[Attachment(s) from Sitangshu Guha included below]
তারেকের উথান হেফাজতের আস্ফালনের মতোই বুমেরাং হবে
---------------সিতাংশু গুহ, ৬জুন ২০১৩,নিউইয়র্ক।
বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বলেছেন, আওয়ামী লীগ দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসলে মসজিদে বাদ্যযন্ত্র বাজবে। তিনি আরো অনেক কথা বলেছেন, কিন্তু তার এই একটি কথার মধ্যে দু'টো জিনিষ পরিস্কার: এক, আওয়ামী লীগ দ্বিতীয়বার আসার সম্ভবনা উজ্জ্বল যা তিনি চাননা। দুই, আওয়ামী লীগকে ঠেকাতে তিনি ধর্মকে রাজনীতিতে টানছেন।
নব্বুইর গণআন্দোলনের পর আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পালাক্রমে ক্ষমতায় এসেছে কিন্তু কোনো দল একাধারে দুইটার্ম ক্ষমতায় থাকতে পারেনি। এবার নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জিতলে রেকর্ড হবে। হেফাজতের বস্তাপচা রাজনীতি, বিএনপি'র দেউলিয়াত্ব এবং জামাতের হতাশায় আওয়ামী লীগের জয়ের পথ সুগম হচ্ছে। যুদ্বপরাধীদের বিচার ও রায় কার্যকরণের মধ্যে দিয়ে সেই পথ আরো প্রশস্ত হবে। ক্ষমতা হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে নিশ্চিত হলে বিএনপি-তে জামাতের পক্ষ-বিপক্ষ টানাপোড়ন বা বিভক্তি ঘটার সম্ভবনা থাকবে।
সভা-সমাবেশের ওপর এক মাসের হালকা নিষেধাজ্ঞা, হেফাজতের লেজ তুলে পালানো, জুলাইর শুরুতে রমজান এবং বিএনপি-জামাতের ভুল রাজনীতিতে মনে হয়, আগস্টের শেষদিকে ছাড়া আন্দোলন-আন্দোলন খেলা আর জমবে না। সেপ্টেম্বরের শেষদিকে বা অক্টোবরে জাতীয় নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা হলে রাজনীতি হয়ে পড়বে নির্বাচনমুখী। তখন আন্দোলন হবে না। তবে তত্বাবধায়ক বা অন্তর্বর্তী সরকার ইস্যু থাকবে। সরকার এ ইস্যুতে সমঝোতার ইঙ্গিত দিচ্ছে।
তত্বাবধায়ক সরকার বাংলাদেশে আর হবেনা। এর কফিনে শেষ পেরাক মারা হয়ে গেছে। নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার হতে পারে। সব প্রধান দলকে নির্বাচনে আনতে সরকার সম্ভবত: যেকোন গ্রহনযোগ্য সমাধানে রাজি হবে। গত সাড়ে চার বছরের ইতিহাসে একটি নির্বাচন নিয়েও প্রশ্ন ওঠেনি। সরকার ইঙ্গিত দিচ্ছে, বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে অবাধ ও নিরেপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব। সরকারের উদার মনোভাব এবং বিদেশী শক্তি যারা সচরাচর বাংলাদেশী রাজনীতিতে নাক গলানোর সুযোগ পায়, তাদের প্রদত্ত ফর্মুলায় বা তাদের কাছে গ্রহনযোগ্য-অর্থবহ কোন ফর্মুলায় বিএনপি নির্বাচনে না গিয়ে পারবেনা। তারেক দিয়েও কাজ হবেনা। তারেক আসছেন বলে যে ডঙ্কা বাজানো হচ্ছে, তা হবেনা। বিএনপি ক্ষমতায় না থাকলে তারেক দেশে যাবেননা। বিদেশীরা জানে তারেক দেশকে আধা আফগানিস্তান বানিয়ে ফেলেছিলো; তারেক ওদের অপছন্দ। তাই তারেকের উত্থান হেফাজতের আস্ফালনের মতোই বুমেরাং হতে পারে।
এবারের নির্বাচন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উভয়ের জন্যে অতীব গুরুত্বপূর্ণ। বিএনপি ক্ষমতায় না গেলে এর অবস্থা হবে মুসলীম লীগের মত; তারেকের অবস্থা হবে ফিলিপিনের ফার্দিন্যান্দ মার্কোসের মত। বেগম খালেদা জিয়া বয়সের ভারে শারীরিকভাবে ন্যুজ হয়ে পড়বেন। তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের সমাপ্তি ঘটার সম্ভবনা বেশী থাকবে। আর আওয়ামী লীগ হারলে বিএনপি'র মাইরের চোটে তক্তা হয়ে যাবে। প্রতি পদে পদে বিএনপি সরকার আওয়ামী লীগকে হেনস্তা করবে। মন্ত্রী বা নেতৃত্বের যাই হোক না কেন দল হিসাবে আওয়ামী লীগ কিন্তু ঠিকই আবার ঘুরে দাড়াবে। কারণ, আওয়ামী লীগের শেখর অনেক গভীরে প্রোথিত। ক্ষমতায় গেলে সুবিধাবাদীরা জেকে বসলেও বিপদের দিনে ত্যাগী নেতাকর্মীরা দলকে ঠিকই আলগিয়ে রাখে; যেমনটা রেখেছিলো পচাত্তরে বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের পর।
কিন্তু মনে রাখা দরকার, ষড়যন্ত্র বসে নেই। বিএনপি-জামাত-হেফাজত তলে তলে কি করছে কে জানে। ওরা আবার ছোবল মারবে। অতএব সাবধান।
এবার কাদের সিদ্দিকীর ধর্মকে রাজনীতিতে টেনে আনার প্রসঙ্গ। গলায় গামছা দেয়ার পর বঙ্গবীর মাঝে মধ্যে আবোলতাবোল বকেন বটে। কাদের সিদ্দিকীর অবস্থা এখন মেজর জলিলের মতো। তবে তিনি যা বলছেন তা নুতন কোনো কথা নয়। ক'বছর আগে তার নয়ানেত্রীও বলেছিলেন, আওয়ামী লীগ জিতলে মসজিদে উলুধ্বনি হবে অথবা পার্বত্য শান্তি চুক্তি হলে নোয়াখালী পর্যন্ত ভারত হয়ে যাবে। কিছুই হয়নি।একাত্তরে বা পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে আমরা অমন কথা কম শুনিনি। ধর্মকে রাজনীতিতে ব্যবহারের এ এক করুন প্রয়াস।
এ বিপদজ্জনক প্রবণতা কবে বন্ধ হবে বা আদৌ বন্ধ হবে কিনা কে জানে! শুধু যে ধর্মব্যবসায়ীরা ধর্মকে রাজনীতিতে টেনে আনেন তা নয়, সুযোগ বুঝে অন্যরাও কম যাননা। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর পর ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতিতে ফিরে আসা একরকম অসম্ভব হয়ে গেছে। হেফাজতের আবির্ভাবের প্রথম দিকে বড় দুই দলের তোষামোদিতে মনে হয়েছে, ইসলামের খেদমতে কেউই পিছিয়ে পড়তে রাজি নন। এমনকি শাহাবাগীদের বিরুদ্বে যখন ধর্মদ্রোহিতার স্লোগান উঠলো তখন প্রজন্মবাদিরাও ধর্মকেই বর্ম হিসাবে ব্যবহারে সচেষ্ট হলো-প্রমান করতে চেষ্টা করলো তারাও কম ইসলাম দরদী নন।
প্রগতির ধ্বজাধারীরা যখন ধর্মকে আশ্রয় করে রেহাই পেতে চান, তখন মৌলবাদীদের বা কাদের সিদ্দিকীর মত সুবিধাবাদীদের দোষ দিয়ে লাভ কি? পাকিস্তান নামক ধর্মীয় রাষ্ট্রের বেষ্টনী ছিন্ন করে বাংলাদেশ পুনরায় ধর্মের আবর্তে ঘুরপাক খাবে কেন? অথচ এখনো তা খাচ্ছে। হয়তো বা এজন্যে এসময়ের বাংলাদেশ মোটেও একটি অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র নয়; বলা যায়, পাকিস্তানের চেয়ে কম সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র। সুতরাং ধর্মের নাম সুরসুড়ি চলবেই। সেটা মোল্লা শফি, কাদের সিদ্দিকী বা প্রগতিশীলরা যে কেউ দিন না কেন! এতে লাভ ধর্মব্যবসায়ীদের ও মৌলবাদীদের এবং ওরা লাভবান হলে বাংলাদেশ প্রতিদিন আরো সাম্প্রদায়িক হবে সেটা বলা বাহুল্য।
রাষ্ট্রীয় সমর্থন পেলে শাহাবাগীরা হয়তো সেটা ঠেকাতে পারতো। আর এখন সেটা পারেন মহিলারা। বাংলাদেশ যেভাবে এগুচ্ছে তাতে এটা দু:স্বপ্ন হতে পারে। কিন্তু কাউকে না কাউকে তো পারতেই হবে। না পারলে সবারই খবর আছে।
Attachment(s) from Sitangshu Guha
1 of 1 File(s)
__._,_.___