পাকিস্তানেরও পেছনে ঠেলে দেয়ার ষড়যন্ত্র হচ্ছে'স্টাফ করেসপন্ডেন্ট বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম | ||
চট্টগ্রাম: 'মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী গোষ্ঠী বাংলাদেশেকে জঙ্গীবাদী ও মৌলবাদী রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায় । তারা এ দেশকে পাকিস্তানের চেয়েও আরও পিছনে ঠেলে দেওয়ার ষড়যন্ত্র করছে। এ গোষ্ঠী নারীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। তাদের রুখে দিতে না পারলে জাতি হিসেবে আমরা ইতিহাসের আস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হব। যেখানে আমাদের কারো অস্তিত্ব থাকবে না।' বন্দরনগরী চট্টগ্রামে এক নাগরিক সমাবেশে দেশের বিশিষ্টজনরা একথা বলেন। 'রুখে দাঁড়াও বাংলাদেশ' শীর্ষক শ্লোগানকে সামনে রেখে সাম্প্রদায়িতকা, মৌলবাদ ও জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়। নগরীর জে এম সেন হলে শনিবার বিকেলে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। নাগরিক সমাবেশে বক্তারা স্বাধীনতা বিরোধী জামায়াতে ইসলাম ও ছাত্রশিবিরকে সন্ত্রাসী সংগঠন আখ্যায়িত করে বাংলাদেশে তাদের রাজনীতি নিষিদ্ধে করতে সরকারের প্রতি দাবী জানান। হেফাজতে ইসলাম ১৩ দফা দাবি দিয়ে বাংলাদেশকে মধ্যযুগে ফিরিয়ে নিতে চায় উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, 'এসব দাবির মাধ্যমে তারা নারীর অগ্রযাত্রা ও দেশের অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত করতে চায়।' সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান। কবি ও সাংবাদিক আবুল মোমেনের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এডভোকেট সুলতানা কামাল, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের বোড অব ট্রাস্টি ডা. সারওয়ার আলী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এম এম আকাশ, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর রাণা দাশগুপ্ত ও শহীদ জায়া বেগম মুশতারী শফী। সমাবেশের ঘোষণাপত্র পাঠ করেন আবৃত্তি সংগঠন প্রমার সভাপতি রাশেদ হাসান। সমাবেশে স্বাগত বক্তব্য রাখেন আয়োজক কমিটির সদস্য সচিব কবি কামরুল হাসান বাদল। সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রফেসর ইমেরিটাস ড. আনিসুজ্জামান বলেন, 'সাম্প্রতিক সময়ে থেমে থেমে দেশের কোন না কোন জায়গায় সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে। শারীরিক আক্রমণের বদলে তাদের সহায়-সম্পত্তি, উপসনালয় ও বিগ্রহ-প্রতিমার উপর হামলা করা হচ্ছে। এ মানসিক আঘাত শারীরিক আঘাতের তুলনায় অনেক বেশি পীড়াদায়ক।' বয়োজ্যেষ্ঠ এ শিক্ষাবিদ অভিযোগ করেন, প্রশাসন কোথাও কোথাও হামলাকারী সাম্প্রদায়িক শক্তিকে রুখতে পারছে না আবার কোথাও কোথাও শৈথিল্য আছে। অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, ' এ পরিস্থিতিতে অনেকেই দেশ ছেড়ে যাচ্ছেন। আবার অনেকেই দেশ ছেড়ে যাওয়ার চিন্তাভাবনা করছেন।' তিনি বলেন, 'এ অবস্থায় আমাদের সকলকে আক্রান্তদের পাশে দাঁড়াতে হবে। তাদের অনাস্থা মনে আস্থার পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। দেশ আপনার বিরুদ্ধে নয়, এটা তাদেরকে বোঝাতে হবে।' আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায় ও পর্যবেক্ষণ উল্লেখ করে ড. আনিসুজ্জামান বলেন, 'ট্রাইব্যুনালের রায় থেকে স্পষ্ট, মুক্তিযুদ্ধে জামায়াতে ইসলাম মানবতাবিরোধী অপরাধ ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত ছিল। ট্রাইব্যুনালের রায় ঘোষণার পর দেশের বিভিন্ন স্থানে জামায়াত ও তার ছাত্র সংগঠন ছাত্রশিবির তান্ডব তার বড় প্রমাণ। তাই জামায়াতে ইসলাম ও ছাত্রশিবিরকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ করতে হবে।' নারীনেত্রী অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেন, 'দেশটা ক্রমশ সাম্প্রদায়িক দেশে রুপান্তরিত হচ্ছে। আমরা এর বিরুদ্ধে সেভাবে রুখে দাঁড়াতে পারছি না। এ অবস্থায় কোনোরকম কালক্ষেপণ না করে এ সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে হবে। না হলে বাংলাদেশ আর বাংলাদেশ থাকবে না। দেশ তখন অন্য দেশের চেহারা নিয়ে আমাদের সামনে দাঁড়াবে। যা আমরা কখনো হতে দিতে পারিনা।' সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের এ উপদেষ্টা বলেন, 'আমাদের নৈতিক দায়িত্ব, সাংবিধানিক যে প্রত্যয় ও অঙ্গীকার রয়েছে, তার আলোকে মানুষকে মানুষের মর্যাদা দিয়ে বাস করতে সাহায্য করা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এম এম আকাশ বলেন, 'জামায়াত-বিএনপি মিলে সারাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর নির্যাতন করেছে। তারা ভোটের রাজনীতিতে নিরঙ্কুশ বিজয়ের জন্য এ কৌশল গ্রহণ করেছে ১৮ দলীয় জোট। এ গোঁজামিলের রাজনীতি আমরা চাই না।' তিনি বলেন, 'দ্রুত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন করে তা দ্রুত কার্যকর করতে হবে। এ নিয়ে কোনো ধরণের ব্ল্যাকমেইলিং বা টালবাহানা জনগণ মেনে নেবে না।' মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের বোর্ড অব ট্রাস্টি ডা. সারওয়ার আলী বলেন, 'আধুনিক রাষ্ট্রকে ধর্ম নিরপেক্ষ হতে হবে।' তিনি বলেন, 'মৌলবাদী গোষ্ঠী পবিত্র মসজিদ ও মাদ্রাসার মাইক ব্যবহার করে ধর্মভীরু মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। এজন্য সরকারকে কঠোর হতে হবে। এ ধরণের ঘটনা যাতে আর না ঘটে এজন্য সরকারের নির্বাহী আদেশে সংশ্লিষ্টদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।' বেগম মুশতারী শফী বলেন, সমগ্র দেশের মানুষকে মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িকতার কোনো ধরণের চিহ্ন থাকতে পারবে না। এডভোকেট রাণা দাশগুপ্ত বলেন, সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধ হযে আসাম্প্রদায়িক বাঙালির বাংলাদেশকে ফিরিয়ে আনতে হবে। বাংলাদেশ সময়: ২০৪৩ঘণ্টা, জুন ০১,২০১৩ এসজি/টিসি | ||
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না। |
__._,_.___