সর্বত্র রাজাকারবিরোধী ব্রিগেড গড়ার ডাক ব্লগারদের
গোটা দেশ এখন অক্ষরে অক্ষরে মানছে প্রজন্ম চত্বরের কমান্ড
ফিরোজ মান্না ॥ রাজাকারমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে এবার শহর বন্দর, গ্রামে-গঞ্জে রাজাকারবিরোধী 'ব্রিগেড' গড়ার ডাক দিয়েছে ব্লগাররা। ফেসবুক, টুইটার ও ব্লগে এই স্যাস্টাস দিচ্ছেন শাহাবাগ প্রজন্ম চত্বরে অবস্থানরত এ্যাক্টিভিস্ট নেটওয়ার্কের সদস্যরা। সারাদেশ থেকে এই পোস্টকে স্বাগত জানানো হয়েছে। গোটা দেশ প্রজন্ম চত্বর থেকে দেয়া যে কোন 'কমান্ড' অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলেছে। সারাদেশে কয়েক লাখ এ্যাক্টিভিস্ট সদস্য রাজাকার, আল বদর, আল শামসদের সামাজিকভাবে বয়কটের জন্য ফেসবুকে স্ট্যাস্টাস দিয়ে চলেছেন।
সাইবার ক্যাফে ওনার এ্যাসোসিয়েশনের এক কর্মকর্তা বলেন, সারাদেশে কয়েক হাজার সাইবার ক্যাফে তরুণ প্রজন্মের জন্য ফ্রি করে দিয়েছে। তরুণ প্রজন্ম এসব ক্যাফে বসে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি আরও জোরদার করে তুলছে। সাইবার দুনিয়ায় এই দাবির পক্ষে জনমত গড়ে উঠছে। বিশ্ব মিডিয়ায় এক সময় জামায়াতীদের পক্ষ হয়ে বেশ কিছু প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এখন প্রভাবশালী ওই মিডিয়াগুলোই যুদ্ধাপরাধের বিচারের দাবির সংবাদ প্রকাশ করছে। একই সঙ্গে জামায়াতীদের সহিংস কর্মসূচীর প্রতিবেদনও দিচ্ছে। টানা ১০ দিনে আন্দোলনে সাইবার স্পেস সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। রাজপথের আন্দোলনকে বেগবান করে তুলছে। যে যার মতো করে শাহাবাগ প্রজন্ম চত্বরে আসছেন। দিন-রাত লক্ষ মানুষের সেøাগানে সেøাগানে মুখরিত হয়ে আছে। স্রোতের মতো মানুষের ঢল এসে মিলে যাচ্ছে শাহবাগের মিলন মোহনায়। উত্তাল এই আন্দোলনে একটাই দাবি 'যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি'। এ দাবির বাইরে জামায়াতী প্রতিষ্ঠানগুলো বর্জন করা। প্রতি মিনিটে এ্যাক্টিভিস্ট নেটওয়ার্কের সদস্যরা প্রতিষ্ঠানগুলোর তালিকা পোস্ট করছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বাঙালী কমিউনিটির মধ্যে ঝড় উঠেছে। জার্মানি, ফ্রান্স, আমেরিকা, ব্রিটেন, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়াসহ দেশে দেশে শাহবাগ প্রজন্ম চত্বরের সঙ্গে সুর মিলিয়ে একাত্ম হয়েছেন।
এ্যাক্টিভিস্ট সদস্যরা বলেন, জামায়াতীদের মুখপাত্র 'দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকার' ওয়েবসাইট হ্যাকড করে দেয়া হয়েছিল। জামায়াতীদের সব প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট হ্যাক করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এ্যাক্টিভিস্টরা ফেসবুকে সারাদেশে মোমবাতি প্রজ্বলন কর্মসূচী পালনের আহ্বান জানান। মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লাখ শহীদ, দুই লাখ বীরাঙ্গনা মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতেই এই মোমবাতি প্রজ্বলন কর্মসূচী পালন করা হয়েছে। আমরা এটাকে মুক্তিযুদ্ধের অসাম্প্রদায়িক, শোষণমুক্তি, সাম্যের চেতনা বলেছি। এই চেতনা ফিরে আনা পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।
সাইবার ক্যাফে ওনার এ্যাসোসিয়েশনের সাবেক কার্যকরী সদস্য আবুল কালাম আজাদ বলেন, শাহবাগের আন্দোলন আমাদের প্রাণে প্রাণ মিলিয়েছে। আমরা নিজ নিজ উদ্যোগে আমাদের সাইবার ক্যাফেগুলোকে তরুণ প্রজন্মের উন্মুক্ত করে দিয়েছি। যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ বিচারের দাবিতে আমাদের অংশগ্রহণ। বৃহস্পতিবার সারাদিন কয়েক শ' তরুণ-তরুণী যুদ্ধাপারাধীদের বিচারের দাবিতে 'সিটি কম্পিউটার সাইবার ক্যাফেতে' স্ট্যাস্টাস দিয়েছে। সারাদেশে কয়েক হাজার সাইবার ক্যাফের মালিক বিনা টাকায় তরুণ প্রজন্মের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছে। আবুল কালাম আজাদ মনেপ্রাণে বিশ্বাস করেন, নতুন প্রজন্মের এই যুদ্ধে বিজয় হবেই। কারণ ৪২ বছর আগে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে দেশ স্বাধীন হয়েছে। অনেক রক্তের বিনিময়ে এই স্বাধীনতাকে নিয়ে দেশদ্রোহীরা অনেক ষড়যন্ত্র করেছে। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে পাল্টে দিয়েছে। নতুন প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস ফিরিয়ে আনছে। তাদের জানাই লাল সালাম। পৃথিবীর ইতিহাসে নতুন প্রজন্মের মুক্তিযুদ্ধ স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।
মালয়েশিয়া থেকে এম. আমজাদ চৌধুরী রুনু জানিয়েছেন, ফাঁসি ফাঁসি চাই কাদের মোল্লার ফাঁসি চাই স্লোগানে স্লোগানে মুহরীত মালয়েশিয়ার বাংলাদেশ হাইকমিন প্রাঙ্গণ, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মানবতাবিরোধী, যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার দাবিতে মানববন্ধন পালন করা হয়েছে। মালয়েশিয়ার বাংলাদেশ হাইকমিশনের সামনে প্রবাসী বাংলাদেশীরা মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করেন। ১৩ ফেব্রুয়ারী বুধবার দুপুর ১২টায় মানববন্ধন কর্মসূচীতে অংশগ্রহণ করতে হাইকমিশনের সামনে দলবেঁধে ছুটে আসেন প্রবাসীরা। অংশগ্রহণকারীরা বিভিন্ন ফেস্টুন, ব্যানারে লিখে সকল যুদ্ধাপরাধীর সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেন এবং ঢাকার শাহবাগে অনুষ্ঠিত আন্দোলন কর্মসূচীতে একাত্মতা ও সংহতি প্রকাশ করে সমাবেশে সকল রাজাকারের ফাঁসি কার্যকর করে রাজাকার মুক্ত বাংলাদেশ গড়া এবং জামায়াতের রাজনীতি বন্ধ করার আহ্বান জানান। দূতাবাসের ফার্স্ট সেক্রেটারি হালিমুজ্জামানের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।
তথ্যপ্রযুক্তিবিদরা বলেন, এমন একসময় ছিল যখন যুদ্ধ হতো শারীরিক শক্তির জোরে। ঢাল-তলোয়ার-ছুরি, সড়কি-বল্লম ব্যবহার করা হতো এসব যুদ্ধে। এরপর এলো বন্দুক-কামান-বিস্ফোরক ইত্যাদির যুগ। এরপর অত্যাধুনিক যুদ্ধাস্ত্রের জায়গা দখল করে নিল পারমাণবিক অস্ত্র, দৃশ্যমান যুদ্ধে এখনও যা মহাপরাক্রমশালী ভূমিকাটি ধরে রেখেছে বিশ্বব্যাপী।
কিন্তু বর্তমানে তথ্যপ্রযুক্তির বিস্ময়কর উৎকর্ষের ফলে আরো এক ধরনের যুদ্ধ বহুমাত্রিক পরাক্রম নিয়ে স্বমহিমায় আবির্ভূত; এটি ইন্টারনেটভিত্তিক সাইবার যুদ্ধ। তথ্যপ্রযুক্তির অদৃশ্য পথরেখা ধরে দিকে দিকে বিশ্বের এ প্রান্ত থেকে সকল প্রান্তে বিস্তৃত হচ্ছে সাইবার অস্ত্রের অসামান্য প্রভাব। বর্তমান যুগের বিস্ময়কর আবিষ্কার ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিশ্ব-তথ্য-ারের অজস্র অনুষঙ্গ যেমন হাতের মুঠোয় পাওয়া সম্ভব হচ্ছে, তেমনি অন্যের কাছে পাঠানোও সম্ভব হচ্ছে নানা তথ্য, আহ্বান, অনুরোধ ও নির্দেশনা। কম্পিউটারের কি-বোর্ডে ক্লিক করে অতি সহজে তথ্য আদান-প্রদানের এই যে সুযোগ মানুষের হাতের নাগালে, তার শক্তিও অসামান্য। শারীরিক শক্তি, ময়দানের যুদ্ধ বা অস্ত্রের মাধ্যমে যা অনেক সময় করা সম্ভব হয় না, সেখানে সাইবার অস্ত্র বা ইন্টারনেটভিত্তিক ব্লগিং বিস্ময়কর ভূমিকা পালন করতে পারে। এরই প্রকৃষ্ট উদাহরণ শাহবাগ চত্বরে তারুণ্যের মহাজাগরণের উদ্যোক্তা তরুণ ব্লগারদের কর্মতৎপরতা। ইন্টারনেট ব্লগিংয়ের মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে দেশে-বিদেশে তারা যে অভূতপূর্ব গণজাগরণ সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছেন; স্বাধীনতার পক্ষের শক্তিকে যেভাবে আত্মশক্তিতে বলীয়ান করে তুলেছেন, তাকে আগ্নেয়গিরির মহাবিস্ফোরণের সঙ্গে তুলনা করা যায়। বেশ কিছুদিন থেকে জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাস-নৈরাজ্যের কারণে জাতীয় জীবনে যখন চরম অনিশ্চয়তা আর আতঙ্ক বৃদ্ধি পাচ্ছিল; যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল ভেঙ্গে দেয়ার বেআইনী দাবিতে মারমুখী আন্দোলন অব্যাহত রাখার যে স্পর্ধা তারা দেখিয়ে যাচ্ছিল তার বিরুদ্ধে অপরিসীম সাহস, মুক্তিযুদ্ধের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ আর নিখাদ দেশপ্রেমকে সম্বল করে ধূমকেতুর মতো শাহবাগ চত্বরে আবির্ভূত হন আমাদের তরুণ ব্লগাররা।
তরুণ এ্যাক্টিভিস্টরা একদিকে ইন্টারনেট ব্লগিংয়ের মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে সোচ্চার হওয়ার জন্য সর্বশ্রেণীর মানুষকে আহ্বান করছেন, অন্যদিকে জামায়াত-শিবির-স্বাধীনতা-বিরোধীদের নানা অপপ্রচারকে রুখে দিচ্ছেন ব্লগে বস্তুনিষ্ঠ ও ইতিহাসসাশ্রয়ী বিচিত্র তথ্য-উপাত্তের যোগান দিয়ে। পাশাপাশি জামায়াত-শিবিরের বেতনভোগী ব্লগাররা যেসব মন্তব্য আর অশ্লীল অপপ্রচার ব্লগে পোস্ট করছে, মেধাবী সাইবারযোদ্ধারা অপরিসীম নিপুণতায় তারও অনেকটা ব্লগের পেজ থেকে মুছে ফেলতে সক্ষম হচ্ছেন যদিও সবটা এখনও সম্ভব হয়নি। আমাদের তরুণ সাইবারযোদ্ধাদের এই অসাধারণ যুদ্ধ দেশের ইতিহাসে অক্ষয় হয়ে থাকবে চিরকাল।
শুধু শাহবাগ চত্বরের সাইবারযোদ্ধারা নয়, দেশের সকল ব্লগার এবং সাইবার ক্যাফের স্বত্বাধিকারীরাও এই যুদ্ধে শামিল হবেন বলে সবার আশা। যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে নিরঙ্কুশ জনমত গঠনে এবং মুক্তিযুদ্ধবিরোধীদের অপরাজনীতি আর সন্ত্রাস-নৈরাজ্য দমনে এই সাইবার যুদ্ধ যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে তাকে নিরাপদ ও বাধামুক্ত রাখা সংশ্লিষ্ট সবার দায়িত্ব। সেই সঙ্গে জামায়াত-শিবিরের যেসব ব্লগার এখনও তাদের ব্লগের মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধের বিচার ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তির বিরুদ্ধে, বিশেষ করে প্রজন্ম চত্বরের জাগ্রত তরুণদের বিরুদ্ধে কুৎসিতভাবে অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে তা প্রতিহত করতে হবে। এ বিষয়ে ত্বরিত পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে সব ওয়েব পেজ জামায়াতী অপ্রপচারমুক্ত করা অত্যন্ত জরুরী। এর ফলে তারুণ্যের আন্দোলন আরও সহজসাধ্য ও ফলপ্রসূ হবে বলে আশা করা যায়।
সাইবার ক্যাফে ওনার এ্যাসোসিয়েশনের এক কর্মকর্তা বলেন, সারাদেশে কয়েক হাজার সাইবার ক্যাফে তরুণ প্রজন্মের জন্য ফ্রি করে দিয়েছে। তরুণ প্রজন্ম এসব ক্যাফে বসে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি আরও জোরদার করে তুলছে। সাইবার দুনিয়ায় এই দাবির পক্ষে জনমত গড়ে উঠছে। বিশ্ব মিডিয়ায় এক সময় জামায়াতীদের পক্ষ হয়ে বেশ কিছু প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এখন প্রভাবশালী ওই মিডিয়াগুলোই যুদ্ধাপরাধের বিচারের দাবির সংবাদ প্রকাশ করছে। একই সঙ্গে জামায়াতীদের সহিংস কর্মসূচীর প্রতিবেদনও দিচ্ছে। টানা ১০ দিনে আন্দোলনে সাইবার স্পেস সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। রাজপথের আন্দোলনকে বেগবান করে তুলছে। যে যার মতো করে শাহাবাগ প্রজন্ম চত্বরে আসছেন। দিন-রাত লক্ষ মানুষের সেøাগানে সেøাগানে মুখরিত হয়ে আছে। স্রোতের মতো মানুষের ঢল এসে মিলে যাচ্ছে শাহবাগের মিলন মোহনায়। উত্তাল এই আন্দোলনে একটাই দাবি 'যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি'। এ দাবির বাইরে জামায়াতী প্রতিষ্ঠানগুলো বর্জন করা। প্রতি মিনিটে এ্যাক্টিভিস্ট নেটওয়ার্কের সদস্যরা প্রতিষ্ঠানগুলোর তালিকা পোস্ট করছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বাঙালী কমিউনিটির মধ্যে ঝড় উঠেছে। জার্মানি, ফ্রান্স, আমেরিকা, ব্রিটেন, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়াসহ দেশে দেশে শাহবাগ প্রজন্ম চত্বরের সঙ্গে সুর মিলিয়ে একাত্ম হয়েছেন।
এ্যাক্টিভিস্ট সদস্যরা বলেন, জামায়াতীদের মুখপাত্র 'দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকার' ওয়েবসাইট হ্যাকড করে দেয়া হয়েছিল। জামায়াতীদের সব প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট হ্যাক করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এ্যাক্টিভিস্টরা ফেসবুকে সারাদেশে মোমবাতি প্রজ্বলন কর্মসূচী পালনের আহ্বান জানান। মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লাখ শহীদ, দুই লাখ বীরাঙ্গনা মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতেই এই মোমবাতি প্রজ্বলন কর্মসূচী পালন করা হয়েছে। আমরা এটাকে মুক্তিযুদ্ধের অসাম্প্রদায়িক, শোষণমুক্তি, সাম্যের চেতনা বলেছি। এই চেতনা ফিরে আনা পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।
সাইবার ক্যাফে ওনার এ্যাসোসিয়েশনের সাবেক কার্যকরী সদস্য আবুল কালাম আজাদ বলেন, শাহবাগের আন্দোলন আমাদের প্রাণে প্রাণ মিলিয়েছে। আমরা নিজ নিজ উদ্যোগে আমাদের সাইবার ক্যাফেগুলোকে তরুণ প্রজন্মের উন্মুক্ত করে দিয়েছি। যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ বিচারের দাবিতে আমাদের অংশগ্রহণ। বৃহস্পতিবার সারাদিন কয়েক শ' তরুণ-তরুণী যুদ্ধাপারাধীদের বিচারের দাবিতে 'সিটি কম্পিউটার সাইবার ক্যাফেতে' স্ট্যাস্টাস দিয়েছে। সারাদেশে কয়েক হাজার সাইবার ক্যাফের মালিক বিনা টাকায় তরুণ প্রজন্মের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছে। আবুল কালাম আজাদ মনেপ্রাণে বিশ্বাস করেন, নতুন প্রজন্মের এই যুদ্ধে বিজয় হবেই। কারণ ৪২ বছর আগে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে দেশ স্বাধীন হয়েছে। অনেক রক্তের বিনিময়ে এই স্বাধীনতাকে নিয়ে দেশদ্রোহীরা অনেক ষড়যন্ত্র করেছে। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে পাল্টে দিয়েছে। নতুন প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস ফিরিয়ে আনছে। তাদের জানাই লাল সালাম। পৃথিবীর ইতিহাসে নতুন প্রজন্মের মুক্তিযুদ্ধ স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।
মালয়েশিয়া থেকে এম. আমজাদ চৌধুরী রুনু জানিয়েছেন, ফাঁসি ফাঁসি চাই কাদের মোল্লার ফাঁসি চাই স্লোগানে স্লোগানে মুহরীত মালয়েশিয়ার বাংলাদেশ হাইকমিন প্রাঙ্গণ, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মানবতাবিরোধী, যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার দাবিতে মানববন্ধন পালন করা হয়েছে। মালয়েশিয়ার বাংলাদেশ হাইকমিশনের সামনে প্রবাসী বাংলাদেশীরা মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করেন। ১৩ ফেব্রুয়ারী বুধবার দুপুর ১২টায় মানববন্ধন কর্মসূচীতে অংশগ্রহণ করতে হাইকমিশনের সামনে দলবেঁধে ছুটে আসেন প্রবাসীরা। অংশগ্রহণকারীরা বিভিন্ন ফেস্টুন, ব্যানারে লিখে সকল যুদ্ধাপরাধীর সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেন এবং ঢাকার শাহবাগে অনুষ্ঠিত আন্দোলন কর্মসূচীতে একাত্মতা ও সংহতি প্রকাশ করে সমাবেশে সকল রাজাকারের ফাঁসি কার্যকর করে রাজাকার মুক্ত বাংলাদেশ গড়া এবং জামায়াতের রাজনীতি বন্ধ করার আহ্বান জানান। দূতাবাসের ফার্স্ট সেক্রেটারি হালিমুজ্জামানের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।
তথ্যপ্রযুক্তিবিদরা বলেন, এমন একসময় ছিল যখন যুদ্ধ হতো শারীরিক শক্তির জোরে। ঢাল-তলোয়ার-ছুরি, সড়কি-বল্লম ব্যবহার করা হতো এসব যুদ্ধে। এরপর এলো বন্দুক-কামান-বিস্ফোরক ইত্যাদির যুগ। এরপর অত্যাধুনিক যুদ্ধাস্ত্রের জায়গা দখল করে নিল পারমাণবিক অস্ত্র, দৃশ্যমান যুদ্ধে এখনও যা মহাপরাক্রমশালী ভূমিকাটি ধরে রেখেছে বিশ্বব্যাপী।
কিন্তু বর্তমানে তথ্যপ্রযুক্তির বিস্ময়কর উৎকর্ষের ফলে আরো এক ধরনের যুদ্ধ বহুমাত্রিক পরাক্রম নিয়ে স্বমহিমায় আবির্ভূত; এটি ইন্টারনেটভিত্তিক সাইবার যুদ্ধ। তথ্যপ্রযুক্তির অদৃশ্য পথরেখা ধরে দিকে দিকে বিশ্বের এ প্রান্ত থেকে সকল প্রান্তে বিস্তৃত হচ্ছে সাইবার অস্ত্রের অসামান্য প্রভাব। বর্তমান যুগের বিস্ময়কর আবিষ্কার ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিশ্ব-তথ্য-ারের অজস্র অনুষঙ্গ যেমন হাতের মুঠোয় পাওয়া সম্ভব হচ্ছে, তেমনি অন্যের কাছে পাঠানোও সম্ভব হচ্ছে নানা তথ্য, আহ্বান, অনুরোধ ও নির্দেশনা। কম্পিউটারের কি-বোর্ডে ক্লিক করে অতি সহজে তথ্য আদান-প্রদানের এই যে সুযোগ মানুষের হাতের নাগালে, তার শক্তিও অসামান্য। শারীরিক শক্তি, ময়দানের যুদ্ধ বা অস্ত্রের মাধ্যমে যা অনেক সময় করা সম্ভব হয় না, সেখানে সাইবার অস্ত্র বা ইন্টারনেটভিত্তিক ব্লগিং বিস্ময়কর ভূমিকা পালন করতে পারে। এরই প্রকৃষ্ট উদাহরণ শাহবাগ চত্বরে তারুণ্যের মহাজাগরণের উদ্যোক্তা তরুণ ব্লগারদের কর্মতৎপরতা। ইন্টারনেট ব্লগিংয়ের মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে দেশে-বিদেশে তারা যে অভূতপূর্ব গণজাগরণ সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছেন; স্বাধীনতার পক্ষের শক্তিকে যেভাবে আত্মশক্তিতে বলীয়ান করে তুলেছেন, তাকে আগ্নেয়গিরির মহাবিস্ফোরণের সঙ্গে তুলনা করা যায়। বেশ কিছুদিন থেকে জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাস-নৈরাজ্যের কারণে জাতীয় জীবনে যখন চরম অনিশ্চয়তা আর আতঙ্ক বৃদ্ধি পাচ্ছিল; যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল ভেঙ্গে দেয়ার বেআইনী দাবিতে মারমুখী আন্দোলন অব্যাহত রাখার যে স্পর্ধা তারা দেখিয়ে যাচ্ছিল তার বিরুদ্ধে অপরিসীম সাহস, মুক্তিযুদ্ধের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ আর নিখাদ দেশপ্রেমকে সম্বল করে ধূমকেতুর মতো শাহবাগ চত্বরে আবির্ভূত হন আমাদের তরুণ ব্লগাররা।
তরুণ এ্যাক্টিভিস্টরা একদিকে ইন্টারনেট ব্লগিংয়ের মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে সোচ্চার হওয়ার জন্য সর্বশ্রেণীর মানুষকে আহ্বান করছেন, অন্যদিকে জামায়াত-শিবির-স্বাধীনতা-বিরোধীদের নানা অপপ্রচারকে রুখে দিচ্ছেন ব্লগে বস্তুনিষ্ঠ ও ইতিহাসসাশ্রয়ী বিচিত্র তথ্য-উপাত্তের যোগান দিয়ে। পাশাপাশি জামায়াত-শিবিরের বেতনভোগী ব্লগাররা যেসব মন্তব্য আর অশ্লীল অপপ্রচার ব্লগে পোস্ট করছে, মেধাবী সাইবারযোদ্ধারা অপরিসীম নিপুণতায় তারও অনেকটা ব্লগের পেজ থেকে মুছে ফেলতে সক্ষম হচ্ছেন যদিও সবটা এখনও সম্ভব হয়নি। আমাদের তরুণ সাইবারযোদ্ধাদের এই অসাধারণ যুদ্ধ দেশের ইতিহাসে অক্ষয় হয়ে থাকবে চিরকাল।
শুধু শাহবাগ চত্বরের সাইবারযোদ্ধারা নয়, দেশের সকল ব্লগার এবং সাইবার ক্যাফের স্বত্বাধিকারীরাও এই যুদ্ধে শামিল হবেন বলে সবার আশা। যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে নিরঙ্কুশ জনমত গঠনে এবং মুক্তিযুদ্ধবিরোধীদের অপরাজনীতি আর সন্ত্রাস-নৈরাজ্য দমনে এই সাইবার যুদ্ধ যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে তাকে নিরাপদ ও বাধামুক্ত রাখা সংশ্লিষ্ট সবার দায়িত্ব। সেই সঙ্গে জামায়াত-শিবিরের যেসব ব্লগার এখনও তাদের ব্লগের মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধের বিচার ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তির বিরুদ্ধে, বিশেষ করে প্রজন্ম চত্বরের জাগ্রত তরুণদের বিরুদ্ধে কুৎসিতভাবে অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে তা প্রতিহত করতে হবে। এ বিষয়ে ত্বরিত পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে সব ওয়েব পেজ জামায়াতী অপ্রপচারমুক্ত করা অত্যন্ত জরুরী। এর ফলে তারুণ্যের আন্দোলন আরও সহজসাধ্য ও ফলপ্রসূ হবে বলে আশা করা যায়।
__._,_.___