Banner Advertiser

Monday, April 15, 2013

[mukto-mona] সংবাদপত্রের স্বাধীনতা দুর্বৃত্তপনা করার লাইসেন্স নয়




মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০১৩, ৩ বৈশাখ ১৪২০
সংবাদপত্রের স্বাধীনতা দুর্বৃত্তপনা করার লাইসেন্স নয়
আবদুল মান্নান
বিএনপি-জামায়াতের মুখপত্র দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে গত বৃহস্পতিবার সকালে তাঁর অফিস হতে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। মাহমুদুর রহমান গ্রেফতারের ভয়ে গত ডিসেম্বর মাস হতে তাঁর দফতরকেই বাড়ি বানিয়ে সেখানেই অবস্থান করছিলেন। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, গণমাধ্যম আর মত প্রকাশের স্বাধীনতার নামে তিনি দেশে যে ভয়ঙ্কর ও বিপজ্জনক খেলা শুরু করেছেন, বাংলাদেশ কেন যে কোন সভ্য ও গণতান্ত্রিক দেশেই তিনি আইনের সম্মুখীন হতে বাধ্য। মাহমুদুর রহমানের গ্রেফতারে পেশাদার সাংবাদিক মহলের বৃহত্তর অংশটি হাঁফছেড়ে বাঁচলেও সরকারের ওপর ভীষণভাবে চটেছেন বিরোধীদলীয় নেত্রী, জামায়াত-হেফাজত আর বিভিন্ন মৌলবাদী, ধর্মান্ধ ও চরম প্রতিক্রিয়াশীল বুদ্ধিজীবী গোষ্ঠী এবং একশ্রেণীর মধ্যরাতের টকশো অংশগ্রহণকারীরা। বেগম জিয়া মাহমুদুর রহমানের গ্রেফতারকে সরকারের বাকশালী চরিত্রের বহির্প্রকাশ আবিষ্কার করেছেন। বিএনপি'র নব্য পরামর্শদাতা কবি ফরহাদ মজহার মন্তব্য করেছেন, সরকারের ওপর পাকিস্তানী ভূত চেপেছে এবং ঘোষণা করেছেন, তিনি যুদ্ধ করে এই ভূত তাড়াবেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন স্বনামধন্য টকশো বিশারদ মন্তব্য করেছেন মাহমুদুরের মতো একজন সাংবাদিককে গ্রেফতার করে সরকার চরম অন্যায় করেছে। হেফাজত পার্টি মাহমুদুর রহমানকে অবিলম্বে মুক্তি না দিলে দেশ অচল করে দেয়ার হুমকি দিয়েছে। এটা এখন পরিষ্কার সকলের অলক্ষ্যে হেফাজত মাহমুদুর রহমানদের সহায়তায় বিদেশী অর্থে পুষ্ট হয়ে এখন বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের জন্য এক বড় ধরনের হুমকি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। মাহমুদুর রহমানের গ্রেফতারের সংবাদটি শুক্রবার বিভিন্ন পত্রিকায় নানাভাবে প্রকাশিত হয়েছে। কোন কোন পত্রিকায় খবরটিকে শুধু খবর হিসেবে ছেপেছে। কোন কোনটিতে এক ধরনের আহাজারি ছিল। দৈনিক আমাদের সময় হেডিং করেছে ব্লগার বা মাহমুদুর রহমান কারো গ্রেফতারই জরুরী ছিল না। তবে সবচেয়ে জুৎসই হেডিংটা দিয়েছে দৈনিক কালের কণ্ঠ। তারা লিখেছে 'মাহমুদুর রহমান অবশেষে গ্রেফতার।' অর্থাৎ মাহমুদুর রহমানের গ্রেফতারটা প্রত্যাশিত ছিল। 
মাহমুদুর রহমানের সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত কোন পরিচয় নেই । পরিচয় গণমাধ্যমের বদৌলতে যখন তিনি বিগত চারদলীয় জোট সরকারের আমলে প্রথমে বিনিয়োগ বোর্ডের নির্বাহী চেয়ারম্যান ও পরে বেগম জিয়ার জ্বালানি উপদেষ্টা হিসেবে পর্দায় আবির্ভূত হয়েছিলেন । বিনিয়োগ বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে তিনি ভারতের টাটা শিল্পগোষ্ঠীকে এই আশ্বাস দিলেন যে, বাংলাদেশ টাটাকে এদেশে ইস্পাত কারখানা প্রতিষ্ঠা করার জন্য বাংলাদেশী শিল্পোদ্যোক্তাদের চেয়ে কম মূল্যে গ্যাস সরবরাহ করবেএ নিয়ে চারদিকে হৈচৈ পড়ে গেল। পরে মাহমুদুর রহমান তার সিদ্ধান্ত হতে পিছিয়ে আসেন। সিপিডি ২০০৬ সালের আগস্ট মাসে বিনিয়োগ বোর্ডের কিছু পরিসংখ্যান ও তথ্য নিয়ে প্রশ্ন তুললে তাতে মাহমুদুর রহমান ভীষণ ক্ষিপ্ত হয়ে ড. রেহমান সোবহান, ড. দেবপ্রিয়, সৈয়দ মঞ্জুর এলাহি, ড. সাইদুজ্জামান, লায়লা কবির মতো সিপিডি'র সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ও দেশের বরেণ্য ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করে সংবাদপত্রের শিরোনাম হন। তিনি ড. দেবপ্রিয় সম্পর্কে এমনও মন্তব্য করেন যে তার এ দেশে থাকার কোন অধিকার নেই। তারপর তার দেশ কাঁপানো কীর্তি ছিল উত্তরা ষড়যন্ত্র, যখন তিনি ২০০৬ সালের অনুষ্ঠিতব্য সাধারণ নির্বাচনের প্রাক্কালে সারাদেশে চরম রাজনৈতিক অস্থিরতার মাঝে ২৪ নবেম্বর অনেক আমলা ও গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যক্তিদের নিয়ে উত্তরাস্থ তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে এক গোপন বৈঠকে মিলিত হন। গণমাধ্যম পুরো বিষয়টি টের পেয়ে সেই রাতে সেই কাসিমবাজার কুঠিতে হানা দিয়ে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচন নিয়ে এক সম্ভাব্য ষড়যন্ত্র ভ-ুল করে দেয় । ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে মাহমুদুর রহমান আর শফিক রেহমান বিএনপি'র নির্বাচনী প্রচারণায় বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। তবে তারা দু'জনেই যখনই টিভিতে বিএনপি'র বক্তব্য নিয়ে হাজির হয়েছেন তাদের বিরক্তিকর বাচন ভঙ্গি, খোঁড়া যুক্তি আর কৌতুকপূর্ণ বক্তব্য শুধু দর্শক শ্রোতাদের বিরক্তই করেনি তারা যখনই টিভি পর্দার সামনে এসেছেন বিএনপি নিশ্চিতভাবে কয়েক হাজার ভোট হারিয়েছে। 
দৈনিক আমার দেশ বিএনপি'র মুখপত্র হিসেবে প্রকাশিত হলেও শুরুতে তার এক ধরনের পেশাদার মান বজায় ছিল; কারণ বিভিন্ন সময়ে সেটির সম্পাদনার দায়িত্বে ছিলেন দু'জন পেশাদার সাংবাদিকÑআতাউস সামাদ ও আমানুল্লাহ কবির। সাংবাদিকতা পেশাটিকে একটি অত্যন্ত মহত ও দায়িত্বশীল পেশা হিসেবে মনে করা হয়। জাতীয় সংসদ, বিচারালয় ও নির্বাহীর পরে স্বাধীন গণমাধ্যমকে গণতন্ত্রের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ হিসেবে দেখা হয়। এই চারটি স্তম্ভ সঠিকভাবে কাজ করলে কোন দেশে গণতন্ত্র হুমকির সম্মুখীন হয় না। মধ্যপ্রাচ্যের আরব দেশগুলোতে এই সবের কোনটিই সঠিকভাবে কাজ করে না বলে সেখানে গণতন্ত্র এখনো সোনার হরিণ। 
বাংলাদেশের গণমাধ্যমের একটি সোনালী অতীত ছিল। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন হতে শুরু করে আইউববিরোধী আন্দোলন, ছয় দফা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণআন্দোলন, সত্তরের নির্বাচন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, এরশাদবিরোধী আন্দোলনে বাংলাদেশের গণমাধ্যম অনেক সাহসী ও ঐতিহাসিক ভূমিকা রেখেছে। এই দেশের সংবাদপত্র জগৎকে মওলানা আকরম খাঁ, তোফাজ্জল হোসেন (মানিক মিয়া), জহুর হোসেন, আবদুস সালাম, ওবায়দুল হক, আহমেদুল কবির, শামসুর রাহমান, সন্তোষ গুপ্ত, কে জি মুস্তাফা, বজলুর রহমান, ওয়াহিদুল হক প্রমুখ প্রতিথযশা সাংবাদিক-সম্পাদক আলোকিত করেছেন। তাঁদের পথ ধরেই পরবর্তীকালে আরো অনেক পেশাদার সাংবাদিক উঠে এসেছেন এবং বাংলাদেশের সাংবাদিকতার মানকে ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছেন। কিন্তু তাঁদের সেই সব অর্জনকে ম্লান করে দেন মাহমুদুর রহমানের মতো একজন বাইচান্স সম্পাদক বা সাংবাদিকরা যাঁরা সাংবাদিকতা পেশার ন্যূনতম নীতিমালা মানতেও নারাজ অথবা অক্ষম। 
দৈনিক আমার দেশ যেহেতু বিএনপি'র মুখপত্র হিসেবেই যাত্রা শুরু করেছিল সেহেতু তার একটা সরকারবিরোধী ভূমিকা থাকবে সেটাই স্বাভাবিক। আতাউস সামাদ বা আমানুল্লাহ কবির যতদিন এই পত্রিকাটির দায়িত্বে ছিলেন পত্রিকাটির সরকারবিরোধী ভূমিকাও একটি নীতির মধ্যে পরিচালিত হতো। যখন হতে মাহমুদুর রহমান নিজে তাদের স্থলাভিষিক্ত হলেন তখন হতে সব কিছু ওলট পালট হয়ে গেল। বাজারে তার বিরুদ্ধে একটা জোর অভিযোগ আছে যে, তিনি পাকিস্তানের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই-এর নির্দেশনা ও বিরাট অঙ্কের অর্থ দ্বারা পরিচালিত হন। এই কাজে তিনি একা নন, আরও ক'জন ব্যবসায়ী, সাবেক সামরিক বেসামরিক আমলা, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও কিছু সরকার ঘনিষ্ঠ লোকজনও আছে। তারা নিয়মিত গুলশান ও এয়ারপোর্ট রোডের কোন কোন তারকা খচিত হোটেল অথবা কারও কারও ব্যবসায়িক দফতর বা নিজস্ব বাসভবনে মিলিত হন। এটি এখন দিবালোকের মতো পরিষ্কার যে বাংলাদেশে বর্তমানে আইএসআই ওভারটাইম কাজ করছে যাতে মহাজোট সরকার পদে পদে বিপদে পড়ে, সরকার পরিচালনায় ব্যর্থ হয় এবং আগামী নির্বাচনে যেকোন উপায়ে হোক বিএনপি-জামায়াত জোটকে ক্ষমতায় বসানো যায়। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় থাকলে এদেশে ঘাঁটি গেঁড়ে তাদের অনেক কাজ কর্ম চালাতে অসুবিধা। সরকারের কোন কোন অদূরদর্শী কার্জকলাপও তাদের অনেক সময় সহায়তা করে। 
মাহমুদুর রহমান তার প্রথম নীতিবিরোধী কাজটি শুরু করেন যখন তিনি তার পত্রিকায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারপতি নিজামুল হকের সঙ্গে ব্রাসেল্সে অবস্থানরত আর একজন আইনবিদের স্কাইপে কথোপকথনের টেইপ ছাপানো শুরু করে। এর মূল্য উদ্দেশ্য পুরো বিচার কার্যক্রমকে ক্ষতিগ্রস্ত করা। দৈনিক আমার দেশের সবচেয়ে ন্যক্কারজনক ভূমিকা আরম্ভ হয় শাহবাগ গণজাগরণ মঞ্চের কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর হতেই। বাংলাদেশের মতো একটি স্বল্পশিক্ষিত ধর্মভীরু মানুষের দেশে ধর্মকে পুঁজি করে ফায়দা লোটা খুবই সহজ এবং সেই কাজটিই মাহমুদুর রহমান তাঁর পত্রিকাকে ব্যবহার করে করেছেন। প্রথমে তিনি শাহবাগ চত্বরে ফ্যাসিবাদের পদধ্বনি শুনতে পেয়েছেন। তারপর সেখানে তিনি নাস্তিক আবিষ্কার করেছেন। তারপর যে ন্যক্কারজনক এবং ভয়াবহ কাজটি তিনি করেছেন তা হচ্ছে ব্লগারদের দিয়ে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগার মতো অনেক অসত্য বানোয়াট বক্তব্য জন্ম দিয়েছেন যা শাহবাগে চত্বরের ব্লগারদের ছিল না বলে তারা পরিষ্কার ভাষায় বলেছেন। তারপরও মাহমুদুর রহমান এই অসত্য ব্লগগুলো তাঁর পত্রিকার মাধ্যমে প্রচার করেছেন। যেই কাজটি যতেœর সঙ্গে জামায়াতের মুখপত্র নয়া দিগন্ত ও সংগ্রামও করেছে। এই সব অপকর্মের ফলে আসল ব্লগাররা বিপদের সম্মুখীন হয়েছেন এবং একজন ব্লগার কিছু উন্মাদের হাতে নির্মমভাবে নিহত হয়েছেন। ব্লগ বা ইন্টারনেট সম্পর্কে যাঁরা খোঁজ খবর রাখেন তাঁরা জানেন যে একজনের নামে একটি এ্যাকাউন্ট খুলে যে কেউ সেখানে ব্লগিং করতে বা মন্তব্য লিখতে পারে। কিছুদিন আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামেও ফেসবুকে একটি এ্যাকাউন্ট ছিল। দৈনিক আমার দেশ ও বাকি দুটি পত্রিকা কী রকম জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছে তার দুটি উদাহরণ। তুরস্কের একটি উৎসবের ছবিকে এই পত্রিকাগুলোতে এই শিরোনামে ছাপা হলো যে গোলাম আযমের বিচারের প্রতিবাদে তুরস্কে লাখ লাখ মানুষের প্রতিবাদ সমাবেশ চলছে। প্রতিবছর পবিত্র কাবা শরীফের গিলাফ পরিবর্তনের সময় কাবা শরীফের ইমাম সাহেবরা গিলাফ ধরে একটা ফটো সেশন করেন। গত অক্টোবর মাসে তোলা এমন একটি ছবিকে দৈনিক আমার দেশ ও সংগ্রাম প্রকাশ করল এই বলেÑকাবা শরীফের ইমামরা দেলওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির প্রতিবাদে মিছিল করছেন। পবিত্র কাবা শরীফকে নিয়ে জালিয়াতিরও একটা সীমা আছে।
দৈনিক আমার দেশ জালিয়াতিতে তার বাকি দুই সতীর্থকে পিছনে ফেলে দিল যখন শাহবাগ চত্বর নাস্তিকে ভরে গেছে, তারা নিয়মিত আল্লাহ-রসুলকে নিয়ে ব্যঙ্গক্তি করছে ইত্যাদি অসত্য আবর্জনা নিয়মিত প্রথম পৃষ্ঠায় ছাপিয়ে সারাদেশের ধর্মপরায়ণ সাধরণ মানুষকে উস্কানি দেয়া শুরু করল। পুনর্জন্ম লাভ করল মৃত প্রায় হেফাজত পার্টি। অভিযোগ আছে এই সম্পূর্ণ কর্মকা-ে আইএসআই প্রায় একশত কোটি টাকা খরচ করে এবং পুরো হেফাজতি লংমার্চ পরিচালনায় মাহমুদুর রহমানসহ জামায়াতের একাধিক নেতা বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। তাদের নিজেদের ভিতর চালাচালি হওয়া অনেক কথোপকথনই এখন ইউটিউবে পাওয়া যায়। এই সব নাজায়েজ কর্মকা-ের ফলে সারাদেশে শুরু হলো এক ভয়াবহ অস্থিরতা, যার ফলশ্রুতিতে ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা, তাদের মন্দিরে হামলা, মসজিদে আগুন, পতাকা পোড়ানো, শহীদ মিনারে অগ্নি সংযোগ, নানা ধরনের নাশকতা মূলক কর্মকা-, সন্ত্রাস, আটজন পুলিশসহ প্রায় একশতের বেশি মানুষ হত্যা। সর্বশেষ তিনটি নারকীয় হত্যাকা- ঘটে গত বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে। এই সবের দায়িত্ব তো কিছুতেই মাহমুদুর রহমান ও তাঁর ইন্ধনদাতারা এড়াতে পারেন না । ১৯৯০ সালে ভারতের বাবরী মসজিদ গুঁড়িয়ে দেয়াকে কেন্দ্র করে দৈনিক ইনকিলাব এমন একটি ভূমিকা পালন করেছিল; যার ফলে বাংলাদেশে ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল। অদ্ভুত কা- হচ্ছে, সেই ইনকিলাব এতদিন মহাজোট সরকারের লাগামহীন পৃষ্ঠপোষকতা পেয়েছে আর এখন সেটি আবার তার পূর্বাবস্থায় ফিরে গেছে । আওয়ামী লীগ আবারো প্রমাণ করলÑঐতিহাসিকভাবেই তারা শত্রু-মিত্র চিনতে সব সময় ভুল করেছে। 
মাহমুদুর রহমানের গ্রেফতারের পর অনেকেই বেশ মাতম শুরু করেছেন। তাদের মতে, সরকার মতপ্রকাশ ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ করেছে। স্বাধীনতা কখনও দুর্বৃত্তপনা করার লাইসেন্স হতে পারে না যা দৈনিক আমার দেশ আর তার সম্পাদক এতদিন ধরে করে এসেছে । এই দুর্বৃত্তপনার বিরুদ্ধে সরকার যদি আরও আগে ব্যবস্থা নিত তাহলে দেশের ভিতর সংঘটিত অনেক দুঃখজনক ঘটনা ও জানমালের ক্ষতি রোধ করা যেত। কিসের আশায় সরকার এতদিন অপেক্ষা করেছে তা অনেকের কাছে এক রহস্যময় বিস্ময়। এই সব বিষয়ে কোন সরকারেরই আস্কারা দেয়া উচিত নয় তাতে সরকারের দুর্বলতা প্রকাশ পায়। দুর্বল সরকারকে সকলে পদাঘাত করতে পছন্দ করে। সরকার শক্ত থাকলে জামায়াত বলি আর হেফাজত, কোন ভয়াবহ সন্ত্রাসী দল বা গোষ্ঠীই দেশের ভিতরে টিকে থাকতে পারত না। দেরিতে হলেও সরকার দুর্বৃত্তদের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া শুরু করেছে। দেশের মানুষ আশা করে নিজের দলের হোক বা অন্য দলের বা যে কোন পেশার, সকল দুর্বৃত্তকে আইনের আওতায় এনে তাদের বিরুদ্ধে অচিরেই সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সক্ষম হবে এবং রাষ্ট্রের ওপর সরকারের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ কায়েম করবে। সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলবে। ফরহাদ মজহার বেগম জিয়ার সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেছেন বলে ইন্টারনেটে সংবাদ প্রচারিত হয়েছে। বেগম জিয়া সিঙ্গাপুর হতে ফেরার পর তারেক জিয়া সৌদি আরব এসেছেন। ওমরাহ পালন শেষে দলীয় চানক্যদের সঙ্গে তিনি সেখানে বৈঠক করেছেন। এরপর তার যুক্তরাষ্ট্র সফরের কথা রয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চলমান বিচার প্রক্রিয়াকে বানচাল বা শ্লথ করার নানা ফন্দি ফিকির শুরু হয়েছে। আপত দৃষ্টিতে মনে হচ্ছে, ষড়যন্ত্রের সব চাকা দ্রুত সচল হচ্ছে। সরকার যদি চোখকান খোলা না রাখে তাহলে বিপদ অনিবার্য। 
সকলকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা। 


লেখক : শিক্ষাবিদ ও বিশ্লেষক। এপ্রিল ১৩, ২০১৩
http://www.dailyjanakantha.com/news_view.php?nc=16&dd=2013-04-16&ni=132301

---------- Forwarded message ----------
From: Mohiuddin Anwar <mohiuddin@netzero.net>
Date: 2013/4/15
Subject: Mahumur's arrest and freedom of Press

মাহমুদুর রহমানের গ্রেফতারোত্তর রাজনৈতিক বাস্তবতা
আবদুল আউয়াল ঠাকুর : দৈনিক আমার দেশের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের গ্রেফতার খবরে বিস্মিত হবার মতো কিছু নেই। তিনি নিজেও এজন্য প্রস্তুত ছিলেন। বিগত কয়েক মাস ধরে গ্রেফতারের ঝুঁকি নিয়েই দৈনিক আমার দেশ অফিসে রাত কাটাচ্ছিলেন। অপহরণ, গুম থেকে বাঁচতেই হয়তো এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিলেন। মাহমুদুর রহমানের গ্রেফতারের যে বিবরণ প্রকাশিত হয়েছে তাতে সৌজন্যবোধের অভাবের প্রশ্নটি বরং বড় হয়ে উঠেছে। প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, গ্রেফতারের সময় তিনি সকালের নাস্তা সেরে চা খাচ্ছিলেন। পুলিশ তাকে চায়ের কাপটি খালি করার সুযোগ দেয়নি। আদালতে নেয়ার পর আদালতের উদ্দেশ্যে তিনি বলেছেন, আমি এ মামলায় কোন আইনজীবী নিয়োগ করিনি। কেননা, তারা রিমান্ড বাতিল করে জামিন চাইবেন। আমি জানি, জামিন পাওয়া যাবে না। রিমান্ড বাতিল হবে না। সুতরাং বোকার মতো এ কাজ আমি করবো কেন? আমাকে যে কদিন রিমান্ড দেয়ার জন্য আপনার উপর নির্দেশ আছে তা আমাকে শুনিয়ে দিন। মাহমুদুর রহমান কেন আদালতে দাঁড়িয়ে নজিরবিহীন এই উক্তি করেছেন, তার সত্যতা খুঁজে পাওয়া যাবে বাংলাদেশ বারকাউন্সিলের ভাইস প্রেসিডেন্ট অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেনের বক্তব্যে। এক আলোচনায় তিনি বলেছেন, আমাদের দুর্ভাগ্য, নিম্ন আদালতের বিচরকগণের স্বাধীনভাবে বিচার করার যে সাংবিধানিক দায়িত্ব রয়েছে সে দায়িত্ব পালন না করে তারা ক্ষমতাসীন দলের আজ্ঞাবহ হয়ে বিচারকার্য পরিচালনা করছেন। ফলে বিচারবিভাগের উপর দেশবাসীর কোন আস্থা নেই।
বিএনপির চেয়ারপার্সন ও বিরোধী দলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া মাহমুদুর রহমানের গ্রেফতার ও তার সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে অবিলম্বে তার নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেছেন। তিনি বলেছেন, তাকে গ্রেফতারের মধ্যদিয়ে সরকারের বাকশাল চরিত্রের প্রকৃত স্বরূপ উন্মোচিত হয়েছে। প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, সরকার বিরোধী আন্দোলনে যারা এতদিন একত্রে রাজপথে নামেননি পত্রিকা সম্পাদককে গ্রেফতারের পর তার মুক্তির দাবি সকলের কাছে অভিন্ন রূপ নিয়েছে। এই ইস্যুতে ওলামা-মাশায়েখ, তৌহিদি জনতা, ইসলামী ধারার দল, পেশাজীবী ও ১৮ দলীয় জোট কর্মসূচির দিকে যাচ্ছে। মাহমুদুর রহমানের গ্রেফতারকে জ্বলন্ত কড়াইয়ে ঘি ঢালার সমতুল্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। তার গ্রেফতার বর্তমান প্রেক্ষাপটে যে নতুন বিবেচনার দ্বার উন্মোচন করেছে সে কথা বলার অপেক্ষা রাখে না।
পত্রিকার সম্পাদক গ্রেফতার, পত্রিকা বন্ধ বা সাংবাদিকদের উপর নির্যাতন বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নতুন কোন ঘটনা না হলেও, বর্তমান ইস্যু ভিন্নতর। সংবাদপত্র বন্ধ, সাংবাদিক দলন তথা মত প্রকাশের স্বাধীনতার অন্তরায়ের বড় দাগের আলোচনা উঠলে সর্বাগ্রে বাকশালের কথা উঠে আসে। ৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি সংসদে বহুদলীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা বাতিল করে একদলীয় বাকশাল গঠন করা হলে ঐ বছর ১৬ জুন আইন করে সরকার তার নিয়ন্ত্রণে ৪টি পত্রিকা রেখে সকল পত্রপত্রিকা স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দিয়েছিল। পত্রিকা বন্ধের প্রক্রিয়া স্বাধীনতার এক বছরের মধ্যেই শুরু হয়েছিল। ৭৩ সালে অধ্যাদেশের মাধ্যমে পত্রিকা নিয়ন্ত্রণের যে ব্যবস্থা করা হয়েছিল, তার প্রধান শিকার হয়েছিল তৎকালীন সরকার বিরোধী সংবাদপত্র দৈনিক গণকণ্ঠ। সরকারি নেতাদের রিলিফ চুরি, কালোবাজারি, লুটপাট এবং ক্ষমতার দ্বন্দ্বের বিবরণ ছাপার কারণে গণকণ্ঠসহ হক কথা, হলি ডে ও অন্যান্য বিরোধী মতের কাগজ নিষিদ্ধ করা হয়েছিলো। সুতরাং পত্রিকা প্রকাশনা বন্ধ ও রাজনৈতিক বাস্তবতার আলোচনা প্রায় একই সূত্রে গাঁথা। নিঃসন্দেহে এ কথা বলা চলে, যখনই বিরোধী মত দলন, বিরোধী নেতাদের প্রতি অসহিষ্ণুতা চরমে উঠেছে তখনই বিরোধী মতের বাহন পত্রিপত্রিকার উপরও সরকারি রোষের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। সে সময় ও বর্তমান বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি আল মাহমুদ গণকণ্ঠের সম্পাদক হিসেবে এবং প্রবীণ সাংবাদিক আব্দুস সালাম তার লেখার জন্য নানাভাবে নির্যাতিত হয়েছেন। আল মাহমুদকে কারাগারে যেতে হয়েছে। বাংলাদেশের গত ৪ দশকের বেশি সময়ের রাজনীতি পর্যালোচনা করলে মত দলনের অন্য কোন নজির পাওয়া যাবে না, সে কথা হয়তো সত্যি নয় তবে উল্লেখিত ঘটনাগুলোর মতো আঁতকে উঠার মতো কোন নজির নেই। পর্যালোচনায় গেলে এটা পরিষ্কার হবে যে, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ এবং বিরোধী মত লালনের প্রতি সাংবিধানিক গাইড লাইন থাকলেও কার্যত তা সে সময়ে এবং বর্তমান সময়ে সমভাবে লঙ্ঘিত হয়েছে এবং হচ্ছে। সাংবিধানিকভাবে 'গণতান্ত্রিক' সরকার কায়েম থাকলেও সংবিধানের নির্দেশনা অবজ্ঞার থাকার ফলে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনা যে হুমকির মধ্যে পড়েছে তাতে কোন সন্দেহ নেই। যে মামলায় মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে, সেটি পুরনো এবং বহুল আলোচিত। ইতোমধ্যেই এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়েছে, এখনো আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। এ ক্ষেত্রে যে প্রশ্ন শুরু থেকে উঠেছে, তার কোন সমাধান এখনো হয়নি। আমার দেশ যে বক্তব্য প্রকাশ করার কারণে দায়ী হচ্ছে, সেই একই কারণে যিনি বা যারা এর উৎস মূলে রয়েছেন, তারা কেন ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থাকলেন? প্রশ্ন উঠতে পারে, একজন বিচারপতির এ ধরনের কথোপকথন কি বৈধ অথবা তিনি এ ধরনের বক্তব্য দেয়ার জন্য রাষ্ট্র থেকে কোন অনুমোদন নিয়েছেন কি না। তবে বিচারক যখন নিজ থেকেই সরে গিয়েছেন, তখন মনে করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে যে, কথোপকথনের ফলে কোন না কোন পর্যায় হয়তো 'অপরাধ' সংঘঠিত হয়ে থাকতে পারে। তাহলে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা রক্ষাকবচের কারণেই যদি বিচারপতি দায়মুক্ত হতে পারেন তবে সংবাদপত্রের স্বাধীনতার বিবেচনায় একজন সম্পাদক কেন দায়মুক্ত থাকতে পারবেন না?
সংবাদপত্রের দায়বদ্ধতা নিয়ে বিবিসির সাথে প্রাসঙ্গিক আলোচনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক নানা আলোচনা করেছেন। প্রশ্ন হচ্ছে, ঘটনা মূল না তার প্রকাশ মূল। চুরি করা দোষের না, তার বিবরণ প্রকাশ দোষের? সমাজ যদি দুর্বৃত্তায়িত না হয়, মিথ্যাচারে পূর্ণ না হয়, প্রতারক ও ঠকে পূর্ণ না হয় এবং তা সত্ত্বেও যদি সংবাদপত্র বা সাংবাদিকরা এসব অভিযোগে কাউকে অভিযুক্ত করেন অথবা কারো বিরুদ্ধে কথিত উদ্দেশ্যমূলক খবর পরিবেশন করেন, সেটা হয়তো দোষের হতে পারে কিন্তু যা ঘটছে, ঘটেছে, তার নির্মোহ বিবরণ তুলে ধরা কোন বিবেচনায় অপরাধ বলে গণ্য হবে বা হতে পারে তা বোঝা দায়। আইন তো সমাজের কল্যাণের জন্য। কোন আইন যদি সত্য প্রকাশের অন্তরায় হয় অথবা দুর্বৃত্তায়নের পক্ষপুষ্ট হয় তাহলে অবশ্যই সে আইন উদ্দেশ্যেই লক্ষ্যভ্রষ্ট। অবশ্যই আইন যেহেতু ব্যাখ্যার ব্যাপার সে কারণে দৃষ্টিভঙ্গিগত বিষয় অত্যন্ত জরুরি। হেফাজতে ইসলাম ইসলামের অবমাননায় সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান রেখে আইন প্রণয়নের যে দাবি করেছে, সে সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী, তথ্যমন্ত্রীসহ সরকারি মহলের অনেকেই বলেছেন, এ ধরনের আইনের প্রয়োজন নেই। বিবিসির সাথে সাক্ষাৎকারে একজন আইনজীবী এধরনের আইনের অপ-প্রয়োগের প্রশ্ন তুলে অনেকটাই নির্বোধের মতো আলোচনা করেছেন। প্রাসঙ্গিক আলোচনায় মুফতি হারুন খুব স্পষ্ট করে বলেছেন, এ ধরনের আইন সঠিক খাতে পরিচালিত হতে হলে আলেম-ওলামার পরামর্শ নেয়া প্রয়োজন। যে কোন আইনের প্রয়োগ এবং বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের মতামত গ্রহণ অত্যন্ত জরুরি। কোন আইন থেকে যদি জনগণ উপকৃত হতে না পারে অথবা আইনের কারণে যদি গণতন্ত্র বাধাগ্রস্ত হয় তাহলে সে আইনকে গ্রহণযোগ্য মনে করার কোন সুযোগ নেই। মাহমুদুর রহমান এর আগেও একবার গ্রেফতার হয়েছেন। ২৮৮ দিন সে সময় তাকে আটক রাখা হয়েছিল এবং একটানা ১২ দিন রিমান্ডে নিয়ে তাকে নির্যাতন করা হয়েছিল। উচ্চতর আদালতে দাঁড়িয়ে ক্ষমাপ্রার্থনা না করে প্রকাশিত রিপোর্টের দায়িত্ব নেয়ার কারণেই মাননীয় বিচারপতির নির্দেশে তার কারাজীবন শুরু হয়েছিল। মাননীয় বিচারপতি রিপোর্ট বা মন্তব্যের কোন মেরিটে না গিয়েই তার মনে হওয়ার বিষয়কে কেন্দ্র করে তিনি মাহমুদুর রহমানকে কারাদ-ের নির্দেশ দিয়েছিলেন। সে সময় যেমনি এ প্রসঙ্গ নিয়ে আলোচনা হয়েছে এখনো তা অব্যাহত রয়েছে। কারণ বিচার বিভাগ হচ্ছে, সাধারণ মানুষের শেষ আশ্রয়স্থল। সরকার-প্রশাসনের রোষে পড়ে যারা নির্যাতিত হন, তারা বিচার বিভাগ থেকে তাদের মতো করে সুবিচার আশা করেন। যদি বঞ্চিত হন তখন মহান আল্লাহর কাছে বিচার দেন। একটি সমাজে সুবিচার, ন্যায় বিচার, আইনের শাসন গণতান্ত্রিক সমাজের প্রাথমিক ভিত হিসেবে কাজ করে বলে ঘুরে-ফিরেই এসব প্রসঙ্গ উঠে আসে। শুধু মাহমুদুর রহমানের প্রসঙ্গই নয়, বিএনপির শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন নেতার নিম্ন আদালতের নির্দেশে কারাগারে পাঠানোকে কেন্দ্র করেও অনুরূপ আলোচনা সব মহলে উঠেছে। স্বাধীন বাংলাদেশে এ ধরনের ঘটনা নজিরবিহীন বলেও অনেকে উল্লেখ করেছেন। কারণ ঘটনার দিন দেশে ছিলেন না এমন নেতাকেও অভিযুক্ত করে কারাগারে পাঠনো হয়েছে। সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী বলেছেন, এক মাসের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে। এ বক্তব্যের পরপর বিরোধী রাজনৈতিক মহলের প্রতি সরকারি বাহিনীর নগ্ন হামলার যে বহিঃপ্রকাশ ঘটছে এবং এখন পর্যন্ত বিরোধী মতের পত্রিকার একজন সম্পাদককে গ্রেফতারের মতো ঘটনার পরে গণতন্ত্রের লেবাসের কার্যত স্বৈরতান্ত্রিকতাই যে ফুটে উঠছে তা কেবলমাত্র গণতন্ত্রের মোড়কে বাকশাল কায়েমের কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়।
বর্তমান সময়ে প্রায় সকল মহলে সততা, দক্ষতা, শিক্ষা, ও মেধা-মননের যে প্রশ্ন বিভিন্ন মহল থেকে উঠছে সে বিবেচনায় মাহমুদুর রহমান ইতিবাচকতার উদাহরণ। তিনি কোন দলের সদস্য নন। বিগত বিএনপির শাসন আমলে তিনি একজন উপদেষ্টা ছিলেন। গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ে থাকা সত্ত্বেও তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির কোন অভিযোগ পাওয়া যায়নি সুতরাং ব্যক্তিগতভাবে এবং দায়িত্বপালনকালেও তার সততা প্রশ্নবিদ্ধ নয়। ব্যক্তিগত জীবনে মূল্যবোধের চর্চাকারী একজন বিশ্বাসী মানুষ তিনি। দক্ষ প্রকৌশলীও বটে। চিন্তা-চেতনায় তিনি যে মত পোষণ করেন সে ক্ষেত্রে তিনি অনঢ়। তার মত সরকারের দৃষ্টিভঙ্গির অনুরূপ নয়। তিনি নিজেও স্বীকার করেছেন, পেশাদারিত্ব থেকে নয় বরং বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার সূত্র ধরেই সম্পাদনায় এসেছেন। ১/১১ পরবর্তী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে আমার দেশ সরকারের রোষে পড়ে। অতঃপর নানা প্রক্রিয়ায় এ পত্রিকাটির ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব গ্রহণ করেন মাহমুদুর রহমান। সে সময় থেকেই তিনি ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক। তবে প্রকাশক জটিলতার এখনো নিরসন হয়নি। বর্তমান সরকারের দমন-পীড়নসহ গুরুতর কিছু সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে মাহমুদুর রহমান এবং আমার দেশ আলোচনায় উঠে আসে। অতি সম্প্রতি শাহবাগ মঞ্চ থেকে তাকে গ্রেফতারে দাবি জানানো হয়। গ্রেফতারের পর মঞ্চের নেতারা অভিনন্দনও জানিয়েছেন।
বলার অপেক্ষা রাখে না, মাহমুদুর রহমান এমন সময় গ্রেফতার হয়েছেন, যখন দেশের মধ্যে বিভক্তি স্পষ্ট হয়েছে উঠেছে। তার গ্রেফতারের পর প্রবীণ আইনজীবী সাবেক এটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার রফিক-উল-হক এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, কোন আইনে তার অপরাধ সেটা তো আদালত বলছে না। আমার মনে হয়, মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে সরকারের আক্রোশ তো বহুদিন ধরেই আছে, সেই পরিপ্রেক্ষিতেই হয়তো তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, তাকে গ্রেফতারের পর পত্রিকার ছাপাখানা সিলগালা করার মধ্য দিয়ে প্রকাশনা বন্ধ করার হুমকি চলে এসেছে। এ বিবেচনায় বলা যায়, বিরোধী রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের উপর সরকারের আক্রোশ আর মাহমুদুর রহমানের উপর আক্রোশ হয়তো একাট্টা হয়ে গেছে। আবার সে কারণেই হয়তো তার মুক্তি এবং সরকার পতনের আন্দোলনও সমান্তরাল দেখছে হেফাজতে ইসলাম। অনরূপ দৃষ্টিভঙ্গিতে অন্যকিছু সংগঠনও দেখছে। যেভাবেই মূল্যায়ন করা যাক-না কেন, মাহমুদুর রহমানের গ্রেফতার গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতার বিবেচনায় স্বস্তিদায়ক নয়।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকালীন সরকার বিতর্কের অবসান না হওয়ায় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনা যে হুমকির মুখে পড়েছে, এ ব্যাপারে দেশি-বিদেশি সকল মহলই একমত। টিআইবির নির্বাচনকালীন সরকারের প্রস্তাবনার মধ্যদিয়ে আন্তর্জাতিক মহলের উদ্বিগ্নতার যৌক্তিকতা প্রমাণিত হয়েছে। নির্বাচন হচ্ছে গণতান্ত্রিকভাবে সরকার পরিবর্তনের একমাত্র পথ। বিরোধী দল হচ্ছে, গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। কোন দেশে গণতন্ত্র কতটা শক্তিশালী তার পরিমাপকের সূচক হচ্ছে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এমনকি ভারতেও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা শক্ত ভিতের উপর দাঁড়িয়ে রয়েছে। গুম, খুন, অপহরণ, হত্যার পাশাপাশি সাংবাদিক নির্যাতনও নিত্যদিনের ঘটনায় পরিণত হয়েছে। আলোচিত সাগর-রুনি হত্যাকা-ে অপরাধীদের এখন পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া যায়নি। বর্তমান আমলেই চ্যানেল ওয়ান, শীর্ষ কাগজসহ কয়েকটি গণমাধ্যম কৌশলে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। আগেরবার যখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ছিল তখন দৈনিক বাংলাসহ কয়েকটি পত্রিকার প্রকাশনাও নানা কৌশলে বন্ধ করে দেয়া হয়।
পত্রিকা বন্ধ বা মত প্রকাশের প্রতিবন্ধকতা সুস্থ বিবেক-বুদ্ধির পরিচায়ক নয়। এর ফলে শুধু গণতন্ত্রের পথ চলাই নয়, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। গণতন্ত্র না থাকলে কেউ বিনিয়োগে আগ্রহী হন না। এক দফা আন্দোলনের ঘোষণা দেয়ার পর বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের প্রায় সব নেতাসহ বিপুল সংখ্যক নেতা-কর্মীর জায়গা হয়েছে কারাগারে। একটি পত্রিকার কার্টুনে কেন্দ্রীয় কারাগারের পরিবর্তে বিএনপি কারাগার বলে চিত্রিত করা হয়েছে। গ্রেফতার এখনো অব্যাহত রয়েছে। বিরোধী মতের সমর্থক হিসেবেই মাহমুদুর রহমান গ্রেফতারের শিকারে পরিণত হয়েছেন। এই প্রতিহিংসা পরায়ণতা 'ফ্যাসিবাদের অনুরূপ'। গণতন্ত্রের মোড়কে স্বৈরাচার যেমনি কাক্সিক্ষত নয়, তেমনি গণতন্ত্রের পথ চলা বিঘিœত হওয়াও বাস্তবোচিত নয়। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে দেশি-বিদেশি সকল মহল যে আশঙ্কা করে আসছে, তার বিপরীতে দায়িত্বশীলদের শুভ বুদ্ধির উদয় হোক, এটাই প্রত্যাশিত।

 



__._,_.___


****************************************************
Mukto Mona plans for a Grand Darwin Day Celebration: 
Call For Articles:

http://mukto-mona.com/wordpress/?p=68

http://mukto-mona.com/banga_blog/?p=585

****************************************************

VISIT MUKTO-MONA WEB-SITE : http://www.mukto-mona.com/

****************************************************

"I disapprove of what you say, but I will defend to the death your right to say it".
               -Beatrice Hall [pseudonym: S.G. Tallentyre], 190




Your email settings: Individual Email|Traditional
Change settings via the Web (Yahoo! ID required)
Change settings via email: Switch delivery to Daily Digest | Switch to Fully Featured
Visit Your Group | Yahoo! Groups Terms of Use | Unsubscribe

__,_._,___