২৫ মার্চ রাতে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে উপস্থিত একজনের স্মৃতিচারণ : পাকিস্তানী সৈন্যরা ধ্বংসযজ্ঞ শুরু করার পর বঙ্গবন্ধু বলেন 'বাংলাদেশ আজ স্বাধীন'
ঢাকা, ২৫ মার্চ, ২০১৩ (বিডিএনএন২৪) :- ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানী সৈন্যরা ধ্বংসযজ্ঞ শুরু করে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কে বঙ্গবন্ধুর বাড়ির দিকে অগ্রসর হতে থাকলে বঙ্গবন্ধু বলেন, 'আজ বাংলাদেশ স্বাধীন হলো।' ওই সময় বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে উপস্থিত থাকা একজন প্রত্যক্ষদর্শী সেদিনের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে এ কথা জানান। হাজী গোলাম মোর্শেদ বলেন, পাকিস্তানী সৈন্যরা যখন বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে অভিযান চালায় তখন বঙ্গবন্ধু বলেন, 'বাংলাদেশ আজ স্বাধীন হলো। ওরা আমাকের গ্রেফতার করতে আসছে। তবে আমি ঠিক করেছি আমি বাড়িতেই থাকবো।'
হাজী মোরশেদের বয়স এখন ৮১ বছর। জাতির পিতার খুবই ঘনিষ্ঠ ছিলেন তিনি। অধিকাংশ সময় ৩২ নম্বরের বাড়িতেই কাটাতেন। মোরশেদ বলেন, ওই রাতে বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে কেবল বেগম মুজিব ও ছোট ছেলে শেখ রাসেল ছাড়া কয়েকজন কাজের লোক ছিলো। রাত ১০টায় বঙ্গবন্ধু তাঁর ঘরে শুয়ে চোখ বন্ধ করে এই মন্তব্য করেন। এর পর পরই ছাত্রনেতা তবিবুর রহমান বঙ্গবন্ধুর সাথে দেখা করতে আসেন এবং বঙ্গবন্ধুকে বাড়ি ছেড়ে চলে যাবার জন্য অনুরোধ করেন।
ছাত্রনেতা বলেন, 'পাকিস্তানী সৈন্যরা তাকে হত্যা করবে।' জবাবে বঙ্গবন্ধু বলেন, 'যদি তারা আমাকে না পায় তাহলে তারা আরো ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালাবে এবং শহর ধ্বংস করে দেবে।' এ কথা শুনে ভেজা চোখে তবিবুর চলে যান। মোরশেদ বলেন, ওইদিনই রাত সাড়ে এগারটার দিকে তিনি একটি আকস্মিক ফোন পান। ফোনটি শহরের বলধা গার্ডেন থেকে করা হয়েছে। ফোনে বলা হলো- বঙ্গবন্ধুকে জানান যে, ঘোষণাটি (সম্ভবত স্বাধীনতার ঘোষণা) প্রচার করা হয়েছে। এখন সে (কলার) কি করবে? আমি সংবাদটি বঙ্গবন্ধুকে জানালে তিনি আমাকে বললেন, ওকে যন্ত্রটি বিকল কর দিয়ে পলিয়ে যেতে বলো।
মোরশেদ উল্লেখ করেন, ওইদিন গভীর রাতে সারা আকাশ আলোর ঝলকানিতে উজ্জ্বল হয়ে উঠে। বঙ্গবন্ধু তখন থাকা তাকে জিজ্ঞেস করেন, 'আলোর ঝলকানি কোন্ দিক থেকে আসছে?' এই বলে তিনি উপর তলায় উঠে যান। মুহূর্তের মধ্যে কেউ বলে উঠলো- 'হ্যান্ডসআপ- মাত্ মারো।' তখন আমি সিঁড়ির কাছে টেলিফোন সেটের পাশে দাঁড়িয়েছিলাম। মুহূর্তের মধ্যে পেছন থেকে কেউ কিছু দিয়ে আমার মাথায় আঘাত করলো এবং আমি জ্ঞান হারালাম। এরপর সেই রাতের আর কোন ঘটনা আমার স্মরণে নেই।
ওইরাতের আরেকজন প্রত্যক্ষদর্শী হলেন- বিএনপি'র সাবেক প্রতিমন্ত্রী এ কে এম মোশাররফ হোসেন- তিনি তখন ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কে বঙ্গবন্ধুর পাশের বাড়িতে থাকতেন। তিনি বলেন, পাকিস্তানি সৈন্যরা গুলি চালাতে চালাতে বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে প্রবেশ করে। উদ্দেশ্য ছিলো প্রতিবেশীদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করা। তিনি শুনতে পান যে, বঙ্গবন্ধু চিৎকার করে বলছেন, 'গুলি থামাও' এবং পরক্ষণেই গুলির শব্দ থেমে যায়।
পাকিস্তানের সাবেক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জহির আলম খান তার বইতে লিখেছেন কিভাবে তার নেতৃত্বে (তখন তিনি লেফটেন্যান্ট কর্নেল ছিলেন) বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়। আলম তার লেখেন, তিনি এক মেজরকে নির্দেশ দেন বঙ্গবন্ধুর বাড়ির উপরে ওঠার দরজা ভেঙ্গে ফেলতে। এই নির্দেশ দিয়ে তিনি নিচে নেমে যান। হঠাৎ তিনি মেশিনগানের গুলি ও গ্রেনেড ফাটানোর শব্দ শুনে দ্রুত উপরে উঠে যান। তিনি ভেবেছিলেন কেউ বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছে হয়তো। আলম উপরে গিয়ে দেখতে পান ভাঙ্গা দরজার সামনে বঙ্গবন্ধু দাঁড়িয়ে। তখন তিনি বঙ্গবন্ধুকে বললেন- 'আমার সাথে আপনাকে যেতে হবে।'
ব্রিগেডিয়ার আলম আরো লিখেছেন যে, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে জিপে ওঠার সময় বঙ্গবন্ধু বলেন তিনি তাঁর টোব্যাকো পাইপ ফেলে এসেছেন। আলম ওই পাইপ আনার জন্য বঙ্গবন্ধুর সাথে উপরে যান। বঙ্গবন্ধু তখন আলমকে বলেন- 'আমাকে গ্রেফতার করার জন্য এত পরিশ্রমের দরকার নেই।' জবাবে আলম বঙ্গবন্ধুকে বলেছিলেন- 'পাকিস্তানি সৈন্যরা দেখাতে চায় যে, তারা শেখ মুজিবকে গ্রেফতার করতে পারে।'
__._,_.___