মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০১৩, ৩ বৈশাখ ১৪২০
সংবাদপত্রের স্বাধীনতা দুর্বৃত্তপনা করার লাইসেন্স নয়
আবদুল মান্নান
http://www.dailyjanakantha.com/news_view.php?nc=16&dd=2013-04-16&ni=132301---------- Forwarded message ----------
From: Mohiuddin Anwar <mohiuddin@netzero.net>
Date: 2013/4/15
Subject: Mahumur's arrest and freedom of Press
From: Mohiuddin Anwar <mohiuddin@netzero.net>
Date: 2013/4/15
Subject: Mahumur's arrest and freedom of Press
মাহমুদুর রহমানের গ্রেফতারোত্তর রাজনৈতিক বাস্তবতা
আবদুল আউয়াল ঠাকুর : দৈনিক আমার দেশের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের গ্রেফতার খবরে বিস্মিত হবার মতো কিছু নেই। তিনি নিজেও এজন্য প্রস্তুত ছিলেন। বিগত কয়েক মাস ধরে গ্রেফতারের ঝুঁকি নিয়েই দৈনিক আমার দেশ অফিসে রাত কাটাচ্ছিলেন। অপহরণ, গুম থেকে বাঁচতেই হয়তো এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিলেন। মাহমুদুর রহমানের গ্রেফতারের যে বিবরণ প্রকাশিত হয়েছে তাতে সৌজন্যবোধের অভাবের প্রশ্নটি বরং বড় হয়ে উঠেছে। প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, গ্রেফতারের সময় তিনি সকালের নাস্তা সেরে চা খাচ্ছিলেন। পুলিশ তাকে চায়ের কাপটি খালি করার সুযোগ দেয়নি। আদালতে নেয়ার পর আদালতের উদ্দেশ্যে তিনি বলেছেন, আমি এ মামলায় কোন আইনজীবী নিয়োগ করিনি। কেননা, তারা রিমান্ড বাতিল করে জামিন চাইবেন। আমি জানি, জামিন পাওয়া যাবে না। রিমান্ড বাতিল হবে না। সুতরাং বোকার মতো এ কাজ আমি করবো কেন? আমাকে যে কদিন রিমান্ড দেয়ার জন্য আপনার উপর নির্দেশ আছে তা আমাকে শুনিয়ে দিন। মাহমুদুর রহমান কেন আদালতে দাঁড়িয়ে নজিরবিহীন এই উক্তি করেছেন, তার সত্যতা খুঁজে পাওয়া যাবে বাংলাদেশ বারকাউন্সিলের ভাইস প্রেসিডেন্ট অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেনের বক্তব্যে। এক আলোচনায় তিনি বলেছেন, আমাদের দুর্ভাগ্য, নিম্ন আদালতের বিচরকগণের স্বাধীনভাবে বিচার করার যে সাংবিধানিক দায়িত্ব রয়েছে সে দায়িত্ব পালন না করে তারা ক্ষমতাসীন দলের আজ্ঞাবহ হয়ে বিচারকার্য পরিচালনা করছেন। ফলে বিচারবিভাগের উপর দেশবাসীর কোন আস্থা নেই।
বিএনপির চেয়ারপার্সন ও বিরোধী দলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া মাহমুদুর রহমানের গ্রেফতার ও তার সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে অবিলম্বে তার নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেছেন। তিনি বলেছেন, তাকে গ্রেফতারের মধ্যদিয়ে সরকারের বাকশাল চরিত্রের প্রকৃত স্বরূপ উন্মোচিত হয়েছে। প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, সরকার বিরোধী আন্দোলনে যারা এতদিন একত্রে রাজপথে নামেননি পত্রিকা সম্পাদককে গ্রেফতারের পর তার মুক্তির দাবি সকলের কাছে অভিন্ন রূপ নিয়েছে। এই ইস্যুতে ওলামা-মাশায়েখ, তৌহিদি জনতা, ইসলামী ধারার দল, পেশাজীবী ও ১৮ দলীয় জোট কর্মসূচির দিকে যাচ্ছে। মাহমুদুর রহমানের গ্রেফতারকে জ্বলন্ত কড়াইয়ে ঘি ঢালার সমতুল্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। তার গ্রেফতার বর্তমান প্রেক্ষাপটে যে নতুন বিবেচনার দ্বার উন্মোচন করেছে সে কথা বলার অপেক্ষা রাখে না।
পত্রিকার সম্পাদক গ্রেফতার, পত্রিকা বন্ধ বা সাংবাদিকদের উপর নির্যাতন বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নতুন কোন ঘটনা না হলেও, বর্তমান ইস্যু ভিন্নতর। সংবাদপত্র বন্ধ, সাংবাদিক দলন তথা মত প্রকাশের স্বাধীনতার অন্তরায়ের বড় দাগের আলোচনা উঠলে সর্বাগ্রে বাকশালের কথা উঠে আসে। ৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি সংসদে বহুদলীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা বাতিল করে একদলীয় বাকশাল গঠন করা হলে ঐ বছর ১৬ জুন আইন করে সরকার তার নিয়ন্ত্রণে ৪টি পত্রিকা রেখে সকল পত্রপত্রিকা স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দিয়েছিল। পত্রিকা বন্ধের প্রক্রিয়া স্বাধীনতার এক বছরের মধ্যেই শুরু হয়েছিল। ৭৩ সালে অধ্যাদেশের মাধ্যমে পত্রিকা নিয়ন্ত্রণের যে ব্যবস্থা করা হয়েছিল, তার প্রধান শিকার হয়েছিল তৎকালীন সরকার বিরোধী সংবাদপত্র দৈনিক গণকণ্ঠ। সরকারি নেতাদের রিলিফ চুরি, কালোবাজারি, লুটপাট এবং ক্ষমতার দ্বন্দ্বের বিবরণ ছাপার কারণে গণকণ্ঠসহ হক কথা, হলি ডে ও অন্যান্য বিরোধী মতের কাগজ নিষিদ্ধ করা হয়েছিলো। সুতরাং পত্রিকা প্রকাশনা বন্ধ ও রাজনৈতিক বাস্তবতার আলোচনা প্রায় একই সূত্রে গাঁথা। নিঃসন্দেহে এ কথা বলা চলে, যখনই বিরোধী মত দলন, বিরোধী নেতাদের প্রতি অসহিষ্ণুতা চরমে উঠেছে তখনই বিরোধী মতের বাহন পত্রিপত্রিকার উপরও সরকারি রোষের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। সে সময় ও বর্তমান বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি আল মাহমুদ গণকণ্ঠের সম্পাদক হিসেবে এবং প্রবীণ সাংবাদিক আব্দুস সালাম তার লেখার জন্য নানাভাবে নির্যাতিত হয়েছেন। আল মাহমুদকে কারাগারে যেতে হয়েছে। বাংলাদেশের গত ৪ দশকের বেশি সময়ের রাজনীতি পর্যালোচনা করলে মত দলনের অন্য কোন নজির পাওয়া যাবে না, সে কথা হয়তো সত্যি নয় তবে উল্লেখিত ঘটনাগুলোর মতো আঁতকে উঠার মতো কোন নজির নেই। পর্যালোচনায় গেলে এটা পরিষ্কার হবে যে, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ এবং বিরোধী মত লালনের প্রতি সাংবিধানিক গাইড লাইন থাকলেও কার্যত তা সে সময়ে এবং বর্তমান সময়ে সমভাবে লঙ্ঘিত হয়েছে এবং হচ্ছে। সাংবিধানিকভাবে 'গণতান্ত্রিক' সরকার কায়েম থাকলেও সংবিধানের নির্দেশনা অবজ্ঞার থাকার ফলে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনা যে হুমকির মধ্যে পড়েছে তাতে কোন সন্দেহ নেই। যে মামলায় মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে, সেটি পুরনো এবং বহুল আলোচিত। ইতোমধ্যেই এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়েছে, এখনো আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। এ ক্ষেত্রে যে প্রশ্ন শুরু থেকে উঠেছে, তার কোন সমাধান এখনো হয়নি। আমার দেশ যে বক্তব্য প্রকাশ করার কারণে দায়ী হচ্ছে, সেই একই কারণে যিনি বা যারা এর উৎস মূলে রয়েছেন, তারা কেন ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থাকলেন? প্রশ্ন উঠতে পারে, একজন বিচারপতির এ ধরনের কথোপকথন কি বৈধ অথবা তিনি এ ধরনের বক্তব্য দেয়ার জন্য রাষ্ট্র থেকে কোন অনুমোদন নিয়েছেন কি না। তবে বিচারক যখন নিজ থেকেই সরে গিয়েছেন, তখন মনে করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে যে, কথোপকথনের ফলে কোন না কোন পর্যায় হয়তো 'অপরাধ' সংঘঠিত হয়ে থাকতে পারে। তাহলে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা রক্ষাকবচের কারণেই যদি বিচারপতি দায়মুক্ত হতে পারেন তবে সংবাদপত্রের স্বাধীনতার বিবেচনায় একজন সম্পাদক কেন দায়মুক্ত থাকতে পারবেন না?
সংবাদপত্রের দায়বদ্ধতা নিয়ে বিবিসির সাথে প্রাসঙ্গিক আলোচনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক নানা আলোচনা করেছেন। প্রশ্ন হচ্ছে, ঘটনা মূল না তার প্রকাশ মূল। চুরি করা দোষের না, তার বিবরণ প্রকাশ দোষের? সমাজ যদি দুর্বৃত্তায়িত না হয়, মিথ্যাচারে পূর্ণ না হয়, প্রতারক ও ঠকে পূর্ণ না হয় এবং তা সত্ত্বেও যদি সংবাদপত্র বা সাংবাদিকরা এসব অভিযোগে কাউকে অভিযুক্ত করেন অথবা কারো বিরুদ্ধে কথিত উদ্দেশ্যমূলক খবর পরিবেশন করেন, সেটা হয়তো দোষের হতে পারে কিন্তু যা ঘটছে, ঘটেছে, তার নির্মোহ বিবরণ তুলে ধরা কোন বিবেচনায় অপরাধ বলে গণ্য হবে বা হতে পারে তা বোঝা দায়। আইন তো সমাজের কল্যাণের জন্য। কোন আইন যদি সত্য প্রকাশের অন্তরায় হয় অথবা দুর্বৃত্তায়নের পক্ষপুষ্ট হয় তাহলে অবশ্যই সে আইন উদ্দেশ্যেই লক্ষ্যভ্রষ্ট। অবশ্যই আইন যেহেতু ব্যাখ্যার ব্যাপার সে কারণে দৃষ্টিভঙ্গিগত বিষয় অত্যন্ত জরুরি। হেফাজতে ইসলাম ইসলামের অবমাননায় সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান রেখে আইন প্রণয়নের যে দাবি করেছে, সে সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী, তথ্যমন্ত্রীসহ সরকারি মহলের অনেকেই বলেছেন, এ ধরনের আইনের প্রয়োজন নেই। বিবিসির সাথে সাক্ষাৎকারে একজন আইনজীবী এধরনের আইনের অপ-প্রয়োগের প্রশ্ন তুলে অনেকটাই নির্বোধের মতো আলোচনা করেছেন। প্রাসঙ্গিক আলোচনায় মুফতি হারুন খুব স্পষ্ট করে বলেছেন, এ ধরনের আইন সঠিক খাতে পরিচালিত হতে হলে আলেম-ওলামার পরামর্শ নেয়া প্রয়োজন। যে কোন আইনের প্রয়োগ এবং বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের মতামত গ্রহণ অত্যন্ত জরুরি। কোন আইন থেকে যদি জনগণ উপকৃত হতে না পারে অথবা আইনের কারণে যদি গণতন্ত্র বাধাগ্রস্ত হয় তাহলে সে আইনকে গ্রহণযোগ্য মনে করার কোন সুযোগ নেই। মাহমুদুর রহমান এর আগেও একবার গ্রেফতার হয়েছেন। ২৮৮ দিন সে সময় তাকে আটক রাখা হয়েছিল এবং একটানা ১২ দিন রিমান্ডে নিয়ে তাকে নির্যাতন করা হয়েছিল। উচ্চতর আদালতে দাঁড়িয়ে ক্ষমাপ্রার্থনা না করে প্রকাশিত রিপোর্টের দায়িত্ব নেয়ার কারণেই মাননীয় বিচারপতির নির্দেশে তার কারাজীবন শুরু হয়েছিল। মাননীয় বিচারপতি রিপোর্ট বা মন্তব্যের কোন মেরিটে না গিয়েই তার মনে হওয়ার বিষয়কে কেন্দ্র করে তিনি মাহমুদুর রহমানকে কারাদ-ের নির্দেশ দিয়েছিলেন। সে সময় যেমনি এ প্রসঙ্গ নিয়ে আলোচনা হয়েছে এখনো তা অব্যাহত রয়েছে। কারণ বিচার বিভাগ হচ্ছে, সাধারণ মানুষের শেষ আশ্রয়স্থল। সরকার-প্রশাসনের রোষে পড়ে যারা নির্যাতিত হন, তারা বিচার বিভাগ থেকে তাদের মতো করে সুবিচার আশা করেন। যদি বঞ্চিত হন তখন মহান আল্লাহর কাছে বিচার দেন। একটি সমাজে সুবিচার, ন্যায় বিচার, আইনের শাসন গণতান্ত্রিক সমাজের প্রাথমিক ভিত হিসেবে কাজ করে বলে ঘুরে-ফিরেই এসব প্রসঙ্গ উঠে আসে। শুধু মাহমুদুর রহমানের প্রসঙ্গই নয়, বিএনপির শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন নেতার নিম্ন আদালতের নির্দেশে কারাগারে পাঠানোকে কেন্দ্র করেও অনুরূপ আলোচনা সব মহলে উঠেছে। স্বাধীন বাংলাদেশে এ ধরনের ঘটনা নজিরবিহীন বলেও অনেকে উল্লেখ করেছেন। কারণ ঘটনার দিন দেশে ছিলেন না এমন নেতাকেও অভিযুক্ত করে কারাগারে পাঠনো হয়েছে। সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী বলেছেন, এক মাসের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে। এ বক্তব্যের পরপর বিরোধী রাজনৈতিক মহলের প্রতি সরকারি বাহিনীর নগ্ন হামলার যে বহিঃপ্রকাশ ঘটছে এবং এখন পর্যন্ত বিরোধী মতের পত্রিকার একজন সম্পাদককে গ্রেফতারের মতো ঘটনার পরে গণতন্ত্রের লেবাসের কার্যত স্বৈরতান্ত্রিকতাই যে ফুটে উঠছে তা কেবলমাত্র গণতন্ত্রের মোড়কে বাকশাল কায়েমের কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়।
বর্তমান সময়ে প্রায় সকল মহলে সততা, দক্ষতা, শিক্ষা, ও মেধা-মননের যে প্রশ্ন বিভিন্ন মহল থেকে উঠছে সে বিবেচনায় মাহমুদুর রহমান ইতিবাচকতার উদাহরণ। তিনি কোন দলের সদস্য নন। বিগত বিএনপির শাসন আমলে তিনি একজন উপদেষ্টা ছিলেন। গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ে থাকা সত্ত্বেও তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির কোন অভিযোগ পাওয়া যায়নি সুতরাং ব্যক্তিগতভাবে এবং দায়িত্বপালনকালেও তার সততা প্রশ্নবিদ্ধ নয়। ব্যক্তিগত জীবনে মূল্যবোধের চর্চাকারী একজন বিশ্বাসী মানুষ তিনি। দক্ষ প্রকৌশলীও বটে। চিন্তা-চেতনায় তিনি যে মত পোষণ করেন সে ক্ষেত্রে তিনি অনঢ়। তার মত সরকারের দৃষ্টিভঙ্গির অনুরূপ নয়। তিনি নিজেও স্বীকার করেছেন, পেশাদারিত্ব থেকে নয় বরং বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার সূত্র ধরেই সম্পাদনায় এসেছেন। ১/১১ পরবর্তী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে আমার দেশ সরকারের রোষে পড়ে। অতঃপর নানা প্রক্রিয়ায় এ পত্রিকাটির ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব গ্রহণ করেন মাহমুদুর রহমান। সে সময় থেকেই তিনি ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক। তবে প্রকাশক জটিলতার এখনো নিরসন হয়নি। বর্তমান সরকারের দমন-পীড়নসহ গুরুতর কিছু সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে মাহমুদুর রহমান এবং আমার দেশ আলোচনায় উঠে আসে। অতি সম্প্রতি শাহবাগ মঞ্চ থেকে তাকে গ্রেফতারে দাবি জানানো হয়। গ্রেফতারের পর মঞ্চের নেতারা অভিনন্দনও জানিয়েছেন।
বলার অপেক্ষা রাখে না, মাহমুদুর রহমান এমন সময় গ্রেফতার হয়েছেন, যখন দেশের মধ্যে বিভক্তি স্পষ্ট হয়েছে উঠেছে। তার গ্রেফতারের পর প্রবীণ আইনজীবী সাবেক এটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার রফিক-উল-হক এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, কোন আইনে তার অপরাধ সেটা তো আদালত বলছে না। আমার মনে হয়, মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে সরকারের আক্রোশ তো বহুদিন ধরেই আছে, সেই পরিপ্রেক্ষিতেই হয়তো তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, তাকে গ্রেফতারের পর পত্রিকার ছাপাখানা সিলগালা করার মধ্য দিয়ে প্রকাশনা বন্ধ করার হুমকি চলে এসেছে। এ বিবেচনায় বলা যায়, বিরোধী রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের উপর সরকারের আক্রোশ আর মাহমুদুর রহমানের উপর আক্রোশ হয়তো একাট্টা হয়ে গেছে। আবার সে কারণেই হয়তো তার মুক্তি এবং সরকার পতনের আন্দোলনও সমান্তরাল দেখছে হেফাজতে ইসলাম। অনরূপ দৃষ্টিভঙ্গিতে অন্যকিছু সংগঠনও দেখছে। যেভাবেই মূল্যায়ন করা যাক-না কেন, মাহমুদুর রহমানের গ্রেফতার গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতার বিবেচনায় স্বস্তিদায়ক নয়।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকালীন সরকার বিতর্কের অবসান না হওয়ায় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনা যে হুমকির মুখে পড়েছে, এ ব্যাপারে দেশি-বিদেশি সকল মহলই একমত। টিআইবির নির্বাচনকালীন সরকারের প্রস্তাবনার মধ্যদিয়ে আন্তর্জাতিক মহলের উদ্বিগ্নতার যৌক্তিকতা প্রমাণিত হয়েছে। নির্বাচন হচ্ছে গণতান্ত্রিকভাবে সরকার পরিবর্তনের একমাত্র পথ। বিরোধী দল হচ্ছে, গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। কোন দেশে গণতন্ত্র কতটা শক্তিশালী তার পরিমাপকের সূচক হচ্ছে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এমনকি ভারতেও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা শক্ত ভিতের উপর দাঁড়িয়ে রয়েছে। গুম, খুন, অপহরণ, হত্যার পাশাপাশি সাংবাদিক নির্যাতনও নিত্যদিনের ঘটনায় পরিণত হয়েছে। আলোচিত সাগর-রুনি হত্যাকা-ে অপরাধীদের এখন পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া যায়নি। বর্তমান আমলেই চ্যানেল ওয়ান, শীর্ষ কাগজসহ কয়েকটি গণমাধ্যম কৌশলে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। আগেরবার যখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ছিল তখন দৈনিক বাংলাসহ কয়েকটি পত্রিকার প্রকাশনাও নানা কৌশলে বন্ধ করে দেয়া হয়।
পত্রিকা বন্ধ বা মত প্রকাশের প্রতিবন্ধকতা সুস্থ বিবেক-বুদ্ধির পরিচায়ক নয়। এর ফলে শুধু গণতন্ত্রের পথ চলাই নয়, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। গণতন্ত্র না থাকলে কেউ বিনিয়োগে আগ্রহী হন না। এক দফা আন্দোলনের ঘোষণা দেয়ার পর বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের প্রায় সব নেতাসহ বিপুল সংখ্যক নেতা-কর্মীর জায়গা হয়েছে কারাগারে। একটি পত্রিকার কার্টুনে কেন্দ্রীয় কারাগারের পরিবর্তে বিএনপি কারাগার বলে চিত্রিত করা হয়েছে। গ্রেফতার এখনো অব্যাহত রয়েছে। বিরোধী মতের সমর্থক হিসেবেই মাহমুদুর রহমান গ্রেফতারের শিকারে পরিণত হয়েছেন। এই প্রতিহিংসা পরায়ণতা 'ফ্যাসিবাদের অনুরূপ'। গণতন্ত্রের মোড়কে স্বৈরাচার যেমনি কাক্সিক্ষত নয়, তেমনি গণতন্ত্রের পথ চলা বিঘিœত হওয়াও বাস্তবোচিত নয়। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে দেশি-বিদেশি সকল মহল যে আশঙ্কা করে আসছে, তার বিপরীতে দায়িত্বশীলদের শুভ বুদ্ধির উদয় হোক, এটাই প্রত্যাশিত।
বিএনপির চেয়ারপার্সন ও বিরোধী দলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া মাহমুদুর রহমানের গ্রেফতার ও তার সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে অবিলম্বে তার নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেছেন। তিনি বলেছেন, তাকে গ্রেফতারের মধ্যদিয়ে সরকারের বাকশাল চরিত্রের প্রকৃত স্বরূপ উন্মোচিত হয়েছে। প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, সরকার বিরোধী আন্দোলনে যারা এতদিন একত্রে রাজপথে নামেননি পত্রিকা সম্পাদককে গ্রেফতারের পর তার মুক্তির দাবি সকলের কাছে অভিন্ন রূপ নিয়েছে। এই ইস্যুতে ওলামা-মাশায়েখ, তৌহিদি জনতা, ইসলামী ধারার দল, পেশাজীবী ও ১৮ দলীয় জোট কর্মসূচির দিকে যাচ্ছে। মাহমুদুর রহমানের গ্রেফতারকে জ্বলন্ত কড়াইয়ে ঘি ঢালার সমতুল্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। তার গ্রেফতার বর্তমান প্রেক্ষাপটে যে নতুন বিবেচনার দ্বার উন্মোচন করেছে সে কথা বলার অপেক্ষা রাখে না।
পত্রিকার সম্পাদক গ্রেফতার, পত্রিকা বন্ধ বা সাংবাদিকদের উপর নির্যাতন বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নতুন কোন ঘটনা না হলেও, বর্তমান ইস্যু ভিন্নতর। সংবাদপত্র বন্ধ, সাংবাদিক দলন তথা মত প্রকাশের স্বাধীনতার অন্তরায়ের বড় দাগের আলোচনা উঠলে সর্বাগ্রে বাকশালের কথা উঠে আসে। ৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি সংসদে বহুদলীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা বাতিল করে একদলীয় বাকশাল গঠন করা হলে ঐ বছর ১৬ জুন আইন করে সরকার তার নিয়ন্ত্রণে ৪টি পত্রিকা রেখে সকল পত্রপত্রিকা স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দিয়েছিল। পত্রিকা বন্ধের প্রক্রিয়া স্বাধীনতার এক বছরের মধ্যেই শুরু হয়েছিল। ৭৩ সালে অধ্যাদেশের মাধ্যমে পত্রিকা নিয়ন্ত্রণের যে ব্যবস্থা করা হয়েছিল, তার প্রধান শিকার হয়েছিল তৎকালীন সরকার বিরোধী সংবাদপত্র দৈনিক গণকণ্ঠ। সরকারি নেতাদের রিলিফ চুরি, কালোবাজারি, লুটপাট এবং ক্ষমতার দ্বন্দ্বের বিবরণ ছাপার কারণে গণকণ্ঠসহ হক কথা, হলি ডে ও অন্যান্য বিরোধী মতের কাগজ নিষিদ্ধ করা হয়েছিলো। সুতরাং পত্রিকা প্রকাশনা বন্ধ ও রাজনৈতিক বাস্তবতার আলোচনা প্রায় একই সূত্রে গাঁথা। নিঃসন্দেহে এ কথা বলা চলে, যখনই বিরোধী মত দলন, বিরোধী নেতাদের প্রতি অসহিষ্ণুতা চরমে উঠেছে তখনই বিরোধী মতের বাহন পত্রিপত্রিকার উপরও সরকারি রোষের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। সে সময় ও বর্তমান বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি আল মাহমুদ গণকণ্ঠের সম্পাদক হিসেবে এবং প্রবীণ সাংবাদিক আব্দুস সালাম তার লেখার জন্য নানাভাবে নির্যাতিত হয়েছেন। আল মাহমুদকে কারাগারে যেতে হয়েছে। বাংলাদেশের গত ৪ দশকের বেশি সময়ের রাজনীতি পর্যালোচনা করলে মত দলনের অন্য কোন নজির পাওয়া যাবে না, সে কথা হয়তো সত্যি নয় তবে উল্লেখিত ঘটনাগুলোর মতো আঁতকে উঠার মতো কোন নজির নেই। পর্যালোচনায় গেলে এটা পরিষ্কার হবে যে, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ এবং বিরোধী মত লালনের প্রতি সাংবিধানিক গাইড লাইন থাকলেও কার্যত তা সে সময়ে এবং বর্তমান সময়ে সমভাবে লঙ্ঘিত হয়েছে এবং হচ্ছে। সাংবিধানিকভাবে 'গণতান্ত্রিক' সরকার কায়েম থাকলেও সংবিধানের নির্দেশনা অবজ্ঞার থাকার ফলে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনা যে হুমকির মধ্যে পড়েছে তাতে কোন সন্দেহ নেই। যে মামলায় মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে, সেটি পুরনো এবং বহুল আলোচিত। ইতোমধ্যেই এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়েছে, এখনো আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। এ ক্ষেত্রে যে প্রশ্ন শুরু থেকে উঠেছে, তার কোন সমাধান এখনো হয়নি। আমার দেশ যে বক্তব্য প্রকাশ করার কারণে দায়ী হচ্ছে, সেই একই কারণে যিনি বা যারা এর উৎস মূলে রয়েছেন, তারা কেন ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থাকলেন? প্রশ্ন উঠতে পারে, একজন বিচারপতির এ ধরনের কথোপকথন কি বৈধ অথবা তিনি এ ধরনের বক্তব্য দেয়ার জন্য রাষ্ট্র থেকে কোন অনুমোদন নিয়েছেন কি না। তবে বিচারক যখন নিজ থেকেই সরে গিয়েছেন, তখন মনে করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে যে, কথোপকথনের ফলে কোন না কোন পর্যায় হয়তো 'অপরাধ' সংঘঠিত হয়ে থাকতে পারে। তাহলে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা রক্ষাকবচের কারণেই যদি বিচারপতি দায়মুক্ত হতে পারেন তবে সংবাদপত্রের স্বাধীনতার বিবেচনায় একজন সম্পাদক কেন দায়মুক্ত থাকতে পারবেন না?
সংবাদপত্রের দায়বদ্ধতা নিয়ে বিবিসির সাথে প্রাসঙ্গিক আলোচনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক নানা আলোচনা করেছেন। প্রশ্ন হচ্ছে, ঘটনা মূল না তার প্রকাশ মূল। চুরি করা দোষের না, তার বিবরণ প্রকাশ দোষের? সমাজ যদি দুর্বৃত্তায়িত না হয়, মিথ্যাচারে পূর্ণ না হয়, প্রতারক ও ঠকে পূর্ণ না হয় এবং তা সত্ত্বেও যদি সংবাদপত্র বা সাংবাদিকরা এসব অভিযোগে কাউকে অভিযুক্ত করেন অথবা কারো বিরুদ্ধে কথিত উদ্দেশ্যমূলক খবর পরিবেশন করেন, সেটা হয়তো দোষের হতে পারে কিন্তু যা ঘটছে, ঘটেছে, তার নির্মোহ বিবরণ তুলে ধরা কোন বিবেচনায় অপরাধ বলে গণ্য হবে বা হতে পারে তা বোঝা দায়। আইন তো সমাজের কল্যাণের জন্য। কোন আইন যদি সত্য প্রকাশের অন্তরায় হয় অথবা দুর্বৃত্তায়নের পক্ষপুষ্ট হয় তাহলে অবশ্যই সে আইন উদ্দেশ্যেই লক্ষ্যভ্রষ্ট। অবশ্যই আইন যেহেতু ব্যাখ্যার ব্যাপার সে কারণে দৃষ্টিভঙ্গিগত বিষয় অত্যন্ত জরুরি। হেফাজতে ইসলাম ইসলামের অবমাননায় সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান রেখে আইন প্রণয়নের যে দাবি করেছে, সে সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী, তথ্যমন্ত্রীসহ সরকারি মহলের অনেকেই বলেছেন, এ ধরনের আইনের প্রয়োজন নেই। বিবিসির সাথে সাক্ষাৎকারে একজন আইনজীবী এধরনের আইনের অপ-প্রয়োগের প্রশ্ন তুলে অনেকটাই নির্বোধের মতো আলোচনা করেছেন। প্রাসঙ্গিক আলোচনায় মুফতি হারুন খুব স্পষ্ট করে বলেছেন, এ ধরনের আইন সঠিক খাতে পরিচালিত হতে হলে আলেম-ওলামার পরামর্শ নেয়া প্রয়োজন। যে কোন আইনের প্রয়োগ এবং বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের মতামত গ্রহণ অত্যন্ত জরুরি। কোন আইন থেকে যদি জনগণ উপকৃত হতে না পারে অথবা আইনের কারণে যদি গণতন্ত্র বাধাগ্রস্ত হয় তাহলে সে আইনকে গ্রহণযোগ্য মনে করার কোন সুযোগ নেই। মাহমুদুর রহমান এর আগেও একবার গ্রেফতার হয়েছেন। ২৮৮ দিন সে সময় তাকে আটক রাখা হয়েছিল এবং একটানা ১২ দিন রিমান্ডে নিয়ে তাকে নির্যাতন করা হয়েছিল। উচ্চতর আদালতে দাঁড়িয়ে ক্ষমাপ্রার্থনা না করে প্রকাশিত রিপোর্টের দায়িত্ব নেয়ার কারণেই মাননীয় বিচারপতির নির্দেশে তার কারাজীবন শুরু হয়েছিল। মাননীয় বিচারপতি রিপোর্ট বা মন্তব্যের কোন মেরিটে না গিয়েই তার মনে হওয়ার বিষয়কে কেন্দ্র করে তিনি মাহমুদুর রহমানকে কারাদ-ের নির্দেশ দিয়েছিলেন। সে সময় যেমনি এ প্রসঙ্গ নিয়ে আলোচনা হয়েছে এখনো তা অব্যাহত রয়েছে। কারণ বিচার বিভাগ হচ্ছে, সাধারণ মানুষের শেষ আশ্রয়স্থল। সরকার-প্রশাসনের রোষে পড়ে যারা নির্যাতিত হন, তারা বিচার বিভাগ থেকে তাদের মতো করে সুবিচার আশা করেন। যদি বঞ্চিত হন তখন মহান আল্লাহর কাছে বিচার দেন। একটি সমাজে সুবিচার, ন্যায় বিচার, আইনের শাসন গণতান্ত্রিক সমাজের প্রাথমিক ভিত হিসেবে কাজ করে বলে ঘুরে-ফিরেই এসব প্রসঙ্গ উঠে আসে। শুধু মাহমুদুর রহমানের প্রসঙ্গই নয়, বিএনপির শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন নেতার নিম্ন আদালতের নির্দেশে কারাগারে পাঠানোকে কেন্দ্র করেও অনুরূপ আলোচনা সব মহলে উঠেছে। স্বাধীন বাংলাদেশে এ ধরনের ঘটনা নজিরবিহীন বলেও অনেকে উল্লেখ করেছেন। কারণ ঘটনার দিন দেশে ছিলেন না এমন নেতাকেও অভিযুক্ত করে কারাগারে পাঠনো হয়েছে। সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী বলেছেন, এক মাসের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে। এ বক্তব্যের পরপর বিরোধী রাজনৈতিক মহলের প্রতি সরকারি বাহিনীর নগ্ন হামলার যে বহিঃপ্রকাশ ঘটছে এবং এখন পর্যন্ত বিরোধী মতের পত্রিকার একজন সম্পাদককে গ্রেফতারের মতো ঘটনার পরে গণতন্ত্রের লেবাসের কার্যত স্বৈরতান্ত্রিকতাই যে ফুটে উঠছে তা কেবলমাত্র গণতন্ত্রের মোড়কে বাকশাল কায়েমের কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়।
বর্তমান সময়ে প্রায় সকল মহলে সততা, দক্ষতা, শিক্ষা, ও মেধা-মননের যে প্রশ্ন বিভিন্ন মহল থেকে উঠছে সে বিবেচনায় মাহমুদুর রহমান ইতিবাচকতার উদাহরণ। তিনি কোন দলের সদস্য নন। বিগত বিএনপির শাসন আমলে তিনি একজন উপদেষ্টা ছিলেন। গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ে থাকা সত্ত্বেও তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির কোন অভিযোগ পাওয়া যায়নি সুতরাং ব্যক্তিগতভাবে এবং দায়িত্বপালনকালেও তার সততা প্রশ্নবিদ্ধ নয়। ব্যক্তিগত জীবনে মূল্যবোধের চর্চাকারী একজন বিশ্বাসী মানুষ তিনি। দক্ষ প্রকৌশলীও বটে। চিন্তা-চেতনায় তিনি যে মত পোষণ করেন সে ক্ষেত্রে তিনি অনঢ়। তার মত সরকারের দৃষ্টিভঙ্গির অনুরূপ নয়। তিনি নিজেও স্বীকার করেছেন, পেশাদারিত্ব থেকে নয় বরং বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার সূত্র ধরেই সম্পাদনায় এসেছেন। ১/১১ পরবর্তী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে আমার দেশ সরকারের রোষে পড়ে। অতঃপর নানা প্রক্রিয়ায় এ পত্রিকাটির ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব গ্রহণ করেন মাহমুদুর রহমান। সে সময় থেকেই তিনি ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক। তবে প্রকাশক জটিলতার এখনো নিরসন হয়নি। বর্তমান সরকারের দমন-পীড়নসহ গুরুতর কিছু সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে মাহমুদুর রহমান এবং আমার দেশ আলোচনায় উঠে আসে। অতি সম্প্রতি শাহবাগ মঞ্চ থেকে তাকে গ্রেফতারে দাবি জানানো হয়। গ্রেফতারের পর মঞ্চের নেতারা অভিনন্দনও জানিয়েছেন।
বলার অপেক্ষা রাখে না, মাহমুদুর রহমান এমন সময় গ্রেফতার হয়েছেন, যখন দেশের মধ্যে বিভক্তি স্পষ্ট হয়েছে উঠেছে। তার গ্রেফতারের পর প্রবীণ আইনজীবী সাবেক এটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার রফিক-উল-হক এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, কোন আইনে তার অপরাধ সেটা তো আদালত বলছে না। আমার মনে হয়, মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে সরকারের আক্রোশ তো বহুদিন ধরেই আছে, সেই পরিপ্রেক্ষিতেই হয়তো তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, তাকে গ্রেফতারের পর পত্রিকার ছাপাখানা সিলগালা করার মধ্য দিয়ে প্রকাশনা বন্ধ করার হুমকি চলে এসেছে। এ বিবেচনায় বলা যায়, বিরোধী রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের উপর সরকারের আক্রোশ আর মাহমুদুর রহমানের উপর আক্রোশ হয়তো একাট্টা হয়ে গেছে। আবার সে কারণেই হয়তো তার মুক্তি এবং সরকার পতনের আন্দোলনও সমান্তরাল দেখছে হেফাজতে ইসলাম। অনরূপ দৃষ্টিভঙ্গিতে অন্যকিছু সংগঠনও দেখছে। যেভাবেই মূল্যায়ন করা যাক-না কেন, মাহমুদুর রহমানের গ্রেফতার গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতার বিবেচনায় স্বস্তিদায়ক নয়।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকালীন সরকার বিতর্কের অবসান না হওয়ায় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনা যে হুমকির মুখে পড়েছে, এ ব্যাপারে দেশি-বিদেশি সকল মহলই একমত। টিআইবির নির্বাচনকালীন সরকারের প্রস্তাবনার মধ্যদিয়ে আন্তর্জাতিক মহলের উদ্বিগ্নতার যৌক্তিকতা প্রমাণিত হয়েছে। নির্বাচন হচ্ছে গণতান্ত্রিকভাবে সরকার পরিবর্তনের একমাত্র পথ। বিরোধী দল হচ্ছে, গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। কোন দেশে গণতন্ত্র কতটা শক্তিশালী তার পরিমাপকের সূচক হচ্ছে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এমনকি ভারতেও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা শক্ত ভিতের উপর দাঁড়িয়ে রয়েছে। গুম, খুন, অপহরণ, হত্যার পাশাপাশি সাংবাদিক নির্যাতনও নিত্যদিনের ঘটনায় পরিণত হয়েছে। আলোচিত সাগর-রুনি হত্যাকা-ে অপরাধীদের এখন পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া যায়নি। বর্তমান আমলেই চ্যানেল ওয়ান, শীর্ষ কাগজসহ কয়েকটি গণমাধ্যম কৌশলে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। আগেরবার যখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ছিল তখন দৈনিক বাংলাসহ কয়েকটি পত্রিকার প্রকাশনাও নানা কৌশলে বন্ধ করে দেয়া হয়।
পত্রিকা বন্ধ বা মত প্রকাশের প্রতিবন্ধকতা সুস্থ বিবেক-বুদ্ধির পরিচায়ক নয়। এর ফলে শুধু গণতন্ত্রের পথ চলাই নয়, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। গণতন্ত্র না থাকলে কেউ বিনিয়োগে আগ্রহী হন না। এক দফা আন্দোলনের ঘোষণা দেয়ার পর বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের প্রায় সব নেতাসহ বিপুল সংখ্যক নেতা-কর্মীর জায়গা হয়েছে কারাগারে। একটি পত্রিকার কার্টুনে কেন্দ্রীয় কারাগারের পরিবর্তে বিএনপি কারাগার বলে চিত্রিত করা হয়েছে। গ্রেফতার এখনো অব্যাহত রয়েছে। বিরোধী মতের সমর্থক হিসেবেই মাহমুদুর রহমান গ্রেফতারের শিকারে পরিণত হয়েছেন। এই প্রতিহিংসা পরায়ণতা 'ফ্যাসিবাদের অনুরূপ'। গণতন্ত্রের মোড়কে স্বৈরাচার যেমনি কাক্সিক্ষত নয়, তেমনি গণতন্ত্রের পথ চলা বিঘিœত হওয়াও বাস্তবোচিত নয়। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে দেশি-বিদেশি সকল মহল যে আশঙ্কা করে আসছে, তার বিপরীতে দায়িত্বশীলদের শুভ বুদ্ধির উদয় হোক, এটাই প্রত্যাশিত।
__._,_.___