12 Dec 2012 07:44:27 PM Wednesday BdST |
'কামারুজ্জামানের নির্দেশে নির্যাতন করা হতো'
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
ঢাকা: একাত্তর সালে কামারুজ্জামানের নির্দেশে মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ মানুষদের আলবদর ক্যাম্পে ধরে নিয়ে নির্যাতন করা হতো। তিনি আটক বন্দিদের দেখিয়ে দিতেন। যাদের তিনি দেখিয়ে দিতেন, তাদের আর কোনো দিন আলবদর ক্যাম্পে দেখা যেতো না।
মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দানকালে এসব কথা জানিয়েছেন দবির হোসেন ভূঁইয়া। একই সঙ্গে তিনি তাকে ধরে এনে কামারুজ্জামানের নেতৃত্বে নির্মম নির্যাতনেরও মর্মষ্পর্শী বর্ণনা দেন।
কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের ১৫তম সাক্ষী হিসেবে বুধবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এ সাক্ষ্য দিয়েছেন দবির হোসেন ভূঁইয়া। তিনি এ সময় আসামির কাঠগড়ায় থাকা কামারুজ্জামানকে সনাক্তও করেন।
সাক্ষ্যগ্রহণ সাক্ষীকে জেরা শুরু করেছেন কামারুজ্জামানের আইনজীবী কফিল উদ্দিন চৌধুরী। জেরা অসমাপ্ত অবস্থায় ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত মুলতবি করেছেন চেয়ারম্যান বিচারপতি এটিএম ফজলে কবিরের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল।
বর্তমানে ৬৫ বছর বয়সী সাক্ষী দবির হোসেন ভূঁইয়ার বাড়ি ময়মনসিংহের কোতোয়ালি এলাকায়। একাত্তরে তিনি বইয়ের দোকান চালাতেন।
দবির হোসেন ভূঁইয়া তার সাক্ষ্যে বলেন, ''একাত্তর সালের জুলাই মাসের শেষের দিকে ৬/৭ জন সাদা পোষাক পরা অস্ত্রধারী লোক আমাকে ধরে চোখ বেঁধে রিকশায় উঠিয়ে জেলা পরিষদ ডাকবাংলোতে আলবদর ক্যাম্পে নিয়ে যান। সেখানে আমাকে একটি রুমে নিয়ে চোখ খুলে দেওয়া হয়। তখন আলবদর বাহিনীর কমান্ডার কামারুজ্জামানকে একটি চেয়ারে বসে থাকতে দেখি। তাকে আমি আগে থেকেই চিনতাম। কারণ, তিনি আমার বইয়ের দোকানের ক্রেতা ছিলেন।''
সাক্ষী বলেন, ''কামারুজ্জামান সেখানে উপস্থিত শেলী নামের একজনকে নির্দেশ দিয়ে বলেন যে, 'তুমি তোমার দায়িত্ব পালন কর, তাকে নিয়ে যাও।' তখন শেলীসহ অন্যরা আমাকে চোখ বেঁধে অন্য একটি রুমে নিয়ে যান এবং চোখ বাঁধা অবস্থায় আমার ওপর অকথ্য নির্যাতন চালান।''
তিনি বলেন, ''ওই ক্যাম্পে আমার ওপর প্রতিদিনই রুটিন মাফিক নির্যাতন করে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্পর্কে তথ্য নেওয়ার চেষ্টা করা হতো।''
সাক্ষী বলেন, ''সেই ক্যাম্পে আমিসহ অনেকে ছিলেন। সেখানে কামারুজ্জামান আসতেন এবং আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়ে বলতেন, 'একে নিয়ে যাও।' এভাবে যাকে দেখিয়ে দেওয়া হতো তাকে কোনো দিন আর সেই ক্যাম্পে দেখা যেতো না। এভাবে টেপা ভাই, শাহেদ আলী, দারা, রশিদসহ আরো অনেককে নিয়ে যাওয়া হয়।''
১৯৭১ সালের আগস্ট মাসের শেষের দিকে তিনি আলবদর ক্যাম্প থেকে ছাড়া পান বলেও জানান দবির হোসেন ভূঁইয়া । গত ১৫ জুলাই সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হওয়ার পর থেকে কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত রাষ্ট্রপক্ষের আরো ১৩ জন সাক্ষী সাক্ষ্য প্রদান করেছেন।
তারা হচ্ছেন, ১৯৭১ সালে ময়মনসিংহ আনন্দমোহন কলেজ ছাত্র সংসদের ভিপি হামিদুল হক, শেরপুরে কামারুজ্জামানের স্থাপন করা আলবদর ক্যাম্প ও নির্যাতন কেন্দ্রের দারোয়ান মনোয়ার হোসেন খান মোহন, বীর মুক্তিযোদ্ধা জহুরুল হক মুন্সী বীরপ্রতীক, বীর মুক্তিযোদ্ধা ফকির আব্দুল মান্নান, মুক্তিযুদ্ধের শহীদ গোলাম মোস্তফা হোসেন তালুকদারের ছোট ভাই মোশাররফ হোসেন তালুকদার, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা বদিউজ্জামানের বড় ভাই ডা. মো. হাসানুজ্জামান, লিয়াকত আলী, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধে শহীদের পুত্র জিয়াউল ইসলাম, অ্যাডভোকেট আবুল কাশেম, মুক্তিযুদ্ধে শহীদ পরিবারের সন্তান মো. জালাল উদ্দিন ও মজিবুর রহমান খান পান্নু। এছাড়া শেরপুর জেলার 'বিধবাপল্লী' খ্যাত সোহাগপুর গ্রামের নির্যাতিত (ভিকটিম) তিন নারী সাক্ষী (ক্যামেরা ট্রায়াল)।
আসামিপক্ষ তাদের জেরা সম্পন্ন করেছেন।
গত ৪ জুন কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। তার বিরুদ্ধে একাত্তরে হত্যা, গণহত্যা, নির্যাতন, দেশত্যাগে বাধ্য করাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের সাত ধরনের ঘটনায় অভিযোগ আনা হয়।
ট্রাইব্যুনাল কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছেন, একাত্তরের ১৪ ডিসেম্বরসহ মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের মূল হোতা কামারুজ্জামান। শেরপুর ডাকবাংলোয় বসে মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সন্দেহভাজনসহ নিরীহ বাঙালিদের ধরে আনার নির্দেশ, হত্যা, নির্যাতন চালাতেন তিনি।
এছাড়া শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ি উপজেলার সোহাগপুর গ্রামে কামারুজ্জামানের নেতৃত্বে তার পরিকল্পনা ও পরামর্শে ১৯৭১ সালের ২৫ জুলাই ১২০ জন পুরুষকে হত্যা করা হয় এবং ওই গ্রামের প্রায় ১৭০ জন মহিলাকে ধর্ষণ ও নির্যাতন করা হয়। সে ঘটনার পর থেকে সোহাগপুর গ্রাম এখন 'বিধবাপল্লী' নামে পরিচিত। এ কারণে সোহাগপুরের বিধবাপল্লীর জন্যও দায়ী কামারুজ্জামান।
সব মিলিয়ে গণহত্যা, গণহত্যা সংঘটনে ষড়যন্ত্র, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও হত্যা, ব্যাপক নির্যাতনযজ্ঞ, দেশত্যাগে বাধ্য করা, নির্যাতন, ধর্ষণ, ধর্মগত ও রাজনৈতিক কারণে ক্রমাগত নির্যাতনের সুপিরিয়র হিসেবে সব অপরাধের একক ও যৌথ দায় কামারুজ্জামানের ওপর বর্তায় বলেও উল্লেখ করা হয়েছে অভিযোগে।
২ জুলাই কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে ৮১ পৃষ্ঠার ওপেনিং স্টেটমেন্ট (সূচনা বক্তব্য) উত্থাপন করেন প্রসিকিউটর একেএম সাইফুল ইসলাম ও নূরজাহান বেগম মুক্তা।
সূচনা বক্তব্যে প্রসিকিউটররা কামারুজ্জামানকে 'প্রমাণিত যুদ্ধাপরাধী' বলে উল্লেখ করে ট্রাইব্যুনালকে বলেন, তিনিসহ মতিউর রহমান নিজামী, মীর কাসেম আলী, আশরাফ হোসেন, মোঃ শামসুল হক, মোঃ সাদত হোসাইন, আশরাফুজ্জামান খান, চৌধুরী মঈনউদ্দিন ও আব্দুস সালাম ছিলেন আলবদর বাহিনীকে পরিচালনা করতেন।
প্রসঙ্গত, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগের মামলায় ২০১০ সালের ২৯ জুলাই কামারুজ্জামানকে গ্রেফতার করা হয়। ২ আগস্ট তাকে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেফতার দেখানো হয়।
কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে গত ৩১ জানুয়ারি ৮৪ পৃষ্ঠার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল-১।
এরপর গত ১৬ এপ্রিল প্রসিকিউশনের প্রধান গোলাম আরিফ টিপুর এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কামারুজ্জামানের মামলাটি প্রথম ট্রাইব্যুনাল থেকে দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয়। গত ১৬ মে আসামিপক্ষ এবং ২০ মে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানি শেষ করেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৭ ঘন্টা, ডিসেম্বর ১২, ২০১২
জেপি/ সম্পাদনা: অশোকেশ রায়, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর eic@banglanews24.com
- 'বাচ্চু রাজাকার ও খান সেনারা আমার বাবাকে গুলি করে হত্যা করে'
- গোপনীয়তা ও সম্মান রক্ষার্থে ট্রাইব্যুনালের নির্দেশনা
- গোলাম আযমের বিরুদ্ধে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু বৃহস্পতিবার
- সাকা চৌধুরীর বিরুদ্ধে ক্যামেরা ট্রায়ালে সাক্ষ্য ১৭ ডিসেম্বর পুনর্নির্ধারণ
Nizami was the main organizer of the killer Al-Bodor Bahini with
his Islami Chattro Sangho Caders.
http://www.nybangla.com/Muktijoddho/Nizami/NIzami_1971_Role.pdf
Jamaate Islami organized Al-Bodor Bahini in 1971.Matiur Rahman Nizami was one of the main masterminds and his Islami Chattro Sangha supplied the hardcore caders of Al-Bodor gestapo militia. Jamaat's armed Albodor gestapos committed various attrocities against the emmergence of Bangladesh. The murder of the intellectuals in the begining of December 1971 was the sole act of Al-bodor bahini. The scheme was planned by Jammat and Islami Chattro Sangha's leadership that included Matiur Rahman Nizami,Golam Azam et el.
http://chottala.blogspot.com/2011/10/chottalacom-al-badr-pakistani-killing.html
ছাত্র সংঘ' নাম পাল্টিয়ে 'বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির' নামে যাত্রা শুরু করে:
http://www.sonarbangladesh.com/blog/satisfy/37986
__._,_.___