দুল আলীমের নির্দেশে তাকে হত্যা করা হয়েছে। 
ট্রাইব্যুনালে যে সব মামলা ॥ বিএনপি নেতা আব্দুল আলীমের অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে মোট ৭ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হলো। ২১ জুন জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন হবে কি হবে না, সে বিষয়ে আদেশ প্রদান করবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। ইতোমধ্যে যে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে, তাঁরা হলেন জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযম, বর্তমান আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামান, আব্দুল কাদের মোল্লা, নায়েবে আমির মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী। একই অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ বাচ্চু রাজাকার হিসেবে পরিচিত মাওলানা আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে। এর পর পরই বাচ্চু রাজাকার পালিয়ে যায়। প্রসিকিউশন তার বিরুদ্ধে অগ্রগতি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। মাওলানা আবুল কালাম আজাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকারের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে বলে জানা গেছে।
http://www.dailyjanakantha.com/news_view.php?nc=15&dd=2012-06-12&ni=99442


মঙ্গলবার, ১২ জুন ২০১২, ২৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪১৯