জবানবন্দিতে শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীনের ছেলে
মাকে ধরে নিয়ে যাওয়ার সময় মুঈনুদ্দীন ছিলেন
নিজস্ব প্রতিবেদক | তারিখ: ২১-০৭-২০১৩
শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন। ছবি ফেসবুক নেয়া
পলাতক চৌধুরী মুঈনুদ্দীন ও আশরাফুজ্জামান খানের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আজ রোববার জবানবন্দি দিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের তৃতীয় সাক্ষী ও শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীনের ছেলে সুমন জাহিদ।
জবানবন্দিতে তিনি বলেছেন, একাত্তরের ১৩ ডিসেম্বর তাঁর মাকে আলবদর বাহিনীর সদস্যরা ধরে নিয়ে যাওয়ার সময় চৌধুরী মুঈনুদ্দীন উপস্থিত ছিলেন
বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২-এ আজ সুমন জাহিদের জবানবন্দি নেন রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি সাহিদুর রহমান।
জবানবন্দিতে সুমন জাহিদ বলেন, একাত্তরে তাঁর বয়স ছিল আট বছর। একাত্তরের ১৩ ডিসেম্বর শীতের দিনে তিনি ও তাঁর উজির মামা নিউ সার্কুলার রোডের বাসার (বর্তমান শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক) ছাদে অবস্থান করছিলেন। সে সময় একটি কাদা-মাখানো মাইক্রোবাস ও একটি জিপ এসে বাসার সামনে থামে। পরে আলবদররা গামছা দিয়ে তাঁর মায়ের চোখ ও মাফলার দিয়ে পিঠমোড়া করে হাত বেঁধে ওই গাড়িতে করে নিয়ে যায়। একাত্তরের ১৭ ডিসেম্বর শহীদ অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী ও কবির চৌধুরীর ভাই শমসের চৌধুরীর মাধ্যমে তাঁর সেজো মামা, উজির মামা ও তাঁকে খবর দেন যে তাঁর মায়ের লাশ রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে পড়ে আছে। পরদিন তাঁরা মায়ের লাশ শনাক্ত করেন। এরপর লাশ আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করা হয়।
জবানবন্দিতে সুমন জাহিদ বলেন, তাঁদের গ্রামের বাড়ি ফেনীতে। তাঁর মামা সাহাবউদ্দিন ছাত্র ইউনিয়ন করতেন। ওই এলাকার বাসিন্দা চৌধুরী মুঈনুদ্দিন ওই সময় ইসলামী ছাত্র সংঘ (জামায়াতের তত্কালীন ছাত্র সংগঠন) করতেন। সেই সুবাদে তাঁর মামার সঙ্গে মুঈনুদ্দিনের রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব ছিল। মুঈনুদ্দীন তাঁর মাকে বুবু বলে ডাকতেন। সম্পর্কের কারণে মুঈনুদ্দীন তাঁর মায়ের বাসার ঠিকানাও জানতেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে মুঈনুদ্দীনের ছবি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হলে তাঁর উজির মামা তাঁকে বলেন, তাঁর মাকে একাত্তরের ১৩ ডিসেম্বর ধরে নিয়ে যাওয়ার সময় মুঈনুদ্দীন উপস্থিত ছিলেন। রায়েরবাজার বধ্যভূমি থেকে জীবিত পালিয়ে আসা ব্যক্তি দেলোয়ারের সঙ্গে ১৯৯৬ সালে তাঁর দেখা হলে তিনি তাঁর মাকে ধরে নিয়ে যাওয়া, নির্যাতন ও হত্যার ঘটনা শোনেন। দেলোয়ারের বক্তব্য ও বিভিন্ন সূত্র থেকে তিনি জানতে পারেন, একাত্তরের বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডে আলবদর বাহিনীর 'অপারেশন ইনচার্জ' মুঈনুদ্দীন ও আলবদর সদস্য আশরাফুজ্জামান জড়িত ছিলেন। জবানবন্দির শেষ পর্যায়ে তিনি কেঁদে ওঠেন ও মায়ের হত্যার বিচার চান।
সুমন জাহিদের জবানবন্দি শেষ হলে আসামিপক্ষের রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আবদুস শুকুর খান তাঁকে জেরা করেন। জেরা অসমাপ্ত অবস্থায় এ মামলার কার্যক্রম আগামীকাল সোমবার পর্যন্ত মুলতবি করেন ট্রাইব্যুনাল।
http://www.prothom-alo.com/detail/date/2013-07-21/news/369662
Related:
মিলটন রহমান
ব্রিটেন থেকে যুদ্ধাপরাধী হস্তান্তর ও কিছু বাধা
__._,_.___